You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.04.10 | কেন্দ্রীয় রাজধানী পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করুন-ছয়-দফা প্রত্যাহার করিব পাবনার বিরাট জনসমাবেশে শেখ মুজিবের ঘােষণা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

কেন্দ্রীয় রাজধানী পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করুন-ছয়-দফা প্রত্যাহার করিব
পাবনার বিরাট জনসমাবেশে শেখ মুজিবের ঘােষণা

(নিজস্ব প্রতিনিধি প্রেরিত)
পাবনা, ৮ই এপ্রিল। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান গতকাল এখানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে ঘােষণা করেন ও প্রেসিডেন্ট আইয়ুব যদি পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় রাজধানী স্থানান্তরে রাজী হন তবে তিনিও তাঁহার দল ছয়-দফা প্রত্যাহার করিতে প্রস্তুত। ছয়-দফার প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানে গণভােট অনুষ্ঠানের জন্য শেখ সাহেব সরকার পক্ষের প্রতি চ্যালেঞ্জ দেন এবং ঘােষণা করেন যে, উক্ত গণভােটে ৬-দফা বিরােধীরা শতকরা ৩০ ভাগ ভােট পাইলে তিনি বাকী জীবনের জন্য রাজনীতি হইতে অবসরগ্রহণ করিবেন। স্থানীয় টাউন হল ময়দানে সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব আমজাদ হােসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, ছয়-দফা কর্মসূচী শুধূমাত্র পূর্ব পাকিস্তান নহে, পশ্চিম পাকিস্তানবাসীর জন্যও ‘ম্যাগনাকার্টা এবং পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার ইহাই সুনিশ্চিত পন্থা বলিয়া তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। এই জনসভায় শ্রোতবর্গের। মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হয় তাহাকে রীতিমত আশাতীত বলা চলে। পাবনায় যে এত বিরাট জনসভা হইবে, সভার উদ্যোক্তারাও তাহা অনুমান করিতে পারেন নাই। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান একে একে তাঁহার দলের ছয়-দফার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করিতে থাকিলে মুহুর্মুহু জিন্দাবাদ ধ্বনির মধ্যে জনতা তৎপ্রতি অভিনন্দন জানায় এবং সর্বশেষে হাত তুলিয়া ছয়-দফা অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করিয়া যাওয়ার সম্মতি জ্ঞাপন করেন। তুমুল করতালির মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি জনগণকে আজও আছে এবং সর্বকালে থাকিবে। অতএব, দেশবাসীর ছয়-দফা দাবীও ছিনাইয়া লওয়া অধিকার আদায় করিতে হইলে এই দুটি অধিকারের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিবার জন্যই আজ ঘরে ঘরে প্রস্তত হইতে হইবে।”
তিনি বলেনঃ স্মরণ রাখিবেন, এবার আমাদের সম্মুখে একটিই পথ ও হয় জয়, নয় ক্ষয়।
শেখ মুজিবের উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম পর্যায়ে আজ স্থানীয় টাউন হল ময়দানে আয়ােজিত জনসভাটি আশাতীত সাফল্যের পরিচয়দান করে। শহর ও শহরের বাহিরের দূরবর্তী এলাকা হইতে আগত বিপুল জনতা গভীর আগ্রহ ও মনােযােগসহকারে বক্তৃতা শ্রবণ করেন। শেখ মুজিব প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় ৬-দফার বিভিন্ন দিক পর্যালােচনা করেন। বিগত ১৭ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধে। জাতি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছে, শেখ মুজিব উহাও বিশদভাবে আলােচনা। করেন। জাতীয় জীবনের সেই দুর্যোগ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট কেন পূর্ব পাকিস্তান। সফরে আসেন নাই বা আসিতে পারেন নাই, সেনাবাহিনী প্রধান কেন আসিতে পারেন নাই, দুনিয়ার অন্যান্য অংশের সহিত ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তানের কোন যােগাযােগ কেন ছিল না—ইত্যাদি প্রশ্নের অবতারণা করিয়া শেখ মুজিব জনসাধারণকে এগুলি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিচার-বিবেচনা করিয়া দেখিবার আহ্বান জানান। শেখ সাহেব তাঁহার বক্তৃতায় লেভী প্রথা, টেণ্ডুপাতা অর্ডিন্যান্স, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রভৃতির তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি বলেন যে, সরকার জাতীয় সম্পদকে তাঁহাদের বিলাস-ব্যাসন চরিতার্থ করার জন্য অপচয় করিতেছেন আর অন্যদিকে জনগণ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাইতেছে। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, স্থানীয় কনভেনশন লীগ ও প্রগতির দাবীদার অপর একটি রাজনৈতিক দল যৌথভাবে ৬-দফা বিরােধী প্রচারপত্র ও প্রাচীরপত্র প্রকাশ করেন। তাঁহারা ৬-দফাকে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলিয়া অভিহিত করেন এবং বলেন যে, ইহা একটি মার্কিন ডলারের দ্বারা অনুপ্রাণিত কর্মসূচী।
উপরােক্ত অভিযােগের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন যে, পাবনার জনসভার এই বিপুল জনসমাবেশই প্রতিক্রিয়াশীলদের অভিযােগের সঠিক জবাব দিয়াছে। তথাকথিত প্রগতির ধারকদের তিনি কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করিয়া দেন। তিনি বলেন যে, তাঁহারা যদি সত্য সত্যই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে চাহেন তাহা হইলে তাহাদের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করিতে হইবে। কারণ, এই সরকারই সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যথায় সাম্রাজ্যবাদবিরােধী শ্লোগানের ভাঁওতাবাজী হইতে বিরত থাকার জন্য তিনি এই প্রগতিশীলদের প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ এপ্রিল ১৯৬৬