রণাঙ্গণ
(রণাঙ্গন প্রতিনিধি) ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বাড়ছেই : ফেনীতে পঞ্চাশ জন পাক সেনা নিহত ?
টাঙ্গাইল এখন মুক্তিবাহিনীর দখলে এ সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ তৎপরতা অব্যাহত গতিতেই চলেছে। গােটা বাংলাদেশের বিভিন্ন খণ্ডে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার এবং সাফল্য লাভের অনেক খবর এসে পৌছাচ্ছে। পাক সেনাদের হতাহতের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি আহত পাক সেনাদের চিকিৎসা চালাতে গিয়েও পাকিস্তানী শােষকগােষ্ঠির পােষা সামরিক কর্তৃপক্ষ হিমসিম খাচ্ছে। ঢাকা সেক্টরে অগ্রগতি ঢাকা শহরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার ফলে সেখানে পাক-সেনারা একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় গত সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী কয়েকদফা সাফল্যলাভ করেছে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার অফিস ভ্যানটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ভ্যানটির ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। এখানে কিছু সামরিক কর্তৃপক্ষের দালাল কর্মচারীও আহত হয়েছে। ওদিকে নারায়ণগঞ্জেও মুক্তিবাহিনী কয়েকজন দালালকে খতম করেছে। এছাড়া ঢাকার একটা বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারও গেরিলারা বােমার সাহায্যে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ওরা ওদের লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে ননায়াখালী জেলার ফেনী লাকসাম রােডের পাশ্ববর্তী এলাকায় এক প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর পাক সেনারা পিছু হটে পালিয়ে গেছে। এখানে বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে এসেছে এবং তিনদিনের এই সংঘর্ষে পঞ্চাশেরও বেশী পাক সেনা নিহত হয়েছে। নিহতদের কিছু লাশ ফেলেই পাক সেনারা পালিয়ে গেছে। মুক্ত এলাকা প্রসারিত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে রামগড় এলাকাও মুক্তিবাহিনী সাফল্য লাভ করেছে। এখানেও পাক সেনারা। পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়েছে এবং বহু পাক সেনা নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লা জেলায়ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের পিছু হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং বহু এলাকা শত্রু কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। খুলনা, যশােরে মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা একই গতিতে চলেছে। একটি রাজাকার ঘাটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী পশ্চাশজন রাজাকারকে নিহত করেছে। অন্য আর একটি দীর্ঘ সংঘর্ষে দু’শােরও বেশী পাক সেনা নিহত হয়েছে। এই সংঘর্ষে পাক সেনারা ২৫ পাউন্ডের কামান পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর অঞ্চলের ফুলছড়ী ঘাট থেকে বগুড়া পৰ্যন্ত এলাকা শত্রু কবল মুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। টাঙ্গাইলে বিরাট জয় টাঙ্গাইল জেলায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে দাঁড়াতে না পেরে পাক সেনারা পালিয়ে গেছে। প্রায় সমগ্র টাঙ্গাইল জেলা এখন শত্রু কবল মুক্ত। খুলনার বেতগাছিতে আমাদের গেরিলারা একটি পাক সেনা দলের ওপর আক্রমণ চালিয়ে কমপক্ষে ৫ জনকে নিহত করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের বাহিনী স্বরূপগঞ্জ এলাকা থেকে পাক সেনাদেরকে হটিয়ে দিয়ে এই এলাকাও মুক্ত করেছে। গােপালগঞ্জ মহকুমার ফাকুরা এলাকায় একটি পাক ঘাটির ওপর আমাদের বাহিনী আক্রমণ চালায়। এই অভিযানে শতাধিক পাক সেনা এবং রাজাকার নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশবাংলা ॥ ১: ৪
১৮ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯