অধিনায়ক আফসারের নেতৃত্বে ৮ ঘন্টাব্যাপী প্রচণ্ড গুলী বিনিময় শেষরাতে পাক দস্যুদের পলায়ন
রাত ৫টায় মুক্তি বাহিনীর উপস্থিতি
মল্লিকবাড়ী মুক্ত ৯ই নভেম্বর নিজস্ব সংবাদ দাতা। দীর্ঘদিন অবরােধ করে রাখার পর গত রাত আটটায় মুক্তিবাহিনীর তিনটা সেকসন, কম্যান্ডার ফয়েজউদ্দিন, কম্যান্ডার শামসুদ্দীন ও কম্যান্ডার মােতালেবের নেতৃত্বে ত্রিমুখী আক্রমণ চালান। | ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত কাল বিকেল সাড়ে চারটায় প্রথম বারের মত আক্রমণ করা হয়। কিছুক্ষণ গােলাগুলির পর মুক্তিযােদ্ধারা নীরবতা অবলম্বন করেন। ফলে ঐ আক্রমণ ক্ষণস্থায়ী হয়। সন্ধ্যার পর কয়েকটি গরুরগাড়ী পাকসেনাদের জন্যে রসদ নিয়ে আসার পথে মল্লিকবাড়ী বাজারের পূর্বদিককার নদীটার ওপাড়ে থাকতেই বীর গেরিলারা পাকসেনাদের উপর তীব্র আক্রমণ শুরু করেন। এ আক্রমণ রাত চারটা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মুক্তিযােদ্ধারা এ যুদ্ধে মর্টার ব্যবহার করেন। প্রচন্ড আক্রমণের ফলে এবং দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকায় পাকসেনারা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে এবং রাতচারটায়ই মল্লিকবাড়ীর শক্তিশালী ঘাটি থেকে ভালুকায় চলে যায়। এক ঘণ্টা পরে মুক্তিযােদ্ধারা মল্লিকবাড়ী বাজারে উঠেন। তারা শত্রুদের পরিত্যক্ত বাংকারের পার্শ্বে দুজন রাজাকরকে ধরে ফেলেন। মল্লিকবাড়ীর টুকি টাকি গত ৩০শে অক্টোবর সেঃ কম্যান্ডার শামছুদ্দিন তার সেকসন নিয়া ভালুকা থানার মল্লিকবাড়ী পাকহানাদার ঘাটিতে আক্রমণ করে ৮ জন খানসেনা ও দুজন রাজাকারকে খতম করেন।
গত ২৮শে অক্টোবর শামছুদ্দীন সাহেবই মল্লিক বাড়ী বাজারের হানাদার ঘাটির উপর আচমকা আক্রমণ ২জন খানসেনা ও ৪ জন রাজাকার খতম করেন। জনতা সাগরে জেগেছে উর্মি… জেলা সড়কে, যে সড়কে ছ’মাসের মধ্যে একটা লােকও চলাচল করেনি, ঘাস বনলতায় আচ্ছন্ন সড়কে গত ৯ই নভেম্বর মল্লিকবাড়ী মুক্ত হবার দিন হাজার হাজার জনতা ঠেলাঠেলি করে জোর কদমে নানাবিধ আনন্দ ধ্বনিতে মল্লিক বাড়ীর দিকে ছুটে যায়। জনতার কণ্ঠে জয়ের উল্লাসে ধ্বনিত হয় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ ‘মল্লিকবাড়ী মুক্ত হল’, ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’, মুক্তিবাহিনী জিন্দাবাদ’ ‘ আফসার উদ্দিন জিন্দাবাদ’। মল্লিকবাড়ীর দূরবর্তী স্থান হতে দা, বল্লম, কার্তুজ, লাঠি প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত জনতার মিছিল শত্ৰুপরিত্যাক্ত ঘাটি দেখতে এসেছিল। মুক্তি যােদ্ধারা জনগণকে বিধ্বস্থ ৫৮টি বাংকার, অন্ধকুপ প্রভৃতি পরিদর্শনে সাহায্য করেন। এখনও এ ঘাটিটী দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত।
জাগ্রত বাংলা ॥ ১ ৬
১২ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯