You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় পর্যায় বাংলা দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে মুক্তি বাহিনী বদ্ধ পরিকর

জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে মুক্তিযুদ্ধ পাক চমুদের মনে নৈরাশ্য। রাজশাহী জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা মুক্ত পিকিং ফেরৎ ভুট্টোর খালি হাত

(রাজনৈতিক ভাষ্যকার)। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ তৃতীয় পর্যায়ে উন্নীত। গত ছমাস যাবত মুক্তি বাহিনী তাদের গেরিলা আক্রমণের পদ্ধতিতে বর্বর পাক সেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ও সরবরাহ লাইন বিপর্যস্ত করেছে। যতদিন যাচ্ছে ততই তারা বাধ্য হচ্ছে ক্যান্টমেন্টগুলােতে সীমাবদ্ধ হতে। তারা আজ যথেচ্ছ ভাবে চলা ফেরা করতে সশংকিত। সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তাদের কাছে রসদ ও গােলাবারুদ পৌছানাে এক বিরাট সমস্যা। হয়ে দেখা দিয়েছে। রেলপথ সড়ক যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন তার জন্য তারা জল পথ আর বিমান পথে  যােগাযোেগ রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী তাদের সে প্রচেষ্টা নস্যাৎ করছে নিজস্ব নৌবাহিনী। আর বিমান বাহিনী দ্বারা।  সম্প্রতি খবরে প্রকাশ মুক্তি বাহিনী সংগ্রামের তৃতীয় পর্যায় তথা সম্মুখ সমরে অগ্রসরমান। বীর সেনানী। পাক দস্যুদের মরণ আঘাত হানতে বিভিন্ন সেকটরে তৎপর। মুক্তিবাহিনী তাদের সংগ্রাম তৃতীয় পর্যায়ে উন্নতী করতেই তাদের পাল্টা মারে খান সেনারা লেজ গুটিয়ে রসদপত্র অস্ত্রসস্ত্র ফেলে রেখে পালাতে শুরু করেছে। রাজশাহী জেলার নওয়াব গঞ্জ শহর, চারঘাট, পবা, মােহনপুর প্রভৃতি থানার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল মুক্তি বাহিনী মুক্ত করেছে। মুক্তি বাহিনী তাদের সংগ্রাম দিনাজপুরের সুইহারী পর্যন্ত ও সম্প্রসারীত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীন পতাকা উড্ডীন করেছে গ্রামে গঞ্জে। জনসাধারণ বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাজে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছে। মুক্তি বাহিনীর এই সম্মুখ সমরের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে গেরিলা যুদ্ধ সমপ্রসারিত হয়েছে পাক সেনাদের মূল ঘাটি ঢাকা শহরে।

সম্প্রতি ঢাকা শহরের রাজারবাগ পুলিশকেন্দ্রে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। পরিনামে খান। সেনারা বহু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পশ্চাদ পসরণ করেছে। প্রচণ্ড কম্যান্ড তৎপরতায় আজ ঢাকা শহরেও খানসেনারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন। ব্রিগেডিয়ার শাম্মীর উন্মাদ আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণ নিঃসন্দেহে পাক সেনাদের মনােবল কোন স্তরে নেমে এসেছে তা সুস্পষ্ট। ফ্যাসিষ্ট সামরিক জান্তা ভুট্টো মিঞার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দলকে পাঠিয়েছিল চীনে। বর্বর খান। সেনাদের মনােবল ফিরিয়ে আনতে প্রয়ােজন চীনের এক সুস্পষ্ট আশ্বাস। কিন্তু সামরীক জ্যান্তার সে চাল ব্যর্থ হয়েছে বিদেশী পত্রপত্রিকা ও বেতার এই সফর সম্পর্কে মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছে যে, পিকিং এর নেতারা দক্ষিণ পন্থি ফিল্ড মার্সেলকে মদত দেওয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই অস্পষ্ট হলেও অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। বিবিসি এক সংবাদে বলেছে যে চীনা যুবকরা পাক প্রতিনিধি দলের নেতা ভুট্টো মিঞার বিরুদ্ধে পিকিংয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তারা জানতে চেয়েছে পাক সরকার বাংলার জনগণকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত করে রেখেছেন? এ কথা সুস্পষ্ট যে, ভূট্টো মিঞা খালিহাতে পিকিং হতে বিষন্ন বদনে হুজুরে আলায় ইয়াহিয়ার দরবারে ফেরৎ গেছে। একদিকে কুটনৈতিক পরাজয় অপরদিকে মুক্তি সেনার প্রচণ্ড মারে পাক সামরীক জ্যান্তা দিশেহারা।

বাংলার কথা । ১৫।

১৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!