You dont have javascript enabled! Please enable it!

পরিবার পিছু সর্বোচ্চ ৫০ বিঘা জমি- রায়পুরে মণি সিং

বাংলাদেশ কৃষক সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি শ্রী মণি সিং সরকারের প্রতি পরিবার পিছু সর্বোচ্চ জমির পরিমাণ ৫০ বিঘা নিরূপণ ও উদ্ধৃত জমি কৃষকদের মধ্যে বিতরণের আহ্বান জানান। বুধবার কৃষক সমিতির তিনদিন স্থায়ী সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে ভাষণদানকালে শ্রী মণি সিং উপরোক্ত আহ্বান জানান। রায়পুর আর বেলাবতে অনুষ্ঠিত এই কৃষক সম্মেলনে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের চার সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল এবং শ্রী ভবানী সেনের নেতৃত্বে ভারতীয় কৃষাণ সভার একটি প্রতিনিধি দল যোগদান করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন এ সম্মেলনে প্রতিনিধি প্রেরণে সমর্থ না হলেও শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছে। কৃষক সমিতি সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জনাব হাতেম আলী খান। শ্রী মণি সিং বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান। তিনি বলেন যে, বর্তমান জমির খন্ডিত পদ্ধতির সংস্থা সাধন ব্যতীত। বাংলাদেশ সমাজতন্ত্র আসতে পারে না। বঙ্গবন্ধু পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা জমি নির্দিষ্টকরণ। ঘোষণা সাময়িক, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তিনি সর্বোচ্চ ৫০ বিঘা জমি নির্ধারণ করবেন বলে শ্রী সিং আশা করেন। অচিরেই তেভাগা আন্দোলন শুরু করা হলে শ্রী মণি সিং ঘোষণা করেন। জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি দলের নেতা মি, উলফ সম্মেলনে ভাষণ দেন। তিনি বলেন যে, ফ্যাসিষ্ট হিটলারের করাল থেকে তারা যেমনি মুক্ত হয়েছিলেন, তেমনি জল্লাদ ইয়াহিয়ার হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার দেশে একজন কৃষক ২৩ জনের খাদ্য উৎপাদন করেন এবং আগামি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতি কৃষক ৩০ জনের খাদ্য উৎপন্ন করবে। ভারতীয় দলের নেতা শ্রী ভবানী সেন বলেন যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একাত্মতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা মার্কিন সাম্রাজ্য তাদের পক্ষে একটা পরাজয়। তিনি বলেন, ২৩টি একচেটিয়া পুঁজিপতির হাত থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু অনুরূপ ৭৫টি পরিবার সমগ্র ভারতের জনগণকে এখনো শোষণ করছে। কৃষক সমিতির সম্পাদক জনাব হাতেম আলী খান বলেন যে, জনসাধারণকে দুবেলা ভাতের নিশ্চয়তা দানে অসমর্থ হলে কেউই অসন্তুষ্টি দূর করতে পারবে না। সম্মেলনে ভারতের অন্যতম কৃষক নেতা জনাব আবদুর রাজ্জাক খান ও ঢাকা জেলার কৃষক সমিতির সভাপতি শ্রী জিতেন ঘোষ বক্তৃতা করেন। সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবাবলী যথা- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি এ সম্মেলন শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। সরকারকে ‘জনহালে’র লিজ দান পদ্ধতি বাতিলের অনুরোধ; যৌথ কৃষি পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন এবং বন্ধু দেশ ভারত থেকে বলদ ও বীজ এনে কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকারের নিকট দাবি করা হয়। অপর এক প্রস্তাবে বনমহল’ ইজারা পদ্ধতি বাতিল এবং গরিব কাঠুরিয়াদের কাঠ কাটার সুবিধার জন্যে ব্যক্তিগত পার্মিট পদ্ধতি প্রবর্তন। আরেক প্রস্তাবে কৃষকদের জমির মালিকানার নিশ্চয়তা দান এবং মাথাপ্রতি পাঁচবিঘা অথবা পরিবার প্রতি ৫০ বিঘা নিরূপণ। অতিরিক্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাই। গ্রামাঞ্চলে পূর্ণ রেশনিং চালু করা এবং আশ্রয়হীন দুই কোটি মানুষের অতিসত্তর পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়। দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন, এই কমিটিতে সর্বোস্তরের প্রতিনিধি গ্রহণ করা; শত্রু-সম্পত্তি আইন পুনঃবিন্যাস করার জন্য অপর এক প্রস্তাবে দাবি করা হয়। প্রস্তাবে হাট, ঘাট, জলা প্রভৃতির লিজ পদ্ধতির বাতিলের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়।

রেফারেন্স: ২৩ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!