You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.14 | রণাঙ্গনের খবর - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গনের খবর

পাক হানাদারদের পায়ের তলা হইতে মাটি সরিয়া যাইতেছে অক্টোবরের খতিয়ান মুজিব নগর মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর হইতে জানানাে হইয়াছে যে, অক্টোবর মাসে ৩৪ জন অফিসার সহ ২৪৭০ জন হানাদার পাকিস্তানী সৈন্য এবং ২২০০ জন আধা-সামরিক ব্যক্তিকে মুক্তিবাহিনীর বীর যযাদ্ধারা খতম করিয়াছেন। বিভিন্ন সংঘর্ষে ৭৩ জন পাকসেনা আহত হইয়াছে। মুক্তিবাহিনীর তৎপরতায় মাসের শেষ দুই সপ্তাহে ৫টি অঞ্চলে কয়েকটি পাক-সেনাবাহী বিশেষ ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২৪টি সামরিক গাড়ী ধ্বংস হইয়াছে। মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডােরা সুন্দর বন এলাকায় পাক বাহিনীর একটি বড় জাহাজ, ৫টি লঞ্চ ও অনেকগুলি নৌকা ডুবাইয়া দিয়াছে অথবা ধ্বংস করিয়াছে। মুক্তিযােদ্ধারা এই এক মাসে ১৮টি সড়ক ও রেল সেতু ধ্বংস করিয়াছে। এই সময়ে এক হাজারেরও বেশি রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।  

মেহেরপুর মুক্ত বেতারযােগে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মেহেরপুর শহর সহ মেহেরপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চল হানাদার বাহিনীর কবল হইতে মুক্ত হইয়াছে এবং মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসিয়াছে। গানগনি বাজার পশ্চিম ও উত্তরাংশ হইতে মাথাভাঙ্গা নদী পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার পাঁচ শত বর্গমাইল এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে। মার্কিন অস্ত্র জাহাজ নিমজ্জিত। মুক্তিবাহিনীর বুলেটিনে প্রকাশ, গত ৩০শে অক্টোবর গেরিলারা কুমিল্লা জেলার কোন এক স্থানে নদীবক্ষে একটি মার্কিন অস্ত্রবাহী জাহাজ ডুবাইয়া দিয়াছে। জাহাজটি অস্ত্র লইয়া চাঁদপুর ঘাট অভিমুখে যাইতেছিল। জাহাজের সব নাবিক ও ৫ জন সান্ত্ৰী সকলেরই সলিল সমাধিক ঘটিয়াছে। কর্ণফুলি পেপারমিল বন্ধ বাঙলাদেশের শত্রু কবলিত এলাকা হইতে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসােসিয়েটেড প্রেস পরিবেশিত খবরে জানা যায়, কাঁচামালের অভাবে দুই সপ্তাহ আগে দেশের সর্ববৃহৎ কাগজের কল কর্ণফুলি পেপার মিলটি বন্ধ হইয়া গিয়াছে। এ, পি, পরিবেশিত অপর এক খবরে প্রকাশ, গত ৪ঠা নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে একটি বড় তেলের ট্যাঙ্কার গেরিলারা বিস্ফোরণে ডুবাইয়া দিয়াছে। উল্লেখযােগ্য যে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে গেরিলারা তিনটি জাহাজ উড়াইয়া দেওয়ার পর হইতে বন্দরে পাক সেনারা কড়া নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে।

ঢাকা শহর ঢাকা শহরে গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রহিয়াছে। সংবাদসংস্থা এ, পি, ঢাকার পুলিশর বরাত দিয়া জানাইয়াছে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় গেরিলাদের বােমার আঘাতে ১২ জন প্রাণ হারাইয়াছে। গত ৪ঠা নভেম্বর ব্ল্যাক আউট মহড়ার সময় ৪টি বিস্ফোরণ ঘটে। দুটি বিস্ফোরণে একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ সাব-স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বীর গেরিলা যােদ্ধাদের হাতে ঢাকা জেলার মনােহরদি এবং রায়পুরা এলাকায় শতাধিক শত্রুসেনা খতম হয়। মনােহরিদ থানা ঘাটিতে আকস্মিক আক্রমণ করিয়া প্রবল গােলাবর্ষণে গেরিলারা এক প্লাটুন শত্রুসেনা সম্পূর্ন নিশ্চিহ্ন করেন। ১১ জন শত্রুসেনাকে গেরিলারা জীবিত অবস্থায় ধরিয়া আনেন। কিন্তু পথে জনতার রুদ্র রােষে পড়িয়া জনতার হাতেই উহাদের ৮ জন নিহত হয়। রংপুর গত ৩০শে অক্টোবর বীর মুক্তিযােদ্ধারা ভুরুংগামারী এলাকায় ২৫ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একজন মেজর সহ বেশ কিছু সংখ্যক শত্রুসেনাকে খতম করে। হানাদার দস্যুরা মুক্তিবাহিনীর হাতে মার খাইয়া উক্ত এলাকায় গ্রামে গ্রামে অগ্নি সংযােগ করে ও ৫০ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী হানাদার দস্যুদের বিতড়নের দৃঢ় সংকল্প লইয়া আক্রমণ চালাইলে উভয় পক্ষে ৩৬ ঘণ্টা যাবৎ গােলা বিনিময় হইবার পর উক্ত মেজর সহ বেশ কিছু সংখ্যক শত্রুসেনা নিহত হয়। মুক্তিযােদ্ধারা রণাঙ্গনে নিহত মেজরের ‘রেজিমেন্টাল ক্রস’ ও তাহার দেহ।  তল্লাসী করিয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক দলিল হস্তগত করিয়াছে। বেশ কিছু চীনা অস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্রপাতিও মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন রংপুর জেলার মুক্তিবাহিনীর একটি সাব-সেক্টরের কমান্ডার মেজর নওয়াজেশউদ্দিন।

মুক্তিযুদ্ধ ও ১ : ১৯

১৪ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯