যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে
যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতোমধ্যেই যথেষ্ট পরিমাণ উন্নতি হয়েছে। যোগযোগ মন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী শুক্রবার বিকেলে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে বলেন, সরকার বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতী করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। বাংলাদেশের প্রায় জায়গায় রেল যোগাযোগ চালু হয়েছে। এছাড়া ভারত সরকার প্রদত্ত দুইটি ফকার বিমান দ্বারা ঢাকা চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা যশোর পথে অভ্যন্তরীণ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন যে, শীঘ্রই আরো জায়গায় অভ্যন্তরীণ বিমান সার্ভিস চালু করা হবে। যোগাযোগ মন্ত্রী আরো বলেন যে, আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা কলিকাতা বিমান সার্ভিস চালু করা হবে। আন্তর্জাতিক পথে বিমান সার্ভিস চালু করার জন্যে বিমান ক্রয়ের প্রচেষ্টা চলছে। জনাব এম মনসুর আলী বলেন যে, যুদ্ধবিদ্ধস্ত ২৭৩টি এবং কালভার্টের মধ্যে ১২৯টি ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে। এছাড়া ৬৭টি ছোট ফেরী ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন যে, জাতিসংঘের দুটি ফেরি সহ পাঁচটি ফেরি কাজ করছে। তিনি বলেন যে, ফেরীর ইঞ্জিন ও বেইলি ব্রীজ ভারত এবং যুক্তরাজ্য হতে নিয়া আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার ১৫১টি বাস ৪৬টি কোচ এবং ৩৪টি ট্রাক বিভিন্ন পথে চলাচল করছে। তিনি বলেন যে, ১৫টি স্থানে কেমন সার্ভিস চলছে। একটি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, ঢাকা শহরের যানবাহনের সমস্যা দূর করার জন্য সরকার বিদেশ হতে বাস আমদানি এবং নষ্ট বাসগুলো মেরামত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ১৬০টি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। এর মধ্যে দশটি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি গুলোর উদ্ধার কাজ চলছে। তিনি বলেন যে, নষ্ট জাহাজগুলোর মেরামত রার জন্য ভারত এবং যুক্তরাজ্য থেকে খুচরা যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রী প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলপথ, পরিবহন সংস্থা (আই ডব্লিউ টিসি) নামে একটি সংস্থা খুব শীঘ্রই গঠন করা হবে। তিনি বলেন যে, সংস্থার জাতিদের উন্নত মানের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করবেন। এ প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন যে, ভবিষ্যতে কাঠ নির্মিত লঞ্চগুলো ব্যবহার করা হবে না। স্টিলের লঞ্চ ব্যবহার করা হবে । মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, সারাবাংলাদেশে টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। মাত্র ৯৫টি জায়গায় টেলিফোন যোগাযোগ চালু করা সম্ভব হয় নি। মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, হানাদার পাকিস্ত নিবাহিনী টেলিফোন বিভাগের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে। যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন যে, রেলওয়ে বিভাগের প্রত্যক্ষভাবে ২৯ কোটি টাকা এবং পরোক্ষভাবে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন যে, ২৮৭টি পুলের মধ্যে ইতোপূর্বে ২৬৯টি পুল মেরামত করা হয়েছে। এবং ১৭৫০ মাইলের মধ্যে মাত্র ১০০ মাইল ব্যতীত সবজায়গায় রেল চালু হয়েছে। তিনি বলেন যে, পাকিস্তানবাহিনী এ বিভাগে উচ্চপদস্থ অফিসারসহ ১৩০০ কর্মচারী হত্যা করেছে। মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, দেশে সাত হাজার ডাকঘরের মধ্যে ৬ হাজার ৯শ ৪৮টি ডাকঘর চালু হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানবাহিনী ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে, নগদ ১২ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছে এবং ৩ লক্ষ টাকার স্ট্যাম্প নিয়ে গেছে। মন্ত্রী মহোদয় আরো বলেন যে, এই বিভাগের তিন জন গেজেটেড অফিসারসহ ১৬০ জন কর্মচারীকে পাকিস্তান সেনা হত্যা করেছে। মন্ত্রী মহোদয় বলেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী প্রত্যেকটি দেশের সাথে ডাক চালু হয়েছে।
রেফারেন্স: ২৪ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ