আজাদ
২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
শেখ মুজিবের মুক্তি সম্পর্কে গুজবের ফানুশ
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে গতকাল বৃহস্পতিবার অপরাহ হইতে মধ্যরাত্রি পর্য্যন্ত ঢাকা নগরী এক গুজবের রাজ্যে পরিণত হয়।
গতকাল অপরাত্নে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার হওয়ার সাথে সাথে এই মৰ্ম্মে গুজব ছড়াইয়া পড়ে যে, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হইয়াছে এবং শেখ মুজিব মুক্তিলাভ করিয়া গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে ‘পিণ্ডি যাত্রা করিতেছেন।
অপর দিকে বেতারে ঘোষণা করা হয় যে, শেখ মুজিব প্যারলে মুক্তি লাভ করিয়া সন্ধ্যায় পিণ্ডি পৌঁছিবেন। বেতার সংবাদ প্রচারিত হওয়ার অল্পক্ষণ পরই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান উক্ত সংবাদের প্রতিবাদ করেন এবং বলেন যে, শেখ মুজিব আগরতলা মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্য্যন্ত গোলটেবিলে যোগদান করিবেন না।
অপর দিকে বিশ্বস্তসূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, একটি বিশেষ মহল হইতে শেখ মুজিবকে জামিনে মুক্তিদানের প্রস্তাব করা হইলে শেখ মুজিব তাহা প্রত্যাখ্যান করেন এবং স্বীয় সিদ্ধান্তে অবিচল থাকেন।
বেতারের সর্ব্বশেষ সংবাদে পুনরায় বলা হয় যে, ইতিপূর্ব্বে তাহারা মুজিবের প্যারলে মুক্তিলাভ সম্পর্কে যে খবর প্রচার করিয়াছিলেন তাহা নেজামে এছলাম নেতা ফরিদ আহমদের নিকট হইতে পাইয়াছিলেন। শেখ মুজিব সম্পর্কে আওয়ামী লীগ মহলের সহিত যোগাযোগ করা হইলে তাহারাও মুক্তিলাভ সম্পর্কে কোন সঠিক খবর দিতে পারেন নাই।
‘পিণ্ডি হইতে পিপিআই পরিবেশিত অপর এক খবরে বলা হয় যে, তথায় অবস্থানরত জনৈক আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকায় শেখ মুজিবের পরিবারের সহিত যোগাযোগ করিলে মুক্তিলাভ সম্পর্কে মুজিব পরিবার কিছুই জানেন না বলিয়া জানান।
এইভাবে গতকাল সমগ্র ঢাকা নগরী কল্পনা-জল্পনা ও গুজবের রাজত্বে পরিণত হয়।
গতকাল অপরাহ্ণে আওয়ামী লীগ নেতা জনাব তাজুদ্দিন ও অপর কয়েকজন শেখ মুজিবর রহমানের সহিত সাক্ষাৎ করেন বলিয়া প্রকাশ। তাহাদের সাক্ষাতের বিস্তারিত বিবরণ জানা যায় নাই। এদিকে শেখ মুজিবের স্ত্রীর সহিত যোগাযোগ করা হইলে তিনি জানান যে, তাঁহার স্বামীর মুক্তিলাভের সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, তাঁহার স্বামী প্যারলে বা জামিনে মুক্তিলাভ করিবেন না।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯