You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.12 | ভালুকায় আফসারের মুক্তি বাহিনী ভালুকা-গফরগীও টেলিযােগাযােগ বিচ্ছিন্ন - সংগ্রামের নোটবুক

ভালুকায় আফসারের মুক্তি বাহিনী ভালুকা-গফরগীও টেলিযােগাযােগ বিচ্ছিন্ন

(স্টাফ রিপাের্টার)। ২১শে অক্টোবর। গেরিলারা রাত ১টায় সেকসন কম্যান্ডার নুরুল ইসলামের নির্দেশে মাত্র ৮টি রাইফেল দিয়ে ভাওলিয়াবাজু ও শান্তিগঞ্জে ডিফেন্স দেন। রাত দুটায় উক্ত দুজায়গায় ডিফেন্স রেখে টেলিফোন লাইন নষ্ট করার কাজে গেরিলারা হাত দেন। তাঁরা বাকি রাতে টেলিফোন লাইনের তার ছিড়ে বাটী  ভেঙ্গে থামগুলাে উপড়িয়ে অনেকগুলােকে সুতিয়া নদীতে নিক্ষেপ করেন।এমনি করে গেরিলারা ভাওলিয়াবাজু হতে শিবগঞ্জ পর্যন্ত টেলিফোন লাইনের বিস্তর ক্ষতি সাধন করেন। এর ফলে হানাদারদের প্রধান যােগাযােগের বিশিষ্ট মাধ্যম টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থার বিশেষ ক্ষতিসাধন হয়েছে। এ ক্ষতি পূরণ করার সাধ্য হানাদারদের হবে না। পয়তাল্লিশ মন চাউল উদ্ধার (স্টাফ রিপাের্টার) কয়েকদিন আগে গফরগাও থেকে ভালুকা পাকসেনাদের ঘাটিতে রেশন নিয়ে আসার পথে একদল রাজাকার শিবগঞ্জ বাজারে মুক্তি বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। রাজাকাররা গরুরগাড়ী নিয়ে শিবগঞ্জ বাজারে পৌঁছতেই মুক্তিযােদ্ধারা শান্তিগঞ্জ থেকে গুলীবর্ষণ করলে রাজাকাররা রেশন ভর্তি গরুর গাড়ী ফেলে পলায়ন করে। এখানে পয়তাল্লিশ মন চাউল উদ্ধার করা হয়। পরে মুক্তিযােদ্ধারা সমস্ত চাউল গরীব দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করে দেন। মেদিলায় পাক সেনাদের পাঁচমুখী আক্রমণ প্রতিহত মেদিলা (স্টাফ রিপাের্টার) ২৭ শে অক্টোবর। আজ এখানে ১৫০ জন পাকহানাদার এসে স্থানীয় অধিবাসীদের উপর অত্যাচার শুরু করে। ওরা ভালুকা থেকে গ্রামের অভ্যন্তরে ঢুকে এবং নিরীহ গ্রামবাসীদের বাড়ীঘর পুড়তে শুরু করে; এমন সময় মুক্তি বাহিনীর দু’জন সেকসন কম্যান্ডার চান মিঞা এবং মুজিবর রহমান তাদের সেকশান নিয়ে পাকসেনাদের উপর দ্বিমুখী আক্রমণ চালান।

এখানে সাতঘণ্টাব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের ফলে আটজন পাকসেনা ও দুজন রাজাকার খতম হয়। পাকসেনারা ভালুকা বাজারে আশ্রয় নিয়েছে। গত ১০ই নভেম্বর বােধবার দুঃসাহসী গেরিলারা ভালুকা থানা ও বাজার এলাকা ঘিরে ফেলেন। তারপর তারা পাক সেনাদের উপর এক প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। আক্রমণ শুরু হবার পর ভীতসন্ত্রস্থ পাক সেনারা থানা এলাকা ছেড়ে বাজারস্থ বাংকারে আশ্রয় নিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে মল্লিক বাড়ী থেকে তাড়া খাওয়ার পরপরই এ আক্রমণ শুরু হওয়ায় পাকসেনারা বিশেষভাবে ভীত হয়ে পড়েছিল। সারাদিন অবিশ্রান্ত গােলাগুলি বর্ষণের ফলে পাকদস্যরা বাংকারেই না খেয়ে পড়ে থাকে। এদিকে ভালুকা গফরগায়ের প্রধান সংযােগস্থলও মুক্তিযােদ্ধারা অবরােধ করে রেখেছেন। এর ফলে অন্য কোন স্থান থেকেও রসদ আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে।  এ আক্রমণ রাতে ও অব্যাহত থাকে। মুক্তিযােদ্ধারা মর্টার থেকে অবিরত গােলা বর্ষণ করে শত্রুদের বেশ কয়েকটি বাংকার বিধ্বস্থ করে দিয়েছেন। এর ফলে এগারজন পাক হানাদার দস্যুসেনা খতম হয়। মুক্তিযােদ্ধারা আজ অবধি থানা ও বাজার এলাকা অবরােধ করে রেখেছেন। গেরিলারা অত্যন্ত সপুরিকল্পিত উপায়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবারে ৭ জন রাজাকার ধরা হয়েছে। মল্লিকবাড়ী থেকে পাকদস্যরা পালিয়ে গেলে তাদের পরিত্যাক্ত বাংকারের পাশে দু’জন রাজাকারকে মুক্তিযােদ্ধারা ধরে ফেলেন। রাজাকার দুজন উপযুক্ত সুযােগের অভাবে পালিয়ে যেতে পারে নি। সাধারণ ক্ষমা ঘােষণার (বাংলাদেশ সরকারের) নির্দেশানুসারে তাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও দুজন রাজাকার মল্লিকবাড়ী থেকে পাকসেনারা পালিয়ে যাবার পর দু’জন রাজাকার তাদের পরিবার বর্গকে সরিয়ে ফেলার জন্যে বাড়ী আসলে মুক্তিযােদ্ধারা স্থানীয় রক্ষীবাহিনীর সাহায্যে ধরে ফেলেন। এ ছাড়াও বরাইদ থেকে তিনজন রাজাকারকে ধরে আনা হয়।

জাগ্রত বাংলা ১: ৬।

১২ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯