উঠিছে অমৃত দেরী নাই আর, উঠিয়াছে হলাহল থামিসনে তােরা, চালা মন্থন
ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-রণাঙ্গন ২৭শে অক্টোবর কুমিল্লার নয়নপুরে মুক্তিবাহিনী মর্টারের সাহায্যে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে পাঁচজন শত্রু সৈন্যকে হত্যা করেন। ঐদিন গিলাতলা এলাকায় মুক্তিবাহিনীর বীর গেরিলারা অতর্কিত আক্রমণ করে তিনজন পাক সৈন্যকে নিহত করেন। জয়নগরে অন্য একটি আক্রমণ চালিয়ে দুইজন পাক সৈন্যকে হত্যা ও তিন জনকে খতম করতে তাঁরা সমর্থ হন। | ২৬শে অক্টোবর, ছাগলনাইয়ায় মুক্তিবাহিনী মাইনের সাহায্যে একটি পাকিস্তানী ট্রাক ধ্বংস করে। ঐ আক্রমণে পাকবাহিনীর সাত জন নিয়মিত সৈন্য ও পাঁচজন অনিয়মিত সৈন্যকে হত্যা করতে সমর্থ হয়। ঐ একই দিন আবুরকান্ট এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর মারাত্মক সংঘর্ষ হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। খবরে প্রকাশ। উক্ত এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত থাকে। গত ২২শে অক্টোবরে ২২ জন নিয়মিত ও অনিয়মিত শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ঘটনার পূর্বদিন মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্য বােঝাই একটি বাসের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। উক্ত আক্রমণে পাঁচজন শত্রুসেনা নিহত হয় এবং ১৫ জন আহত হয়। অসংখ্য হানাদার খতম ৩০ শে অক্টোবর, নােয়াপুরে মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসী যােদ্ধারা পাকসৈন্যদের উপর মর্টারের সাহায্যে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন শত্রুসৈন্যকে খতম করে এবং দুটি শক্তিশালী বাঙ্কার ধ্বংস করতে পেরেছে। ঘটনার পূর্বদিন ফুলগাজীতে মুক্তিবাহিনী মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ চালিয়ে আরাে ১০ জন পাকসৈন্যকে হত্যা করে। ঐ দিন একই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অন্য একটি দল গেরিলা পদ্ধতিতে তৎপরতা চালিয়ে ৫ জনকে নিহত এবং ৬ জনকে আহত করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া অক্টোবরের সাতাশ ও আটাশ তারিখে মুক্তিবাহিনীর অসম সাহসী তরুণরা অনন্তপুরে বেপরােয়া আক্রমণ চালিয়ে ১৬ জন। শত্রুসৈন্য নিধন করে এবং আরাে ১০ জনকে মারাত্মকভাবে জখম করে। ঐ আক্রমণে বাংলাদেশের। বীর সন্তানরা শত্রুদের ৩টি বাঙ্কার নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এই ঘটনার দু’দিন আগে আড়াইবাড়িয়ে মুক্তিসেনারা অন্য একটি আক্রমণ চালায়। মুক্তিযােদ্ধাদের মারাত্মক আক্রমণের মুখে হানাদার সৈন্যরা টিকে থাকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। সেই আক্রমণে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয় ও ৪০ জন গুরুতর আহত হয় এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করে। ২৮শে অক্টোবর কুমিল্লা শহরের পাশ্ববর্তী এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও দখলদার সৈন্যদের মধ্যে মুখােমুখি যুদ্ধ হয়। এই সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয় যখন পাকসৈন্যরা কোর্টবাড়ির কোতােয়ালী থানা এলাকায়।
মুক্তিযােদ্ধাদের উপর হঠাৎ আক্রমণ করে। দীর্ঘ তিন ঘণ্টার যুদ্ধে বাঙলার মুক্তিপাগল বীর যােদ্ধারা ৯৫ জন হানাদার সৈন্যদের হত্যা করেন এবং বহু সৈন্যকে মারাত্মকভাবে জখম করেন। এই যুদ্ধে। মুক্তিবাহিনীর ৪ জন তরুণ যােদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়। অস্ত্রসহ রাজাকার বন্দী কুষ্টিয়া-যশোেহর-খুলনা রণাঙ্গন মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধাগণ গােয়ালহাটের সন্নিকটে দুজন এবং কোস্তনিয়ার নিকটে পাঁচজন পাকসেনাকে হত্যা করে। এ ছাড়া যশােহর জেলার গদখালী ও নাবারুণ-এর মাঝামাঝি এক জায়গায়। রেল লাইন উড়িয়ে দিয়ে যােগাযােগ ব্যবস্থা বিছিন্ন করে দেয়। মুক্তিযােদ্ধারা চুনামকাঠির কোন এক জায়গায় ১৪টি রাইফেল সহ ১৮ জন রাজাকারকে আটক করতে সমর্থ হয়। খুলনা জেলার খাজুরা, হামিদপুর, লেবুতলা, ওসমানপুর প্রভৃতি এলাকায় হানাদার পাকবাহিনী আক্রমণ চালালে বীর মুক্তিযােদ্ধারা এর পাল্টা আক্রমণ চালায় ফলে ১৮ জন পাকসেনা খতম হয়। খুলনার শ্যামনগরের কাছে এক আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৪ জন খানসেনাকে হত্যা করে।
রেললাইন উড়িয়ে দিয়েছে ময়মনসিংহ-সিলেট রণাঙ্গন অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ময়মনসিংহ জিলার নােকলা, নলিতাবাড়ি, পূর্বধলা এবং দুর্গাপুর থানায় কয়েকটি উপর্যপুরি আক্রমণ চালিয়ে ১০ জন অনিয়মিত শত্রুসৈন্য খতম করেন এবং বেশ কিছু সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেন। ২৯শে অক্টোবর ঠাকুরকোনার নিকটে পাক টহলদার সৈন্যদলের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধারা ২ জন নিয়মিত, ৪ জন অনিয়মিত শত্রুসৈন্য হত্যা করতে সমর্থ হন। ওই দিন মুক্তিবাহিনী জামালপুর ও বাহাদুরাবাদ ঘাট এর মধ্যবর্তী এলাকায় রেললাইন উড়িয়ে দিতে সমর্থ হন। তারা ঐ সময় পাহারারত ২ জন রাজাকারকে জীবিত অবস্থায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। ২৮শে অক্টোবর মুক্তিসেনারা ধলাই চা বাগানে অবস্থানরত শত্রুসৈন্যের উপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে ১ জন ক্যাপ্টেন সহ ২১ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং তদুপরি আরাে বহু অনিয়মিত সৈন্য নিহত হয়। এই যুদ্ধে আমাদের ৩ জন বীর যােদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন। তাছাড়া মুক্তি সেনারা বারলেখা এবং কাটলিমারার মধ্যবর্তী রেল যােগাযােগ ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে পাকসেনাদের দারুণ অসুবিধার সৃষ্টি করেন। | অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ আমুরা এলাকায় মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকার ও নিয়মিত সৈন্যের সমন্বয়ে গঠিত পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ২ জন হানাদার শত্রুকে নিহত করেন। ত্রিমােহিনীতে পাক সৈন্যদের সঙ্গে আরেকটি মারাত্মক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মুক্তিযােদ্ধারা ১২ জন পাকসৈন্যকে খতম করেন। এই যুদ্ধে বাঙলা দেশের একজন তরুণ যােদ্ধা শহীদ হন।
চীনা অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গন ২৭শে অক্টোবর জগৎপুর এলাকায় মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি মিশ্র টহলদার দলের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে ৯ জন শত্রুসেনা খতম ও ৪ জনকে আহত করেন। এর আগে ২৪শে অক্টোবর একই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর হাতে ৫ জন অনিয়মিত শত্রুসেনা খতম হয় । ২৩শে অক্টোবর ভালদাও এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী সৈন্যের টহলদার দলকে আক্রমণ করে একজন খান-সেনাকে খতম করেন। একই দিনে মুক্তিযােদ্ধারা বাজুমারার কাছে পালনাখালি এলাকায় ১২টি রাইফেল সমেত ১৩জন রাজাকারকে ধরে ফেলেন। লালমনিরহাটে খানসেনাদের আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী ৫ জন শক্রসেনা খতম করে। এখানে মুক্তিবাহিনী কিছু চীনা অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করেন।
বিপ্লবী বাংলাদেশ ১ : ১২
৭ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯