যশাের রংপুর দিনাজপুর, কুষ্টিয়া জেলায় মুক্তিবাহিনীর অভিযানে একজন মেজরসহ বহু পাক সেনা খতম
(উত্তরাঞ্চলীয় রণাঙ্গন প্রতিনিধি) দেশের এই অংশে মুক্তিবাহিনীর সামরিক অভিযান আরও তীব্রতর হয়েছে এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ আশংকায় পাক সেনারা ভীতি অঞ্চল দিন যাপন করছে। এখানকার বিভিন্ন খণ্ড যুদ্ধে বহু পাকসেনা। নিহত হয়েছে। নিহত পাক সেনাদের মধ্যে একজন মেজরও রয়েছে। গত ৪ঠা নভেম্বর পাক বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা দিনাজপুর জেলার সীমান্ত ফাঁড়ি মােহনপুর মুক্ত করেছে। সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে যে, এই সংঘর্ষে এগারজন পাক সেনা খতম হয়েছে এবং একজনকে বন্দী করা হয়েছে। গত ৫ই নভেম্বর পীরগঞ্জ থানায় অন্তর্গত চন্ডীপুর গ্রামে আমাদের গেরিলাদের আক্রমণে দুজন রাজাকার নিহত হয়েছে এবং ন’জনকে বন্দী করা হয়েছে। | গত ৫ই থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত রংপুর-দিনাজপুর জেলায় মুক্তিযােদ্ধারা একজন মেজরসহ বেশ কিছু সংখ্যক খান সেনাকে খতম করেছে এবং একটি পাকসেনাবাহী বিশেষ সামরিক ট্রেণ উড়িয়ে দিয়েছে। ৭ই নভেম্বরের রাতে অমরখানায় যখন পাক সেনারা একটি পরিখা খনন করছিল সে সময়ে অতর্কিতে আমাদের গেরিলারা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাঁচজন পাক সেনাকে খতম করেছে। মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে অবশিষ্ট পাক সেনারা নিহত সঙ্গীদের ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ৫ই নভেম্বরে গেরিলারা জয়মণিরহাট ডাকবাংলাে আক্রমণ করে পাক বাহিনীর মেজর আবুল্লাকে খতম করে।
৬ই নভেম্বর বলরপাড়ার কাছে গেরিলাদের পোঁতা মাইন বিস্ফোরণে একটি বিশেষ সামরিক ট্রেণ উড়ে যায়। এর ফলে গাড়ীর ইঞ্চিন ও ৫টি বগী লাইন চ্যুত হয়। এর পর মুক্তিযােদ্ধাদের গুলিতে প্রায় ৫০ জন পাক সেনা নিহত হয়। ঐ দিনই মুক্তিযােদ্ধারা দুটি ফাড়ি আক্রমণ করে দখল করে। এখানে একজন পাক সেনা ও চারজন রাজাকার নিহত হয়। সেখান থেকে তিনটি রাইফেল, একটি মেসিনগান ও কিছু অস্ত্রসস্ত্র মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। মাথাভাঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায়, এবং বামদিহি ও গাংনী থানার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়। ভৈরব নদীর পশ্চিম তীরে আরেকটি অভিযান চালিয়ে তারা নাতুদা, রতনপরি, মানিকনগর এবং দর্শনা-মেহেরপুর সড়কের যােলমাইলব্যাপী এলাকা শত্রুমুক্ত করে। মুক্তিবাহিনী যশাের জেলার মহেশছুর ও কুশডাঙ্গা দখল করে নিয়েছে। গত ৫ই ও ৮ই নভেম্বর যশাের ও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর সংঘর্ষে মােট ২৮ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে। বিলম্বে পাওয়া আর এক খবরে জানা গেছে যে, খুলনা জেলার সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গায় ৩ দিন ব্যাপী সংঘর্ষে তিনশাে পাক সেনা মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। এখানে মুক্তিবাহিনী তিন ইঞ্চি মর্টার এবং অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে এক ব্যাটেলিয়ন হানাদার পাক সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলাে। যশােরের পাটকেল ডাঙ্গার কাছে আমাদের গেরিলারা একদল পাকসেনার ওপর আক্রমণ চালিয়ে ১৫ জনকে নিহত করে। অন্যান্যরা পালিয়ে যায় । এরপরে চিংড়া বাজারে রাজাকার বাহিনীর একটি ঘাটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৫২ জন রাজাকারকে খতম করেছে।
জাতীয় বাংলাদেশ ১:১।
১৫ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯