জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য দেশকে দ্রুত শিল্পায়িত করতে হবে– সৈয়দ নজরুল ইসলাম
ঢাকা। বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম আজ এখানে বলেন যে, কেবলমাত্র ব্যাপক শিল্পায়ন ও যথাযথভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের মাধ্যমেই বাংলাদেশের দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব। তিনি আজ সকালে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফিসে আয়োজিত এক শোক সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। এই অফিসের কর্মচারী শহীদ মোখলেছুর রহমানের স্মরণে এই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। মরহুম স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ হন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গত বলেন যে, দেশের সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে ভারী শিল্প স্থাপন, খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও বিদ্যুৎ শক্তির উন্নয়ন জরুরি প্রয়োজন। ভারি শিল্প স্থাপনের বিজয় উল্লেখ করে তিনি গুরুত্ব সহকারে বলেন, এই সমস্ত দ্রব্যাদির জন্যে আমরা যদি মূলতঃ বিদেশের ওপর নির্ভর করি তবে তা আমাদের নিজস্ব শিল্পের উন্নয়নের সহায়ক হবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলেন যে, সোভিয়েত জনগণকে প্রথম পনেরো বছর প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ভারি শিল্প স্থাপনের জন্যে ভোগ্য দ্রব্যাদির ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষেত্রে আমরাও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, জনগণকে ভোগ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার বন্ধ রেখে বর্তমান অসুবিধা মোকাবেলার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। সৈয়দ নজরুল প্রসঙ্গতঃ বলেন যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে সকলের বিশেষতঃ মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিরাট করণীয় কর্তব্য রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে দুঃখ দুর্দশা ভোগ করার মানসিকতা গড়ে তোলা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর সুষ্ঠু পরিকল্পনা নির্ভরশীল। কাজেই জাতীয় শিল্পায়নের লক্ষ্য হাসিলের জন্য এই স্থিতিশীলতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের জন্যে এ জাতীয় শিল্প কারখানা স্থাপন করা উচিত যা দেশে আরো শিল্পায়নের পক্ষে সহায়ক হবে। শিল্পমন্ত্রী বলেন যে, রাতারাতি অর্থনৈতিক যাদু দেখানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম যথাযথভাবে তৈল সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধানের জন্যে বাংলাদেশের তৈল কোম্পানিগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান।
রেফারেন্স: ৮ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ