You dont have javascript enabled! Please enable it!

সিলেট রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর বিজয় অভিযান অব্যাহত

দুটি থানা দখল ও ৬টি নৌযান ধ্বংস। সিলেট ও ময়মনসিংহ রণাঙ্গনের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তাদের অবস্থা দাঁড়িয়েছে খাঁচায় আটকা পড়া  জানােয়ারের মত। মুক্তিবাহিনীর দেশপ্রেমিক বীর যােদ্ধারা রাধানগর, সারিঘাট এবং কানাইঘাটে পাক হানাদার বাহিনীকে এমন ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে যে তাদের পক্ষে অন্যান্য চৌকির সাহায্যে যাওয়া কিম্বা চলাফেরা সম্পূর্ণ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর সালুটি গড় বিমান বন্দরের কাছাকাছি। কোম্পানীগঞ্জের নিকটে মুক্তি সেনারা পাক হানাদারদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালাচ্ছে। দিশেহারা পাক সেনারা মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি রােধ করতে না পেরে পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর সাহায্য গ্রহণ করেছে এবং পাকিস্তানী বিমান থেকে উক্ত এলাকার অসামরিক অধিবাসীদের ওপরে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবারে সিলেটের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত রাধানগরে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাক সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে। এই যুদ্ধে ১৭ জন পাক সেনা নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে।

রাধানগরের বিপর্যন্ত পাক সেনাদের সাহায্যের জন্যে সারিঘাট থেকে একদল সৈন্য পাঠানাে হয়েছিল কিন্তু মুক্তি যােদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে তারা নিজেদের প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই রিপাের্ট লেখা পর্যন্ত রাধানগরে যুদ্ধ চলছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে মুক্তিবাহিনী সিলেটের বানিয়াচঙ এবং ধর্মপাশা থানা দুটি মুক্ত করেছিল। এখন ঐ দুটি এলাকায় আমাদের বীর মুক্তি যােদ্ধারা তাদের শক্তি আরও দৃঢ় করেছে। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড শেল ও মেশিনগানের গুলী বর্ষণের মুখে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের পূর্বতন অবস্থান থেকে ক্রমাগত পেছনে হটে যেতে বাধ্য হচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর প্রবল গােলাবর্ষণে ঢাকা-আজমিরীগঞ্জ, শেরপুর নৌপথ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সিলেটের সরবরাহ প্রধানতঃ এই নৌপথের ওপরেই নির্ভর করতাে। কিন্তু সিলেটের ধমনী বলে পরিচিত এই নৌপথটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার ফলে সিলেট সেক্টরে পাক বাহিনীর জরুরী সরবরাহ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। হয়ে পড়েছে। গত এক পক্ষকালে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের ফলে এই নদী পথে ছ’টি জলযান ডুবে যায়। এই জলযানগুলাে ঢাকা থেকে সিলেটে জরুরী সরবরাহ নিয়ে যাচ্ছিল। পাক সেনা নিহত জয়ন্তিয়াপুর ও সারিঘাট এলাকায় মুক্তি যােদ্ধাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত সােমবার মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে আটজন পাক সেনা নিহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ধুমারঘাট বিধ্বস্ত করেছে এবং সিলেট শহরের দুটি বিদ্যুৎ পাইলন ধ্বংস করেছে।

জয়বাংলা (১) ১: ২৭ ॥

১২ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!