You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.03.19 | বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর

প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশি বাংলাদেশ ও ভারতে মধ্যে এক পঁচিশ বছর মেয়াদি বন্ধুত্ব , সহযোগিতা ো শান্তি চুক্তি সাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী দুইটি দেশের যেকোনোটি তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক আক্রান্ত হলে বা আক্রান্ত হবার ভীতি দেখা দিলে তা নিশ্চিত করবার উদ্দেশ্যে যথাযথ সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে চুক্তিকারী উভয় পক্ষ সঙ্গে সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনায় মিলিত হয়ে নিজেদের দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও শান্তি স্থাপন সুনিশ্চিত করবে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গভবনে দুই প্রধানমন্ত্রী ও ঐতিহাসিক দলিলে স্বাক্ষর দান করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমী সরদার শরণ সিং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ এ স্বাক্ষরদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের শ্রী দীক্ষিত শ্রীমতি গান্ধীকে ও জনাব রফিকুল্লাহ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে স্বাক্ষর দানে সাহায্য করেন। বঙ্গবন্ধু বাংলায় ও শ্রীমতি গান্ধী হিন্দীতে দলিলে সই দেন। এ সংক্ষিপ্ত চুক্তিতে দুই দেশের দেশরক্ষা, শিল্প ও সাহিত্য, খেলাধুলা উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য প্রভৃতি সামগ্রিক বিষয়ের ক্ষেত্রে মতৈক্যের প্রতিফলন রয়েছে। চুক্তিতে সর্বপ্রকারের ও সকল ধরনের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যের নিন্দা করা হয় এবং চূড়ান্তভাবে ও সম্পূর্ণরূপে তাকে নির্মূল করার জন্যে প্রচেষ্টা চালানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হয়। চুক্তিতে ঘোষণা করা হয় যে, উভয় পক্ষ উপরোক্ত অভিষ্ট সিদ্ধির জন্য অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করবে এবং উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্য বিরোধী সংগ্রামে জনগণের ন্যায় সঙ্গত আশা আকাক্ষার প্রতি সমর্থন দান করবে। চুক্তিকারী উভয়পক্ষ বিশেষ উত্তেজনা প্রশমন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্মে ও স্বাধীনতা জোরদার করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে জোট নিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানের নীতির প্রতি অবিচল আস্থার কথাও ঘোষণা করেন। উভয় দেশের স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রধান অন্তর্জাতিক সমস্যাবলি নিয়ে চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয় পক্ষ সকল স্তরে বৈঠক ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে। চুক্তিকারী উভয় পক্ষ শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে সম্পর্ক প্রসারিত করবে। চুক্তিকারী উভয় দেশ ঘোষণা করেছে যে, তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোনো সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হবে না বা অংশগ্রহণ করবে না। চুক্তিকারী উভয় পক্ষ মর্যাদার সঙ্গে ঘোষণা করেছে যে, এই চুক্তির সঙ্গে অসামঞ্জস্য হতে পারে এ ধরনের গোপন অথবা প্রকাশ্যে এক অথবা একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো প্রকার অঙ্গীকার করবে না। এই চুক্তি পঁচিশ বছরের মেয়াদের জন্য স্বাক্ষরিত হলো এবং চুক্তিকারী উভয় পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এই চুক্তি সই হওয়ার দিন থেকে কার্যকরী হবে।

রেফারেন্স: ১৯ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ