দিশেহারা শত্রুসৈন্যরা এখন আত্মরক্ষায় ব্যস্ত ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর সাঁড়াশী আক্রমণ
(নিজস্ব প্রতিনিধি প্রেরিত) মুক্তিবাহিনীর গেরিলাযােদ্ধারা দখলীকৃত ঢাকা শহরে ক্রমাগত প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদেরকে এক অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলে দিশেহারা করে তুলেছেন। গত ২রা নভেম্বর রাত্রে ঢাকার পুলিশ দফতরের ওপর গেরিলাযােদ্ধারা এক আকস্মিক আক্রমণ চালান। টহলদানরত পুলিশকে পরাস্ত করে বােমা দ্বারা আক্রমণ চালিয়ে দখলদারদের আস্তানায় একটি শক্তিশালী বােমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অফিসের কাগজপত্র, দলিল ধ্বংস করে এবং কয়েকজন দালাল কর্মচারীকে গুরুতররূপে আহত করেন। এছাড়া গেরিলাযােদ্ধারা নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত আবদুল কাইয়ুমকে গুলী করে হত্যা করেন। একজন বিদেশী কূটনীতিক জানাচ্ছেন যে, ঢাকা শহর এখন সূর্যাস্তের পর সম্পূর্ণ মুক্তিবাহিনীর অধীনে চলে যায়। সন্ধ্যার পর পাকিস্তান সামরিক গাড়ীগুলিও (অস্পষ্ট) সাহায্য করছেন। দিনের বেলায় রাস্তায় বেরিকেড তৈরী করে রাখছে। সামরিক বাহিনীর পােষাক পরে একদল লােক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। একজনকে পাহারা দিচ্ছেন তিনজন সামরিক পুলিশ। কলকাতাস্থ বিদেশী কূটনৈতিক মিশনের উক্ত কন্সাল জেনারেল বলেন ঢাকায় অবস্থানকালীন তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জে গিয়েছিলেন। তিনি ঐ সড়কের আশে পাশে কোন (অস্পষ্ট) তিনি বলেন সাধারণ লােক খুব ভয়ে ভয়ে দিনের বেলায় রাস্তায় চলাফেরা করেন। কিন্তু হানাদার সৈন্যদের ভয়ে সন্ধ্যার পর মনে হয় ঢাকা একটি মৃত নগরী। খানসেনাদের মনােবল এখন সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তিনি আরাে বলেন তেজগা বিমান বন্দর।
বিমান বিধ্বংসী কারণ ছাড়াও বাঙ্কার এবং সামরিক ছাউনি ফেলা হয়েছে। ডা, মালিকের সরকারের কোন অস্তিত্ব সেখানে নেই। তথাকথিত মন্ত্রিরা আত্মরক্ষার জন্য এখন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে। | বিলম্বে পাওয়া খবরে জানা গেছে যে, গত ১৫ই অক্টোবর মুক্তিযােদ্ধারা ঢাকার নিকট সি এ্যান্ড বি সড়কে দুইজন পাকিস্তানী খানসেনা ও ২ জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং ১টি রাইফেল ও ৫০ রাউন্ড গুলি মুক্তিবাহিনী হস্তগত করে। উক্ত জেলায় ২৩শে অক্টোবর স্বাধীনতাকামীরা সােনাগাজীতে হানাদারদের একটি দলকে অতর্কিত। আক্রমণ করে ২ জন পাকসেনাকে নিহত ও ৪ জনকে আহত করে। একই তারিখে মুক্তিযােদ্ধারা সােনাগাজি রাস্তায় ১ জন অফিসারসহ ৯ জন হানাদার সৈন্য খতম করেন এবং তাদের জিপটিও সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। গত ২৪শে অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর তরুণ গেরিলারা এক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রাতে দখলদার সেনারা ৩ শত সেনা নিয়ে অতর্কিতে সােনাগাজি আক্রমণ করলে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা তার দাঁতভাঙ্গা জবাবে তাদেরকে প্রতিহত করেন। উভয় পক্ষে প্রায় ২ ঘণ্টা যুদ্ধের পর শত্রুদের ৩ জন খানসেনা ও ৭জন রাজাকার নিহত হয়।
জয়বাংলা (১) ১: ২৮ !
১৯ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯