হামিদুল হক চৌধুরী
৬ এপ্রিল
টিক্কা খান চেয়েছিলেন উগ্ৰডানপন্থী দলগুলাে অর্থাৎ মুসলিম লীগ (কাউন্সিল, কাইয়ুমপন্থী এবং কনভেনশন সকলপ) পিডিপি, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দলগুলাে একযােগে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে সামরিক বাহিনীকে সাহায়্য করবে। কিন্তু দলগুলাের মধ্যে দেখা দিল কোন্দল। উচ্চাভিলাষী মৌলভী ফরিদ আহমদ এবং নুরুজ্জামানের নেতৃত্বের একটি দল জামাতের নেতৃত্বে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এই সমস্যা তৈরীর পর গােলাম আজম একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে টিকা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্যের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী। কারণ প্রতিনিধি দলগুলাের মধ্যে মতৈক্য সৃষ্টির জন্য একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বের প্রয়ােজন ছিল, সেই দায়িত্বই পালন করেছিলেন তিনি। টিকা খানের সাথে সাক্ষাতের পরপরই হামিদুল হক চৌধুরী বলেন “পূর্ব পাকিস্তানীরা আর যা কিছু চাক না কেন কিছুতেই দেশের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায় না। পূর্ব পাকিস্তানীরা কি চায় একশ বিশদিন পূর্বে একটি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচন করে পূর্ব পাকিস্তানের সকল বয়স্ক জনসাধারণ তা ঘােষণা করেছেন। ভারতীয় প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা এবং তার দ্বারা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এদেশের অস্তিত্ব বিলােপ করে নিজস্ব সম্প্রসারণবাদী মনােভাব চরিতার্থ করা। এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এবং বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা তাদের সকল প্রচার মাধ্যমের দ্বারা বিশ্ববাসীর নিকট হাজার হাজার নরহত্যা এবং বােমা বর্ষণের ফলে শহর ধ্বংসের ভিত্তিহীন অভিযােগ প্রচার করছে। প্রকৃত প্রস্তাবে ভারতীয় বেতার তার (সময়) সূচির শতকরা পঞ্চাশভাগ সময় এই উদ্দেশ্যে নিয়ােজিত করেছে। কিন্তু কতদিন যাবত এই মিথ্যার বেসাতি চলবে?
বিবৃতিতে আরাে উল্লেখ আছে ভারতীয় প্রচারণবিদরা কি করে দাবী করছেন যে, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় এবং এই ভিত্তিহীন তত্ত্বের ভিত্তিতে কি করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আর্থিক ও কার্যকরী সমর্থন দিতে শুরু করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গােষ্ঠী পাকিস্তানের চাইতে ভারতেই বেশি লক্ষ্য করা যাবে।”
তিনি আরাে বলেন-“স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার জন্য এই মুহূর্তে চর্তুগুণ অধ্যাবসায় নিয়ে কাজে আত্মনিয়ােগ করা সকল শ্রেণীর মানুষের কর্তব্য। মার্চের তিন সপ্তাহব্যাপী হরতালে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে তা সারিয়ে ফেলতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক প্রত্যেক সরকারের কাছে জীবন জীবিকা ও অধিকারের নিরাপত্তা আশা করে। যত শীগগীর সম্ভব বেসামরিক জনপ্রিয় সরকার কায়েমের জন্য উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যে বিবৃতি দিয়েছেন তা অভিনন্দন যােগ্য।
রেফারেন্স: ১৯৭১ ঘাতক-দালালদের বক্তৃতা ও বিবৃতি- সাইদুজ্জামান রওশন