You dont have javascript enabled! Please enable it!

এম এ হান্নান

দেশের অন্যান্য স্থানের মত চট্রগ্রামেও ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের দিন গুলোতে অসহযোগ আন্দোলন চলে । ৩রা মার্চ পাহাড়তলী এলাকার শ্বরৈহপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জনাব খলিল উল্লাহ সওদাগরের নেতৃত্বে ছাত্র শ্রমিক ও জনগণের মিছিল পাহাড়তলী অয়ারলেস কলোনী সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে জয়বাংলা ধ্বনি সহ প্রদক্ষিণ করার সময় রেলওয়ের বিহারী শ্রমিকরা আধুনিক আধুনিক অস্ত্র দ্বারা অতর্কিতভাবে আক্রমন করে এবং অয়ারলেস কলোনী ও ফিরোজ শাহ কলোনীতে বাঙালীদের বাড়ি ঘড়ে আগুন লাগিয়ে দেয় । পাঞ্জাবী সৈন্যরা ছদ্মবেশে বিহারীদেরকে সাহায্য করে । হামলায় মিছিলকারীদের মধ্যে কয়েকজন আহত এবং কয়েকজনের মৃত্যু ঘটে ।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও খন্দকার মোস্তাক আহমদকে চট্টগ্রামে পাঠান । তাঁরা উক্ত ঘটনা স্বচক্ষে দেখেন এবং আহত ও শহীদ পরিবারবর্গকে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করেন ।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় চট্রগ্রাম জেলায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।

এম,আর সিদ্দিকী ও জহুর আহমদ চৌধুরী যুগ্ন আহবায়ক; এম, এ, হান্নান , এম, এ, মান্নান এবং অধ্যাপক মোঃ খালেদ সদস্য ছিলেন ।

অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে অর্থাৎ ২৫ শে মার্চ সমগ্র চট্রগ্রাম জেলায় সরকারী , বেসরকারী অফিস আদালত ও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে । এ সময় জেলা কমিটির উদ্যোগে চট্রগ্রাম জেলার সকল মহকুমা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয় । সংগ্রাম কমিটির মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার , জোয়ান ও আনসারদিগকে একত্রিত করা হয় এবং বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ জোগাড় করা হয় ।

২৪ শে মার্চ চট্রগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টে অবস্থানরত সোয়াত জাহাজ হতে সকাল ৮ ঘটিকার সময় পাক-সামরিক জোয়ানরা অস্ত্রপাতি ও গোলাবারুদ নামানোর কাজ শুরু করে । আমি এম, এ, হালিমের কাছ থেকে এ সংবাদ পাই । সংবাদ পাওয়ার পর আমি নিউ মোরিং পোর্টে চলে যাই ।পরে ট্রাফিক ম্যানেজার গোলাম কিবরিয়া , তদকালীন পুলিশ সুপার ও ডেপুটি কমিশনারের সাথে অস্ত্র না উঠানোর ব্যাপারে আলাপ করি কিন্তু তারা তাদের অপারগতার কথা জানান । তবে পোর্ট ট্রাস্টের শ্রমিক নেতা নবী মিস্ত্রী ও চিটাগাং স্টিল মিলের ম্যানেজার জাহেদ সাহেব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নামানোর ব্যাপারে বাধা দেয় ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সার্বিক সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন । তাক্ষণিকভাবে নবী মিস্ত্রি মাইক দ্বারা শ্রমিক ও যুবকদের যার যা আছে তা নিয়ে নিউ মোরিং পোর্টে ঘেরাও করার আহবানের সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার ছাত্র , শ্রমিক জনতা নিউ মোরিং পোর্ট ঘেরাও করে ফেলে । পাক-বাহিনীও বাধা দেয়ার জন্য কামান ও মেশিনগান তাক করে রাখে । বিকেলে অবস্থা বেগতিক দেখে ফায়ার ব্রিগেড ময়দানে উত্তেজিত জনতাকে নিয়ে একটি জনসভার আয়োজন করা হয় । উক্ত জনসভায় সালেহ আহমদ (এম,এন, এ), মোশারফ হোসেন ( এম,পি,এ ), এম, এ মজিদ (এম, এন, এ) বক্তৃতা করেন । আমি সভাপতির ভাষণ দিই । সেখানে উত্তেজিত জনতাকে চট্রগ্রাম সেনানিবাস হতে পোর্ট ট্রাস্ট পর্যন্ত পথে বেরিকেড সৃষ্টি করার আহ্বান জানানো হয়। অল্প কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার লোক শহরের ও শহরতলীর সকল পথে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে । উদ্দেশ্য হলো পাক বাহিনী কোন অবস্থাতেই যেন অস্ত্র বা গোলাবারুদ ভর্তি ট্রাক বা গাড়ি সেনানিবাসে নিয়ে যেতে না পারে । এ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমি ২৪শে মার্চ রাত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে টেলিফোনের মাধ্যমে জানাই । উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পাক হানাদার বাহিনী গুলিবর্ষণ করে। গুলিবর্ষণে প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু ঘটে । ২৪ শে মার্চ রাত্রে পাকবাহিনী বেরিকেড ভাঙ্গতে সমর্থ হয় এবং অস্ত্র বোঝাই ট্রাক নিয়ে সেনানিবাসের দিকে অগ্রসর হয় ।

২৫ শে মার্চ চট্রগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা সংগ্রাম পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয় । সে সময় সংবাদ পাওয়া গেল যে কুমিল্লা সেনানিবাস হতে একটি আর্মি কনভয় (Army Convoy) চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ।এ সংবাদ পেয়ে মিরেরশরাই থানার এম,পি, এ জনাব মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সুভপুর সেতু নষ্ট করে দেয়ার জন্য পাঠানো হলো । কিন্তু কোন Explosive না থাকায় এ প্রচেষ্টা আংশিকভাবে সফল হয় মাত্র ।

২৫ শে মার্চ রাত্রে আমরা আবার এম আর সিদ্দিকী সাহেবের বাড়ীতে চট্টগ্রামের সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মিলিত হই । রাত ১০ টার সময় শেখ মুজিবুর রহমান এম, আর , সিদ্দিকী সাহেবের নিকট একটি জরুরী সংবাদ দেন । সংবাদটির মূল বিষয়বস্তু ছিল পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা ।

তারপর আমি ও সভার সকল সদস্যবৃন্দ ডেপুটি কমিশনার সাহেবের বাংলোতে আসি এবং বঙ্গবন্ধু কতৃর্ক প্রেরিত সংবাদের কথা বলি । কিন্তু ডেপুটি কমিশনার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাঁর অক্ষমতা প্রকাশ করেন । সেখানে পুলিশ সুপার শামসুল হক সাহেব উপস্থিত ছিলেন । তিনি তাঁর আন্তরিকতা ও সহানুভূতি প্রকাশ করলেন ।

ডেপুটি কমিশনার হতে সাড়া না পেয়ে আমরা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে স্টেশন রোডস্থ রেষ্ট হাউসে আসি এবং স্থির করা হয় যে প্রতিরোধ আন্দোলনকে বাস্তবায়িত করার জন্য কয়েকজন সদস্য সমন্বয়ে এক একটি ইউনিট তৈরি করে শহরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হবে । এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্য স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হন।

রেষ্ট হাউস থেকে আমরা ই,পি,আর হেড কোয়ার্টার টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি । ই,পি,আর অফিসের হেড ক্লার্কের সাথে আমাদের টেলিফোনে আলাপ হয় । তোকে জরুরী সংবাদ ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ধারনা দেই। তার মাধ্যমে ক্যাপ্টেন রফিককেও সংবাদ ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য বলা হয় ।

কাপ্তাই ই,পি আর শাখাতেও টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয় । ক্যাপ্টেন হারুন তার পরদিন সকালেই সমস্ত শাখার জোয়ানদিগকে নিয়ে চট্রগ্রাম শহরে ক্যাপ্টেন রফিকের সাথে মিলিত হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন । পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি সকালে এসে কালুরঘাটে পৌঁছেন ।

২৫ শে মার্চ গভীর রাত্রে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট হতে টেলিফোনে আওয়ামী লীগ অফিসে বলা হয় সেনানিবাসের চারপাশে বেশ কিছু ছাত্র-যুবক ও উঠসাহী জনতাকে পাঠানোর জন্য । সংবাদ পাওয়া মাত্র মাইকযোগে সকলকে অবহিত করা হয় ।

২৬ শে মার্চ খুব সকালে আমি আতাউর রহমান কায়ছার ও এম, এ, মান্নানসহ সেনানিবাসের দিকে যাই । পথিমধ্যে পাঁচলাইশ থানার সম্মুখে বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানদিগকে দেখতে পাই । উক্ত রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান তার কোম্পানি নিয়ে কালুরঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন । এখানে আমরা জানতে পারি যে সেনানিবাসের E.B.R. সেন্টারে প্রশিক্ষনরত বাঙালি জোয়ানদিগকে রাতে পাক-বাহিনী হত্যা করেছে । আমরা কালুরঘাটে যেয়ে জানতে পারলাম যে, জিয়াউর রহমান বোয়ালখালী থানার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন । আমরা মেজর জিয়াউর রহমানকে বোয়ালখালী থানার কুসুমডাঙ্গা পাহাড়ের নিকট তাঁর জোয়ানদের সহ দেখতে পাই তাঁকে শহরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাই এবং শহর সংলগ্ন এলাকায় শিবির স্থাপন করার জন্য অনুরোধ জানাই । তবে ২৭ শে মার্চ তিনি কালুরঘাটে আসবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । কাপ্তাই হতে আগত ক্যাপ্টেন হারুন ও ১৫০ জন ই,পি,আর মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে একত্রিত হন।

কালুরঘাট হতে চলে আসার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে রেডিও মারফতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা প্রচার করতে হবে । সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ শে মার্চ কালুরঘাট ট্রান্সমিটার সেন্টার হতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণার করি । প্রচারে আমাকে সহযোগীতা করেন রেডিও অফিসের রাখাল চন্দ্র বণিক , মীর্জা আবু মনসুর , আতাউর রহমান কায়সার ও মোশাররফ হোসেন প্রমুখ এম,পি, এ ও এম, এন, এ গণ ।

২৭ শে মার্চ বিকালে মেজর জিয়াউর রহমান রেডিও মারফত স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পর ঘোষণার বক্তব্য নিয়ে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দেয় । তাই সেদিন রাত্রে আমি মীর্জা আবু মনসুর ও মোশাররফ হোসেন ফটিকছড়িতে অবস্থানরত প্রাক্তন মন্ত্রী এ, কে , খান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করি । পুনঃঘোষণার জন্য একটি খসড়া করে দেন । আমি ফটিকছড়ি হতে কালুরঘাট ট্রান্সমিটার সেন্টারে উপস্থিত হই । সেখানে মেজর জিয়াউর রহমানের নিকট আমি এ, কে, খান কতৃর্ক লিখিত খসড়াটি দেই। পুনরায় ২৮শে মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান সর্বাধিনায়ক হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ।

২৮ শে মার্চ বিকালে মেজর জিয়া তৎকালীন মেজর মীর শওকত ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্মুখযুদ্ধ পরিচালনার ব্যাপারে আলোচনা করেন । সেদিন রাত্রে চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি ১০ খানা ট্রাক ও বাস যোগাড় করি এবং সন্ধ্যার দিকে সেগুলি হস্তান্তর করি । পরিকল্পনা মোতাবেক তৎকালীন ফুলতলী বাংলা বাহিনী হেড কোয়ার্টার হতে বাংলা বাহিনীর জোয়ানগণ মীর শওকতের নেতৃত্বে রাত্রে কালুরঘাটে পৌছেঁন ।

এখানে মীর শওকত আক্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে জিয়ার সাথে পরামর্শ করেন এবং উভয়ই ফুলতলী বাংলা বাহিনীর হেড কোয়ার্টারে চলে যান। সেদিন নৌঘাঁটি আক্রমণ করা যায় নি। পরের দিন ২৯ মার্চ সকালে ফুলতলী বাংলা বাহিনীর হেড কোয়ার্টারে গেলাম । মীর শওকত ও মেজর জিয়াউর রহমানকে সেখানে পাওয়া গেল না । জানতে পারলাম এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে তাঁরা কক্সবাজার চলে গেছেন । এ সময় তাঁদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল ।

৩০ শে মার্চ পাকবাহিনী কালুরঘাট রেডিও ট্রান্সমিটার সেন্টার লক্ষ্য করে বিমান হামলা করে । সেখানে সুবেদার ছাবেদ আলী তাঁর প্লাটুন নিয়ে অবস্থান করছিলেন । বিমান হামলার পর শহরের বাংলা বাহিনীর জোয়ানগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম শহরে ই,পি আর প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে । চকবাজারে ক্যাপ্টেন হারুন, ও লেঃ শমসের মবিন চৌধুরী তাঁদের প্লাটুন নিয়ে যুদ্ধ করেন । শমসের মবিন ও ক্যাপ্টেন হারুন চকবাজার ও কালুরঘাট যুদ্ধে আহত হন । অবশ্য পাকবাহিনী শমসের মবিনকে ধরে ফেলে। এভাবে পর পর কালুরঘাট , নয়াপাড়া , কাপ্তাই পাকবাহিনীর কবলে চলে যায় । কিন্তু রামগড়, বাগানবাড়ী, খাগড়াছড়ি, চিকন ছড়া আমাদের দখলে ছিল। ২ রা মার্চ পাক-বাহিনীর তীব্র আক্রমণের ফলে রামগড়ও পাকবাহিনীর কবলে চলে যায় । বাংলা বাহিনীর সকল জোয়ান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুমে আশ্রয় নেয় । কয়েকদিনের মধ্যে হরিণা নামক স্থানে জোয়ানদের জন্য শিবির স্থাপন করা হয় । এখানে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয় । জুন মাসে হরিণা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ক্যাম্প প্রধানের দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয় । দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত আমি উক্ত শিবিরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি । তাছাড়া পূর্বাঞ্চলীয় বেসামরিক বিষয়াদি এবং সামরিক বাহিনীর লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবেও নিজ দায়িত্ব পালন করি ।

-এম এ হান্নান
(সভাপতি , চট্রগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ )
২৭ আগষ্ট, ১৯৭৩

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!