৭১ সালে কতজন জামাতী মারা গিয়েছিলো? | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৭ এপ্রিল ১৯৮১
১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে মাত্র ২৭ জন রোকন মারা গেছে। রোকন জামাতে ইসলামীর সবুজ কার্ডধারী সদস্যর নাম। এরাই পার্টির মূল সদস্য। জামাতের ভাষায়ঃ তারা শহীদ হয়েছে। ১৯৭৭ সনের শেষ দিকে জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ ব্যাপী এক জরিপ চালায়। জরিপের উদ্দেশ্য ছিল : মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কতজন মুত্তাফিক, কর্মী ও রোকন মারা গেছে তা জানা। তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে এই জরিপ পরিচালনা করে। জেলা, মহকুমা ও থানা পর্যায়ে এই জরিপ পরিচালনা সহায়তা করে বর্তমান মুত্তাফিক, কর্মী ও রোকনগণ। দীর্ঘ এক বছর গ্রামগঞ্জে ঘুরেঘুরে ভ্রাম্যমাণ জরিপ টিম যে রিপোর্ট পেশ করে তা প্রায় চারশ পৃষ্ঠা। কেন, কখন, কিভাবে এবং কারা হত্যা করেছে বা মারা গেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ এতে স্থান পায়। মুত্তাফিক, কর্মী ও রোকনরা মারা যাবার পর তাদের দাফন হয়েছে কিনা বা লাশের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল কিনা লিপিবদ্ধ রয়েছে। স্থানীয় – মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও বিচার বিবরণ রয়েছে এই রিপোর্টে। জামাতের একটি সূত্র জানায়ঃ বর্তমানে এই রিপোর্ট নিয়ে চলছে পর্যালোচনা। অধ্যাপক গোলাম অাজমের সভাপতিত্বে নবেম্বর (৮০) মাসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মৃত মুত্তাফিক, কর্মী ও রোকনদের পরিবারের সদস্য সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে এ সমস্ত পরিবারের সদস্যরা ভাতা পাবেন। রিপোর্টের এক স্থানে বলা হয়ঃ আমাদের বীর সাথীরা জীবন দিয়েছে তবু তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের (জারজ সন্তানের ) কাছে আত্নসমপর্ন করেনি।’ কুষ্টিয়ার গ্রামে তথাকথিত এই রোকনের মত সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয় আমাদের দুজন সাথী বিশ্বাসঘাতকতার দরুন জারজ সন্তান হত্যা করতে পেরেছে না হলে সেটা সম্ভব হতো না। বিস্তারিত বিবরণ পাওয়াঃ এই রোকন ঐ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যকারী দুই ব্যক্তিকে দিনে-দুপরে হত্যা করে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল—পাশের গ্রামেই ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা। খবদ পেয়ে তারা এই রোকন (জামাত সদস্য) কে ঘেরাও করে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জামাতের কতিপয় সদস্যকে দায়ী করা হয়। ১৯৭১ সনে যার রোকন ছিল তাদের অনেকেই রোকন সদস্যপদ হারিয়েছে এই রিপোর্টের ভিত্তিতে। রিপোর্ট পাবার পর কেন্দ্র থেকে নির্দেশ গেছে এদের সদস্যপদ খারিজের । এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ : তারা এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না এবং দলের নির্দেশমত কাজ করে না। রিপোর্টে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর নাম স্থান পেয়েছে। কোন দল কিভাবে কাজ করছে এবং কোন দলের অবস্থা কি রকম তারও উল্লেখ রয়েছে, সরাসরি রাজনীতি করেন না অথচ রাজনীতি সচেতন ব্যাক্তির তালিকা রয়েছে এই ৭৭ সালের রিপোর্টে।
[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1981.04.17-bichitra.pdf” title=”1981.04.17 bichitra”]