You dont have javascript enabled! Please enable it! উনিশ'শ একাত্ত সালে পাকিস্তান সরকার জারিকৃত সামরিক আইনবিধি - সংগ্রামের নোটবুক

উনিশ’শ একাত্ত সালে পাকিস্তান সরকার জারিকৃত সামরিক আইনবিধি

[এসব সামরিক বিধি বিশেষভাবে প্রোযোজ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী অর্থাৎ বাঙালীদের ক্ষেত্রে।]

১. ১ মার্চঃ সামরিক আইনবিধি ১১০
বলা হয়, “পাকিস্তানের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন ছবি, খবর, অভিমত, বিবৃতি, মন্তব্য প্রভৃতি মুদ্রণ বা প্রকাশ থেকে সংবাদপত্র সমূহকে বারণ করা হচ্ছে। এই আদেশ লঙ্ঘন করা হলে ২৫ নং সামরিক শাসন বিধি প্রযোজ্য হবে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড।”
২. ১০ মার্চঃ সামরিক আইনবিধি ১১৪
এই বিধিতে বলা হয়ঃ “যে কেহ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধনের কাজ বা সশদত্র বাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি বা রাস্তা, জলপথ বা নৌযান ব্যবহার, বিদ্যুৎ বা পানি সরবরাহে বাধা প্রদান যাহা দ্বারা সশস্ত্র বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষন ব্যাহত হইতে পারে- এই ধরনের কার্যকলাপ আক্রমনাত্মক কাজের সামিল যাহা সংশ্লিষ্ট সামরিক আইনবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।৩. ১৩ মার্চঃ সামরিক আইনবিধি ১১৫
এই বিধিতে বলা হয়ঃ “যে সকল বেসামরিক কর্মচারীকে প্রতিরক্ষা খাত হইতে বেতন দেওয়া হয়এবং এমইএম কম্বাইন্ড ওয়র্কশপ, অর্ডিন্যান্স ডিপো সি এম এল ও এবং সি এম ডি পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার ন্যায় বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে হিসেবেই তাঁহারা নিয়জিত থাকুক না কেন তাহাদের সকলকেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সকাল ১০ টার মধ্যে তাহাদের স্ব স্ব বিভাগে কর্তব্যকর্মে যোগদান করিতে হইবে। যদি কেহ উপরোল্লিখিত সময়ে তাহার কর্মস্থলে যোগদান করিতে না পারেন তাহা হইলে তিনি চাকরি হইতে বরখাস্ত হইতে পারেন। এই জাতীয় ব্যক্তিকে ফেরারী গণ্য করা হইবে এবং সেই হেতু একটি সামরিক আদালতে তাহার বিচার করা হইতে পারে। এই আদেশ না মানা হইলে তাহা ২৫ নম্বর সামরিক আইনবিধির আওতায় পড়িবে যাহার ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্দের বিধান রহিয়াছে।
৪. ২৫ মার্চঃ লে. জে. টিক্কা খান কর্তৃক ১৫ টি সামরিক আইনবিধি জারি।
১১৭- পূর্ব পাকিস্তানে সবধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ। কেউ কোন ধরনের জমায়ের বা মিছিলে অংশগ্রহন করতে পারবেনা।
১১৮- যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সেন্সরশিপ ব্যতিরেকে কোন বক্তব্য, পোষ্টার বা লিফলেট প্রকাশ করা যাবেনা।
১১৯- পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃংখলা সম্পর্কিত কোন খবর বা মতামত ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তরে প্রতিষ্ঠিত সেন্সরশিপ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রচার করা যাবেনা। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন টেলিপ্রিন্টার, রেডিও ট্রান্সমিটার, ব্যাংকসমূহ কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এর আওতাভুক্ত।
১২০- সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহে, পিয়াইএ ব্যতিত, চাকরিরত কর্মচারিদের ২৭ তারিখে সকাল ১০ টায় কর্মস্থলে হাজির হতে বলা হয়। যোগদান করতে ব্যর্থ হলে সামরিক কোর্টে বিচার করে চাকরিচ্যুত করা হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অনুপস্থিত ব্যক্তির তালিকা পেশ করবেন।
১২১- পুর্ব পাকিস্তানের সমুদয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
১২২- কোন বযক্তি কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারবেনা। ডিপ্লোম্যাটিক স্টাফ ছাড়া বাকি সবাই নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেবে। এই নির্দেশ সেনাবাহিনীর জন্য প্রযোজ্য নয়। লাইসেন্স পরীক্ষা করার পর মালিককে তার আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত দেওয়া হবে।
১২৪- কোন ব্যক্তি সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক বাহিনি গঠনে মদদ যোগাতে পারবেনা।
১২৫- অন্য কারো ক্ষতি হতে পারে সে জন্য কোন ব্যক্তি লাঠি, লোহার রড, রামদা ইত্যাদি বহন করতে পারবেনা।
১২৬- কারফিউ ভাঙার ৭২ ঘন্টার মধ্যে ৫ জন কিংবা তার বেশি লোকের একত্র সমাবেশ নিষিদ্ধ। শুধু ধর্মীয় কারণের জন্য অনুমতি চাওয়া যেতে পারে।
১২৭- পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, শিল্প কারখানায় মিছিল, সমাবেশ নিষিদ্ধ।
১২৮- সামরিক কর্তৃপক্ষের পুর্ব অনুমতি ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত অথবা বসবাসরত কোন বিদেশী প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে কাউকে কোন অস্ত্র দিতে পারবেনা।
১২৯- কোন ব্যক্তি ঘেরাও, জ্বালাও অথবা রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজে ইন্ধন যোগাতে পারবেনা। পুলিশ, ইপিআর কিংবা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারবেনা।
১৩০- কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার দ্বারা গঠিত সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ যেকোন জায়গায় দোকান, বাড়ি ইত্যাদি অস্ত্র বা প্রচারপত্র, পোষ্টার ইত্যাদি খোঁজার জন্য তল্লাশি করতে পারবেন।
১৩১- সাইক্লোস্টাইল বা রিপ্রডাকশন মেশিনের মালিকদের এই নোটিশ ইস্যু হবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সামরিক সদর দফতরে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এসব আদেশ অমান্যকারীদের ২৫ নম্বর সামরিকবিধি অনুযায়ি বিচার করা হবে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড।
৫. ২৬ মার্চ সামরিক আইনবিধি ১৩২, ১৩৩ ও ১৩৪
টিক্কা খান জারিকৃত এসব বিধি বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রবর্তিত নির্দেশাবলি (Directives) সম্পর্কিত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং ব্যাংক সমূহের কর্মচারিদের যথানিয়মে কাজে যোগদান করা, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ব্যাংকে আওয়ামী লীগের অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা।
৬. ২৯ মার্চ- সামরিক আইনবিধি ৭৬ ও ৭৭
সামরিক আইনের এই দুইটি বিধি জারি করে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয় অ সংবাদপত্রের ওপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়।
৭. ৭ এপ্রিল- সামরিক আইনবিধি ১৩৭

টিক্কা খানের জারিকৃত এই বিধি ছিল অফিসার ও প্রশাসক নিয়োগ সম্পর্কিত।

৮. ১০ এপ্রিল- সামরিক আইনবিধি ৭৮
পাকিস্তানের প্রেওসিডেন্ট কর্তৃক জারিকৃত এই সামরিক আইন বিধিটি ছিল ব্যক্তিবিশেষের রাষ্ট্র সম্পর্কে আচরণ সম্পর্কিত।
৯. ২৭ এপ্রিল- সামরিক আইনবিধি ১৪৮

এই বিধিতে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
১০. ৩ জুন- সামরিক আইনবিধি ১৪৯
টিক্কাখান কর্তৃক জারিকৃত এই সামরিক আইন বিধি ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাসম্পর্কিত।
[১৪২] সেলিনা হোসেন

রেফারেন্স: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (প্রথম খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত