You dont have javascript enabled! Please enable it!

শহীদ আজিজুল হকের পবিত্র রক্ত স্বাধীন বাংলার গণতন্ত্র নিশ্চিতকরণে প্রথম প্রতিশ্রুতি

টাঙ্গাইল পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে শহীদ আজিজুল হকের গায়েবী জানাজার পরে হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রধান জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী ভাষণ দিতে গিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন যে, টাঙ্গাইলের ছাত্রলীগ মিছিলের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে নয়, বাংলার যেখানেই গণতন্ত্রের ওপর স্বাধীনতা বিরোধী সাম্রাজ্যবাদী আঘাত আসবে আমাদের বজ্রকণ্ঠ সেখানেই সোচ্চার হয়ে উঠবে। জনাব সিদ্দিকী দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি কমিউনিস্টে পার্টি কোনো গণতান্ত্রিক বক্তব্যের ওপর ফ্যাসিষ্ট হামলা আসলেও আমরা হামলাকারীকে বীনা বাক্যব্যয়ে, বীনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিব না। টাঙ্গাইলের এই ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক হলেও নিরাশ হবার নয়। কারণ আজ এই বাংলার স্বাধীনতাই নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, বাংলার দুর্জয় জনতাকে বুলেট গ্রেনেড কখনও স্তব্ধ ও পরাজিত করতে পারে নাই। জনাব সিদ্দিকী সংগ্রামী জনতার উদ্দেশ্যে বলেন যে, জনতার বাংলা ৩০ লক্ষ বাঙালির রক্তে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আজ তাদেরকে সর্বপ্রকার ফ্যাসিবাদী ও নৈরাজ্যবাদী প্রবনতাকে প্রতিহত করে সর্বত্র আইনের শাসন প্রবর্তিত করতে হবে। তিনি এক পর্যায়ে বলেন যে, যারা একদিন স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, ক্ষমতার দাম্ভিকতায় তারা যদি ইতিহাস বিস্মৃতও হন কিন্তু ইতিহাস তাদেরকে কোনো দিনই ক্ষমা করবে । ইতিহাসের বিচার তাদেরকেও মেনে নিতে হবে। তিনি গণতান্ত্রিক সকল শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। তিনি অনতি বিলম্বে টাঙ্গাইলের দুর্বল প্রশাসন- ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে টাঙ্গাইলের প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি জীবনে নিরাপত্তা বোধ পুনরায় ফিরিয়ে আনবার দাবিসহ সাত দিনের মধ্যে জুডিশিয়াল এনকোয়ারী বোর্ড গঠনের দাবি জানান। তিনি সরকারকে সর্তক করে দেন যে, যদি টাঙ্গাইলের এই ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটে তা হলে বাংলাদেশ পুনরায় নৈরাজ্যের অন্ধকারে ডুবে যাবে। উল্লেখযোগ্য, জনাব সিদ্দিকী যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন একটি মিছিল ঘন ঘন “নূরে আলম সিদ্দিকী জিন্দাবাদ” কাদের সিদ্দিকী জিন্দবাদ, তোমার নেতা আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, আজিজুল হক হত্যার বিচার চাই প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছিল। প্রশাসনিক পুনর্গঠন কমিটি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পুনর্গঠন সাধনের জন্য বাংলদেশ সরকার একটি ব্যাপক কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। এবং এ কর্মসূচি প্রণয়নের দায়িত্ব নবগঠিত একটি কমিটির ওপর অর্পণ করা হয়েছে। সরকার
নির্দেশিত কর্তব্য সীমা অনুসারে কমিটি বর্তমানে প্রচলিত কারিগরি ও অকারিগরী উভয় শ্রেণির বিভিন্ন সার্ভিসের কাঠামো পর্যালোচনা করবেন এবং সরকারের প্রয়োজন ও ব্যবহারিকতার আলোকে ভবিষ্যৎ কাঠামো কিরূপ হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে সুপারিশ পেশ করবেন। বর্তমান প্রচলিত সবগুলি সিভিল সার্ভিসকে একটি মাত্র সংহত ও সমন্বিত সার্ভিসে রূপান্তরিত করার বিষয়টিও কমিটি বিবেচনা করবেন। সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কি নীতি অনুসরণ করা হবে, কমিটি সে সম্পর্কেও বিবেচনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করবেন।

রেফারেন্স: ২৫ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!