বাংলাদেশে গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আবদুল মালেক উকিল কারিগরি মিলনায়তনে বাংলাদেশ মেডিকল এসোসিয়েশনের ৪ দিন ব্যাপী প্রথম জাতীয় বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুতনে ভাষণদানকলে বলেন, এবার চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে গণমুখী চিকিৎসা চালু করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের চিকিৎসকগণকে সরকআরি কর্মচারী মনে না করে সমাজকর্মী হিসাবে মনে করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের নতুন কমিটির সভাপতি ডাঃ, কে, এম আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ভারত মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের ৮ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতা শ্রী অমিয়ভূষণ মূখাজী, বৃটিশ মেডিক্যাল টিমের সদস্য মি. ডি, ই উইলিয়াম ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান ও গণ পরিষদ সদস্য ডাঃ মোবারক হোসেন। উল্লেখযোগ্য যে, বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদানের আত্মার সম্মানার্থে সম্মেলনের শুরুতে ১ মিনিট কাল দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার ভাষণে আরও বলেন যে, তার সরকার জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিতে দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুবিধার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দান করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, বিগত বছর যাবত স্বাস্থ্য বিভাগকে অত্যন্ত অবহেলার সাথে গণ্য করা হয়েছে। তিনি জানান যে, পাকিস্তানি শাসকদের আমলে দেশের মূল বাজেটের শতকরা ৩ হতে ৭ ভাগ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্ধ করা হতো। ফলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা লাভ হতে বঞ্চিত হতো। বাংলাদেশের বহু সংখ্যক নারী বর্তমানে চিকিৎসা পেশার দিকে আগ্রহ পরিদর্শন করছেন বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব মালেক উকিল দীপ্ত কণ্ঠে বলেন যে, মন্ত্রী বা উচ্চ পদস্থ সরকারি আমলার কোনো সুপারিশে আর কোনো মেডিক্যাল কলেজসমূহে ভর্তি করা চলবে না। মেধার ভিত্তিতেই কলেজ সমূহে ভর্তি করা হবে। তিনি আরও জানান, গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের দ্বারপ্রান্তে চিকিৎসার সুনিশ্চিত ব্যবস্থা পৌছায়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তার সরকার প্রত্যেক থানায় ১টি করে হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। উল্লেখযোগ্য যে, সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেডিক্যাল সমিতির অফিস প্রাঙ্গণে সমিতি কর্তৃক নির্মিত শহীদ স্মৃতিফলক উম্মােচন করেন। এই উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে মন্ত্রী মহোদয় নিহত ডাক্তারের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জাতির বর্তমান সংকটে তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন চিকিৎসক চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করেন।
রেফারেন্স: ২১ এপ্রিল ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ