নিক্সন বাস্তব ঘটনা স্বীকার করুন বা না করুন বাংলাদেশের অস্তিত্ব চিরকাল থাকবে
ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করুন বা না করুন বাংলাদেশ টিকে থাকতে সৃষ্টি হয়েছে এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব চিরকাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তার সরকারি বাসভবনে সফররত ৭০ সদস্য বিশিষ্ট মার্কিন জরুরি সাহায্য তহবিল প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি প্রতিনিধিদলের কাছে আরও বলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২০ বছর পরে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং গণচীনকে দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ স্বীকৃতি না দিলেও প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পিকিং যেতে হয়েছে। বিশ্ব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিশ্বের কোনো শক্তিই বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। দেশবাসীকে ভিক্ষুকে পরিণত করতে পারি না। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশবাসীকে আমি ভিক্ষুক বানাতে পারি না। তবে তাদের কাজ দিতে চাই। শেখ মুজিব আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিদেশ থেকে সাহায্য আসুক আর না আসুক আমি আপনাদের এই মর্মে নিশ্চিত আশ্বাস দিতে পারি যে, বাংলাদেশের সম্পদ যা কিছু আছে তার বলেই বাংলাদেশ টিকে থাকবে। প্রতিনিধিদলের জনৈক সদস্য বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন উপজাতির ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে তিনি বলেন, আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের নিগ্রোদের ক্ষেত্রে যা করেছেন আমরা তার কিছুই করবো না। জাতি ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তির বাংলাদেশে সমান অধিকার থাকবে বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নীতির কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। সুতরাং এখানে ধর্মীয় বা ঐতিহ্যগত কোনো ব্যবধান থাকার প্রশ্নই উঠে না। শেখ মুজিব মার্কিন প্রতিনিধি দলকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনারা সন্তুষ্ট হবেন যে, নিক্সন সরকার যে পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রেখেছে সেই পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে, তার সরকার মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যে গ্রাম পর্যায়ে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র কায়েম করেছে এবং নবজাত জাতির পুনর্গঠন পুননির্মাণ কাজ ২৪ ঘণ্টা ধরে চলছে। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করাতে হলে আরও ট্রাক, ফেরী, লঞ্চ ও স্টিমার, হেলিকপ্টার ও অন্যান্য যানবাহন অত্যাবশ্যকীয়। বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের দখল আমলে বৈদেশিক মুদ্রা, মজুদ সোনা, উৎকৃষ্টমানের ট্রাক ও বিমানসহ বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ নিয়ে গেছে। এবং যেসব জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন যে, যোগাযোগ ক্ষেত্রটি সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ৪টি হেলিকপ্টার দিয়েছে। বিমান থেকে খাদ্য নিক্ষেপের কাজে এগুলো ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশের জনগণকে ভারত সরকারের মুক্তহস্তে দানের কথাও তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করেন।
রেফারেন্স: ১০ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ