ছয়-দফা কোনক্রমেই প্রতিবন্ধক হইবে না
এখানে দুইটি তাৎপর্য ফুটিয়া উঠিয়াছে। উহার একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযােগ আনা হইয়াছে যে, আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানের উপর ছয়-দফা চাপাইয়া দিতে চায়। নীতিগতভাবে ছয়-দফা হইতেছে ফেডারেটিং ইউনিটগুলির স্বায়ত্তশাসনের রক্ষার একটি স্কিম। যদি পশ্চিম পাকিস্তানের ফেডারেটিং ইউনিটগুলি বাংলাদেশের সমমাত্রায় স্বায়ত্বশাসন পাইতে না চাহে অথবা কেন্দ্রের উপর কতিপয় অতিরিক্ত ক্ষমতা অর্পণ করিতে চাহে অথবা কোন ধরনের আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গড়িতে চাহে, তবে ছয়-দফা কোনক্রমেই উহার প্রতিবন্ধক হইবে না। তদুপরি আওয়ামী লীগ কখনও এমন ভূমিকার কথাও প্রকাশ করে নাই যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের ফেডারেটিং ইউনিটগুলির উপর ছয়-দফা চাপাইয়া দেওয়া যাইতে পারে।
অপর যে দিকটি উল্লেখযােগ্যভাবে উপস্থাপিত করা হইয়াছে, উহা হইতেছে যে, বাংলাদেশকে যদি অতীতের শর্তে বা অপর অংশের সংখ্যালঘুদের নির্দেশিত অনুরূপ কোন শর্তে বাঁধিয়া রাখা যায় না অর্থাৎ কলােনি হিসাবে উহাকে রাখা না যায় এবং তৎপরিবর্তে বাংলাদেশ যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হিসাবে যথার্থ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তবে পশ্চিম পাকিস্তানকে অবশ্যই রক্ষা করিতে হইবে। কিন্তু ‘কাহার নিকট হইতে’ বা ‘কাহার জন্য উহাকে রক্ষা করিতে হইবে? স্পষ্টত বিবৃতির রচয়িতা উহাকে বাঙালিদের হাত হইতে রক্ষা করিতে চায়, যে বাঙালিরা গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আছেন এবং উহা রক্ষা করা হইবে -পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদীদের খাতিরে। অথচ গণতন্ত্রের অধীনে উহাদের(এই সমস্ত কায়েমী স্বার্থবাদীদের) বাঁচার কোন পথ ছিল না। তাই, বাংলাদেশে তাহাদের ‘অধিকার’ যদি খতমও হইয়া যায়, তবুও পশ্চিম পাকিস্তানের লাঞ্ছিত-নিপীড়িত মানুষকে শােষণের নিশ্চয়তা যেন তাহাদের থাকে।
আজাদ, ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১