স্বাধীন দেশের নাগরিক আটক রাখার অধিকার পাকিস্তানের নাই
আমি বক্তা নই। আমি বক্তাদের জন্ম দেই। আমি মা। তবে আমি জানি না, আমার ছেলে-মেয়েরা আজ পাকিস্তানে কীভাবে আছে। আমরা বুঝতে পারি না যেখানে অর্ধশতকেরও বেশি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান করেছে, সেখানে বিশ্ববিবেক পাকিস্তানে আটক নির্যাতিত বাঙালির ভাগ্য সম্পর্কে এতো উদাসীন কেন? পাকিস্তানে আটক বাঙালিরা আজ একটি নতুন ও স্বাধীন ভিন্ন রাষ্ট্রর নাগরিক। তাদের আটক রাখা ও অত্যাচার জর্জরিত করার কোনোই অধিকার পাকিস্তানের নাই। গত বুধবার বিকালে ইস্কাটন গার্ডেন রোডস্থ লেডিস ক্লাবে পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের দেশে ফিরে আনার দাবিতে আয়োজিত এক মহিলা সভায় বেগম জোবায়দা খানম ক্রন্দন বিজড়িত কণ্ঠে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অমানুষ নয়, তাই এত হত্যাকাণ্ড চালানোর পরও বাংলাদেশের অবাঙালিরা নিশ্চিন্তে এদেশে রয়েছে। অথচ আমরা খবর পেয়েছি, পাকিস্তানে আমাদের ছেলেদের হত্যা করা হচ্ছে, মেয়েদের অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মালামাল লুঠ করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে তাদেরকে উন্মুক্ত আকাশের নিচে বন্দি অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। আটক বাঙালিদের সাথে যাতে যোগাযোগ রাখা যেতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য তিনি বৃহৎ শক্তি, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও বিশ্বের বিভিন্ন বিবেকবান সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান। পাকিস্তানে আটক বাঙালিদেরকে অন্য কোনো নিরপেক্ষ দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য তিনি বিশ্ববিবেকের নিকটও অনুরোধ জানান। সভায় অপর বক্তা মিসেস ফাতেমা সামাদ পাকিস্তানে অবরুদ্ধ বাঙালিদের নিরাপত্তা ও তাদের স্বদেশে ফিরে আনার জন্য ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আরবদেশসমূহ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের মিশন প্রধান, জাতিসংঘ ও জাতিসংঘ রেডক্রসের নিকট আবেদন ইতোমধ্যেই জানান হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
রেফারেন্স: ৩০ মার্চ ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ