ক্ষমা করা যেতে পারে—এখনাে সময় আছে
মুক্তিবাহিনীর বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি চরমপত্র ৬ই নভেম্বর, বাংলাদেশ। সংবাদ পাওয়া গেছে, বাংলাদেশে একশ্রেণীর দুষ্কৃতিকারী বাংলার নিরীহ মানুষদের উপর মুক্তিফৌজ নাম ধারণ করে নানা রকম নির্যাতন ও উৎপীড়নে অতিষ্ট করে তুলেছে। এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিফৌজের তরফ থেকে জনগণের প্রতি এক আবেদনে বলা হয়েছে মুক্তিফৌজ নামধারী এইসব ভূয়া বিশ্বাসঘাতক দুষ্কৃতকারীদের মােকাবেলায়, বাংলাদেশের জনগণকে সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালাতে হবে। এইসব মিথ্যা নামধারী মুক্তিফৌজরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভাঙ্গন ধরাবার জন্য জঙ্গী ইয়াহিয়া চক্রের প্ররােচনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদেরকে বাংলার মাটি থেকে নির্মূল করতে হবে। আবেদনে বলা হয়েছে, জনগণ যেন মুক্তিফৌজ নামধারী দুষ্কৃতিকারীদের তৎপরতায় মুক্তিফৌজের উপর আস্থা না হারায়। মুক্তিফৌজ রক্ততিলক শপথে প্রতিজ্ঞা নিয়েছে বাংলাদেশ থেকে শত্রু বিতাড়নের। বাংলার মানুষের সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধারা বেইমানী করতে পারে না কিছুতেই। আবেদনে দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়েছে, শত্রুমুক্ত বাংলাদেশ আর বেশীদূরে নয়। অচিরেই বাংলার বিপ্লবীরা বাংলাদেশ থেকে হানাদার বিতাড়িত করে দেবে। মুক্তিসেনারা শুধু হানাদার বিতাড়িতই। করবেনা, হানাদার সমর্থকদেরও বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে বাংলাকে পুত পবিত্র করে গড়ে ভূয়া মুক্তিফৌজ নামধারী দুষ্কৃতিকারীদের সতর্ক করে মুক্তি ফৌজের তরফ থেকে বলা হয়েছে। এখনাে সময় আছে, এখনাে ক্ষমা করা যেতে পারে; অতএব অবিলম্বে রাজাকার, দালাল, পাকসৈন্য সমর্থক ও ভূয়া মুক্তিফৌজ নামধারীদের মুক্তিফৌজের ঘাটিতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। না হলে এই সব বেইমানদের কেউ রক্ষা করবেনা। বাংলাদেশে জঙ্গী শাহীর সেনাদের নিধনযজ্ঞ চলছে, চলবে। ততদিন পর্যন্ত যতদিন একটিও হানাদার বেঁচে থাকবে। এরি মধ্যে মুক্তিফৌজের ক্রমবর্ধমান সাফল্যে। আতঙ্কগ্রস্ত পাকসৈন্যরা প্রাণ বাঁচাবার জন্য পালাতে শুরু করেছে। এ দেখেও কি বাংলার। বিশ্বাসঘাতকদের চৈতন্যোদয় হচ্ছে না যে, হানাদাররা নিজেরাই পালাই পালাই করছে তবে তাদের। রক্ষা করবে কারা?
বিপ্লবী বাংলাদেশ ১: ১২
৭ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯