You dont have javascript enabled! Please enable it! 1976.07.16 | সার্ভে স্কুল থেকে আজকের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৭৬ - ১৯৭৬ | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৬ জুলাই ১৯৭৬ - সংগ্রামের নোটবুক

[সার্ভে স্কুল থেকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

নিবন্ধটি লিখেছেন চৌধুরী ফজলে বারী৷ শিক্ষক এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নুরুল আমিন। প্রকৌশলী জীবনঃ পেশাগত দিক – প্রতিবেদনটি রচনায় সহযোগিতা করেছেন ফেরদাউস এ. চৌধুরী। ‘গবেষণা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি লিখেছেন মোঃ আবুল বাশার। ]

সার্ভে স্কুল থেকে আজকের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৭৬ – ১৯৭৬)

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের প্রকৌশল ও কারিগরী শিক্ষক নেতৃত্ব ও দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৬২ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও হাজারো ইতিহাস জড়িয়ে আছে একে ঘিরে৷ গত একশত বছর ধরে ছোট ছোট অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে এ অংগন এগিয়েছে আজকের সুন্দর অবয়বে।

অতীত ইতিহাস

এ শিক্ষাঙ্গনের যাত্রা শুরু হয় ১৮৭৬ সালে, প্রিন্স অব ওয়েলস ভারত সফরের কিছু কাল পরেই লর্ড নর্থব্রুক পদত্যাগ করেন। এই প্রচন্ড রাজনৈতিক পালাবদলের সময়ই ঢাকার নলগোলা এলাকায় ‘ঢাকা সার্ভে স্কুল ‘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে সার্ভে স্কুলে ভূমি জরিপ কার্যে দু বছর মেয়াদী শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। ১৮৯৬ সালে ছাত্রসংখ্যা ৪০০ তে উন্নীত হয়। তার পরের বছর সাব ওভারশিয়ার ক্লাশের প্রবর্তন করা হয় যার মধ্যে তিন বছর মেয়াদী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু শীর্ঘ্রই এ শিক্ষাঙ্গনে প্রয়োজনের তুলনায় স্থানাভাব দেখা দিলো। প্রয়োজন হলো প্রতিষ্ঠান সরিয়ে ভালো প্রশস্ত জায়গা নেবার৷ ঢাকার তৎকালীন নওয়াব স্যার আহসান উল্লাহ এজন্যে ১,১২,০০০ টাকা দান করলেন। সাথে সাথে ‘বেঙ্গল গভর্নমেন্ট’ ও ৬০,০০০ টাকা মঞ্জুর করলেন। ফলে সিদ্দিকবাজারে ঢাকা রেল স্টেশনের কাছাকাছি স্থানে (১৯০২ সালে) সার্ভে স্কুল নতুন আস্তানা নিলো।

১৯০৬ সালে সার্ভে স্কুলে কিছু পরিবর্তন এলো। নওয়াব আহসান উল্লাহর এ বিদ্যায়তনের প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতির স্বীকৃতি স্বরূপ স্কুলের নতুন নামকরণ করা হয় আহসান উল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং’ এ। এ স্কুলের প্রধান হন ‘হেডমাস্টার’ এবং তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেন। ১৯১৩ সালে প্রথম বারের মতো ৩ বছর মেয়াদী মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়। স্কুল আরও একধাপ এগিয়ে যায় ।

একদিকে স্কুলের ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি, অন্য দিকে নতুন কোর্স চালু করার ফলে আবার স্থান পরিবর্তনের চাপে পড়তে থাকে, অবশেষে ১৯২০ সালে সরকার সিদ্দিক বাজার থেকে এ প্রতিষ্ঠান পলাশীর বর্তমান জায়গায় সরিয়ে আনেন৷ প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে৷

হেডমাস্টারের পদকে প্রিন্সিপালে উন্নীত করা হয় এবং তার পদকে ‘বেঙ্গল জনশিক্ষা দফতরের’ ডিরেক্টরের প্রত্যক্ষ কর্তৃত্বাধীন আনা হয়৷

১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর পরই নতুন জীবন এলো এ অংগনে৷ স্কুল উন্নীত হলো কলেজে। নতুন নামকরণ হলো ‘ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’। এ বছরই প্রথম বারের মতো সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল এবং কেমিক্যাল এর ডিগ্রি কোর্সে ছাত্র ভর্তি শুরু হয়৷ নতুন নামকরণ বিভিন্ন মহলে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করলে সরকার ১৯৪৮ সালে আবার নাম পরিবর্তন করে “আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ” রাখলেন। এ ধারা ১৯৬১ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এ বছর তৎকালীন শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট মোতাবেক ১৯৬২ সালে কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। “ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ” হয় এর নতুন নাম।

১৯৭১ সালের পর আবার নাম পরিবর্তন হয় এ প্রতিষ্ঠান – বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ‘ নাম নেয়।

বর্তমান ক্যামপাস

যদিও একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই দেশের সকল স্থপতি, পরিকল্পক এবং দেশীয় প্রকৌশলী বের হচ্ছেন তবুও এটিই বাংলাদেশের সম্ভবত সবচেয়ে অপরিকল্পিত ক্যাম্পাস। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে কেউ একবার এ অংগনে এলে কিছুটা আশ্চর্যই হবেন। এখানে নেই সবুজের সমোরোহ। নেই আধুনিক স্থাপত্যের চোখধাঁধানো সমারোহ বা নির্মাণ কৌশলের বলিষ্ঠ দম্ভ। সবকিছুই খাপছাড়া, আবেদনহীন। একমাত্র স্থাপত্য ভবন, নতুন ছাত্রাবাস, জিমনেসিয়াম ভবন ছাড়া কোন ভবনই কাছে টানে না। নতুন মসজিদ হয়েছে, লাইব্রেরী ভবন হয়েছে, বিকট প্রকৌশল ভবন হয়েছে কিন্তু কোন বৈচিত্র কিছুই নেই। এর কারণ হিসেবে এসবের স্থপতিরা স্বীয়কার্যে প্রশাসন ও অন্যান্যদের হস্তক্ষেপকে অভিযুক্ত করেন। কথা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের রাস্তাঘাট ও পয়ঃপ্রণালী নিয়ে। সামান্য বৃষ্টি অনেক রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। এ ক্যাম্পাসের সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হলো নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মারাত্মক অনুপস্থিতি। সৌন্দর্যের জন্য গাছ লাগানোর চাইতে বরং কাটাই হয়েছে অনেক বেশী। এখানে নেই কোন পুকুর বা জলাধার যার চারপাশে বসে ছাত্ররা তাদের অবসর সময়টুকু কাটাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তরের প্রশ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জমি রয়েছে যা সরকারী কর্মচারীরা ব্যবহার করছেন তাদের আবাস স্থল হিসেবে৷ অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট এ জমি (ইডেনের দক্ষিণে অবস্থিত সরকারী কোয়ার্টার) ফেরত নেয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ নেয় নি৷ বর্তমান ক্যাম্পাস এলাকা অত্যন্ত সীমিত হওয়ায় এবং জমি হস্তান্তরে অহেতুক দেরী হওয়ায় নতুন করে আবার ক্যাম্পাস পরিবর্তনের কথা উঠেছিল। ১৯৬২ – ১৯৬৮ সালের তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশন, শিক্ষা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলোচনায় বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০০০ ছাত্রের জন্য ডিগ্রি কোর্স চালু রেখে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ ঘোষণা করে নতুন যে কোন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় সরিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ প্রস্তাব মোতাবেক তৎকালীন উপাচার্য ২৪.৭৫ কোটি টাকার নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীল নকশা প্রদান করেন। সরকারী ভাবে তখন ঢাকা হতে ২০ মাইল উত্তরে ‘শালনা’ য় নতুন স্থান নির্বাচন করা হয়৷ কিন্তু এ এলাকা সেনানিবাসের অতি নিকটে হওয়ায় এবং তারা এখানকার কিছু জমি দাবী করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ (নং সি- ৪৫৮৯ তাং – ২৫-৯-৬৯) প্রদেশের (তৎকালীন) যে জেলায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই সেখানে এ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। এর পর পরই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিদেশী সাহায্যদাতার পক্ষ থেকে উৎসাহের অনুপস্থিতিতে এ প্রস্তাব ধামাচাপা পড়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সে প্রস্তাবের কোন অগ্রগতি হয় নি৷ বস্তুত স্থান পরিবর্তনের অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।

কিছু তথ্য

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট দুটি অনুষদ রয়েছে। এগুলো হলো প্রকৌশল অনুষদ এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ। প্রকৌশল অনুষদে নিম্নোক্ত বিভাগ থেকে ডিগ্রি প্রদান করা হয় – পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎকৌশল, পানি সম্পদ কৌশল, নৌ স্থাপত্য ও মেরিন কৌশল, ধাতব কৌশল এবং কেমি কৌশল। এছাড়া রসায়ন, পদার্থ ও অংক বিভাগ এ অনুষদের অধীনে কাজ করছে। প্রকৌশল অনুষদে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে সর্বমোট ৪০০ জনকে ভর্তি করানো হয়৷ প্রথম বর্ষে প্রকৌশলের বিভিন্ন শাখার উপর ছাত্রদের মৌলিক শিক্ষা দেয়া হয়। প্রথম বর্ষ পাশ করার পর যে যার পছন্দ মতো শাখা আরও তিন বছর কোর্স সমাপ্ত করে থাকে। চার বছরে প্রাপ্ত মোট নম্বরের শতকরা ভিত্তিতে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। অনুষদেই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী – এ দুইভাগে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পাশমার্ক শতকরা চল্লিশ। স্থাপত্য ডিগ্রি শিক্ষাকোর্স পাঁচ বছর মেয়াদী এবং প্রথম বর্ষেই সরাসরি ৩০ জনকে ভর্তি করানো হয়৷ এ অনুষদের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে শুধুমাত্র পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি কোর্স চালু হয়েছে। এ কোর্সে স্থাপত্য বা প্রকৌশলের ডিগ্রিধারী অথবা সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, ভূগোল প্রভৃতির মানবিক শাখার মাস্টার ডিগ্রিধারীরা ভর্তি হতে পারেন। প্রতি বছর এ কোর্সে সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা হচ্ছে ১৫। এছাড়া ইংরেজী, সমাজবিদ্যা, ইতিহাস, অর্থনীতি, শিল্প আইন ও প্রশাসন সাইকোলজি, বানিজ্যিক হিসাব নিকাশ প্রভৃতি শিক্ষা দেয়ার জন্য এ অনুষদে ‘মানবিক বিভাগ’ রয়েছে। এ সমস্ত বিষয় দু অনুষদেই পড়ানো হয়।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান (৫ ই জুন, ৭৬ পর্যন্ত) শিক্ষক সংখ্যা ২২৩ জন। তার মধ্যে ৮৫ জন বিদেশে অবস্থান করছেন। আরও অনেকে বিদেশে চলে যাবার প্রস্তুতি গ্রহন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সর্বমোট ১০৮ টি শিক্ষকদের ফ্ল্যাট রয়েছে৷ বিভিন্ন কর্মচারী মিলিয়ে ৭৮০ জন এখানে কাজ করছেন। এদের জন্য বর্তমান ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১৭৪ টি। বিভিন্ন ছাত্রাবাস সীট সংখ্যা হলো –

আহসান উল্লাহ হল – ২৮০
আহসান উল্লাহ হল (হিন্দুব্লক) – ২২৫
নজরুল ইসলাম হল – ২৫০ জন
শেরে বাংলা হল – ৩০০ জন
সোহরাওয়ার্দী হল – ৩০০ জন
তিতুমীর হল – ৩০০ জন

বিশ্ববিদ্যালয় গেইট ও দেয়াল প্রসঙ্গ

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মজার এবং দৃষ্টি আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো হাজার দেয়াল ও গেইট। অত্যন্ত অপ্রয়োজনীয় ও দৃষ্টিকটুভাবে সারা ক্যাম্পাসে দেয়াল তুলে একে খন্ড বিখন্ড করা হয়েছে। এত ছোট ক্যাম্পাসে এত গেইট ও দেয়াল অন্য কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নিধনের সবশেষ উদাহরণ হলো মেডিক্যাল কলেজের বিপরীতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ জুড়ে লম্বা উঁচু দেয়াল। ঐ রাস্তার সাথে মাঠের যে একটা ‘ভিজ্যুয়াল কন্টাক্ট’ ছিলো তার পরিসমাপ্তি হতে চলেছে৷

প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে

প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে মরণ আঘাত হানবে৷ এ প্রসংগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ হাইওয়ে সমস্ত এলাকাকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলবে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে৷ এশিয়ান হাইওয়ের ফলে একপাশের প্রশাসনিক ক্লাস ভবন সমূহ থেকে সমস্ত ছাত্রাবাস, কর্মচারীদের আবাস ও সিনিয়র শিক্ষকরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। হাইওয়ের গতি পরিবর্তন করা না হলে এলাকার দু পাশ যোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকে এজন্য ওভার ব্রীজ করার কথা বলছেন।

মোট প্রকৌশলী / শাখা নির্বাচন এবং চাহিদা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পর (১৯৬২) থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৪২০ জন প্রকৌশল এবং ১২৩ জন স্থাপত্য ডিগ্রী লাভ করেছেন। প্রকৌশলীদের মধ্যে পুরকৌশলীরা (সিভিল) ১৫২০ জন। তড়িৎ কৌশলীরা ৮২২ জন। নৌ স্থপতি ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন মাত্র ১২ জন। এটি ১৯৭২ সাল থেকে চালু হয়। আগামী বছর (১৯৭৭ সাল) বাংলাদেশে সর্ব প্রথম পানি সম্পদ কৌশলীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরুবেন। এসব প্রকৌশলী ছাত্রজীবনের ২য় বর্ষে তাদের শাখা নির্বাচন করে থাকেন। কে কোন শাখায় প্রকৌশলী হবেন তা সাধারণত নির্ভর করে নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর – ব্যক্তিগত প্রবণতা চলতি (২য় বর্ষ থাকাকালীন) বর্ষের বিশেষ শাখার চাহিদা, পারিবারিক ইচ্ছা, দেশের আনুমানিক চাহিদার হিসাবে সহপাঠীদের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে। চাকরীর চাহিদার ক্ষেত্রে তাদের এ নির্বাচনে প্রায়ই গরমিল হয়। শাখা নির্বাচন এবং দেশের চাহিদা – এ দুটির সমন্বয়ে প্রশ্নটির আমাদের সতর্কভাবে বিবেচনা করতে হবে।

এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশন অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যদি দেশের সামগ্রিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কোন শাখায় মোট কতজন প্রকৌশলী বা স্থপতির প্রয়োজন হবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দেন তখন পরিকল্পিত উপায়ে প্রকৌশলী তৈরী সম্ভব হবে।

পাশের হার

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে মেধাকে অত্যন্ত কড়াকড়ি ভাবে বিবেচনা করা হয়। কোন কারচুপি বা ‘মামার জোরে’ কেউ এখানে ভর্তি হতে পারে না। স্বাধীনতার পরে প্রচন্ড বিশৃঙ্খলার মধ্যেও এখানে ভর্তি বা পরীক্ষা হলে কোন রূপ অন্যায় পন্থা অবলম্বন করা হয় নি। তবু পাশের হার দ্রুত কমছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শতকরা ১০০ জন পাশেরও রেকর্ড আছে। (যেমন প্রকৌশল অনুষদ ১৯৬৭,৬৮, স্থাপত্যে ৬৯-৭০, ৭৩) কিন্তু ১৯৬৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের হার ইতিহাসের (চার্ট দ্রষ্টব্য) সর্বনিম্ন মাত্রা ৭৯.৬৩% এ নেমে এসেছে। প্রকৌশল শিক্ষার মত ব্যয়বহুল কোর্সে যেখানে দেশের অধিকাংশ মেধাবী ছাত্ররা পড়ছে এবং প্রতিটি ছাত্রের পেছনে সরকার বিপুল অর্থ ব্যয় করছেন, সেখানে ২০.৩৭% ফেল অত্যন্ত দুঃখজনক। এ জন্যে কেউ কেউ ছাত্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, কনডেন্স কোর্স, স্বাধীনতার পর অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ছাত্র ভর্তি, ছাত্রদের চরম আর্থিক সংকট, শিক্ষকদের বহিঃমুখিতা প্রভৃতিকে দায়ী করছেন। এ ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে তার সমাধান বের করতেই হবে।

উপসংহার

দেশের একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কম সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। কোন অডিটোরিয়াম নেই, ভালো চিকিৎসার সুযোগ নেই। সুইমিং পুল নেই। অবসর বিনোদনের সুযোগ নেই৷ অর্থনৈতিক সংকট মোচনের কোন প্রচেষ্টা নেই৷ এমনকি কোন টেকনিক্যাল প্রকাশনাও নেই। ফলে মনোবিকাশের গতি হচ্ছে ব্যাহত। তবুও তারা এগিয়ে চলেছে। দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার, দেশকে শিল্পায়িত করে সর্বক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার মহান ব্রত নিয়ে তারা সামনের পানে চলেছেন। এ চলা কোন দিন থামবে না। যেমন থামে নি গত একশত বছর ধরে।

***

বাউন্ডারী ওয়াল ও গেটের জন্য প্রসিদ্ধ
(প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৬)

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কি জন্য প্রসিদ্ধ?
বাউন্ডারী ওয়াল ও গেট।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনীয় কি কি আছে?
বাউন্ডারী ওয়াল ও গেট।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল খরচ কি?
বাউন্ডারী ওয়াল ও গেট নির্মাণ।

এই হচ্ছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

বাউন্ডারী ওয়াল উঠছে। আবার ভাঙ্গা হচ্ছে। কারণ অজ্ঞাত। গেট কাটা হচ্ছে। আবার বন্ধ করা হচ্ছে। কারণ অজ্ঞাত। এমনিধারা চলছে বহুদিন। এই দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস রুটিনের মতই নিত্যনৈমিত্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র চত্বরে বিভিন্ন গেটের মুখে মোট কয়শ দারোয়ান নিয়োজিত আছে, তা জানা থাকলে সরকার নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় কারাগারের ওভার লোড কমানোর জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করতেন৷
মন্তব্য – জনৈক ছাত্র বন্ধুর।

আনুমানিক ৫০ একর জায়গা জুড়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃতি। ছাত্র সংখ্যা দু’ হাজার। আবাসিক হল পাঁচটি। একাডেমিক ভবন তিনটি। প্রশাসনিক ভবন একটি৷ আর শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য কোয়ার্টার। এইটুকু জায়গার নিরাপত্তার জন্য নিশিদিন অতন্দ্র প্রহরায় নিয়োজিত শ’ খানেক দারোয়ান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর মধ্যে ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে আহসান উল্লাহ হল ও নজরুল ইসলাম হল। আধুনিক স্থাপত্যের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে তিতুমীর হল, সোহরাওয়ার্দী হল ও শেরে বাংলা হল। একবার জনৈক ভদ্রমহিলা এই নতুন হলগুলো দেখে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আপনাদের হল গুলো বাতাসে ভাসছে বলেই মনে হয়। ‘

‘চকচক করলেই সোনা হয় না’ কথাটি বোধকরি এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হল গুলোর ভেতরে একটু ঘুরে গেলেই ভদ্রমহিলা বুঝতেন, বাতাসে নয়, সমস্যায় ভাসছে। প্রতিটি কক্ষে চারজন ছাত্র থাকার ব্যবস্থা, জানালার কাঁচগুলো শতধা বিদীর্ণ। বৃষ্টির ছাট ঢুকতে থাকলে বিছানা গুটোবার জায়গা থাকে না। বৃষ্টির জল ঢুকে মেঝে প্লাবিত হয়ে যায়। প্রচন্ড গরমে আহসান উল্লাহ এবং নজরুল ইসলাম হলের এক একটি কক্ষ অগ্নিকুণ্ডের মতই নিদারুণ।

ডাইনিং হলের মান উন্নয়নকল্পে বিস্তর জল্পনা- পরিকল্পনার পর অবশেষে ক্যাফেটেরিয়া পদ্ধতির পরীক্ষা চলছে৷ খাবারের মান হয়ে গেছে নিম্নমুখী। চালের গুণাগুণ লোপ পায় অনেক সময়। প্রতি বেলা খাবারের মূল্য আড়াই টাকা। রেশনিং ব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান আশানুরূপ নয়৷ মেসিং সিস্টেম চালু থাকার সময় আর যাই হোক, অন্তত ডালের গামলায় ফারক্কার প্রতিক্রিয়া চোখে পড়তো না। ইদানীং তাও পড়ছে। হলের কমন রুমগুলোর সমসাময়িক চেহারা ছিঁড়ে যাওয়া সাময়িকীর মতই আনকমন। টেবিল টেনিসের টেবিল আছে। বল থাকে না। ক্যারম বোর্ড আছে। পাউডার থাকে না। স্ট্রাইকার খুঁজলে মিলে না। কমনরুমের একমাত্র কমন জিনিস হচ্ছে দৈনিক পত্রিকাগুলো। আহসান উল্লাহ ও নজরুল ইসলাম হলে সেই কক্ষের পরিচয় কমনরুমে। তারই এক কোণে দাড়িয়ে আছে টেলিভিশন। এ দুটোর সংঘাত একমাত্র ভুক্তভোগীরাই অনুভব করতে পারেন। এই নিয়ে ছাত্রদের মাঝে প্রায়ই খিটিমিটি লেগে থাকে৷

তারপর তো আছে ক্যান্টিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক একটি ছাত্রের পেটে চার বছর ধরে বাদাম তেলে জুবুথুবু পরটা খেয়ে – তেলের খনি না হয়ে যায় কোথায়৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য তথা প্রত্যেকের, প্রত্যেকটি প্রকৌশলীর জীবনের সাথে গাঁথা হয়ে আছে আরো দুটি নাম। হাছিনা আর পপুলার হোটেল। অনেক ছাত্রই হলের মেস বা ক্যান্টিনের চাইতে এই দুটি হোটেলেরই সমঝদার। এমন কোন প্রকৌশলী এখান থেকে বের হয়নি – যিনি কোন না কোন সময় হাছিনা বা পপুলারের দ্বারস্থ হননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি বৈচিত্র্য মালটিপারপাস জিমনেসিয়াম। জিমনেসিয়াম হিসেবে অনবদ্য। সবচাইতে আধুনিক। ‘৭৪ সালের জাতীয় জিমন্যাস্টিক প্রতিযোগিতা এখানেই সম্পন্ন হয়। এই জিমনেসিয়ামে অনুশীলনকারী ছাত্রের চাইতে বহিরাগতই বেশী৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা কোন অডিটোরিয়াম নেই। তাই সভা সমিতি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি পড়া শুরু হলে ভিজে ভিজে অনুষ্ঠান দেখা ছাড়া উপায় থাকে না৷ স্থাপত্য ভবনের সম্মুখে মনোরম লাইব্রেরী ভবনের নীচের তলায় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। প্রথম শুধু প্রাতঃরাশ পরিবেশন করা হতো৷ এখন দুপুরের লাঞ্চও যোগ করা হয়েছে। টিফিন ছুটিতে ছাত্রদের ভিড়ে এই ক্যাফেটেরিয়ার নাভিশ্বাস ওঠে৷

বিশ্ববিদ্যালয়ে ইদানিং ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছে৷ মোট ছাত্রী সংখ্যা ৫৫ জন। প্রকৌশল অনুষদে ১৯ জন। স্থাপত্য অনুষদে ২৬ জন। ছাত্রীদের উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের যান্ত্রিক পরিবেশের মাঝখানে কিছুটা অযান্ত্রিক স্পন্দন সঞ্চারিত করছে – এমন ধারণা যারা করে আছেন – তারা কিন্তু আহাম্মকের স্বর্গেই বাস করছেন। নাট – বল্টু, সেট- স্কোয়ার, স্লাইড রুলের পেশী এমনই বিপুল গ্রাসী, রমণীর কমনীয়তাও তার রাহুগ্রাস থেকে বাদ যায় না। ছাত্ররাও ছাত্রীদের প্রতি তেমন মনোযোগী নয়৷ অবশ্য মনোযোগ আকর্ষণের নিমিত্তে যে ফাউন্ডেশন প্রয়োজন এখানকার ছাত্রীদের অধিকাংশেরই সেই রাসায়নিক কৌশল প্রয়োগ করতে দেখা যায় না৷ ছাত্রদের মাঝখানে ছাত্রীরা প্রায় কোণঠাসা হয়ে থাকে৷ স্থাপত্য অনুষদের পরিবেশ কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানকার পরিবেশটাই মনমোহন করে তুলেছে ছাত্রীরা৷ ছাত্র – ছাত্রীদের মধ্যে মনোরম বন্ধুত্ব ও সহশিক্ষার আদর্শপিঠ এই অনুষদ৷ পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখে ছাত্র-ছাত্রীরা কাজ করছে একসাথে।

ছাত্রীদের কাছে বিচিত্রা প্রতিনিধি প্রশ্ন রেখেছিল, ‘আপনারা কেমন আছেন?’ উত্তরে ছাত্রীরা বলেছে – ‘আমরা এক একজন মূর্তিমান সমস্যা ‘।

আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধার কণাভাগও তাদের ভাগ্যে জুটছে না।

ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ আছে। অথচ থাকার কোন বন্দোবস্ত নেই৷ অনেক ছাত্রীর প্রকৌশল পড়ার ইচ্ছে থাকলেও কেবলমাত্র আবাসিক সমস্যার জন্য এখানে ভর্তি না হয়ে মেডিক্যালে পাড়ি জমায়৷

অনেক দেন দরবার করার পর কর্তৃপক্ষ ছাত্রী দের একটা আবাস দিয়েছেন। এটাকে ছাত্রীরা কি নামে অভিহিত করবেন – তার উপযুক্ত পদবাচ্য খুঁজে পাননি। শিক্ষকদের স্টাফ কোয়ার্টারের এক অংশে এর অবস্থান। রুম চারটা। ছাত্রী সংখ্যা আটজন।

পূর্বে ছাত্রীদের জন্য একটা আলাদা দালান ছিল। ভিসি সাহেবের বাংলো নির্মাণাধীন থাকায় ছাত্রীদেরকে শিক্ষকদের কোয়ার্টারে পাঠানো হয়েছে। ভিসি সাহেব সেখানে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেলিনা আফরোজা লুলু’ র ভাষায়, ‘আমাদের অসুবিধা গুলো শুনার মতো সহানুভূতিশীল কেউ নেই৷ শুনেছি একজন প্রভোস্ট – এর দায়িত্বে আছেন। ওনার পদধূলি আজও হোস্টেলকে ধন্য করেনি।
সবচেয়ে অসহ্য লাগে নিত্য নতুন দারোয়ান বদল৷ একটা কাজ করতে বললে ঠিক তার উল্টোটি করে রাখে। আপনি হয়তো বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে আনতে বললেন। দেখবেন সে পেঁয়াজু এনে বসে আছে৷ ‘

দুজন ছাত্রীকে অকূলে কূল দেবার মতো যেই হোস্টেলটির ভিত্তি রচিত হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৫ জন ছাত্রী থাকা সত্ত্বেও সে অবস্থায় রূপান্তর ছাড়া কোন উপয়ান্তর হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদে মেয়েদের জন্য একটা আলাদা কমন রুম আছে। রুমটা আছে – আর কিছু নেই। অবশ্য প্রমাণ সাইজের একটা আয়না আছে। কমনরুম সংলগ্ন টয়লেট আছে। তাতে কোনদিন পানি থাকে৷ কোনদিন থাকে না। এদিক থেকে প্রকৌশল অনুষদের ছাত্রীদের সমস্যা আরো প্রকট।

প্রকৌশল অনুষদে ছাত্রী সংখ্যা মোট ১৯ জন। কেমিকৌশল বিভাগে ৪ জন। তড়িৎ কৌশল বিভাগে ৪ জন। যন্ত্রকৌশল বিভাগে ১ জন। পানি সম্পদ কৌশলে ৬ জন। পুরকৌশল বিভাগে ৪ জন।

এ গ্লাস পানি খেতেও তাদেরকে এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিং এ ছুটে আসতে হয়।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত, বারবার আবেদন ও দেন দরবার করার পরও এই সব সমস্যার সুরাহা হয়নি। অন্য দিকে ছাত্রী দেরকে গ্রুপ ওয়ার্কের জন্য এক সাথে থাকা একান্ত প্রয়োজন। আবাসিক সমস্যার বিকল্প হিসেবে ছাত্রীদের জন্য যানবাহনের কথাাও বলা হয়েছে। এখনও কেউ এসব সমস্যা গায়েই মাখছেন না।

অনেক অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও ছাত্রীরা প্রকৌশল ও স্থাপত্য কোর্সে যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় রাখছে।

এসব বহুমুখী সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বারবার কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কর্তৃপক্ষ মাস্টার প্ল্যান বার করে বলেন – দেখো সব কিছুরই সমাধান এর মধ্যে করা হয়েছে।

ছাত্ররা হেসে বলে – ও তো মাস্টার প্ল্যান।

সমস্যা সমাধানে বাস্তব সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে জমির অভাব। ১৯৬২ সালের ১ লা জুন পলাশী ব্যারাক থেকে ‘দৈনিক আজাদ’ অফিসের কাছে পর্যন্ত সর্বমোট ৪৩.৭৫ একর জমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বিনিময়ে সরকারকে ৪০ লক্ষ টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৯৬৩-৬৪ সালে সরকার ১৮.৭১ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করে। এই জায়গাটুকুতেই গড়ে উঠেছে তিতুমীর হল, শেরে বাংলা হল, সোহরোয়ার্দী হল ও বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন কিস্তিতে ৪৩ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা পরিশোধ করে। তবুও জমির দখল এখনও পায়নি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৩ মাসের মধ্যে পলাশী এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে এলাকাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। অনেক মন্ত্রী মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। আশ্বাসের বাণী শ্রবণ করিয়েছেন। শেষে সব আশ্বাসকে মুষিক প্রসব করতে দেখা গেছে৷

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তৎকালীন পূর্ত মন্ত্রীর কাছে যে সব বাসা নতুন খালি হয়, ঐ সব বাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব রাখেন। সে প্রস্তাবও মূষিক প্রসব করেছে।

পূর্ত মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সচিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগামী দেড় বছরে মণিপুর আবাস নির্মাণ কাজ শেষ হলে পলাশী ব্যারাকের বাসিন্দাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই৷ সাথে সাথে এ কথাও উল্লেখ্য – এ সিদ্ধান্তের পরিণতি যেন পূর্বের বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার একই দশা না হয়।

দেশের একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত উন্নয়ন কার্যক্রম জমির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে তা শীঘ্রিই বাস্তবায়িত হবে। গড়ে উঠবে মেকানিক্যাল কমপ্লেক্স। নতুন বহুতল ছাত্রাবাস। বিভিন্ন মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ ও পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সের গবেষণাগার। গড়ে উঠবে বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম। দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব দানের পথ সুগম হবে। সুগম হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক মনোনশীলতা বিকাশের পথ।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জীবনটাও বৈচিত্র্যময়। গভীর শীতের রাতে উদোম গায়ে আগুনের কুন্ডলী ঘিরে স্প্যানিশ গিটার বাজিয়ে বব ডিলান বা পল সাইমনের সুরে কাউকে রাত্রির নিস্তব্ধতা ভাঙ্গতে দেখলে মনেই হয় না পরদিন সকালে তাকেই স্ট্রাকচারের কঠিন সমস্যার গভীরে ডুবতে হবে। আবার সেই ছাত্রটিই এডওয়ার্ড এলবি’ র নাটক ‘জুষ্কটোরী’ অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে দর্শকদের।

প্রকৌশল ও স্থাপত্য শিক্ষার অঙ্গনে সংস্কৃতির চর্চা চলে না – এমন ধারণা কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে নাট্য গোষ্ঠী। অভিনীত হয়েছে বহু নাটক।

গঠিত হয়েছে শিল্পী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী অনুষ্ঠান করেছে দেশে বিদেশে। গঠিত হয়েছে সাহিত্য পরিষদ। প্রকাশিত হয়েছে সংকলন সাময়িকী ও টেকনিক্যাল জার্নাল।

বর্তমানে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কিছুটা ভাটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাংস্কৃতিক প্রতিভাগুলো সংগঠিত করার দূর্বলতা এর অন্যতম কারণ। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ফান্ডের অভাব। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংসদকে বরাদ্দ করা হয় না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীরা সম্পূর্ণ ভাবে প্রভাবমুক্ত একটি ‘কালচারাল ক্লাব’ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছে।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গনে এখন শ্মশানের নীরবতা। ১৯৭৫-৭৬ সালে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। গত দু বছর মাঠে বসে নাই ক্রিকেটের আসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধূলা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য রয়েছে ক্রীড়া- উপপরিষদ। রয়েছে খেলাধূলার উন্নয়ন ও সুবিধা বাড়ানোর জন্য সরকারী মঞ্জুরীকৃত অর্থ। এ অর্থের মোটা অংশই মাঠের চার পাশে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণেই ব্যয় হচ্ছে। আগেই উল্লেখ করেছি – প্রাচীর ভাঙ্গা আর গড়ার খেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। সীমিত সুযোগ সুবিধার মাঝেও কিছু সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী একান্ত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক সময় জিমন্যাস্টিকস, এথলেটিকস ও টেবিল টেনিসে এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয়।

ব্রড – জাস্প ও ট্রিপল জাম্পে স্বর্ণপদক লাভ করে দ্বিতীয় বর্ষ পুরকৌশলের রুমী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় ক্রীড়ার সম্মানিত আসন এনে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের মান এতটা আকর্ষণীয় নয়। হকির মান অপেক্ষাকৃত উন্নততর। আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় হকিতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রানার্স আপ হবার গৌরব অর্জন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রী ব্যক্তিগত প্রয়াসে অনুশীলন করে থাকেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া পরিষদ তাতের জন্য কোন সুযোগ সৃষ্টি করছে না।

যথেষ্ট প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়াঙ্গনে শ্মশানের নীস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ছাত্রদের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধূলার নিয়ন্ত্রণে যারা আছেন তাদের আন্তরিকতা প্রশ্ন সাপেক্ষ। তারা প্রশ্ন তুলেছেন – সরকার যেখানে ক্রীড়াঙ্গনের সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণে আগ্রহী, কর্তৃপক্ষ সেখানে কাকতালীয় টালবাহানার আশ্রয় নিচ্ছেন কেন?

‘ক্রীড়াঙ্গন, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সাহিত্য অঙ্গন সব কিছু থেকে যথেষ্ট দূরে কিছু ছাত্র আছে। তারা ঘুরে বেড়ায় গ্রন্থাগারের শেলফে পোকার মত। ঘুরলে কি হবে? বই’ র সংগ্রহ আছে প্রচুর। কিন্তু প্রয়োজনীয় বইটি নেই।

গ্রন্থাগারের বাইরের চাকচমক দেখে চমকে উঠারই কথা। মোটা মোটা বাঁধানো ভল্যুমগুলো কেবলই গ্রন্থাগারের শোভা বৃদ্ধিই করছে। ব্যবহার হচ্ছে কম। বর্তমান সংগ্রহ প্রায় সাতান্ন হাজার৷ অথচ ছাত্রদের চারজন মিলে একটি বই পড়তে হয়। অধিকাংশ বইই সাহায্য বা অনুদান হিসেবে সংগৃহীত। এ বৎসর ইউনেস্কোর কাছ থেকে সাত হাজার ডলার এবং বৃটিশ ওভারসীজ ডেভেলপমেন্ট মেনেজমেন্টের কাছ থেকে তিন হাজাে পাউন্ড দান হিসেবে পাওয়া গেছে। গ্রন্থাগারের আধুনিক সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মাইক্রোফিল্ম রিডার। দুটো ফটোকপি মেশিন। একটি স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লিকেটর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঞ্জুরীকৃত বৈদেশিক মুদ্রার কোটা অত্যন্ত ন্যুন হওয়ায় প্রয়োজনীয় বই – এর সংখ্যা বৃদ্ধি বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাময়িকী ও রেফারেন্স বই সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।

শত সমস্যার বেড়াজাল সত্ত্বেও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার মান দিন দিন কঠোরতর হচ্ছে। সৃজনশীল ও প্রতিভাবান ছাত্রদেরই তীর্থভূমি এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দি।

এই নিবন্ধ রচনায় যাদের সাহায্য নেয়া হয়েছেঃ
ফিরদাউস এ চৌধুরী। সুফি। সেলিনা আফরোজা লুলু। দিলীপ কুমার বড়ুয়া। শামসুল হক মোহাম্মদ। প্রণব কর্মকার।

***

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ গবেষণা কার্যক্রম

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র প্রযুক্তি ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬২ সালে কারিগরি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার বৃহত্তর সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তদানীন্তন প্রকৌশল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। সে অবধি বহু প্রজ্ঞানী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষক এই মহান বিদ্যাপিঠে কাজ করেছেন এবং জাতীয় উন্নতির ক্ষেত্রে অবদান মূলক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গবেষণা কার্যক্রম চালানোর মতো উপযোগী পরিবেশ এখানে এখনো গড়ে উঠেনি যেমনটা হয়নি দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও৷ আর্থিক সমস্যা ও উন্নত যন্ত্রপাতির অভাব সত্ত্বেও প্রতিভাবান কর্মীরা এগিয়ে চলেছেন বিভিন্ন জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত সাহায্য ও অবদান রাখার অদম্য মানসিকতায়। অনুকূল পরিবেশ এ কাজকে তরান্বিত করবে যা জাতির জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় এবং জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে একমাত্র কার্যকরী পদক্ষেপ।

এ সমস্ত গবেষণা কার্যক্রমেরই কয়েকটি দিক পাঠক সমক্ষে তুলে ধরার প্রয়াসে এ নিবন্ধ। বর্তমানে যে সমস্ত বিষয়ে গবেষণা চলছে এবং কাজ শেষ হয়েছে শুধু তাই ই এখানে আলোচিত হয়েছে৷ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটি অনুষদ রয়েছে এবং এই দুই অনুষদেই ব্যাপক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

(ক) স্থাপত্য অনুষদঃ

এই অনুষদে দুইটি বিভাগ আর এ বিভাগদ্বয় কাজ করছে বিভিন্ন জাতীয় সমস্যা অনুধাবন করে তার আলোকে উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য।

স্থাপত্য বিভাগঃ এ বিভাগের নানা কাজের মধ্যে যে কয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা হল,

১) বাংলাদেশের শহর ও নগরে উপযোগী বাসগৃহ ও অফিস নির্মাণের ‘আদর্শ’ জায়গা নির্ধারণ যাতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে পরিকল্পনা হাতে নেয়া যায়।

২) আগামী দিনের চাহিদা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও আপটিমাম জায়গা নির্ধারণ।

৩) গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য পারিপার্শ্বিকতা উন্নয়ন।

৪) দেশের বিভিন্ন পেশার ও আয়ের লোকদের বাসস্থান ব্যবস্থা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমস্যা চিহ্নিতকরণ।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগঃ এই বিভাগ তিনটি শাখায় বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ হাতে নিয়েছে। এইগুলো হল গ্রাম অঞ্চল ও নগর বা শহর। অনেক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,

১) বাংলাদেশে গ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনার ভিত রচনার উদ্দেশ্যে সমন্বিত এলাকার পরিকল্পনা।

২) পল্লী উন্নয়ন পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক পরিকল্পনা কৌশলের ব্যবহার।

৩) পরিকল্পনার জন্য পরিসংখ্যান ভিত্তিক অঞ্চল নির্ধারণ করার জন্য ‘পরিসংখ্যান অঞ্চলীকরণ।’

৪) সামাজিক ইকোলজির আলোকে ঢাকা নগরের বসতি অনুসন্ধানঃ গৃহায়ণ পদ্ধতিতে অনুদান।

৫) পুনঃবস্তিয়ানের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক জরিপ।

৬) ঢাকা শহরের জন্য চিত্তবিনোদনের উপযুক্ত খোলা জায়গা এবং

৭) বৃহত্তর ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রশাসনিক ও বিধিগত কাঠামো নিরূপণ করা।

(খ) প্রকৌশল অনুষদঃ

প্রকৌশল অনুষদে বর্তমানে সাতটি বিভাগ রয়েছে এবং আরো দুইটি বিভাগ খোলার চিন্তা ভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। এ সমস্ত বিভাগ অতীতে বিভিন্ন প্রকৌশলগত সমস্যার মোকাবেলায় সরকার ও অন্যান্য সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করেছে এবং বর্তমানেও করে আসছে।

১) (ক) কেমিকৌশল বিভাগঃ এই বিভাগের গবেষণামূলক কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বিভিন্ন জিনিসের ক্ষয় রোধের উত্তম পদ্ধতি উদ্ভাবন, পুরকৌশল বিভাগের সহিত যুক্তভাবে দেশীয় মাটি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য হালকা অথচ মানগত খোয়া থেকে তৈরী, প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে মিথানল প্রস্তুতের এবং পৌর আবর্জনার সুষ্ঠু নিষ্কাশন। এ ছাড়া গ্রাম্য শক্কির দক্ষ ব্যবহারসহ অন্যান্য বিষয়েও গবেষণা চলছে।

২) (খ) পুরকৌশল বিভাগঃ বিভিন্ন পদার্থের ও কাঠামোর শক্তি, গুণাগুণ ও আচরণগত নানা প্রকার গবেষণা এই বিভাগে হয়ে থাকে। এই বিভাগের দক্ষ শিক্ষক মন্ডলী বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ (ক) দেশীয় মাল মসলা ও কলাকৌশল ব্যবহার করে সহজে ও সস্তায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, (খ) উপকূলীয় অঞ্চলের উপযোগী বিদ্যালয় বনাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য উঁচু জায়গার ডিজাইন। (গ) বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মাটির প্রকৌশলগত গুণাগুণ বিচার, (ঘ) গ্রামাঞ্চলে আদর্শ বাড়ীঘর তৈরীর সহজ ও সস্তা মাল মসলা ও পদ্ধতি উদ্ভাবন (ঙ) মহানগরী ঢাকার যানবাহন সমস্যার সমাধান, (চ) ডি এন ডি বাঁধের ফাটল ধরার কারণ ও তার সমাধান খুঁজে বের করা ইত্যাদি। এ ছাড়াও এ বিভাগ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তাদের ডিজাইন ও স্ট্রাকচারাল ফেইল সম্পর্কে কারিগরি পরামর্শ দিয়ে আসছে।

৩) (ক) পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগঃ এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনতম বিভাগ। অতি অল্প সময়ের মধ্যেও এ বিভাগ বেশ কয়েকটি কাজ হাতে নিয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের পূর্বশর্ত স্বরূপ আমাদের বিভিন্ন নদ-নদীর আচরণ ও পরিবর্তন সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও নদীতীরের ভাঙ্গন রোধ সম্পর্কে এ বিভাগ গবেষণা করে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে সেচ প্রকল্পের দক্ষতা বাগানোর ব্যাপারে এবং নলকূপের মধ্যকার দূরত্বের উৎকৃষ্ট পরিমাপ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকমণ্ডলী কিছুদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্তে পৌছবেন। এ ছাড়াও হাওর এলাকার উন্নয়ন, নব গঠিত চরকে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাসোপযোগী করার পদ্ধতি উদ্ভাবনের উপর কাজ হচ্ছে।

বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘন বসতি অঞ্চল অথচ এখানকার খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার অত্যন্ত কম৷ উপরন্তু দেশের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল প্রতি বৎসর বন্যা কবলিত হয় যার ফলে বিরাট খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি উন্নয়নমূলক গবেষণা এই সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। এ উদ্দেশ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি উন্নয়ন ইনস্টিটিউট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ কাজ ব্যাহত হতে চলেছে। অথচ আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন গবেষণা বাংলাদেশে হয়নি।

৪) তড়িৎ কৌশল বিভাগঃ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিবিধ গবেষণা এ বিভাগে করা হচ্ছে। এ সবের মধ্যে (ক) পাওয়ার সিসটেম স্ট্যাবিলিটি রিলাইবিলিটি এন্ড লোড ফ্লো স্ট্যাডি, (খ) বিদ্যুৎ বিবরণ লাইনে বজ্রপাতের প্রতিক্রিয়া, (গ) পাওয়ার সিসটেমের স্ট্যাবিলিটি নিশ্চিতকরণে আধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োগ। (ঘ) পায়ার স্ট্যাবিলিটির জন্য উন্নতমানের স্টাটিক এক্সুটর এর ডিজাইন ও প্রস্তুতি, (ঙ) পূর্ব ও পশ্চিম গ্রিডের সংযোগ সাধনে ডিসি টাই লাইনের ব্যবহার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া মাইক্রো তরঙ্গ ও যোগাযোগের ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকে যেমন উন্নততর এন্টেনা ডিজাইন, ফিল্টার ডিজাইন, নেট ওয়ার্ক সিনথেসিস ইত্যাদির ওপরও গবেষণা চলছে। বাংলা ভাষা যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার সম্পর্কেও বিশেষ গবেষণা চালানো হচ্ছে। সেমি কন্ডাকটরের গবেষণা কার্যক্রমের মধ্যে স্বল্প ব্যয়ে রেডিও সেট তৈরী এবং ট্রানসিসটর ও ডায়ভের প্রস্তুত প্রণালী উল্লেখযোগ্য।

৫) ধাতব কৌশল বিভাগঃ এই বিভাগ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। যেমনঃ
(ক) শিল্প কারখানায় লোহাসহ বিভিন্ন ধাতু গলানোর কাজে গ্যাস চুল্লীর ব্যবহার।
(খ) বাতিল করা স্টোরে ব্যাটারি থেকে সীসা পুনরুদ্ধার।
(গ) স্থানীয় কাঁচা মাল (সিলেটের মাটি)থেকে তাপ নিরোধক ইট তৈরী।
(ঘ) ছোট জমিতে পানি সেচের জন্য হস্তচালিত টিউবওয়েল উদ্ভাবন। এই টিউবওয়েল দ্বারা দেড় ঘন্টায় এক একর জমিতে পানি সেচ করা যাবে এবং তা ২৫০ টাকার মধ্যেই তৈরী করা সম্ভব।
(ঙ) লোহার সারফেস হার্ডেনিং – এর প্রচলিত পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, অপরিষ্কার ও ব্যয় সাপেক্ষ। তিতাস গ্যাসের সাহায্যে এই হার্ডেনিং স্বল্প সময় ও কম ব্যয়ে সম্পন্ন করার পদ্ধতি উদ্ভাবনে।

এ ছাড়া আরও যে সকল বিষয়ে গবেষণা চলছে তার মধ্যে –
(চ) কিউ পোল চুলায় কোক কয়লার ব্যবহার কমানোর জন্য তিতাস গ্যাসের ব্যবহার।
(ছ) ক্রুসিবল বিহীন চুল্লীর ডিজাইন ও গঠন বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য।

৬) নৌ যান, নৌ যন্ত্রকৌশল বিভাগঃ এ বিভাগ নব্য প্রতিষ্ঠিত বিভাগ। ইতিমধ্যেই এ বিভাগ বেশ কয়েকটি ডিজাউন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। এসব কৃতিত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ৩০০০ ডিউব্লিউটি সমুদ্রগামী কারগো জাহাজ, ৮০০ ডিউব্লিউটি অয়েল ট্যাংকার, ৬০ ফুট দীর্ঘ স্টার্ণ ট্রলার, ৯০ ফুট দীর্ঘ ট্যাগ বোট এবং নেভি এসকর্ট ভেসেল – এর প্রাথমিক ডিজাইন।

এ ছাড়া নৌ পরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দেশীয় নৌকায় যান্ত্রিকীকরণ, ফেরো-সিমেন্ট নৌকা নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত গতিতে চলছে।

৭) যন্ত্রকৌশল বিভাগঃ বিভাগীয় প্রধান আমাদের সঙ্গে আলোচনায় অস্বীকৃতি জানানোর প্রেক্ষিতে এ নিয়ে আলোচনা সম্ভব হলো না।

দেশের সার্বিক উন্নতির স্বার্থে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় আত্মনিয়োগের প্রবণতা স্বাধীনতা উত্তরকালে বেড়েছে। অধিক সংখ্যক স্নাতকোত্তর ছাত্র- ছাত্রী বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত গবেষণার মূল চাবিকাঠি উন্নত মানের কম্পিউটার সিস্টেম। লজ্জাজনক হলেও সত্য যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কম্পিউটার সেন্টার নেই যার ফলে গবেষণা কার্যক্রম বিশেষ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গবেষকরা অনেক হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের অভাবে গবেষণা চালানো অসম্ভব হয়ে দাড়াচ্ছে। এ ছাড়া গবেষকদের যথোপযুক্ত উৎসাহও প্রদান করা হচ্ছে না যার ফলে অনেকেই মাঝপথে গবেষণা থেকে সরে দাড়াচ্ছেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আশির্বাদ কাজে লাগিয়ে আমাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য দরকার ব্যাপক পড়াশোনা ও গবেষণা। কাজেই এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি অত্যন্ত মঙ্গলজনক হবে সন্দেহ নেই।

***

যেন আমার সব কাজের উৎস – প্রচন্ড শক্তি।

তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো সাহিত্যের ধারকর্জে চলচ্চিত্র তৈরী হয় কিন্তু চলচ্চিত্রের ঋণ দিয়ে সাহিত্য তৈরী হয় না? সাহিত্য এমন একটা ফুল যা শিল্প সংস্কৃতির সব পূজোতেই লাগে। কাজেই চলচ্চিত্র আমার প্রিয় পোশাক হতে পারে কিন্তু সাহিত্য আমার দুটি চোখের জ্যোতি, পরাণ পাখি।

আমজাদ জানালেন, সম্প্রতি তিনি আরো দুটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছেন। দু’ এক মাসের মধ্যেই তা শেষ করতে পারবেন। তা ছাড়া খুব শীঘ্রই তার একটি উপন্যাস (উঠোন), একটি ছোট গল্পের বই এবং একটি নাটকের সংকলন প্রকাশিত হবে।

হাসনাত আবদুল হাই সরকারী চাকরী গ্রহন করার পর লেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। বিচিত্রাই তাকে আবার ‘গল্প-উপন্যাস’ রচনায় প্ররোচিত করে। বিচিত্রায় তার একটি উপন্যাস এবং কয়েকটি ছোট গল্প প্রকাশিত হয়েছে। হাসনাত আবদুল হাই আগে ঢাকায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন আছেন চাঁটগায়। নতুন দায়িত্ব গ্রহনের সঙ্গে সঙ্গে তার কাজের পরিধিও অনেক বেড়ে গেছে। আবদুল হাইয়ের কাছেও আমরা একই প্রশ্ন রেখেছিলাম।

তিনি বললেন, ঢাকায় থাকাকালীন লেখার জন্য কিছু সময় পেতাম। কিন্তু এখন একদম সময় পাই না। ডেপুটি কমিশনার হওয়ার পর মাত্র একটি গল্প লিখতে পেরেছি, তাও ঢাকায় না এলে লেখা হতো না। ঢাকায় এসেছিলাম একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে। কনফারেন্সের পর যে সময় পেয়েছি তারই সদ্ব্যবহার করেছি। এর আগে যেসব লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলি বেশ আগে লিখেছিলাম।

আমাদের প্রশ্ন ছিল, চাকরী করতে গিয়ে লেখার যে ক্ষতি হচ্ছে, তা কম্পেনসেট করছেন কিভাবে?

উত্তরে তিনি জানালেন, এখন লেখার সময় কম পাই বটে কিন্তু লেখার খোরাক পাই অনেক। কারণ আমাকে এখন অনেক জায়গা ঘুরে বেড়াতে হয়। নতুন জীবন দেখার সুযোগ হচ্ছে, অভিজ্ঞতা বাড়ছে। যখনই লেখার কিছু পাই, তখনই তা নোট করে রাখি।

প্রশ্নঃ ব্রিটিশ আমলে আমরা দেখেছি জেলার সরকারী কর্মচারীরা গেজেটিয়ার রচনায় সাহায্য করছেন যা এখন আমাদের উপকারে আসছে। কিন্তু আপনাদের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ নেই কেন?

উত্তরঃ তাদের সময় ছিল প্রচুর। বিদেশ থেকে এসে এক জায়গায় আটকা পড়তো, ফলে তারা একটি বিষয়ের উপর কনসেনট্রেট করতে পারতো। তা ছাড়া বিদেশী হিসেবে তাদের কৌতূহল ছিল। আমরা ঠিক ততটা সময় পাই না। বা বিদেশীদের মত সেই কৌতুহলটাও জাগে না।

প্রশ্নঃ ভবিষ্যতে লেখার কোন নতুন পরিকল্পনা আছে?

উত্তরঃ এখন আমি উপকূলীয় দ্বীপগুলিকে পর্যবেক্ষণ করছি। শুধু কল্পনা এবং অনুভূতিমূলক লেখা কখনও স্থান পায় না। তথ্য এবং কল্পনার সমন্বয়ে লেখার চেষ্টা করবো। যেমন একটি ঘটনার কথা বলি – এক দ্বীপে একবার বিরাট এক মাছ ধরা পড়লো। চারদিকে হৈ-চৈ ব্যাপার। অজানা এই মাছটির সঙ্গে সমগ্র দ্বীপের অধিবাসীরা যুঝেছে, মাছটি ধরা পড়ার পর দেখা গেল সেটা তিমি মাছ, দ্বীপবাসীরা যা আগে কখনো দেখেনি। দেখা যাচ্ছে, শত্রু হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করলে দ্বীপের সবাই এক সঙ্গে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই যে সব নতুন উপাদান, এগুলি এখন সংগ্রহ করছি লেখার জন্যে। এখন বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেই লিখবো৷ আগে যে সব উপন্যাস লিখেছি, সেগুলি নাটালজিক, আমার মতে ওগুলির আর এখন কোন মূল্য নেই৷ আমাদের শেষ প্রশ্ন ছিল, আপনি লেখা এবং চাকরী – দুটোই চালাচ্ছেন, কিন্তু ফাঁকি দিচ্ছেন কাকে? লেখাকে না চাকরীকে?

উত্তরে মৃদু হেসে হাসনাত আবদুল হাই বললেন, ‘লেখাকেই ফাঁকি দিচ্ছি।’

দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ

সম্প্রতি রাজিয়া সুলতানা’ র ‘কথাশিল্পী নজরুল’ নামে একটি একাডেমিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মখদুমী এন্ড আহসানউল্লাহ লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত এই গ্রন্থের দাম বারো টাকা। নজরুলের গল্প- উপন্যাস নিয়ে আলোচনার স্বল্পতা লক্ষ্য ারেই লেখিকা এ গ্রন্থ রচনা করেছেন।

নজরুল ইসলামকে আমরা কবি হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত, তিনি যে ছটি গদ্য গ্রন্থের লেখক, এ তথ্য আমরা অনেকেই জানি না। কারণ – ‘বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তির দূর্ভাগ্য এই যে, অনেক সময়ই একদিকের খ্যাতির তলে তাহার অন্যদিকের কৃতিত্ব চাপা পড়িয়া যায়। ‘ অথচ গল্প লেখক নজরুল কবি নজরুলের অগ্রজ।

এ পর্যন্ত নজরুলের তিনটি গল্প গ্রন্থ ও তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। গল্প গ্রন্থ ও তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে৷ গল্প গ্রন্থ তিনটি হচ্ছে – ‘ব্যথার দান’ (১৯২২), ‘রিক্তের বেদন’ (১৯২৫), ‘শিউলিমালা’ (১৯৩১)। উপন্যাস ত্রয় হচ্ছে – বাঁধনহারা (১৯২৭), ‘মৃত্যুক্ষুধা’ (১৯৩০) এবং ‘কুহেলিকা’ (১৯৩১)।

নজরুলের তিনটি উপন্যাসই বিয়োগান্তক। প্রথম উপন্যাস বাঁধনহারা পত্রোপন্যাস। লেখিকার মতে – ‘বাঁধনহারা’ নজরুলের কবিতার মত সার্থকতায় উত্তীর্ণ হয়নি। এই উপন্যাসে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নজরুলের যে বিভিন্ন চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায় তা এক অর্থে তার কবি- জীবনের ভিত্তি – ভূমি বলা যেতে পারে (পৃষ্ঠা – ৩৪)। ঔপন্যাসিক নজরুল সম্পর্কে লেখিকা মন্তব্য করেছেন – “নজরুল যুগকে গ্রহণ করেছিলেন। মুসলমান বলে যুগের প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে অভিমান ভরে দূরে পড়ে থাকেননি – অতীতের প্রতি পিছুটান মুক্ত বর্তমানের প্রতি পূর্ণ আসক্তি – সমর্থিত নতুন সাহিত্য ধারার অনুবর্তনের সাধনাই অনুক্ষণ করে গেছেন।”( পৃঃ ১৫)

তবে গাল্পিক নজরুল সম্পর্কে লেখিকার মন্তব্য অতি সাধারণ – ‘কাব্যের মত গল্পের ক্ষেত্রেও নজরুল বাংলা সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য পথিকৃৎ – এ কথা গল্পের ইতিহাসে অনুক্ত থাকার নয়।’ (পৃঃ ৭৬)

পরিশিষ্ট উল্লেখযোগ্য সংযোজন – ১৯৬৯ থেকে ১৯৩৯ সন পর্যন্ত প্রকাশিত মুসলমান রচিত উপন্যাসের একটি তালিকা।

অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে বর্ণমিছিল প্রকাশ করেছে আজহার উদ্দীন খান রচিত – ‘বাংলা সাহিত্যে

[পৃষ্ঠা ছেড়া থাকায় শেষ কলামের প্রথম আট লাইন পাওয়া যায়নি]

কর্মকে লেখক ভাগ করেছেন – অনুবাদ ও ভ্রমণকাহিনী, সাহিত্য আলোচনা, লোক- সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব এবং পত্রিকা সম্পাদনা।

গ্রন্থাকারের মতে – ‘বাংলা সাহিত্যে ভাষাতত্ত্বের বর্ণনাত্মক আলোচনাই মুহম্মদ আবদুল হাই সাহেবের সবচেয়ে বড় দান। এই বর্ণনাত্মক ভঙ্গীতে বাংলা ভাষার মৌলিক ও মূল্যবান গবেষণা তাকে শ্রেষ্ঠ ভাষাতাত্ত্বিকের সম্মান দিয়েছে। আরও দুটি কারণে বাংলা সাহিত্যে তার স্থান উল্লেখ্য। এক, তার তথ্য ভিত্তিক আলোচনা।’… দুই, তার ‘সাহিত্য পত্রিকা’ সম্পাদনা।… ‘

তৃতীয় অধ্যায়ে হাই সাহেবের রচনার একটি বিবলিওগ্রাফী সংযোজিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো পরিশিষ্ট যেখানে তিনি – ‘মুহম্মদ আবদুল হাই সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকার লেখক সূচী, (১৩৬৪- ৭৪ বঙ্গাব্দ) – র সংকলন করেছেন। অধ্যাপক হাইয়ের অনুরাগীদের এ গ্রন্থ খুশী করবে।

***

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1976.07.16-bichitra.pdf” title=”1976.07.16 bichitra”]