You dont have javascript enabled! Please enable it!

টাঙ্গাইল জেলাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল কার্যত মুক্ত ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে হতাশা

(রণাঙ্গন প্রতিনিধি) বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আজ কার্যতঃ শত্রুমুক্ত। মুক্তিবাহিনীর অসম সাহসিক দুর্বার অভিযানে শত্রুবাহিনী ক্রমেই পিছু হটিতেছে, ক্রমেই ক্যান্টনমেন্ট সমূহের মধ্যে বা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কেন্দ্রীভূত হইয়া পড়িতেছে। কিন্তু ঢাকা সহ দেশের ক্যান্টনমেন্ট এলাকাগুলিও আজ মুক্তিফৌজের অব্যর্থ লক্ষ্যের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে। ফলে, পাক সেনাদের মধ্যে হতাশা চরম আকার ধারণ করিয়াছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেল যে, শত্রু বাহিনী টাঙ্গাইল জেলার সর্বত্র হইতে সরিয়া পড়িতে বাধ্য। হইয়াছে। এই জেলার সহিত ঢাকা ও ময়মনসিংহের স্থল পথে সকল যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন। মুক্তিফৌজই কার্যতঃ এই গােটা জেলা নিয়ন্ত্রণ করিতেছে।  খােদ ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ থানাও এখন মুক্ত বলিয়া বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর হইতে ঘােষণা করা হইয়াছে। ইহা ছাড়া, যশাের জেলায় চৌগাছি এলাকায়ও এই সপ্তাহে শত্রুমুক্ত হইয়াছে। শত্রু সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণের ঠেলায় এখানকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল হইতে উধাও হইয়া গিয়াছে।  দিনাজপুর জেলার উত্তরে তেতুলিয়া থানা ও পছাগড় থানার অংশবিশেষ, পশ্চিমে হরিপুর রাণী। সনকাইল ও পীরগঞ্জ থানাও কাৰ্যতঃ মুক্ত। পীরগঞ্জ থানার জাবরহাট হইতে সীমান্ত বরাবর সুবিস্তীর্ণ এলাকায় শত্রুদের কোন চিহ্ন আর নাই । রংপুর জেলার ফুলবাড়ী থানা ও তৎসংশ্লিষ্ট বিরাট এলাকাও দীর্ঘ দিন হইতে শত্রুমুক্ত। এই এলাকা এখন মুক্তিবাহিনীর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। ইহা ছাড়া, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার একাধিক হিট মহল। আগাগােড়াই শত্রুমুক্ত। এই গুলিতে মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত। কুমিল্লা, সিলেট ও ময়মনসিংহ সেকটরের অবস্থাও দিনে দিনে উন্নত হইতেছে। মুক্তিবাহিনী মাঝে মাঝেই এই এলাকায় পাক বাহিনী শক্তিশালী ক্যান্টনমেন্ট ময়নামতিকে কাৰ্যতঃ অবরােধ করিয়া রাখে। কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা সহ এক বিরাট এলাকাও মুক্তিফৌজে প্রভাবধীন। এক কথায় বলিতে গেলে এক্ষণে পাক বাহিনীর পিছু হটার পর্যায় শুরু হইয়া গিয়াছে।

এদিকে অধিকৃত অঞ্চলে জল ও স্থল উভয় ক্ষেত্রেই মুক্তিবাহিনী সাঁড়াশি আক্রমণ চালাইয়া যাইতেছে। প্রতিদিন প্রতি রণাঙ্গনে গাড়ী ভর্তি, নৌকা ভর্তি পাক সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র ডুবাইয়া দেওয়া ও নিশ্চিহ্ন করার খবর আসিতেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশােহর প্রভৃতির ক্যান্টনমেন্ট এলাকাগুলিতেও চলিতেছে দুর্ধর্ষ অভিযান। উপরােক্ত অবস্থায় পাক হানাদার বাহিনীর মনােবল ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। তাহারা এখন গ্রামাঞ্চলে যাইতে ভয় পায়। শহরাঞ্চলেও নিরাপদ মনে করিতেছে না। ফলে, ক্যান্টনমেন্টে কেন্দ্রীভূত হইয়া বিপুল শক্তি সম্ভারসহ মাঝে মাঝে এলাকা বিশেষে আক্রমণ ছাড়া আর অন্য কোন পদ্ধতির কথা তাহারা ভাবিতেই পারিতেছে না। কিন্তু ইহাও আবার যােগাযােগ ব্যবস্থা ব্যহত হইয়া পড়ার ফলে সম্ভব হইতেছে না। তাই, পাক হানাদারেরা এখন নিরুপায় হইয়া স্থানে স্থানে বিমান হামলা চালাইতেছে। কিন্তু ইত্যবসরে বাংলাদেশ সরকারের বিমান বাহিনী গড়িয়া উঠার সংবাদে তাহারা এই কাজেও তেমন ভরসা পাইতেছে না। এমতাবস্থায় শক্র এক্ষণে তাহার চরম দুর্বল অবস্থায় বিরাজ করিতেছে বলিয়া সামরিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত। তাহারা মনে করেন যে, এই মুহূর্তেই শত্রুকে আঘাতে আঘাতে পর্যুদস্ত করিতে হইবে এবং এইভাবে দেখা যাইবে যে, অল্প দিনের মধ্যেই শত্রু ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে।।

নতুন বাংলা ১: ১৪

১৮ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!