রণাঙ্গন সংবাদ
কুড়িগ্রাম ২০শে নভেম্বর-আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ মুক্তিসেনাদের প্রবল চাপের মুখে ভুরুঙ্গামারীতে পাকসেনারা তাদের অবস্থান ধরে রাখতে অসমর্থ হয় এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর তারা নাগেশ্বরীতে ছুটে আসে। আমাদের মুক্তিবাহিনীর বীর যােয়ানগণ নাগেশ্বরী শত্রু অবস্থান গুলিতে শ্বাসী অভিযান পরিচালনা করে গত ১২ই নভেম্বর থেকে ১৫ই নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশত পাক সেনাকে খতম করে এবং বহু সংখ্যককে আহত করে। চাক্ষুস দ্রষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে মৃত পাঞ্জাবী সৈনিকের লাশগুলি ট্রাকে করে লালমনির হাটে পাঠানাে হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্যে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে ও রংপুর হাসপাতালে পাঠানাে হয়েছে। এই অঞ্চলের পাকসেনারা ভীত হয়ে পড়েছে যে তারা স্বাভাবিক নিয়মে ঈদের নামাজ পড়তেও ভীত। কাজেই কুড়িগ্রামে অবস্থানরত পাকসেনারা জনসাধারণের জামাতের পূর্বেই পাহাড়া মােতায়েন করে নিজেরা ঈদের নামাজ সমাধা করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের এই সিদ্ধান্ত কুড়িগ্রাম মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আঃ হাফেজ মাইকের সাহায্যে প্রচার করে। ২৩শে নভেম্বর বি,বি,সির ঢাকাস্থ সংবাদদাতা নিজামুদ্দিনের পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ গত কয়েকদিন যাবৎ ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গেরিলাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সমস্ত ঢাকা শহর ঘন ঘন বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠে। এতে কয়েক ব্যক্তির প্রাণহানীও ঘটেছে, তার মধ্যে একজন রাজাকারও আছে।
এই সংবাদদাতার পরিবেশিত সংবাদে আরও প্রকাশ আজ মুক্তিফৌজগণ মুন্সিগঞ্জে অভিযান। পরিচালনা করে থানা বিল্ডিংটি একদম ধ্বংস করে দেয় এবং এতে একজন পুলিশও প্রাণ হারায়। তারপর মুক্তিফৌজের যােয়ানগন প্রকাশ্যে রাজপথে কুচকাওয়াজ করে। এছাড়াও মুক্তিফৌজগণ মুন্সিগঞ্জের লৌহজং ও অন্য একটি পুলিশফারির উপর হামলা চালায়। পাকসেনার ট্যাংক ব্যবহার। গত ২১শে নভেম্বর যশােহর, চিটাগং ও সিলেট রণাঙ্গণে মুক্তিফৌজ ও পাকসেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এই যুদ্ধে পাকসেনারা ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর বেপরােয়া আক্রমণের মুখে তারা টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনীর দাবী অনুসারে এইসব রণাঙ্গন থেকে তারা পাঁচটী ট্যাংক দখল করে নেয়। এর মধ্যে দুইটি একদম অকেজো হয়ে যায় এবং তিনটিকে আস্তো অবস্থায় পাওয়া যায়। পাক সাজোয়াবাহিনীর এই বিপর্যয়ের ফলে পাক সামরিকজান্তার মনে শেষ বিজয়ের আশার প্রদীপের শিখাটিও যেন আস্তে আস্তে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে।
অগ্রদূত ১ : ১৩
২৪ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯