You dont have javascript enabled! Please enable it!

সিলেটের জনসভায় শেখ মুজিব
আমাদের অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা ৬-দফারও বেশী দাবী করিতেন

(নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত)
সিলেট, ১৪ই মার্চ।পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান আজ বলেন যে, কেন্দ্রীয় রাজধানীর জল, স্থল ও বিমান বাহিনীর সদর দফতর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অপরাপর সুযােগ-সুবিধা পূর্ব পাকিস্তানে থাকিলে পশ্চিম পাকিস্তানের তথাকথিত নেতৃবৃন্দ ৬-দফায় উত্থাপিত দাবী অপেক্ষা অনেক বেশী দাবী করিয়া বসিতেন। আজ অপরাহ্নে স্থানীয় রেজিষ্ট্রি অফিস ময়দানে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতা উপরােক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের কল্যাণের জন্য কোন দাবী পেশ করিলেই উহাকে ধ্বংসাত্মক কাজ বলিয়া অভিহিত করা হয়। এমনকি, শেরেবাংলা বা সােহরাওয়ার্দীর মত নেতাও এই অভিযােগ হইতে রেহাই পান নাই।

পৃষ্ঠা: ১২৬
জনাব মুজিবর রহমান বলেন যে, করাচী, রাওয়ালপিণ্ডি, ইসলামাবাদে একের পর এক তিন-তিনবার রাজধানী নির্মাণ করা হইয়াছে। সশস্ত্র বাহিনীর ৩টি বিভাগের সদর দফতরও পশ্চিম পাকিস্তানে। অথচ গত যুদ্ধে প্রমাণিত হইয়াছে যে, পশ্চিম পাকিস্তান হইতে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষা করা যায় না। সুতরাং এই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক একাডেমী, অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরী প্রভৃতিসহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়িয়া তােলা দরকার এবং এখান হইতে সেনাবাহিনীতে লােক ভর্তি করা প্রয়ােজন। তিনি বলেন যে, পাকিস্তান তখনই শক্তিশালী হইবে যখন ইহার দুইটি অঞ্চল সমানভাবে শক্তি অর্জন করিবে এবং সকল ব্যাপারে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইবে।
অর্থনৈতিক নীতিসহ বক্তৃতায় তিনি ৬-দফার বিস্তৃত ব্যাখ্যাদান করেন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানী ধনিক শ্রেণীর অর্থনৈতিক শােষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার আহ্বান জানান। যুবসমাজের প্রতি শােষণের বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রামের আহ্বান জানাইয়া তিনি বলেন যে, ৬-দফা তথা ১০ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম গ্রহণ করিবেন না। তিনি গত ১৮ বৎসর ধরিয়া কেন্দ্রীয় অর্থের অসম বণ্টনের ব্যাখ্যা করেন।
বর্তমান লেভী নীতির সমালােচনা করিয়া তিনি বলেন যে, যেখানে পূর্ণ রেশন ব্যবস্থা নাই, সেখানে বাধ্যতামূলক লেভী ধার্য করা যায় না। তিনি বলেন যে, গত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান হইতে সংগৃহীত আড়াই কোটি টাকা গভর্নর প্রেসিডেন্টের হাতে তুলিয়া দিয়াছেন। অথচ তিনি এখানে সামরিক ব্যবস্থা গড়িয়া তােলার কথা চিন্তাও করিলেন না।
বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি একশ্রেণীর গুণ্ডা-ছাত্র কর্তৃক মহল বিশেষের পৃষ্ঠপােষকতায় শিক্ষাজীবনে অরাজকতা সৃষ্টির নিন্দা করেন। ৬-দফার সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাইয়া শেখ মুজিব বলেন যে, জনগণ ঐক্যবন্ধ না হইলে নেতাদের ঐক্যে কোন লাভ হইবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকিলে নেতাগণ বিশ্বাসঘাতকতা করার সাহসই পাইবে না।
পূর্বাহ্নে জনাব আবদুল মমিন (এডভােকেট) জনগণকে বিশেষতঃ আওয়ামী লীগ কর্মীদের গ্রামে-গঞ্জে ৬-দফার বাণী পৌছাইয়া দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন যে, যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের সামান্যই সাহায্য করিতে পারিয়াছেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব আবদুল হাই-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জালালউদ্দিন আহমদ খানও বক্তৃতা করেন। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ একশ্রেণীর ছাত্রদের অবাধ গুণ্ডামির তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। অপর এক প্রস্তাবে পশ্চিম পাকিস্তানের মুষ্টিমেয় ধনিকের হাতে সমস্ত সম্পদ পুঞ্জীভূত করার নিন্দা

পৃষ্ঠা: ১২৭
করিয়া ইহার বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রামের সঙ্কল্প ঘােষণা করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক একাডেমী ও অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা, জরুরী আইন প্রত্যাহার, লেভী প্রথা বাতিল ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবী করিয়াও সভায় কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়। নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও খাজা রফিকসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করিয়া সভায় অপর এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় গৃহীত অপরাপর প্রস্তাবে জমি-জমার রেকর্ড ঠিক করা—এজমালী সম্পত্তি বিভক্ত করা ও সকল সরকারী স্কুল ২ শিফট চালু করার জোর দাবী জানানাে হয়।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ মার্চ ১৯৬৬

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!