শেরপুর শহরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে
জামালপুর, ২৫শে নভেম্বর (নিজস্ব সংবাদদাতা)।-“শত জোর-জুলুম নির্যাতন চলুক না কেন, আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু ৬-দফা দাবী প্রতিষ্ঠিত হইবেই।” “গত ১৯শে নভেম্বর শেরপুর শহরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিউনিসিপ্যাল ময়দানে আয়ােজিত জনসভায় ভাষণদানকালে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম উপরােক্ত ঘােষণা করেন। তিনি ইহাকে পূর্ব পাকিস্তানের শােষিত-লাঞ্ছিত ও অবহেলিত মানুষের প্রাণের দাবী বলিয়া উল্লেখ করেন। তাঁহার ভাষণে আরও বলেন যে, বিদেশী শােষণের পর নির্যাতিত জনগণ যে পাকিস্তান কামনা করিয়াছিল সে পাকিস্তান তাহারা পায় নাই।
নারীর দায়িত্ব সম্পর্কে বক্তৃতাকালে মিসেস আমেনা বেগম বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি বলিয়া অভিহিত করেন। এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি হইতে উদ্ধার পাওয়ার জন্য নারীসমাজের সক্রিয় সমর্থন। একান্ত প্রয়ােজন। সরকারের খাদ্য নীতির তীব্র সমালােচনা করিয়া সাধারণ সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম বলেন যে, ক্রমাগত শােষণে ফলে ফসলের দেশ এই পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়াছে। তিনি বর্তমানে খাদ্য পরিস্থিতির জন্য সরকারের লেভী প্রথাকে দায়ী করেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ৬-দফা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জনসাধারণকে বিশদভাবে বুঝাইয়া দেন। তিনি ৬-দপা দাবী পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত জনগণের একমাত্র মুক্তির সনদ বলিয়া উল্লেখ করেন এবং এই ৬ দফা দাবী আদায়ের জন্য জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ সহযােগীতা। কামনা করেন।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব রফিক উদ্দীন ভুইয়া বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কঠোর ভাষায় সমালােচনা করিয়া। পূর্ব পাকিস্তানে পুনঃ পুনঃ বন্যার ধ্বংসলীলা হইতে রক্ষা করার জন্য ক্রুগ মিশন পরিকল্পনা অবিলম্বে কার্যকরী করিবার দাবী জানান। মফঃস্বল শহরের এই বিরাট জনসভায় জামালপুর মহকুমা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব আব্দুল হাকিম, (উকিল) সৈয়দ আবদুস সােবহান, (উকিল) সামাদ, (উকিল) আনিসুর রহমান মােক্তার, খােন্দাকার মজিবর রহমান ও মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি জনাব ওসমান গনি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
শেরপুর আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব নুর মােহাম্মদ উকিল সভায় সভাপতিত্ব করেন।
জনসভায় গৃহীত প্রস্তাবাবলী
শেরপুর টাউনের এই বিরাট জনসভায় গৃহীত প্রস্তাবে ৬-দফা দাবীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া ৬-দফা আদায়ের জন্য দুবার গণ-আন্দোলন গড়িয়া তুলিবার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়। এই সভা কারাগারে আটক শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল রাজবন্দীর আশুমুক্তি দাবী করা হয়। অদ্যকার এই সভা আরও প্রস্তাব করিতেছে যে, সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকার প্রদান, ফেডারেল ধরনের শাসনব্যবস্থা কায়েম, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, সংবাদপত্রের উপর হইতে দমনমূলক নীতি প্রত্যাহার দাবী করিয়া দেশে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানানাে হয়। সভা শেষে আগত অতিথি ও সাংবাদিকদের প্রতি আওয়ামী লীগ কর্মীদের ভােজসভায়া আপ্যায়িত করা হয়।
সংবাদ, ২৭ নভেম্বর ১৯৬৬