You dont have javascript enabled! Please enable it!

উষার দুয়ারে হানি আঘাত আমরা আনিব রাঙ্গা প্রভাত

সিলেট তুকার বাজারের কাছে পাকসেনা ও গেরিলাদের মধ্যে এক প্রচণ্ড লড়াই হয় ফলে ৮জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রণাঙ্গন গত ১৫ই নভেম্বর নােয়াখালী জেলার ছাগল নাইয়ায় পাকসেনাদের উপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা অতর্কিত আক্রমণ চালায় এবং ৭জন পাকসেনা নিহত হয়। ঢাকা শহরে ও উপকণ্ঠে গেরিলাদের প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ বেসামাল হয়ে পড়ে এবং ১৭ই নভেম্বর সকাল ৫টা থেকে ঢাকা শহরে আকস্মিকভাবে কাফুজারী করে এবং প্রতি বাড়ি বাড়ি তল্লাসী চালায়। মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনার বিরুদ্ধে সফল। প্রতিরােধ গড়ে তােলে। বিভিন্ন অস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার সম্প্রতি মুক্তিবাহিনী শালদা ও নয়া পাড়ায় এক সম্মুখ যুদ্ধে পাকসেনাদের বিতাড়িত করতে সক্ষম। হয়েছে। এই সম্মুখ যুদ্ধে বীর মুক্তিযােদ্ধারা মর্টার ব্যবহার করে। ত্রিশজন পাকসেনা নিহত ও বেশ। কয়েকজন আহত হয়। পাকবাহিনীর কাছ থেকে এল, এম, জি, ৫টি টমিগান ও ২টি রাইফেলসহ পঞ্চাশ হাজার গুলি হস্তগত করে। এসকল অস্ত্রশস্ত্র সবই বিদেশী। বর্তমানে শালদা নদী ও নয়াপুর সম্পূর্ণ। মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গন গত ১৬ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা রাজশাহী জিলার গােদাগারি এলাকায় পাকসেনাদের ঘাঁটি অবরােধ করে এবং প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ চালায় ফলে ৬ জন পাকসেনা নিহত ও ৪ জন আহত হয়, দক্ষিণ খােটকিবাড়ীতে গেরিলারা ৩ জন শত্রুসৈন্য খতম করে। জাতিবাঙ্গা ও পাবেলিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে গেরিলারা রেল লাইন ধ্বংস করে ও শত্রুসৈন্যের চলাচল ব্যবস্থা বানচাল করে দেয়। রংপুর জেলার আটটি থানা সম্পূর্ণ পাক হানাদারমুক্ত। প্রায় ১২ হাজার বর্গমাইলব্যাপী এলাকায় সাতলাখ জনতা স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করছে। এইসব এলাকায় বাংলাদেশ সরকার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে থানা পর্যায় পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা করছে। বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি প্রেরিত এক সংবাদে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। এই এলাকার ফরিদপুর, আলাগলি, হাকিমপুর, বাকরআলি, রাধাকান্ত পুর, পাংকা, পিরােজপুর, পােলাডাঙ্গা, চিলমারি, সাহেবনগর প্রভৃতি সীমান্ত চৌকি থেকে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী সেনাদের সম্পূর্ণরূপে হটিয়ে দিয়েছে। সেগুলি এখন মুক্তিযােদ্ধাদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।  এছাড়াও নবাবগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে ইসলামপুর, বারমারিয়ায় উপর বাগডাঙ্গা, সুন্দরপুর, ছােটকলকাতা, ইলশামারী, দেবনগর প্রভৃতি গ্রামগুলিতে ১৩ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে রাজাকার ও খানসেনাদের প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ঐ অঞ্চলের গ্রামবাসীরা মুক্তিবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন। মুক্তিবাহিনী এখানে ৫টি ৩০৩ রাইফেল দখল করেন ও পাঁচজন রাজাকারকে বন্দী করেন। 

গেরিলাদের ব্যাপক আক্রমণ ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহের ঘােষগাঁও এলাকা থেকে হানাদারদের বিতাড়িত করে মুক্তবাহিনী তাদের দখল কায়েম করেছে।  উত্তরবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গে অন্যতম সংযােগস্থল দেওয়ানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও মুক্তিবাহিনী পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই এলাকাগুলাের মধ্যে আছে ডাংধর, চররামপুর, গামখাওয়া, হাতিবস্থা ইত্যাদি। এখানে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। | ময়মনসিংহ জেলার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকেও মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে টিকতে পেরে হানাদারবাহিনী পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। এই জেলার তেলিখালিতে পাকসেনাদের একটি শক্ত ঘাঁটিতে গেরিলারা প্রবল আক্রমণ চালায়। এখানে ৬৯জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১ জন গেরিলাদের হাতে বন্দী হয়। গত ১৪ই নভেম্বর ময়মনসিংহের অন্য আর একটি অঞ্চলে গেরিলাসেনারা অতর্কিত আক্রমণে অনেক জুনিয়র কমিশনও সামরিক অফিসার সহ ৯ জন পাকসেনাকে খতম করে। গত কয়েক সপ্তাহের সংবাদে জানা যায় এই জেলা গেরিলাদের ব্যাপক আক্রমণে দুই শতাধিক পাকসেনা ও রাজাকার হতাহত হয়েছে।

বরিশাল। নাজিরপুর থানার সন্নিকটে মুক্তিযােদ্ধাদের এক আক্রমণে পাকবাহিনীর ২ খানা গান বােট এবং ২ খানা লঞ্চের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। অপর এক আক্রমণে ৩ জন পাকফেজিসহ ১৭ জন রাজাকার খতম  স্বরূপকাটিতে পাকহানাদাররা মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করলে বীর গেরিলারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে পাকফেীজের লেফটেনেন্ট আনােয়ার সহ ২১ জন খানসেনাকে খতম করে। এই সংঘর্ষে ৪৭ জন খানসেনা জখম হয়। রাজাকার ও পাকসৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ কুষ্টিয়া-যশােহর ও খুলনা রণাঙ্গন। বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে যে রায় পাড়াতে পাকসেনা ও রাজাকারদের মধ্যে গােলা বিনিময় হয়-ফলে ৪০ জন রাজাকারের মৃত্যু ঘটে। এই সংঘর্ষের কোন কারণ জানা যায় নি।

গত ১২ই নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার আলমডাঙ্গায় মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ঘাঁটি ঘেরাও করে এবং প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়; ফলে ১৭ জন পাকসেনা খতম হয়। . ১৪ই নভেম্বর বীর গেরিলারা আঙ্গুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে এবং ১২ জন পশ্চিমা পুলিশ খতম করে। | নাটসি গাগারি যােগাযােগ পথে এক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১১ জন হানাদার খতম করা হয় । খােদাইপুরে পাকসেনা ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে এক বিরাট সংঘর্ষে ১ জন ক্যাপ্টেনসহ ১৩জন পাকসেনার। মৃত্যু ঘটে।  মাকুরা মােহনপুরে একটি সামরিক ক্যাম্পের উপর মুক্তিযােদ্ধারা অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে ফলে বহু খানসেনা হতাহত হয়। গেরিলারা এই ক্যাম্প থেকে ৫৭টি রাইফেল হস্তগত করে। গানবােট ও লঞ্চের ক্ষতিসাধন বানরীপাড়া-নাজিরপুর অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়; ৪ জন জাতীয় শত্রু, ৩ জন চর, ৯ জন রাজাকার ও ৭ জন দালালকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া ৪টি 

রাইফেল, ১ টি স্টেনগান, ১টি চীনা সাব মেসিনগান, ১টি মর্টার, ৫টি অটোমেটিক রাইফেল, ১১টি গ্রেনেড ও ২৫০টি হাতবােমা উদ্ধার করা হয়। মুক্তিফৌজের তৎপরতা পাকজঙ্গী বিমান বিধ্বস্ত ১৮ই নভেম্বর, চট্টগ্রাম। খবর পাওয়া গেছে মুক্তিযােদ্ধারা কক্সবাজারের নিকটে একখানা পাকজঙ্গী বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। | ঘটনার বিবরণে প্রকাশ বাংলাদেশের অসম সাহসী মুক্তিযােদ্ধারা শহরটি দখলের চেষ্টা করলে হানাদাররা বাধা দেয়। ফলে সামনা সামনি তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড মারের মুখে পাক হানাদার যখন টিকতে না পেরে পিছু হটছে তখন এই জঙ্গী বিমানের সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু। হানাদারদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে মুক্তিযােদ্ধারা গুলি করে বিমানটিকে ভূপাতিত করে। জানা গেছে, এই উল্লেখযােগ্য শহরটি দখল নিয়ে এখনাে দু’পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলছে। সর্বশেষ সংবাদ বসন্তপুর মুক্ত ২০শে নভেম্বর-খুলনা জেলায় বসন্তপুরে পাক হানাদারদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি ছিল। আজ মুক্তিবাহিনী। সেই ঘাঁটি আক্রমণ করে পাক হানাদার তাড়িয়ে বসন্তপুর মুক্ত করে। প্রায় ২০ ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে ৩০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল সংঘর্ষের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব করেন ক্যাপ্টেন হুদা। শক্রসেনারা আত্মরক্ষার জন্য এইচ, এম, জি, এম, এম, জি, এবং মর্টার ব্যবহার করেছিল। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণের ফলে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

বিপ্লবী বাংলাদেশ ১: ১৪

২১ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!