৮-দফা পরিস্থিতি
পি. ডি. এম-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই জনসভা সন্তোষ প্রকাশ করছে যে, পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ৮-দফা সূচীতে দেশে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র কায়েমের সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের সার্বজনীন স্বার্বজনীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার বাস্তব কর্মপন্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের দীর্ঘ বঞ্চনার প্রতিকারকল্পে ৮-দফা কর্মসূচী বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে এই সভার বিশ্বাস।
এ ৮-দফা কর্মসূচীর মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন কায়েম করার জন্য একযােগে আন্দোলন করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হওয়ায় এই জনসভা তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে।
জরুরী অবস্থা পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়ােজিত এই জনসভা গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও সরকার এখনও জরুরী অবস্থা অন্যায়ভাবে বহাল রেখেছে। গত পাক-ভারত যুদ্ধের সময় রাষ্ট্রের দুশমনদেরকে দমন করার জন্য যে প্রতিরক্ষাবিধি জারী করা হয়েছিল, আজ সে আইনবলেই দেশপ্রেমিকদের উপর জুলুম করা হচ্ছে এবং জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে দমন করার জন্য ঐ আইনকেই অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই সভা এইরূপ কর্মনীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছে এবং অবিলম্বে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করার জোর দাবী জানাচ্ছে। এই সভা আরও দাবী জানাচ্ছে যে, প্রতিরক্ষা আইনবলে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে এবং পত্রিকা ও প্রেসের বিরুদ্ধে যত প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হােক।
রাজবন্দীদের মুক্তি পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই জনসভা রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদেরকে বিনাবিচারে বা প্রতিরক্ষা বিধির অপপ্রয়ােগ করে কারাগারে আবদ্ধ রাখাকে অমানুষিক কাজ বলে ঘােষণা করছে। জনগণের আদায়ের নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামকে দমন করার এই নীতিকে সরকারের কাপুরুষতারই পরিচায়ক বলে এই সভার ধারণা।
এই সভা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান, ন্যাপ নেতা হাজী মােহাম্মদ দানেশ ও পাকিস্তান বার কাউন্সিল সদস্য এডভােকেট মােশতাক আহমদসহ সকল রাজবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তিদানের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছে।
এই সভা সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চায় যে, এই ধরনের দমননীতি দ্বারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করা সম্ভব হবে না।