You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.02.25 | ছয়-দফার ব্যাখ্যা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

ছয়-দফার ব্যাখ্যা

পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের বৈধ স্বার্থ কিংবা ফেডারেল সরকারের স্থায়িত্বের ব্যাপারে ছয়-দফার প্রভাব সম্পর্কে তাহাদের ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের মনােভাব ব্যাখ্যার প্রস্তুতি জানাইয়াছি।

পশ্চিম পাকিস্তানে তাহদের অন্যান্য সদস্যদের সহিত আলাপ-আলােচনার পর তাঁহারা পুনরায় আওয়ামী লীগের এ আলােচনা করবেন বলিয়া জানাইয়া পিপলস পার্টিই ছয়-দফা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ঠেকাই রাখে।
আওয়ামী লীগ ছয়-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনায় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও তাহারা ইতােমধ্যে দেশের জন্য একটি স্থিতিশীত শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কামনা করে। এই উদ্দেশ্যের বশবর্তী হইয়া আমরা মারকাজি জমিয়াতুল উলামায়ের ইসলামের মওলানা নুরানী, নওয়াব আকবর খান বুগতি, মওলানা গোলাম গাউস হাজারতী এবং জমিয়তে উলেমায়ে ইসলামের মওলানা মুফতী মাহমুদ ও পশ্চিম পাকিস্তানের ‘শত্র’ হিসাবে অভিহিত করা হইয়াছে। পশ্চিম পাকিস্তান হইতে আগত প্রতিনিধিগণ বাঙালিদের মধ্যে নিজেদিগকে ‘প্রতিভূ’ বলিয়া মনে করেন। জাতীয় পরিষদকে ‘কসাইখানা’ আখ্যায়িত করিয়া বাঙালি জাতীয় পরিষদ সদস্যদের প্রতি অবাঞ্ছিতভাবে কটাক্ষ করিয়াছে।
ঢাকায় জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অহ্বানের জন্যই তাহার উপরােক্ত বল্গাহীন অভিযােগ করিয়াছে।
এই ধরনের প্রতিক্রিয়া যেমন অশােভন তেমনই অযৌক্তিক। বিশেষভাবে গত ২৩ বৎসর যাবৎ বাঙালিরাই পশ্চিম পাকিস্তানে যাতায়াত করিয়াছে। সেখানেই রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান কেন্দ্রীয় সংস্থা অবস্থিত। যদি আবহাওয়া এইভাবে বিষাক্ত করিয়া তােলা হয় তবে কী বাঙালিরা ন্যায়সঙ্গতভাবে এই প্রশ্ন উত্থাপন করিতে পারে না, তাহাদের পশ্চিম পাকিস্তানে যাইতে বলা উচিত হইবে কী?
কোন উদ্দেশ্য লইয়া উপরােক্ত অবস্থার সৃষ্টি করা হইয়াছে আরও কতিপয় বক্তব্য সে সম্পর্কে আলােকপাত করিবে। ১৯৭১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘পাকিস্তান টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে পিপলস পার্টির জনৈক সদস্য বলিয়াছেন:
“…জনগণকে,… অবশ্যই… দেশের সংহতির প্রশ্নে তাহাদের প্রকৃত মনােভাব ব্যক্ত করিতে হইবে এবং মৌলিক প্রশ্নে যে কোন আপস প্রস্তাব অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করিতে হইবে। এবং একটি আসন্ন বিরাট ক্ষতির কবল হইতে সমগ্র দেশকে রক্ষা করার ক্ষমতা যখন তাহাদের আয়ত্তের বাহিরে চলিয়া যায় তখন অন্ত। ত দেশের যে অংশকে তাহারা রক্ষা করিতে পারে সেই অংশকে রক্ষার চেষ্টা তাহারা অবশ্যই করিবে। সঠিক রাজনৈতিক কর্মপন্থা হইতেছে, যাহাকে রক্ষা করা সম্ভব তাহাকেই রক্ষা করা এবং দেশের সংহতি বিনষ্টের চেষ্টা বা প্রস্তাব না করা। আমরা অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ছয়-দফা হইতে সরিয়া আসিতে বলিব, যদি তাহারা তাহা না করে তাহা হইলে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের উপর ছয়-দফাকে চাপাইয়া দেওয়ার প্রচেষ্টা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করিবে।

আজাদ, ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১