You dont have javascript enabled! Please enable it!

আঁধারে ডম্বুর বাজে

(নিজস্ব প্রতিনিধি)। বর্ষণমুখর শ্রাবণরাত্রির অন্ধকার আকাশে মেঘের ডম্বৰু ধ্বনি শুনিয়া মানুষ মাত্রেই উতলা হইবেন। ইহা লইয়া কত কাব্য করিয়াছেন। কিন্তু স্থান-কাল-অবস্থা ভেদে শ্রাবণ, বর্ষণ ও মেঘ ছাড়াই আঁধারে ডম্বৰু বাজিতে পারে এবং পাত্র ভেদে উহার প্রতিক্রিয়াও এমন বিরূপ হইতে পারে যাহা লইয়া কাব্য করা চলে না। পাক কর্তৃপক্ষ ভারতের সহিত যুদ্ধ বাধাইবার আস্ফালন শুরু করিয়া এখন মাঝে মাঝেই ঢাকা ও অন্যান্য অধিকৃত শহরে নিম্প্রদীপ মহড়া করিতেছে। এইরূপ মহড়ার প্রতি রাত্রেই ঢাকায় গেরিলাদের কার্যকলাপ শুরু হইয়া যায় ও বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে নগরী কাপিয়া কাঁপিয়া ওঠে। হানাদার দুশমন আর রাজাকারদের ঘাটিতে বােমা পড়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহের সাবস্টেশনগুলি উড়িয়া যায় ।

গেরিলাদের সাড়া পাইয়া ঢাকার নগরবাসী জনগণ আনন্দিত হন, কিন্তু বলা বাহুল্য, বিনা মেঘের এই ডম্বরু বাদনে পাক সেনাদের হিয়া নাচিয়া উঠে না, হৃদকম্প উপস্থিত হয় রাতের নিদ্রা টুটিয়া যায়। আতঙ্কে বিদ্রি রজনীর প্রহর গনিয়া গনিয়া সকালের আলাের প্রতীক্ষা করে।  রাত্রিতে ঢাকা নগরীর অর্ধাংশ কার্যত মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে থাকে। ক্যান্টনমেন্ট ও কয়েকটি মূল ঘাটি ছাড়া পাক সেনারা বাহির হইতে সাহস পায় না। মার্কিন সংবাদ সংস্থা এ. পি-র খবর, প্রতিরাতেই কমপক্ষে অর্ধ ডজন বােমা ও গােলাগুলির শব্দ শােনা যায় এবং সকালে পাকসেনা রাজাকার অথবা দালালদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। গত ৪ঠা ও ১১ই নভেম্বর নিম্প্রদীপ মহড়ার দুই রাত্রিতে গেরিলাদের বােমায় ঢাকার একটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরনাে ঢাকার বাড়িগুলি গেরিলাদের ঘাটিতে পরিণত হইয়াছে।

মুক্তিযুদ্ধ । ১; ২০

২১ নভেম্বর ১৯৭১ 

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!