You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
২২শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
১১-দফার সংগ্রাম চলবেই চলবে
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

গতকাল (২১শে ফেব্রুয়ারী) ‘শহীদ দিবস’ পালন উপলক্ষে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে সমবেত ২ লক্ষাধিক ছাত্র-জনতা আর একবার ১১-দফা কর্মসূচীর প্রতিটি দাবী আদায় ও ১১- দফার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান গণসংগ্রামকে অব্যাহত রাখার শপথ গ্রহণ করে। অবিলম্বে আইয়ুব সরকারের পদত্যাগ, ১১-দফার ভিত্তিতে নূতন শাসনতন্ত্র রচনা, মুজিব, মনি সিং, মতিয়া চৌধুরী সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, ষড়যন্ত্র মামলা সহ সকল মামলা প্রত্যাহার, সকল রাজনৈতিক দণ্ড মওকুফ, হুলিয়া ও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার, সাম্প্রতিক আন্দোলনের শহীদানের ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দান, সকল হত্যাকাণ্ড, গুলীবর্ষণ ও অত্যাচারের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তিদের অপসারণ ও শাস্তি প্রদানের দাবীতে আগামী ৪ঠা মার্চ প্রদেশ ব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালনের আহ্বান জানায় এবং ৩রা মার্চের মধ্যে বর্তমান মৌলিক গণতন্ত্রী ব্যবস্থাকে কবর দেওয়ার জন্য সকল মৌলিক গণতন্ত্রী, সকল এম এন এ ও খেতাব বর্জনের আহ্বান জানায়। সকল ইউনিয়ন হইতে যাহাতে বি, ডি, সদস্যরা পদত্যাগ করেন তজ্জন্য ছাত্র শ্রমিক কৃষক-জনগণের প্রতি লক্ষ্য রাখারও আহ্বান জানান হয়।
সভায় ১১-দফা দাবীর প্রশ্নে যে কোন রূপ আপোষের বিরুদ্ধে এবং প্রতিটি রাজবন্দীর মুক্তি, হুলিয়া ও মামলা প্রত্যাহার প্রভৃতি পূর্বশর্ত পূরণের পূর্বে কোন গোলটেবিল বৈঠকে বসার বিরুদ্ধে নেতৃবৃন্দকে হুঁশিয়ার করিয়া দেওয়া হয়।
সভায় গণআন্দোলন দমনের কাজে ক্রমাগত সেনাবাহিনী ব্যবহার করার এবং ১১-দফার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য পূনর্বার দেশবাসীর উপর কোন সামরিক শাসন চাপাইয়া দেওয়ার চক্রান্তের মারাত্মক পরিণতির কথা শাসকগোষ্ঠীকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া হয় এবং বলা হয় যে, দেশবাসী যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে দ্বিতীয় মার্শাল ল প্রতিহত করিবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ রুদ্ধ করা হইলে, মুক্তির জন্য জনগণ চীন, রাশিয়া, ভিয়েনাম, আলজিরিয়ার জনগণের মত সশস্ত্র বিপ্লবের পথে অগ্রসর হইবে।
সভায় জনগণকে আরও সুতীব্র আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, সর্বসংগ্রাম পরিষদ গঠন ও ইতিমধ্যে গঠিত সংগ্রাম পরিষদ সমূহকে আরও শক্তিশালী করিয়া গড়িয়া তোলার জন্যও ছাত্র, শ্রমিক জনতার প্রতি আহ্বান জানান হয়।
সভায় ভাষা আন্দোলনের আন্দোলনের এবং ১১-দফা ভিত্তিক সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের বার শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিয়া ও শামসুদ্দোহা, সার্জেন্ট জহুরুল হক ও আসাদুজ্জামান ও অন্যান্যদের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তদন্ত অনুষ্ঠানের সান্ধ্য আইন থাকাকালীন সময়ের জন্য শ্রমিকদিগকে বেতন প্রদানের জন্য মিল মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাইয়া, ২১শে ফেব্রুয়ারী কল কারখানা চালু রাখার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ন্যায্য বেতন প্রদান ও চাকুরীর নিরাপত্তা বিধানের দাবী, সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ও সরকারী কর্মচারীদের ট্রেড উন্নয়ন অধিকার প্রদানের দাবী, রেল শ্রমিকদের ২১ দফা দাবী সহ সকল শ্রমিকদের ন্যায্য দাবীর প্রতি সমর্থন জানাইয়া শহীদ মিনারের বর্তমানে পরিত্যক্ত মূল পরিকল্পনার আশু বাস্তবায়ন, শহীদ চতুর নির্মাণ ও প্রদেশের সকল স্থান হতে কারফিউ ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন ছাত্রের অনশন ধর্মঘটে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। (স্থানাভাবে পূর্ণ বিবরণ ও বক্তৃতার বিস্তৃত বিবরণ অদ্য প্রকাশ করা সম্ভব হইল না। বা: সা:)

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!