সম্পাদকীয়
সংবাদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
সান্ধ্য আইন ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করো
প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় পরপর দুইদিনে চুয়াল্লিশ ঘণ্টা যাবৎ সান্ধ্য আইন জারী থাকার ফলে লক্ষ লক্ষ নরনারী ও শিশুর দৈনন্দিন জীবন চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত ও বিড়ম্বিত হইয়াছে। এই রুজি-রোজগারহীন ও দুস্থ অবস্থা যাহাতে আর চলিতে না পারে সে জন্য অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং এই সঙ্গেই সেনাবাহিনীর ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন অপরিহার্য ও আবশ্যক হইয়া পড়িয়াছে। শহরের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে ফিরাইয়া আনিবার জন্য কর্তৃপক্ষীয়দের যে দায়িত্ব আছে, সে কথা স্মরণ করিয়া এ সম্পর্কে ব্যবস্থা করিতে তাহারা এক মুহূর্তও বিলম্ব করিবেন না আশা করি।
এই সঙ্গেই উল্লেখ করা দরকার যে, আর দুইদিন পরেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপিত হইতে যাইতেছে। প্রাদেশিক রাজধানীতে দিনের পর দিন সান্ধ্য আই জারী থাকার ফলে ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মরণের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটিয়াছে। মুক্ত ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশে আগামী কয়েকদিনের সমস্ত অনুষ্ঠানই যাহাতে ব্যাপকভাবে পালিত হইতে পারে যে জন্য সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনী ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন পূর্ব শর্ত স্বরূপ। ইতিপূর্বে ক্রমে ক্রমে মিছিল করিয়া সান্ধ্য আইন তুলিবার যে রেওয়াজ আছে, উহার পুনরাবৃত্তি ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে কেন্দ্র করিয়া আয়োজিত সমস্ত অনুষ্ঠানকে পঙ্গু করিয়া দিবে। সুতরাং সান্ধ্য আইন একসঙ্গেই তুলিয়া দিতে হইবে। সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারও একসঙ্গেই করিতে হইবে।
সমগ্র প্রদেশে এবং সারা দেশে সর্বত্রই যাহাতে একুশে ফেব্রুয়ারী মুক্ত স্বচ্ছন্দভাবে উদযাপিত হইতে পারে, সেজন্য সমস্ত দমনমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা একান্ত আবশ্যক, একথাও আমরা কর্তৃপক্ষীয়দিগকে স্মরণ করাইয়া দিতে চাই।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯