You dont have javascript enabled! Please enable it!

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ | একটি ভয়াবহ দলিল-চিত্র

আতিউর রহমান | জিয়া হাসান সিদ্দিকী | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ২৬ মে ১৯৭৮

(NB: নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধুর আমলের খাদ্যাভাব ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফলে সৃষ্টি হওয়া দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিকে এই লেখায় সুকৌশলে তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট জিয়া; যা এখনো অনেকের কাছে বদ্ধমূল ধারণা হয়ে আছে।)

দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। গ্রাম ডুবছে। বন্যা আসছে। বন্যার সাথে সাথে মানুষও আসছে, শহরাভিমুখে। অনাহারী মুখের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বত্র হা অন্ন, হা কর্ম। রংপুরের গৃহবধূ জাল দিয়ে আরু ঢাকছে। পত্রিকার পাতার ছবি। কলেরা হাসপাতালে রোগীর ভীড়। মৃত্যু আসছে। মতের সংখ্যা বাড়ছে। লাশ সর্বত্র। আঞ্জুমানে মফিজুল ইসলাম ব্যস্ত। ব্যস্ত চোরাকারবারীরা, মুনাফাখোর, আড়তদার, রাজনৈতিক টাউট, লুটেরা শ্রেণী এবং তাদের সমর্থক সরকার। আইন-শৃংঙ্খলা তথা প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। না খেতে দিতে পেরে মা শিশুকে ছেড়ে পালাচ্ছে। একখন্ড রুটি নিয়ে ঢাকার রাজপথে মানুষে কুকুরে টাগ অব ওয়ার। দুর্ভিক্ষ আসছে”—অন্তরীন জননেতা ভাসানীর সতর্কবাণী। সরকার, নিষ্ক্ৰিয়। দুর্ভিক্ষ পূর্ব বাংলাদেশের এই ছিল স্থিরচিত্র। চুয়াত্তরের এই দুর্ভিক্ষে প্রায় ছলক্ষ লোক প্রাণ হারায়। এর জন্য দায়ী কে? এই মতের সংখ্যা কি কমানো যেত না? এই ট্রাজেডী কি এড়ানো অসম্ভব ছিল ?

   কি অপ্রতিরোধ্য ভয়াল ও হিংস্র গতিতে এই দুর্ভিক্ষ আমাদের গ্রাস করছিল তা বুঝার জন্য আমরা দৈনিক ইত্তেফাকের কিছু পৃষ্ঠা উল্টাতে পারিঃ

  জুলাই ১৬, ১৯৭৪ঃ এ যাবত ২৩টি মহকুমা বন্যা কবলিত ।

১৯ঃ প্রবল বর্ষণে সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি।

২০ঃ চাঁদপুরের ভাঙ্গন পরিস্থিতি গুরুতর। এক বৎসরে সরকারী গুদাম হতে প্রায় ৭ হাজার মণ খাদ্যশস্য চুরি। পাটের জন্য বর্তমান বছর দুর্যোগপূর্ণ-পাট প্রতিমন্ত্রী।

২১ঃ প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি। জীবন রক্ষাকারী ঔষধ দুষ্প্রাপ্য। ঢাকার বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। ভাল চাল ১৭৫ টাকা এবং মোটা চাল ১৩৫ টাকা মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে।

২২ঃ বন্যায় ৫০ কোটি টাকার ফসল ও সম্পদ বিনষ্ট। কালোবাজারে ভুয়া তাঁত ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বৃদ্ধি।

২৩ঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ বন্যায় এই মহকুমায় শতকরা ষাট ভাগ ফসল বিনষ্ট। এক মণ পাটের দামে একটি লগিও মিলছে না বলে খবরে প্রকাশ। পাকশীতে জীবনরক্ষাকারী ওষধের তীব্র সংকট।

২৪ঃ টাঙ্গাইল, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট ও কুড়িগ্রামে সামগ্রিক বন্যা পরিস্হিতির অবনতি। নারায়ণগঞ্জঃ এই সংকটের নায়ক কাহারা ?” শিরোনামে প্রকাশিত খবরে লবণ সংকটের অশুভ তৎপরতার কথা বলা হয়। ভিক্ষা দাও পরবাসী শীর্ষক সম্পাদকীয়। রংপরে কলেরায় ৩৭ জনের মৃত্যু।

২৫ঃ বন্যা উপদ্রত এলাকায় মহামারীর করাল ছায়া। চোরাচালান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি। সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল অথৈ পানির নীচে। মুন্সীগঞ্জে-চলন্ত ট্রেনের ওয়াগন ভেঙ্গে চুরি।

২৬ঃ বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। একশত বৎসরেও এ রকম বন্যা হয় নাই-খাদ্যমন্ত্রী। বাজার বড় গরম—গত এক সপ্তাহে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য প্রকারভেদে ৬ থেকে ৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্টক থাকা সত্ত্বেও পাবনায় রেশনসামগ্রী দেয়া হচ্ছে না। আমদানী খাতে অংকের মিল নেই–অর্থনীতিবিদদের মতে আমদানী ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে । নোয়াখালীতে অনেকের অনাহারে দিন যাপন। সিলেট সীমান্তে চোরাকারবারীদের নতুন চ্যানেল।

২৭ঃ উদ্বেগজনক কলেরা মহামারী। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি। দুর্গত মানবতার কান্না—পাবনা, রংপুরে বন্যাকাত মানুষের দুর্ভোগ। আসলে লবণের স্টক নেই”-বণিক সমিতি সভাপতি।

২৮ঃ লবণের অভাব নেই- সরকারী প্রেসনোট। বণিক সমিতি সভাপতি গ্রেফতার। চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি । সর্বনাশা বন্যা গফরগাঁওয়ের দশ হাজার দিন-মজুরের মুখের অন্ন কেড়ে নিয়েছে।

২৯ঃ চালের মূল্য ২ শত টাকায় উঠেছে। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি। চোরাবাজারে রিলিফের সামগ্রী বিক্রির অপরাধে একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গ্রেফতার।

৩০ঃ বন্যার রুদ্ররোষ অব্যাহত। এমন  বন্যা আর দেখি নাই–শিল্পমন্ত্রী। নীরবে মৃত্যু গেরছে যেখানে ঘাঁটি–ঢাকায় ছিন্নমূল মানুষের ভিড়।২ মাসে ৪৫টি ট্রেন ডাকাতি।

৩১ঃদুর্গত মানবতার আহাজারি। রংপুর বন্যার পানিতে বিপর্যস্ত ক্ষুধার কষাঘাতে জর্জরিত। রংপুরের চিলমারী থানার বাসন্তীর জাল দিয়ে লজ্জা নিবারনের ছবি। বাসন্তী তের দিন ভাতের মুখ দেখেনি। বন্যার প্রবলতায় হবিগঞ্জে ও সুনামগঞ্জে কান্নার রোল।উদ্বেগজনক হারে ইনফ্লুয়েঞ্জা।রংপুর–তিনটি বধূ আর একটি উলঙ্গ বালক ক্ষুদা দমনের জন্য পাটের পাতা সংগ্রহ করছে—ছবি  । 

 আগষ্ট ১ঃ বন্যার ধ্বংসলীলায় বিদেশী মিশন প্রধানরা বিচলিত। ১৪টি জেলায় সোয়াকোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত। চিলমারী এক মুট নূন দাও। পাটার পাতা-কলার পাতা মাকিয়া আজরাইলের হাত থাকি জানটাকে বাঁচাইবার চাই-ইত্তেফাক”প্রতিনিধির প্রতিবেদন। বিশ্ববাসীর প্রতি সাহায্যের আবেদন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রাণ সামগ্রী পরিবহনের নির্দেশ। রংপুরে পাট ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

২ঃ রাজধানীর সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি। আন্তজার্তিক সাহায্যের জন্য মহাসচিবের নিকট তার বার্তা। চিলমারী-মা মরিয়াছে রোগে বাবা অনাহারে। রাজধানীর নিম্নাঞ্চলের লোকজন। উচু স্থানে উঠে যাচ্ছে।

৩ঃ ১৭টি জেলায় বন্যার বিভীষিকা। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ। ফসল ও ঘরবাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি। কুড়িগ্রামঃ ভয়া বহ বন্যা আর নদীর ভাঙ্গনে হাজার হাজার লোক গৃহহারা হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই পাশাপাশি স্বল্প মূল্যে গৃহ নির্মাণ কর্মসূচীর অধীনে ভারত থেকে রিলিফ হিসেবে প্রাপ্ত প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের কাঠ, বাঁশ ও ছন লটপাটের শিকারে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। দূর্গত মানুষের স্রোত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পথে পথে। বন্যা পরিস্থিতিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদল, সুধারামী ন্যাপ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

৪ঃ শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ আজ বন্যা কবলিত। যুদ্ধকালীন জরুরী ভিত্তিতে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত। রাজধানীতে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত। মূল শহরে বন্যার্তদের ভিড়। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবী করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান।

৫ঃ বন্যায় প্রাণহানীর সংখ্যা ৬ শতাধিক। মেঘনার চরে লক্ষ মানুষের ভাগ্য অনিশ্চিত। দাউদকান্দি ১৩ হাজার মণ সার ভেসে যাচ্ছে। নেত্রকোনায় লক্ষ লক্ষ মণ ধান পানির নীচে। রিলিফ ক্যাম্পে শত শত লোক অসহনীয় পরিবেশে বিনা চিকিৎসায় জীবনধারণ করছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যশোর, টাঙ্গাইল জামালপুর, সিলেটের বন্যাদুর্গত এলাকায় নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। । দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি। এিশ সহস্রাধিক টাকার মালামালসহ মহিলা চোরাচালানী কুষ্টিয়া সীমান্তে আটক। ফড়িয়াদের খপ্পরে পাট চাষী। পাটের নিম্ন মূল্যও চাষীরা পাচ্ছে না।

৬ঃ রাজধানীর সাথে উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পাঁচটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি। রাজধানীর বন্যা পরিস্থিতির আশংকাজনক অবনতি। ৭ঃ বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি। হাজার হাজার মানুষ শহরমুখো। কুমিল্লা—জীবিকার পথ রুদ্ধ-ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ দ্বারে দ্বারে মৃত্যুর হাতছানি। দূর্গত অঞ্চলে জিনিসপত্রের অগ্নিমল। রোগের প্রাদুভার্ব।

৮ঃ “প্রাণহানির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়িয়া চলিয়াছে_ ইত্তেফাক হেডলাইন। মৃতের সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক—ভয়েস অব আমেরিকা। সরকারী হিসাব মতে-৬ শতেরও বেশী লোকের প্রাণ হানি, ৪০ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু এবং আড়াই কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত। জাতীয় দুর্যোগের মোকাবিলায় গোটা সরকারী যন্ত্র নিয়োগের দাবী—সর্বদলীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে আতাউর রহমান খান। রাজধানীতে এক লক্ষ লোক বন্যা কবলিত। শহরবাসী উদ্বিগ্ন। অসহায় মানুষের ভীড়ে দুবৃওেরা তৎপর। একজন প্রতারক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট থেকে এক মায়ের একটি শিশু নিয়ে উধাও হয়েছে। নারী নির্যাতনের খবরও, এদিক সেদিক থেকে আসছে । নারায়ণগঞ্জে কয়েক লক্ষ শ্রমিক বেকার। বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি।

১০ঃ গত ৩৬ ঘন্টায় অধিকাংশ নদীতে পানি বন্ধি। রাজধানীতে পানি বেড়েই চলেছে। গত ৫৬ দিনের বন্যায় বাংলাদেশের ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকার মধ্যে ৩৪ হাজার বর্গমাইল এলাকা  ক্ষতিগ্রস্ত। আরও ২৩ লক্ষ টাকা ও ৭৭ হাজার মণ গম মঞ্জুর। এর ফলে এ পর্যন্ত নগদ অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রীর আকারে বরাদ্দ মোট সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা, গম ১ লক্ষ ৯৩ হাজার মণ, শাড়ী ৩৪ হাজার ৫০ খানা, লুঙ্গি ২১ হাজার ৯৫০। দুর্গত এলাকায় কলেরা মহামারী। সরকারী হিসাব মতে এ পর্যন্ত ৩২ হাজার ৪ শত ৩টি গবাদি পশর মৃত্যু ঘটেছে।

১১ঃ রাজধানীতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত। চিলমারীতে গণ-সমাধি। চিলমারী রেল লাইনের পাশে একটি গণসমাধি তৈয়ারী হয়েছে। বন্যাজনিত কারণে মত প্রায় ৫০ ব্যক্তিকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে। কুমিল্লায় ৮০ ভাগ ফসল বিনষ্ট। জাতীয় ত্রাণ কমিটির পক্ষ থেকে ঢাকায় চাঁদা আদায়কারীদের উপর পুলিশী বাধাদানে আতাউর রহমান খানের বিস্ময় প্রকাশ। রেডক্রস সমিতিকে কটাক্ষ করায় সমিতি প্রধান গাজী গোলাম মোস্তফা আতাউর রহমান খানের সমালোচনা করেন। বাংলাদেশ রেডক্রসের দুর্নীতির অভিযোগ তিনি ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন। অনেক দুর্গত এলাকায় এখনও ক্রাণ সামগ্রী পৌছেনি। জামালপুরের ১৫টি ইউনিয়নে লাশ দাফনের শুকনো জায়গাও নেই।

১২ঃ বাংলাদেশের বন্যা মানব জাতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ- লীগ অব রেডক্রস সেক্রেটারী জেনারেলের বিশেষ প্রতিনিধি। রাজধানীর ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই নেই। রেডক্রস প্রধানের বিবৃতির জবাবে আতাউর রহমান খান। নৌযানের অভাবে দুর্গম এলাকায় মেডিক্যাল টীম পৌছতে পারছে না। গত এক সপ্তাহে সেনাবাহিনী ১০৮ জন চোরাচালানীকে গ্রেফতার করেছে। খাদ্যশস্যসহ বিপুল পরিমাণ দ্রব্যাদি আটক।

১৩ঃ দুর্গত এলাকায় তৃষ্ণার্ত মানুষ দূষিত পানি পান করছে। আরও ১১ লক্ষাধিক টাকা ও ৩৮ হাজার মণ গম বরাদ্দ। বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৯০০ কোটি টাকা- ত্রাণ মন্ত্রী। জামালপুরের বিভিন্ন স্থানে গত এক সপ্তাহে অনাহারে আনুমানিক  ১৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছে। সশস্ত্র ব্যক্তিদের সাথে পুলিশের গুলি বিনিময়। কক্সবাজার-বর্মা সীমান্তে চোরাচালান অব্যাহত। পুলিশ বেশী ডাকাত আটক। কক্সবাজারে এক রাতে ১৩টি ডাকাতি। ডেমরা বাজারে মজুতকৃত মালামাল আটক। দূগর্ত এলাকা ঘোষণার দাবী জাসদ নেতৃবৃন্দ।

১৪ঃ ঢাকা শহরে ১২৪টি ত্রাণ শিবিরে সরকারী হিসাব মতে হাজার ৬ শত ১০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন ক্রাণ শিবির থেকে রিলিফ বন্টনে এ্রুটি, স্থানের স্বপ্লতা, চিকিৎসার সুবন্দোবস্তের অভাব, ময়লা পানি নিষ্কাষণের অব্যবস্থা ইত্যাদি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অংশে মহামারী আকারে কলেরা দেখা দিচ্ছে। রংপুরে খাদ্য ও বস্ত্রের তীব্র সংকট।

১৫ঃ খাদ্যের সন্ধানে মানুষে শহরের দিকে ছুটছে। রাজধানীতে আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৭ শতে উপনীত। লাইসেন্সের ভিত্তি ঘোষণা না করায় দেশের আমদানী বাণিজ্য এক অনাকাংখিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। ত্রাণ তহবিলে মুক্ত হস্তে দান করার জন্য ভাসানীর আবেদন। বূদ্ধ নেতা সাম্প্রতিক বন্যার চরম বিপর্যয়ের আশংঙ্কা প্রকাশ করে বলেন যে, ত্রাণ সাহায্য বিলম্বিত হলে চরমতম বিপর্যয় দেখা দেবে। সাতক্ষীরা-লো কষ্ট গৃহ নির্মাণের অর্থ বন্টনে কারচুপি।

১৬ঃ বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ কার্যে দেশী ও বিদেশী মুদ্রায় অবিলম্বে প্রায় ৩ শত ৬৭ কোটি টাকার প্রয়োজন-ত্রাণমন্ত্রী। ত্রাণ শিবিরগুলোর অবস্হা ভয়াবহ-আতাউর রহমান খান। ত্রাণ শিবিরে উদরাময় বিশ্ব সমাজের ব্যাপক সাড়া। রিলিফ কো-অর্ডিনেটরের। অভাবে বন্যাকবলিত এলাকায় বিদেশী সাহায্য পৌছাতে অসুবিধা সৃষ্টি  হচ্ছে।

২১ঃ বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ব্যাপক ডাকাতি—বাজার লুট। প্রবল বর্ষণ–মেঘনা গর্ভে তেইশ বর্গমাইল বিলীন-কলেরা, আমাশয়ের বিস্তার লাভ। বন্যায় ২৭ লক্ষ শ্রমজীবী বেকার। এরা প্রধানতঃ কৃষি শ্রমিক, রিক্সা শ্রমিক ও জেলে। বন্যার্তদের জন্য ২২ হাজার মণ গমবাহী জাহাজ সন্দীপের কাছে নিমজ্জিত। ঢাকার প্রাণ শিবিরে অব্যবস্থা। শিবিরে এ যাবৎ মাথাপিছু এক টাকা করেও পৌছেনি। বন্যার পানি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থান থেকে চরম খাদ্যাভাবের খবর আসছে।

২২ঃ বরিশালঃ মাঝ দরিয়ায় খাদ্যের চোরাকারবারী। বেগবতীর, ২৩ জন ক্রু সহ ৪০ ব্যক্তি গ্রেফতার। নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি। বরিশালে গো-মড়ক। তিস্তার ভাঙ্গনে ৬ শত পরিবার গৃহহীন। বন্যায় ১ কোটি লোক গৃহহারা—ক্রাণ প্রতিমন্ত্রী। ৭৫০ টন গম বোঝাইসহ কোষ্টার ডুবি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার সদস্যবৃন্দ কর্তৃক বাংলাদেশকে বন্যাজনিত কারণে ৫৪ হাজার টন খাদ্যশস্য মঞ্জুর। রমোনিয়া, ইরাক, পশ্চিম জার্মানীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ।

২৩ঃ নদীপথে ১ শত মণ গম লুট। ভাগ্যকুলে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ। যশোরে ওয়াগন হতে খাদ্যশস্য চুরি। নোয়াখালীর বাজার লুট। দশ লক্ষ টাকার সূতা কালোবাজারীর অভিযোগ। বন্যার পানি দ্রুত সরিয়া যাইতেছে, সেই সাথে বৃদ্ধি পাইতেছে রোগব্যাধি। ঢাকায় ছিন্নমূল মানুষের আগমন অব্যাহত। ক্ষয়ক্ষতি কালের মধ্যে সর্বাধিক–জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশ প্রতিনিধির(অস্পষ্ট)। কুড়িগ্রামে অনাহারে মৃত্যু—কলেরা-ভাঙ্গন। গত ৩৩ মাসে (অস্পষ্ট) কারীদের গুলীতে ৪ জন এমপিসহ ৫২৪ জন আওয়ামী কর্মী নিহত-ইত্তেফাক প্রতিনিধি। প্রভাবশালী মহলের ছএ-ছায়ায় নামক সম্পাদকীয়তে রাজধানীর বুকে ওরা কাদের ডাকাত শীর্ষক একটি  খবরে বলা হয় যে, ১৬ই আগষ্ট মধ্যরাতে একদল ডাকাত ঢাকার রায়ের বাজারে একটি জলবন্দী এলাকায় হানা দিয়া ছয়টি বাড়ি হতে চাল, ডালসহ সর্বস্ব লুট করে । উত্তরাঞ্চলের পাট চাষীরা সর্বনিন্ম মূল্য হতে বঞ্চিত।

২৪ঃ শহরে কর্মহীন সাহায্যপ্রার্থী ভিক্ষুকের ভীড়। এলাকায় মহামারীর আশংকা বিদ্যমান-ঢাকাস্হ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিশনের প্রধানের বক্তব্য। ক্ষুধার জালায় দিনাজপুরের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গত কয়েকদিনে ২৩ জনের মৃত্যু।

নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি। কুলাউড়ায় রেল ওয়াগন হইতে মালামাল চুরি। কালোবাজারে চিনি বিক্রির দায়ে ছাত্র গ্রেফতার।

 ২৫ : দুর্গত এলাকায় রোগ মহামারী পরিস্থিতির অবনতি। খাবার পানির সংকট-সংবাদ শিরোনাম। খুলনায় ১১ হাজার টাকার ধান ও ১ হাজার মণ গম লুট। সন্দ্বীপ জাহাজ হতে মাল পাচারের নিরাপদ হন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, সিরাজদী খান প্রভৃতি থানা এলাকার আইন-শৃঃখলা পরিস্থিতির সম্পর্কে দারুণ, উদ্বেগজনক খবর প্রকাশ। তেজগাঁও পুলিশ কর্তৃক সিএসডি গুদাম হতে খাদ্য পাচারের সময় ছয় ব্যক্তিকে হাতে নাতে ধরা। জামালপুরে ছুরিকাঘাতে গোয়েন্দা পুলিশ নিহত। বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন পরিস্থিতি গুরুতর। বগুড়ার বাজারে চারা বীজ দুমূল্য। বন্যায় মনপরায় ৮০ ভাগ ফসল বিনষ্ট। বন্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেচ পরিদফতরের ২২টি প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটে গো-মড়ক। জামালপুরে খাদ্যাভাব-ভেজালবিষক্রিয়া। বন্যার্ত অগণিত মানুষ। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। সীমান্তে চোরাচালান বিরোধী অভিবান। ১ সপ্তাহে ২১৫ ব্যক্তি গ্রেফতার। পাবনায় পুলিশ ও সশস্ত্র  দলের মধ্যে গুলী বিনিময়। ১ জন নিহত। ২৮ ও বন্যা-উত্তর সমস্যা প্রকট হইতেছে—সংবাদ শিরোনাম। রেশনশপে চাউল, কেরোসিন উধাও। খোলাবাজারে অগ্নিমূল্যে বিক্রি।

৩০ ঃ অনাহারে কোলের শিশুকে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে জঠর জালা নিবারণের ব্যর্থ প্রয়াসের খবর পাওয়া গেছে। মহাখালী সংক্ৰামক ব্যাধি হাসপাতালে ধনুষ্টংকার ও ডিপথিরিয়ায় ১ মাসে ৩৯ জনের মৃত্যু। ময়মনসিংহের মদনগঞ্জে থানা আক্রমণ। ২ ঘন্টাব্যাপী পুলিশ ও দত্তের মধ্যে গুলী বিনিময়। পাবনা জেলায় ১৯ কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট। সেপ্টেম্বর ১ ঃ আবার বন্যা। তিন তারিখ ত্রাণ শিবির ত্যাগের শেষ দিন। জাপান এয়ার লাইন্স জাপানী রেডব্রুস ও জনগণের সাহায্য নিয়ে এসেছে।

২ ঃ ৬টি জেলায় আবার বন্যা।

৫ ঃ ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা হ্রাস। ফরিদপুর, গাইবান্ধা ও নাটোরে নদীর ভাঙ্গন গরতর। ন্যায্যমূল্যের দোকান হতে শিশুর খাদ্য পাচার। কক্সবাজারে তিনজনের মৃত্যু। ক্ষুধার্ত মহিলার গরুর কাঁচা চোয়াল ভক্ষণ। কলেরা, বসত, উদরাময়, আমাশয়-সরকারী। হিসেবে মৃতের সংখ্যা পনের শত।

৭ ঃ ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের নতুন এলাকা প্লাবিত। খাদ্য পাচারের দায়ে বেগবতী জাহাজের ২৩ জন ক্রবরখাস্ত।

 ৮ ঃ ময়মনসিংহের আরও এলাকা প্লাবিত। সেপ্টেম্বর ৯ ও ৪টি নদীতে পানি বৃদ্ধি। বিদেশী কূটনীতিকের বাসভবন হতে ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের মালামাল লঠ। জনতার হারে ডাকাতের মৃত্যু। ঈশবরদী বিমান বন্দরে পুলিশের লাঠিচার্জ –১২ জন আহত।

১৩  বিভিন্ন নদীর পানি কমছে। নিলামে দামী সিগারেট বিক্রয়ের ব্যবস্থা।

১৫ ঃ মওলানা ভাসানীর বিবতি—আজ আড়াই মাস হইতে চলিল আমি নজরবন্দী………হাজার হাজার লোক অনাহারে মরিতেছে। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানী, লুন্ঠন গওহত্যা ইত্যাদি সমাজবিরোধী কাজ দিন দিন দেশের সর্বত্র সংক্রামক ব্যাধির ন্যয় বিস্তার লাভ করিতেছে। দেশ বিদেশের পত্র-পত্রিকা বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র বলিয়া প্রচার করিতেছে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে আরও লোক না খাইয়া মারা যাইবে তাহার পুরো আলামত দেখা যাইতেছে। শতাধিক চোরাচালানী ও প্রায় নয়শত দুবৃও গ্রেফতার।

১৬  গ্রামবাংলা হতে প্রায়ই ডাকাতির খবর আসছে।

 ১৭ বগুড়া, দিনাজপুর ও রংপুর হতে অনাহারী নারী, পুরুষ শিশু, শহর অভিমুখে আসছে। রেলওয়ে প্লাটফর্মে জায়গা না হওয়ায় এরা শহরে ফুটপাথে আস্তানা গাড়ছে। প্রতিদিন এদের মধ্যে ১০/১২ জন মরছে। ১৮ দেশের উত্তরাঞ্চলের দৃশ্য-অনাহারে মৃত সন্তানের কাফনের কাপড়ের জন্য ঘরে ঘরে সাহায্য ভিক্ষা।

২০ঃ খাদ্যাভাব শহরে ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়। অবিলম্বে লঙ্গরখানা খোলার দাবী।

 ২২ ঃ চালের দর ৯ টাকা। ঝিনাইদহে লবণের সের ১০ টাকা। অনাহারে মৃত্যু, আত্মহত্যা।

২৪: দেশে দুভিক্ষা বিরাজমান—একশ্রেণীর মজুতদার, চোরাকারবারী ও দুষ্কৃতিকারী জনগণের এই চরম অবস্থা লইয়া সর্বনাশা খেলায় লিপ্ত হইয়াছে-প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি। রংপুরে ট্রাক বোঝাই চাউল লুট। ৪ হাজার ৩ শত লঙ্গরখানা খোলার নির্দেশ। খাদ্যাভাবে আত্মহত্যার খবর। ২৫ : গ্রাম বাংলায় ক্ষুধার্ত মানুষের কান্না। রিলিফ চুরির অভিযোগে ৩ জন চেয়ারম্যান গ্রেফতার।

২৬ ঃ শুধুই ক্ষয়ের চিহ্ন ও ক্ষুধার আগুন।

২৮ ঃ রাজধানীর পথে পথে জীবিত কঙ্কাল। মজুতদারের বাড়ি হতে চারশত বস্তা চাল উদ্ধার। বাংলাদেশের জন্য ৩৬শ টন জাপানী চাল।

২৯ঃ সরকারী পর্যায়ে এখনো লঙ্গরখানা খোলা হয় নাই। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের হ্রাসের দাবীতে বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদের প্রতিবাদ মিছিল।

৩০ ঃ ক্ষুধার রাজ্যে—শিরোনামে বলা হয় বঙ্গভবনের সম্মুখের ফুটপাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে রুস্তম আলীর কনিষ্ঠপুত্র। ১৫ দিন আগে রুস্তম আলীর আর একটি সন্তান মারা গিয়েছে না খেতে পেয়ে। বাজার পরিক্রম—চালের মূল্য ৬ থেকে ৭ টাকা সের। মরিচ ১০ থেকে ১ টাকা। কোন তরকারীর সের দু-টাকার নীচে নেই। দেশ মন্বন্তরের করাল গ্রাসে। জরুরী ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হবে—৪৮ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিবৃতি। টিসিবি-র গুদাম হতে কাপড় চুরির সময় হাতেনাতে পাকড়াও। আরও আড়াই লক্ষ টন খাদ্যশস্য সাহায্যের অঙ্গীকার প্রয়োজন। অক্টোবর ১ ঃ ৬টি জেলায় ঘুর্ণিঝড়। কমপক্ষে ২১ জনের প্রাণহানি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৭৬টি লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। ক্ষুধার আগন জলিতেছে-নেত্রকোণায় ২০ জন, মোহনগঞ্জে ৩৫ জন এবং কুড়িগ্রামে ৫০ জনের অনাহারে মৃত্যু। বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ সম্প্রসারিত। আগামী মাসে দেড় লক্ষাধিক টন গম এসে পৌঁছবে।

২ঃ উত্তরাঞ্চলে শহরে শহরে নিরন্ন মানুষের ভিড়। পেটের আগুনে শুকাইয়াছে অশ্রুবিন্দুইত্তেফাক শিরোনাম। অতিবর্ষণে যশোরে এক লক্ষ একর জমির আমন ধান নষ্ট। নেত্রকোনায় বন্যাজনিত কারণে ২০ হাজার একর জমি অনাবাদী থাকার আশংকা। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র কৃষকের ক্ষুধার জালায় তাদের শেষ সম্বল ঢেউ টিন ঘরের চাল থেকে খুলে বিক্রি করছে। গতকাল পর্যন্ত ঢাকা জেলায় মোট ৭৩টি লঙ্গরখানায় প্রায় ৪৫ হাজার দুস্থ লোককে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 ৩ : লঙ্গরখানা নয় কুক ফুড সেন্টার-সরকারী ভাষ্য। রংপুরে অনাহারে ২০ জনের মৃত্যু। দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ জাতীয় সম্মেলন আহবান-ভাসানী পন্থী কৃষক সমিতি। বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত আড়াই লক্ষ টাকা মঞ্জর।

৪ঃ লঙ্গরখানায় গমের বরাদ্দ প্রয়োজনে বাড়ানো হবে-খাদ্যমন্ত্রী। খিলগাঁও লঙ্গরখানায় ৩৫০ ছিন্নমূল মানুষের আশ্রয় লাভ। প্রথম পৃষ্ঠায়, কয়েকটি মৃত লাশের ছবি। সংবাদ শিরোনাম—এখানে মৃত্যু হানা দেয় বার বার।

 ৫ : বাংলাদেশের জন্য আরও দেড় লক্ষ টন মার্কিন চাল ও গম। মধ্যবিত্তের সংসারেও অনাহারে মত্যুর আশংকা। রাজধানীতে ভুখা  নাংগা মানুষের মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। শুধুই খাবার চাই। রাজধানীতে বিত্তবানদের দ্বারে ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়। সার পাচার বন্ধের পন্থা আলোচনা-কৃষিমন্ত্রীর অফিসে পাবনায় বেরা থানায় কলেরায় ২ শত জনের মৃত্যু। খাদ্যের অভাবে খৈল ভক্ষণ। হাসপাতালে ঔষধ সরবরাহ ব্যর্থতার সমালোচনা-চিকিৎসকদের জমায়েত।

 ৬ ঃ দুই মাসের খোরাকের অতিরিক্ত ধান-চাল মজুদ রাখা যাবে না-সরকারী প্রেসনোট। সংকট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ প্রচেট জনখোন্দকার মুস্তাক। যুক্তরাষ্ট্র ফেরৎ প্রধান মন্ত্রীকে সম্বধনা জ্ঞাপনের আহবান ঢাকা নগর আওয়ামী লীগ। কঠোর বাস্তবতার স্পর্শে তারা দিশেহারা। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম ৬টি শিশু এবং ৫ জন মহিলা সহ ২১টি লাশ দাফন করে এ সংখ্যা পূর্বদিনের চারগুণ। ঢাকার রাজপথে যখন মৃত মানুষের লাশ, তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় কৃষি, শিল্প ও সংস্কৃতি মেলার অনুষ্ঠান আয়োজনের সরকারী খবরে ইত্তেফাকের প্রশ্ন এই উদ্যোগ কেন ? পাবনায় ৱেশন ডিলার লাপাত্তা। কমলাপরতে স্টেশনে অনাহারী মানুষের ভিড়—প্রথম পৃষ্ঠায় ছবি।

৭ঃ অনাহারে মৃত্যুর হিসাব সরকারের কাছে নেই-খাদ্যমন্ত্রী। বিপুল পরিমাণ চোরাচালান হচেছ বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা খাদ্যমন্ত্রী অস্বীকার করেন এবং এই দুভিক্ষবস্থার জন্য চোরাচালানী . কিঞ্চিত দায়ী। তিনি আরো বলেন দেশের ২৩ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে এবং তন্মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১২ লক্ষ টন। পাবনায় পাঁচ হাজার ব্যাগ রিলিফের গুড়া দুধ বিনষ্ট। রংপুরে ৩ শত মণ গম লুট। ঢাকা ম্যাডিক্যাল কলেজ থেকে ঔষধ চুরি। উদ্ধৃত্ত খাদ্য বাজারে। বিক্রির আহবান-খাদ্যমন্ত্রী।

৮ ঃ বর্তমান দুর্দশা নিতান্তই সাময়িক। পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার আহবান-প্রধানমন্ত্রী। দিনাজপুরে ২২ জন, ময়মনসিংহে ১৫ জন, ঢাকায় ১৭ জনের মৃত্যু। তিন লক্ষ টাকার চোরাই মাল উদ্ধার। চট্টগ্রাম জেল হতে ১০ জন আসামীর পলায়ন। লবণ সংকট, কৃত্ৰিম-কক্সবাজারের সংসদ সদস্য।

 ৯ ঃ পূর্ববর্তী ১৭ ঘন্টায় মহাখালী কলেরা হাসপাতালে ৮০ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়। ক্ষুধার জ্বালায় পাগল সাজিয়াছিমাদারীপুরের মারফত আলীর স্বীকারোক্তি। কমলাপুর স্টেশনে রুটির জন্য ক্ষতের অধীর প্রতিক্ষা (ছবি)। আজ জাতি হিসেবে আমাদের টিকিয়া থাকার পরীক্ষা-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪ জন শিক্ষকের বিবৃতি। তারা বলেন যে বাংলাদেশের দুর্ভোগ সবচেয়ে চরমতম পর্যায়ে এসে পৌছেছে। রেশনের মাল ব্যাপক আত্নসাতের অভিযোগ। সিলেটের বাজারে চাল উধাও।

১০ : ২৪ জন মজুতদার ও মুনাফাখোর গ্রেফতার। জাপান হতে এক লক্ষ টন চাল লাভের সম্ভাবনা। পাটের গুদামে আবার আগুন। দ্রব্যমূল্য প্রতিরোধ ও শিশুখাদ্যের দাবীতে মহিলা সমাবেশ ও মিছিল। বেবীফুড উধাও।

 ১১ ঃ ৪ জন খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী গ্রেফতার। ধান-চালের মজুত দারী রোধে নয়া নির্দেশ। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম ৫টি লাশ সংগ্রহ করেছে। দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন—৬২ জন” বুদ্ধিজীবীর আহবান। মত্যুপথযাত্রী মাতার বিশঙ্ক বক্ষের পাশে। তারই সন্তান দুধের অভাবে মত্যুবরণ করেছে।-(ছবির শিরোনাম) রিলিফের গুড়া দুধ বিক্রয়ের অভিযোগে ৫ জন পুলিশসহ ২৩ জন” গ্রেফতার। শেরপুরে অনেক ক্ষুধার্ত“ মার শিশুদের ফেলে পলায়ন। ২৬ মাসে জীবনযাত্রার ব্যয় ১১২ ভাগ বৃদ্ধি-বাংলাদেশ ব্যাংক। নেএকোণার বাজার থেকে চাল উধাও।  ১২ পাচার রোধকল্পে সীমান্ত এলাকায় বাধ্যতামূলক চাল। সংগ্রহ করা হবে-কৃষিমন্ত্রী। ক্ষুধার জ্বালায় তাহারা ক্ষিপ্ত হয়। ওঠে—ইত্তেফাক প্রতিবেদন। ১৩ ঃ ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৮৪ জনের লাশ দাফন। সরকার। সূত্রে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, দেশব্যাপী ৪ হাজার ৪ শত ১৫টি লঙ্গর খানায় প্রতিদিন ৩০ লক্ষ দুস্থ লোককে রুটি বিতরণ করা হচেছ, _ ঐস্বর্যের অহমিকা ও অভাবের কষাঘাতে বিক্ষত এবারের ঈদ।শীগ্রই  পরিস্থির উন্নতি হবে—খাদ্যমন্ত্রী। শূন্য ভান্ড নয়, সম্পদে ভরপুর —নিউজউইকের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকার। ধানের চারার অভাবে শত শত একর জমি অনাবাদি। ১ ব্যাত পিটিয়ে হত্যা। বায়তুল মোকাররমে ভাসানী ন্যাপ ও জাগমই এ গণজমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিল।

১৪ঃ দুর্যোগকালে উট পাখীর মত বালিতে মাথা গুজিয়া একিলে চলিবে না-তাজউদ্দিন। পল্টনে জাসদের জনসভা—ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহবান। আসন্ন মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণে লবণ উৎপাদন সম্ভব—সরকারী ভাষ্য। সিলেট–প্রশাসনিক কর্মকর্তার গাড়ি থেকে চোরাচালনকত মাল উদ্ধার। চাপাইনবাবগঞ্জ ও চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ৩৯২ মণ চাল উদ্ধার। মাদারীপুরে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা।

 ১৫ঃ কলের পরিস্থিতির অবনতি। পনেরটি জুটমিলে কাজ বন্ধ। চীনা রেডক্রসের ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর। কুষ্টিয়া কালোবাজারে বিক্রির সময় লঙ্গরখানার ৩২ বস্তা গম আটক। বীজের অভাবে উত্তরাঞ্চলে ৫০% জমি অনাবাদী থাকার সম্ভাবনা। ক্ষুধার্ত মানুষ জয়পুর হাটে লঙ্গরখানা থেকে রুটি ছিনিয়ে নেয়। ম্যান ছের মিয়া কেস ঃ আটকমাল বিক্রয়ের পর সিদ্ধান্ত বাতিল। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ১৪-১০-৭৪ তারিখে সর্বদলীয় খাদ্য কমিটি গঠনের যে আহবান জানাইয়াছেন উহার পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি যে, বর্তমান দেশের দুর্ভিক্ষ আপনার ও আপনার সরকারের কুশাসন ও দলশাসনের ফলশ্রুতি—সাবেক গণপরিষদ সদস্য ডঃ আবু সোলায়মান মণ্ডল। খুলনা জেলে স্থানাভাব। মানিকগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষকের ১৬ মাস যাবত বেতন পায়নি। ১৬ কোটি কণ্ঠের আর্তিতে এবারের ঈদ বিবর্ণ। ঢাকার লঙ্গরখানায় স্থান সংকুলান হচেছ না। দেশ ও জনগণকে বাচানোর জন্য গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন-আতাউর রহমান। ডাকাতের গুলীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ নিমজ্জিত। মাগুরায় কতিপয় সশস্ত্র ব্যক্তি এক পরিবারের ছয়জন সদস্যকে জীবন্ত দগ্ধ করে হত্যা করে। একরাত্রে ১১ বাড়িতে ডাকাতি। ১২ জন রেশন ডিলার ও ৯ জন আটাকল মালিক গ্রেফতার। দিনাজপুর সীমান্তে পাটের বদলে লবণ আসছে। ঠাকুরগাঁয়ে কলেরায় দুই শতাধিক লোকের মৃত্যু। ঈদে তিনটি নতুন ছবির মুক্তি।

২০ঃ ক্ষুধার রাজ্যে নিরাপদ পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত, কাছাড়-বাংলাদেশ সীমাতে কারফিউ জাপান ৮০ লক্ষ ডলার সাহায্য দিবে, ৩৬ দিনের জন্য দুগ্ধজাত মিষ্টি তৈরি নিষিদ্ধ। বগুড়ায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। জেলখানা থেকে ১৮ জন আসামী পলাতক। ৬ লক্ষ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচেছ—ডঃ কামাল। ভাড়াটিয়ার গহ এবং ফ্যাক্টরী লুটের অভিযোগ। রাজধানীতে অস্ত্র। উদ্ধার ও আটজন গ্রেফতার।

২১ঃ কলেরা হাসপাতালে ঘন্টায় গড়ে ৭ জন ভর্তি হচেছ। রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ২০টি লাশ দাফন! নোয়াখালীতে ১৫ দিনে ৫০০ লোকের মত্যু। চাউল বোঝাই জাহাজের গতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশে প্রেরণ। প্রকাশ্যদিবালোকে তামা পাচার। পোকার আক্রমণ ও সারের অভাবে শস্য বিনষ্ট। সরকারী তথ্য বিবরণীতে প্রকাশ, দেশের ৪৪১৫টি লঙ্গরখানায় ৩০ লক্ষ লোক আশ্রয় নিয়েছে। প্রথম পাতায় ছবিঃ নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষা ইউনিয়নের লঙ্গরখানায় ক্ষুধার্ত শিশুর লাইন। লঙ্গরখানায় অস্বাভাবিক ভিড়ের দরন রুটি বিতরণ কাড়ের স্থান করা হইয়াছে। যশোর সীমাতে ব্যাপক চোরাচালান চলছে। মাদারিপুরে আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি নিহত। রাজশাহী ও -যশোরে কলেরায় ২০০ জনের মত্যু। লঙ্গরখানায় অব্যবস্থা ও অনিয়মর অভিযোগ। লবণ ও সারের বিনিময়ে ব্যাপকহারে পাট পাচার।  ঘন্টায় ১১ জন কলেরায় মত্যু। রংপুরে গমের ওয়াগন লুট। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে শেখ আবদুল্লাহ উদ্বিগ্ন। পটুয়াখালীর বাউফল থানাধীন ধলিয়া গ্রামে চালের সের ১৩ টাকা আটা সাড়ে আট টাকা।

২২ঃ ইন্দিরা গান্ধীর নিকট চোরাচালানী বন্ধের জন্য মওলানা ভাসানীর তারবার্তা। নওগাঁয় পেটের পীড়ায় ১ মাসে ৩০০ লোকের দিনাজপুরে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের রেশনের জন্য মিছিল। কলেরার ব্যাপকতা, বিভিন্ন এলাকায় বহুলোকের মৃত্যু। এতে ১ সপ্তাহে ১৬ ব্যক্তি খুন। আওয়ামী লীগ অফিসে কাঙ্গালী ভোজ। বন্যার্তদের সাহাযার্থে শাড়ির ফ্যাশন শো। সোনা ও রূপাসহ চোরাচালানী গ্রেফতার। দূর্গা উৎসব শুরু।

২৩ ঃ রংপুরে কলেরা ও অনাহারে সহস্রাধিক লোক মরছে। চোরাচালানীদের পোয়াবারো। কলেরা হাসপাতালে ৭ ঘন্টায় ৬৮ জন ভর্তি। লৌহজঙ্গ থানা রক্ষী ক্যাম্প আক্রমণ প্রতিহত। কলেরায় রাজশাহীতে ১ মাসে, সহস্রাধিক লোকের মৃত্যু।

২৪ ঃ হেরিনজননী মাগিছে ভিক্ষা ঢেকে রাখি ঘরে ছেলের লাশ —প্রথম পাতার ছবি। ৭০ জন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি—দভিক্ষ প্রতি রোধ মৌলিক রাজনৈতিক প্রশ্ন। শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতির চেষ্টা, পুলিশের গুলী ও জনতার প্রহারে ৩ জন নিহত। রংপুরে ৫ লক্ষ নরনারী ও শিশ, মত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত। রংপুরকে বাঁচাও সম্পাদকীয়।

২৫ ঃ দিনাজপুর হইতে ট্রাক বোঝাই ধান-চালের নিরুদ্দেশযাত্রা। ক্ষুধার জালায় আটার সাথে বিষ মিশাইয়া আট জনের মৃত্যু। মানছেরু মিয়ার আত্নসমপর্ণ। চোরাচালানের বিরদ্ধে রাখিয়া দাঁড়াও-ইত্তেফাকের আবেদন। ২৫৪ জন কলেরা রোগী হাসপাতালে আনীত। বানারিপাড়ায় পুলিশের সাথে গুলীবিনিময়ে ৫ জন নিহত। নারায়ণ গঞ্জে ক্ষুধার্ত কঙ্কালসার মানুষের ভিড়। গ্রাম বাংলায় ডাকাতের দৌরাতন বেড়ে চলছে। খুলনার সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ। ঢাকা শহরে ১ ব্যক্তি গুলীবিদ্ধ। তেজগাঁয়ে ডাকাতির প্রচেষ্টা, ১ জন গ্রেফতার। ৪৮ ঘন্টায় ১৯০ জন কলেরা হাসপাতালে আনীত। আটার সাথে ভূশি মিশানোর দায়ে ৫ জন মিল মালিক গ্রেফাতর। ৪৫ টাকা দরে সরিষার তেল বিক্রি।

২৬ ঃ মওজত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ঘোষণার কি হইল ? ইত্তেফাকের প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ কর্মী খুন। সরকারী নিস্ক্রিয়তা ভয়াবহ -সম্পাদকীয়।

২৭ঃ রংপুরে খাদ্যের দাবীতে মিছিল। চারিদিকে শুধু; মৃত্যুর বীভৎস চিত্র। মৃতা মায়ের শক্ত স্তনে মুখ লাগাইয়া প্রাণ ধারণের চেষ্টায় রংপুরের একটি শিশু—প্রথম পাতার ছবি। কালোবাজারে চিনি বিক্রি, চেয়ারম্যান গ্রেফতার। দাউদকান্দিতে ২ সহস্রাধিক মণ খাদ্যশস্য ও লবণ উদ্ধার। পাম্প, সার ও কীটনাশক ঔষধের অভাবে উৎপাদন প্রচেষ্টা ব্যর্থ।

২৮ ঃ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কার হাতে—ইত্তেফাকের প্রশ্ন। ঢাকা শহরেই চালের সর্বনিম্নমূল্য ৯ টাকা। চার লক্ষ টাকার গুড়া দুধ নষ্ট। রংপুরে অবিলম্বে বিমান হইতে খাদ্য নিক্ষেপের আবেদন। চোরাচালানের নেপথ্য কাহিনী—ওপেন সিক্রেট। সশস্ত্র ব্যক্তির গুলীতে ১ জন নিহত। লঙ্গরখানায় অব্যবহার অভিযোগ। কালো টাকার উচছৃঙ্খলতা।

 ২৯ ঃ লঙ্গরখানায় দুর্নীতি। চিনিভর্তি ওয়াগন লাপাত্তা। কেরোসিন ডিলার লাপাত্তা। নাটোরে কলেরায় সহস্রাধিক লোকের মৃত্যু। অনিয়মিত রেশন সরবরাহ যশোরে এ পর্যন্ত ৫০০ জনের অনাহারে মৃত্যু। বগুড়ায় বাজার লুট। কেরোসিনের অভাবে বাতি জ্বলে না, লবণ দুষ্প্রাপ্য।

৩০ঃ মজুতদারী ও কালোবাজারীর দায়ে সংসদ সদস্য গ্রেফতার। আওয়ামী লীগ কর্মী খুন। এ সপ্তাহের মধ্যে খাদ্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে-খাদ্যমন্ত্রী। তিন মাসের জন্য ধর্মঘট নিষিদ্ধ। বিবৃতির রাজনীতিতে ভাসানীর শেষকথা। লঙ্গরখানায় দূর্নীতি প্রসঙ্গে সম্পাদকীয়। বরিশালে খাদ্য ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি । গ্রাম-বাংলায় অগনিত মানুষ অকাল মৃত্যুর শিকার হচেছ। দুর্ভিক্ষের সাথে বেকারত্ব প্রকট রূপ নিচ্ছে। কালোবাজারে রিলিফের দুধসহ চেয়ারম্যান গ্রেফতার। রিলিফে দুধ বিক্রয় কালে ভাইস-চেয়ারম্যান পাকড়াও। নিলফামারীতে কলেরায় ৭০০ জনের মৃত্যু।

৩১ ঃ ২৭টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন। পথের পাশে মাথার খুলি। লঙ্গরখানা থেকে হাজতে।

নবেম্বর ১ঃ খাদ্য গুদাম থেকে চাল পাচার। লবণ মজুদ ও কালোবাজারীর দায়ে সংসদ সদস্য গ্রেফতার। ফরিদপুরের গ্রামে লবণের সের ২৪ টাকা। সোনার দরে মরিচ—সের ১০০ টাকা। রংপুরের পথে ঘাটে হাড্ডিসার কাচমুখের মিছিল। বরিশালে ১২৬ জনের মৃত্যু। রিলিফ আত্মসাৎ, চেয়ারম্যান গ্রেফতার। পুলিশ কর্তৃক কালোবাজারে চাল বিক্রি। ২৪ প্রতিদিন ৫,৭৫৭টি লঙ্গরখানায় ৪২ লক্ষ লোককে খাওয়ানো হচেছ—সরকারী ভাষ্য। চোরাচালানীর ধরন পাল্টাইয়াছে-ইত্তেফাক প্রতিবেদন। রক্ষী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত। নীলফামারীতে দৈনিক শতাধিক লোকের মৃত্যু।

 ৩ঃ দাদনের বিনিময়ে ৪০ টাকা মণ দরে ধান। অভাবের তাড়নায়। ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই বিক্রয়।

৪ঃ ১ লক্ষ টাকার সুতা উদ্ধার ৫ ব্যক্তি গ্রেফতার। ১৬টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন। কালোবাজারে লবণ বিক্রয়। ব্যাপক চোরাচালানই সঙ্কটের একমাত্র কারণ—কামরুজ্জামান। রাজধানীতে শিশু, মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।

৫ঃ বিবিসির মতে দুর্ভিক্ষে লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু। ডাকাতির অভিযোগে পুলিশের হাবিলদার ও কনস্টেবল গ্রেফতার।

৬ঃ শহরে অনাহারে মৃত্যু। অশুভ ব্যবসায়ীদের তৎপরতা। ঝালকাঠিতে রিলিফের গম আত্মসাৎ।

৭ঃ বিদেশী ট্রলার যোগে লক্ষ লক্ষ টাকার পণ্য পাচার। চোরাচালানী দেখামাত্র গলীর নির্দেশ। চোরাচালান জমজমাট হইয়া উঠিয়াছে।

৮ ঃ আসন্ন শীতে তিন লক্ষাধিক শিশু, মৃত্যুর আশঙ্কা। ৬০০  ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার।

৯ঃ সিরাজদিখান থানায় হামলা প্রতিহত। রাজশাহী সীমান্তে কারফিউ ১৪টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন। মুন্সিগঞ্জে ৩টি লাশ উদ্ধার।

১০ঃ সাতক্ষীরায় বাজার লুট। রংপুর দিনাজপুরে ৬০০ চোরাচালানী গ্রেফতার। নারায়ণগঞ্জ বন্দরে ৪৫,০০০ টাকার চোরাইমাল উদ্ধার। ৬ ব্যক্তি গ্রেফতার।

১১ঃ সারের অভাবে মুন্সিগঞ্জে কয়েক হাজার একর জমি পতিত থাকার আশংকা।

১২ঃ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতি বানচাল করার চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে—খাদ্যমন্ত্রী। ২০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানী নীতির পরেও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি—ইত্তেফাক রিপোর্ট। সাহায্যের অভাবে লঙ্গরখানায় অচলাবস্থা।

 ১৩ঃ উত্তরাঞ্চলে, ৫০ টাকা মণ দরে কাঁচা ধান বিক্রয়—চোরাচালানীরা তৎপর। অর্থাভাবে জামালপুরের শিশু, লঙ্গরখানাটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

১৪ঃ সমস্যার সমাধান করিতে পারি নাই। একথা স্বীকার করিতে হইবে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের বক্তব্য।

১৫ঃ চালের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী।

কেন এই দুর্ভিক্ষ?

এ প্রশ্নের জওয়াব খুজতে গিয়ে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে। দুর্ভিক্ষ কি এবং দুর্ভিক্ষের সাধারণ কারণগুলো কি কি। দুর্ভিক্ষের উপর বিশ্লেষণাত্মক আলোচনার বড় অভাব। তবু, সমকালীন গবেষণায় দূর্ভিক্ষ সংক্রান্ত যে দুএকটি তত্ব লক্ষ্য করা যায় তার সাহায্য নিয়ে আমরা বিষয়টি সংজ্ঞায়িত ও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো। জাতিসংঘের সামাজিক উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে ৪ দূর্ভিক্ষ এমন একটি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা যেখানে খাদ্য ঘাটতি অত্যন্ত প্রকট রুপ নেয় এবং যার ফলে বাইরের সাহায্য ব্যাতিরেকে ব্যাপক মৃত্যু ঘটে।(ফেমিন রিস্ক ইন মডার্ণ ওয়ার্ড, জেনেভা আগস্ট ১৯৭৫)। লিক্স মনে করেন ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির পরিমানে আঞ্চলিক মৃত্যুর হারের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিই হচ্ছে দূর্ভিক্ষ (ফেমন  এ সিম্পােজিয়াম ডিলিং উইথ দি নিউট্রেশন এন্ড রিলিফ অপারেশনস ইন টাইমস অব ডিজাস্টারস, সুইডেন, ১৯৭১)। অপরপক্ষে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ডঃ মহিউদ্দিন আলমগীর বলেন ঃ দূর্ভিক্ষ এমন একটি অবস্থা যে সময় মাথাপিছু, খাদ্য গ্রহণ একটানা কমতে থাকে এবং সে সময় ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর মধ্যে এমন কিছু লক্ষণ দেখা যায় যার পরিণতিতে কোন দেশে বা অঞ্চলে অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটে। এই লক্ষণগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক হানাত্তর (মাইগ্রেশন) বৃদ্ধি অপরাধ। বৃদ্ধি, মারাত্মক ব্যাধির পরিমাণ বৃদ্ধি, শারীরিক ওজন হ্রাস, বিকল্প অখাদ্য গ্রহণ, পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধি, মানসিক ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধি, পারিবারিক বন্ধনহীনতা বৃদ্ধি, সম্পত্তির হস্তান্তর, পরিবারের ব্যাপক উচ্ছেদ, সনাতনি সামাজিক বন্ধনে আস্থাহীনতা ইত্যাদি অন্যতম। [এন এপ্রােচ টুয়ার্ডস এ থিওরী অব ফেমিন, ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, সুইডেন, অক্টোবর ১৯৭৭]।

এ সংজ্ঞাগুলো অনেকটা ক্লিনিক্যাল। এগুলোর কোন সামাজিক প্রেক্ষিত নেই। অথচ আমরা জানি যে-কোন দুর্ভিক্ষে একটি বিশেষ শ্রেণী আক্রান্ত হয় এবং আর এক শ্রেণী তার ফায়দা লুটে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জটিল সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একথাটি আরো বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এবার দেখা যাক সাধারণতঃ দুর্ভিক্ষের কারণগুলো কি কি ?

১। ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি।

২। ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এ, কে সেন মনে করেন যে ক্রয় ক্ষমতা হ্রাসের ফলে বিভিন্নশ্রেণী বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হয় এবং এর ফলে সামাজিক শক্তির ভারসাম্যে এক নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করে। এর অবধারিত পরিণতি দুর্বল শ্রেণীর জন্য ব্যাপক

৩। কোন অর্থনীতি যদি আন্তর্জাতিক বাজারের উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং দেশীয় সম্পদ আহরণে ব্যর্থ হয়, তবে আন্তজাতিক বিনিময় অর্থনীতির সামান্য হেরফেরেই যে কোন দেশে . ব্যাপক অর্থনৈতিক নৈরাজ্য তথা দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

৪। স্বাভাবিক খাদ্য সরবরাহ চ্যানেলে বিঘ্ন ঘটলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হতে পারে। সরকারী হস্তক্ষেপ বা নিরপেক্ষতা—দুই এ বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনেক সময় সরকার ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে খাদ্য সরবরাহ ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অনেক সময় আবার। ইচ্ছে করেই সরকার তার শ্রেণী স্বার্থের প্রয়োজনে এক শ্রেণীকে সুবিধা দিতে গিয়ে অন্য শ্রেণীকে বিপর্যয়ে ফেলতে পারে। এভাবেই শ্রেণীভিত্তিক দুর্ভিক্ষে সৃষ্টি হতে পারে।

৫। যে অর্থনীতিতে আয়ের বৈষম্য যত তীব্র, সেখানে ক্রয় ক্ষমতার ব্যবধান তত উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের অর্থনীতিতে সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছুতা ধরে দুর্ভিক্ষ যে কোন সময় নেমে আসতে পারে।

৬। যে অঞ্চলে উৎপাদন শক্তিসমূহ অনুন্নত এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি, সেখানে দুর্ভিক্ষ যে কোন মুহূর্তে হানা দিতে পারে।

৭। শোষণমূলক সমাজব্যবস্থায় উৎপাদক শ্রেণী (বর্গাচাষী, ভূমিহীন কৃষক ইত্যাদি) মধ্যস্বত্বভোগীদের (জমির মালিক, মহাজন ফড়িয়া ইত্যাদি) মুনাফার সহজ শিকার। দুর্ভিক্ষ পূর্ব সময়ে দ্রব্য মূল্যে সামান্যতম পরিবর্তনকে সম্বল করেই মধ্যস্বত্বভোগীরা  মুনাফা লুটতে উদ্যোগী হয়। পরিণামে উৎপাদক শ্রেণী দুর্ভিক্ষের শিকার হয়।

৮। ঋতুরভদে বেকারত্বের মারাত্নক হেরফের হয়। একই সাথে এ পরিবর্তিত হয়। যে ঋতুতে কর্মসংস্থানের স্বাভাবিক সুযোগ সেই সময়েই দুর্ভিক্ষ ঘটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এসব কারণ দেখে আমরা সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে, দুর্ভিক্ষের কারন প্রাকৃতিক হতে পারে, কিন্তু এর তীব্রতা, এর প্রভাব কোন শ্রেনির উপর কতটুকু পড়বে তা পুরোপুরি নির্ভর করে আর্থ-সামাজিক কাঠামোর উপর।

প্রেক্ষিত বাংলাদেশঃ

 উল্লেখিত বিশ্লেষণ, কাঠামোর সাহায্যেই আমরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দুর্ভিক্ষে কারণ ও প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারি। স্মরণকালে বাংলাদেশের সবচেয়ে সংকটজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল চুয়াত্তরে। দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে যে আর কোন দিন হয়নি তা নয়। ১৯৪৩ সনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সংকটকে কেন্দ্র করেও বাংলাদেশে মন্বন্তর ঘটে গিয়েছে। সরকারী হিসেবে প্রায় পনের লক্ষ লোক সে সময় প্রাণ হারিয়েছে। এর আগে অতি বৃষ্টির ফলে ১৮৬৬ সনেও দুর্ভিক্ষ এসেছিল। কিন্তু চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ এসব থেকে একটু ভিন্ন চরিত্রের। এত অল্প সময়ে এমন অপ্রতিরোধ্যভাবে এ দুর্ভিক্ষ এসে ছিল বলেই পুরো সমাজ ব্যবস্থাটাই যেন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। চুয়াত্তরের এই দুর্ভিক্ষ অবশ্য এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। অনেকদিন ধরেই আমাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক কাঠামোতে এমন সব অশুভ শক্তি সক্রিয় ছিল যে এমন একটি দুর্যোগ এক সময় অবধারিত হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে (অনেকে যাকে দুর্ভিক্ষের অর্থনীতিও বলে থাকেন) এমন কিছু, মৌলিক দুর্বলতা রয়েছে যা শক্ত হাতে ঠিক না করলে মাঝে মধ্যে সামান্য প্রাকৃতিক বা অন্য কোন ধরনের দুর্যোগের অজুহাঁতেই বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। আর, বন্যা, খরা তো এদেশে লেগেই আছে। এমনিতেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে ধস লেগেছে। আধ-ভাঙ্গা সেই সামাজিক কাঠামোর উপর ভর করেই এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় জেকে বসেছিল স্বাধীনতাউত্তরকালে অনুৎপাদক এক ফড়িয়া শ্রেণী। সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে কোন ধরনের সংস্কার না এনে এই রাজনৈতিক সুবিধাভোগী শ্রেণীর লাগামহীন শোষণ ও লুন্ঠনে আর্থসামাজিক সেই নাজুক ভারসাম্য আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এমনি এক ক্রান্তিকালে বন্যা ও চোরাচালানীর মতো বাইরের শক-এর ফলে এক মারাত্বক নৈরাজ্য তথা দুর্ভিক্ষ নেমে আসে বাংলাদেশে। 

এই প্রেক্ষাপট মনে রেখেই আমরা চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কারণগুলো অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবো।

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ হিসেবে সাধারণতঃ মারাত্বক খাদ্য ঘাটতিকে  দায়ী করা হয়ে থাকে। একথা অবশ্য, ঠিক যে দুর্ভিক্ষর সময়ে ব্যাপক বন্যার ফলে সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বেশ ব্যাহত হল। কিন্তু যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছিল, সে তুলনায় কিন্তু খাদ্য অনেক বেশি প্রকট রূপ নিয়েছিল। নিম্মের ছক থেকে আমরা খাদ্যর পরিস্থিতির খুব একটা অস্বাভাবিক চিত্র খুজে পাই না।

মোট চাল উৎপাদন (আউশ , আমন, বোরো)

(টন হিসাবে)

১৯৭২-৭৩ ১৯৭৩-৭৪ ১৯৭৪-৭৫
বাংলাদেশ ৯৯৩০,২৩৫ ১১৭২০,৯৩৫ ১১১০৮,৬৪৫
রংপুর ৯১১৮২৫ ১১২০,৩২০ ১০৩৭,৭৯০
ময়মনসিংহ ৭৯২,৮২০ ১০২২,৩৯৫ ৯৬৮,৪৭৫

  সূত্র ঃ আলমগীর এম, ফেমিন ১৯৭৪ ঃ পলিটিক্যাল ইকোনমি অব মাস স্টাভেশন, ১৯৭৭, পৃঃ ৩১।

উপরের এ তথ্য থেকে দেখা যায় ১৯৭২-৭৩ সনের তুলনায় ১৯৭৩-৭৪  সনে খাদ্য উৎপাদন বেশ বেড়ে যায় । কিন্তু ১৯৭৪-৭৫ উৎপাদন বন্যা পরিস্থিতির জন্য কিছুটা কমে যায়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে ১৯৭৪-৭৫ সনের উৎপাদন হ্রাস পেলেও তা ১৯৭২ ৭৩ সনের তুলনায় বেশ বেশি। অথচ ৭২-৭৩;এ দুর্ভিক্ষ না হয়ে, দুর্ভিক্ষ হলো ৭৪-৭৫-এ। এর যৌক্তিকতা কোথায় ? শুধুমাত্র খাদ্য ঘাটতিতে নয় নিশ্চয়। প্রাকৃতিক কারণে যে সামান্য খাদ্য ঘাটিত হয়েছিল, তাকে আরো অধিক ভয়াবহ করে তোলে তৎকালীন শাসক, গোষ্ঠীর কৃপাপুষ্ট চোরাচালানী, মজুর, ফড়িয়া প্রভৃতি সমাজবিরোধীরা। যোগাযোগ ব্যবহার বিচিছন্নতার সুযোগ নিয়ে, প্রশাসন যন্ত্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগে, বড় বড় রাজনৈতিক রুই কাতলাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় নির্বিচারে চলতে থাকে চোরাচালান ও মজুতদারী। সৃষ্টি করা হয় কৃএিম খাদ্য সংকট। একমাত্র রংপুর এলাকায় খাদ্যশস্য এমন ব্যাপক হারে চোরাচালান হয় যে মাত্র বছর খানেকের ব্যবধানে এই এলাকায় চালের দাম ২১৯% বেড়ে যায়। ময়মনসিংহেও একই অবস্থা ঘটে। একদিকে যখন প্রাকৃতিক এবং সমাজবিরোধী অংশের তৎপরতায় খাদ্য ঘাটতি প্রকট রূপ নিচ্ছিল, সরকার সে সময় নির্বিকার ছিল। মনে হয় সরকার সে সময় খাদ্য পরিস্থিতিটি আগে থেকে সঠিকভাবে মূল্যায়নই করতে পারেনি। ১৯৭৩ সনের শুরু থেকেই সরকারী গুদামগুলোতে খাদ্যস্টক কমতে থাকে। একই সাথে খাদ্য আমদানীও কমতে থাকে। বিশেষ করে দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময়ে খাদ্য গুদামগুলো অনেকটা খালি ছিল বললেই চলে। সংকটকালীন মাস গুলোতে খাদ্য আমদানী কি মারাত্মক পর্যায়ে নেমে এসেছিল তা নিম্নের ছক থেকে বুঝা যাবে।

খাদ্যের স্টক ও আমদানী (হাজার টন)
১লা জানুয়ারীতে স্টক খাদ্যসংগ্রহ খাদ্য আমদানী
সন চাল গম মোট ধান চাল গম মোট
১৯৭৩ ৯৪ ১২৩ ১৩৭ ২৫০ ১০৬০ ১৩৯০
১৯৭৪ ৪৪ ২২৩ ২৬৭ ৭১ ৯০ ১৫৮৯ ১৬৭০

সুত্র ঃ আলমগীর, ঐ, পৃঃ ৪৫।

মাদনক্রমে স্টক ও আমদানী (১৯৭৪-৭৫ সন) হাজার টন
স্টক আমদানী
মাস চাল গম মোট চাল গম মোট
জুলাই ২৭ ২৯৩ ৩২০ ২৮৭ ২৯১
আগষ্ট ২৭ ৩২০ ৩৪৭ ১২ ২১৩ ২২৫
সেপ্টেম্বর ২২ ১৯৭ ২১৯ ২২ ২৯
অক্টোবর ২২ ১১৫ ১৩৭ ১২ ৬৪ ৭৬

সূত্র ঃ আলমগীর ঐ, পৃঃ ৪৭-৪৮,খাদ্য মন্ত্রণালয়।

 সরকারের উপযুক্ত খাদ্যনীতির অভাব, আপাতঃ ঔদাসীন্য এবং সরকারী এজেন্সীগুলোর সমন্বয় হীনতা এই ভয়াবহ খাদ্য সংকটের পেছনে যে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সরকারের আভ্যন্তরীণ এই কাণ্ডজ্ঞানহীন নীতিমালার সাথে আন্তর্জাতিক মহলের চাপও সে সময় যুক্ত হয়েছিল বলে অনেকেই মত প্রকাশ করে থাকেন। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের একটা অভিযোগ সে সময় বেশ প্রচলিত ছিল। অভিযোগ করা হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৪-এর প্রথম এবং মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে খাদ্য পাঠানো হয় বন্ধ করে দেয় অথবা কমিয়ে আনে। অনেকে বলেন রাশিয়ার সাথে বেশি মাখামাখি এবং কিউবার কাছে পাট রফতানি করার ফলেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিক্রিয়া। পররাষ্ট্র ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারে। এছাড়াও তৎকালীন সরকারের আর একটি ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ করা হয় যে, বাংলাদেশ সরকার তার খাদ্য স্টকের এমন মারাত্মক অবস্থা জেনেও কোন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অনেকে বলেন, সরকার ইচ্ছে করলে এই সংকটকালীন সময়ের জন্য ভারতীয় আমদানী তফসলি থেকে কিছু, খাদ্য ডাইভার্ট করে আনতে পারতো। অনেকে বলেন পরিকল্পনা কমিশন এভাবে খাদ্য সংগ্রহের বিরোধিতা করে। কথাটা কতটুকু সত্যতা জানিনা। তবে সরকারের ভিতরের এবং বাইরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়হীন কার্য কলাপের বহু, নজির সে সময়ে লক্ষ্য করা গিয়েছে। খাদ্য সরবরাহে ব্যর্থতা এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের মোকাবেলা না করে বরং ক্রমাগত সমর্থন করার জন্যই যে চুয়াত্তরের মত এমন একটা ট্রাজেডী আমাদের জাতীয় জীবনে ঘটে গিয়েছে তা জোর দিয়েই বলা চলে। মেরুদন্ডহীন পরনির্ভরশীল রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ঘরের ভেতরে এবং বাইরে। একশ্রেণীর মুনাফাখোর রাজনৈতিক ব্যবসায়ী(দেশের ভেতরের তথাকথিত বন্ধ দেশের) হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে দিতে গিয়ে জাতিকে সে সময় দিতে হয়েছিল এক চরম মূল্য। ক্রয় ক্ষমতার তারতম্যের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে সরকারের ভ্রান্ত মূল্যনীতি, আয়নীতি এবং সম্পদ বন্টন নীতির ফলে বেশির ভাগ মানুষের প্রকৃত আয় দিন দিন কমতে থাকে। দ্রব্য মূল্য হু হু করে বাড়তে থাকে, কালোবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি হতে থাকে এবং সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠতে থাকে। শুধুমাত্র মোটা চালের খুচরো মুল্যের পরিবর্তন থেকেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভয়াবহ রূপ অাঁচ করতে পারি। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে প্রতি মণ মোটা চালের খুচরো মূল্য ছিল ১৪১.৭৮ টাকা (সরকারী হিসাব–“কৃষি বাজারজাতকরণ পরিদফতর), আগস্টে তা হয় ১৭১.২৫ টাকায়, সেপ্টেম্বরে ২১২ . ৮০ টাকায় এবং অক্টোবরে তা দাঁড়ায় ২৫১.৭৮ টাকায়। রংপুরে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক ছিল। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে প্রতি মণ মোটা চালের দাম ছিল যথাক্রমে ১৫০.০৫ টাকা, ১৭৪.৭৫ টাকা, ২৭৫, ৬৩ এবং ২৭৪.৭৮। বেসরকারী হিসাব মতে দুর্ভিক্ষকালীন সময়ে চালের দাম অবশ্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মাঝামাঝি ওঠানামা করত। পক্ষান্তরে সরকারী হিসাব মতে (বাস্তবে আরো কম), একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক গড় আয় ছিল ১৯৭৪ সনে ৪ সমগ্র বাংলাদেশে ৮.০৬ টাকা, রংপুরে ৬.৩৩ টাকা, যশোরে। ৫.৮১ টাকা, ময়মনসিংহে ৮.১৮ টাকা। শুধুমাত্র রংপুরে এ বছরের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে দৈনিক মজুরী ছিল গড়ে দুটাকা। অন্য কথায়, যদি আমরা ধরেও নেই যে প্রতিটি কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থান ছিল বাস্তবতা।

গল্প সংস্থান ছিল (বাস্তবে যা ছিল না), তবু, একজন শ্রমিকের পক্ষে এই টাকা দিয়ে নূন্যতম চার সদস্যের একটি পরিবারকে খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এবং এরাই শিকার হয়েছে দুর্ভিক্ষের। এরাই লঙ্গরখানায় ভিড় করেছে এবং প্রাণ হারিয়েছে। বি আই ডি এস-এর জরিপ থেকে দেখা যায় যে, রংপুরে দুর্ভিক্ষে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের বেশির ভাগই ছিল হয় ক্ষেতমজুর অথবা স্বল্প জমির মালিক। বিভিন্ন জেলার আটটি লঙ্গরখানা জরিপ করে বি আই ডি এস দেখেছে যে, লঙ্গরখানায় আশ্রয় গ্রহণকারীদের , ১৭ , ৮৯% ছিল দরিদ্র চাষী, ৪৪.৯২% কৃষি শ্রমিক, ২০ . ৪৩% অকৃষি মজুর এবং অন্যান্য বাকী ১৬, ৪৩%। আর এক হিসেবে এই জরিপে দেখানো হয়েছে যে যাদের জমি ৭.৫ একরের উর্ধে তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৫০% লঙ্গরখানায় আশ্রয় নিয়েছিল, যাদের জমি ২. ৫ থেকে ৫.০ একর তাদের সংখ্যা ছিল ২৬% এবং যাদের জমি ২. ৫ একরের নিম্নে তারা ৬৯%। লঙ্গরখানার এইসব তথ্য আমাদের পূর্বতন ধারণাই প্রমাণ করে। ভূমিহীন এবং প্রায় ভূমিহীন কৃষক দের আয়ের উৎস এমনি সীমিত হয় যে তারা সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্ব খুইয়ে কপর্দকহীন হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে শহর হয়ে গড়ে এবং এক পর্যায়ে শহর অভিমুখে রওয়ানা হয়। খাওয়ার মতো খাদ্যশস্য তাদের ঘরে থাকে না বলে তারা অধিক হারে ধনী কৃষকদের নিকট থেকে ঋণ বা দাদন নেয় এবং ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এক সময় তাদের জমিজমা এবং হালের বলদসহ অন্যান্য সম্পদ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে। তাও যখন সম্ভব হয় না, তখনই এসব কর্মক্ষম মানুষ (সাথে তাদের পরিবার) শুধুমাত্র কর্মের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় শহরে এসে ভিখেরীতে পরিণত হয়। উল্লেখিত জরিপ অনুযায়ী, দেখা যায় প্রায় ৬% লঙ্গরখানা। অধিবাসী তাদের সমস্ত জমিই বিক্রি করে ফেলেছিল এই দুর্ভিক্ষে, ৭% লঙ্গরখানাধিবাসী তাদের ৫০% থেকে ১০০% জমিই বিক্রি করে ফেলেছিল এবং ১৫% অধিবাসী তাদের ৫০% জমি বিক্রি করে ফেলেছিল। একই জরিপে আরো দেখা যায় যে প্রায় ৫২% অধিবাসী তাদের জমি ছাড়াও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে ফেলেছে। রংপুরে ৫% অধিবাসী জমি বিক্রি করেছে, ৭২%, অধিবাসী জমি এবং অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করেছে এবং ৭২% অধিবাসী অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করেছে। লঙ্গরখানায় আশ্রয়গ্রহণকারী পরিবার গড়ে ৩২৪ . ৮৪ টাকা কর্জ নিয়ে ” আরো খারাপ। প্রতি পরিবারের কর্জের পরিমাণ রংপুরে ৪৪৪ . ০০ টাকা। আত্নীয় স্বজনের কাছ থেকে সাহায্য এসেছিল রংপুরে মাত্র ১৮ , ৬৭ টাকা। লঙ্গরখানা ভিত্তিক মৃতের হিসাব নিম্নে দেয়া হলঃ

জায়গা মোট জনসংখ্যা মৃতের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মৃতের হার   (শতকরা)
বাগের হাট ৫০৭ ১৬ ৩.১৬
ময়মনসিংহ ৫৮২ ১৪ ২.৪১
ঢাকা ৫৯৭ ১৮ ৩.০২
খুলনা ৭০৪ ১.১৪
রমনা (রংপুর) ৪৫৩ ১৬ ৩.৫৩
দেওয়ানগঞ্জ (ময়মনসিংহ) ৫৬৩ ১৯ ৩.৩৭
রংপুর ৫৮২ ২৮ ৪.৮১
গোয়ারাং (সিলেট) ৪৬৪ ২২ ৪.৭৪
মোট ৪,৪৫২ ১৪১ ৩.১৭

সূত্র ঃ আলমগীর, (দ্বিতীয়খন্ড)পৃঃ ১০৬৩

লঙ্গরখানার হিসাব মতে প্রায় ৮৪% পরিবার সর্বস্ব খুইয়ে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৬ . ৩৫% পরিবার একে অপর থেকে বিচিছন্ন হয়ে গিয়েছে। রংপুরের লঙ্গরখানার ৮২% পরিবার ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে এবং ২৪.৭৫% পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে। অতএব সহজেই অনুমান করা যায় চুয়াত্তরে বাংলাদেশের বেশির ভাগ জনগণ কি এক দুঃসহনীয় আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছে। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে উৎপাদনের সাথে সম্পর্কবিহীন একটি অংশ তখন উৎপাদনের ফায়দা লুটছিল, আইন শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গগুষ্ঠি দেখিয়ে স্কাসিটি অর্থনীতির সঙ্গে সুযোগ নিয়ে যথেচছা চোরাচালানী, কালোবাজারী করছিল। কালোটাকার অধিকারী এসব লোক রাতারাতি ব্রিফকেসধারী ব্যবসায়ী হয়ে উঠে এবং স্বাভাবিক ব্যবসায়ের নূন্যতম রীতিনীতি না মেনে বাজারে এক ধরনের সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। স্বাধীনতালাভের পরপরই সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে ব্যক্তি ও সমষ্টির পর্যায়ে কৃচছতা সাধন করে উৎপাদনমুখী কর্মকান্ড শুরু না করে, এই পরগাছা শ্রেণী সর্বত্র এক সর্বগ্রাসী চন্ডকর্ম শুর করে। এবং এই অপকর্মেরই এক পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছিল চুয়াত্তরের দূর্ভিক্ষ। একটি দৈনিকের পাতা উল্টিয়ে আমরা লক্ষ্য করেছি কি এক স্বাভাবিক নিয়মে দেশ সে সময় সেই মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচিছল। অথচ কোথাও যেন কোন চৈতন্য নেই। এ সঙ্কট মোকাবেলা করার যাদের দায়িত্ব ছিল, তারা তখন ব্যস্ত ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে। ধারাবাহিক এ ডায়েরী থেকেই দেখা যায়, বছরের প্রথম দিকেই চোরাচালানী এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির খবর প্রাধান্য পেতে থাকে। তারপর দেখা যায় প্রচুর খাদ্য মজুত আছে এ ধরনের সরকারী আশ্বাস এবং পাশাপাশি খাদ্য গুদাম ও লরী চুরির খবর। আসে বন্যা। বেড়ে চলে দ্রব্যমূল্য। কালোবাজারীরা তৎপর। কলেরা হাসপাতালে রোগীর ভিড় শহরে ছিন্নমূল মানুষের ভিড়। মৃতের লাশ খোঁজে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম। আসে দূর্ভিক্ষ। খোলা হয় লঙ্গরখানা। সৃষ্টি হয় জাতীয় জীবনে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ এবং প্রশাসন প্রথমে উদাসীন এবং পরে নিরূপায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ অকালে। প্রাণ হারায়। যারা প্রাণে, বেচে যায়, তাদেরও স্বাভাবিক আয় কমে যায়। কয়েক মাস পরে বড় কড়মূল্য দিতে হয়েছিল সেদিনের শাসক শ্রেণীকে। ছয় লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যার অভিশাপে সবংশে উৎখাত হয় তারা রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে।

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1978.05.26-bichitra.pdf” title=”1978.05.26 bichitra”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!