You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.11 | বিভিন্ন রণাঙ্গনে শত্রুদের প্রবল বাধা সত্বেও - সংগ্রামের নোটবুক

বিভিন্ন রণাঙ্গনে শত্রুদের প্রবল বাধা সত্বেও

মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে এগিয়ে চলেছে। মুক্তিবাহিনীর বীর মুক্তিযােদ্ধারা শত্রু সেনাদের প্রবল বাধা সত্বেও বীর বিক্রমে শত্রুদের বহু ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে বিভিন্ন রণাঙ্গনে এগিয়ে চলেছেন। তাঁদের এই চলা শেষ হবে ঐদিন—যেদিন বাংলা দেশ শত্রুমুক্ত হবে। আগত ঐদিন—পূর্ব দিগন্তে উদিত হচ্ছে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য। বীর মুক্তিবাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় রণাঙ্গনসমূহে শত্রু কবলিত বহু জায়গা মুক্ত করেছেন এবং বহু খানসেনা ও তাদের তাবেদার রাজাকারকে খতম ও আহত করেছেন। শ্রীহট্ট অঞ্চলে শত্রুদের আহতদের সংখ্যা এত অধিক যে, শ্রীহট্ট হাসপাতালে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। রংপুর-দিনাজপুর-যশাের-কুষ্টিয়া প্রভৃতি জিলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল আজ মুক্তিবাহিনীর দখলে। সে সব অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে একজন এম,পি,এ, সহ ১২ জন নিহত গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জে তথাকথিত উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এম, পি, এ, সুলতান উদ্দিন ও মুসলিম লীগ দালাল আমীর হােসেন দুঃসাহসী গেরিলাদের হাতে নিহত হয়। গেরিলারা ঢাকানারায়ণগঞ্জের সমস্ত যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে কাৰ্যতঃ ঢাকাকে সমস্ত প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। গেরিলা কমান্ডােরা সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, নারায়ণগঞ্জের সাব-ষ্টেশন ধ্বংস করে দিয়েছেন। তারা এ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর পর দু’টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একজন দালাল অধ্যাপকসহ চারজনকে মারাত্মকভাবে আহত করেছেন। তাছাড়া রেডিও পাকিস্তানের একজন ইঞ্জিনিয়ার, গেন্ডারিয়ায় প্রকাশ্য হামলা চালিয়ে ৪ জন শান্তি কমিটির দালালকে গেরিলারা হত্যা করেছেন।

মেঘনায় জাহাজ ডুবি মুক্তিবাহিনীর নৌ-গেরিলারা গত সপ্তাহে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে পাক অস্ত্র বােঝাই একটি মার্কিন জাহাজ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এতে ৫ জন নাবিকের সলিল সমাধি ঘটে। এখানে।  গেরিলারা বার্মা ইষ্টার্ণ-এর তৈলের ডিপাে জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং লন্ডন ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছেন। রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গন গত সপ্তাহে এ রণাঙ্গনের চান্দিপুর, সেনপুর আকিলপুর ও হাকিমপুরে মুক্তিবাহিনীর হাতে ২৫জন খান সেনা ও রাজাকার নিহত ও ১২ জন আহত হয়। এখানে মুক্তিবাহিনীর শত্রুদের বহু অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করেন। এ রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে হানাদার পাক বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে মুক্ত করে নিয়েছেন। পার্বতীপুরে একটি ট্রেন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কোপাইনগরে মুক্তিবাহিনী ২৯জন খান সেনাকে হত্যা করেছেন। মেহেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত কুষ্টিয়া জিলার মেহেরপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ বাহিনীর সৈন্যরা এখন মেহেরপুর শহরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এখানকার কয়েকটা সংঘর্ষে বহু শত্রু সেনা ও তাবেদার রাজাকার নিহত হয়েছে। এখানে একটি বড় রকমের সংঘর্ষে পাক বাহিনীর ৩৮জন সৈন্য মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে।

সুনামগঞ্জে ৯টি থানা মুক্ত। সিলেটের সুনামগঞ্জ মহকুমার ৯টি থানা মুক্তিবাহিনী দখল করে নিয়েছেন। এতে বহু খান সেনাও রাজাকার নিহত হয়েছে। মৌলবী বাজার বিদ্যুৎ সরবারাহ কেন্দ্রটি মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দিয়েছেন। ঢাকা টেলিভিশন টাওয়ারটির মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা উড়িয়ে দিয়েছেন। আইয়ুবী আমলের যােগযােগ মন্ত্রী খান, এ সবুর খানের বাড়ীতে গেরিলারা বােমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তাছাড়া পাক সামরিক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার শামিমের দুই ছেলেকে মুক্তিবাহিনী হত্যা করায় ব্রিগেডিয়ার শামিম পাগল হয়ে গেছে। উল্লেখযােগ্য যে, ব্রিগেডিয়ার শামিমের এক ছেলে মেজর এবং অপর ছেলে অসামরিক অফিসার ছিল। | মুক্তিবাহিনী ঢাকায় দু’টি কলেজের ক্ষতি সাধন করেছেন এবং একটি পাট গুদামে আগুন লাগিয়ে বহু ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছেন। পাট গুদামে প্রহরারত অবাঙ্গালী দারােয়ানকেও হত্যা করেছেন। আজরাইলের দরবারে আরও একজন চট্টগ্রামের তথাকথিত উপনির্বাচনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত জনৈক সদস্যকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা আজরাইলের দরবারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম শহরে শান্তি কমিটির আরও একজন সদস্যকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা হত্যা করেছেন।

আমার দেশ ১:১১

১১ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯