You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিবাহিনী শত্রুসেনা নিশ্চিহ্ন করে চলেছে

নােয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং টাঙ্গাইলে মুক্তিবাহিনীর সাফল্য বিস্তীর্ণ এলাকা শক্র কবল মুক্ত গত আটমাসের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধারা মাতৃভূমি থেকে শত্রুসেনা নিশ্চিহ্ন করার অভিযানে এক অভুতপূর্ব সাফল্যের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার তীরে তীরে ছায়া ঘেরা গ্রামে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা আজ বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে কত দুর্জয় শপথে তাদের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে শত্রুসেনা নিধনের এই সংগ্রাম এক বলিষ্ঠ রূপ লাভ করেছে। আজকের মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধারা সেনাকে যে কোন আঘাত হানতে সক্ষম। শুরুতে গ্রামাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর যে তৎপরতা সীমিত ছিলাে তা শহরেও শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকের দেশের গ্রামে গঞ্জে-নগরে-বন্দরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা শত্রুসেনাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার দৃপ্ত শপথে এগিয়ে চলেছে। যুদ্ধের এই নতুন পর্যায়ে সরকারী হিসেবে দেখা যায় গত মাসে মুক্তিবাহিনী বিরাট সাফল্য লাভ করেছে। গােটা দেশের সর্বত্র গত মাসেই ৫ হাজারেরও বেশী শত্রুসেনা এবং রাজাকার নিহত হয়েছে। | এই সময়ে বহু মুসলীম লীগ এবং জামাত ইসলামীর পশ্চিম পাকিস্তানী দালালও আমাদের গেরিলাদের হাতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে গত মাসে প্রায় পাঁচখানা পাকসেনাবাহী ট্রেন মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ধ্বংশ। অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও চল্লিশেরও অধিক অন্যান্য যানবাহনও মুক্তিবাহিনীর হাতে ধ্বংশ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে কয়েকখানি দেশী বিদেশী জাহাজ। এই সাফল্য মুক্তিবাহিনীকে শত্রুসেনা নিধন অভিযানে নতুন ভাবে অনুপ্রাণিত করছে। গত কয়েকদিনে মুক্তিবাহিনী বগুড়া এবং ফুলছড়ীঘাটের মধ্যে একটি পাক সেনাবাহী ট্রেন উড়িয়ে দিয়ে পঞ্চাশ জনেরও বেশী পাক সেনাকে নিহত করেছে। নােয়াখালীর ফেনীতে তিন দিনের সংঘর্ষে   পয়তাল্লিশ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পয়ত্রিশজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। পাকসেনারা নিহত দশজনের মৃতদেহ নিয়ে এই এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে।  টাঙ্গাইল জেলায় মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাক-সেনারা ঘাটি ফেলে পশ্চাদপসরণ করেছে। এখানে পাক সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবার খবর পাওয়া গেছে। এখন প্রায় সমগ্র টাঙ্গাইল জেলাই শক্র কবল মুক্ত হয়েছে। রংপুরের ডিমলায় মুক্তিবাহিনীর হাতে কম পক্ষে কুড়িজন রাজাকার এবং পাকসেনা নিহত হয়েছে। আমাদের গেরিলারা সিলেটে একটি পাম্প হাউস ধ্বংশ করে দিয়েছে। বাগেশ্বরীতে ২০ জন পাক-সেনা নিহত হয়েছে। কাশের হাটেও ১৪ জন পাক সেনা নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।  নােয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া এবং পরশুরাম থানার ফেণী লাকসাম রেলপথের উত্তর পাশে এবং ফেনী কুমিল্লা সড়কের পূর্ব দিকের মােট প্রায় ছত্রিশ বর্গ মাইল এলাকা শত্রু কবল মুক্ত হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম থানার সাতটি ইউনিয়নও এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এই সমস্ত মুক্ত এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে বলে জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব। খাজা আহমদ আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের রামগড় এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা শত্রু কবল মুক্ত হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর বর্তমান শত্রু-নিধন অভিযানের গতি অব্যাহত থাকলে দেশকে শত্রুসেনা মুক্ত আর দীর্ঘদিন সময় লাগবেনা বলে আশা করা যায়।

জাতীয় বাংলাদেশ ১:১।

১৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!