You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.03.06 | ১৯৭২ সালের ৬ মার্চ রাশিয়া সফর শেষে ঢাকা বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

১৯৭২ সালের ৬ মার্চ রাশিয়া সফর শেষে ঢাকা বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

বাংলাদেশের ভাই ও বোনেরা, ৫ দিনের সফরশেষে রাশিয়া থেকে আমি আমার জন্মভূমিতে ফিরে এসেছি। যে ভালবাসা রাশিয়ার সরকার এবং জনসাধারণের কাছ থেকে আমি এবং আমার সহকর্মীরা পেয়েছি, সে ভালবাসা শুধু আমাকে দেখানো হয় নাই, সাড়ে সাত কোটি বাংলার জনসাধারণকে দেখানো হয়েছে। আমার এ সফর অত্যন্ত সাফল্যমন্ডিত হয়েছে এবং দেশের মধ্যকার, আমরা বুঝতে পেরেছি এবং আলোচনা করেছি শুধু দুই দেশের মঙ্গলের জন্য নয় বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মঙ্গলের জন্য আমাদের বন্ধুত্ব অটুট এবং অক্ষয় হয়ে থাকবে। আমাদের দেশের জনসাধারণ স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম করেছে, যে রক্ত দিয়েছে, যে ত্যাগ স্বীকার করেছে সে খবর তারা জানে এবং প্রত্যেক রাশিয়ার জনগণ তা জানে। রাশিয়ার জনসাধারণ আমার বাংলার জনসাধারণকে সেজন্য শ্রদ্ধা করে। এজন্য শ্রদ্ধা করে যে রাশিয়াও রক্তের মাধ্যমে, সংগ্রামের মাধ্যমে, বিপ্লবের মাধ্যমে তার দেশকে মুক্ত করেছে। আমার সাড়ে সাত কোটি বাংলার মানুষ সংগ্রামের মাধ্যমে, সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে তার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে মুক্ত করেছে। সেজন্য তাদের সঙ্গে আমাদের অনেকটা নীতির মিল রয়েছে। আমাদের এই বন্ধুত্ব সোভিয়েত রাশিয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে এবং আমাদের এই ভাবে আলোচনা আরো ভবিষ্যতে চলতে থাকবে এবং দুনিয়ায় শান্তি রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সোভিয়েত রাশিয়া পাশাপাশি কাজ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি বাংলাদেশের জনসাধারণের পক্ষ থেকে সোভিয়েতের সরকার বিশেষ করে তাদের প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের প্রেসিডেন্ট এবং তাদের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল ব্রেজনেভকে এবং তাদের জনসাধারণকে সাড়ে সাতকোটি মানুষের পক্ষ থেকে, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে, জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা আমাদের এই দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বলে যে কথা তারা দিয়েছেন, সেজন্য তাদের নিকট আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আমি এও তাদের জানিয়েছি, যেদিন এই সংগ্রাম শুরু হয়, রাষ্ট্রদ্রোহী সংগ্রাম শুরু হয় সেদিন পাকিস্তানের বর্বরবাহিনী আমাদের দেশের জনসাধারণের ওপর অত্যাচার শুরু করে। আমার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি জনসাধারণকে নির্যাতন করে। যেদিন এক কোটি লোক বাংলা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল সেইদিন ভারতের জনসাধারণ মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সরকার এবং তিনি নিজে আমার এক কোটি লোককে স্থান দিয়েছিলেন এবং সোভিয়েত রাশিয়া আমাদের সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়েছিলেন, এজন্য আমরা সোভিয়েত রাশিয়ার জনসাধারণ ও সরকারের নিকট চিরকৃতজ্ঞ এবং আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট এবং অক্ষুন্ন থাকবে এবং বিশেষ করে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে ফিরে এসেছি, আমি আপনাদের পক্ষ থেকে তাদের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ করেছি, এদেশে আসার জন্য। প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনকে এবং কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি ব্রেজনেভকে এবং তাদের সভাপতি মডারিকে এবং তাদের বৈদেশিক মন্ত্রী-ফরেন মিনিষ্টার, বিশেষ করে আমার সোনার বাংলাকে সাহায্য করেছিল মিঃ গ্রোমিকোকেও দাওয়াত করেছি সরকার ও জনসাধারণের পক্ষ থেকে। তারা সুযোগ পেলেই বাংলাতে আসবে বলে ওয়াদা করেছেন। আমরা সেই প্রতিক্ষায় রইলাম। আসলে তাদের আমরা সাদর সম্বর্ধনা জানাব-জয় বাংলা। সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশ সম্পর্ক অটুট হউক। জয় বাংলা।

রেফারেন্স: ৬ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ