You dont have javascript enabled! Please enable it!

জনগণের কাছে ৬ দফা

আমি তাে ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি নাই। জীবনভর প্রকাশ্যভাবে রাজনীতি করেছি। যাহা ভুল বুঝেছি তাই বলেছি। বক্তৃতা করে বেড়াইয়াছি, গােপন কিছুই করি না বা জানি না। সত্য কথা সােজাভাবে বলেছি তাই সােজাসুজি জেলে চলে গিয়াছি। কাহাকে ভয় করে মনের কথা চাপা রাখি নাই। কাহাকে ভয় করে মনের কথা চাপা রাখি নাই। যে পথে দেশের মঙ্গল হবে, যে পথে মানুষের। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে তাহাই করেছি ও বলেছি। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যাতে তার ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে তার ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে তার জন্য আন্দোলন করেছি। বার বার জেলে যেতে হয়েছে আর মামলার আসামী হতে হয়েছে। কিন্তু মনের কথা চাপা রাখি নাই। জেলে যেতে হবে জেনেও ছয়-দফা জনগণের কাছে পেশ করেছিলাম। যদিও জানা ছিল শাসক ও শােষক গােষ্ঠীর আঁতে ঘা লাগবে। ঝাঁপাইয়া পড়বে আমার ও আমার সহকর্মীদের উপর। অত্যাচার চরম হবে, তবুও গােপন করি নাই। আজ দুঃখের সাথে ভাবছি আমাকে গােপন ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত করতে শাসকদের একটু বাঁধলাে না! এরা তাে আমার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ভাল করে জানে। ভাবা ও চিন্তা করা ছাড়া কোনাে কাজই যখন নাই তখন মনকে বললাম, ভাবাে যত পারাে, কিন্তু পাগল করাে না। জীবনের বহু কথা মনে পড়তে লাগলাে। খাতা কাগজ নাই যে কিছু লেখব। কলম আছে। কাগজ ও খাতা পাওয়ার কোনাে উপায়ও নাই, আর অনুমতিও নাই।
চিঠির শেষের প্যারাটা আমাকে বাধ্য করল লিখতে। না লিখে আমার উপায় ছিল না। ইজ্জতের ভয়তেই লিখতে হলাে। আমাকে মিথ্যা মামলায় আসামী করে দেশের মঙ্গল হবে না। পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের কেহ বিশ্বাস করবে না। জনগণ বলবে, আমাকে অত্যাচার করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত করা হয়েছে। ৬ দফা প্রস্তাবে জনগণের সামনে পেশ করার পর থেকে সরকার আমার ওপর অত্যাচার চালাইয়া যাচ্ছে। ১২টা মামলাও দায়ের করেছে। আমার সহকর্মী। খােন্দকার মােশতাক, তাজউদ্দীন, আব্দুল মােমিন, ওবায়দুর রহমান, নূরুল ইসলাম, আমার ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও আরও অনেকে ১৯৬৬ সাল থেকে জেলে আছে এবং সকলের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

কারাগারের রােজনামচা, ২২ জুন ১৯৬৭

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!