You dont have javascript enabled! Please enable it!

রণাঙ্গনের খবর

গত ১৫ নভেম্বর বীর মুক্তি যােদ্ধারা রংপুরের ভুরুংগামারী হইতে হানাদার শত্রুদের হটাইয়া দিয়াছে। ২৪ ঘণ্টা তুমুল সংঘর্ষের পর ভুরুংগামারী মুক্ত হয়। খবরে প্রকাশ, টাঙ্গাইলের শুধুমাত্র জেলা সদর শহর ছাড়া আর কোথাও হানাদার দুশমনদের অস্তিত্ব নাই। ময়মনসিংহ মুক্তিবাহিনীর সূত্রে জানা গিয়াছে যে, বীর মুক্তিযােদ্ধারা ময়মনসিংহের কিশােরগঞ্জ মহকুমার ১২টি থানার মধ্যে ৮টি থানাই দখল করিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখিয়াছেন। বাকী তিনটি থানা দখলের জন্য মুক্তি যােদ্ধারা তীব্র লড়াই চালাইতেছেন। বুলেটিনে প্রকাশ, গত ৪ঠা নভেম্বর বীর মুক্তিযােদ্ধারা ময়মনসিংহের বারহাট্টা থানা সদর দপ্তরটি দখল করিয়া লয়। গেরিলারা থানার দারােগাসহ ১০৫ জন পুলিশ ও রাজাকারকে বন্দী ও ৮০টি রাইফেল দখল করে। | গত ৮ই নভেম্বর ময়মনসিংহের একস্থানে ৮ জন রাজাকার অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ। করে। গত ২১শে অক্টোবর রাজাকারদের বিতাড়িত করিয়া মুক্তি যােদ্ধারা বাজিতপুর থানা দখল করিয়া  ১০৭টি রাইফেলসহ বহু অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করে।

২৪শে অক্টোবর ঈশ্বরগঞ্জ থানায় আক্রমণ চালাইয়া গেরিলারা ৫ জন শত্রুসেনাকে খতম ও ১০ জনকে জখম করে। ময়মনসিংহের কোন এক স্থানে সম্প্রতি এক প্রবল সংঘর্ষে মুক্তি যােদ্ধারা ৬৮ জন হানাদার দুশমনকে খতম ও ৮০ জনকে জখম করিয়াছে। এই সংঘর্ষে শত্রুপক্ষের ৪টি বড় গানবােট অনেক গােলাবারুদসহ বীর মুক্তিযােদ্ধারা দখল করিয়াছে। ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম। ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে ব্যাপক গেরিলা তৎপরতা চলিতেছে। সালদা নদীর তীরবর্তী বিলােনিয়ায় মুক্তিবাহিনীকে দমন করার জন্য হানাদার পাক-সেনারা আবার জঙ্গী বিমান ব্যবহার করে। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার পদুয়াতে মুক্তিযােদ্ধারা এক সংঘর্ষে ২৫ জন পাক হানাদারকে খতম করে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পদুয়ায় মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে পাক সেনাদের এই সংঘর্ষ হয়। সিলেট সিলেটের সুনামগঞ্জে গেরিলারা গত সপ্তাহে ৪০ গজ লম্বা একটি সড়কসেতু উড়াইয়া দিয়াছে। এই স্থানে শত্রুপক্ষের একটি চলমান জীপের উপর আক্রমণ করিয়া গেরিলারা ১ জন ক্যাপ্টেনসহ ৫ জনকে খতম। করে। গত মাসের শেষভাগে সুনামগঞ্জ মহকুমার বানিয়াচঙ্গ থানা সদর কার্যালয়টি মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ করিয়া বিধ্বস্ত করিয়া দেয়। পাক হানাদাররা ৬ জনের মৃতদেহ ফেলিয়া থানা ছাড়িয়া পলায়ন করে। একজন তরুণ মুক্তিযােদ্ধা এখানে শহীদের মৃত্যু বরণ করেন। রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রংপুর জেলার বসুরা ও ফুলছড়ি ঘাটের মধ্যে পাক সেনাদের একটি ট্রেন মুক্তিবাহিনী উল্টাইয়া দেয়। ইহাতে কমপক্ষে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। গত ৬ই নভেম্বর পাহাড়পুর এলাকায় শত্রুসেনাদের উপর আক্রমণ করিয়া মুক্তিযােদ্ধারা ৩০ জনকে খতম করে । এই সংঘর্ষে একজন গেরিলা শহীদের মৃত্যু বরণ করেন।

সম্প্রতি গেরিলারা অনেক পাক সৈন্য কে হতাহত করিয়া দিনাজপুর জেলার খানপুর ফঁাড়িটি দখল। করিয়া লইয়াছে। নির্বাচনের সাধ মিটিল। গত ১২ই নভেম্বর রাজসাহীর পি ডি পি নেতা পাক দালাল মােহাম্মদ ইয়াসিনকে গেরিলারা হত্যা করিয়াছে। এই রত্নটি সম্প্রতি ইয়াহিয়ার উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ইহার সহিত ৪ জন রাজাকারকেও গেরিলারা খতম করে। যশোের ধলাই এলাকায় সম্প্রতি মুক্তি যােদ্ধাদের আক্রমণে ২৫ জন হানাদার শত্রু খতম হয়। ৮ই নভেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা মাসালাতে পাক সেনাদের একটি জীপ আরােহীসহ উড়াইয়া দেয়।  জাহাজ ঘায়েল ঃ চালনা বন্দর বন্ধ মুক্তি বাহিনীর বীর নৌ কমান্ডােদের উপর্যুপরি মারের চোটে অনেকগুলি বিদেশী জাহাজ ঘায়েল হওয়ার পর বাঙলাদেশের দ্বিতীয় বন্দর চালনা পাক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করিয়া দিয়াছে। গত ১১ই নভেম্বর চালনা বন্দরে নােঙ্গর করার সঙ্গে সঙ্গে একটি মালবাহী জাহাজ ‘মেলবাের্ন’ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইহার পরদিনই দুইটি বিদেশী জাহাজ মুক্তিযােদ্ধাদের বােমা বিস্ফোরণে ঘায়েল হয়। ইহাদের একটি অস্ট্রেলীয় জাহাজ মারকারা ও অপরটি সােমালীয় জাহাজ ‘এস, এস, বালিয়ন। আর ও মুখাে নয় কলিকাতা হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ‘সিটি অব সেন্ট আলবানস’ নামক একটি বৃটিশ জাহাজ খুলনা জেলার পসুর নদীতে মুক্তিযােদ্ধাদের গােলার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হইয়া কলিকাতায় ফিরিয়া গিয়াছে। ১০ই নভেম্বর জাহাজটি কলিকাতা বন্দর হইতে পাট আনার জন্য চালনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। জাহাজে ৪৬ জন ভারতীয় নাবিক ও ২১ জন বৃটিশ অফিসার ছিল। তাহারা কোনক্রমে ডেকের ভেতরে আশ্রয় লইয়া প্রাণে বাঁচিয়াছে। এই জাহাজের নাবিকগণ সহ চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দরে আসিবার জন্য কলিকাতায় অপেক্ষমান সবগুলি বিদেশী জাহাজের নাবিকরাই বলিতেছে, পাক অধিকৃত বাঙলাদেশ আর যাইব না ।

মুক্তিযুদ্ধ ১; ২০

২১ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!