You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাশিয়া আমাদের খাটি বন্ধু

সম্প্রতি মস্কোতে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত তার পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। এ অনুষ্ঠানে এ পি এন সংবাদদাতাদের সাথে তাঁর এক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সংবাদদাতা ইউ মারোলভ ওজি, সিদেন রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১ মার্চ থেকে রাশিয়া সফর এবং তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অনুরোধ করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব শামসুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, মস্কোর ক্রেমলিনে পরিচয়পত্র পেশ আমার জীবনের অত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। কারণ প্রথমতঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটি বৃহৎ দেশে আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছি, দ্বিতীয়তঃ ইতিহাসে এই প্রথম বাংলা ভাষায় আমার পরিচয়পত্র পেশ করতে পেরেছি। বিশেষতঃ সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ আমাকে যে সহৃদয় অভ্যর্থণা দিয়েছেন, তাতে এবং সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মি. নিকোলাই পোদগর্নি নিজেই আমার পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন দেখে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ এ বিশিষ্ট সোভিয়েত রাজনীতিবিদকে তাদের প্রকৃত বন্ধু বলেই জানেন। কারণ, সোভিয়েত সরকার ও জনগণের পক্ষে তিনিই প্রথম বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পরিপূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে যে আলোচনা হয়, তাতে আমাদেরদু’দেশের সহযোগিতা সম্পর্কে বহু প্রশ্ন আলোচিত হয় এবং সোভিয়েত সরকার ও জনগণকে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাবার সুযোগ ঘটে। বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে সোভিয়েত অবদানকে তিনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- এ জাতীয় এক প্রশ্নোত্তরে জনাব রহমান বলেন, আমি প্রথমেই যে বিষয়টাতে গুরুত্ব দিতে চাই, তা হচ্ছে, আমাদের জনগণের দুঃসময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের দৃঢ় মনোভাব। সেটা বিস্ময়কর বা অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ আমরা জানি যে, লেনিনবাদী জাতীয় নীতি আদর্শে পরিচালিত সোভিয়েত ইউনিয়ন সব সময়েই নিপীড়িত মানুষকে তাদের মুক্তি ও স্বাধিকারের ন্যায্য সংগ্রামে সমর্থন করে। আমাদের ইতিহাসের সংকটময় মুহূর্তে সোভিয়েত সরকার যে অবিচল পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা সোভিয়েত জনগণের আন্তর্জাতিকতাবাদেরই পরিচায়ক। আমাদের মুক্তি সংগ্রামকালে তাদের সহায়তা এই আন্তর্জাতিকতাবাদেরই পরিচায়ক। আমাদের মুক্তি সংগ্রামকালে এই আন্তর্জাতিকতাবাদ আমাদেরকে অমেয় উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেয়। শেখ মুজিবুর রহমানের সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর সম্পর্কে আপনি কিছু বলতে পারেন? এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরই হবে তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক ঘটনা এবং এতে করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহানুভূতির সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, এর সঙ্গে আমি বড়োজোর এই কথা যোগ করতে পারি যে, উপমহাদেশের বাইরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এটাই হবে প্রথম সরকারি সফর এবং সে সফরও সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো এমন একটি মহান দেশে, যে দেশ আমাদের দেশের একটি সত্যিকারের বন্ধু। জনাব রহমান আরও বলেন, মস্কোতে এসে আমি অভিভূত হয়ে পড়েছি। জীবন ও কর্মোন্মাদনাময় এটি একটি আধুনিক শহর। এখানকার নাগরিকদের আতিথেয়তা আমার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। যে একটি মাত্র অসুবিধায় আমি পড়েছি, তা হচ্ছে ভাষা। কিন্তু সে বাধাও সোভিয়েত জনগণের হৃদয়ের উত্তাপ অনুভব করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি আমাকে।

রেফারেন্স: ৫ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!