You dont have javascript enabled! Please enable it! বিচারপতি, রাষ্ট্রপতি ও বুদ্ধিজীবী আবু সাঈদ চৌধুরী - সংগ্রামের নোটবুক

আবু সাঈদ চৌধুরী, বিচারপতি (১৯২১-১৯৮৭)

মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে আবু সাঈদ চৌধুরী সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি একাধারে ছিলেন বিচারপতি, রাষ্ট্রপতি ও বুদ্ধিজীবী। জন্মগ্রহন করেন টাঙ্গাইলের নাগবাড়ি গ্রামে। বাবা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের স্পিকার আব্দুল হামিদ চৌধুরী। পড়াশুনা করেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৪০ সালে বিএ পাশ করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ ও আইন পাশ করেন। পরে লন্ডনের লিঙ্গকনস ইন থেকে বার-এট ল ডিগ্রী লাভ করেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, একই সঙ্গে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৪৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের ব্রিটিশ শাখার সভাপতি হন।
১৯৪৭ সালে কোলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর কলকাতা থেকে ঢাকা হাইকোর্টে যোগদান করেন, সেইসময় পুর্ব পাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত, ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি, শাসনতন্ত্র কমিশনের সদস্য কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে যোগ দেবার জন্য জেনেভায় যান। সেসময় পূর্ববাংলায় অসহযোগ আন্দোলনে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ছাত্র-জনতা নিহত হয়। এরই প্রতিবাদে তিনি উপাচার্যের দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতির জন্য জেনেভা থেকে পাকিস্তান সরকারের কাছে পদত্যাগপত্র প্রেরণ করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনীর গণহত্যার সংবাদ শুনে জেনেভা থেকে লন্ডনে আসেন এবং যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ২৩ এপ্রিল ১৯৭১ প্রবাসে মুজিবনগর সরকারের বিশেষ দূত নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধিরূপে লন্ডনে দপ্তর স্থাপন করেন। পৃথিবীর দেশে দেশে ছুটে বেড়িয়েছেন, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর অত্যাচার, গণহত্যা

১১৫

ও ধ্বংসযজ্ঞের বিবিরণ তুলে ধরেছেন, স্মপন্ন করেছেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। শত্রুরা তাঁর জীবনের প্রতি হুমকি দিয়েছেন- তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সর্বক্ষণ তাঁকে নজরে রেখেছে। কিন্তু এই অবচলিত শান্ত ও সাহসী মানুষটির ছিল একটি কথা ‘লন্ডনের রাস্তায় আমার শবদেহ পড়ে থাকবে তবু পাকিস্তানের সাথে আপস করে দেশে ফিরব না’।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। একই বছর ডিসেম্বর মাসে তিনি এ পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং সরকারের আন্তর্জাতিক বিষয়াদির বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দ্বায়িত্ব নেন। ১৯৭৫ সালের ৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাকশাল (কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) দলীয় সরকারের বন্দর, জাহাজ চলাচল ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু সামরিক বাহিনীর কিছুসংখ্যক সদস্যের হাতে নিহত হবার পর খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হলে তার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। মেজর গেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে তিনি মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের সংখ্যালঘু বৈষম্য প্রতিরোধ ও অধিকার সংরক্ষন কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন। স্মরনীয় অবদানের জন্য তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেদেশিকোত্তম উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট লন্ডনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
[৭৩]                   দিলরুবা বেগম

রেফারেন্স: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (প্রথম খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত