মুক্তিবাহিনীর বৃহত্তম আক্রমণ যশাের সেনানিবাস ঘেরাও
(নিজস্ব সংবাদদাতা) মুজিবনগর, ২৩শে নভেম্বর। মুক্তি বাহিনী গত রােববার পাকিস্তানী সৈন্যদের ওপর এক সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে যশাের সেনানিবাস ঘেরাও করেছে। যশাের সেনানিবাস থেকে ৭ মাইল দূরে যশাের জেলার চৌগাছা, মনিয়াপুকুর প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নিলে ইয়াহিয়ার সৈন্যরা প্রথমে আক্রমণ শুরু করে। মুক্তি বাহিনীও বীর বিক্রমে যশাের সেনা নিবাসের দু’দিক থেকে আক্রমণ চালাতে থাকে। মুক্তি বাহিনীর আক্রমণের মুখে দাঁড়াতে না পেরে পাক-সৈন্যরা সেনানিবাসের চৌকিতে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুক্তি বাহিনী সেনা নিবাস ঘিরে আছে এবং যুদ্ধ অব্যাহত আছে এবং সন্ত্রস্ত পাক-সৈন্যরা এখন বিমান বাহিনী ব্যবহার করছে। এই যুদ্ধে আনুমানিক পাঁচশত পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। পক্ষান্তরে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে হতাহতের সংখ্যা খুবই নগন্য। পাক বেতার একে “হিন্দুস্থান সৈন্যের তিনিট ব্রিগেডের আক্রমণ বলে পরােক্ষভাবে সংবাদটি স্বীকার করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে যশাের সেনানিবাসই বাংলাদেশে পাক-সৈন্যদের বৃহত্তম সেনানিবাস । মুক্তিবাহিনী কুমিল্লাতেও সফল অভিযান শুরু করেছেন কুমিল্লার হাজিমগঞ্জ থানা, ফরিনগঞ্জ বান্দারত, রাহমানপুর, সাহাপুর অঞ্চলে ইয়াহিয়া সৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ করে হটিয়ে দিয়েছেন।
বর্তমান মুক্তিবাহিনী শুধু সারাদেশ গেরিলা আক্রমণই চালাচ্ছেন না, সম্মুখ যুদ্ধেও পাকসেনাদের প্রতিহত করছে। মুক্তিবাহিনীর নিক্ষিপ্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে জঙ্গী শাহীর দুটী বিমান হুমড়ি খেয়ে পড়েছে স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী মুক্তি যােদ্ধারা বাংলার আকাশ হতে দুটী পাক সামরিক বিমানকে গুলি করে বিধ্বস্ত করেছেন বলে মুক্তি বাহিনীর সদর দপ্তর হতে এক খবরে প্রকাশ। ঢাকা শহর থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল দূরে মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের নিক্ষিপ্ত গুলিতে একটি সামরিক জাহাজ ভূপাতিত হয়; জনৈক মার্কিন সাংবাদিক খবরটি সমর্থন করেছেন বলে ভয়েস অব আমেরিকার এক খবরে জানা গেছে রেডিও পাকিস্তান খবরটি ঘুরিয়ে বলেছেন যে, শিক্ষা কালীন দুর্ঘটনা। চট্টগ্রাম হতে অপর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কক্সবাজারের অনতি দূরে এক নদীতে পড়েছে। চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। মুজিবনগর হতে মুক্তি বাহিনীর সদর দপ্তর জানাচ্ছে যে, যশােহর ক্যান্টনমেন্ট, শ্রীহট্ট ও চট্টগ্রামের রণাঙ্গণে মুক্তিযােদ্ধারা খানসেনাদেরকে কোণঠাসা করে চলছেন। অতিশীঘ্রই মুক্তিবাহিনী সােনালী সাফল্যের পৌছবেন বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন। সাতক্ষীরা ভােমরা ও কলারােয়া হতে পাক সেনারা লেজ গুটাতে বাধ্য হচ্ছে বলে বিশেষ সূত্রের খবরে প্রকাশ। এ দুদিনের যুদ্ধে জগদ্দল, অমরখানা, বড় কাঠা, হাতীবাধা, রায়গঞ্জ, জাকিগঞ্জ প্রভৃতি জায়গা মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রেডিও পাকিস্তান হিন্দুস্থানী সৈন্যদের দোষারােপ করে খবরকে মেনে নিয়েছে। ৫টি ট্যাঙ্ক ঘায়েল কুষ্টিয়া জেলার মেহের পুরের কাছে মুক্তিবাহিনীর যােয়ানদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাক দস্যুদের ৫টি ট্রাঙ্ক ধ্বংস হয়। উক্ত এলাকায় এখন সম্পূর্ণ মুক্তির পথে । এখানে মুক্তি যােদ্ধারা একটা বিমান ভূপাতিত করেছেন বলে জানা গেছে। পাক সৈন্যদের কতগুলি ঘাটিও মুক্তি যােদ্ধারা গুড়িয়ে দিয়েছেন।
উত্তাল পদ্মা ১:১
২৪ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯