You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর সফল অভিযান

শ্রীনগর : বুধবার ১০ই নভেম্বর, হানাদার পাকসেনার একটি বিরাট দল ১০টি নৌকাযােগে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করলে পথিমধ্যে শ্রীনগর ও গােয়ালীমান্দ্রার মধ্যবর্তী স্থানে আমাদের বীর গেরিলারা এক দুবার আক্রমণ চালিয়ে ৪৫জন খানসেনাকে খতম করেন। জানা গেছে ২৫ জন রাজাকার ও ই, পি, আর আত্মসমর্পণ করে। এই সংঘর্ষে একটি ওয়্যারলেস সেট ও ১টি হালকা মেশিনগান এবং ৪৬টি রাইফেলসহ প্রচুর গােলা বারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। শ্রীনগর থানা এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। সিরাজদিখান : গত ১৩ই নভেম্বর আমাদের দুর্ধর্ষ গেরিলারা তালতলা হানাদারশত্রু শিবিরে এক দুর্বার আক্রমণ চালিয়ে ৩৪ জন খানসেনাকে নিহত করেন। অবশিষ্টরা মুক্তিবাহিনীর তুমুল আক্রমণের সম্মুখে টিকতে না পেরে বহু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তালতলা অঞ্চলটি এখন। সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত। আর এক সংবাদে জানা গেছে একই দিনে ৮ জন রাজাকার গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার চালালে আমাদের অতন্দ্র প্রহরী গেরিলারা তাদের একজনকে গুলী করে হত্যা করে এবং সাতজনকে বন্দী করে। তাদের কাছে বেশকিছু গুলীসহ ৮টি রাইফেল পাওয়া যায় । কক্সবাজার । আমাদের মুক্তিবাহিনীর বীর সেনারা কক্সবাজারে একটি পাক এফ-৮৬ বিমান গুলী। করে ভূপাতিত করলে বিমানটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং বিমানের পাইলট নিহত হয়।

নবাবগঞ্জ : এইমাত্র প্রাপ্ত খবরে (১৮ই নভেম্বর) জানা গেছে নবাবগঞ্জ শত্রু শিবিরে গত রাত এবং আজ সকালে আক্রমণ চালিয়ে আমাদের গেরিলারা ৪জন পাকসেনাকে খতম করেছে। সংঘর্ষে অপর একজন পাকসেনা মারাত্মকভাবে আহত হয়।  ফরিদপুর : আমাদের ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, গত ১৫ই নভেম্বর ফরিদপুরে এক সফল অভিযান চালিয়ে আমাদের দুর্ধর্ষ মুক্তিসেনারা ১ জন মেজর ও ১ জন ক্যাপ্টেনসহ ৩৩ জন পাকসেনাকে খতম করেন। সিলেট : সম্প্রতি সিলেটের খলাই অঞ্চলে আমাদের দুর্ধর্ষ গেরিলারা এক আক্রমণ চালিয়ে ১ জন অফিসারসহ ২৫ জন শত্রুসেনাকে খতম করেছে। সীমান্ত চৌকি দখল গত ১৫ই নভেম্বর আমাদের মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া ও রাজশাহী সীমান্ত এলাকায় হানাদারবাহিনীর ২২টি সীমান্ত চৌকি দখল করে নিয়েছে। নৌ-কমান্ডুদের তৎপরতা খবরে প্রকাশ আমাদের সুদক্ষ নৌ-কমান্ডুদের তৎপরতার ফলে খুলনা ও চালনা বন্দর সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আরাে জানা গেছে কমান্ডুদের এক তীব্র আক্রমণে চালনা বন্দরে মেলৰ্বোন নামক জাহাজটি ভীষণভাবে ক্ষগ্রিস্ত হয়। নিয়মিত বাহিনীর দুর্বার অভিযান বিপুল এলাকা মুক্ত গত এক সপ্তাহে আমাদের নিয়মিত বাহিনীর দুর্বার অভিযানে বাংলাদেশের আরাে বিস্তীর্ন এলাকা মুক্ত হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। পাবনার রায়গঞ্জ থেকে ঢাকার মানিকগঞ্জ পর্যন্ত এই বিপুল এলাকা সম্পূর্ণ মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানকার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে ২০০০ পাকসেনা নিহত, ৮০০ রাজাকার বন্দী এবং ১২৭ জন দালাল খতম হয়।   রংপুর জেলার ৮টি থানার ১২০০ বর্গমাইল এলাকা মুক্তিবাহিনী শত্রুমুক্ত করে নিয়েছে। এই এলাকার ৭ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ফিরে আসছে। যশােহর জেলার ১০০০ বর্গ কিলােমিটার এলাকা মুক্তিবাহিনী শক্রকবল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আর এক তুমুল সংঘর্ষের পর ফেনী মহকুমার পরশুরাম থানার ৬৭ বর্গ মাইল এলাকা মুক্তিবাহিনী মুক্ত করে নিয়েছেন। আর এক খবরে জানা গেছে যে মুন্সিগঞ্জ থানা শক্রকবল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য যে সকল মুক্ত অঞ্চলেই বাংলাদেশ সরকার বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা চালু করতে তৎপর রয়েছেন। অনেক জায়গায় স্কুল কলেজ খােলা হয়েছে, ডাক ও তার বিভাগ চালু করা হয়েছে। সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরাে জোরদার করা হয়েছে। স্বাভাবিক জন-জীবন ফিরে আসছে।

বাংলাদেশ (৪) ১: ৪

২১ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!