৬দফা দাবী আদায়ের জন্য শেখ মুজিবর রহমানসহ আওয়ামী লীগের শত শত কর্মী কারাবরণ
মুক্তাগাছা, ৪ঠা নভেম্বর (নিজস্ব সংবাদদাতা)।গতকল্য মুক্তাগাছায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জনসভায় বক্তৃতা করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসরাম, জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব রফিক উদ্দিন ভূইয়া, খােন্দকার আবদুল মালেক, জনাব আবদুল মান্নান, জনাব নজিব উদ্দিন উকিল, জনাব কমরউদ্দিন।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম ঘােষণা করেন ও জনগণের সমর্থন ও সহযােগিতাক্রমে ৬-দফার আন্দোলন অব্যাহত থাকিবে। কোন শক্তি উহা প্রতিহত করিতে পারিবে না।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় বক্তৃতা প্রসংগে ৬-দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যাদান করেন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তানকে দুর্ভিক্ষ এলাকা বলিয়া ঘােষণার জন্য জোর দাবী জানান। ৬-দফা প্রসংগে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সম্পাদিকা বলেন, যে ৬দফা দাবী আদায়ের জন্য শেখ মুজিবর রহমানসহ আওয়ামী লীগের শত শত কর্মী কারাবরণ করিয়াছেন, সাধারণ যে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাইয়াছেন ইহা বৃথা যাইবে না। সৈয়দ নজরুল ৬-দফাকে পাকিস্তানের উভয় অংশের মিলনের সেতু বলিয়া অভিহিত করেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম জিজ্ঞাসা করেন, বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা যদি ট্যাক্স স্থগিতের মাধ্যমে ট্যাক্স মওকুফ পান তাহা হইলে ৯৩ কোটি টাকার ঋণগ্রস্ত দরিদ্র কৃষক সমাজ কেন খাজনা মওকুফ পাইবে না?
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম তাহার বক্তৃতা শ্রবণের উদ্দেশ্যে দূরদূরান্ত হইতে কষ্ট করিয়া সভায় আসার জন্য শ্রোতৃবর্গকে অভিনন্দন জানান এবং ৬-দফার সংগ্রামে তাহাদের সহযােগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, যেদিন আমাকে আওয়ামী লীগের সম্পাদকের দায়িত্বভার নিতে বলা হইয়াছিল নিজের শত অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়াও দেশের স্বার্থে। আমি মাথা পাতিয়া সেদিন সেই দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছি। তিনি কেন এই দুর্যোগমুহূর্তে এই দায়িত্ব স্কন্ধে নিয়েছেন তাহার কারণ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মিসেস আমেনা বেগম বলেন, পাকিস্তানের জন্য সংখ্যার অর্ধেক নারী। সুতরাং জাতির যে। কোন বিরাট কাজে নারীসমাজের সমর্থন ও সাহায্য ব্যতীত সফলতা আসিতে পারে না।
তিনি বলেন, আজ আমার ভাইয়েরা আমাকে যেভাবে সাহায্য করিতেছেন। বােনেরাও যেন সেভাবে আগাইয়া আসেন।
মিসেস আমেনা বেগম দৃপ্তকণ্ঠে ঘােষণা করেন, নারীসমাজ যদি সর্বপ্রকারে সমান অধিকার পাইতে চায় তাহা হইলে তাহাদিগকেও পুরুষের সঙগে সমান দায়িত্ব বহন করিতে হইবে। নারী পুরুষ তা সমাজের সমর্থন লইয়া তিনি আন্দোলন চালাইয়া যাইবেন।
আওয়ামী লীগ সম্পাদিকা বলেন, প্রথমদিকে খাদ্য সমস্যার কথা বলা হইলে কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি ঘােষণা করিয়াছিলেন, এদেশে খাদ্যের বন্যা বহাইয়া দিবেন; কিন্তু আমরা সেই খাদ্যের বন্যা দেখি নাই। দেখিয়াছি পানির বন্যা। তিনি লেভী প্রথাকেই খাদ্য সমস্যার কারণ বলিয়া মন্তব্য করেন।
সংবাদ, ৮ নভেম্বর ১৯৬৬