রণাঙ্গনের খবর কিশােরগঞ্জ মুক্ত কুমিল্লায় প্রচণ্ড লড়াই
(নিজস্ব প্রতিনিধি) বেতারযােগে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মুক্তিবাহিনী এ সপ্তাহে পাক সেনাদের হটাইয়া ময়মনসিংহ জিলার কিশােরগঞ্জ মহকুমা শহরটি দখল করিয়া লইয়াছে। উল্লেখযােগ্য যে কিশােরগঞ্জ মহকুমার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল দীর্ঘদিন পর্যন্ত মুক্ত ছিল। প্রায় দুই মাস পূর্বে পাক ফৌজ উক্ত এলাকা দখল করিয়া লয় । তদবধি মুক্তিবাহিনী কিশােরগঞ্জের গ্রামাঞ্চল ও মহকুমা শহরটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাইয়া আসিতেছিল। কুমিল্লা আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাইতেছেন, ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের অতি নিকটে ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত লালমাই পাহাড়ে গেরিলারা গত ২৭শে অক্টোবর দুই কোম্পানি হানাদার সেনার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া দেড় শত জনকে খতম করে। পাঁচ জন বীর গেরিলা এই সংঘর্ষে শহীদের মৃত্যু বরণ করেন। গত ১৭ই অক্টোবর গেরিলারা হােমনা থানার শত্রু ঘাটি আক্রমণ করিয়া ১ জন অফিসার সহ ৭ জন পাক সেনা ও ৩০ জন রাজাকারকে খতম করে। গেরিলারা ৭টি স্বয়ংক্রিয় চীনা রাইফেল, ২২টি। রাইফেল, প্রচুর গােলাবারুদ খাদ্যদ্রব্য উদ্ধার করে। গেরিলাদের বিজয় উল্লসিত স্থানীয় আদিবাসী। জনগণের সহিত ঐ সব খাদ্য দিয়া একটি ভােজের উৎসব হয়।
মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর হইতে প্রচারিত সমর-বুলেটিনে প্রকাশ, গত দুই সপ্তাহে বিপুল সংখ্যক। পাক সেনা মুক্তিবাহিনীর হাতে খতম হইয়াছে। সকল রণাঙ্গনে গেরিলাযুদ্ধ তীব্রতর করা হইয়াছে। বিভিন্ন রণাঙ্গনে কয়েকটি উল্লেখযােগ্য সংঘর্ষের খবর নিচে দেওয়া হইল। ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রণাঙ্গন গত ৩০শে অক্টোবর নােয়াপুরে আক্রমণ করিয়া গেরিলারা ৬ জন শত্রু সেনাকে খতম ও ২টি বাঙ্কার ধ্বংস করিয়াছে। ২৯শে অক্টোবর ফুলগাজিতে গেরিলাদের মর্টার আক্রমণে ১০ জন শত্রুসেনা নিহত হয়। অনন্তপুরে একদিন পূর্বে গেরিলারা ১৬ জন হানাদারকে খতম ও ১০ জনকে আহত করে। ঐ সংঘর্ষে শত্রুদের ৩টি বাঙ্কার ধ্বংস হয়। ২৩শে অক্টোবর আড়াই বাড়ী এলাকায় ১৫ জন শত্রুসেনা খতম ও ৪০ জন আহত হয়। কুমিল্লার সালদা নদী এলাকার সংঘর্ষে গত ২১শে অক্টোবর এক স্থানে ৩৭ জন শত্রুসেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়, শালগড় ও শ্রীপুরে ৫০ জন শত্রুসেনা খতম হয়।
সিলেট-ময়মনসিংহ রণাঙ্গন বুলেটিনের সংবাদে জানা যায়, সিলেট ও ময়মনসিংহের ব্যাপক অঞ্চলে গেরিলারা ছড়াইয়া পড়িয়াছে এবং ক্রমেই আক্রমণ তীব্রতর করিতেছে। গত ২৮শে অক্টোবর ধলাই চা কারখানার কাছে ১ জন ক্যাপ্টেন সহ ২১ জন শত্রুসেনাকে গেরিলারা খতম করে। এই সংঘর্ষে বহু অনিয়মিত সেনা নিহত ও ৩ জন রাজাকার গ্রেপ্তার হয়। তিন জন বীর মুক্তিযােদ্ধা এইখানে শহীদ হইয়াছেন। ২৫শে অক্টোবর মুক্তিসেনারা সিলেটের গােয়াসারমাটি সেতুটি ধ্বংস করিয়াছে। বড়লেখা ও কাটালমারীর মধ্যে রেল। যােগাযােগও মুক্তিবাহিনী বিচ্ছিন্ন করিয়া দিয়াছে। রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গন গত ৩০শে অক্টোবর মােগলহাট ও গােসাইগঞ্জ হাটে ৫ জন শত্রুসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হইয়াছে। ঐ দিন পলাশবাড়ীতে ৬ জন হানাদার খতম ও ৬ জন জখম হয়। | গেরিলারা জয়পুরহাট, অমর থানা, লালমণির হাট, জঙ্গির হাট গােসানাহার ইত্যাদি স্থানে বিভিন্ন সংঘর্ষে ৩০ জনের অধিক শত্রুসেনা খতম করে। অন্যান্য খবরে প্রকাশ, মুক্তি বাহিনী যশাের জেলার সীমান্তবর্তী তিনটি চৌকি হইতে পাক হানাদারদের বিতাড়িত করিয়া দখল করিয়া লইয়াছে। এইগুলি হইতেছে নাভারন, বাহাদুরপুর, কাশিমপুর ও পাটুখালি।
মুক্তিযুদ্ধ ও ১ : ১৮
৭ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯