You dont have javascript enabled! Please enable it! 1976 | ডিসেম্বর’৭৫ নভেম্বর’৭৬ ঘটনা প্রবাহ | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১ জানুয়ারি ১৯৭৭ - সংগ্রামের নোটবুক

ডিসেম্বর’৭৫ নভেম্বর’৭৬ ঘটনা প্রবাহ | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১ জানুয়ারি ১৯৭৭

এ বছর, ১৯৭৬ সনের শুরু থেকেই আমাদের সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় এবং ভারতীয় বাহিনীর উদ্যোগে বারবায় হামলা চালানো হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচেছ ১৯, ২৩ ও ২৮ তারিখে ময়মনসিংহ সীমান্তে আক্রমণ। অন্যদিকে এ মাস থেকেই জাতীয় প্রতিরোধের সুসংগঠিত প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ মাসে গ্রাম পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠিত করা হয়, কাপ্তাই নৌবাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুকরা হয়। ৬৯-এর মহান গণাভ্যুত্থানের, প্রতিরোধের স্মৃতি সমৃদ্ধ ২৪শে জানুয়ারী এবং ২০শে জানুয়ারী পালিত হয়। ফেব্রুয়ারী মাসে পালিত হয় জাতীয় প্রতিরোধ ও শহীদ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারী। এর আগে জাতীয় একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন কমিটি ঘোষণা করেন—“ভাষাহীন, নিয়ন্ত্রিত শহীদ দিবস নয়, সোচ্চার ও সার্বজনীন শহীদ দিবস পালিত হবে। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে স্লোগান উঠে সীমান্ত হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও এবারের একুশে প্রতিরোধের একুশেফারাক্কার ফাঁদে বাংলার বুকে স্মশানের পদধ্বনি, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত রক্ষায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন ইত্যাদি। এপ্রিল মাসে সিলেটে জেনারেল জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে শান্তি বিঘ্নিত হলে অবশ্যই তাতে গোটা উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে। তিনি যেসব বিপথগামী যুবক বিদেশী চরদের উস্কানি ও অর্থে পৃষ্ঠ হয়ে দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করছে তাদেরকে ফেরার আহবান জানান। এদিকে এপ্রিল মাসের মধ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে সীমান্ত হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সোচচার হতে থাকে। ২০শে এপ্রিল ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার বদরকাটা সীমান্ত চৌকির উপর প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করে। ভোর পাঁচটায় গোলাবর্ষণ শুর হয় এবং তা তিন ঘন্টা ধরে চলে। আনুমানিক দুশো মর্টারের গোলাবর্ষণ করা হয় এবং তার কিছুগোলা খোদ সীমান্ত চৌকির উপর এসে পড়ে। বাংলাদেশ রাইফেলসের জোয়ানরা সে হামলা প্রতিহত করে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের এই নগ্ন হামলার বিরদ্ধে সোচচার নিন্দা এবং প্রতিবাদের পরও এ ঘটনার এ সমাপ্তি ঘটেনি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্ত হামলার ব্যাপারে কোন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান, কোন কোন সময় বিস্ময়করভাবে সীমান্ত হামলার ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেন। জুন মাসে বিডিআর এর দুটি নতুন ব্যাটেলিয়নের সমাপনী কুচকাওয়াজে ভাষণ দিতে গিয়ে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীর বলেন ৭১ সনে আমরা সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে, আর ৭৬ সন হবে আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার বছর। প্রায় একই সময়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রংপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাদশ ডিভিশনের উদ্বোধন করেন। ৯ই জন ভারতীয় বিএসএফ একান্ত সহযোগিতায় কতিপয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক অপহৃত কলমাকান্দা থানার ওসি ভারতীয় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে সপরিবারে দেশে ফেরেন। এদের সঙ্গে আরো কয়েকজন পথভ্রষ্টা তরুণ দেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। এ একই মাসে চীন সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক পথকে চীনা উপ-প্রধান মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায় চীন বাংলাদেশকে কার্যকর সমর্থন দেবে। এ মাসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নতুন কার্যালয়ের দারোদঘাটন করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বলেন—“যারা মনে করেন যে স্বাধীনতা কারুদান তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। সীমান্তে ভারতের উস্কানিমূলক তৎপরতার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে মুক্তিযোদ্ধারা উস্কানিদাতাদের তুলে নেবেন। জুন মাসের শেষের দিকে একটি শুভেচ্ছা মিশন বাংলাদেশ সফরে আসেন। বাংলাদেশ-ভারত উচচ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কোন রকম চুক্তি ছাড়াই সমাপ্ত এ বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্বদান করেন মিঃ জি পার্থ সারথী। এই বৈঠক চলাকালীন সময়েই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা মাধবপুর সীমান্তে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ২৪ জন বাংলাদেশী নাগরিককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। জুলাই মাসে সীমান্ত হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার সীমান্তে গোলমাল সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১০ই জুলাই আরেকটি ঘটনায় সশস্ত্র রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিরা বাংলাদেশ এলাকায় প্রবেশ করে সুর্ষপুরের প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর হামলা চালায়। এই হামলায় তারা মেশিনগান ও মর্টার ব্যবহার করে। কিন্তু পরে তারা পিছুহটে যায়। ২রা ও ৩রা জুলাই রাতে সংঘটিত অপর একটি ঘটনায় রাষ্ট্রবিরোধীরা বাতকচি-বারামারি এলাকাল কালাকমা গ্রামে অনুপ্রবেশ করে এবং গ্রামের উপর গুলি চালায়। কিন্তু, বিডিআর টহলদার দল তাদের সীমান্তের অপরদিকে হটিয়ে দেয়। এরপরও বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে সীমান্ত হামলা চলে বছরের শেষ পর্যন্ত। অন্যদিকে, মে মাসে গ্রাম পর্যায়ে সুসংগঠিত জাতীয় প্রতিরোধ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা দেশে ৫৭ হাজার গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠন করা হয়। ভারত ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার এ বছরও অব্যাহত রাখে। আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার পানির এই অবৈধ প্রত্যাহারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে এ সমস্যা সমাধানের জন্যে বহুউদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের একগ’য়েমীর জন্যে তা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ১৫ই জানুয়ারী ভারতের কাছে পাঠানো এক পত্রে বাংলাদেশ সরকার জানান—১৯৭৫ এর ৩১শে মের পরও বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা না করেই ফারাক্কা বাঁধের ফিডার ফ্যানেল দিয়েই পানি নিয়ে যাওয়া হচেছ। ভারত সরকারকে ১৯৭৫ সনের এপ্রিল চুক্তির মর্যাদা দিতে হবে এবং আরও পানি নিতে হলে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা করতে হবে। এর কিছুদিন পর ৩রা ফেব্রুয়ারীর বাংলাদেশ সরকার জানান, বাংলাদেশে গঙ্গার পানির উচচতা দ্রুত পুনর্বিন্যাসপাচেছ। তাতে এই আভাসই মিলছে যে ভারত বিপুল পরিমানউপদেষ্টা পরিষধপ্রত্যাহার করছে। এতে করে নদনদীর অবস্থার অবনতি অন্তর্ভুক্ত অর্থ বাংলাদেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। পত্রে বাংলায় নিযুক্ত প্রেসিডেন্টেরসাথে আলোচনা ছাড়া এমন কোন ব্যবস্থা না নেবার (অস্পষ্ট) কার্যনির্বাহী কারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয় যাতে করে বাংলায় চেয়ারম্যান হবেন এবং এই বিঘ্নিত হয়। ৬ই মার্চ ভারত সরকারকে দেয়া (অস্পষ্ট) তত্ত্বাবধায়নে সকল প্রকার এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশকে আবার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নীতি করে এমন এক উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা (অস্পষ্ট) হবে বলে সিধান্ত চনার অনুকুল হবে। বঙ্গভবনে বিদেশী কূটনীতিবিদ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশন প্রধানদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের আলোচনা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনার পর ভারতীয় দলের নেতা বিএসএফ-এর ডিরেক্টর জেনারেল অশ্বিনীকুমারের অভিমত—সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ ও বাংলাদেশ রাইফেলস-এর মধ্যে কোন সংঘর্ষ হয়নি। তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন শেষে উভয়পক্ষের যুক্ত বিবৃতি প্রকাশ। যুক্ত বিবৃতিতে দু’দেশের সীমান্তের দুর্ঘটনা, চোরাচালান, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে উভয়পক্ষই পারষ্পরিক সহযোগিতা চালিয়ে যাবে বলে প্রকাশ। সীমান্ত সম্মেলনে দু’পক্ষের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলেও বিবৃতিতে মন্তব্য প্রকাশ। দু’দেশের মধ্যকার সুষসম সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরক্তিকর ঘটনাগুলো চিহ্নিত করতে উভয়পক্ষই তাঁদের বিভিন্ন পর্যায়েয়ের অফিসারদের মধ্যে ঘন ঘন বৈঠকে সম্মত। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবলের জন্মদিনে পাঠানো এক বাণীতে প্রেসিডেন্টের আশা প্রকাশ, দু’দেশের মধ্যেকার বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে এক স্ত্রীর ভারতীয় পত্রিকার খবর সম্পর্কে বাংলাদেশের একজন, সরকারী মুখপাত্রেরজবাব—ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ‘কাল্পনিকও অতিরঞ্জিত। ৫. সাতটি সামরিক অঞ্চলের জন্য সাতজন আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসক নিয়োগের সরকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা। এই সাতটি অঞ্চলের •ঢাকা ডিভিশন, জোনের জন্য বাংলাদেশ রাইফেলস-এর ডিরেক্টর জেনারেল, চট্টগ্রাম জেলা জোনের জন্য গ্রামের নৌঘাঁটি কম্যান্ডার, পার্বত্য চট্টগ্রাম জোনের জন্য ৬৫তম ব্রিগেড কমান্ডার, খুলনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলা জোনের জন্য খুলনার নৌঘাঁটি কমান্ডরসিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলা জোনের জন্য ১৪তম ব্রিগেড কমাণ্ডার, যশোর ও কুষ্টিয়া জেল। জৈানের জন্য ৫৫তম ব্রিগেড় কমান্ডার এবং রাজশাহী ডিভিশন জোনের জন্য ৭২তম ব্রিগেড, কম্যা‘ডার। বাংলাদেশ সামরিক একাডেমীর জেন্টলম্যান ক্যাডেটদের দ্বিতীয় দলের শিক্ষাসমাপনী কুচকাওয়াজে ভাষণ দানকাল, ক্যাডেটদের প্রতি ডেপুটি চীফ অফ আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল এরশাদের আহবান স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও ব্যক্তি স্বার্থের উধের্ব উঠে জাতির স্বার্থও মর্যাদা সমুন্নত রাখুন। একই সঙ্গে তিনি আহবান জানান, রাষ্ট্রবিরোধীদের অশুভ উদ্দেশ্য নস্যাৎ করার জন্য জাতীয় ঐক্য, আত্মত্যাগ ও নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর।’ – সোহরাওয়ার্দী স্মৃতিসভায় ” ভাষণ দানকালৈ প্রেসিডেটের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপকআবুল ফজল বলেন—পরমতসহিষ্ণতাই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শান্তি ও শৃংখলা অপরিহার্য। তিনি আরো বলেন-স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে তাকে সফল করে তোলর যোগ্যতাই বড়। স্বাধীনতাকে সফল করে তুলতে যে যোগ্যতা, সততা ও আন্তরিকতার প্রয়োজন আমরা গত চার বছরে তা দেখাতে পারিনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি জনাব মঈনল হোসেন। ভারত সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে দুইসদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের দিল্লী যাত্রা। প্রতিনিধিদলের অপর সদস্য হচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিবজনাব তবারক হোসেন। বাংলাদেশের হজ্ব প্রতিনিধি দলের নেতা বিচারপতি সৈয়ন এ বি মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ আলোচনাকালে সৌদী শাহত ফওয়াজের অভিমত-বাংলাদেশেখ জনগণের প্রতি সৌদী সরকার । জনগণের গভীর সম্প্রীতি রয়েছে। ৬। ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য ব্যাপক সরকার কমসূচী গ্রহণ। সরকারী ও বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ এই দিনের অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে ১৫ই ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ও টেলিভিশনে প্রেসিডেন্টের বিশেষ ভাষণদান। ( অসাধু ও অবৈধ উপায়ে অর্থ আত্মসাত ও সরকারী কর্মচারী হিসেবে পদমর্যাদার অপব্যবহারের অভিযোগে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরী লিমিটেডের সাবেক কর্মচারী ও ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব আবদুল মান্নান এবং প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (সাসপেন্ড) জনাব মুজিবুর রহমানের বিরদ্ধে এক নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতে মামলা শুরু। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্পগবেষণাগারের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান গবেষণাগারের প্রধান ডঃ অাবদল খালেকের তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞানী আবদুল ওয়াহেদের ধূতুরার বীজ থেকে পাঁচটি এ্যালকালয়েড’ আবিষ্কার। (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ বিভাগে বিতৃত রিপোর্ট দ্রষ্টব্য) . প্রকৃত উৎপাদনকারীর নিকট থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধান-চা ক্রয় করার জন্য সরকারী নির্দেশ খাদ্য ক্রয় কর্মসচীর অধীনে পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৩ হাজার মন সংগৃহীত হয়েছে বলে সরকার ভাবে তথ্য প্রকাশ। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে গৃহিত সরকারী পদক্ষেপে সফররত । ব্যাংক অর্থনৈতিক মিশনের সন্তোষ প্রকাশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী গান্ধির সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতি দলের নেতা বিচারপতি সাত্তারের সাক্ষাত। সাক্ষাতকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জনাব তবারক হোসেন ও ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার জনাব শামসুর রহমান এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা শ্রী জি, পার্থসারথী ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রী কেওয়াল সিংও উপস্থিতছিলেন। নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শুরুদুটি অধিবেশনে সর্বমোট সাড়ে তিন ঘণ্টা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব করছেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি আবদুস সাত্তার এবং ভারতীয় দলের নেতৃত্ব করছেন ভারতের বৈদেশিক দফতরের নীতিনির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যানশ্ৰী জি, পার্থসারথী। সম্প্রতি কোলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত আলোচনার ফল সম্পর্কে বাংলাদেশ রাইফেলস-এর ডাইরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল কাজী গোলাম হস্তগীরের বক্তব্য—আমরা একমত হয়েছি যে, আমরা আর কোন মন্তব্য করব না।” সুতরাং আমি ভদ্রলোকের চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করেছি। সমািতে কোন সংঘর্ষ হয়নি বলে পিটিআই পরিবেশিত মিঃ অশ্বিনীকুমারের বক্তব্যের উপর মন্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন“আপনারা শুধুএকটি খবরের দিকে নজর রাখেন কেন? সাংবাদিক সম্মেলনের সঠিক চিত্র পাওয়ার জন্য, ‘স্টেটসম্যান’, অমৃতবাজার পত্রিকা, সত্যযুগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ‘পয়গাম ইত্যাদি বিশিষ্ট ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়েন না কেন ? কোলকাতার বিশিষ্ট দৈনিক পত্রিকাগুলোর মতে, ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা যখন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, সীমান্তে কোন সংঘর্ষ হয়, তখন পাশে বসা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা মেজর জেনারেল দস্তগীর বলে উঠেন, “কিন্তু আমি কোন প্রকার মন্তব্য করছি না ! ৭. বাংলাদেশের বৈরী শক্তিসমূহের যোগসাজশে অতঘাতি তৎপরতায় লিপ্ত মুষ্টিমেয় লোকের মতলব সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আহবান। সন্তোষে এক ধর্মীয় সমাবেশে ভাষন দানকালে মাওলানা ভাসানী উপরোক্ত লোকদেরকে ‘’দেশদ্রোহী’’ বলে আখ্যায়িত করে তার অনুসারিদের প্রতি সরকারের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। একই সঙ্গে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে তিনি সব মত ও পথের রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি গঠনমূলক কাজ করার আহবান জানান। বাঙালী জাতির ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেনবাঙালীগণ কখনো কোনো বিদেশি (অস্পষ্ট)কাছে মাথা নত করেনি, তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে অস্ত্রের ব্যবহারও বরদাশত করবে না।” শরণখোলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রচুর অস্ত্রসশস্ত্র সহ ৮ জন দুষ্কৃতকারীর আত্মসমর্পণ। পুলিশ অভিযান চালালে এরা আত্মসমর্পণ করে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা সমাপ্ত। ফিনল্যান্ড প্রজাতন্ত্রেরনতস্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে উপলক্ষে প্রেসিডেন্টের বাণী-বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী হবে।‘’ ৮, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ মোঃ ইব্রাহিম সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাষণদান প্রসঙ্গে বলেন-সরকর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে পনের শ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসপালনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সিধান্ত গ্রহণ। ভোগ্য পণ্য সংস্থাকে ভর্তুকি না দিয়ে ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে চালানোর জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এখন থেকে টিসিবি কিংবা অন্যান্য প্রস্তুতকারক সংস্থা ভোগ্যপণ্য সরবরাহ সংস্থাকে যে মাল বরাদ্দ করবে, তা বরাদ্দের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে উঠিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় নির্ধারিতকোটার মাল বেসরকারী ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক শীগগীরই জনসাধারণের সুবিধার জন্য পাঁচ শত টাকা, পঞ্চাশ টাকা ও একশ’ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়বে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ। নারায়ণগঞ্জের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীবক্ষে একটি পাট বোঝাই নৌকায় অগ্নিকাণ্ডের ফলে প্রায় দু শত মন পাই ভস্মিভূত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত সাড়ে তিন বছরের নীতি ও স্বজনপ্রীতি তদন্তের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আহবান। জনাব আমিরজ্জামান খানকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ও জনাব এহিয়া খানকে বাংলাদেশ রেডিওর মহাপরিচালকের দায়িত্বে নিয়োগ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শেষে যুক্ত ঘোষণা-সার্বভৌমত্ব, সমতা ও পারষ্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য ভারত সবকিছুকরবে। এতদুঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতা এসব দেশের জনগণের কল্যাণ ও অগ্রগতির জন্য একান্ত জরুরী বলে উভয়পক্ষের জোর মত প্রকাশ।” ঢাকা ডিভিশন জোনের জন্য বাংলা ৯. নৌবাহিনী দিবসে প্রেসিডেন্টের বাণী—“নৌবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও সমুদ্রসীমা রক্ষায় সদাপ্রস্তুত। পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমে তাদের যে রেকর্ড তা দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।” চট্টগ্রাম জেটির এক শেডে জাপান থেকে আমদানীকৃত টিসিবি’র ৪২ হাজার ২শ’ ৪ ব্যাগ সিমেন্ট জমে পাথর হয়েছে বলে টিসিবি সূত্রে প্রকাশ। নৌবাহিনী দিবসে নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কমোডর মোশার,রফ হোসেনের বাণী-“রাষ্ট্রবিরোধী দেশপ্রেমহীনদের দুরভিসন্ধি নস্যাতেসরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জাতীয় ঐক্য অটুট থাকবে এবং সশস্ত্রবাহিনী তাদের ওপর অর্পিত জাতীয় দায়িত্ব, সম্মান, মর্যাদা, দৃঢ়তা ও পক্ষপাতহীনতার সঙ্গে পালন করবে। জনগণ এটাই প্রত্যাশা করে এবং তাদের আশীর্বাদও রয়েছে আমাদের প্রতি। জাতিসংঘের ৬ষ্ঠ (লিগ্যাল ) কমিটিতে ভাষণ দানকালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি মীজা গোলাম হাফিজের মন্তব্য–সশস্ত্র সংগ্রামকালে বিপজ্জনক কাজের দায়িত্ব পালনে অ-যোদ্ধা ও বেসামরিক ব্যক্তির বিশেষ করে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য আইনসঙ্গত নীতি প্রণয়নে বিশ্বসংস্থার বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক আইনের উন্নয়ন সাধনে সবিশেষ গুরত্ব আরোপ করে এবং সশস্ত্র সংঘর্ষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বর্তমানে চালুআন্তর্জাতিক মানবিক নিয়মাবলীর সংস্কার তথা আধুনিকীকরণের উদ্যোগের প্রতিও সমর্থন জ্ঞাপন করে। শরণখোলা থানা তাফালবাড়িয়ায় আরও ৩ জন দুষ্কৃতকারীর পুলিশের নিকট আত্মসমর্পণ। ১০. বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে এম, খুরশীদের নাম ঘোষিত। প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে বঙ্গভবনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক ইনস্টিটিউটে ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্তব্য -“বাংলাদেশে সর্বপ্রকার মানবাধীকার রক্ষা করতে হবে। কারণ আমরা বাংলাদেশে এমনই এক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। নিপায় অনুষ্ঠিত প্রশাসন ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগদানকারী কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবদুল ফজলের আহবান—“আপনারা আইনের শাসন কায়েমে পক্ষপাতহীন ভাবে কাজ করুন’ শরণখোলায় পুলিশের ব্যাপক অভিযান চালানোর ফলে আরো ১৪ জন দুষ্কৃতকারীর অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ। সন্তোষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে ‘স্বাধীনতা ও সাবভৌমত্বের ওপর সম্ভাব্য হামলা, মোকাবেলার জন্য নিম্নতম কর্মসচীর মাধ্যমে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রবীণ জননেতা মাওলানা ভাসানীর আহবান। বিবৃতিতে মাওলানা বলেন, বর্তমান মুহুর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। একটি শক্তিশালী সংগঠনে সমবেত হয়ে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত প্রতিহত, অভ্যন্তরীণ শান্তিসৃংখলা প্রতিষ্ঠা, চুরি-ডাকাতি, হাইজ্যাক, রাহাজানি, গুপ্তহত্যা বন্ধ এবং সেই সঙ্গে ক্ষেতে-খামারে ও কলকারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর কাজে আত্মমনিয়োগের জন্য যুবসমাজ অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে। মওলানা আরো বলেন, আমি বৃদ্ধসক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে যুবসমাজের জাতি গঠনমূলক কাজে আমিও যুবকের মতই প্রাণে শক্তি অনুভব করি। কলেজের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের দায়ে মানিকগঞ্জ মহকুমার দরগ্রাম ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ গ্রেফতার। ১১. পাকিস্তানে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদত হিসেবে জহির উদ্দিনের নাম ঘোষিত। বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্য দফতরের উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ হুদা জাতীয় অর্থনীতির অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্যে সরকারী উদ্যোগের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা, সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজকরার জন্য বেসরকারী উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান এবং সার্জেনদের নবম কাউন্সিল সভায় চিকিৎসকদের প্রতি প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডাঃ ইব্রাহীমের আহবান “ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েটমেডিসিনকে আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলুন।” ১২. টাঙ্গাইলের গ্রামে সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ৫ ব্যক্তি অপহৃত। ১৩. পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৩৪টি দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এবং তাঁদের অব্যাহত কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে ঐসব দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছে প্রেসিডেন্ট সায়েমের শুভেচ্ছাবাণী প্রেরণ। ঈদের শুভেচছাবাণীর তালিকায় রয়েছেন মিসর, ইরাক, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সৌদী আরব, লিবিয়া, ইরান, আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানগণ, প্যালেস্টাইনী মুক্তি সংস্থা প্রধান, বাইরাইন, কাতার, মৌরিতানিয়া, সুদান, সোমালী, তিউনিসিয়া, মরক্কো, ইয়েমেন, আরব রিপাবলিক, পিপলস ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব ইয়েমেন, জর্দান, সিরিয়া, ওমান, লেবানন, তুরস্ক, নাইজিরিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজার, মালদ্বীপ, গিনি, গ্যাবন এবং উগান্ডার রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশের এবং বিশ্ববাসীর উদ্দেশে প্রেরিত এক শুভেচ্ছাবাণীতে মওলানা ভাসানী বলেন“ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমার দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে জানাই মোবারকবাদ। বাংলাদেশের মীরজাফররা এখনও ষড়যন্ত্র অাঁটছে। দুনিয়ার সর্বত্র ঈদের জামাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তাঁর সাহায্য ও পথ নির্দেশের জন্য মোনাজাত করুন। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রেসিডেন্টের নিকট একাধিক ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের শুভেচছাবাণী প্রেরণ। ঈদ উপলক্ষে পাঠানো বাণীতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত বলেন-‘পবিত্র কোরবাণীর ঈদ উপলক্ষে আপনার এবং আপনার জনগণের স্বাস্থ্য, সুখ ও সমদ্ধি কামনা করছি।” সেনাবাহিনী স্টাফপ্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানপবিত্র ঈদ উপলক্ষে এক বাণীতে জনগণকে ঈদুল আযহার ত্যাগের অনুসরণে দেশের জন্য সর্বোত্তম ত্যাগের আহবান জানান। ইরানের প্রধানমন্ত্রী জনাব আমীর আব্বাস হোবায়দা বলেন-‘’ঈদল আযহা উপলক্ষ্যে আপনার এবং বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ কামনা ও অভিনন্দন জানাতে পেরে আমি গৌরব বোধ করছি।” জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সকল সদস্যের উপস্হিতিতে কমিটির এক বৈঠকে ১০ কোটী ৭৯ লাখ ২০ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টাকার ৬টি প্রকল্প অনুমোদিত। প্রকল্পগুলো হচ্ছে—জয়দেবপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থানান্তর ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা, স্যার সলিমুল্লাহমেডিক্যাল কলেজকে নিয়মিত এম-বি-বিএস কোর্সের জন্য রূপান্তরিত করা, নার্স ট্রেনিং কোর্স প্রতিষ্ঠা, নিয়মিত স্কুল পদ্ধতিতে জনসংখ্যা শিক্ষা প্রবর্তন, কমিউনিটি মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা এবং বাংলা একাডেমীর উন্নয়ন। বাংলাদেশ ট্যানারী কর্পোরেশনের নব-নিযুক্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) এম, আর, মজমদার বলেছেন—“সরকার আগামী জানুয়ারী থেকে ২৪টির মধ্যে ১২টি ট্যানারীজ কর্পোরেশন বন্ধ করে দেবেন। কারণ এগুলো অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।” বাংলাদেশ ও পশ্চিম জার্মানীর মধ্যে একটি সাহায্য চুক্তি সাক্ষরিত। চুক্তি-বলে বাংলাদেশ পশ্চিম জার্মানীর কাছ থেকে সাহায্য বাবদ ১০ কোটী ৫০ লাখ (অস্পষ্ট) পাবে। বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ”-এর জাতীয় কমিটির সদস্যদের এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বলেন—“বাইরের সহযোগিতা লাভের প্রয়োজন থেকে মুক্তির জন্যে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করে গড়তে হবে। এ বৈঠকেই জনগণের সহযযাগিতায় স্বনির্ভর কার্যক্রমকে মহানীয় সমস্যা সমাধানের একটি কার্যকরী আন্দোলনে পরিণত করার জন্য কমিটির প্রতি উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আহবান। ১৬. জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বেতার ও . টেলিভিশনে ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্ট বলেন-“তাঁর অরাজনৈতিক ও পুরোপুরি নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচেছ—দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণ-প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।” (পূর্ন বিবরণ দ্রষ্টব্য) . পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র সচিব তবারক হোসেনের মস্কোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ। ১১ জন জুনিয়র কমিশন অফিসারকে সক্রিয় তালিকায় লেঃ পদে কমিশন মঞ্জর। অনারারী কমিশনপ্রাপ্ত অফিসাররা হচ্ছেন ; বিজেও-৮১০ রিসালদার মেজর সৈয়দ আহমদ, এসি। বিজেও২৬১৩২ সবেদার মেজর আবদুল জলিল খান, ইস্ট বেঙ্গল। বিজেও২৬২৫৫ সবেদার মেজর আবদুল মান্নান, ইস্ট বেঙ্গল। বিজেও২৬১৫৩ সুবেদার মেজর আবদুল মজিদ মিয়া, ইস্ট বেঙ্গল। বিজেও২৬১৩৬ সবেদার মেজর মোহাম্মদ নর-ল আজিম চৌধুরী, ইস্ট বেগল। বিজেও-২৬১৬৯ সবেদার মেজর আবদুল জব্বার। _ পাটোয়ারী, ইস্ট বেঙ্গল। বিজেও ৩৭৪২ সবেদার মেজর আবুল কালাম মোহাম্মদ সিদ্দিক আহমদ, আর্টিলারী। বিজেও-৬৬১৫ সবেহার মেজর আবদুল মজিদ ইঞ্জিনীয়াস। বিজেও-৫৯৫৪ সবেদার মেজর এম, এ, মান্নান, ও ইঞ্জিনীয়ার্স। বিজেও-৩৩০৫০ .. সুবেদার মেজর আবদুল মান্নান, °এএমসি। বিজেও-৪১৭৬৬ সবে- ৩ দীর মেজর আবদুল ওহাব আনসারী, ১ এসিসি। জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্টের নিকট বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বাণী। যারাশুভেচছা জানিয়ে বাণী পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন—বৃটেনের রাণী এলিজাবেথ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফোর্ড, বার্মার প্রেসিডেন্ট নে উইন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেনারেল সুহাতে. ক্যানাডার গভর্ণর জেনারেল মিঃ জুলস লেগার, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মারিয়া পেরন, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মিসেস বন্দরনায়েক। ১. জাতীয় দিবসে তিন উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং উপদেষ্টা পরিষদের সকল সদস্যসহ সাভারের জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। প্রেসিডেন্টের নিকট বাংলাদেশের জনগণের অব্যাহত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফজল এলাহী চৌধুরীর বাণী প্রেরণ। জাতীয় দিবস উপলক্ষে দুই দেশের জনগণের মধ্যেকার বন্ধুত্ব ও ফলপ্রসু, সহযোগিতা বৃদ্ধির আকাক্ষা নিয়ে প্রেসিডেন্টের নিকট সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পদগনীর অভিনন্দন বাণী প্রেরণ। জাতীয় দিবস উপলক্ষে আরো যে সব দেশের প্রধানগণ দুই দেশের বন্ধুত্ব ও বাংলাদেশের জনগণের সমৃদ্ধি কামনা করে বাণী পাঠিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছেন—ভারতের রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দীন আলী আহম্মদ, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরী গিসকার দেস্তা, ইরানের শাহান শাহ, কে জা পাহলভী, মহামান্য ৬ষ্ঠ পল,মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান টেকু ইয়াহিয়া পেটরা ইবনে আল মরহম সুলতান ইব্রাহীম, ফিলিপাইনের প্রেসিডেট ফার্ডিনান্ড মার্কোস; কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পার্ক চং হী, নেপালের রাজা বীর বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ, পোল্যাণ্ডের প্রেসিডেন্ট হেনরিখ জাবলনষ্কি, বেলজিয়ামের রাজা বদুইন, ইরানের প্রধানমন্ত্রী আমীর, আব্বাস হোবায়দা, থাই ল্যান্ডের রাজা ভূমিবল, ফিনল্যাণ্ডের প্রেসিডেন্ট মিঃ উরহো কেকোনেনকুয়েতের আমীর সাবাহ আল সালেম আল সাবাহ, লেবাননের প্রেসিডেন্ট সোলায়মান ফ্রাঞ্জি, পেরুর প্রেসিডেন্ট ফ্রন্সিস্কো মোরালেস বারমডেজ, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ দাউদ, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তুন হাজী আবদুল রাজ্জাক বিন দাতুক হোসেন ইয়াব, মঙ্গোলিয়ার ইউ মেদেনবাথ এবং মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেকু আহমদ রিটাহউদ্দিন বিন টেংকু ইসমাইল। সুন্দরবনে পুলিসের অভিযানে দুষ্কৃতকারীদের কাছ থেকে আরো একটি লঞ্চ উদ্ধার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিল্পী কামরুল হাসানের পক্ষকালব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজল শিল্পীদের কাছে সমাজসচেতন হওয়ার আহবান জানান। নয়াদিল্লীতে ও কুয়ালালামপুরে প্রবাসী বাঙালীদের ভাবগম্ভীর পরিবেশে ও অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় দিবস পালন। ১৮. রেশনে চালের ও গমের দাম যথাক্রমে মনপ্রতি ১০ টাকা ও ৫ টাকা বৃদ্ধি। সচিবালয়ে নিজ দফতরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদেরসদস্য এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, এ. জি, তাওয়াব এক সাংবাদিক : সম্মেলনে এই সরকারী সিধান্তের কথা ঘোষণা করেন। জ্ঞাতসত্রের সাথে অসংগতিপূর্ণভাবে বিষয়-সম্পত্তি অর্জনের দায়ে স্পেশাল মার্শাল ল’ কোটে বিচারের জন্য সাবেক মন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে স্পেশাল মাশাল ল’ কোর্টে বিচারের জন্য সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে পুলিশের চার্জশীট দাখিল। প্রেসিডেন্টের মুখ্য সচিবের পদে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জনাব এ, কে, এম, আহসানের নিয়োগ প্রেসিডেন্টের মুখ্য সচিব জনাব মাহবুবুল আলম চাষীকে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সচিবের পদে নিয়োগ। প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জনাব তবারক হোসেনের দু’দিন মস্কো সফর শেষে যুগপৎভাবে ঢাকা ও মস্কো থেকে যুক্ত বিবৃতি প্রকাশ । যুক্ত বিবৃতিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং এই অঞ্চলের সকল দেশের মধ্যেতথা সারা বিশ্বে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা জোরদার করে তোলার প্রতি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেউল্লেখ। বিবৃতিতে উভয়পক্ষের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতির প্রতি শ্ৰদ্ধাসহ শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের নীতির ভিত্তিতে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে এবং জোরদার করতে উভয়পক্ষের আগ্রহ প্রকাশ । ১৯. ঢাকায় যুগোলাভ বাণিজ্যপ্রতিনিধিদলের আগমন। বিমানবন্দরেসাংবাদিকদের নিকট প্রতিনিধিদলের নেতার মন্তব্য—“যুগোশ্লাভিয়া এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৬ হাজার বেল পাট কিনতে আগ্রহী। সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর। সফর উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন নেতৃবন্দের কাছে তিনি তাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে সরকারের প্রশাসন্ত্রের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার আহবান জানান। সফরকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যা মিসেস বিনীতা রায়ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। খুলনা ও চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও উপকূলীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শনকালে অফিসার ও নাবিকদের প্রতি নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কমোডর এম, এইচ, খানের ভাষণ ‘আমাদের সশস্ত্রবাহিনী ও জনগণের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশপ্রেম-বর্জিত ব্যক্তিদের হীন দুরভিসন্ধি অবশ্যই নস্যাৎ হবে। একই সঙ্গে তাঁর ব্যর্থহীন ঘোষণা—যে কোন মহল থেকেই জাতীয় ঐক্য ভাঙগার চেষ্টা আসুক না কেন, তা বরদাস্ত করা হবে না।” জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপুর্ণভাবে ধন-সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিচারের জন্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদকে ২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে প্রেরণ। আগামী ২৯শে ডিসেম্বর তার বিচার শুরু হচ্ছে। শহীদ সাংবাদিকদের আদর্শকে সমুন্নত রাখার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ সাংবাদিকদের স্মরণে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত। ২০. দেশে কৃষি সার্ভিস জোরদার করার জন্য ১৬ হাজার গ্রাম সম্প্রসারণ এজেন্ট নিয়োগের একটি বিরাট পরিকল্পনা গ্রহণের সরকারী সিদ্ধান্ত। এরা ৪ হাজার ৫৩ জন ইউনিয়ন কৃষি সহকরীর স্থলাভিষিক্ত হবেন। ইতিমধ্যেই ৫৫০ জন গ্রাম সম্প্রসারণ এজেন্টের দু’বছর ব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে বলে প্রকাশ। উক্ত পরিকল্পনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদেৱ অনুমোদন পেয়েছে এবং এতে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোট ১০ কোটী ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হবে বাংলাদেশ এক লাখ ডলারের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি পাবে বলে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার গভর্ণর বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার ১৯৭৬ সালের কারিগরী সহযোগিতা কার্যক্রমের অধীনে পাওয়া এ যন্ত্রপাতি বাংলাদেশ তার ঔষধ তৈরী, পদার্থবিদ্যা, ইলেকট্রনিক্স, কৃষি ও রিঅ্যাক্টর টেকনিকে ব্যবহার করবে। বোডের এ সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ডঃ ইন্নাস আলী। উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপুর্ণ ব্যবহারের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার গুরুত্ব আরোপের জন্য বাংলাদেশের জোর সুপারিশ। চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের ছয়টি বিধস্ত জেটি পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ কাজে অচলাবস্থা দূর করে অবিলম্বে এই কাজ সম্পন্ন করার সরকারী নির্দেশ। নির্দেশানুসারে, কাজে গাফিলতির জন্য স্থানীয় একটি কনটট্রাকশনফার্মের সঙ্গে সম্পাদিত পূর্বতন চুক্তি বাতিল ওনতুন টেণ্ডার আহবানেরর সিদ্ধান্ত। ৪ উপ-প্রধান সামরিক আইনপ্রশাসক ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানেরসভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় ৪ অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটিরবৈঠকে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭হাজার টাকার ৩টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ১ কোটী ৮৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছেজনসংখ্যা ও গ্রামীণ মহিলা সংক্রান্ত সমন্বিত গ্রাম উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি পাইলট প্রকল্প, আদমশুমারী উন্নয়ন প্রকল্প ও বাংলাদেশ পোস্টঅফিসের জন্য যানবাহন ক্রয় প্রকল্প। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৭ জন শ্রমিক প্রতিনিধির সাক্ষাত। সাক্ষাতকারীদের মধ্যে রয়েছেন—জনাব আবুল বাশার, জনাব মুস্তাফা জামাল হায়দার, জনাব নাসিম আলী, জনাব মোখলেসুর রহমান, জনাব এম, শহীদুল্লাহ, দেওয়ান সিরাজুল হক ও জনাব এম, এ, মোত্তালেব। ২১. প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় সরকারের খাদ্যনীতি ও আভ্যন্তরীণভাবে চাল ও ধান ক্রয়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা। সভায় এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার টন চাল ক্রয় করা হয়েছে বলে প্রকাশ। একটি খাদ্যশস্যবাহী মালগাড়ী লাইনচ্যুত হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকাময়মনসিংহ লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারীডিসেম্বর সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর মারফত মোট ৪৬ লাখ ৫হাজার৪ শ’ ৫৯ টন পণ্যদ্রব্য আমদানী এবং ১ লাখ ৭২ হাজার ৪ শ’ ১১ টন পণ্যদ্রব্য রফতানী হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকাশ। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এ আমদানী-রফতানী গতবারের তুলনায় ঢের বেশী। দেশে ৩ লাখ সক্রিয় যক্ষা রোগী আছে বলে বাংলাদেশ যক্ষা সমিতি প্রদত্ত হিসেবে প্রকাশ। ২২। ঢাকায় পুলিস সম্মেলন উদ্বোধনকালে সেনাবাহিনীর স্টাফপ্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আশ্বাস—“পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা ও সম্মান অক্ষম রাখা হবে। ভাষণে তিনি বলেন-কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতাইপুলিশের কর্তব্য পালনের চালিকাশক্তি হওয়া উচিত। পুলিশকে অবশ্যই নির্ভয়ে ও পক্ষপাতহীনভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।” ২৩।সিলেটে জাতীয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসচীর সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবা প্রতিষ্ঠানের কাজের যথাযথ সমন্বয় সাধনের উপায় উদ্ভাবনের জন্য ঐসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজল বলেন, পরিবার পরিকল্পনায় আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে গ্রামের জনগণকে উদ্বৃত করতে হবে। সরকার কর্তৃক চলতি অর্থবছরে দেশের ১৪২ জন সুধী, কবি, . সাহিত্যিক ও সংগীতজ্ঞ এবং ৩৪ জন ক্রীড়াবিদের জন্য ভাতা মঞ্জুর। (পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রষ্টব্য) বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে প্রকাশ, চট্টগ্রাম বন্দরে এ বছর (৭৫) জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী দেশীবিদেশী ৮১০টি জাহাজ আসাযাওয়া করেছে। বন্দরে জাহাজ অবস্থানের গড়পড়তা মেয়াদ ছিল ৭ দিন। সরকার কর্তৃক চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানীকৃত পণ্যসামগ্রী খালাসের ব্যাপারে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন। কমিটির কাজ হবে আমদানীকৃত পণ্যসামগ্রী খালাস ও অপসারণের অগ্রগতি, বন্দরের নিরাপত্তা ও বন্দর এলাকা থেকে দ্রব্যসামগ্রী চুরি রোধ ইত্যাদি ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরকারের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট প্রেরণ। ঢট্টগ্রাম শহরের ৯ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে এক বাস দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ১৭ জন আহত। তহবিল তসরূপ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগেবাংলাদেশ কৃষি উপকরণ (সার্ভিস ও সরবরাহ ) সংস্থার সেকশন অফিসার (নলকূপ) আবুল কাসেম গ্রেফতার। ২৪. প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক সম্প্রতি নিযুক্ত আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসকদের দায়িত্ব ব্যাখ্যা করে ‘আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসকদের(দায়িত্ব) আদেশ’ জারি , এ আইনের প্রধান ধারাগুলো হচ্ছে-আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক। (ক) তার এলাকায় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকদের প্রতিনিধিরূপে ক্রবেন এবং তিনি তার এলাকায় আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতিরর জন্য দায়ী থাকবেন। (খ) আইন এবং শৃংখলা সম্পর্কে ও জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিসয়ে তিনি যেকোনো অথবা সংস্থার কাছ থেকে যেকোনো রিপোর্ট চাইতে পারবেন, (গ) আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং এসব সম্পর্কিত বিষয়ের পর্যালোচনা জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট অসামরিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে মাঝে মাঝে বৈঠকে বসতে পারেন। (ঘ) কোনো ব্যাক্তি তার কাছে কোনো অভিযোগ অথবা আবেদন পেশ করলে তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং সেই অভিযোগ অথবা আবেদন সামরিক আইন প্রশাসকদের গোচরে আনার প্র্যোজন মনে করলে টা তার গোচরে আনবেন অথবা তা উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে পাঠানোর প্রয়োজন মনে করলে পাঠাবেন। (ঙ) উপ- প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকগণ তার উপড় দায়িত্ব দিলে তিনি সামরিক আইন প্রশাসক সম্পর্কিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকদের সভাপতিত্বে বঙ্গ ভবনে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। ৮ সদস্য বিশিষ্ট মিসরীয় বানিজ্য প্রতিনিধিদলের ঢাকা আগমন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করছেন মিসরের বানিজ্য ও বহির্বানিজ্যের আন্ডার সেক্রেটারি জনাব আহমদ তালাত শোকরী জনাব আল-নাহাল। বিমানবন্দরে সাংবাদিকের নিকট প্রতিনিধিদলের নেতা বলেন,মিসর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমান পাত,পাটজাত দ্রব্য,চামড়া,চা ও নিউজপ্রিন্ট ক্রয় করবে। ১নং বিশেষ সামরিক আইন
আদালত কর্তৃক মোহাম্মদ ইসহাক খন্দকার ও আফজাল হোসেন নামক দু’ব্যক্তিকে ‘৭২ সালের মার্চ মাসে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরী থেকে প্রতারণামূলকভাবে ৩ হাজার টাকা তোলার দায়ে ৬ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান। বাংলাদেশ ও নরওয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরিত। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ নরওয়ের কাছ থেকে ৭টি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় নির্মাণ এর আসবাবপত্র সংগ্রহ ও বিশেষজ্ঞদের ফি বাবদ প্রায় ৮০ লাখ ডলার পাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল কর্ণেল নুরুল ইসলাম প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার (সামরিক আইন বিষয়ক ) নিযুক্ত। সরকার আপত্তিকর পুস্তক (সংবাদপত্র ছাড়া) পরীক্ষা করে কোন পুস্তক বা প্রকাশনীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরামর্শ দানের জন্য গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন—ডঃ আহমদ শরীফ, চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ; অধ্যাপক এ, কে, এম, কবির চৌধুরী, অধ্যাপক ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ; সরদার জয়েন উদ্দিন, পরিচালক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ; আবদুল গণি হাজারী, প্রধান প্রশাসক, আলহেলাল প্রিন্টিং এণ্ড পাবলিশিং কোম্পানী লিঃ ; ডঃ মুস্তফা নরল ইসলাম, মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমী। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন ডঃ আহমদ শরীফ। তাঁর অনুপস্থিতিতে সভাতির আসনগ্রহণ করবেন প্রফেসর কবির চৌধুরী। কমিটির আহবায়ক হিসেবে কাজ করবেন সরদার জয়েন উদ্দিন। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম হড়ার বই ‘এলাটিং বেলাটিং’-এর প্রকাশনা উপলক্ষে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে আনন্দ মেলা অনুষ্ঠিত। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ কর্তৃক দেড় লাখ টাকা মূল্যের ৩৮৬ গাঁট চোরাই পাট উদ্ধার। ২৫. ৪ দিনব্যাপী জাতীয় মেডিক্যাল সম্মেলন শর। সম্মেলনে প্রেরিত বাণীতে প্রেসিডেন্টের আহবান—“জনস্বাস্থ্য বিশেষ করে পল্লী স্বাস্থ্য প্রকল্পকে সফল করে তোলার জন্য চিকিৎসকদের পুর্ন সহযোগিতা করতে হবে।” প্রেসিডেন্ট উপদেষ্টা পরিষদের ঘোষণা—“জন্ম নিয়ন্ত্রণকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য শুক্রবার, ২৬শে ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে বাড়ী বাড়ী প্রচারাভিযান শুরু হবে। এতে মোট ১২ হাজার কর্মী অংশ নেবে।” অপর উপদেষ্টা অধ্যাপক আবুল ফজল কর্তৃক সমাজের কোনায় কোনায় বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার আলো পৌছে দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহবান। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের চতুর্থ বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ৪ দিনব্যাপী ফার্মাসিউটিক্যাল প্রদশনী শুরু প্রদর্শনীতে ১২টি দেশী ও বিদেশী ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ। সরকারী পর্যায়ে ঢাকা-কায়রো বাণিজ্য আলোচনা শুরু। আলোচনায় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব করছেন বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এম, নূরুল ইসলাম এবং মিসরীয় দলের নেতৃত্ব করছেন মিসরীয় প্রতিনিধিদলের নেতা আহমদ তালাত শুকরি আল-নাহাল। রাজশাহীতে বাংলাদেশ ইঞ্জিনীয়ার্স ইন্সটিটিউশনের ২০তম বার্ষিক কনভেনশনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ মুহাম্মদ আবদুর রশীদ দেশের প্রকৌশলী সমাজকে ব্যক্তিত্ব ও মেধার সাহায্যে দেশের উন্নতির লক্ষ্যে সর্বোতভাবে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য প্রকৌশলীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন সৎও নিঃস্বার্থভাবে শোষণ এ দুর্নীতি রোধ করতে পারলেই প্রশাসন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনাদের এ মর্যাদা অক্ষম থাকবে। এই সম্মেলনে ১৫০ জনেরও দেশী বিদেশী প্রতিনিধি উপস্থিত হয়েছেন। ২৬. বাংলাদেশ ও মিসরের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার চূড়ান্ত। পর্যায়ের শুরু যুগোশ্লাভ প্রতিনিধি দলের নেতা মিঃ মারিয়ান বুদনিদ ও বাংলাদেশ পাট রফতানী কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত চুক্তি-বলে যুগোশ্লাভিয়া বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার টন পাট কিনবে। ‘সরকার কর্তৃক এয়ার ভাইসমার্শাল আবদুল করিম খোন্দকারকে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিয়োগের সিদ্ধান্ত। এ, এফ, এম, আবুল ফাতেহকে বৃটেনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিয়োগের সিদ্ধান্ত। ফাতেহ, বতমানে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মিঃ ইচিরিও ইয়সিয়কাকে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদত নিয়োগ সম্পর্কে ঢাকা-টোকিও যুগপৎ ঘোষণা। মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের সেমিনারে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা দফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আবদুস সোবহানের ঘোষণা—“আগামী বছরের শুরতে ১৩ হাজার মহিলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মী রিক্রুট করা হবে। এদেরকে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে নিয়োগ করা হবে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে অনুরূপ ধরনের একজন পুরষ পরিবার পরিকল্পনা কর্মী থাকবেন। অস্থায়ী লিবীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ বুজেইদ ওমর দরদাহ এবং লিবীয় পররাষ্ট্র দফতরের এশীয় বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল মিঃ ইব্রাহীম আলী লজের্বির ঢাকা আগমন। তাঁরা বাংলাদেশ ও লিবিয়ার মধ্যেকার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে ও ব্যবসহা গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করবেন। মিঃ এফেীন্দি নুরের বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদত হিসেবে নিযুক্তি। বাংলাদেশে নব-নিযুক্ত পোল্যা১ ণ্ডের রাষ্ট্রদূত মিঃ টেনিস ল তাগলার ঢাকা আগমন। কার্যকাল শেষ হবার প্রাক্কালে বাংলাদেশে নিযুক্ত আফগানিস্তানের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স আবদুল কাদেরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক। চীফ অব আর্মি স্টাফ ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন সমস্যা ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত। আলোচনায় বিভিন্ন দফতরের পদস্থ অফিসার ছাড়াও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সমস্যা মিসেস বিনীতা রায় পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতৃবর্গ ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যগণ যোগদান করেন। স্থানীয় জনগণের স্বার্থে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ও এর কল্যাণকর ব্যবস্থাদি ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে সভায় কতিপয় সিদ্ধান্ত গৃহীত। একই সঙ্গে স্থানীয় নেতৃবন্দের পরামর্শ কমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বহুসংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে কাজ শুর করার নির্দেশ দেয়া হয়। সভায় উপস্থিত স্থানীয় নেতৃবন্দের মধ্যে ছিলেন মং প্র; চৌধুরী, চার বিকাশ চাকমা, আনন্ট বি খিস, বি, কে, দেওয়ান এবং এ, কে, দেওয়ান। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৫ সালের সামরিক আইন (৬ষ্ঠসংশোধনী) বিধি, ১৯৭৫ সালের ৭নং বিধি জারি। এ বিধিটি ১৯৭৫ সালের সামরিক আইন বিধির ১নং বিধির সংশোধনী। এ বিধি-বলে এখন থেকে সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালতসমূহের সকল মামলার কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক যাঁর এখতিয়ারভুক্ত এলাকার মধ্যে মামলা অনুষ্ঠিত হয়েছে তাঁর কাছে পেশ করতে হবে এবং সেই আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক এর মন্তব্যসহ ঐসব কার্যবিবরণী পর্যালোচনার জন্য উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কাছে পেশ করতে হবে। পঞ্চম ও দশম অনুচেছদে “দায়রা জজ” শব্দটির বদলে “উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক” শব্দটি ব্যবহার করতে হবে। ২৭. সরকারী খাতকে দক্ষ ও গতিশীল করে গড়ে তুলতে সেক্টর কর্পোরেশনগুলোর প্রশাসকদেরকে তাঁদের সকল সম্পদ ও উদ্যোগ নিয়োজিত করার আহবান জানিয়ে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন, হদা বলেন ‘আমাদের অর্থনীতিতে সরকারী খাতের এক গুরত্বপর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকারী সেক্টরের উৎপাদনের ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়েছে। তবে এ ছ’তোয় কোনরকম লোক সান সহ্য করা যায় না। নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদত জনাব এম, এন, আই, চৌধুরীর রাজা বীরেন্দ্রবিক্ৰম শাহদেবের কাছে পরিচয়পত্র পেশ । পরিচয়পত্র পেশের সময় রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে রাজা বীরেন্দ্র বলেন, “নেপাল ও বাংলাদেশ উভয়েই জোট নিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি অনুসরণ করছে। এটা প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সমস্যার প্রতি আমাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গীরই পরিচায়কনেপালের রাজা বীরেন্দ্র বিক্রমের জন্মদিনে বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে বিদ্যমান হৃদ্যতাপূর্ণ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক আগামী বছরগলোতে আরো জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্টের বাণী প্রেরণ। ঢাকায় বাংলাদেশ ও মিসরের মধ্যে পুনরায় এক বছরের বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষরিত। চুক্তি মোতাবেক প্রত্যেক পক্ষ ১৮ কোটী ৩২ লাখ টাকার পণ্য লেন-দেন করবে। বাংলাদেশের রফতানী তালিকায় রয়েছে পাট, চা, পাটজাত দ্রব্য, কাগজ, নিউজ প্রিন্ট এবং আমদানী তালিকায় রয়েছে কাঁচা তুলা, সুতা, পিগ আয়রণ ও রকফসফেট। দু’দেশের সরকারের মধ্যেকার নোট বিনিময়ের প্রেক্ষিতে জাপান বাংলাদেশকে ৪ হাজার ৪৬৭ টন চাল কিনতে ১৩ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দেবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সদস্যদের এক আলোচনা সভায় বর্তমান বিনিয়োগ নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের প্রতি শিল্প সচিব এ, বি,এম, গোলাম মোস্তফার আহবান “দ্রুত শিল্পায়নের জন্য সরকার পুজি বিনিয়োগ হার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার সদ্ব্যবহার করুন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৫ কোটী টাকার ছ’টি প্রকল্প অনমোদিত। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচেছ-বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকল্প, ঢাকা যাদুঘর প্রকল্প, কেন্দ্রীয় গুদাম প্রকল্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এণ্ড সার্জনস, প্রকল্প ও জনসংখ্যা প্রকল্পের পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সোভিয়েত ট্রলার বহরের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ। ১৯৭২ সালের চুক্তি অনুযায়ী ১০টি ট্রলারসহ ২৪০ জন বিশেষজ্ঞ সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রেরণ করেছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষে ট্রলারগুলো বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে বিশেষজ্ঞগণ স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। ২৮. বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির খসড়া প্রস্তাব বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আর আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং তার জনগণের কল্যাণের মধ্যেই ভারতের গভীর স্বার্থ ও শক্তি নিহিত। এ প্রস্তাব চণ্ডিগড়ে কংগ্রেসের চলতি পর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বিষয় নির্বাচন কমিটির সম্মুখে পেশ করা হবে। প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, যদিও কোন দেশ তার প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতনে নিস্পৃহ ও অবিচলিত থাকতে পারে না। তথাপি ভারত বাংলাদেশের ঘটনাবলীকে সে দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে গণ্য করে আসছে। বহিশক্তি এ অঞ্চলে বিভেদ ও স্থিতিহীনতা সমিতে সক্রিয় রয়েছে এবং এ চত্রা শুর বিরুদ্ধে প্রস্তাবে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়। বাংলাদেশ হজ্ব প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে এক মাসব্যাপী সৌদী আরব সফরের পর বিচারপতি এ, বি, মাহমদের ঢাকায় প্রত্যাবর্তন। তিনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নিকট সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে বলেন–“আরব ও মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। জাতীয় প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত সভায় বাতিল ঘোষিত সংবাদপত্রের কর্মচত সাংবাদিকদের তাঁদের পেশায় পুনর্বহাল এবং সাংবাদিক বেতন বোড় কে সক্রিয় করে রোয়েদাদ ঘোষণার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চীফ অব দি ডিফেন্স স্টাফ-এর সংগঠন বিলোপ এবং মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে অবসর দান। সন্দীপ সমিতির উদ্যোগে কমরেড মুজফফর আহমদের ২য় মত্যুবার্ষিকী পালিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কবি জসীম উদ্দিন। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবদুল চলের ভাষণ—“আজকের দিনে কমরেড মুজফফর আহমদের সততা ও নিষ্ঠার আদর্শ তরুণ সমাজের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাড়াইল থানার অন্তর্গত শাহবাগ গ্রামের ইব্রাহীম ভূ’ইয়ার বাড়ীতে এক দুঃসাহসিক ডাকাতিতে : ১৬ হাজার টাকার মালামাল লুণ্ঠন । ২৯। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সঙ্গে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকদের বৈঠক ঢাকায় স্বাক্ষরিত এক চুক্তি বলে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে ৮ কোটী টাকার পাট কিনবে। বিশ্ব নারীবর্ষ প্রস্তুতি কমিটির এক সভায় ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজল বলেন—শিক্ষিত মহিলাদের চাকুরী এবং দেশের অর্থনৈতিক মানোন্নয়নে তাদের শিক্ষা কাজে লাগানোর সুযোেগ বৃদ্ধি করা সরকারের দায়িত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বোস অধ্যাপক ডঃ, আবদুল মতিন চৌধুরী ১৯৭৬ সালের পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির সদস্য মনোনীত। মন্ত্রী থাকাকালে আয়ের জানা সূত্রগুলো থেকে সামঞ্জস্যহীনভাবে সম্পত্তি অর্জন ও পদমর্যাদা অপব্যবহারের অভিযোগে প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের বিচার ঢাকার ২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে শুরু। বস্ত্রশিল্প সংস্থার কর্মকর্তাদের সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ হুদার ঘোষণা –“এখন থেকে সেক্টর কর্পোরেশনগুলো সরকার বা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ ব্যতিরেকেই এক কোটী টাকার ব্যবসা বেচা-কেনা করতে পারবে।” ৩০. বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরদের সঙ্গে এক বৈঠকে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন—’বেসরকারী খাতের বিনি, য়োগকারীদের অর্থ, উপদেশ ও সহযোগিতা দিয়ে সাহায্য করুন। একই সঙ্গে তিনি আশবাস দেন ব্যাংক পরিচালকদের বিভিন্ন সমস্যাগুলোও সরকার বিবেচনা কযরে দেখবেন।‘ এ পর্যন্ত এক লাখ টন চাল সংগহীত হয়েছে বলে খাদ্য দ্রুত সুত্রে প্রকাশ। গত বছরে এ সময়ের সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টন। সরকার ৭ই নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৪টি পত্রিকা ও সাময়িকীর মুদ্রণ ও প্রকাশনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ডিক্লারেশন নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন (সংবাদ পত্র দ্রষ্টব্য) ভারতের ধানবাদে ভয়াবহ খনি দূর্ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার জনগণের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করে ভারতের প্রেসিডেন্টের নিকট প্রেসিডেন্টের শোকবার্ত প্রেরণ। ৩১. বাংলাদেশ কোলাবোরেটস (বিশেষ ট্রাইবুনাল) আদেশ (১৯৭২ সালের ৮নং প্রেসিডেন্ট আদেশ) বাতিল করে প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ জারি। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) দৈনিক আজাদ সাহিত্যিক ‘হক-কথা’সহ ২টি দৈনিক ও ১৭টি সাপ্তাহিক ও অন্যান্য সাময়িকাকে ডিক্লারেশন দেয়ার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ঃ রুহুল আমিন ভূ’ইয়া, তার চাচা, পিতা ও দুই ভাইয়ের বেকসুর খালাস। ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে বেঅাইনী আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে এদের বিরদ্ধে বিচার চলছিল। ঃ সরকার কর্তৃক নয়া আমদানী নীতি ঘোষিত। আমদানী খাতে বরাদ্দ ৪৬৪ কোটী টাকা। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের জন্য উদার নীতিমালা গ্রহণ। জানুয়ারী ১। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী-জুন মৌসুমের আমদানী নীতি ঘোষিত। নতুন আমদানী নীতি অনুযায়ী কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানী খাতে শতকরা ৮৩ ভাগ অর্থ বরাদ্দ। অন্যদিকে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য দ্রব্যের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে শতকরা মাত্র ১৩ ভাগ টাকা। এছাড়াও সরকারী খাতে আমদানীর জন্য রাখা হয়েছে মোট আমদানীর শতকরা ৬৩ ভাগ আর বেসরকারী খাতে রাখা হয়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ। শিল্প কারখানার খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানীর জন্য বরাদ্দ ৮৩ ভাগ অর্থের শতকরা ৫৫ ভাগ আমদানী হবে সরকারীভাবে আর বাকী ৪৫ শতাংশ আমদানী হবে বেসরকারীভাবে। অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের শতকরা ১৭ ভাগের ৮ ভাগ আনা হবে সরকারী এবং ৯ ভাগ আনা হবে বেসরকারীভাবে। আমদানী বাণিজ্যের জন্য ঋণ ও মঞ্জরী বাবদ ২০৫ কোটী বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে। এছাড়াও ২৫ কোটা টাকা ওয়েজ আর্নার স্কিম ও ২২ কোটী টাকা বিনিময় বাণিজ্যের মাধ্যমে আসবে। (অর্থনীতি দ্রষ্টব্য) বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পূর্ণগঠিত জাতীয় জনসংখ্যা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সরকার কর্তৃক জনসংখ্যা বিস্ফোরণকে ১নং জাতীয় সমস্যা হিসেবে গণ্য করে একে মোকাবেলা করার দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা। একই সঙ্গে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে বাস্তবায়িত করতে সমগ্র প্রশাসনযন্ত্রকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে এক মাসব্যাপী এক বিশেষ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী শুরু। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কতিপয় নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ। এদের মধ্যে রয়েছেন–সিরাজুল হোসেন খান, মশিউর রহমান (যাদু মিয়া). আবুল বাশার, এম, এ, মুত্তালিব। তাঁরা পরে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি এ সাত্তারের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন। দেশে ব্যাপক আখ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার কর্তৃক চলতি অর্থবছরে উৎপাদন ঋণ হিসেবে ৯ কোটা টাকা বরাদ্দ। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুগার মিল কর্পোরেশন, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করবে সাড়ে সাত কোটী টাকা এবং সমবায় ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করবে দেড় কোটী টাকা। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রহত্যা মামলা সামরিক আদালতে স্থানান্তর। আদালত অল্প কিছুক্ষণ চলার পর ও ৭ই জানুয়ারী পর্যন্ত মামলার শুনানী স্থগিত। পররাষ্ট্র দফতরের ওএস-ডি মেজর জেনারেল কে, এম, শফি , উলাহ বীর উত্তম, পি-এস-সি’কে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদত প্রথম স্ক্রীনিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা শ্রম আদালতের সদস্য বিচারপতি নুরুল হুদা সামরিক আদালতের আপীল ট্রাইবুনালের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত। ২. পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট চৌধুরী ফজল এলাহীর কাছে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদত জহিরুদ্দিনের পরিচয় পত্র পেশ । পরিচয় পত্র হস্তান্তরিত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দু’দেশের পরপর ঘাথসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আলোচনা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের আরও খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করার জন্য ও জাতীয় যাদুঘরের নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজলসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।” চণ্ডীগড়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস সম্মেলনে একটি প্রস্তাবের উপর আলোচনাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী বলেন – বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর সময় তৃতীয় কোন শক্তি ভারতকে হস্তক্ষেপ না করার জন্য হুশিয়ারী দিয়েছিল। চণ্ডীগড়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের সম্মেলনে সর্দার শরণ সিং ভাষণ দেয়ার সময় বলেছিলেন“বাংলাদেশে কোন বিদেশী ঘাঁটি স্থাপন কিংবা ভারতের বিরদ্ধে আক্রমণ চালাতে বাংলাদেশের কোন এলাকা ব্যবহার করা ভারত সহ্য করবে না।” এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হলে তার জবাব—“বাংলাদেশে বিদেশী রাষ্ট্র কোন ঘাঁটি স্থাপন করেছে কিনা সে সম্পর্কে তিনি কোন তথ্য অবগত নন। সতোষহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত ‘সূচি শিক্ষা বিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে নবতিপর জননেতা ওলানা ভাসানী বলেন—“নারী মাজের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সাধন সম্ভব নয়। তেজগাঁ থানা পুলিস কর্তৃক সোনালী ব্যাংক বাওয়ানীনগর শাখার ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ার ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার। ইসলামিক সম্মেলনের সেক্তেটারী জেনারেল ডঃ আমাদ, করিম শীগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি। দু’দেশের অভিন্ন স্বার্থ বিশেষ করে কতকগুলো উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন, হুদার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ এফেয়ারস মিঃ আরভি জি চীফলের সাক্ষাত। সুন্দরবন থেকে তাড়া খেয়ে পালাবার পথে মঠবাড়িয়ায় পলিশের গলিসহ ধৃত। ৩। জয়দেবপুরে স্বনির্ভর বাংলাদেশ কর্মসচীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের শুরু সম্মেলনে প্রেরিত এক বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেন-“অথনৈতিক উন্নতি ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তিনি স্বনির্ভর কর্মসূচীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত উভয় প্রকারের উন্নতি অঞ্জনের আহবান জানান।” তিনি আরো বলেন, কৃষিই আমাদের অর্থনীতির বুনিয়াদ। সরকার কৃষি ও পল্লী উন্নয়নকে বিশেষ গুরত্ব দিয়ে বলেন, পরিকলপনা সংগঠন এবং সঠিক কর্মসচীর মাধ্যমে আমাদেরকে এই লক্ষ্যে পৌছতে হবে। সচিবালয়ে সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জ পুনরায় চালর ব্যাপারে আলোচনা। ১ এ বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন, হদাও উপস্থিত ছিলেন। পাট ও পাট শিল্প সচিব জনাব লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে বলেন—বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর বিশ্বের বাজারে মোট কাঁচা পাটের চাহিদা প্রায় ৩৪ লাখ থেকে ৪০ লাখের মত। সেখানে অন্যান্য রফতানীকারক দেশগুলো মাত্র ১২ লাখ বেল পাট সরবরাহ করতে পারবে। বাকী পাট বাংলাদেশের রফতানী করার মত ক্ষমতা রয়েছে।” বার্মার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বার্মার প্রেসিডেন্ট নে-উইনের কাছে পাঠানো এক বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেছেন—“বাংলাদেশ ও বার্মার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে আরো জোরদার ও সুসংহত হবে।” প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ ইব্রাহীম এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন– “পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে ২৬শে জানুয়ারী থেকে এক সপ্তাহের জন্যে সরকার এক প্রচারাভিযান শর করছেন। প্রচারাভি২ যানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রত্যেক সক্ষম দম্পতির কাছে পরিবার পরিকল্পনার সম্পকে আগ্রহ সৃষ্টি করে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধের মাধ্যমে প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনার শেষে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ৩ ভাগ থেকে শুন্য দশমিক দুই ভাগে নামিয়ে আনা।” মালয়েশিয়ার ছাত্র, ধর্মীয় সংস্থা ও ছোট ব্যবসায়ী কর্তৃক প্রেসিডেন্টের ত্রাণ তহবিলে ১০ হাজার মালেশিয়ার ডলার দান। প্রেসিডেন্টের নিকট এ টাকা, হস্তান্তর করেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত তা বাংলাদেশের বিদায়ী হাই কমিশনার জমির উদ্দিন আহমদ। যুবসম্প্রদায়ের প্রতি দেশপ্রেমে ও উদ্বুদ্ধ হবার জন্য মওলানা ভাসানীর আহবান। মওলানা ভাসানী মওলানা মোহাম্মদ আলীর জন্ম দিবস উপলক্ষে প্রতিষ্ঠিত মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের ছাত্র শিক্ষক ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমাবেশে ভাষণ দানকালে এ আহবান জানান। সৈয়দপুরে দুষ্কৃতকারীদের গুলীতে দুই ব্যক্তি নিহত। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন আটক। ৪। প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে ৭ই নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব দিবস হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এর পর থেকে দিনটিকে সরকারী ছুটি দিবস হিসেবে গণ্য করা হবে। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) ইরান সরকারের আমন্ত্রণক্রমে বাণিজ্য, বৈদেশিক বাণিজ্য, পরিকল্পনা এবং শিল্প বিষয়ে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ হুদার তেহরান রওয়ানা। মালয়েশিয়ায় নবনিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার মেজর জেনারেল কে, এম, শফিউল্লাহর নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করতে ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর যাত্রা। সিলেটের সারদা হলে স্থানীয় পদস্থ কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে এক বৈঠক সেনাবাহিনীর চীফ অব দি জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার মঞ্জরের ঘোষণা:“যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রের সাবভৌমত্ব রক্ষা করা হবে এবং জনপণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি একই সঙ্গে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে আন্তরিকতায় সাথে কাজ করারও আহবান জানান। তিনি বলেন, সরকারী বাংলাদেশকে সত্যিকারভাবে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ । আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সোভিয়েত দাবারু গ্র্যান্ড মাস্টার আনাতোলি লতিকভের সঙ্গে খেলায় ৪ জনের জয়লাভ। বিজয়ীরা হচেছন-জাতীয় মাস্টার কাবার আলীসহ এনাম এলাহী, আম্মানিসার ও রফিকুল হাসান। একই সঙেগ ৩০ জন দাবারুর সঙ্গে খেলতে গিয়ে গ্র্যান্ড মাস্টার ৪টি বোড়ে হারেন, ৩টিতে ড্র করেন এবং ২৩টিতে জয়লাভ করেন। প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারকে পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান করে ৬ সদস্যের একটা বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বোর্ডের সদয় দফতর হবে রাঙ্গামাটি। সরকারের অনুমোদনক্রমে মহকুমা সদর দফতর বা অপর কোন স্থানে এর আঞ্চলিক অফিস খোলারও এখতিয়ার থাকবে। ময়মনসিংহ ক্যাডেট কলেজে – বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে ডেপুটি চীফ অব আর্মি স্টাফ এবং ক্যাডেট কলেজগুলের ম্যানেজিং কমিটিসমূহের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল, এইচ এম, এরশাদের আহবান—“ব্যক্তিগত লাভক্ষতির উর্ধে থেকে জাতী স্বার্থকে তুলে ধরুন। পুলিশের হাতে প্রাক্তন মেজ এ, এইচ, জিয়া উদ্দিন আহম মঠবাড়িয়ার মাঝির চর থেকে গ্রেফতার। • মেজর জিয়া উদ্দিন সেনাবাহিনী থেকে পলাতক ছিলন এবং সুন্দরবন এলাকায় এক শস্ত্র দল গড়ে তুলে আইন-শৃংখলা পঋস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছিলেন একই সঙ্গে তার দশজন সহচরকে ১টি এল-এম-জি, ২টি এস-এল-আ ৮টি রাইফেল এবং প্রচা গোলগলীসহ পুলিশ আটক করে। গফরগাঁও থানার কান্দিপারা বাজারে এক দুর্ধর্ষ ডাকাতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ জন। বঙ্গভবনে সরকারী কর্মকর্তাদের সমাবেশে প্রেসিডেন্ট জনসংখ্যা মোকাবেলার ব্যাপারে ভাষণ রাখতে গিয়ে বলেন—’ঘরে ঘরে জন্মশাসনের বাণী পৌছে দেয়ার কাজে আপনাদের সবাইকে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান হারে জনসংখ্যা বাড়তে দেয়া হলে আগামী ২২ বছরে বর্তমানের দ্বিগুণ হবে। সমস্যাটির গভীরতা বিবেচনা করেই জন্মশাসনকে সবার উপরে স্থান দেয়া হয়েছে। সরকার এর মধ্যেই জন্মশাসন ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্থবায়নের ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টার খসড়া দিতে গিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় জনসংখ্যা পরিষদ জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণ এবং গোটা কর্মসূচীর সামগ্রিক তদারকির দায়িত্ব পালন করবে। বিভিন্ন বিভাগের সচিবরা কেন্দ্রীয় সময় কমিটিতে থাকবেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সময়ের দ্বারা উদ্ভূত সকল সমস্যার সুরাহ নিশ্চিত করবেন। মঙ্গলা বরে একটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বন্দরের পুরো বাজার ভষ্মিভূত। প্রায় কোটী টাকার মালামাল বিনষ্ট। এন-ই-সি কার্যনির্বাহক কমিটির চেয়ারম্যান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এন-ই-সি’র এক বৈঠকে ১৬৭ কোটী টাকা ব্যয়ের ৭টি প্রকল্প হাতে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে ২টি বস্ত্রকল, ১টি সুতাকল, রেলওয়ে পুনর্বাসন প্রকল্প, প্রত্যেক ইউনিয়নে মাতৃসদন, শিশুকল্যাণ এং পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক স্থাপন, আণবিক শক্তি গবেষণা কমপ্লেক্স স্থাপন ইত্যাদি। এর মধ্যে মোট বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের পরিমাণ হবে প্রায় সাড়ে ৬১ কোটী টাকা। সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন-“জন্মশাসন কাম বাস্তবায়নে অর্থের অভাব হবে না।” গ্রাম পুলিশ বাহিনীকে পুনগঠিত করার এবং এই বাহিনীর চাকুরীর অবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। একই সঙ্গে গ্রাম পর্যায়ে রক্ষীদল এবং ইউনিয়ন, থানা ও মহকুমা পর্যায়ে রক্ষা কমিটি গঠনেরও সরকারী সিধান্ত গ্রহণ। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আটিসিমরাই-এর মনোয়ার জুট মিলে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭৬২ মন পাট ভষ্মিভূত ও মিলের যন্ত্রপাতি বিনষ্ট। ভারতের রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দীন আলী আহমদ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেন বাংলাদেশের ঘটনাবলীকে আমরা পরোপরি ঐ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলেই মনে করেছি। সুতরাং কোন কোন মহল সে মিথ্য প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে রাষ্ট্রপতি আহমদ বাংদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। ৬. রামপুরা টেলিভিশন ভবনে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধানদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দানকালে সেনাবাহিনী প্রধান এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন, অচিরেই আরো সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে এবং বেকার সাংবাদিকদের চাকুরী সমস্যার সমাধান করা হবে। প্রেস ইনস্টিটিউট স্থাপনেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাতীয় বেতার ভবনের জন্য একটা স্কীম তৈরী করার কথাও তিনি বলেন। জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর উন্নতিকল্পে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার জন্য তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি অফিসার ও কর্মচারীকে তাঁদের যথাযথ ভূমিকা পালনের আহবান জানান। ” প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়িয়ে এবং প্রশাসনের মাননান্নয়ন করে প্রশাসন যন্ত্রকে, গতিশীল করে গড়ে তোলার জন্যে সিনিয়র অফিসারদের প্রতি প্রেসিডেন্ট বিচারপতি এ, এম, সায়েমের আহবান। গত দু’মাসে নেয়া সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সরকারী লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সরকারী অফিসারগণ যাতে আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে সেজন্যে তাঁদের হাতকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। সরকারী প্রশাসন যন্ত্রকে এক উপযুক্ত ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আজ আর কোন অজুহাত খাড়া করা যাবে না। এই অবস্থায় সরকারী প্রশাসনযন্ত্র একটি শক্তিশালী টিম হিসেবে কাজ করবে এবং একটি নিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল প্রশাসনযন্ত্র গড়ে তোলার জন্য সচিবগণ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) দূতাবাস খোলার জন্য, ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি পাকিস্তানী অগ্রবর্তী দলের ঢাকা আগমন। দলে পাকিস্তানী দূতাবাসের প্রথম সেক্রেটারী মোশতাক আহমদ রয়েছেন। বৈদেশিক বাণিজ্য সচিব নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নয়াদিল্লী গমন। সেখানে তাঁরা ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ-ভারত বাণিজজ্য পর্যালোচনা ও ১৯৭৬ সালের বাণিজ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন। ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীকে ডি, মালব্য লোকসভায় এক প্রশ্নের উস্বরে বলেন, বাংলাদেশের সাথে সমুদ্রসীমা সমস্যা নিষ্পত্তির ব্যাপারে , খুব একটা অসুবিধা হবে না। সিদ্ধিরগঞ্জের মনোয়ার জুট মিলের অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ কর্তৃক ৭ ব্যক্তি গ্রেফতার। প্রকাশ, অগ্নিকাণ্ডের ফলে প্রায় ১২ লাখ টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। ৭. ঢাকা-দিল্লী বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশ কর্তিক কয়লার মূল্য হ্রাস ও ঝোলা গুড় রফতানীর প্রস্তাব। ঃপররাষ্ট্র দফতরের মহাপরিচালক এম, রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দলের জোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ । তাঁদের উদ্দেশ্য—সেখানে বাংলাদেশ আবাসিক মিশন স্থাপন করা। (পররাষ্ট্র সম্পর্ক দ্রষ্টব্য) ইরানের শাহান শাহের সঙ্গে সফররত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ হুদার সাক্ষাত। সাক্ষাতকালে দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা। ৮, চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এনলাইয়ের পরলোক গমন। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) ; জাতীয় সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাসমূহের সম্পাদকদের সঙ্গে শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনাকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবুল ফজলের মন্তব্য—শিক্ষাগনকে রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। আলোচনা সভায় সম্পাদকবৃন্দ শিক্ষা কাঠামো, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে শিক্ষা ব্যবহার পুনর্বিন্যাস, বৃত্তিমুলক শিক্ষার গুরত্ব এবং উচ্চ শিক্ষায় মেধার বিশেষ প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। : ২নং সামরিক আইন আদালতে রেডক্রসের অর্থ আত্মসাতের দায়ে বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তাফার বিচার শুরু ১৯৭৬ সালের সামরিক আইনের অষ্টম সংশোধনী জারি। এই সংশোধনী অনুসারে ১৯৭৫ সালের ১লা ডিসেম্বরে যে বাড়ীর ভাড়া মাসিক এক হাজার টাকার বেশী ছিল না, সে বাড়ীর ভাড়া, বাড়ানো যাবে না। বাড়ালে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও সামরিক আইনের সমালোচনা করলে, ভয়-ভীতি সষ্টি করলে বা ক্ষতিকর কোন কাজ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে কোন একটি কাজের জন্য সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান সম্বলিত ১৯৭৬ সালের সামরিক আইন (সপ্তম সংশোধনী) বিধি জারি। ৯. চীনের পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাইয়ের স্মৃতির সম্মানে সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত। চৌ-এন-লাইয়ের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট সায়েম, জেনারেল জিয়া, মওলানা ভাসানী, মোহাম্মদ তোয়াহা, ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) হালিম চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, সিরাজুল হোসেন খান, খন্দকার মোশতাক, খান এ, সবর, অধ্যাপক মুজফফর আহমদ, মশিউর রহমান (যাদুমিয়া) ওলী আহাদ, ও আবুল বাশারের শোক প্রকাশ। ১০. চীনের পরলোকগত ‘ প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাইয়ের শেষকৃত্য উপলক্ষে ১৫ই জানুয়ারী জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে বলে সরকারী সিদ্ধান্ত। : গেণ্ডারিয়ার ডিস্টিলারী রোডে, এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত। বাংলাদেশে আণবিক শক্তি কমিশনের কর্মসূচীর ওপর আয়োজিত এক আসোচনায় কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, সাভারে প্রস্তাবিত আণবিক শক্তি গবেষণা কমপ্লেক্স নির্মাণে ৩৫ কোটও বেশী টাকা ব্যয় হবে। । বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেস বিজ্ঞপ্তি—“বর্তমানে চাল, ৫ টাকা ও ১০ টাকার সকল সিরিজের বাংলাদেশ ব্যাংক নোট বৈধরুপে চালু থাকবে। ১১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রভাবশালী সিনেটর মিঃ ম্যাক গভার্ণের সস্ত্রীক ঢাকা আগমন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে ম্যাকগভার্ণের মন্তব্য— যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ সবসময়ই বাংলাদেশের প্রতি মৈত্রীসূলভ মনোভাব পোষণ করে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে তারা খুবই আগ্রহী। ;জয়দেবপুরের সন্নিকটে সালনায় সপ্তাহব্যাপী ভেসেকটমী মেলা শুরু। জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসুচীকে জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ স্বেচ্ছা বধ্যত্বকরণ সমিতি ও স্বনির্ভর ঢাকার যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়। ঃ চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা মা দ্রুত খালাসের জন্য সরকার নিয়োজিত চট্টগ্রাম বন্দর উচ্চ পর্যায়ের কমিটির নির্দেশ। ১৩। সরকার তার প্রতিশ্রুতি পুরণের জন্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং জরুরী ক্ষমতা বিধিবলে আটক ব্যক্তিদের মামলাসমূহ প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করছেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১৮০ জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে সরকারী তথ্য বিবরণীতে প্রকাশ। ; সরকারী ব্যবস্থায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনকে চিকিৎসার জন্য লণ্ডন পাঠাবার ব্যবস্থা সম্পন্ন। : বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রশ্নে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মতৈক্য। ঃপ্রেসিডেন্ট সায়েমের সঙ্গে মাকিনী সিনেটর ম্যাকগভার্ণের সাক্ষাত। : নারায়ণগঞ্জের ইস্টার্ণ বেলিং এণ্ড কোম্পানীর পাট গুদামে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক প্রায় সাড়ে সাত হাজার বেল পাট ভূষ্মিভূত। ১৮। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দায়িত্বে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংক, সহসভাপতি মিঃ আর্নেস্ট টানের ঢাকা আগমন। ২৫শে মে বাংলাদেশ এইড গুরুপ-এর বৈঠক প্যারিসে বসছে বলে তাঁর তথ্য প্রকাশ । উল্লেখ্য, এটা হবে এইড গুরুপের তৃতীয় বৈঠক। : রংপুর-গাইবান্ধা রোডে মারাত্মক বাস দুর্ঘটনা ২ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত। , , পররাষ্ট্র দফতরের চীফ অব প্রটোকল নজরুল ইসলামকে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদত হিসেবে নিয়োগ। ঃ আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে ২২শে জানুয়ারীর মধ্যে ঢাকার ২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ। ঃ বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি খুরশিদের ঢাকা আগমন। বিমানবন্দরে তিনি বলেন”বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের জন্য আমি পাকিস্তানের জনগণের গভীর সৌহার্দ্য নিয়ে এসেছি। : মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তুন হাজী আবদুর রাজ্জাক বিন হোসেনের মৃত্যুতে মালয়েশিয়ার রাজার নিকট প্রেসিডেন্টের শোকবার্তা প্রেরণ। ১৫, ২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতের বিচারের রায়—“আয়ের জ্ঞাত উৎসের সাথে সঙ্গতিহীনভাবে সম্পত্তি অর্জনের জন্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আদালত সবসম্মত রায় নিয়ে বলেন, এটা ভাগ্যজনক যে জনাব সামাদ প্রশাসনের একটি সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে তার আয়ের উৎসের বাইরেও সম্পত্তির অধিকারী হন। এ ক্ষেত্রে অভিষককে অবশ্যই নিবর্তন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হয়। যাবজ্জীবনের চাইতে কম শাস্তি দিলে তাতে ন্যায়বিচারের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। ঃচীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এনলাইয়ের শেষকৃত্য উপলক্ষে সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত। : উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে নতুন শিল্পের জন্য ঘাটতি পুজি পুরণ (ব্রীজ ফাইনেন্সিং) ও আণ্ডার রাইটিং-এর সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ পূজি বিনিয়োগ কর্পোরেশন গঠনের সিদ্ধান্ত। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদ্স্য ডঃ এম, এন হুদী : নবতিপর বন্ধ নেতা মওলানা ভাসানী অসুস্থতার কারণে পি-জি হাসপাতালে ভর্তি হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর নুরল ইসলাম জানিয়েছেন—“তাঁর পীড়া তেমন গরুত্বর নয় : বাংলাদেশ রেডক্রসের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও তহবিল তসরূপের আরেকটি মামলা শুরু এবং একই ধরনের আরেকটি মামলার চার্জশীট দাখিল। : পাহাড়তলীর একটি গোপন অস্ত্রাগারে হানা দিয়ে পুলিশ কর্তৃক একটি বিমান-বিধ্বংসী কামান, ২৬ টি মেশিনগান টি রিকয়েললেস, গান, ১৩টি রকেট ও ১৩টি রাইফেল উদ্ধার। : পিকিংয়ে বাংলাদেশের ২, ৪, সিক মিশন খোলার উদ্দেশ্যে চার সদস্যের একটি অগ্রবর্তী ও দলের পিকিং অভিমুখে রওয়ানা। বলের ৯ নেতৃত্ব করছেন পররাষ্ট্র দফতরের ১ মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসীন। তিনি সেখানে চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব পালন করবেন। : পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তি—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে হামলা দিয়ে ৪ শতাধিক লোেক উচ্ছেদ এবং বিভিন্ন অভিযোগে ৫১ জন গ্রেফতার। ১৬। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে যাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও সময় আরও কার্যকর হয়ে ওঠে সেজন্যে প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসের জন্য সরকারের কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত। অনিয়মিত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পোস্টিং-এর কেসগুলো দেখা এবং দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশের দ্বারা পর্বের অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য যে পাঁচ সদস্যচ্চি বিশিষ্ট কমিটি নিয়োগ করা হয়েছিল তাদের সুপারিশেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাঁচ সদস্যের কমিটির সদস্যরা হলেন—কাজী আনোয়ারুল হক, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, কমোডর এম, এইচ, খান, এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, এ, জি, তাওয়াব এবং উঃ এম, এন, হুদা। কমিটি গত চার বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তের আলোকে ৯ জন সচিব, ৯ জন অতিরিক্ত সচিব ও ১৬ জন স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থাপ্রধান নিয়োগ । (মন্তব্য দ্রষ্টব্য)। ঃপ্রেসিডেন্টের নিকট বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ খুরশীদের পরিচয় পত্র পেশ। : চিকিৎসার জন্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সরকারী ব্যবস্থায় লন্ডন যাত্রা। তিনি গত ছয় মাস যাবত গুরুত্বর অসুস্থ। ঃঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর অর্থ আত্মসাতের দায়ে ফ্যাক্টরীর সাবেক কর্মচারী আফজাল হোসেন ও ডেমরা কর্ণ ফ্লাওয়ার মিলের কর্মচারী আমীর হোসেনের ৬ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড। এ বিচার অনুষ্ঠিত হয় ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালত। পৃথক পৃথক তিনটি চুক্তিতে বৃটেন একক বাংলাদেশকে ১০২ কোটী টাকার অনুদান প্রদান। ঃসরকার কর্তৃক তিনজন সরকারী অফিসারকে বেসর এবং দুইজনকে অব্যাহতি দান। অবসর প্রাপ্ত অফিসাররা হলেন—এম, এ, তাহের, জমিরুদ্দীন আহমেদ এবং এ, কে, এম, জাকারিয়া ও অব্যাহতি প্রাপ্ত অফিসাররা হলেন—ডঃ টি, হোসেন ও লেঃ মতিউর রহমান। : সঞ্চয় বৃদ্ধির জন্য ৮ বছর মেয়াদী ডিফেন্স সেভিংস সাটিফিকেট চালুর সরকারী সিদ্ধান্ত। সাটিফিকেটগুলোর মূল্য হবে যথাক্রমে—৫, ১০, ৫০, ১০০, ৫০০, ১০০০ ও ৫০০০ টাকা। : ভারতের সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী বিপিন পাল দাশ কতৃক লোকসভায় ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত খবরের সত্যতা অস্বীকার। পাশ্চাত্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের উপর মন্তব্যকালে শ্রী দাশ এ সত্যতা অস্বীকার করেন। : কাপ্তাইয়ে নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অফিসার ও জওয়ানদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান প্রসঙ্গে নৌবাহিনী প্রধান কমোডর এম, এইচ, খানের আহবান—“যে কোন মূল্যে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অফিসার ও জোয়ানদের সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক জলসীমা রক্ষায়ও সচেষ্ট থাকতে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ লেঃ কমাণ্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের নামানুসারে এই কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়। ১৭. স্বাধীনতার পর যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তাদের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের প্রশ্নটি বিবেচনা করার জন্য সরকারী সিদ্ধান্ত। যারা নাগরিকত্ব পেতে ইচ্ছুক তাদের প্রতি স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদনপত্র পেশ করার আহবান। ঃ১৯৭৪ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-এ পাস ও সাবসিডিয়ারী পরীক্ষার ফল প্রকাশ । পাসের হার শতকরা ৬.১ ভাগ মাত্র। সর্বমোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৫ হাজার ৯ গত ২৬ জন ।পাস করেছেন ৯ শত ৭৬ জন। কেউ প্রথম বিভাগ পায়নি। (শিক্ষা দ্রষ্টব্য) ঃবাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির উদ্যোগে ঢাকায় পরলোকগত চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাইয়ের মত্যুতে শোকসভা। ঃ গ্রাম, মহল্লা, ইউনিয়ন, থানা এবং মহকুমা পর্যায়ে গঠিত গ্রাম প্রতিরক্ষা দল/ডিফেন্স কমিটি জাতীয়, বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। : জাতীয় অর্থনৈতিক কাউ ন্সিলের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক আনুমানিক ৩৯ কোটী টাকার একটি মাছ প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প অনুমোদিত। ১৮. আবুজর গিফারী কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত হযরত আবুজর গিফারীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক সেমিনারে মওলানা ভাসানী বলেন, দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং তাদের চরম ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। হযরত আবুজর (রাঃ)-এ স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক। সবসময় তিনি জনগণের স্বার্থের সেরা খেদমতগার ছিলেন। হযরত আবুজর (রাঃ)এর ছিলেন রসুললাহর, (দঃ) এ একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবী । ঃডেমরার মনোয়ারা জুট মিলে মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার অগ্নিকাণ্ড। :ইউ-এস এইডের এশিয়া বিষয়ক সহকারী প্রশাসক মিঃ আর্থার গার্ডিনারের ৬ দিনের সফরে ঢাকা আগমন। : কুমিলা ও নারায়ণগঞ্জে যথাক্রমে-৭-৫৫ মিঃ ও ৮টায় মৃদু কম্পন অনুভুত। কোন ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি। : যশোর জেলা কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী স্থানীয় টাউন হল ময়দানে শুরু ১৯. চীনে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে এম, মোমিনের নিযুক্তি। তিনি এর আগে কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঃকানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে এম, এ, রহমানকে নিয়োগের জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এম, এ, রহমান এর আগে মিসরে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঃঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শামস-উল হকের সঙ্গে আলোচনাকালে জেনারেল জিয়া বলেন—“বিশ্ববিদ্যালসমূহের পবত্রিতা অক্ষুন্ন রাখার উপর সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিছুসংখ্যক অছাত্র এমনকি সুনির্দিষ্ট ফৌজদারী অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যাদেরকে খুজছে, এমন কতিপয় লোকও ছাত্রাবাসগুলোতে বাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা কম করছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা এদের বিরুদ্ধেই ছিল। চারদিনের এক সরকারী সফরে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আনোয়ারুল হকের বেলগ্রেডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ । তিনি সেখানে বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দু’দেশের মধ্যেতার দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। ; সৌদী আরবে বাংলাদেশ দুতাবাসের মিনিস্টার চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স রিয়াজুল করিমের সৌদী পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহজাদা সৌদ আল ফয়সনের কাছে পরিচয় পত্র পৈশ। । ঃটাগাইল সদর থানার অন্তর্গত হাতিলা গ্রামের চারজন যুবককে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা। ২০. প্রেসিডেন্ট কর্তৃক চোরাচালানের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে সামরিক আইন বিধির সংশোধন। এ বিধির নাম হবে ১৯৭৬ সালের সামরিক আইন (নবম সংশোধনী) বিধি। এ বিধি অনুসারে চোরাচালানের জন্য শান্তির মধ্যে জরিমানা, সম্পত্তির বাজেয়াফতকরণ সহ সর্বোচ্চ শাস্তি মত্যুদণ্ডও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। : সর্বাধিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় মোট ১০৬ মাইল রাস্তা নির্মাণের জন্য সরকারের সিদ্ধন্ত গ্রহণ। চলতি আর্থিক বছরে এ কাজের বরাদ্দ হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশে পাঁচ দিনের সফর শেষে দেশে ফেরার প্রাক্কালে পঃ জার্মানীর সংসদ সদস্য ডঃ জে, জি, টোডেন হারের মন্তব্য—“বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু পরিবর্তন এখানে বিদেশী পুজি বিনিয়োগে সাহায্য করবে।” ঃজাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অতিরিক্ত ৫ কোটী ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ। এ টাকা ব্যয় হবে ছাত্রাবাস নির্মাণ, খেলাধুলা ও ওঅবসরবিনোদন এবং মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি দেয়ার জন্য। ঃ যথাযথ মর্যাদার সাথে আসাদ দিবস উদযাপন। এ উপলক্ষে ‘আসাদ দিবস উদযাপন কমিটি কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-এস সি’তে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয় । ২১। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬ সালের সামরিক আইন (দশম সংশোধনী) বিধি জারি। বিধি অনুসারে পরিত্যক্ত গাড়ীসমূহকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি বিধান করা হয়েছে। । সফররত বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারী মিঃ এইচ, এ, এইচ, কোটাজিসহ বাংলা, দেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার স্মলম্যানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত। ২২। উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকদের উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি এ, সাত্তারের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবন্দের সাক্ষাত। বৈঠকে জাতীয় ঐক্য সঙ্গহতি সুসংহত করার জন্য নয়া ব্যবস্থাবলী পর্যালোচনা করা হয়। উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন, আতাউর রহমান খান, আবদুস সবুর খান, ডঃ আলীম আল রাজী, মশিউর রহমান,নূরূর রহমান, হাজী মোহাম্মদ দানেশ, সিরাজুল হোসেন খান, ওলী আহাদ, ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল হালিম চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ, সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া), মওলানা সিদ্দিক আহমদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মিসেস আমেনা বেগম প্রমুখ। : দুই লাখ টাকা ব্যয়ের বাড়ীর জন্য পাঁচ বছরের কর পরিশোধ করতে হবে না বলে সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। । ঃপরনো ঢাকায় নবরায় লেনে একটি পুরনো বাড়ী ধসে ২ জন শ্রমিকের মৃত্যু। : বরিশালের বানরীপাড়া থানার চৌধুরীপাড়া গ্রামের একজন স্কুল ছাত্রকে স্থানীয় সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালত কর্তৃক ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান। তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ হচ্ছে একটি বেআইনী রাইফেল ও গোলাগুলী বাংলাদেশে চীনের দুতাভাস স্থাপনের সুন্য চীনা চার্জ দ্য এসেসার্স মিঃ নও পিঙ্গের নেতৃত্বে ১৯-সদস্য বিশিষ্ট একটি চীনা অগ্রবর্তীদলের ঢাকা আগমন রাখা। ; প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬সালের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স জারি। এই অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য একটি পৃথক পুলিশ বাহিনী গঠিত হবে এবং বাহিনীর প্রধান হিসেবে থাকবেন একজন পুলিশ কমিশনার। (মক্তব্য দ্রষ্টব্য) ২৩. বাংলাদেশে গণচীনের দুতাবাস স্থাপনের জন্য ৯ সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দলের ঢাকা আগমন। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন চীনা চাজ দ্য এ্যাফেয়ার্স মিঃ মও পিং। বিমানবন্দরে মও পিং বলেন-“বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ফলে দুই দেশ ও জনগণের বন্ধুত্ব আরো জোরদার হবে।” ; বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জরুরী । ক্ষমতা বিধিবলে আটক আরও ১৫৮ জনের মুক্তিলাভ। সরকার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এদের কেসসমূহ পর্যালোচনা করে মুক্তি দিয়েছেন। অন্যদের গুলোও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। : প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নাগরিকত্ব সম্পর্কে ১৯৭৬ সালের দ্বিতীয় ঘোষণা (চতুর্থ সংশোধনী) জারি। এই ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন মোতাবেক নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। ঃ সরকার কর্তৃক অধুনালুপ্ত জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য শ্রী চিত্তরঞ্জন সুতারের পাসপোর্ট বাতিল। ঃঅস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার এস, এ, এম, এস, কিবরিয়াকে জেনেভায় জাতিসংঘের ইউরোপীয় সদর দফতরে স্থায়ী প্রতিনিধি (রাষ্ট্রদূত) হিসেবে নিয়োেগ। ঃ শিল্প দফতরের সচিব এ, বি, এম, গোলাম মোস্তফাকে তথ্য ও বেতার দফতরের সচিব হিসেবে নিয়োগ। ঃ সাবেক মন্ত্রী জনাব এ, কে, এম, হাফিজীনকে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেধে নিয়োগ। তিনি শিল্প দফতরের দায়িত্বে থাকবেন। ঃবাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন ,রাষ্ট্রদূত মিঃ ডভিস ই, বোস্টার ও সোভিয়েত রাষ্ট্রদত মিঃ অাঁদ্রে ফেমিনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডাঃ ইব্রাহীমের সঙ্গে সাক্ষাত। তাঁরা উভয়েই বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী সম্পর্কে আলোচনা করেন। : নেত্রকোণা মহকুমার বারোমারী সীমান্ত চৌকি ও দুর্গাপুর থানার উপর দুষ্কৃতকারীদের হামলা প্রতিহত। বিডিআর, আনসার ও স্থানীয় জনসাধারণ এ হামলা প্রতিহত করে। ২৪। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও স্বনির্ভর কর্মসূচীতে সমন্বয় সাধনের জন্য নব-গঠিত বাংলাদেশ স্বনির্ভর জাতীয় কমিটির প্রতি প্রেসিডেন্টের আহবান। স্বনির্ভর জাতীয় কমিটির সদস্যবর্গদের সঙ্গে বঙ্গভবনে আলোচনাকালে প্রেসিডেন্ট এ আহবান জানান। । ঃদেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসমূহেই ছেড়া নোট বদলানো যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত। ঃসরকার কর্তৃক চট্টগ্রাম বিশববিদ্যালয়ের ছাত্রদের খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নের জন্য পাঁচসালা পরিকল্পনার বাইরেও ১ কোট ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ। ঃবিধিবদ্ধ রেশনিং এলাকার বাইরে নিয়মিত শিল্প শ্রমিক এবং কর্মচারীদের চাল ও গম দেবার জন্য সরকারের সিধান্ত গ্রহণ। ঃস্বনির্ভর বাংলাদেশের নবগঠিত জাতীয় কমিটির প্রতি জেনারেল জিয়ার দৃঢ় আশ্বাস-~সরকার স্বনির্ভর বাংলাদেশ কার্যক্রমে সর্বাত্মাক সমর্থন ও সহযোগিতা করবেন । : প্রেসিডেন্ট কর্তৃক উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের দফতর পুনর্বন্টন। ঃবাংলাদেশ-সোভিয়েত ইউনিয়ন কূটনৈতিক সম্পর্কে চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত অাঁদ্রে ফোমিন বলেন—পারস্পরিক সাবভৌমত্বের প্রতি শ্ৰধাশীল এবং – কারো আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে উভয় দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর দৃঢ় হবে : বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স মি: মও পিং কর্তৃক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব তোবারক হোসেনের কাছে পরিচয় পত্র পেশ । ২৫। ভারতের ২৬তম প্রজাতন্ত্রদিবস উপলক্ষে ভারতের প্রেসিডেন্ট জনাব ফখরুদ্দীন আলী আহমদের নিকট প্রেরিত বাণীতে প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেন-“বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব, সমঝোতা ও ফলপ্রস, সহযোগিতা দু’দেশের জনগণের পারস্পরিক কল্যাণে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। ২৬। ১২ হাজার পরিবার কল্যাণ কর্মীর দেশের বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক অভিযান শুরু। দেশের বর্তমান জন্মহার শতকরা ২.৮ ভাগকে শুন্যে নামিয়ে নিয়ে আসার সরকারী সিধান্ত মোতাবেকই এ অভিযান শুরু করা হয়েছে। ঃ ঢাকায় সকল সরকারী অফিসে নয়া সময়সূচী চালু নতুন সময়সূচী হবে ৭-৩০টা থেকে ২টা। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) ঃদেশের বিভিন্ন এলাকায় বাছাই করা পাঁচ শ’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক লাখ ছাত্রের জন্য তিন মাসব্যাপী কাগন কোর্স শুরু।কোর্স বাস্তবায়নে ব্যয় হবে চার লাখ টাকা। ঃসোনার গহনাতে দু’রতির বেশী খাদ ব্যবহার না করার জন্যে সরকারী নির্দেশ। এই নিষেধ অমান্যকারীকে শাস্তি দেয়া হবে। ঃ পাম্প ও নলকূপ সেচ গগ্রুপের কৃষকদের জন্য আগামী ১লা ফেব্রয়ারী হতে ডিজেল তেলের দাম প্রতি গ্যালন ৫০ পয়সা হ্রাস। ঃ প্রথম অগ্নিকাণ্ডের দেড়দিন অতিক্রম না করতেই টঙ্গীর নিশাত জুট মিলের আরেকটি অগ্নিকাণ্ড। অগ্নিকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ পাট ভষ্মিভূত! ঃচীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স এম, মোহসীন কর্তৃক চীনের সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ হানি নিয়েন লং-এর কাছে পরিচয় পত্র পেশ । ঃ জোরজবরদস্তি ও কারচুপি করে এখন পর্যন্ত দখল করে রাখাবিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়ীঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেখোঁজ-খবর দেয়ার জন্য জনসাধারণের নিকট সরকারের অনুরোধ। ঃ ২ হাজার ৪ শ’ ঝুমচাষী পরিবারকে পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিক পুনর্বাসন দেয়ার জন্য সরকারের ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ। চার বছর ব্যাপী এ পুনার্বাসন চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে। কর্মসচী অনুযায়ী এসব পরিবারকে ১৪ হাজার ৪ শ’ একর জমি বিনামূল্যে দেয়া হবে। আগের একটি স্কীমে ১৭২৫টি পরিবারকে পুনার্বাসিত করা হয়েছে। ২৭. মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মেজর জেনারেল কে, এম. শফিউল্লাহর পরিচয় পত্র পেশকালে মালয়েশিয়ার রাজা বলেছেন—“জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির স্বার্থে বাংলাদেশ যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে তার দেশ বিশেষভাবে উৎসাহিত। ঃবাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ভারতেও তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কাজেই ভারত সমৃদ্ধিশালী, স্থিতিশীল ও সপ্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চায়। ভারতের লোকসভায়ভাষণদান প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াই চ্যাবন একথা বলেন। ঃখুলনার দৌলতপুরে দু’জন দুষ্কৃকারীর কাছ থেকে নগদ অর্থ,একটি রিভলবার এবং একটি সাইকেল উদ্ধার। প্রকাশ, এরা স্থানীয় একটি রেশন দোকান থেকে ১২ হাজার টাকা ছিনতাই করে পালাচ্ছিল। ঃবঙ্গভবনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও বিভাগের সচিব এবং গুরত্বপুর্ণ কর্পোরেশনসমূহের প্রধানদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্ট বলেন– জাতীয় চাহিদা পূরণ এবং কার্যক্রমের বাস্তবায়নের জন্য এক সুদক্ষ এবং কার্যকর প্রশাসন অপরিহার্য। সেই প্রশাসনকে হতে হবে সুশৃংখল, দায়িত্বশীল, কর্তব্যেপরায়ণ এবং গতিশীল। যে কোনরকম প্রশাসনি অবহেলা বাবিলম্ব হবে ক্ষমাহীন।‘ ঃ সরকার কর্তৃক চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য প্রেসিডেন্ট পুরস্কারের সিধান্ত। এ পুরস্কার প্রতি বছরই দেয়া হবে। (চলচ্চিত্র দ্রষ্টব্য) ঃ কল্যাণপুরের কাছে মীরপূর রোডে এক মারাত্মক বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন আহত। : প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি এ সাত্তারের চারদিনের মিসর সফর উপলক্ষে ঢাকা ত্যাগ । ২৯। মীজ। গোলাম হাফিজকে চেয়ারম্যান ও এনায়েতউল্লাহ খানকে সম্পাদক করে ঢাকায় ২১শে ফেব্রয়ারী উদযাপনের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন। ঃ প্রায় তিন শ’ যাত্রী বোঝাই . একটি লঞ্চের চাঁদপুরের অদূরে সলিল সমাধি। ঃসরকার কর্তৃক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক কোট আটচল্লিশ হাজার টাকা বরাদ্দ। ঃ চারটি দৈনিক এবং নয়টি সাপ্তাহিক ও সাময়িকীকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ডিক্লারেশন বের করার জন্য সরকারের অনুমতি প্রদান। (সংবাদপত্র দ্রষ্টব্য) ঃ বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, এ, জি, তাওয়াবের সাম্প্রতিক লিবিয়া সফরকালে দুইদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার করার ব্যাপারে আলোচনা। ঃস্থানীয় রফরতানীকারকদেরপ্রতি বানর রফতানীর জন্য সরকারের অনুমতি প্রদান। ঃসুপ্রীম কোর্ট বার সমিতিরভবনের উদ্বােধন অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বলেন–“দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বর্তমান সরকারের অন্যতম মূল লক্ষ্য। বিচার ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রশ্নটিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে আইনজীবীদেরও ভূমিকাআছে। ঃজলমন মোটরলঞ্চ“এম-এ তিব্বত’-এর খোল থেকে ১৬ টি লাশ উদ্ধার। ঃআয়ের জ্ঞাতসূত্রের সাথে অসঙ্গতিপূর্নসম্পত্তি অর্জনেরঅভিযোগে সামরিক আদালতে বিচারের জন্য শেখ আজিজের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্তৃক চার্জশীট দাখিল । ঃ ঢাকা কলেজের জন্য সরকার কর্তৃক অতিরিক্ত ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ। ঃ চাঁদপুরের নৌ-পলিশ কর্তৃক একটি লঞ্চ থেকে ১টি স্টেনগানসহ ১১জন ডাকাত গ্রেফতার।
ফেব্রুয়ারী
১. ঢাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনীর উদ্বোধন। অনুষ্ঠানে জেনারেল জিয়া বলেন-“সকল শ্রেণীর নাগরিকের স্বার্থে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করুন।” : পোস্টকার্ড ও খামের দাম বৃদ্ধি। ঃ ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর ও নেত্রকোণা সফরের উদ্দেশ্যে মওলানা ভাসানীর সন্তোষ ত্যাগ। : সরকারের সপস এণ্ড এস্টাব্লিশমেন্ট আইন ভঙ্গ করে বন্ধের দিন দোকান এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অভিযোগে ভৈরবে এক ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৮ জন ব্যবসায়ীকে মোট ১৪ শত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ২. বেসামরিক কর্মচারীদের জন্য সরকার কর্তৃক একটি বেতন ও চাকুরী কমিশন এবং সশস্ত্রবাহিনীর (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী) জন্য পৃথক বেতন কমিশন গঠনের সিধ্য। ঃ ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের নতুন ভাইস-চ্যান্সেলর ডঃ ফজলল হালিম চৌধুরীর বিদায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম. শামসুল হকের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ। : বাংলাদেশ রেডক্রসের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের। : জেনারেল জিয়ার ময়মনসিংহ সফর। সেখানে এক ভাষণে তিনি বলেন, উপজাতীয়দের জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে। ৩, ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহীডিরেক্টর ডঃ হাসান জাকির ঢাকা আগমন। ; ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর সাবেক স্টোর ইনচার্জ আফজাল হোসেন ১৯৭৩ সালে ফ্যাক্টরীর ৬৪ হাজার ৩৫০ টাকা আত্মসাতের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত বিচার অনুষ্ঠিত হয়। ১নং বিশেষ সামরিক আদালতে। ; ঢাকার সদর দক্ষিণ মহকুমা হাকিম প্রায় পৌনে দু’লাখ টাকা আত্মসাত করার দায়ে অভিযুক্ত মতিঝিল মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এস, এম, হায়দারকে গ্রেফতার ও তার মালামাল ক্রোকের জন্য পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। ঃমওলানা ভাসানী জামালপুরের উত্তর সীমান্ত বরাবর এলাকা দু’দিন ধরে সফর শেষ করে ময়মনসিংহ ফেরার পথে বলেন, “বাংলাদেশের সরকার ও দেশপ্রেমিক জনগণ যে কোন মূল্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৗমত্ব রক্ষা করতে দৃঢ় সংকল্প। ঃনরসিংদীর ইউনাইটেড মেঘনা চাঁদপুর জুট মিলে অগ্নিকাণ্ড। : পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইছড়িতে বাঘের আক্রমণে ১০ জন নিহত। ওরা সব কাঠুরিয়া ছিলো। ৪, ঠাকুরগাঁওর ইসলামপুর গ্রামে ডাকাতের হাতে এক ব্যক্তি খুন। ৫. ১৯৭৬ সালের আয়কর (আয়কর প্রকাশ) বিধি জারি প্রর্কত কমায় গোপন করলে সাজা : নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ এম,সার্কসে অবস্থিত পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ নামে একটি প্রাইভেটকোম্পানীর যাচাই গুদামে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ হাজার মন পাট ভস্মিভূত। এর মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। দিনাজপুরে বাস দুর্ঘটনায়এক ব্যক্তি নিহত ও প্রায় ৫০ জন আহত। : রাজশাহীতে জেনারেল জিয়া রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলার প্রশাসনিক ও জাতি গঠনমূলক বিভাগসমূহের মহকুমা পর্যায়ের অফিসারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ—“দেশ গড়তে কঠোর পরিশ্রম করুন।” : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত কমিশন গঠন। পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান জহরুল হক এর প্রধান। : সাড়ম্বরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা উদযাপন। এ উপলক্ষে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঃ জনৈক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট-এর নেতৃত্বে সিলেটের দুর্নীতি দমন বিভাগের পুলিশ তাজপুরের সাবরেজিস্ট্রারকে ঘুষ গ্রহণের দায়ে গ্রেফতার করেন। ঃঝিনাইদহ মহকুমার ডাকবাংলোর হাটে লুট। ৬. সুনামগঞ্জের (সিলেট) আইনজীবী আবদুল গণিকে হত্যার অভিযোগে দুজন আসামী গ্রেফতার। ৭, ঢাকায় বাংলাদেশ রাইফেলসএর ৬ষ্ঠ কোর্সের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশরাইফেলস-এর ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীর বলেন—“স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে।” ঃআজ থেকে রেশনে চাল, গম ও তেলের দাম বৃদ্ধি। চাল ও গমের নতুন দাম মনপ্রতি যথাক্রমে৯০ টাকা ও ৭০ টাকা এবং ভোজ তেল ও বাটার অয়েলের দাম সেরপ্রতি যথাক্রমে–১২ টাকা ও ২০ টাকা। আগে এই দাম ছিল যথাক্রমে-৭০ টাকা, ৫৫ টাকা,টাকা ও ১৬ টাকা। কিশোরগঞ্জের অধীনে কাটিয়াদী থানার মানিকখালী, বাজারলুট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমুয়াথানার বনগ্রামে স্বামী মুহম্মদ – আলীকে হত্যার অভিযোগে ছেলেসহ স্ত্রী গ্রেফতার। : দাউদকান্দি থানার আনুয়াখলাউত্তর নগর, দক্ষিণ নগর ও মালিগাঁও গ্রামে একই রাতে ১১ বাড়ীতে ডাকাতি হয়। এতে ডাকাতরা গান অর্থসহ ৭০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে। ৯. ভারত থেকে ফিরে আসা অধুনালুপ্ত জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য আবুল ইসলাম জানান যে, সেদেশে (ভারত) বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। : কে, এম, কায়সার জাতিসংঘের . বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত। ঃ পুলিশ মানিকগঞ্জের (ঢাকা) সাভার সামরিক খামারের জোয়ানদের সহায়তায় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের ৯ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। : জয়দেবপুরে (ঢাকা) ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে ডাকাতি। ১০. প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বাংলাদেশকে ৮টি অঞ্চলে ভাগ করেন এবং আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসক নিয়োগ করেন। : ইঞ্জিনীয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলা এবং চিত্তবিনোদনের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের জন্য, মোট ৩ কোটী ৬৫ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ। : ময়মনসিংহ–মোহনগঞ্জ লাইনের একটি যাত্রিবাহী ট্রেনে ডাকাতি সংঘটিত। : ঢাকায় ৩য় জাতীয় সমাজকল্যাণ সেমিনার উদ্বোধন করেন জেনারেল জিয়া। ;কালীগঞ্জ (নরসিংদী) : মুসলিম কটন মিল কোয়ার্টারে সংঘটিত পৈশাচিক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে পলিশ নোয়াখালী থেকেআরো দু’ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এ নিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয় : সাভারে ডাকাতি। একজন নিহত। ১১. ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতেরমধ্যে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা শুরু। ভারতীয় দলের নেতাসীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক আসওয়ানী কুমার এবং বাংলাদেশ দলের নেতা বাংলাদেশ রাইফেলস” এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীর। ঃঢাকার অদূরে ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে অগ্নিকাণ্ডে ৫০০ মন পাট ভষ্মিভুত। এর মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। : নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজেরএকটি স্কোয়াড্রন-এর এক মাসব্যাপী শুভেচ্ছা ও প্রশিক্ষণ সফরে দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামত্যাগ। : পুলিশ ঢাকার মতিঝিলের কাফে দ্য চায়না হোটেলে দু’ব্যক্তির কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়ের চেষ্টা ব্যর্থ করে দু’জনকেগ্রেফতার করে। : রেশনদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিজনিত ব্যয় পূরণের জন্য সরকার ননগেজেটেড কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ ভাতা হিসেবে ঢালাও হারে মাসে ২৫ টাকা বেতন বাড়িয়েছেন। ঃ বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জরুরী ক্ষমতা বিধিবলে অংক আরো ১৯৩ জন ব্যক্তিকে সরকার মুক্তি দিয়েছেন। ঃ এ, এইচ,এম, আতাউল করিমইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্তে বাংলাদেকে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত। সৈয়দ মুজতবা আলীর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত। ঃ বরিশালের কাছে সন্ধ্যার নদীতে বাস নিমিজ্জিত, নিখোঁজ। ঃটাঙ্গাইলের সখীপুরে, থানা উম্বোধন। : বাগুন গ্রামে (নরসিংদী) (অস্পষ্ট) খোঁড়ার সময় জনৈক ব্যক্তিত্ব।(অস্পষ্ট) ১৪. ফারাক্কা সম্পর্কে সরকারী মুখপাত্র—“পানি প্রত্যাহার বন্ধ না হলে বৈঠক অর্থহীন।” ঃজাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ কর্তৃক ২১১ জাটী টাকারপাঁচটি প্রকল্প অনুমোদিত। : ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা – আইনবলে সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস এবং নুরুল ইসলাম গ্রেফতার । : ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক দরকার—দিনাজপুরে মওলানা ভাসানী।” : তিতাস গ্যাসের পাইপ ফেটে ঢাকায় একজনের মৃত্যু। জাতীয় টেনিসে নতুন চ্যাম্পীউয়নমন হারুন-উর রশীদ। ১৫, ঢাকায় বাংলা একাডেমীর একুশে ফেরুয়ারী সপ্তাহের উদ্বেধন ‘; ঢাকার কমলাপুরে ৪টি দোকান ভূষ্মীভূত। : খুলনায় বাস দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত। : পুল নির্মাণ সামগ্রী চুরির দায়ে ঢাকায় ৩ জন গ্রেফতার। যশোরে অনুষ্ঠিত সেনাবাহিনী হকিতে ‘চ’ দলের চ্যাম্পীয়নশীপ অর্জন। : ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমীর এ উদ্যোগে ১৩ দিনব্যাপী নাটোৎসব শুরু। ১৫, রাজশাহীতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী গ্রন্থ মেলা শুরু। ১৬। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক ১৯৭৬ সালের সামরিক আইন (ত্রয়োদশ সংশোধনী) বিধিসহ জারি। এতে বলা হয়—“পাটে শপথের মাধ্যমে। (মন্তব্যদ্রষ্টব্য) ২২. ঠাকুরগাঁয়ের দেবীগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ আততায়ীর গুলীতে নিহত। ঃবিমানবাহিনীর চট্টগ্রাম ঘাঁটির বেস কম্যান্ডার গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ, জি, মাহমুদ এয়ার কমোডর পদে উন্নীত। ২৩. কুমিল্লায় নবম জাতীয় ইতিহাস সম্মেলন শুরু। ঃ যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য সাহায্য বাবদ আরো ৩ কোটী ৭৯ লক্ষ ডলার অতিরিক্ত অনুদান দেবে—ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষর। : ফারাক্কা প্রশ্নে ভারতীয় বিবৃতিতে বাংলাদেশ মুখপাত্রের বিস্ময় প্রকাশ—“ভারত পূর্বশর্ত আরোপ করছে। ঃতৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সাবেক ডেপুটি স্পীকায় আবুল কাশেমের (৬৩) প্রাণত্যাগ (ইন্নালিহাহে……..রাজেউন)। : ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ চোরাই মালসহ দু’ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছেন। : জাতীয় প্রেসক্লাব দাবায় এবারও ডাঃ আকমল চ্যাম্পীয়ন। : নৌবাহিনী প্রধান কমোডর এম, এইচ খান ‘রিয়ার এডমিরাল’ পদে উন্নীত। ২৪. ঢাকায় দ্বিতীয় জাতীয় টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা শুরু। : নীলমনিগঞ্জ (চুয়াডাঙগা)কেরুএণ্ড কোং-এর আখ ক্রয় কেন্দ্রথেকে ২৪ হাজার টাকা ছিনতাই। বরিশালে নিখোঁজ সেকেন্দার হোসেনের (৬০) লাশ উদ্ধার। ঃইরাকী সমবায় দলের ঢাকা আগমন। ঃযশোেরে মওলানা ভাসানী সাংবাদিকদের বলেন, “ফারাক্কায় মাধ্যমে ভারতের একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার ও বাংলাদেশেরঅর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তদন্তের উদ্দেশ্যে উভয় দেশের হাই কোর্টের বিচারপতির পদমর্যাদায় নীচে নয়, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে যৌথ তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্যে আমাদের সরকারের ভারত সরকারকে প্রস্তাব দেয়া দরকার। ভারত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে সরকারকে অবিলম্বে সমস্যাটি জাতিসংঘে উত্থাপন করতে হবে। ২৫. প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ‘একুশে পদক’প্রদান। ঃ সংবাদপত্রের মান উন্নয়নের জন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থাদি সম্পর্কে সুপারিশ করবে কমিটি। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে হবে। : এ, কে, গঙ্গোপাধ্যায় (৪৯)। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর নিযুক্ত। ২৬. সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী—অতিথি জেনারেল জিয়ার ভাষণ।” ঃএ্যাঙ্গোলাকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি। । সমগ্র বাংলাদেশের জন্য তিনটি বিশেষ সামরিক আদালত গঠিত। : জরুরী ক্ষমতা বিধিবলে তিনজন সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য গ্রেফতার। এরা হলেন—পাবনা জেলার আমজাদ হোসেন, মহিউদ্দিন আহমদ ও আবদুর রাজ্জাক ওরফে ;ভেড়ামারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় ড্রেজার ডিভিশনের ৮০ ব্যারেল ডিজেল একটি বার্জে করে পাচারকালে আটক। ২৭. যশোরে চতুর্থ জাতী এথলেটিক প্রতিযোগিতা শুরু। উদ্বোধনী দিনে দু’টি নতুন জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি। ঃখুলনায় মওলানা ভাসানী অসুস্থ। ঃবৃটেন বৃহত্তর ঢাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ৮১ কোটী ৬০ লাখ টাকা দেবে। এই মর্মে ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষরিত। ঃ ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে ঢাকায় একজন ডি-এসপিসহ ৫ জন হাতেনাতে গ্রেফতার। : বিমানবাহিনী প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, জি, তাওয়াব। বিদেশ থেকে ফিরে খাদ্য পেট্রোলিয়াম, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন দফতরের দায়িত্ব নেন। ঃ ডাকাতির দায়ে মীরপুরে (ঢাকা) দু’ব্যক্তি গ্রেফতার। ২৮, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মওলানা ভাসানী পিজি হাসপাতালে ভর্তি। : পাটের সর্বনিম্ন মূল্য ৯০ টাকা, নির্ধারিত মূল্যের কমে পাট কিনলে সাজা-পাট মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোট। ঃ উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, জি, তাওয়াবের খলনায় খাদ্য গুদাম ও ধান ক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন। ঃ সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুর রাজ্জাককে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তের প্রেক্ষিতে পদ থেকে অপসারিত। ; বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে টঙ্গীতে (ঢাকা) একজন নিহত। ২৯. জেদ্দা সম্মেলন শেষে ঢাকায় ফিরে ডঃ এম, এন, হুদার তথ্য প্রকাশ—“বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইসলামী বিশ্বের গভীর আগ্রহ।” ঃযশোরে চার দিনব্যাপী জাতীয়এথলেটিক্স সমাপ্ত। বস্ত্রশিল্প সংস্থার দলীয় চ্যাম্পিয়নশীপ লাভ। : চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ, মমিনের চীনের, উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ
মার্চ
১, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘দূর্বার আধার’ নামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটিলিয়নের উদ্বােধনী কুচকাওরাজে অভিনন্দন গ্রহণ করেন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এই অনুষ্ঠানে এক ভাষণে জেনারেল জিয়া বলেন এই মুহর্তে সবচাইতে বড় প্রয়োজন ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং দেশাত্মবোধ প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬ সালের ১নং সামরিক আইন বিধি পরিত্যক্ত যান-বরাদ্দ ও বিক্রয় বাতিল জারি। এই বিধি মোতাবেক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে পরিত্যক্ত যানসমূহের সকল বিকয় ও বরাদ্দ বাতিল করা হয়। এতে বলা হয়েছে যে, মুল বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা ক্রেতা বা তাদের উত্তরাধিকারী অপরের কাছে হস্তান্তর করুক বা না করুক, এই ধরনের সমস্ত যান সরকারের অধিকারে থাকবে। আমাদের পানির ন্যায্য অংশ আমাদের অবশ্যই পেতে হবে, কোন চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করব না’ নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ খান।” (ফারাক্কা দ্রষ্টব্য) প্রেসিডেন্টর কাছে পাবলিক সাভিস কমিশনের (প্রথম) রিপোর্ট ঃ ১৯৭৫-৭৬ অর্থ-বছরে কাঁচামাল ও শিল্প পণ্যসহ ৫২০ কোটী টাকার পণ্য রফতানী লক্ষ্যের মধ্যে বছরের প্রথমার্ধে ২৩৩ কোটী টাকারও বেশী মূল্যের কাঁচামাল ও শিল্প পণ্য বাংলাদেশ রফতানী করেছে। । খুলনার দৈনিক জনবার্তা পুনঃপ্রকাশিত। ১৯৭৫ সালের সংবাদপত্র অর্ডিন্যান্স-বলে এর প্রকাশনা বাতিল হয়ে যায়। (সংবাদপত্র দ্রষ্টব্য) কন্ট্রোলার ও অডিটর জেনারেল হিসেবে ওসমান গণি খানের দায়িত্বভার গ্রহণ। সাভার থেকে ঢাকাগামী বাসের ধাক্কায় তরুণী (১৭) নিহত। দ্বিতীয় জাতীয় টেবিল টেনিসে পুরুষে সিঙ্গলসে আকবর এবং মহিলা সিঙ্গেলসে কাজী জেবন্নাহার দিলা চ্যাম্পিয়ন। (ক্রীড়া দুষ্টব্য)। নববদ্ধুধর্ষণের অভিযোগে নরসিংদী কালিগঞ্জ থানারদুজন পুলিশসহ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোন্তাজ উদ্দিন গ্রেফতার। ২. রাজশাহীতে বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন শুরু। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য)। ১২ই মার্চের মধ্যে পরিত্যক্ত যান জমা দেয়ার নির্দেশ। তিন বছর আগে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর এক লাখ আঠার হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে ফ্যাক্টরীর সাবেক একাউন্ট্যান্ট শামসুল হক ওলীপ্লায়ার নাসিরুদ্দীনের দশ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড। ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালত এই শাস্তি দেন। সকল শ্রেণীর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মরত সর্বস্তরের কর্মচারীকে ৩০ টাকা হারে অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা প্রদানের ও সরকারী সিদ্ধান্ত। (সংবাদপত্র দ্রষ্টব্য) ঢাকার আমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজার টাকার সম্পত্তির ক্ষতি। সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট এম আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার আবদুল মমিত চৌধুরীরসুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে ৬ হাজার টাকা মূল্যের প্রায় ৪ শত তোল্য রুপাসহ একজন চোরাচলানী গ্রেফতার। নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের থাইল্যাণ্ড যাত্রা। বাংলাদেশের নাগিরকরা “বাংলাদেশী” বলে পরিচিত হবেন সরকারী সিদ্ধান্ত। পাসপোর্ট বা অন্যান্য দলিলে ‘বাঙালী’ শব্দের পরিবর্তে বাংলাদেশী লিখতে হবে। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে প্রাক্তন মন্ত্রী শেখ আবদুল আজিজের বিচার শুরু ভোগ্যপণ্য সংস্থার চেয়ারম্যান এম, এম, মতিউর রহমান চাকুরী থেকে বরখাস্তঃসংবাদপত্র শিল্পের তিন ফেডারেশনের যুক্ত বিবৃতি—“সংবাদপত্র কর্মচারীদের অন্তবর্তীকালীন ভাতা সংক্রান্ত সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না। এই একতরফা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমরা সরকারের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবী করছি প্রেসিডেন্ট সকাশে জাতীয় পাঠ্যসূচী কমিটির সদস্যবৃন্দ। ঢাকায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন কমিটির সেমিনার শুরু প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে কাজী জাফর আহমদ, মোস্তফা জামাল হায়দার, নাসিম আলী প্রমুখ শ্রমিক নেতার সাক্ষাতকার। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা বোর্ডের উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ। পাসের হার ৪৩.৮১%। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে সার কারখানা মেরামতের ব্যাপারে ঢাকায় বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে চুক্তি। আমদানী ব্যয় মিটাতে কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি। প্রেসিডেন্টকর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা প্রণয়নের ব্যাপারে দু’টো অড়ি ন্যান্সি জারি। ঢাকায় সিরাতুন্নবী সম্মেলন শুরু। উদ্বোধন করেন সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এ,বি, মাহমুদ হোসেন। ডাকাতির অভিযোগে ডেমরায় (ঢাকা) দশজন গ্রেফতার। নরওয়ের রেডক্রস সোসাইটি প্রতিনিধিদলের ঢাকা আগমন। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকটেলিযোগাযোগ উপগ্রহ সংস্থা(ইন্টেলস্যাট) সদস্যপদ লাভ। ঢাকা মেট্রোপলিস হকি লীগেআবাহনী এবারও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ ও ছাতকে বছরের প্রথম কালবৈশাখীতে পাঁচজনের মৃত্যু। ৬. ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক বঙ্গীয় শিল্পকলা সম্মেলন শুর। উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট সায়েম। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৫ সালের ১৩নং বিধি সংশোধন করে সামরিক আইন (চতুর্দশ সংশোধনী) বিধি ১৯৭৫-৭৬ সালের দশ নম্বর বিধি জারি। ১৯৭৫ সালের সামরিক আইনবিধির এই সংশোধনীতে কাউকে ত্রয়োদশ বিধি অনুযায়ী প্রাণদণ্ড দেয়া হলে সেই প্রাণদণ্ড ফায়ারিং স্কোয়াড অথবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার দ্বারা কার্যকর করা যাবে। ঃ ঢাকায় কাওরান বাজার এলাকায় পাঁচ শ পাউণ্ডের তাজা বোমা উদ্ধার। মাটি খোঁড়ার সময় এর সন্ধান পাওয়া যায়। : প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ এম, এন, হুদা সকালে চীনা চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সে মও পিং। ঃ “উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসুচী নেয়া হচ্ছে”-রংপুরে জেনারেল জিয়া।“ (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) ঃ চাঁপাইনওয়াবগঞ্জে ডাকাত সর্দার মন্টুও তার সহকর্মীবৃন্দ গ্রেফতার। ৭. ঢাকায় কালবৈশাখী। একজন, নিহত। ঃ ঢাকায় মনোবিজ্ঞান সমিতির প্রথম জাতীয় সম্মেলন শুরু। : যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে এক মাস সফর শেষে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ সম্পর্কিত প্রেসিডেন্টেরউপদেষ্টা বি, এম, আব্বাসের ঢাকা প্রত্যাবর্তন। বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন-“জাতিসংঘ :ংস্থায় গঙ্গার পানির প্রশ্ন ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।” ৮ বাংলাদেশী সব মানের পাটের ফিতানী মূল্য প্রতিটন আরো দুই থেকে তিন পাউণ্ড বৃদ্ধি। ঃপ্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা এ, কে, এম, হাফিজুদ্দিন সকাশে চীনা চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স। শিল্প খাতে চীনের সাহায্য নিয়ে আলোচনা।। : চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দশ লাখ টাকার গম আত্মসাত। চারজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের। ঃ ঢাকায় মেট্রোপলিটন মহিলাপুলিশের প্রথম দলের ট্রেনিং শুরু। ঃ ৬নং বিশেষ সামরিক আইন আদালত গঠিত। ঃবিশেষ ক্ষমতা আইন এবং জরুরী ক্ষমতা বিধিবলে আরো ১১৩ ব্যক্তির মুক্তি। ঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সুমি। নিখোঁজ। ঃঢাকায় দুষ্কৃতকারীর গুলীতেএকজন নিহত। এ বাপ্যারে (অস্পষ্ট) গ্রেফতার। ঃঢাকায় দ্বিতীয় জাতীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা শুরু। ঃরাজশাহীতে পদ্মার পানিরপরিমাণ ১৭.৯৫ ফুট, কিন্তু গত বছর এই একই সময়ে এটা ছিল ৩১.৬৫ ফুট ঃসিলেটে বিমানবন্দরে ৬ শ’চোরাই পাউণ্ড উদ্ধার। ১০. ভারত কর্তৃক ফারাক্কায় একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে গঙ্গা তীরের বহুপ্রকল্পের ব্যাপক ক্ষতি–বিদেশী কূটনীতিকদের অকুস্থল পরিদর্শন। (ফারাক্কা দ্রষ্টব্য)। : প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর লণ্ডন থেকে ঢাকা আগমন। ঃঘুষ গ্রহণের দায়ে মাইজদী কোটে পুলিশহাবিলদারের কারাদন্ড ঃ নারায়ণগঞ্জ মহকুমার ৯টি থানার সংশোধিত রেশনিং এলাকার সাত হাজার ভুয়া রেশনকার্ড বাতিল। : কুমিল্লায় উন্মত্ত জনতার হাতে একজন নিহত ও দশটি বাড়ী ভষ্মিভূত। ১১. মুন্সীগঞ্জের আড়াই মাইল দূরে ‘এম, এল, কুসা’ নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে গেছে। ঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকা জেলার শ্রীনগরের কাঁঠালবাড়ি গ্রামের জনৈক আনন্দ সরকারকে ১৩১ তোলা সোনাসহ গ্রেফতার করেছে। এগুলি পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল। : অধুনালিপ্ত’বাকশালসম্পাদক ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য জিল্লুর রহমানের বিরদ্ধে পুলিশ তাঁরআয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩শ’ ৮২ টাকা ৯৭ পয়সার সম্পত্তি দখলের অভিযোগে চার্জশীট দাখিল করেছে। ঃ মেয়েদের উত্যক্ত করা ও অন্যান্য সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকারঅভিযোগে মোহাম্মদপুরে পুলিশ ১৫ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। : মাইজদীতে খাদ্য কন্ট্রাক্টরসহ চার ব্যক্তি গ্রেফতার। তাদের বিরুদ্ধেজালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। ঃজাতীয় ক্রিকেটের নতুন চ্যাম্পিয়ন ফরিদপুর জেলা খেলাধুলাদষ্ট্রব্য) ১৩. ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট সায়েমের ভাষণ—‘’মহানবী (সঃ) -এর আদর্শে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলুন। : ঐক ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে
শক্তিশালি জাতি গড়ে তুলতে হবে তথ্য ও বেতার দফতরের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে জেনারেল জিয়ার ভাষণ। সত্যিকার অর্থে রসুল (দঃ) এর শিক্ষা মেনে চলুন’ঈদে মিলাদুন্নবী ঊপলক্ষে জেনারেল জিয়ার বাণী। ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় নিখোঁজ সুমির লাশ উদ্ধার । বেলজিয়াম বাংলাদেশকে১৫ কোটী বেলজিয়াম ফ্রাঙ্ক ঋণ দেবে। এই মর্মে ব্রুসেলসে চুক্তি সাক্ষর। প্রেসিডেন্ট সকাশে পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত। ঢাকায় স্কুল ছাত্র রানা অপহৃত।পরে কমলাপুর রেইলওয়ে স্টেশন থেকে উদ্ধার। ঘুষ নেয়ার অপরাধে ঢাকায় জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন একাউন্ট্যান্ট গ্রেফতার। ১৪. নাটোরে ৪ শ’ দোকান ভষ্মিভূত। আনুমানিক ক্ষতি পাঁচ লক্ষাধিক টাকা। লুটপাটের সময় একজন গ্রেফতার। সিলেট শহরে ডাকাতি, ১৬ হাজার টাকা ছিনতাই। একজন মহিলা আহত। ঢাকায় ৪ দিন ব্যাপী অর্থনিতি সম্মেলন শুরু। (অর্থনীতি দ্রষ্টব্য)। ঢাকায় ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু। রাজশাহী বোর্ডের ১৯৭৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ পাসের হার ৪০.২৭%। কিশোরগঞ্জ বাজারে অগ্নিকান্ডে ৪টি দোকান ভষ্মিভূত।১৬ টি হাইকমিশনারের নেতৃত্বে জাপানী প্রতিনিধি দলের ৬ দিনের সফরে ঢাকা আগমন। এটর্নী জেনারেল ফকির শাহবুদ্দীনের পদত্যাগ। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক তা গ্রহন এবং কার্যকর। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা কাজী আনোয়ারুল হক সকাশে চীনা চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স মও পিং। ঝিনাইদহের মোবারোকগঞ্জ চিনিকলের শাখাদীরা আখ ক্রয় কেন্দ্রে দূর্বৃত্তদের হামলা–৪১ হাজার টাকা ছিনতাই—একজন নিহত। : ঢাকায় বুলগেরীয় লোকনৃত্য অনুষ্ঠান শুরু।১৭. সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য মাওলানা ভাসানীর বিবৃতি।: সারা বছরের পানি সমস্যা সুরাহা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ঢাকায় একটি জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।(ফারাক্কা দ্রষ্টব্য): মুন্সীগঞ্জের কাছে লঞ্চ ডাকাতি । দু’জন ডাকাত জনতার হাতে নিহত, ৬ জন ধৃত । :সরকারী তহবিল থেকে ৪ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের আভিযোগে দিনাজপুরের নসিপুর ফার্মের ম্যানেজার, ওভারসীয়ার ও ক্যাশি- • য়ারসহ ৯ জন গ্রেফতার। :পাবনায় একজন কলজ ছাত্র খুন।১৮. অন্য কোথাও নয়, দেশের মাটিতেই ভবিষ্যৎ নির্ধারন করতে হবে”—অর্থনীতি সম্মেলনের শেষ দিনে জেনারেল জিয়ার ভাষণ।(অর্থনীতি দ্রষ্টব্য): প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা কাজি আনোয়ারুল হক সকাশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার।: প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক সম্পদ (ঘোষণা) বিধি ১৯৭৬ (১৯৭৬ সালের ১১নং সামরিক আইন বিধি) জারি করেছেন। এতে দেশের ভেতরে-বাইরে যারা বৈদেশিক মুদ্রা অথবা স্থাবর।অস্থাবর সম্পদের অধিকারি আগামী ২০শে এপ্রিলের মধ্যে তাদের সকলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রনের কাছে তা ঘোষনা করতে বলা হয়।: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটি কর্তৃক ২৬ কোট ৪৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোট ৫৬ কোটী ৩৫ লাখ ২২ হাজার টাকার আরো দশটি প্রকল্প অনুমোদিত।একটি মামলার রায়ে ২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে গাজী গোলাম মোস্তফার দশ বছর সশ্রম কারাদন্ড।: ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে প্রাক্তন মন্ত্রী শেখ আবদুল আজিজের পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড।: ঢাকার অদূরে আলকাতরা কারখানায় অগ্নিকান্ডে ২০-২৫ হাজার টাকার ক্ষতি।: ঢাকা-ডেমরা রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত।: বাংলাদেশে নিযুক্ত নতুন সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ভেলেতিন পাভ লোভিচ স্টেপানভ-এর ঢাকা আগমন। : প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হাফিয _ উদ্দিন সকাশে ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেন। : মেট্রোপলিস ক্রিকেট লীগে ভিক্টোরিয়া চ্যাম্পিয়ন।১৯. জনতা ব্যাংকের শেরেবাংলা নগর (ঢাকা) শাখা থেকে টাকা চুরির চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে পুলিশ উক্ত শাখার ক্যাশিয়ার ও গার্ডসহ ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।২০. ভারত অবিলম্বে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার বন্ধ না করলে এবং সমস্যার আপোষ মীমাংসায় রাজী না হলে তার বিরুদ্ধে“অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা হবে”মওলানা ভাসানীর বিবৃতি।: সরকার একটি সংবাদপত্রের উপদেষ্টা কমিট গঠন করেছেন। তথ্য ও বেতার সচিব কমিটর চেয়ারম্যান নিযুক্ত।: প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবুল ফজল সকাশে চীনা চার্জ দ্যা এয়াফেয়ার্স মও পিং।২১. ঢাকায় কালবৈশাখীতে তিনজন নিহত। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি । স্বাধীনতার পর প্রথম সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশে থেকে ৬ হাজার কোটী টাকার পণ্য সীমান্তের ওপারে পাচার তথ্য। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য): ঢাকায় বাদশাহ ফয়সল ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস-মার্শাল তাওয়াব।২২. ঢাকা-আরিচা রোেড সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত।:ঢাকায় উর্ধ্বতন পুলিস কর্ম কর্তাদের উদ্দেশ্যে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“পুর্ন শৃঙ্খলা ও দেশাত্মবোধ নিয়ে কাজ করুন।”:২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালত ১৯ লক্ষাদিক টাকার সুতা । আত্মসাতের অভিযোগে ফজলুল হক ও আব্দুল্লাহের ওয়াফীকে (অনুপস্থিতিতে বিচার) সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই মামলার অপর আসামী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (অনুপস্থিতে বিচার ) অব্যাহতি পান।:পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে প্রেসিডেন্ট সায়েমের বাণী প্রেরণ।:আশরাফ জুট মিলের লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের দায়ে ৪ ব্যক্তির জেল। ঢাকার সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালতে এই শাস্তি দেন।: জাতীয় বেডমিন্টনে মন্টূ, মেহেদি ও রুমানা—মুন্নি জুটি আবার চ্যাম্পিয়ন।২৩. ব্যাংককে দশ দিনব্যাপী এসকাপ সম্মেলনে যোগ দেবার উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হাফিজ – উদ্দিনের ঢাকা ত্যাগ।: সোনার দাম ৫০ টাকা হ্রাস পেয়ে প্রতি ভরি খোলাবাজারে এক হাজার দু’শ’ পঞ্চাশ টাকা হয়েছে। প্রায় দু’মাস আগে এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার তিন’শ পঞ্চাশ টাকায় দাঁড়িয়েছিল।: প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বিনীতা রায় চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স মও পিং।: আরেকটি মামলায় গাজী গোলাম মোস্তফার পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।: ফারাক্কা প্রতিক্রিয়ায় ৪০ হাজার আখ চাষী ক্ষতিগ্রস্থ। -রাজশাহী চিনিকলের জেনারেল ম্যানেজার এক জরিপ রিপর্টের (অস্পষ্ট) জানান। “: জাতীয় ব্যাডমিন্টনে পুরুষদের সিঙ্গলসে আখতারুজ্জামান নাণ্টু চ্যাম্পিয়ন।২৪. ১৯৭৬ সালে প্রতি দিকে ৮৫ লাখ পাউণ্ড স্টার্লিং মুল্যের দ্রব্যাদি বিনিময়ের জন্য মস্কোয় বাংলাদেশ–রাশিয়া বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত।২৫. স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসকদের বাণী—“যে কোন মূল্যে স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।”-প্রেসিডেন্ট “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের । মন্ত্রে মনে-প্রাণে অবিচল থাকুন।”-জেনারেল জিয়া “অতীতের সাফল্য ও ব্যর্থতা খতিয়ে দেখতে হবে।”-এডমিরাল এম, এইচ, খান“ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।”-এয়ার মার্শাল তাওয়াব।: এয়ার মার্শাল তাওয়াব সকাশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেন। রাজশাহীতে বাস দুর্ঘটনায় চারজন নিহত। ঢাকা বোর্ডের ১৯৭৫ সালের এইচ-এস-সি পরীক্ষার ফল প্রকাশ —পাসের হার ৪৩.৬৯%।:বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জরুরী ক্ষমতা বিধিবলে আটক আরো ১৯৩ জনের মুক্তি লাভ।: ফারাক্কা প্রশ্নে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী লণ্ডনে- এক বিবৃতিতে বলেন—“ফারাক্কার ব্যাপারে ভারতের একঘেয়েমি ছাড়তে হবে।”২৬. সারা দেশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত।২৭. জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পরিশদ গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত। ব্যাংককে অনুষ্ঠানরত এসকাপের সম্মেলনে ফারাক্কা প্রশ্নে চীনের বাংলাদেশকে সমর্থন ঘোষণা।২৮. ঢাকায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান সমিতির ৪ দিনব্যাপী প্রথম বার্ষিক সম্মেলন শুরু। উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেন্ট সায়েম, “পল্লী উন্নয়নে বিজ্ঞানের প্রয়োগ আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য।” : ঢাকার সপ্তাহব্যাপী জাতীর শিশু, উৎসব সমান্ত।২৯. বগুড়ায় জনসমাবেশে জেনরেল জিয়া—“জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকুন।”: কৃষি গবেষণার জন্য দশ লাখ ডলারের মার্কিন ঋণ। ঢাকায় চুক্তিস্বাক্ষরিত। : ডেনমার্ক বাংলাদেশকে ১১কোটি টাকা ঋণ দেবে—ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষর। : সত্য আত্মসাতের দায়ে দুটি মামলার প্রতিটিতে ১৪ বছর করে মোট ২৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে (অনুপস্থিতিতে বিচার )। দুটো মামলা তাকে মোট ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন বছর করে মোট ছ’বছর সশ্রম করাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালত এই শাস্তি দেন।: এক ব্যক্তিকে অপহরণের দায়ে ঢাকায় তিনজনের সাত বছর করে কারাদণ্ড।৩০. পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্টেরউপদেষ্টা ডঃ এম, এন, হুদার নেপাল যাত্রা। : আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে যোগদানের জন্যে প্রধান বিচারপতি এ, বি, মাহমুদ হোসেনের লণ্ডন যাত্রা।: সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকায় স্কুল ছাত্রী নিহত।৩১. ইউওটিসি অনুষ্ঠানে জেনারেল জিয়া—-“স্বাধীনতা লাভের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো অনেক কঠিন। তবে জনবল এবং মনোবলে আমরা খুবই উন্নত।: ক্যান্টনমেন্ট ও টংগীর মাঝ মাঝি জায়গায় ঝটিকা’য় ডাকাতি করতে গিয়ে তিনজন ডাকাত রেল পুলিসের হাতে ধৃত।পরিত্যক্ত শিল্প ইউনিটে দুর্নীতি তদন্তে সরকারী পর্যায় কমিটি গঠন। কমিটির নাম ৩নং রিভিউ কমিটি।: আপত্তিকর কার্যকলাপের অভিযোগে পুলিস কর্তৃক সাবেক সংসদ সদস্য হরনাথ বায়েন গ্রেফতার।: সমুদ্র আইন সংক্রান্ত জাতিসংঘের তৃতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় কমিটিতে বাংলাদেশের বক্তব্য — আঞ্চলিক জলসীমার প্রস্থ পরিমাপের জন্য ডেপথ মেথডের মাধ্যমে জরিপ চিত্র অঙ্কন করতে হবে।১. খুলনায় সর্বস্তরের জনগণের প্রতি জেনারেল জিয়া—“জনসাধারণ যাতে তাঁদের নিজ নিজ কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন তার জন্য সরকারের দৃঢ় সংকল্প।” বর্তমান সরকার গ্রাম ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আর্থিক বুনিয়াদ গড়ে তুলতেও আগ্রহী।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদের সেমিনারে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি সাত্তার—“দেশের শিল্পায়নের অগ্রগতির জন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন অবশ্যই করতে হবে।”প্রথম ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জাতীয় সেমিনারে প্রেরিত বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেন—“দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন।নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় ট্রেনের তলায় পড়ে একজনের মৃত্যু।রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় এক রাত্রিতে তিন বাড়ীতে ডাকাতি।স্বাধীনতা রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তোলার জন্য মওলানা ভাসানীর আহ্বান। এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী বলেন-“স্বাধীনতা অর্জন করাকঠিন তা রক্ষা করা আরো কঠিন। জনগণ তাঁদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। একটি শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলে স্বাধীনতা অর্জন অর্থহীন। তিনি আশা করেন, জনগণ একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সরকারের সাথে সহযোগিতা করবে।” জোর করে অর্থ আদায়ের দায়ে ঢাকার সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালতে তিনজনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড।২. ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ইসকাপ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে ঢাকার বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ, কে, এম, হাফিজ উদ্দিন বলেন—“ফারাক্কা করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহন। প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।৮. ব্যাংকারদের সমাবেশে জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন—“ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ঋণদানের সষ্ঠ ব্যবস্থা নিন। মফস্বল এলাকার বিপুল ব্যাংক গ্রাহক ব্যাংকের নিয়ম-কানুন ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে অবহিত নন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী মিঃ হয়া কুয়ো ফেংকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট এক বাণীতে বলেন-“দু’দেশের মধ্যেকার ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক আগামী বছরগুলোতে আরো জোরদার হবে।”: গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিস কর্তৃক চাঁদপুর থেকে প্রচুর গোলাগলী উদ্ধার। বাংলাদেশে প্রথম সৌদী আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে শেখ রিয়াদ আল খাতিবের নিযুক্তি।: মুন্সীগঞ্জের অদূরে এক লঞ্চ ডাকাতিতে ডাকাত কর্তৃক প্রায় লক্ষাধিক টাকা লুট।: নারায়নগঞ্জের শিশুবাবুকে অপহরনের সময় অপহরনকারী রুহুল আমিন হাতেনাতে গ্রেফতার।৯. সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃ তিতে মওলানা ভাসানী বলেন- “ভারত সরকারের একতরফা পানি প্রত্যাহার বিশ্ব ইতিহাসে এক ঘৃণ্য ও অমানবিক আচরণ। ফারাক্কার কাছে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের ফলে কৃষি, নৌ-চলাচল, সেচ, মৎস্য, বন-সম্পদ, শিল্পবাণিজ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং বাংলাদেশের তিন কোটী লোক অবর্ণনীয় দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে।: বাংলাদেশে পশ্চিম জার্মানীয় সাহায্য অব্যাহত থাকবে বলে পশ্চিম জার্মানীর অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট মিঃ এলট অসওয়াণ্ডের আশ্বাস প্রদান। তিনি পশ্চিম জার্মানীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম, হোসেন আলীর পরিচয় পত্র গ্রহণকালে একথা বলেন।: বাংলাদেশ রাইফেলস-এর ৮ম ব্যারাকের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিডিআর ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল দস্তগীর বলেন-“আমরা আমাদের বহু, কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও সংহতি রক্ষা করতে প্রস্তুত।”১০. নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান কর্তৃক ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন। চলতি সালেই সাড়ে তিন’শ থানা বিদ্যুতায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ।: কৃষি উন্নয়নের মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য, কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রতি প্রেসিডেন্টের আহৰান।: নরসিংদীর আলীজান জুট মিলের ১৯৭৪ সালের অগ্নিকাণ্ড মামলায় ৭ ব্যক্তির বিভিন্ন মেয়াদী কারাদণ্ড ও জরিমানা। ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে এ মামলাটির বিচার অনুষ্ঠিত হয়।: হালিশহর প্যারেড গ্রাউন্ডে বিডিআর শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে বিডিআর বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল কে, জি, দস্তগীর বলেন—“বিপথগামীদের হীন প্রচেষ্টা সফল হবে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিডিআর জওয়ান এবং বাংলাদেশের জনগণ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা করবে না।”: উপজাতীয়দের জন্য রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। হাতিয়ায় টর্নেডো। একজন নিহত ও দশজন আহত। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।১১. টর্নেডোর মরণ ছোবলে ফরিদপুরের চরাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসলীলা। প্রায় ১০০ লোকের প্রাণহানির আশঙ্কা। বন্যাবিধ চরাঞ্চলের জন্য ২ লাখ টাকা ও ৫ হাজার মন গমের বরাদ্দ। ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় শিলাঝড়ে ২জন নিহত।: সমবায় আনন্দালনকে জোরদার করার জন্য জনগণের প্রতি প্রেসিডেণ্টের উপদেষ্টা আনোয়ারুল হকের আহ্বান।১২. ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশে জেনারেল জিয়াউর রহমানের আহবান—“অতীতের সব রকম সংশয় ও ভুল বোঝাবুঝি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হোন। একই সঙ্গে তিনি চোরাচালান রোধে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করারও আহবান জানান।”সরকার কর্তৃক সেক্টর কর্পোরেশনের অধীনে, কতিপয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের পুঁজি প্রত্যাহারের জন্য পুঁজি প্রত্যাহার বোর্ড ও পুঁজি প্রতাহার ওয়ার্কিং গ্রুপ পুনর্গঠিতকরণ।১৩. বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে প্রেসিডেণ্টের বাণী—“১লা বৈশাখের প্রেরণাকে নিরলস কর্মোদ্যমে প্রতিফলিত করে সুখী এবং সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে নিয়োজিত হোন।”: ১লা বৈশাখে জাতির প্রতি জেনারেল জিয়ার আহবান—“বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর এবং আত্মমর্যাদাশীল দেশরূপে গড়ে তুলতে নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন।”: পাবনার সংক্ষিপ্ত আদালতের বিচারে সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের ৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড।: বেগম ফিরোজা বারীকে প্রেসিডেন্টের মহিলা বিষয়ক সহকারী হিসেবে নিয়োগ। (জীবনী দ্রষ্টব্য): প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬ সালের রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ (বিশেষ বিধান) বিধি নামে ১৯৭৬ সালের ত্রয়োদশ সামরিক আইন বিধি জারি।: টর্নেডোয় ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি মওলানা ভাসানীর সমবেদনা জ্ঞাপন।: শেরপুরের এক জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে জেনারেল জিয়া বলেছেন-দেশের মোট জনসংখ্যার (অস্পষ্ট) সমাজ। তাই দেশ (অস্পষ্ট)দেরও এগিয়ে আসতে১৪. কার্যরত সোভিয়েত ইউনিয়নের “(অস্পষ্ট) ও বিদ্যুৎ দফতরের সহকারী মন্ত্রী মিঃ মল্টভের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রেসিডেন্টের মন্তব্য –সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি পারষ্পরিক শ্রদ্ধা এবং কারো আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে সবার সাথে বন্ধুত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ আস্থাশীল।”: স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত থাকার জন্য বিডিআরদের প্রতি বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীরের আহবান।: জেনারেল জিয়ার সরকারী কর্মচারীদের প্রতি আহবান—“দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।”: রাজশাহী বিভাগের উন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক রাজশাহী বিভাগ উন্নয়ন বোড় নামে একটি বোর্ড গঠন। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য): সরকার শীগগীরই ৮৫টি ক্ষুদ্র শিল্প ইউনিটের পজি প্রত্যাহার করছেন বলে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ এম, এন, হুদার তথ্য প্রকাশ।১৬. ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডঃ আহম্মদ মোহাম্মদআলীর ঢাকার আগমন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডঃ হাসান জাকি।: জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং জনগণের কল্যাণের জন্য অঙ্গীকার নিতে বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সকল দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি গণমোনাজাতে হাজির হওয়ার মওলানা ভাসানীর আহ্বান। মওলান ভাসানী স্থানীয় ইসলামিক একাডেমীতে এ গণমোনাজাতের আয়োজন করেছেন।: দেশের উন্নয়নে মহিলাদের যোগ্য ভূমিকা পালনের জন্য সরকার কর্তৃক জাতীয় মহিলা সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত।:মরক্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত আসাদুজ্জামানের পরিচয় পত্র গ্রহণকালে মরক্কোর বাদশাহ হাসান বলেন—“বাংলাদেশ আমাদের কাছে একটি প্রিয় দেশ এবং আমরা এই বীর জাতির সমৃন্ধি ও কল্যাণ কামনা করি।”: অসঙ্গত উপায়ে সম্পদ অর্জনের দায়ে পুলিস কর্তৃক সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস মাখন ও তার চারজন সহযোগীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল।১৭. জাতীয় সংসদের তিন’শ সাধারণ আসনে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার তালিকা ঘোষিত। প্রতি ২ লাখ ৩৮ হাজারে একটি আসন। ১০ই মে পর্যন্ত আপত্তি গ্রহণের দিন ধার্য।ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডঃ আহমদ মোহাম্মদ আলী ফারাক্কায় গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের বিরূপ ফল দেখে মর্মাহত।কালবৈশাখীর তাণ্ডবে রাজধানীতে চারজন নিহত ও আটজন আহত।: ইসলামী ফাউণ্ডেশন মিলনায়তনের মোনাজাত সভায় মওলানা ভাসানী প্রেরিত খোলা চিঠি প্রকাশ। এ চিঠিতে ভারতের প্রধান মন্ত্রীর নিকট তিনি ফারাক্কায় গঙ্গার বাঁধ ভেঙ্গে দেয়ার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই অনুরোধ মিসেস গান্ধী ও তাঁর সরকারের কাছে গৃহীত না হলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য “মরক্কে অনুসৃত নীতির ন্যায় আমি আগামী ১৬ই মে, রোজ রবিবার রাজশাহী হইতে লক্ষ লক্ষ বুভূক্ষ বাঙালীসহ অহিংস শান্তিপূর্ণ ও নীরব মিছিল লইয়া ফারাক্কার দিকে অগ্রসর হইব।” মোনাজাত সভায় এক ভাষণে মওলানা বলেন, সমস্ত দলাদলি ও কোন্দল ভুলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হোন।১৯. ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডঃ আহমদ মোহাম্মদ আলী ব্যাংকের সাহায্য পাওয়ার জন্যে বাংলাদেশকে উপযুক্ত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের তালিকা তৈরীর অনরোধ জানিয়েছেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বোড় অবগত গভর্ণরস-এর নবম বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলসহ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের , সদস্য ডঃ এম, এন, হুদার জাকার্তা যাত্রা। সরকার ও সংবাদপত্রের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সংবাদপত্র পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা চলছে বলে তথ্য ও বেতার সচিব এ, বি, এম,গোলাম মোস্তফার তথ্য প্রকাশ।: খুলনায় ১০ কিলোওয়াট বেতার ট্রান্সমিটারের উদ্বোধনী।: ২নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতের বিচারে সাবেক এমপি লতিফ সিদ্দিকীর ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। আদালত সুতা কেলেঙ্কারীর দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় প্রদান করে।: উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে পুলিসের হাতে তিনজন ডি-এস-পি হাতেনাতে গ্রেফতার।২০. ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার বদরকাটা সীমান্ত চৌকির ওপর ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ।: বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা কর্তৃক নতুন প্রকল্পে শিল্প ঋণদানের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য হারে সুদ কমানোর সিধান্ত গ্রহণ।: সরকার প্রথম-দফায় ১১টি শিল্প ইউনিট থেকে পুঁজি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।: অপহরণ ও খুনের দায়ে তিনজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।২১. দিনাজপুরে বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের সমাবেশে প্রেসিডেন্ট এ, এম, সায়েম–আমাদের মনে রাখতে হবে একতাই আমাদের শক্তির মূল উৎস। সরকার দ্রুত উন্নয়ন দরকারী এমন এলাকাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।”: ১৯৭৫ সালের প্রথম জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার বিতরণী উপলক্ষে জেনারেল জিয়া-আগামী এক বছরের মধ্যে জনসংখ্যার ৮০ ভাগ টিভি’র আওতায় আসবে। এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানেই জেনারেল জিয়া পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে বিতরণ করেন।” (টেলিভিশন দুষ্টব্য) : দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তের সঙ্গে জাকার্তায় সফররত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন,হুদার বৈঠক।: সুমি হত্যার ব্যাপারে পুলিসের চার্জশীট দাখিল! এ বিচার কুমিল্লার বিশেষ সামরিক আইন আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।: আলজিরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে পাট চুক্তি সাক্ষরিত। চুক্তি বলে আলজিরিয়া বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর সাত হাজার টন পাট কিনবে।২৩. রংপুরে বিশিষ্ট নাগরিকদের সমাবেশে প্রেসিডেন্ট বলেন—“দেশের সুখী ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।“: বেসরকারী কলেজ একত্রিত করার বিষয় সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে প্রেসিডেন্টের ঘোষণা।: রাজধানীতে বাস দুর্ঘটনায় একজন নিহত।: নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রতি নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম এইচ, খানের আহবান –“আপনারা নিজেদেরকে নিয়মানুবর্তী এবং দক্ষ বাহিনী। হিসেবে গড়ে তুলুন। এ বছরেই নৌ-একাডেমী স্থাপন করা হবে ‘তিনি ঘোষণা করেন।”: বাংলাদেশের জন্য এস-ডি-আর কোটা বৃদ্ধি পূর্বের ১২ কোটী ৫০ লাখ এস-ডি-আর-এর স্থলে ১৫ কোটী ২০ লাখ এস-ডি-আর পাবে বাংলাদেশ।২৪. সিলেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতএক বিশাল জনসভায় জেনারেল জিয়া—“উপমহাদেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা অপরিহার্য। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সব সমস্যার সমাধান আমরা চাই। তবে বাংলাদেশ টিকে থাকার জন্যই এসেছে এবং যে কোন মূল্যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হবে।”: ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুট্টোর প্রতিক্রিয়া –“ভারত ও বাংলাদেশ যখন তাদের সীমান্ত বরাবর গুলী বিনিময়ে লিপ্ত, তখন নয়াদিল্লীর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ বিষয় আলোচনা করা তাঁর জন্য স্ববিরোধী হবে।”: পাউণ্ডের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে মূল্য পুননির্ধারণ। নতুন হারে এক পাউণ্ডের বিনিময় মূল্য হবে ২৮ টাকা ১০ পয়সা। পূর্বে ছিল ৩০ টাকা। (অর্থনীতি দ্রষ্টব্য): চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারী বিভাগ ও সংস্থার প্রধানদের এক সমাবেশে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেন—“জনসাধারণের অসুবিধা ও দূর্দশা লাঘবে বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে সুষ্ঠ, সহযোগিতা বজায় রাখুন।: পাবনার সাবেক এমপি মোজাম্মেল হক সমাজীকে অসঙ্গত উপায়ে সম্পত্তি অর্জনের দায়ে ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালত কর্তৃক ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান। :ঈবরদীতে চলন্ত বাসে ডাকাতের গুলীবর্ষণে তিন ব্যক্তি নিহত।২৫. কৃষকদের অধিক উৎপাদনে উৎসাহ দেয়ার জন্য জুলাই থেকে সারা দেশে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করার জন্য সরকারী সিদ্ধান্ত।: নিবিড় পাটচাষ পরিকল্পনা মুল্যায়নের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক কমিটি গঠন।মীরপুরে অন্ধদের জন্য একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।: ফারাক্কা মিছিল সম্পর্কে আলোচনার জন্যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক ২৮শে এপ্রিল সভা আহবান।২৬. ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর বিপুল পরিমাণে পানি প্রত্যাহারের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং খুলনা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ।: চট্টগ্রামের নিকট ফৌজদারহাটে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও আটজন আহত।: শেরেবাংলা ফজলুল হকের চতুর্দশ মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশের সার্বিক জনগণের প্রতি জেনারেল জিয়ার আহৰান—স্যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে শেরেবাংলার চতুর্দশ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করুন। শেরেবাংলার আদর্শ অনুসরণ করুন।”: রাজধানীতে একই দিনে চারটি সড়ক দুর্ঘটনা। একটি শিশু নিহত ও তিনজন আহত।: সাভারে আনসার প্রশিক্ষণ সদর দফতরে আনসারদের উদ্দেশ্যে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ দেশের জন্য আজ গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলায় আনসার বাহিনীকেও যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। এর আগে আট শ আনসারের এক সমাপনী কুচকাওয়াজে তিনি অভিবাদন গ্রহণ করেন।” জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যাললয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ডঃ এনামুল হকের পদত্যাগ। নতুন ভাইসচ্যান্সেলর হিসেবে ডঃ জিল্লুর রহমানের কার্যভার গ্রহণ।:ঢাকার সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালতে জোর করে টাকা আদায়ের দায়ে পাঁচ ব্যক্তির বিভিন্ন মেয়াদ কারাদণ্ড।২৭. যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে শেরেবাংলা এ, কে, ফজলুল হকের চতুর্দশ মত্যুবার্ষিকী পালন। প্রেসিডেন্ট এ, এম, সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ও নেতৃবৃন্দ কর্তৃক মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ। এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মাজারে একটি কাঙালীভোজেরও আয়োজন করেন।: ১নং বিশেষ সামরিক আইন।আদালতের বিচারে ঘুষগ্রহণ এবং সরকারকে প্রতারিত করার অভিযোগে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের সার্কেল অফিসারের প্রাণদণ্ডাদেশ।: জাতিসংঘ সমুদ্র আইন সম্মেলনের প্রতি বাংলাদেশের আহৰান“সমঅংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সমদ্রসীমা চিহ্নিত করতে হবে।”: ফারাক্কার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ঢাকা-দিল্লী বৈঠক আজ শুরু হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে আজই সাত সদস্যের একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদলের ঢাকা আগমন। ভারতীয় দলের নেতৃত্ব করছেন ভারত, সরকারের সেচ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিঃ সি, সি, প্যাটেল। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করবেন প্রেসিডেন্টের বিদ্যুৎ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা বি, এম, আব্বাস।: কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির পুনর্গঠন এবং দেশের প্রতিটি জেলায় ও মহকুমায় ভূমি বরাদ্দ কমিটি গঠনের জন্যে সরকারী সিদ্ধান্ত।: সুমি হত্যা মামলা ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালত থেকে কুমিল্লার ৩নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে স্থানান্তর।: নিউজ প্রিন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ। নির্ধারিত মূল্য হচ্ছে প্রতি টন রিল নিউজ প্রিন্টের দাম পাঁচ হাজার পাঁচ শত টাকা।২৮. সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারদের দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান—“সরকারী কর্মচারীদের জাতীয় স্বার্থকে সব কিছুর উর্ধে স্থান দিতে হবে এবং প্রশাসন ব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী করতে হবে। এতে করে প্রশাসন ব্যবস্থা এবং জনসাধারণের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর যোগাযোগ নিশ্চিত হবে।”: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক ৮৪ কোটী টাকা ব্যয়ের আটটি প্রকল্প অনুমোদন। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, ময়মনসিংহ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রকল্প উন্নয়ন, শম্ভুগঞ্জ জুট মিল প্রকল্প, কর্ণফুলী জুট মিল প্রকল্প, ঢাকা জুট মিল প্রকল্প, বাংলাদেশ পাটবীজ প্রকল্প, পাট সম্পর্কিত কবি গবেষণা প্রকল্প, কেন্দ্রীয় সম্পদ উন্নয়ন সংস্থা (কৃষি প্রকল্প) এবং কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ (গবাদি পশু উন্নয়ন) প্রকল্প।:সারা দেশে প্রথম কৃষি শুমারী অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের একটি প্রকল্পের অনুমোদন।: প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত।: ১৬ই মে’র ফারাক্কা মিছিলেযোগদানের জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি মওলানা ভাসানীর আহবান।: ফারাক্কা সমস্যা নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রথম-দফা আলোচনা।: বিদেশে সম্পত্তির আয় প্রত্যেক প্রত্যেক বাংলাদেশীকেই দেখে পাঠাতে হবে।: সরকার কর্তৃক জাতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা ও বিজ্ঞান পরিষদ গঠিত। পরিষদের কাজ হবে দেশে বিজ্ঞান পরিষদ গঠিত। পরিষদের কাজ হবে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা দ্রুত বিকাশ ও উন্নয়ন এ ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দান।: কুষ্টিয়ায় মাইন বিস্ফোরণে তিনজন বালক নিহত।: দাউদকান্দি থানার মহম্মদপুর গ্রামে একই রাতে বাইশটি ডাকাতি।২৯. ১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র অনার্সও এম-এ (প্রথম পর্ব) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা কালে জেনারেল জিয়া—“আপনারা দেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে ঐতিহ্যমণ্ডিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করুন।”: বাংলাদেশে ফারাক্কার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য সফররত ভারতীয় কারিগরী প্রতিনিধিদলের খুলনা যাত্রা।: দু,টি প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার ৮ লাখ ৬৯ হাজার মার্কিন ডলার মঞ্জুর।৩০. রাজশাহীর কাছে ললিতনগর স্টেশনে ট্রেন ডাকাতি। দশজন আহত। বহু টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ নিয়ে ডাকাতদলের পলায়ন।৩১. বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার ভাইস মার্শাল এম, জি, তাওয়াবের পদত্যাগ। প্রৈসিডেন্ট কতৃক পদত্যাগ পত্র গৃহীত।: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট সায়েমের ভাষণ—“শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব শিক্ষক ও ছাত্রকে যৌথভাবে পালন করতে হবে।”: বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের প্রথম রাষ্ট্রদূতের ঢাকা আগমন। বিমানবন্দরে চীনা রাষ্ট্রদূত চুয়াং ইয়েন বলেন—“চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী নির্যাতন ও শোষণের শিকার। এখন আমরা দু’জনই তৃতীষ বিশ্বের দু’টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং দুজনই সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের মোকাবেলা ও নিজ নিজ দেশকে গড়ে তোলার একই ধরনের দায়িত্ব পালন করছি।….. বাংলাদেশের জনগণের ন্যায় সংগ্রামের প্রতি চীনের জনসাধারণের দঢ় সমর্থন রয়েছে।”(পররাষ্ট্র সপক দুষ্টব্য): ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী সমর সেনকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে দু’জনের পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড।: বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় টেকনিক্যাল প্রতিনিধিদল কর্তৃক ২ বিমান থেকে ফারাক্কার প্রতিক্রিয়া অবলোকন।: ঢাকা-কুষ্টিয়া সরাসরি ট্রাঙ্ক ডায়ালিং ব্যবস্থা চালু।: ঢাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বােধন।
মে
১. মে দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসভায় জেনারেল জিয়ার ভাষণ-শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।” (মন্তব্য দ্রষ্টব্য)।: এয়ার কমোডর এম, কে, বাশার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নতুন স্টাফ প্রধান নিযুক্ত।২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে দু’জন ছাত্র খুন। এরা হলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র সাইদুল হক ওরফে গোগা এবং তীতুমীর কলেজের ছাত্র এনায়েত হোসেন ওরফে ইনু।: ঢাকায় বাংলাদেশ দর্শন সমিতির দু’দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনার৩. এয়ার কমোডর এম, কে, বাশার এয়ার ভাইস-মার্শাল পদে উন্নীত এবং উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত।: ঢাকায় প্রচণ্ড গরম, তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট।: সারাদেশে ব্যাংকিং পক্ষ শুরু।৪. ঢাকার সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য দু’জন পুলিস কনস্টেবল দণ্ডিত। এদের প্রত্যেককে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই শত টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।: ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ এম, এ, আওয়াল চৌধুরী খুনের দায়ে তিনজন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।:প্রেসিডেন্ট কতৃক সংবিধানের ৩য় অনুচ্ছেদের অনুবিধি আদেশ [দ্বিতীয় ঘোষণা (৬ষ্ঠ সংশোধনী) আদেশ সংশোধন।] ফলে ভবিষ্যতে দেশের ধর্মীয় রাজনীতির উপর কোনরুপ বাধানিষেধ থাকবে না।: পুবাইলের (ঢাকা) বাজারে ডাকাতি। একজন পাহারাদার নিহত।৫ ভোগ্যপণ্য সংস্থার আড়াই কোটী টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক হাজার কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের।: চীনা রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্ট সায়েমের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেন।: বগুড়ায় ঝড়, তিনজন নিহত।: ঢাকায় ঝড়, একজন নিহত।: নাটোরে বাসের ধাক্কায় একজন কিশোর নিহত। নাটোরে ঝড়, একজন নিহত।৬. স্পেনের রাষ্ট্রদূত কতৃক প্রেসিডেন্ট সায়েমের কাছে পরিচয়পত্র পেশ ।: জেনারেল জিয়া সকাশে চীনা রাষ্ট্রদূত।: মাইজদী কোর্টের সুধারামপুরে হাত বাঁধা অবস্থায় দশটি লাশ উদ্ধার।: রাজবাড়ির পাংশা থানাধীন কালুখালীর এক কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের দায়ে দশজন, গ্রেফতার।: সরকার কতৃক আফগানিস্তানের বন্যা ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রত জনগণের জন্য দান হিসেবে পাঁচ হাজার পাউণ্ড চা প্রেরণের সিদ্ধান্ত।৭. সাত দিনের সফরে ইরানী মন্ত্রী মিসেস মেহেরেনজেস হেফাজী এর ঢাকা আগমন।: ঢাকায় বজ্রপাতে একজনের মত্যু।: বান্দরবনের বিভিন্ন স্থানে কলেরায় পঞ্চাশজনের মৃত্যু।৮. প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক সমগ্র বাংলাদেশকে ৯টি জোনে বিভক্ত এবং ৯ জন আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ।: ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক মওলানা ভাসানীর ১৮ এপ্রিলের পত্রের জবাবদান।: সরকার কর্তৃক চলতি বছর থেকে সাংবাদিকতায় কৃতিত্বের জন্য সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রবর্তনের সিধান্ত।: জেনারেল জিয়া সকাশে সফররত ইরানী মন্ত্রী মেহেরেনজেস হেজাজী।: পাবনায় ঝড়, সাতজন নিহত।: ঢাকায় ১শ’ ৯টি ভুয়া পাসপোর্ট উদ্ধার।: হাতিয়ায় ঝড়, দু’জন নিহত।: বাংলাদেশ বিমানের কুমিল্লা রুট বন্ধ।: এক নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতে কর্ণফুলী পেপার মিল মামলায় দু’ব্যক্তির সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড।: ফারাক্কা মিছিলের জাতীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশের এবং ভারতসহ বিশ্বের সব দেশের জনগণের প্রতি আহবান।৯. ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতি কর্তৃক চীনা রাষ্ট্রদূতের সম্বর্ধনা। এতে রাষ্ট্রদূত চুয়াং ইয়েন বলেন, “চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক চিরস্থায়ী এবং প্রতিটি দিনই এ সম্পর্ক জোরদার হতে থাকবে।: ঢাকায় অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা শীর্ষক দুইদিনের সেমিনারের উদ্বােধন।সপ্তম ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের ইস্তাম্বুলের পথে ঢাকা ত্যাগ। ১০. ঢাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় একজন নিহত, তিনজন আহত। : টঙ্গীতে (ঢাকা) ট্রেন দুর্ঘ টনা–দু’জন আহত। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার লাখ টাকা। : তিন লাখ টাকার কাপড় আত্মসাতের দায়ে চট্টগ্রামে একজন গ্রেফতার। : একটি ১৫ বছরের ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে সিলেটে ৬ জন ছেলেধরা গ্রেফতার। : স্বাধীন বাংলা বেতারের সকল অনুষ্ঠান যাদুঘরে রাখার সরকারী সিদ্ধান্ত। ১১. ইস্তাম্বুলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করার জন্য জেনারেল জিয়ার ইস্তাম্বুল যাত্রা। : বাংলাদেশের জন্য ৯১ কোটী টাকার জাপানী ঋণ, ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষর। : প্রেসিডেন্ট সায়েম সকাশে সফররত ইরানী মন্ত্রী মেহেরেনজেস হেজাজী। : ফারাক্কার মিছিল পরিচালনার জন্য মওলানা ভাসানীর রাজশাহী উপস্থিতি। : সিরাজগঞ্জের দু’টি গ্রামে অগ্নিকাণ্ড — ২শ’ ২৮টি ঘর ভষ্মিভূত। ১২. চীন বাংলাদেশ থেকে ৫৬ হাজার বেল পাট এবং ৩শ’ বেল পাটজাত দ্রব্য (হেসিয়ান) কিনবে, ক্যান্টনে চুক্তি স্বাক্ষর। : নাটোরের ফতেঙ্গাপাড়া গ্রামে দুলু মিয়া (২৮) নামে এক ব্যক্তি অজ্ঞাতনামা লোকের ছুরিকাঘাতে নিহত। ১৩ ইস্তাম্বুলে ইসলামী পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্মেলনে জেনারেল জিয়া“মাসিক ভিত্তিতে গঙ্গার পানি বণ্টনই একমাত্র ন্যায্য সমাধান। : ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মওলানা ভাসানীর তারবার্তা– “ফারাক্কা সমস্যার ন্যায্য সমাধান ও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যাপারে ভারতের উপর প্রভাব খাটান।“ ১৪. নৌবাহিনী প্রধান এম, এইচ, খান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন– “বাংলাদেশ ফারাক্কা সমস্যার শান্তি পূর্ণ সমাধান চায়।” :“ফারাক্কা মিছিল হবেই, কোন চোখ রাঙানীর পরোয়া করি না’–রাজশাহীতে মওলানা ভাসানী। ১৫. মনিরা হত্যা মামলার রায়– আসামী শেখ আহমদের ফাঁসি, আসামী (গৃহভৃত্য)। সিরাজ ওরফে আলীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং স্বামী সিরাজুল হক খালাস। : প্রেসিডেন্ট কর্তৃক রেডিও বাংলাদেশের এক হাজার কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্সমিটারের আনুষ্ঠানিক উদ্বােধন। : ভারতের হুমকির কাছে মাথা নোয়াব না’—রাজশাহীতে মওলানা ভাসানী। : ঢাকার কাছে এক বাস দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত এবং একুশজন আহত। : ঢাকায় প্যালেস্টাইন সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা সভা। প্রধান অতিথি নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেন–“ইসরাইলী হামলার বিরুদ্ধে, আরব ভাইদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি আমরা একাত্ম। ১৬. ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল শুরু। মিছিলের প্রাক্কালে এক আহমদ এডভোকেট ময়মনসিংহের বাসভবন থেকে গ্রেফতার। ২৬. বাংলাদেশ সাহায্যদাতা কনসর্টিয়াম বাংলাদেশকে একশ’ কোটী ডলারেরও বেশী ঋণদানে সম্মত। : সরকার কর্তৃক দেশের খ্যাতনামা খেলোয়াড়দের প্রতিবছর ৫টি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত। : জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত। : ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত। ২৭. সন্তোষে মওলানা ভাসানীর সাংবাদিক সম্মেলন। এতে তিনি বলেন—“স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে কত গুপ্তহত্যা সংঘটিত হয়েছে,লুট হয়েছে কত ব্যাংক ও ধন-সম্পত্তি তা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক পঞ্চাশ কোটী টাকার দুটি স্কীম অনুমোদিত। এগুলো হচ্ছে—-উন্নতমানের ধান ও গম বীজ সংগ্রহ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ স্কীম এবং উন্নত জাতের ধান ও গম বীজ উৎপাদনের স্কীম। :ঢাকায় তড়িতাহ হয়ে এক ব্যক্তি নিহত। ২৮ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহে রাজেউন)। : চীনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের একটি শুভেচছা দলের ঢাকা ত্যাগ । এর নেতৃত্ব করছেন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি মীর্জা গোলাম হাফিজ। : প্রেসিডেন্ট সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগের পুনর্বিন্যাসের জন্য সংবিধান সংশোধন করে ১৯৭৬ সালের দ্বিতীয় ঘোষণা (সপ্তম সংশোধনী) আদেশ জারি করেন।সংশোধনী মোতাবেক আপীল বিভাগ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং হাই কোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ হাই কোর্ট হিসেবে অভিহিত হবে। হাই কোর্টেরও একজন প্রধান বিচারপতি থাকবেন। :চার লাখ টাকা মূল্যের সুতা আত্মসাতের অপরাধে ঢাকার এক নম্বর বিশেষ সামরিক আদালত খায়রুল বাশার ওরফে খোকন এবং ইউসুফ আলীকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। : মওলানা ভাসানী পিজি হাসপাতালে ভর্তি। ২৯. সারা দেশে ৫৭ হাজার গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত। : দৌলতপুর এবং খালিশপুরে ঝড়-চল্লিশজন আহত। : সাবেক বাকশাল নেতা ফেনীর খাজা আহমদের ঢাকায় ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহে…..রাজেউন) ৩০. ঢাকার কাঁঠালবাগানে ডাকাতি । গৃহস্বামীসহ চার, ব্যক্তি ছুরিকাহত। ৩১. যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) বাংলাদেশকে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী সম্প্রসারণের জন্য ২৬ লক্ষ ডলার দেবে। ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষর।

জুন
১. বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত পল্লী উন্নয়ন পরিষদের প্রথম বৈঠকে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“ব্যাপক ও সমন্বিত কর্মসূচীর মাধ্যমে পল্লীর জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে সরকার দৃঢ় সংকল্পবৃদ্ধ। তবে এ ব্যাপারে পল্লীর সমস্ত শ্রেণীর মানুষকে সংগঠিত করার প্রয়োজন রয়েছে। : কুমিল্লার ৩নং বিশেষ সামরিক আদালতে সুমি হত্যা মামলার বিচার শুরু । : ঝড়ে বাড়ী ধসে রাজধানীতে একজন কিশোরীসহ তিনজন মহিলা আহত। : ‘ইত্তেফাক’-এর সম্পাদক মরহুম তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া)এর সপ্তম মত্যুবার্ষিকী পালিত। এই উপলক্ষে টিসএসসি’তে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজলের ভাষণ—“সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া স্বাধীনতার কোন মানে হয় না।“ : বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ মাছ পাচারের দায়ে কুমিল্লার সংক্ষিপ্ত আদালতের বিচারে ১৫ জনের সাজা। : পাগলা ঘাটের কাছে লঞ্চ ডাকাতির সময়ে ৬ ব্যক্তি পুলিসের হাতে ধৃত। : টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু । : দিনাজপুরে সোনা পাচারের অভিযোগে সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালতের বিচারে দুইজনের বিভিন্ন মেয়াদী সাজা। ২. প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। সরকারী সিদ্ধান্ত অনুসারে উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীরা পল্লী এলাকায় সফরে যাবেন। সরকারী কর্মকর্তাদের এই সফরকালে জনসাধারণ সহযোগিতা করবেন বলে সরকারের আশা প্রকাশ। : অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অদূর ভবিষ্যতে সৌদী আরব ইরান ও তুরস্ক সফর করবেন বলে সরকারী সিদ্ধান্ত। : রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর দায়ে ১২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত মামলার বিচার এক নম্বর বিশেষ সামরিক আদালতে শুরু। : নীলফামারীতে সপ্তম শতকের ১৯টি ভাস্কর্য মতি আবিষ্কার। : ১৯৭২ সালে সরকার যেসব শিল্প অধিগ্রহণ করেছেন তার ক্ষতিপূরণ দাবী ফরম দাখিলের শেষ তারিখ নির্ধারণ করেছেন ১৫ই সেপ্টেম্বর। : নির্বাচন কমিশন কতৃক রাজশাহী বিভাগের ১১টি নির্বাচনী এলাকা সংশোধনী। ৩. পুলিসের স্পেশাল ব্রাঞ্চের হাতে ঢাকা শহরের পুরনো এলাকা থেকে অধুনালুপ্ত ‘জাসদ’-এর একজন মহিলা কর্মীসহ চারজন ধৃত। এরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল বলে পুলিসের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ। : ভবিষ্যতে দেশের জলানীর চাহিদা মেটানোর জন্য সরকারের কাছে বাংলাদেশ জালানী পর্যালোচনা দলের সুপারিশ পেশ । সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে— যমুনা নদীর এপারে-ওপারে একটি বৈদ্যুতিক আন্তঃসংযোগ স্থাপন, বাখরাবাদ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন এবং দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সংস্কার ও মেরামত। : দেশে বেসরকারী খাতে চারটি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্যে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা কর্তৃক এক কোটী আট লাখ টাকা মঞ্জুর। : বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক পদে ডঃ আশরাফ সিদ্দিকীর নিযুক্তি। : ১৯৭২ সালের ৬৭নং রাষ্ট্রপতির আদেশ সংশোধন করে বাংলাদেশ সরকারের (চাকুরী ছাঁটাই সংশোধনী) অধ্যাদেশ জারি। ৪. দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের পরিপূরক হিসেবে প্রেসিডেন্ট কতৃক জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিলের উদ্বোধন। এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট বলেন-“দেশে-বিদেশে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশী নাগরিকই এ তহবিলে মুক্তহস্তে দান করবে বলে আমি আশা রাখি। : বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জরুরী ক্ষমতা বিধিবলে আটক আরো ২৮৫ জনের মুক্তিলাভ। এ নিয়ে মোট মুক্তি প্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২৪৩-এ। : দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতের বিচারে জ্ঞাত আয়ের সূত্র অপেক্ষা বেশী সম্পত্তি অর্জনের দায়ে সাবেক এম-পি জিল্লুর রহমানের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। : আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের বাণী—“ভারত কতৃক আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহারের ফলে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসের মূল শ্লোগান “পানি—জীবনধারণের অপরিহার্য সম্পদ’—এক অসার বাক্যে পরিণত হচ্ছে । : টাঙ্গাইলে জেলা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের হুশিয়ারী—“সরকারী কর্মচারীদের কাজে অযোগ্যতা ও অলসতা আর সহ্য করা হবে না।” : নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের শততম মঞ্চায়ন ও ‘সৎ মানুষের খোঁজের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজল বলেন—“শিল্পের অস্ত্র দিয়ে সমাজকে রক্ষণশীলতা থেকে মুক্ত করার জন্য শিল্প কর্মীদের ব্রতী হতে হবে।” :গম আত্মসাতের দায়ে যশোরে চেয়ারম্যানসহ দুই ব্যক্তি গ্রেফতার। ৫. চতুর্থ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান তরফদারের ভাষণ—“ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশে গঙ্গা অববাহিকার প্রায় বিশ হাজার বর্গমাইল এলাকায় পরিবেশ এবং আবহাওয়াগত পরিস্থিতির মারাতাক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কালক্রমে বাংলাদেশের এই জনপদ মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। : চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী মিঃ কুমু’র সঙ্গে সফররত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির । প্রতিনিধিদলের বৈঠক। প্রতিনিধিদলের প্রতি মিঃ কুমু’র আশ্বাস-“রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায় চীন-বাংলাদেশকে কার্যকর সমর্থন দেবে। ফারাক্কা বিরোধের সন্তোষজনক সমাধান সাপেক্ষে চীন বাংলাদেশকে যথাযথ পানি সংরক্ষণে সহায়তা করবে। সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করছেন মীর্জা গোলাম হাফিজ। : পাউণ্ডের সাথে টাকার বিনিময় হার পুনঃনির্ধারণ। পুনঃনির্ধারিত হার অনুযায়ী প্রতি পাউণ্ডের মূল্য হবে ২৬.৭০ টাকা। : পিলখানায় বি,ডি,আর এর দু’টি নতুন ব্যাটালিয়নের জোয়ানদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে বিডিআর এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীরের ভাষণ— ৭১ সালের সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। আর ৭৬ সাল হবে আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার বছর। লাখো লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় বিডিআর বাহিনী দঢ় প্রতিজ্ঞ। এই সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেন মোট আট শ’ জোয়ান।” : দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি পাঁচটি নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর ডঃ আবদুল মতিন চৌধুরী গ্রেফতার। ও বাংলাদেশ থেকে পুরাকীর্তির নিদর্শন পাচারের অভিযোগে পুলি’সের স্পেশাল ব্রাঞ্চ কর্তৃক হোটেল ইন্টারকনের জেনারেল ম্যানেজারকে গ্রেফতার। ঢাকায় কর্মরত এই অস্ট্রীয় নাগরিকের নাম আলফ্রেড র‍্যাডেস্কি। তিনি হুবম্যান চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং গ্রেফতারের পর পরই তাকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। : বাঙালী মালিকদের কল কারখানা ফেরত দেয়ার পরামর্শ দিয়ে পিজি হাসপাতাল থেকে ৮ অসুস্থ মওলানা ভাসানীর বিবৃতি প্রদান। বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী বলেন—“এই সব কলকারখানা ফেরত দেয়ার পর যদি উৎপাদন বৃদ্ধি না পায় ও পণ্যদ্রব্যের মূল্য না কমে এবং শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় তাহলে এসব কারখানা পুনরায় জাতীয়করণ করতে হবে। : পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের লঞ্চ, স্টীমার অথবা রেলওয়েতে সরকারী সফর সমাধা করতে হবে বলে সরকারী সিদ্ধান্ত। : বরিশালের নিকট লঞ্চ ডাকাতি। ডাকাতি চলাকালে ডাকাত ও যাত্রীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দু’জন যাত্রী নিহত। : হুমকী ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিকট একটি বসতবাড়ী ক্রয়ের অভিযোগে আনীত মামলার বিচার দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতে শুরু। ৬. আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় “কচিকাঁচার মেলা এবং খেলাঘর” আসরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজলের ভাষণ—“মামুলি শিশু পালন ব্যবস্থার মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশ সম্ভব নয়। শিশুদের জন্য সুষ্ঠ পরিবেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে আমি এবং আমার মন্ত্রণালয় চিন্তা-ভাবনা করছি।” : ভারত সরকারের সাথে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার মিঃ সমর সেনের নয়াদিল্লীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ। ১২৫ ইয়ার বুক ৭৭ ৭. পাট মূল্য উপদেষ্টা কমিটি কতৃক পাটের মূল্য পাউণ্ডে উদ্ধৃত না করে শুধুমাত্র ডলারে উদ্ধৃত করার সিদ্ধান্ত। : ময়মনসিংহ জেলার উপজাতীয়দের জন্যে পাঁচটি কুটির শিল্পকেন্দ্র ” স্থাপনের জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ প্রকল্পের জন্য বিড়ি-সিড়িতে প্রথম ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের স্থাপন নির্বাচন শেষ। অন্য প্রকল্প গুলোর মধ্যে দু’টি জামালপুরের নালিতাবাড়ী থানায়, একটি শ্রীবর্দি থানায় এবং একটি হালুয়াঘাট থানায় স্থাপিত হবে। : বিচারপতি মোহাম্মদ নুরুল হুদার স্ক্রীনিং বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্তি। ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন,হুদার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রশ্ন নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মিঃ চুয়াং ইয়েনের আলোচনা। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি, কৃষি, পল্লী ও শিম্পায়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদের উন্নয়নের এ ব্যাপারে গুরত্ব আরোপ। :ভ্যানকুভারে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ লোকবসতি (হ্যাবিটাট) সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বোরহান উদ্দিন আহমদের ভাষণ– “নদ-নদীর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে প্রকৃতির পরিবেশগত ভারসাম্য। তাই বাংলাদেশে মনুষ্যশক্তি ও পানি বিজ্ঞান সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে।” : বিজ্ঞান ও কারিগরি যাদুঘর পরিচালনা পরিষদের তৈরী বিজ্ঞান ও কারিগরি যাদুঘরের ‘ওয়াকিং পেপার’ চূড়ান্ত বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে। : সরকার কর্তৃক জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত ব্যুরো গঠন। এই ব্যুরো এখন থেকে দেশের সকল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চাকুরী বিনিয়োগ কেন্দ্র, বৃত্তিমূলক সহযোগিতা, ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস ও শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ—এসব কিছুর পরিচালনা করবেন। : ইনইসি নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এনইসি নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠকে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবুল ফজল, কাজী আনোয়ারুল হক, ডঃ এম, এন, হদা প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মন্ত্রণালয়, ডিভিশন, বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং কর্পোরেশনসমূহের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন সেল গঠনের অগ্রগতির পর্যালোচনা করা হয়। : এক নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতে ‘বাবু অপহরণ’ মামলার বিচার শুরু। : জমি নিয়ে মারপিটে ভৈরব থানার শিমুলকান্দিতে তিন ব্যক্তি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত। ৮. অবিরাম বর্ষণে ভূমিধ্বসের ফলে চট্টগ্রামের চারজনের প্রাণহানি। সিলেটের হবিগঞ্জে প্রবল বন্যা। সিলেট-হবিগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত। : নিউজপ্রিন্টের মূল্য ও সংবাদপত্র শিল্পের অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে, সরকার কর্তৃক বিজ্ঞাপনের হার বৃদ্ধিকরণ। আগামী ১লা জুন এ হার কার্যকরী হবে। : তিন সপ্তাহের এক শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশের চার সদস্যের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের পিকিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ‘টাইমস’-এর সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান। প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্য হচ্ছেন—“বিএফইউজে’র সাধারণ সম্পাদক গিয়াস কামাল চৌধুরী.. রেড়িও বাংলাদেশের বার্তা সম্পাদক আনিস চৌধুরী এবং ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মদ আসফদ্দৌলা। : রংপুরে একাদশ ডিভিশনের পতাকা উদ্বোধনকালে সেনাবাহিনীর অফিসার ও জওয়ানদের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন– “আপনাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে, আধুনিক জ্ঞানে সুসজ্জিত হতে হবে যাতে করে যে কোন দায়িত্বপর্ণ কাজ আপনাদের দেয়া হলে আপনারা তার মোকাবেলা করতে পারেন। বিপুল ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে, শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। দায়িত্ব পালনে আপনারা দেশপ্রেম, আতোৎসর্গ ও নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য সমুন্নত রাখুন। : টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ কতৃক হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দুই ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান। ৯. রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর দায়ে ঢাকার এক নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালত কর্তৃক ৯ ব্যক্তির ১০ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান এবং ২ হাজার টাকা করে.. জরিমানার আদেশ। : সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি। : প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানী ঢাকার জনবহুল রাস্তায় দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ৫৬ হাজার টাকা ছিনতাই। : জেনেভায় অনুষ্ঠিত চাকুরী, আয় বণ্টন, সামাজিক অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক শ্রম বিভাগ সংক্রান্ত ত্রিপক্ষীয় বিশ্ব সম্মেলনে প্রেসিডেণ্টের উপদেষ্টা ডঃ মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ভাষণ—“জরুরী ভিত্তিতে ফারাক্কা সমস্যার সমাধান চাই”। : ঢাকার চলচ্চিত্র জগতের প্রবীণতম অভিনেত্রী রহিমা খাতুন (রহিমা খালা) -এর ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহে……রাজেউন)। মত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। (চলচ্চিত্র দ্রষ্টব্য) : বাংলাদেশে ইটালীর রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডঃ ম্যসিসিমো ক্যাসিলি দ্য আরগোনার নিযুক্তি। তিনি মিঃ বারাট্রিয়েরী দ্য সান পিয়েট্রার স্থলাভিষিক্ত হলেন। : ভিয়েনায় অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার গভর্ণর বোর্ডের বৈঠকে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইন্নাস আলীর নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদলের ভিয়েনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ। : বগুড়ায় অস্ত্রশস্ত্রসহ ৬ জন দুষ্কৃতকারী আটক। ১০. গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে গোটা চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলা বন্যা প্লাবিত। প্রাণহানির সংখ্যা সাত । ঢাকা ময়মনসিংহ সড়ক বিচ্ছিন্ন। বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য সরকারের ১১ লাখ টাকা মঞ্জুর। : বৃটেনে বর্ণবাদী দাঙ্গায় বাংলাদেশে সরকারীভাবে উদ্বেগ প্রকাশ । : এনইসি নির্বাহী কমিটির । বৈঠকে ১৩৮ কোটী ৬০ লাখ টাকার দশটি প্রকল্প অনুমোদিত। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ রয়েছে ৬৬ কোটী ২৩ লাখ। প্রকল্পগুলো হচ্ছে-ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২ শ’টি মিটারগেজ ও ১৫০টি ব্রডগেজ বগী সংগ্রহ, রাঙ্গামাটিতে একটি বস্ত্র মিল স্থাপন, একটি ইনস্যুলেটর ও স্যানিটারী অয়্যার ফ্যাক্টরী স্থাপন, ডেমরা-দাউদকান্দি সড়ক উন্নয়ন, ৭০টি সার গুদাম নির্মাণ, কাপ্তাইয়ে একটি বন উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং রবার চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রজেক্ট সম্প্রসারণ। : বিশ্ব মুসলিম সম্মেলনে যোগদানের জন্য বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলীর প্রতি নবতিপর জননেতা মওলানা ভাসানীর আমন্ত্রণ। আগামী শীতকালে, কোন এক সময় মওলানা ভাসানী বাংলাদেশে এ সম্মেলন ডাকবেন। : সেনাকল্যাণ সংস্থার নিকট হতে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের জন্য জেনারেল জিয়ার ২ লাখ টাকার একটি চেক গ্রহণ। ১১. ভারত থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন ব্যক্তির সাংবাদিকদের কাছে জবাববন্দী—“ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় এক শ্রেণীর দূষ্কৃতকারী সীমান্তে উস্কানীমূলক তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এই সব দুষ্কৃতকারীদেরকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী ট্রেনিংদান, অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ, সীমান্তে হামলা ও লুঠতরাজ প্রভৃতি সার্বিক বিষয়াদি তত্বাবধান এবং ব্যবস্থাপনা করে থাকে। পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহের কমলাকান্দা থানার সাবেক ওসি আশরাফ আলী, তাঁর স্ত্রী, ভাই মোহাম্মদ শমসের, গৃহভৃত্য আবদুস সোবহান। এছাড়াও আরো তিনজন ছাত্রসহ আট ব্যক্তিও পালিয়ে এসে ছেন। : দুই দিনব্যাপী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের সভার উদ্বোধনকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ এম, এন, হুদার ভাষণ, “বেসরকারী খাতকে ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন মূল্য নির্ধারণ এবং বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারী খাতের চেয়ে উন্নত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। : চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি। প্রাণহানি ও নিখোজের সংখ্যা ৭০। : বন্যাদুর্গতদের জন্য নবতিপর অসুস্থ জননেতা মওলানা ভাসানীর সমবেদনা জ্ঞাপন। : বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার জন্য জেনারেল জিয়ার চট্টগ্রাম সফরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ। জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে ও তার সাথে বিপর্যয় মোকাবেলা করার জন্য জেনারেল জিয়ার আহৰান। : ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জগামী একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে স্টেনগান, দুই রাউন্ড গুলী, দু’টি ম্যাগজিন ও তিনটি ছোরা উদ্ধার। ১২. প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন, হুদার ভাষণ—‘সরকারী খাতে সংরক্ষিত ১৮টি শিল্পের মধ্যে ৮টি থাকবে সরকারী খাতে। অপর দশটি থাকবে যৌথ পরিচালনাধীন। সরকারী খাতের শিল্পগুলো হচ্ছে, পাটশিল্প, বস্ত্রশিল্প, চিনিশিল্প, আণবিক শক্তি, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ কেবলস, ইলেকট্রিসিটি, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ প্রতিরক্ষা খাতের উপকরণ এবং পরিবহণ খাত। : সচিবালয়ে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিস ও পুলিস সুপারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে জেনারেল জিয়া বলেন–“মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক স্বাধীনতার আদর্শ ভুলে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সীমিত সামর্থ নিয়েই পুলিস বাহিনীকে দক্ষতার সাথে দুষ্কৃকারীদের উপর আঘাত হানতে হবে : সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় ভিত্তিতে সংগঠিত করার একটি স্কীম প্রণয়ন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় দফতর উপলক্ষে জেনারেল জিয়া একথা জানান। : রফতানী উন্নয়ন সংস্থার মহাপরিচালক মোকাম্মেল হোসেন রফতানী উন্নয়ন পরিষদের সম্মেলনে বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য ৬০৩ কোটী টাকার পণ্য রপ্তানীর প্রস্তাব করা হয়েছে। : অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানী করতে রপ্তানীকারকদের প্রতি জেনারেল জিয়ার আহবান। এ ব্যাপারে তিনি ব্যবসায়িগণকে সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রকার সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন। : নিখোঁজ নিহার বানুর লাশ উদ্ধার। তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ১৭ই জানুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্ব, এম এ-র ছাত্রী নিহার বানু, নিখোঁজ হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে সন্দেহবশতঃ পুলিস শহীদুল ইসলাম, নীলু, ও এনামুল হককে গ্রেফতার করেছে। দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোট ২৮ কোটী ৮৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ। ১৩. বেইলী রোডে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নতুন কার্যালয় উদ্বোধনকালে জেনারেল জিয়ার ভাষণ –“সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ গঠনের কাজে নিয়োজিত করার এবং পূনর্বাসন দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি স্বাধীনতা রক্ষায় সদাসতর্ক থাকার আহবান জানান। পঙ্গু বা কর্মক্ষমতাহীন মুক্তিযোদ্ধাদের আজীবন রাষ্ট্রীয় ভাতা দেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তও তিনি ঘোষণা করেন। : বন্যাদুর্গতদের অবস্থা সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, কে, বাশার দু’বার সিলেট যান। এদিকে বন্যদুর্গত এলাকায় বিমান থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিক্ষেপ করা হচ্ছে। : সিলেটে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। গত এক সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হচ্ছে ৪৭.৬২ ইঞ্চি। ১৪. প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬ সালের বিশেষ সামরিক আইন ট্রাইব্যুনাল বিধি জারি। ট্রাইব্যুনালে একজন চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন সদস্য থাকবেন। এই বিধি বলবৎ করার আগে বা পরে সংঘটিত যে কোন অপরাধের বিচার করতে পারবেন। : এক নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালত কর্তৃক বাবু, অপহরণের দায়ে কিশোর রুহুল আমিনের দশ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরো দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান। : মাগুরায় দু’জন ভারতীয় নাগরিকসহ সাতজন কালোবাজারী গ্রেফতার। পুলিস এদের কাছ থেকে সাত হাজার টাকার বিদেশী কাপড় উদ্ধার করেছে। : সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে তাঁর বিমান সঙ্গী সাংবাদিকদের নিকট ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন—“বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য যা কিছু, করা সম্ভব, ভারত তা করবে।” : দশ টাকার প্রাইজবণ্ডের ৮ম ডু অনুষ্ঠিত। ১৫. এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেনারেল জিয়া বলেন—“বন্যাকে স্থায়ীভাবে মোকাবেলা করার জন্য প্রথমবারের মত একটি স্থায়ী সাংগঠনিক কাঠামো সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে। এই কাঠামো রিলিফ মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, জাতীয় মহিলা সংস্থা, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, অন্যান্য জাতীয় সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগগুলোকে নিয়ে গঠিত হবে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠুক আমরা তা চাই না। আমরা আশা করি এই অবস্থার যাতে সৃষ্টি না হয় ভারত সরকার তার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। : বন্যা ত্রাণ তহবিলে মুক্ত হস্তে দান করার জন্য জনগণের প্রতি প্রেসিডেন্টের আহবান। ১৬ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সফররত যুগোস্লাভ ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আলোচনাকালে উভয়পক্ষই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে একযোগে কাজ করবে। সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় ৭০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত মৃতের সংখ্যা ১ শ’ ৭২ জন।। সরকার শতকরা ৬ ভাগ সুদে ২৫ কোটী টাকার ট্রেজারী বিল বাজারে ছাড়বে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। সরকার কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলার বন্যার্তদের জন্য আরো পাঁচ হাজার মন গম বরাদ। ১৭ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে দেশে সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এই পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কবি পুনর্বাসন চালু, করার জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্দেশ। তিন দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে যুগোশ্লাভ ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুজসভা বলেন উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নীতি প্রশংসনীয় সিরাজুল আলম খান সহ ১১ জনকে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ কেউ উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে অনুপস্থিতিতে বিচার করা হবে এবং সকল সম্পত্তি রাজেয়াফত করা হবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন সংসহার উদ্যোগে এ দেশে প্রথম পরীক্ষামুলকভাবে ব্যাঙ-এর চাষ শুরু বিদেশে প্রশিক্ষণরত ছাত্রদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের আদেশ জারি আদেশে বলা হয়েছে (১) পাসপোর্টের মেয়াদ তাদের অধ্যয়ন সময়কাল পর্যন্ত সীমিত করা, একমাত্র সংশ্লিষ্ট দেশ ও পথিমধ্যের দেশসমুহের জন্য বৈধ করা ও পাসপোর্টধারী যে একজন বৃত্তিধারী তার উল্লেখ করতে হবে, (২) পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধি ও নতুন দেশের সংযোজন একমাত্র সংস্থাপন বিভাগের মাধ্যমেই বৈধ করা যাবে, (৩) কোন ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণের সময়সীমা বৃদ্ধি করা যাবে না। ১৮ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদে দু’জন নতুন সদস্য নিয়োগ। এরা হচ্ছেন-কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোঃ মাসুদুল হক ও জনাব আজিজুল হক : ১৯৭৫ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের মে পর্যন্ত ৫৯৫ কোটী ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব হিসেবে আদায় সরকারী হ্যাণ্ডআউটে বলা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে আদায়ের পরিমাণ ৭২ কোটী টাকা বেশী ও নির্বাচন কমিশন আজ খুলনা ও যশোর জেলার নির্বাচনী এলাকা সংক্রান্ত আপত্তি ও সুপারিশ শ্রবণ করেন। কমিশন খুলনার ছ’টি এবং যশোরের দু’টি মো আটটি এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করেন ও ফারাক্কা এবং সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান মি, জি, পার্থ সারথীর নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের ঢাকা আগমন বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণে মিঃ পার্থসারথী বলেন‘ ফারাক্কা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তবে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এমন কোন সমস্যা নেই যার সন্তোষজনক সমাধান সম্ভব নয়। এ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব ও করবেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম. এইচ, খান। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার বীজের অনুদান দেয়ার সরকারী সিদ্ধান্ত। : ২৪শে জনে অনুষ্ঠিতব্য আলী ইনোকীর মধ্যেকার মুস্তিযুদ্ধ প্রতিযোগিতা টেলিভিশনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার জন্য মাওলানা ভাসানীর আহবান ও প্রায় তিন সপ্তাহের চীন সফর শেষে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির তিনজনের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের অন্য দু’জন মীর্জা গোলাম হাফিজু ও নীগার শাহীদ উত্তর কোরিয়া ভ্রমণরত রয়েছেন। ১৯ আইনজীবী সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের ভাষণ নিম্ন আদালতসমুহকে হাই কোর্টের আওতাধীন আনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করে দেখছেন। একই সঙ্গে তিনি সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগকে পৃথক করে একজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সরকারী সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আইনজীবীদের আদালতে মাতৃভাষা বাংলা চালু করার বিষয়টিতে দৃষ্টি দেয়ার সময় এসেছে। ১৯৭৬ সালের বিশেষ সামরিক আইন ট্রাইব্যুনাল বিধির সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬ সালের সপ্তম সামরিক আইন বিধি জারি। বাংলাদেশ-ভারত বৈঠকের প্রথম দিনের আলোচনায় ফারাক্কাই ছিল প্রধান বিষয়। দিনের আলোচনা শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা এম, এইচ, খানের আশ্বাস, ফারাক্কা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে কিছু একটা হবে বলে আশা করছি। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা বলেন, আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর নারিন্দা এলাকায় বিস্ফোরক বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে একজন যুবকের মৃত্যু। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল এইচ, এম, এরশাদের জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্তি। : ডাকাতি বা অনুরুপ : কোন বিপদে ঢাকার ব্যাংকগুলোতে সতর্ক সংকেত চালু হবে বলে পুলিস কমিশনার ই, এ, চৌধুরীর তথ্য প্রকাশ। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ডেপুটি এটর্নী জেনারেল জনাব আলমের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ। ২০ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যেকার দ্বিতীয় দিনেরও আলোচনার বিষয় ছিল ফারাক্কা সমস্যা। দিনের আলোচনা শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেন, আমরা ফারাক্কা সমস্যার ন্যায়সঙ্গত স্থায়ী সমাধান চাচ্ছি। এখন ভারত সরকারের জবাবের প্রত্যাশা করছি। ফারাক্কা সমস্যা শেষে সীমান্ত ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হবে বলে তিনি জানান। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা শ্রী পার্থ সারথীর সংক্ষিপ্ত উত্তর ; আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামীকাল আবার বৈঠকে বসবো। ঢাকা-দিল্লী সম্পর্ক নিয়ে জেনারেল জিয়ার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের আলোচনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে, প্রেসিডেন্টের ভাষণ জাতীয় উন্নয়ন তৎপরতার সবক্ষেত্রে নেতৃত্বদান ও ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেবার উদ্দেশ্যে ছাত্রদেরকে তৈরী হতে হবে ও ত্রাণ সামগ্রী সন্ঠ বণ্টন নিশ্চিত করতে বন্যাদুতে এলাকার কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের প্রতি বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, কে, বাশারের আহবান। : ফটিকছড়িতে স্থানীয় কর্মকর্তা, নেতৃস্থানীয় নাগরিক ও প্রাণ কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেণ্টের ভাষণ বন্যাকবলিত অঞ্চলে পর্যাপ্ত বীজ ও সার দেয়া হবে। একই কর্মকর্তাদেরকে জনগণের সমস্যা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হতেও তিনি আহবান জানান একদিনে ঢাকা-আরিচা রোডে তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জন নিহত ও চব্বিশজন আহত। ২১ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাত বছরের শিশু, মেয়ে সুমিকে অপহরণ ও হত্যার দায়ে তিন নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতের বিচারে ১৬ বছর বয়স্ক ছাত্র ইকবাল হক ও তার সহযোগী রাশেদ বয়াতীর প্রাণদণ্ড। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) ঢাকায় শিশু একাডেমী ও রাঙ্গামাটিতে উপজাতীয়দের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এয়ার ভাইস মার্শাল এম, কে, বাশারের ছাতক সিমেন্ট কারখানা পরিদর্শন। বাসস-র প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চৈ-কিউ-হা. বলেছেন“গঙ্গার পানির ন্যায়সঙ্গত বণ্টনে ভারত ও বাংলাদেশের একটি সন্তোষজনক চুক্তিতে পৌছান উচিত।” চট্টগ্রাম বন্দর পুলিস কর্তৃক ২. লাখ টাকার মালামালসহ ১২ ব্যক্তি গ্রেফতার। বনানী চেকপোস্টে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্টকে পাঁচ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে কার সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত কতৃক ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান! সেনাবাহিনীর বার্ষিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে জেনারেল জিয়ার ঘোষণা দেশের খেলাধুলার মান উন্নয়নে শীগগীরই দশ কোটী টাকা ব্যয়ে একটি জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হবে। বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফারাক্কা, সীমান্ত ঘটনা, সংবাদপত্রের মন্তব্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ২২ জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক ৮৮৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন। পক্ষকালের লন্ডন, রোম ও কুয়েত সফর শেষে ঢাকা বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা কাজী আনোয়ারুল হক বিদেশে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের যথেষ্ট কদর রয়েছে। ১. সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশী কারখানাসমূহের জন্য দেয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে মোট ৫৫ লাখ টাকা প্রদান। ৩. বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে. কম উচ্চ পর্যায়ের চারদিনের আলোচনা শেষ। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যেকার বন্ধুপূর্ণ সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে প্রতিনিধিদের মন্তব্য প্রকাশ। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা পার্থসারথী ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে বলেন আমরা আলোচনা করেছি। এখন সরকারকে জানার ও দু’দেশের মতপার্থক্য দূর করতে মতবিনিময় করব। তবে দু’দেশের মতপার্থক্যের কোন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। ২৩ সাম্প্রতিক বন্যার পরবর্তীতে মহামারীর আশংকায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতি সজাগ থাকার জন্য সরকারী আহ্বান গারো উপজাতীয়দের উপর ‘এক আলোচনায় ভাষণ দিতে গিয়ে তথ্য সচিব এ, বি, এম, গোলাম মোস্তফা ময়মনসিংহে বলেন সরকার উপজাতীয়দের ভাগ্য উন্নয়ন করতে বদ্ধপরিকর।” ১. প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। হত্যার দায়ে তিন ব্যক্তির : মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান। খুলনা সেসন জজের কোটে এ বিচার হয়। ২৪ বন্যাকবলিত হওয়ার সর্বাধিক আশঙ্কা যুক্ত এলাকাসমূহে ৬ কোটী টাকা ব্যয়ে ১০০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ইউনিসেফ’ আয়োজিত বিশ্ব শিশ, রোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ টি, আহমেদ বলেন বাংলাদেশেই শিশু, মৃত্যুর হার সর্বাধিক। এ দেশের শতকরা প্রায় ৪৬ জন ১৫ বছর বয়সের নীচের শিশু, হয় জরাব্যাধি নতুবা মৃত্যুর শিকার।” ময়মনসিংহে তথ্য ও বেতার সচিব এ, বি, এম, গোলাম মোস্তফা বলেন সরকার এ পর্যন্ত ১৪টি দৈনিকসহ মোট ১৯৪টি সংবাদপত্র সাময়িকী প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে। সরকার কর্তৃক বন্যাদুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের জন্য সাহায্য হিসেবে ৮০০ মন উচ্চ ফলনশীল রোপা আমনের বীজ ও ৫৮,৪০০ মন রাসায়নিক সার বরাদ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিকট মওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত পত্র প্রেরণ। পত্রে মওলানা বলেন অফিসার পর্যায়ে এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ফারাক্কা ও সীমান্ত সমস্যা সমাধানে আপনি বাংলাদেশ সফরে আসুন। এবং আলোচনা করন। জনৈক শিক্ষককে প্রহাবের দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের যাবজ্জীবন বহিষ্কার। বেসরকারী শিল্পখাতে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের প্রায় তিন কোটী টাকা মঞ্জুর ২৬ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৬-৭৭ – অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা। ১৯৮ কোটী ৫০ লাখ টাকার উদ্ধত্ত রাজত্ব বাজেট ১২২২ কোটী টাকার উন্নয়ন বাজেট ঘোষণা। কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৩৬৩ কোটী টাকা বরাদ্দ। ১৯৭৬-৭৭ সালের জাতীয় বাজেটে কর কার্যক্রমের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার কর্তৃক ১৯৭৬ সালের ফাইন্যান্স অর্ডিন্যান্স জারি।। পিজি হাসপাতালে কবি নজরুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ। বিশিষ্ট পাঁচজন চিকিৎসক নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন। রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প কারখানার সেরা কর্মী এবং দেশের হাসপাতাল গুলোর সেরা নার্সদের জন্যে সরকার কর্তৃক বিশেষ পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত। ঢাকা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৫৪ ০১ শতাংশ ও সাবেক বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার বিরদ্ধে তহবিল আত্মসাৎ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে চতুর্থ মামলার বিচার শুরু ২৭ বাজেট-উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে জেনারেল জিয়া বলেন আগামী অর্থবছরের বাজেটে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। মুল ট্রাটেজী বিশ্লেষণে জেনারেল জিয়া বলেন, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সকল শ্রেণীর জনগণকে উৎপাদনমুখী কাজে উদ্ভুদ্ধ করে তোেলাই বাজেটের মুল লক্ষ্য ও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বণিক সমিতি কর্তৃক পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বাজেট অভিনন্দিত। বিশ্ব মুসলিম সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটি গঠনে ১৬ই আগস্ট সন্তােষে বৈঠকের আহান জানিয়ে মওলানা ভাসানীর বিবৃতি প্রদান ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন যেসব পরিত্যক্ত শিল্প ও কারখানা সরকার জাতীয়করণ করেছিলেন সেগুলো হতে ক্রমান্বয়ে পুজি প্রত্যাহার করা হবে। এ সাংবাদিক সম্মেলনেই প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ এম, এন, হুদা বাঙালী মালিকানাধীন রাষ্ট্রায়ত্ব কলকারখানা ফেরত দেয়ার কথা অস্বীকার করেন। ২৮ ঢাকার বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বিশেষ বৈঠক। বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারীরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। রামপুরায় শিশু, অপহরণের সময় একজন কিশোর শিশু অপহরণকারী গ্রেফতার। পিকিংয়ে সফরত বাংলাদেশ । সাংবাদিকসহ প্রতিনিধিদলের আলোচনায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি পলিটব্যুরোর সদস্য মিঃ ? ইয়াও ওয়েন ইয়ানের মন্তব্য বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে চীনের জনগণ দৃঢ় ও সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে। এছাড়া চেয়ারম্যান মাও নিজেও দুদেশের সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে গভীর দৃষ্টি রাখছেন। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা সহজে মাসিক ভাতা গ্রহণ করতে পারেন তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি চালু করতে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জরুরী ক্ষমতা বিধির অধীনে আরও ৩০ ব্যক্তির মুক্তিলাভ। জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী এলাকায় চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ। এ তালিকায় ১৫টি জেলায় মোট ৮৬টি নির্বাচনী এলাকার সীমানা সংশোধন করা হয়েছে। । সরকারী ব্যবস্থাধীন সংবাদপত্রের কর্মচারীদের অযৌক্তিক ও অনিয়মিত পদোন্নতি-এ প্রদত্ত অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনার জন্য পর্যালোচনা বোর্ড গঠন। বোর্ডকে এক মাসের মধ্যেই রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দান। ২৯ পাবনা, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে জেনারেল জিয়ার ঝটিকা সফর। সফরকালে তিনি সরকারী কর্মকর্তা ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণের সঙ্গে বেশ কয়েকটি পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে জেনারেল জিয়ার ঘোষণা—“জেলাসমুহে যোগাযোগের অবস্থা উন্নয়ন করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। একাড়াও শিম্পায়ন এক স্থানে কেন্দ্রীভূত না করে বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে করে পল্লীর জনগণও এর সুফল পাবেন।” বৃটেন সফররত রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের সঙ্গে বৃটিশ বৈদেশিক উন্নয়ন মন্ত্রীর বৈঠক। বৈঠকে দু’দেশের অর্থনৈতিক সাযযাগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। রিয়ার এমিরাল এম, এইচ, খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (অস্পস্ট) বার্ষিক স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।যাওয়ার পথে লণ্ডনে পৌছে এ বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। . ঢাকা-আরিচা সড়কে ২৪ ঘণ্টায় তিনটি দুর্ঘটনা। দু’জন বালকের মৃত্যু এবং ১৫ জন আহত। । অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক ‘অভিমত’-এর সম্পাদক, প্রবীণ সাংবাদিক আলী আশরাফের ‘দৈনিক বাংলা ও সংশ্লিষ্ট প্রকাশনার ম্যানেজিং এডিটর পদে নিযুক্তি। সেনাবাহিনীর উপ-স্টাফ প্রধান মেজর জেনারেল এইচ, এম, এরশাদ কর্তৃক সৈনিকদের জন্য স্বল্প ব্যয়ের আবাসিক স্কীম উদ্বোধন। আটক আরও ৩০ ব্যক্তির মুক্তিলাভ। এ পর্যন্ত মোট মুক্তি প্রাপ্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩০০-এ। দেশের সর্বত্র কেরোসিন ও হাই স্পীড ডিজেলের দাম সমান। হারে ধার্য সাবেক এমপি আবদুল কুন্দস মাখন ও তার দুই ভাইয়ের প্রত্যেককে চার বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান। ভীতিপ্রদর্শন করে বাড়ী ক্রয়ের অভিযোগে দুই নম্বর সামরিক আইন আদালতের বিচারে এ দণ্ড প্রদান করা হয়। ৩০ সরকার কর্তৃক চলতি অর্থবছরের আমদানী নীতি ঘোষণা। আমদানী খাতে ৪৬৪ কোটী টাকা বরাদ্দ। মোট বরাদ্দের ২০২ কোটী টাকা হবে নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রা এবং ২১৬ কোটী টাকা হবে বৈদেশিক ঋণলব্ধ। আমদানী নীতিতে উৎপাদনমুখী দ্রব্যসামগ্রী আমদানীতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে আহত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক, ১৯৭৫ সালের সংবাদ (ডিক্লারেশন বাতিল ) অধ্যাদেশ বাতিল ঘোষণা। (সংবাদপত্র দ্রষ্টব্য) লণ্ডনে সাংবাদিক সম্মেলনে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার ফারাক্কা সমস্যা সমাধানে বন্ধুদেশের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাবো।” টিএন্ডটি বিভাগকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার বিরদ্ধে জননেতা মওলানা ভাসানীর বিবৃতি।
জুলাই
(১) ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরের রফতানী নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৬৪ কোটী টাকার রফতানী লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। (অর্থনীতি দ্রষ্টব্য) সকালে, প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম বঙ্গভবন প্রাঙ্গণে পেপের চারা রোপণ করে বৃক্ষরোপণ পক্ষ উদ্বোধন করেন। : চট্টগ্রামে দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর স্টাফ-প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান একটি মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে ভাষণ দানকালে জেনারেল জিয়া বলেন—“ভাগ্য গঠনে পুরোপুরি নৈতিক পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন। ঃ সরকার দেশের রফতানী বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উৎসাহুদানের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর সর্বাধিক পরিমাণ পণ্য রফতানীকারকদের পদক ও সার্টিফিকেট প্রদান করবেন—বলেছেন রফতানী উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক। : সিলেট, চট্টগ্রাম ও ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সিলেট শহরের প্রধান প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র এখন পানির নীচে। : কলম্বো পরিকল্পনার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেণ্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন, হুদা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, জাতিতে জাতিতে সম্পর্ক উন্নয়নে কলম্বাে পরিকপনার ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। ঃ সরকারী পদমর্যাদার অপব্যবহার এবং অসং ও বেআইনী পন্থায় নিজের ও স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংক আর্থিক সুবিধা নেবার অভিযোগে পুলিস ১৯৭৫ সালের ১নং সামরিক আইন বিধির ১১নং ধারার অধীনে সাবেক ক্যাবিনেট সেক্রেটারী জনাব এইচ, টি, ইমামের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে। : ‘দৈনিক বাংলার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরীতে শিশু, অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) : কেন্দ্রীয় তথ্য সার্ভিসের সাবেক সদস্য জনাব এনামুল হক বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য অফিসারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। জানুয়ারী থেকে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৬০, ৬০২টি রেশনকার্ড বাতিল করা হয়েছে বলে এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে। (২) সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি সদর মহকুমায় দশ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত। । স্থানীয় ওয়াপদা মিলনায়তনে নগরীর বিশিষ্ট নাগরিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তথ্য প্রকাশ করেন যে, ঢাকায় বুড়িগঙ্গার উপর সেতু নির্মাণের স্কীম তৈরী হচ্ছে। তিনি প্রসঙ্গক্রমে – আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্যে দেশের বিভিন্ন খাদ্য গুদামে দশ লাখ টন খাদ্যশস্য মওজুদ রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন, হুদা এক সাংবাদিক সম্মেলনে চলতি বছরের রফতানী নীতি এবং জুলাই ডিসেম্বর মওসুমে আমদানী নীতির মুল স্ট্র্যাটেজী বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে বলেন-“বার্ষিক উন্নয়নে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকর অবদান রাখার পরিপূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে চলতি অর্থ ডিসেম্বর মওসুমের আমদানী নীতি নির্ধারিত হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তেজগাঁও টেলিফোন কারখানায় স্বাধীনতার পর তিন বছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯২ টাকা। : যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিশতম স্বাধীনতা ‘বার্ষিকী উৎসবে যোগদানের জন্য দৈনিক বাংলার সম্পাদক জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের পথে ঢাকা ত্যাগ করে, : আখাউড়া-ঢাকা লোকাল ট্রেনে রাত দশটার দিকে এক ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। ও ইন্দোনেশিয়ার ইরিয়ান জয়া প্রদেশে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেনারেল সুহার্তোর কাছে এক বাণী পাঠিয়েছেন। (৩) সরকার বিনিয়োগের সুযোগ সম্প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পুজিবিনিয়োগ কর্পোরেশন নামে একটি নতুন বিনিয়োগ সংস্থা গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কর্পোরেশনের মুখ্য উদ্দেশ্য নিধারিত হয়েছে (ক) বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগের ভিত্তি সম্প্রসারিত করা, (খ) ক্যাপিটাল মার্কেটের , সম্প্রসারণে সহায়তা করা, (গ) সঞ্চয়যোজন করা। (অর্থনীতি দ্রষ্টব্য) . বাংলাদেশে নবনিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত মিঃ হরকা বাহারি থাপা বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি এ, এম, সায়েমের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেন। ও মার্কিন যুক্তরাস্ট সবাধীনতা ঘোষণার দ্বিশততম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ফোরডের কাছে প্রেরিত এক অভিনন্দন বার্তায় প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেছেন : সাপ্ততিককালে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত অন্যান্য দেশের জনগণের মত বাংলাদেশের জনগণ ঐ ঘোষণায় বিধৃত মহান আদর্শ মানব স্বাধীনতা, সাম্য ও ব্যক্তির মর্যাদার অবিনাশী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট তাঁর বার্তায় প্রেসিডেন্ট ফোরডের সুখ, স্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন, মার্কিন জনগণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি ।এবং শান্তি কামনা করেন। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হেনরী কিসিঞ্জার এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। : সিলেট ও কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে। মওলবীবাজার মহকুমার শহরে বন্যার পানি ঢুকছে। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ ‘ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পাসের হার শতকরা ৫৩ দশমিক ৮ পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মওলানা ভাসানী অসুস্থ অবস্থাতেই ‘দৈনিক বাংলা’র কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে জাতীয় বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তিনি বলেন দেশের সাবভৌমত্ব রক্ষা করাই বড় কথা ‘সারের দাম বাড়লে তা কৃষির ক্ষয় করবে।” ; বৈদেশিক সাহায্য চুক্তি অধীনে ১৮ হাজার ৬৮ কোটী ৪০ লক্ষ ডলার স্বাধীনতা পর্বকালের দায়দেনা বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। : ঢাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন মত্যুবরণ করেছে। ( ৪) যশোরের সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত তিন হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের দায়ে সদর মহকুমার অভয়নগর থানার সাবেক ওসি মুন্সী নাসির আহমদকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্য‘মিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি ১৯৭৬ সনে গৃহীত এস-এস-সি পরীক্ষার ফলাফল আজ সকালে ঘোষণা করা হয়েছে। পরীক্ষায় পাসের হার ৪৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। সিলেট, কুমিল্লা, রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি।। ঠাকুরগাঁয় দশ হাজার একর জমির আখক্ষেতে মাজরা পোকা আক্রমণ চালিয়েছে, প্রতিরোধে অচলাবস্থা দৈনিক বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। (৫) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর ডঃ আবদুল মতিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অস গত অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে আনীত মামলার বিচার এক নম্বর সামরিক আইন আদালতে শুরু হয়েছে। ঃ সরকার বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা এবং প্রশাসনের একটি ট্রাস্টি বোের্ড গঠন করেছেন। এখন থেকে ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় দিবসের পরিবর্তে বিজয় দিবস হিসেখে পালন করা হবে। : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থা বিভিন্ন ধরনের বিশটি বাজ ও যাত্রীবাহী নৌযান হস্তান্তর করেছে। : কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এশিইয়ান-আফ্রিকান আইন উপদেষ্টা কমিটির সপ্তদশ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা বিচারপতি জনাব ফজলে মুনিম বলেন. “জাতিসংঘ সনদের লক্ষ্য ও নীতির কাঠামোর আওতায় বিশেষ করে অপর রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতির ভিত্তিতে ভিন্ন দেশে আশ্রয়দানের প্রশ্নটি বিবেচিত হওয়া উচিত। : যমুনার করাল গ্রাসে জামালপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন। ঃ মাগুড়ায় বাহাজউদ্দিন নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ গলায় রশি আটকিয়ে আত্মহত্যা করেছে। (৬) রাজশাহী বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড ও এর উপদেষ্টা কমিটির এক সভায় ভাষণ দানকালে জেনারেল জিয়া দেশের উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসার জন্যে স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, রংপুর কারমাইকেল কলেজকে পর্যায়ক্রমে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রপান্তরিত করা হবে। তিনি বলেন, সরকার উত্তরাঞ্চলে দু’টো কৃষি কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর একটি দিনাজপুরে এবং অপরটি পাবনার আটখারিয়ায় স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, সরকার উত্তরাঞ্চলে দুটো কৃষি কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর একটি দিনাজপুরে এবং অপরটি পাবনার আটখারিয়ায় স্থাপন করা হবে। তিনি ঘোষণা করেন, আগামী দুমাসের মধ্যে রাজশাহী থেকে সরকারের উদ্যোগে একটি জাতীয় বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে। কর ফাঁকিদানকারীরা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ পর্যন্ত ৪৫ কোটীও বেশী টাকা কর না দেওয়া আয় স্বেচ্ছায়, ঘোষণা করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান। । সরকার কতিপয় উচ্চপদে রদবদল করেছেন। পার্লামেন্টারী বিষয়ক সেক্রেটারী জনাব এ, এম, খান জনাব শফিউল আজমের স্থলে ক্যাবিনেট ডিভিশনের সেক্রেটারী নিযুক্ত হয়েছেন। জনাব শফিউল আজম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছেন। নির্বাচনী কমিশনের। সেক্রেটারী জনাব আবদুর রহিম। জনাব কেরামত আলীর হলে। সংস্থাপন ডিভিশনের সেক্রেটারী নিযুক্ত হয়েছেন। জনাব কেরামত আলী নির্বাচনী কমিশনের সেক্তেটারী নিযুক্ত হয়েছেন। ও সরকার শিশু; প্রতিভায়। স্বীকৃতিস্বরুপ এবং শিশুরা যাতে টিভি অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে তাদের সৃষ্টিশীল মানসিক বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয় সেজন্যে ‘শিশু শিল্পীদের টিভি পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে : পাকিস্তানী বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে পৌছেছেন। ২৮ সদস্যের এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করেছেন পাকিস্তান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব ফজলুর রহমান খান। : দিনাজপুর, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোণা এবং রংপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধির অব্যাহত হারে জামালপুর-বাহাদুরাবাদ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। : সিদ্ধিরগঞ্জ গতকাল দুজায়গা থেকে দুজন অপহৃতা গৃহবধুকে উদ্ধার করেছে। অপহরণের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বার্তা সংস্থাগুলোর একটি ভাণ্ডার বা পুল গঠনের ব্যাপারে জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগদানের জন্যে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জনাব আজিজুল হক দিল্লী গেছেন। (৭) প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েমের সভাপতিত্বে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেশনের কর্মধারা, আর্থিক অবস্থা ও ব্যবস্থাপনা সমস্যাবলী পর্যালোচনা করা হয় এবং এদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে বিস্তারিত নির্দেশাবলী প্রদত্ত হয়। নিদেশের এক পর্যায়ে বলা হয়, বিভিন্ন কর্পোরেশন ও ইউনিটের প্রধানগণ, যাঁরা তাঁদের দায়িত্বে অর্পিত সংস্থাসমূহের কাজের দক্ষতার উন্নতি সাধনে ব্যর্থ হবেন, তাঁরা যথাযথ সতর্কীকরণের পর অপসারণের যোগ্য বলে গণ্য হবেন। ভারতের উপর দিয়ে করাচী যাবার অনুমতি না থাকায় এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও এই অনুমতি না পাওয়ায় বাংলাদেশ বিমান তাঁদের বহুল প্রচারিত ঢাকা-করাচী ফ্লাইট শুরু, করতে পারেননি। : পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান জনাব জহিরুল হককে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সফররত পাকিস্তানী বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতা জনাব ফজলুর রহমান খান পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত জনাব কে, এম, খুরশীদ ও ‘প্রতিনিধিদলের কতিপয় সদস্য, সমভিব্যহারে সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন। প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে এক সাক্ষাতকারে মিলিত হন। উত্তর কোরিয়ার ডেপুটি পর রাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ লি জং মক পাঁচ দিনের এক সরকারী সফরে ঢাকায় এসে পৌছেছেন। : ‘দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যে, মহানগরী ঢাকার শতকরা ৯০টি। টেলিফোনই কোন না কোনভাবে ত্রুটিযুক্ত। ঢাকায় প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে প্রায় দু’হাজার টেলিফোন। ৮ চট্টগ্রাম জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। বন্যায় সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে দশ লাখ একরেরও বেশী পরিমাণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেড় সপ্তাহে এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ লোক। প্রাণহানির সংখ্যা। দাঁড়িয়েছে ৩২-এ। : নিহার হত্যার সাথে জড়িত আসামীদের যে কোন প্রকারেই হোক, অবিলম্বে গ্রেফতারের সকল ব্যবস্থা অবলম্বনের সরকারী নির্দেশ জারি করা হয়েছে। : কোতোয়ালী থানার পুলিস রঘুপুর গ্রামের এক বাড়ীতে তল্লাশী চালিয়ে এক লাখ আটাশ হাজার টাকা মূল্যের চোরাই শাড়ী উদ্ধার করেছে। : ঢাকার অপহৃত স্কুল ছাত্রী ১১ বছরের ফরিদা ওরফে বেবীকে কুমিল্লা শহরের এক এডভোকেটের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিস উক্ত এডভোকেটসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। : আগামী ১৯৭১ সনের মধ্যে সারা দেশে সরাসরি টেলিফোন ডায়ালিং ব্যবস্থা চালু, হবে, নবগঠিত টিএন্ডটি বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব এ, বি, এম, তাহের এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য। জানিয়েছেন। : ৩৫ কোটী টাকারও বেশী। ব্যয়ে একটি আণবিক শক্তি গবেষণা। সমাহার স্থাপনের জন্যে সরকার, সাভারে ২ শ’ ৫৬ একর জমি হুকুমদখল করেছেন। গত দু’দিনে রাজবাড়িতে পুলিস ও সশস্ত্র বাহিনীর কাছে চারটি এন্টি পার্সোনাল ওয়াইনসহ ।দশ ব্যক্তি আতমসমর্পণ করছেন। এ এদের মধ্যে একজন মহিলা রয়েছন। (৯) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ৫০ ‘কোট টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ একশ’ ৩৮ ই কোটী টাকার দশটি স্কীম অন আহত নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ মহকুমায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে কক্সবাজারে পাহাড় ধসে ৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। বাকখালী নদীতে ভাঙনের ফলে কক্সবাজার শহর বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে গোমতীর বাঁধে ১৫টি ফাটল দেখা দিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি মোটরগাড়ীর মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত ও চার ব্যক্তি আহত হয়েছে। কারিগরি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের জন্যে ভবিষ্যৎ চাকুরী কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায়, বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিগত পেশাগত যোগ্যতা এবং প্রকৌশলগত দক্ষতার ভিত্তিতে চাকুরী কাঠামো পুনর্গঠন এবং পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। : দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়, আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন করে। : কিশোরগঞ্জে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে তিনজন পুলিসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। : চাঁপাইনওয়াবগঞ্জে , ওয়্যারলেস সহ পাঁচজন ডাকাত গ্রেফতার : সিলেটে দস্কৃতকারীর গুলীতে তিন ভাই নিহত। । আঠারো মাসের খতিয়ান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে যে, এ কয় মাসে দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪০৩ জন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং তন্মধ্যে ৫৪ জন মারা গেছেন। (১২), সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ও ভারতের উপর দিয়ে ঢাকা করাচাঁ বিমান চলাচলের জন্যে বাংলাদেশ বিমান ভারতীয় কর্তৃ পক্ষের অনুমতি পেয়েছে। ঢাকায় রেডিও বাংলাদেশের অফিসার সমাবেশে ভাষণদান প্ৰ’সঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলে ‘বেতারকে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর গণসংযোর। মাধ্যমে পরিণত করবার জন্যে বেতারের বর্তমান সুযোগ সুবিধাসমূহ আধুনিকীকরণে সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। জাতীয়তাবাদ আমাদের দিকনির্দেশক আদর্শ। অনুষ্ঠানগুলোকে মানুষ কিভাবে গ্রহণ করে তার উপরই বেতারের সাফল্য নির্ভর করে। : সরকার বাংলাদেশ গৃহ নির্মাণ ঋণদান সংস্থা আদেশের কতিপয় ধারা সংশোধন করে সম্প্রতি এক অধ্যাদেশ জারি করেছেন। উক্ত অধ্যাদেশ অনুসারে ঋণের সীমা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ পচিশ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। : বাংলাদেশী একজন বিজ্ঞানী উঃ সিদ্দিকউল্লাহ, তুলার-সুতার নয়া বিকল্প উদ্ভাবন করেছেন। রেয়নের সাথে রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত পাটের আশ মিশিয়ে তিনি এটি তৈরী করেছেন। বন্যার্তদের জন্যে ‘ সরকার আরও আট হাজার মন গম মঞ্জুর করেছেন। : যশোরে ‘ ফারাক্কা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। (১৩) কমলাকান্দায় বহু, পরিবার অপসারিত। নারায়ণগঞ্জে তিন লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত। রংপুর – শহরের নিম্নাঞ্চল প্লালাবিত। : রাজশাহীতে জেলা দুর্নীতি মন বিভাগ কলেজের তহবিল দুছরপের অভিযোগে কাটাখালি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আশরাফ আলীকে গ্রেফতার করেছে ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিস সোমবার রাতে ঠাটারীবাজারে দুস্কৃতকারীদের এক আখড়ায় অতকিতে হানা দিয়ে অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সেখান থেকে ১৩৫ জনকে গ্রেফতার করে।। : পাকিস্তানী বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের আট দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফরের পর মঙ্গলবার ঢাকায় প্রকাশিত এক যুক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা-পিণ্ডি যৌথ বাণিজ্য কমিটি গঠনের দিধান্ত প্রকাশ করা হয়। নতুন চাকুরী বিধি হচ্ছে, এ বিধি অনুসারে মহিলারাও সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষার সুযোেগ পাবেন, বলেছেন কাজী আনোয়ারুল হক। নোয়াখালীর বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা জনাব নুরুল হক চৌধুরী (কমরেড মেহদি) প্রায় ১৫ মাস কারারন্ধ থাকার পর গত সোমবার সন্ধ্যেয় মুক্তিলাভ করেছেন। ও প্রেসিডেন্টের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের ভারপ্রাপ্ত সদস্যা মিসেস বিনীতা রায়ের সভাপতিত্বে জাতীয় ত্রাণ সমন্বয় কমিটির এক বৈঠকে ত্রান তৎপরতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। : নিহার হত্যা রহস্যে , দু’জন ডাক্তার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী নিহত নিহারের গলার হাড়ে শুধু কাটা. দাগই নয়, ভার্টিব্রার বৃত্তও ভাঙা ছিল ও মহিলাসহ একুশজন ‘জাসদ কর্মী রাজবাড়িতে আত্মসমর্পণ করেছে। : জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ পালিত হয়েছে। : বর্তমানে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনকে সরকার ফ্রান্সে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬ লক্ষ লোক বন্যাকবলিত। রংপুরে রেল যোগাযোগ ব্যাহত—অসাধু, ব্যবসায়ীদের অসাধু তৎপরতা। বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ সংস্থা জাপান থেকে প্রস্তাবিত দু’টি যাত্রীবাহী জাহাজ আমদানীর সিধান্ত আপাততঃ স্থগিত রেখেছে। ঃ ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে বেসরকারী খাতে ১১টি নয়া ছোট শিল্প ইউনিট চালু, হয়েছে। : সিলেটে একই মালিকানাধীন তিনটি চা-বাগান প্রায় দু’মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রায় ১৫ লাখ টাকার চা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নয়াদিল্লীতে ভারতের সেচ ও কৃষিমন্ত্রী জগজীবন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াই, বি, চ্যবনের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জনাব আজিজুল হক গঙ্গার পানি সমস্যার আশু সমাধানের তাগিদ দেন। : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর থেকে দেয় আবাসিক বৃত্তি প্রত্যাহারজনিত অচলাবস্থা চলছে ২২৪ জন ছাত্র-ছাত্রী এক লিখিত বক্তব্যে পূর্বের ন্যায় আবাসিক বৃত্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশস্থ ইউ-এন-ডি-পি’ শিক্ষা প্রশাসন ও পরিকল্পনার জন্যে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ডলার। প্রকল্প অনুমোদনের কথা ঘোষণা করছেন। কুমিল্লায় তিন নম্বর বিশেষ সামরিক আদালত কুমিল্লা শহর পুলিসের একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে গুলী করার অপরাধে আবু, আসাদ ওরফে আসাদ ও শহিদুল আলম খান ওরফে সাদেক খানকে যথাক্রমে দশ বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদী সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। ১৫ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ দুবছরের (১৯৭৬-৭৮)-এর জন্যে শিল্পখাতে ১৯১ কোটী টাকার পুজি বিনিয়োগ তফসীল ঘোষণা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর মেজর-এর ভুয়া পরিচয় দিয়ে অর্থ সংগ্রহের জন্যে ঢাকার সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত সেনাবাহিনীর জনৈক সদস্য ও একজন বেসামরিক ব্যক্তিকে দণ্ডিত করেছে। বাংলাদেশ ও জিডিআর-এর বর্তমান সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বৃহষ্পতিবার ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সনের প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে ও নারায়ণগঞ্জে ভেজা পাট কেনার দায়ে শহরের চারটি পাট কোম্পা নীর কাছ থেকে এক লাখ দশ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা ও কারিগরি সহযোগিতার সমন্বয় সাধনের জন্যে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের যৌথ কমিশন তাদের প্রথম বৈঠক সমাপ্ত করেছেন। ১৬ যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন সফর, শেষে ঢাকায় ফিরে নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেছেন সব রকমের চাপ অগ্রাহ্য করে নিজেদের প্রচেষ্টায় আমরা যে নিজেদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সক্ষমতা আজ বিশ্বের সবাই উপলদ্ধি করতে পেরেছে।” ও বন্যায় দিনাজপুরের সদর মহকুমায় পাঁচ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে, দশ হাজার লোক গৃহহারা হয়েছে। সরকার বন্যাদুর্গত এলাকার জন্যে গৃহনির্মাণ মঞ্জরী হিসেবে আড়াই লাখ এবং বীজ অনুদান হিসেবে দু’লাখ ষোল হাজার টাকা মঞ্জুর করেছেন। জাপান থেকে সরঞ্জাম আমদানীর জন্যে জাপান বাংলাদেশকে প্রায় চার কোটী ষাট লাখ টাকার অনুদান দেবে। : কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গত মার্চ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এস এস-সি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৫০ দশমিক ৫৬। : নরসিংদীহ একটি শত্রু, সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগে দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আদালতে সাবেক এমপি জনাব মোসলেহ উদ্দিন ভু’ইয়া, তার ভাই জনাব আবদুল মতিন ভু’ইয়া এবং অপর তিনজনের বিচার শুরু হয়েছে। ১৭ বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল ষড়যন্ত্র মামলার রায় প্রদান করেছেন। এই মামলায় সরকার উৎখাত ও সশস্ত্র বাহিনীকে বিনাশ করার চেষ্টা চালানোর দায়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২১ (ক) ধারা ও ১৯৭৫ সনের এক নম্বর রেগুলেশনের ১৩নং সামরিক আইন বিধিবলে তথাকথিত গণবাহিনী ও অবলুপ্ত জাসদের কয়েকজন নেতার বিচার করা হয়। বিচারে অন্যতম অভিযুক্ত লেঃ কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহেরকে মত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে এবং মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এম, এ, জলিল ও লেঃ কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহেরের ভাই আবু ইউসুফ খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে, পলাতক মেজর জিয়াউদ্দীন আহমদকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে, অবলন্ত জাসদের অন্যতম নেতা জনাব সিরাজুল আলম খান, কর্পোরাল আলতাফ হোসেন এবং কর্পোরাল শামসুল হক এই তিনজনের প্রত্যেককে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দু’বছর করে সশ্রম ‘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। (পর্ণাঙ্গ বিবরণ দুষ্টব্য), : যশোর শহরে সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণের এক সমাবেশে ভাষণ দানকালে সেনাবাহিনী স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন জাতীয় ঐক্য রক্ষা ও জনসম্পদকে সুসংগঠিত করে বিশ্বের দরবারে একথা প্রমাণ করতে হবে যে, বাংলাদেশের জনগণ কঠোর পরিশ্রমী জাতি এবং সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম। আমাদের নিজস্ব জাতীয়তাবাদ-এর জন্যে জনগণের অবশ্যই গর্বিত হওয়া উচিত এবং এ থেকেই আমাদের অনুপ্রেরণা নিতে হবে। সরকার জাতীয় বেতন স্কেলের ষষ্ঠ গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত সার্কেল”অফিসার (উন্নয়ন ) এর পদটি বিলুপ্ত করে পঞ্চম গ্রেডে সার্কেল অফিসার নামে ৪৬৫টি পদ সৃষ্টি করেছেন। ‘ তিস্তার ভাঙনে রংপুরের ভুতমারী ও হাতিবান্ধার মধ্যবর্তী’ দেড় হাজার ফুট রেল লাইন তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়েছে। কুড়িগ্রামে অপহরণের সাতদিন পর পুলিস অপহৃতা মেহেরুন্নেছার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। ১৮ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহেরের মৃত্যুদন্ড অনুমোদন করেছেন। সিলেটে বন্যায় সাত লাখ চল্লিশ হাজার একর জমির ফসল বিনষ্ট—নদীগুলোতে আবার পানি বাড়ছে। বেআইনী প্রচারপত্র ছাপার দায়ে চারজন গ্রেফতার। শহরের তিন স্থানে প্রতারণা, ডাকাতি ও ছিনতাই করবার চেষ্টায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেঘনার ভাঙনে ভোলায় ভেড়ি-বাঁধ বিপন্ন। ছাতকে এক মাসেই ১০৫.৩১ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হওয়ায় সিলেটে বৃষ্টিপাতের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ১৯ সৌদী আরবে নয় দিনের সফর শেষে অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদলের নেতা প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এন, হুদা বলেছেন—“সৌদী আরব বাংলা-দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিপুল আগ্রহ দেখিয়েছে। জামালপুর মহকুমার কি শ্রীবদি থানার সীমান্তবর্তী গ্রামে সম্প্রতি একদল সশস্ত্র ব্যক্তি হানা দিয়ে প্রায় ৬৩টি গবাদি পশু, এবং প্রায় ৪০ একর জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সাবেক ফার্স্ট সেক্রেটারী, জনাব মহিউদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে অসদাচরণ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রংপুরে তিস্তার ভাঙনে চার শ’ ঘর-বাড়ী বিলীন, দিনাজপুরে কয়েক হাজার লোক জলবন্দী। ঠাকুরগাঁয় গ্রামরক্ষী দলের দু’জন সদস্য পাঁচ সের রুপাসহ দু’জন চোরাচালানীকে আটক করেছেন। বীমার টাকার জন্যে স্ত্রী হত্যার দায়ে এক ব্যক্তিকে খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। সরকার ছ’টি দেশে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছেন। নতুন রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে রয়েছেন জাপানে জনাব মুস্তফা কামাল, সুইডেনে বিচারপতি জনাব মোকসুমুল হাকিম, পূর্ব জার্মানীতে জনাব আবদুল মুনতাকিম চৌধুরী, ব্রাজিলে জনাব আলী কায়সার, হাসান মোরশেদ, ইরাকে জনাব আবদুল বারী এবং সংযুক্ত আরব আমীরশাহীতে জনাব ফারুক আহমদ চৌধুরী। ডঃ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ তেল ও গ্যাস সংস্থার (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছেন। বন্যার স্রোতে বালু জমে সিলেটে বহু আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০ বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম বাংলাদেশকে দুই কোটি দশ লাখ ডলার অর্থাৎ ৩৩.৭৮ কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ আট হাজার টন গম দেবে ভূমি ও পানি উন্নয়ন পূর্ত কর্মসূচি এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে সহযোগিতা হিসেবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব জনাব আগা শাহীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি শুভেচ্ছা প্রতিনিধিদল তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। ও পুলিশ সামরিক আইনবিধির অধীনে দু’টি মামলার সাবেক অতিরিক্ত সচিব জনাব এ, টি, এম, সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে।প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদল ইরান, তুরস্ক ও ইরাকে পক্ষকাল ব্যাপী সরকারী সফরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন ও যুগোস্লাভ ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে ঢাকায় প্রায় দুই কোটি সত্তর লাখ টাকার একটি পণ্য বিনিময় চুক্তি হয়েছে। পি-এল ৪৮০-এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আট হাজার মেট্রিক টন চাল চালনা বন্দরে পৌঁছেছে। বগুড়ার চারটি থানা প্লাবিত দিনাজপুরে বন্যায় ৭ হাজার একর জমির আউশ-আমন সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট ও তিন হাজার একর এলাকার আউশ ও আমন আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১ রাষ্ট্রায়ত্ত সেক্টরের শ্রমিকদের বাড়ী ভাড়া সাহায্যের প্রশ্ন দেখার জন্যে সরকার স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা কর্ণেল অবসরপ্রাপ্ত এম এম হককে চেয়ারম্যান করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সরকার দেশের যুবকদের শরীর চর্চা শিক্ষা ও খেলাধুলার উন্নয়নের উদ্দেশ্য ক্রীড়া বিভাগ নামে একটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম দফা বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক বিষয় ছাড়াও বিশেষ ভাবে দক্ষিণ এশীয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ওয়াপদা মিলনায়তনে আয়োজিত রেডিও বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত প্রতিযোগিতা বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করেন। মেজর জেনারেল এইচ, এম, এরশাদকে চেয়ারম্যান ও কাজী আবদুল আলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের নির্বাহী সংসদ গঠন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৫ সনের সামরিক আইনবিধি সংশোধন করে ১৯৭৬ সনের ২০নং বিধিজারি করেছেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৬ সনের সামরিক আইন বিধির (২১নং সামরিক আইন বিধি) অষ্টম সংশোধনী জারি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর অথবা দুর্নীতি দমন ব্যুরোর যে কোন এসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর ১৯নং বিধিবলে শাস্তিযোগ্য যে কোন অপরাধের তদন্ত করতে পারবেন। ব্রিগেডিয়ার চিত্তরঞ্জন দত্ত বীর-উত্তম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম দফা বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক বিষয় ছাড়াও বিশেষ ভাবে দক্ষিণ এশীয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২২ দিনাজপুরে সরকারী কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের এক সমাবেশে ভাষণদান প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছেন “সরকার বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেবেন। পল্লীর মানুষের কল্যাণে সরকারী কর্মকর্তাদের আরোও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। বন্যায় রংপুরে এগারো লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত। দিনাজপুরে, সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির অভিযোগে জেলা দুর্নীতি দমন অফিসার সৈয়দ মুহম্মদ আলীকে গ্রেফতার করেছে। পাকিস্তানী শুভেচ্ছা প্ৰতিনিধিদল প্রেসিডেন্ট বিচারপতি এ, এম, সায়েমের সঙ্গে দেখা করেছেন। সফররত প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেছেন—“বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে মৈত্রী সম্পর্কের আরো উন্নতি কামনা • করে এবং এ ব্যাপারে সকল বাস্তব পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে।” মিশর আরব প্রজাতন্ত্রের জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সাদাতের কাছে প্রেসিডেন্ট সায়েম এক অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। ‘দৈনিক বাংলা সংবাদদাতা প্রেরিত সংবাদে জানা গেছে, নাটোর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রায় ৯০ হাজার দলিল নকলের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। ২৩ বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বেধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে সেনাবাহিনী প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন—“আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধের জন্যে শিক্ষক সমাজ হচ্ছেন নৈতিক শক্তির উৎস। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের অংশীদার হয়ে এবং নিজেদের ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান ও নেতৃত্ব দিয়ে তাঁরা সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেন। জাতি গঠনে দেশে এখন এই নৈতিক শক্তিরই বিশেষ প্রয়োজন।” মন্তব্য দ্রষ্টব্য)। চিনি সরবরাহে কারচুবি, ৪টি রেশন দোকান সাসপেণ্ড। প্রেসিডেন্টের মহিলা বিষয়ক সহকারী মিসেস ফিরোজা বারীকে সভানেত্রী করে একটি মহিলা ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বন্যায় সিলেটে চব্বিশ লাখ লোক পানিবন্দী, আট লাখ একরের ফসল নষ্ট। আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে প্রকাশিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুক্ত বিবৃতিতে দু’দেশই উভয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক জোরদার করার জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রেরিত বাণীতে প্রেসিডেন্ট সায়েম আশা প্রকাশ করেন যে, শিক্ষকরা আদর্শ শিক্ষকের নিঃস্বার্থ ও মহৎ জীবনের চিরন্তন দুষ্টান্ত ছাত্রদের সামনে তুলে ধরবেন। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতি আজ চীনা নেতা মার্শাল চুতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। ২৪ বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্টের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম। তিনি বলেন-“অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ফলপ্রসূ করে তুলতে সব কিছুর আগে শৃঙ্খলা, কর্তব্যপরায়ণতা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। দিনাজপুরে ত্রিশ তোলা সোনা সহ দু’জন চোরাচালানী গ্রেফতার। দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা গেছে যে, দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মানসিক রোগ বাড়ছে। : ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তঃ• মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিভিন্ন শিল্পে বর্তমানে নিয়োজিত দক্ষ ও আধাদক্ষ জনশক্তির কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্যে নয়া প্রশিক্ষণ সকীম প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২৫ সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি সুদানী বাণিজ্য প্রতিনিধিদল এক সরকারী সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন। ঢাকাসহ সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পবিত্র শব-ই মেরাজ উদযাপিত হয়। সীমান্তে সশস্ত্র রাষ্ট্রবিরোধীদের তৎপরতা প্রতিহত করা হয়েছে। বিডিআর, আনসার বাহিনী ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যদের সময়োচিত ব্যবস্থা অবলম্বনের ফলে রাষ্ট্র বিরোধীদের সকল অপচেষ্টা নস্যাৎ হয়।২৬ ভারতে বাংলাদেশী নতুন একশ’ টাকার নোট পাচারকালে হিলি সীমান্তে ২ ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির এক বৈঠকে ১৮৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোট ২৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকার পাঁচটি উন্নয়ন স্মীক অনুমোদন করা হয়। জয়পুরহাটে চিনির সের বর্তমানে ১৩ টাকা। তেল অনুসন্ধানে কারিগরি সাহায্য প্রদান সংক্রান্ত এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে-বাংলাদেশ এবং পশ্চিম জার্মানীর মধ্যে। ইরান সফররত অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনাকালে ইরানী প্রতিনিধি দলের নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী ডঃ মনুচেহর তাসলিমি বলেন—“ইরানের শাহানশাহ, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সর্বাধিক সাহায্য দেয়ার পক্ষপাতি। বাংলাদেশে বন্যার্তদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তো প্রেসিডেন্ট সায়েমের কাছে এক বাণী পাঠিয়েছেন। কাঠের অভাবে খুলনা হার্ডবোর্ড মিল বন্ধ। ২৭ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম বঙ্গভবনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি নবগঠিত ডিভিশনের সদর দফতরে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে ভাষণদান প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন—মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম গ্যারিসনের বাঙালী সৈন্যরাই ছিলেন পথপ্রদর্শক। এখন চট্টগ্রাম গ্যারিসনে কর্মরত সকল অফিসার ও জওয়ানের তাঁদের পূর্বসূরীদের জন্য গর্ববোধ এবং প্রয়োজনবোধে তাঁদের মত আত্মত্যাগ করার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত। লিবিয়া বাংলাদেশের বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সাহায্যের জন্যে দশ লাখ ডলার দিয়েছে। চট্টগ্রামে চব্বিশটি মূল্যবান পুরাকীর্তি নিদর্শন উদ্ধার। ২৮ সরকার ২২নং সামরিক আইন বিধি জারি করেছেন, রাজনৈতিক দল (নিষিদ্ধকরণ) অর্ডিন্যান্স বাতিল করা হয়েছে। রাজনৈতিক তৎপরতা শুরুর অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই বিধি দ্বারা অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা আরম্ভ, দলের কাজ পরিচালনা এবং সংসদের নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতার শর্তাদি নিয়ন্ত্রিত হবে। (মন্তব্য দ্রষ্টব্য) বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সায়েমের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবন্দ যে কোন দলের গোপন তৎপরতার নিন্দা করেছেন। এনড্রিন পানে মরণাপন্ন দু’জন তরণীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কবি মোজাম্মেল হক গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকার লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব জমিরউদ্দিন আহমদকে একই সাথে তিউনিসিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে এক বাস দুর্ঘটনায় চালকসহ চারজন যাত্রী নিহত ও বত্রিশজন আহত হয়েছেন। ২৯ ১৯৭৬-৭৭ সনে রফতানীর লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সুবিধেজনক সুদের হারে রফতানী কারকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঋণদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সফরকারী সুদানী বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ও বাংলাদেশে কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী আলোচনা শেষে বাংলাদেশ ও সুদান এক বছর মেয়াদী একটি সাধারণ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ত্রিশ হাজার টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণে প্রিফেব্রিকেটেড গুদাম নির্মাণের জন্যে ডেনমার্ক বাংলাদেশকে ৯০ লাখ- ব্রোটার (প্রায় দুই কোটি বিশ লাখ টাকা) সমপরিমাণ অনুদান প্রদান করবে। রেশনে চিনির দাম সেরপ্রতি দশ পয়সা বাড়লো। নয়া রাজনৈতিক বিধি জারি করবার পর দেশে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে—এদিকে খোন্দুকার মোশতাক ও আবদুল মালেক উকিলের নেতৃত্বে দুটো পৃথক দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে ; মওলানা ভাসানী সন্তোষে কর্মীসভা ডেকেছেন। ৩০ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৬ সালের সামরিক আইন (বিংশতিতম সংশোধনী) বিধি জারি করেছেন। এই বিধিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে উস্কানি দানের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিধান করা হয়েছে। জরাইনের একটি বাড়ীতে বোমা বিস্ফোরণে একজন ছাত্র নিহত ও দু’ব্যক্তি আহত হয়েছে। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৬ সনের সামরিক আইন (ঊনবিংশতিতম সংশোধনী) বিধি, ১৯৭৬ সনের ২৩নং বিধি জারি করেছেন। ৩১ ১৯৪৭ সনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল নাগরিক এবং একনাগাড়ে ৬ মাস কিংবা এর অধিক সময় বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্যান্য ব্যক্তি কোন বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হলে এ ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের কোন অনুমোদিত ডিলারের কাছে তা বিক্রি করত হবে। এ মর্মে এক সরকারী নির্দেশ জারি করা হয়েছে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সর্বশক্তি নিয়োগ করে সারা দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্যে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রংকাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মওলানা ভাসানী পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অগাস্ট
১ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদলের তুরস্ক সফর ও তুরস্ক সরকারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা শেষে প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়, বাংলাদেশ ও তুরস্ক তাঁদের মধ্যে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে একটি যুক্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার উদ্যোগে আয়োজিত, শিল্প ও সংস্কতি’ পক্ষের সমাপ্তি দিনে ঢাকা নগরীর বিভিন্ন স্কুল ও কিশোর সংগঠনের ৭০ জন শিশু কিশোরকে প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের জন্যে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সকালে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি জনাব এ, সাত্তার চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক পূর্বাণীর প্রথম ফিল্ম পুরস্কার বিতরণ করেন। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ৪৯৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশসহ চীনা রাষ্ট্রদূত মিঃ চূয়ান ইয়েন সন্ধ্যায় এক সম্বর্ধনার আয়োজন করেন। ঘরোয়া রাজনৈতিক তৎপরতা শুরুর পর আজ বিভিন্ন রাজ নৈতিক মহলে বিভিন্ন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পিজি হাসপাতালে কবি মোজাম্মেল হক সকালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে…… রাজেউন)। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম কবি মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে। ২ ঢাকার সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারপত্র ছাপা, রাখা এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে এবং বাখেরগঞ্জের সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত একজনকে বিভিন্ন মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা প্রদান করে । অর্থ আত্মসাতের দায়ে বগুড়ার সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত সাবেক সংসদ সদস্য জনাব সিরাজুল ইসলামকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। সকল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে, তাঁদের যেসব কর্মচারী ব্যাংকের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি অথবা কর্তব্য কাজে অননুমোদিত অনুপস্থিতিসহ বেআইনী তৎপরতায় লিপ্ত হতে অন্যদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের তিনটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে রদবদল করা হয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ডক্টর খলিলুর রহমানকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ডক্টর শামসুদ্দিন মিয়াকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছে। সিলেট সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর হারুনর রশীদকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা গৃহীত উপগ্রহের মাধ্যমে সরাসরি রঙ্গীন টিভি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কর্মসূচী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে। এর যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি টিভি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অংশের উপস্থাপনা করেন নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিশনের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়ানো হয়েছে। ৩ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে সরকারের সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম. সচিবদের উদ্দেশ্য করে প্রদত্ত ভাষণে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম সরকারী কর্মকর্তাদের প্রতি রাজনীতির উর্ধ্বে থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে প্রয়োজনীয় সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টির এবং উপযুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের নিশ্চয়তা বিধানের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সভায় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে দেশে সুষ্ঠু, রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা ব্যক্ত করেছেন। স্থানীয় একটি হোটেলে দেশের বিভিন্ন শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে বক্তৃতা – প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন—“দেশে সুস্থ অর্থ নৈতিক উন্নয়নের জন্যে আইন শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে সরকার, দৃঢ় সংকল্প। ক্ষুদ্র শিল্পসহ বাণিজ্যিক ও শিল্প সেক্টরের যথার্থ চালনা মূলধনের চাহিদা পূরণের জন্যে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বাজেট চলতি অর্থবছরে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সরকার তথ্য বিবরণীতে পূরোকীর্তি পাচারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যশোরের ৬নং বিশেষ সামরিক আদালত ক্ষমতা অপব্যবহার করে অর্থনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য ডাক্তার আসহাবুল হককে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। বগুড়ায় বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের অর্থানুকূল্যে স্থাপিত হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ চালু হয়েছে। ঘরোয়া রাজনৈতিক তৎপরতায় বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক আলাপআলোচনা ও মতবিনিময় অব্যাহত রয়েছে ।৪ আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রেসনোটে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর পালনীয় শর্তাবলী উল্লেখ করা হয় এবং আশা প্রকাশ করা হয় যে, দলের ইশতেহার ও কর্মসূচীতে জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পরিকল্পনা থাকবে তা অস্পষ্ট ও অনিদিষ্ট হবে না। কার্যরত সাংবাদিকদের চাকুরীকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় একটি প্রেস ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৬ সনের রাজনৈতিক দল (সংশোধনী) বিধি জারি করেছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্ষতিকর তৎপরতায় লিপ্ত থাকার জন্যে গুলশান এলাকা থেকে পুলিশ অবলুপ্ত ‘জাসদ’-এর অস্থায়ী সভাপতি মিঃ বিধানকৃষ্ণ সেন এবং কুমিল্লার সাবেক এমপি ও অবলপ্ত জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জনাব আবদুল্লাহ, সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রেসিডন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি জনাব এ. এম, সায়মের সভাপতিত্বে সকালে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের পূজি প্রত্যাহারের ব্যাপারে একটি সহজ ও অভিন্ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। সরকার বেসরকারী ব্যবসায়ীদের সরাসরি পাটজাত দ্রব্য রফতানীর অনুমতি দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মওলানা ভাসানীর দেহে দুপুরে একটি ক্ষুদ্র অসম্রাপচার করা হয়েছে। এক নম্বর বিশেষ সামরিক আদালত ‘ গত বছর জুলাইয়ের প্রথম দিকে কলেজ ছাত্র মানিককে হত্যার অভিযোগে দু’ব্যক্তিকে প্রাণদণ্ড ও অপর তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। ৫ ফরিদপুরের কবি জসিমউদ্দীন হলে সর্বস্তরের জনগণের এক সমাবেশে নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল মোশাররফ হোসেন খান বলেন, উজানে পানি সংরক্ষণাগার বানিয়ে ফারাক্কা সমস্যার। সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশ এই পরামর্শ ভারতকে দিয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্যে আমাদের লোকেরা এখনো সীমান্তে প্রাণ দিচ্ছে।…. আমরা আমাদের দেশের এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়বো না ।ত্যাগ ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্যমে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। সরকার বিদেশ ভ্রমণেচ্ছ, বাংলাদেশী নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন যে, তারা যেন ঢাকাসহ সংশ্লিষ্ট বিদেশী মিশন থেকে তাদের ভিসা সংগ্রহ করেন এবং বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশ মিশনকে অন্য দেশের মিশন থেকে ভিসা সংগ্রহ করে দেয়ার অনুরোধ না করেন। সরকার এ বছর পবিত্র হজ আদায়ের জন্যে তিন হাজার হজ যাত্রীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যশোর সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত, ব্রিগেডের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন, অনুষ্ঠান অফিসার এবং জওয়ানদের . উদ্দেশ্যে ভাষণদান প্রসঙ্গে সেনাবাহিনী স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলা দেশ সেনাবাহিনীর অফিসার ও জওয়ানদের কর্তব্যকর্মে অবিচল নিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধ আর দেশাত্মবোধকে পথনির্দেশক নীতি হিসেবে গ্রহণ করার আহ্বান জানান। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে পরিবহণ খাতে ১৫ কোটি থেকে ১৬ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। বিআরটিসি কর্মচারীরা তাঁদের প্রস্তাবিত অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের (অধুনালুপ্ত) প্রধান ও বাংলা ভাষার সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মাহমুদ শাহ, কোরেশী ফরাসী নাইট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ৬ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সভায় দুটো স্কীম অনুমোদন করে। এর একটা হলো বঙ্গোপসাগরে চিংড়ি শিকার প্রকল্প, অপরটি হলো মহামারী রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদনদীর স্রোতের বেগ বৃদ্ধিতে ভাঙ্গনের দাপট বেড়েছে। বাংলাদেশে এক সত্তাহের সফরে পাকিস্তানের একটি শিপিং প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে পৌছেছে। ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ লেখক শিবিরের দু’দিনব্যাপী সাহিত্য, চিত্রকলা, নাটক ও চলচিত্র বিষয়ক সেমিনার শুরু হয়েছে। নবতিপর বৃদ্ধ জননেতা মওলানা ভাসানীকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সভাপতি করে জাতীয় শ্রমিকদল নামক একটি নতুন শ্রমিক সংগঠন গঠন করা হয়েছে। ফাও সমেলনে যোগদানের জন্যে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জনাব আজিজুল হক ম্যানিলা , যাত্রা করেছেন। ৭ হিংসাত্মক পন্থায় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য – রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে মিঃ পিটার কাস্টস নামে একজন বিদেশী নাগরিক এবং আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২১ (ক) ধারা ত্রয়োদশ সামরিক আইন বিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-বলে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। ! স্বরাষ্ট্র দফতরের এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে যে, যেসব বিপথগামী যুবক সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে মাতৃভূমির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল এবং পরে ভূল বুঝতে পেরে স্বদেশে ফিরে আসছে ও কর্তৃপক্ষের নিকট আত্মসমর্পণ করছে সরকার তাদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েচ্ছেন। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ডঃ ইন্নাস আলীকে রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞান, বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে। (জীবনী দ্রষ্টব্য) ঢাকায় সফররত মালয়েশিয়ার শিল্পমন্ত্রী জনাব দাতুক মুসা বিন হিতাম বলেছেন যে—“বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কতিপয় ক্ষেত্রে যৌথ শিল্প উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভবনা খুবই উজ্জ্বল। বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফাকে দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালত দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের দায়ে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো আট মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিতকরেছেন। বিশেষ সামরিক আইন আদালত-এর আগে ৫১ বছর বয়স্ক গাজী গোলাম মোস্তফাকে দু’টো মামলায় যথাক্রমে দশ ও পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং অন্য একটি মামলায় খালাস দেন। আজ কবিগুরুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঘোড়াশালে এক প্রচণ্ড ঝড়ে একজন নিহত হয়েছে। ৮ ঘরোয়া রাজনীতির নবম দিনে দু’টি রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছে বলে ঘোষণা করেছে। এর একটি হচ্ছে জনাব আবদুস সবুর খান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, অন্যটি হচ্ছে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী)।

বাংলাদেশ বয়স্কাউট সমিতির জাতীয় পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম বলেন–বয়স্কাউট আন্দোলন যুবসমাজকে কর্মপ্রেরণা শৃঙ্খলাবোধে উদ্বুদ্ধ সমাজসেবা ও জাতিগঠন প্রচেষ্টায় শামিল করছে। পি-এল ৪৮০-১-এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন তেল ও প্রায় ২৫০ টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছেছে।কুশিয়ারা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মুখে দাউদপুরের কাছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি ক্রমেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কাপড় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উধর্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ লংঘন এবং এক শ্রেণীর কর্মচারীর কারচুবির দরুন দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় ভোগ্যপণ্য সংস্থার সাত লাখ টাকার কাপড় গুদামে অবিক্রীত অবস্থায় পচছে। পিতৃহত্যার অভিযোগে টাঙ্গাইলের দায়রা জজ জনৈক হুরমহলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। হবিগঞ্জে বন্যাদুর্গত মানুষের রিলিফ নিয়ে ছিনিমিনি ও রিলিফ সামগ্রী আত্মসাতের অভিযোগে পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। ৯ জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্যে আজ সেনা বাহিনী স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কলম্বাের পথে ব্যাংকক রওনা হয়ে গেছেন। রওনা হবার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে জেনারেল জিয়া বলেন- ‘বাংলাদেশ সবার সাথে বন্ধুত্ব চায়। তবে সে বন্ধুত্বের ভিত্তি হবে সমতা ও অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং শান্তি ও সহায়িত্বের নিশচয়তা বিধানে বাংলাদেশ এই সম্মেলনে নিজস্বভাবে অবদান রাখবে। জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্যে সারা দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোটার গণনার কাজ শুরু হয়েছে। সকালে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েমের নাম সর্বপ্রথম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের ইস্টার্ণ ‘কেবলস, ইরানে বাইশ কোটি টাকা মূল্যের চার হাজার টন কেবল সরবরাহের একটি অর্ডার পেয়েছে । ৯ম ডিভিশনের জিওসি ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত আলীকে ৮ই আগস্ট থেকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার .. চিত্তরঞ্জন দত্তকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়েছে এবং তাকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের জন্যে তার চাকুরী সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর এয়ান কমোডর কে, এম, এ, ইসলামকে আজ থেকে এয়ার ভাইস-মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়েছে। রংপুর জেলার কিশোরগঞ্জ থানার বৈনিয়ালপুকুর গ্রামে পুলিশ ও এক সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী দলের মধ্যে গুলীবিনিময় হয়। এতে দুষ্কৃতকারী বলে কথিত এক ব্যক্তি নিহত হয় ও অপর চারজনকে গ্রেফতার করা হয় । ১০ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন এবং এসব অঞ্চলের জন্যে ১১ জন আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধ থেকে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় জাহাজ চলাচল শুরু করার জন্যে দু’দেশের জাতীয় শিপিং লাইনের মধ্যে এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। আলজিরিয়ার বেজাইয়ায় একটি চটকল স্থাপন ও পরিকল্পনার জন্যে বাংলাদেশ ও আলজিরিয়ার মধ্যে একটি কারিগরি সাহায্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কলম্বাে পৌছেছেন। বিমানবন্দরে তাকে সম্বর্ধনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার অর্থ ও বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী মিঃ ফিলিক্স ডায়াস বন্দরনায়ক। সরকার পূর্ব জার্মানীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত জনাব এ, এফ, বশিরুল আলমকে কুয়েতে রাষ্ট্রদুত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রখ্যাত কৃষক নেতা জনাব আলাউদ্দিন আহমদ অসুস্থ হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মালয়েশীর শিল্পমন্ত্রী জনাব দাতুক মুসা বিন হিতামের পাঁচ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর শেষে অপরাহ্নে ঢাকায় প্রকাশিত এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দুই দেশের যৌথ কমিশন গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। ১১ যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ সারা দেশে পবিত্র শব-ই-বরাত পালিত হয়। এ উপলক্ষে একদিনের সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র শব-ই-বরাত উপলক্ষে প্রেসি ডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম. সায়েম জাতির উদ্দেশ্যে এক বাণী প্রদান করেন। বাণীতে প্রেসিডেন্ট পবিত্র রাতের মাহাত্মা সমুন্নত রাখার জন্যে সকলের প্রতি আহব্বান জানান। ও শব-ই-বরাত উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন, এই পবিত্র রাতে জাতির সামগ্রিক সমৃদ্ধির জন্যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তালার কাছে আমাদের মোনাজাত করা উচিত। বাণীতে জেনারেল জিয়া দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। ১২ বাংলাদেশ কলম্বােতে পঞ্চম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের রাজনৈতিক ঘোষণার একটি সংশোধনী এনেছে। সংশোধনীটিতে দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের ঘটনাপ্রবাহে বাইরের চাপের কাছে নতি স্বীকারের অবস্থা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রকৃত স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ করার যে বিপদ দেখা যাচ্ছে তার উল্লেখ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান আজ কলম্বোতে বেশ কিছুসংখ্যক বন্ধুদেশের প্রতিনিধিদলের নেতাদের সাথে কয়েক-দফা বৈঠকে মিলিত হন। জেনারেল জিয়া যুগোস্লাভিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলোস-মিনক, ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্ণেল আর, জে, এ, ফেল্লী, তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব চাণ্ডী, জর্দানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী : হাসান ইব্রাহিম ও ইন্দোনেশীয় প্রতিনিধিদলের প্রতিনিধির সাথে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। জেনারেল জিয়া জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করছেন। । সরকার রাঙ্গামাটি পৌরসভা এলাকায় বিধিবদ্ধ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কলম্বােতে বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন, বাইরের হস্তক্ষেপ ও হুমকি থেকে ক্ষুদ্র দেশগুলোর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থার প্রশ্নটি এখানে পঞ্চম জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনের সামনে একটি প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশ কলম্বােয় আজ ৩৬ সদস্যের ইসলামী গ্রুপের এক বৈঠকে যোগদান করে। বিচারপতি জনাব রুহুল ইসলামকে বাংলাদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করা হয়েছে। ১৩ জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান আজ মহান জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতি যেসব ক্ষুদ্র দেশ আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বড় দেশের হস্তক্ষেপের শিকারে পরিণত হয়েছে তাদের রক্ষা করার আহবান জানিয়েছে। পঞ্চম জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে জোটনিরপেক্ষ সমন্বয় বু্রোর সম্প্রসারণের জন্যে আগামী – সপ্তাহে যেসব সদস্য নিয়োগ করা হবে তাদের মনোনয়নের মাপকাঠি হিসেবে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা, পালাক্রমে গ্রহণ এবং সুষম ভৌগোলিক বণ্টন—এই তিনটি বিষয় রাখার সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা এবং তা মোকাবেলার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক কর্মসূচি জোরদার করার জন্যে বিশেষজ্ঞদের এক বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে গতকাল পঞ্চম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের খসড়া অর্থনৈতিক ঘোষণায় এক সংশোধনীয় প্রস্তাব দিয়েছে। (জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন দ্রষ্টব্য) : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি জনাব আবুল বাশার মাহমুদ হোসেন এবং বাংলাদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি জনাব রুহুল ইসলাম শপথ গ্রহণ করেন। বঙ্গভবনে আয়োজিত এক সাধারণ ও ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম এ দু’টি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। চিকিৎসার জন্যে অসুস্থ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে আজ লণ্ডন পাঠানো হয়েছে। বিডিআর জোয়ানরা টেকনাফ সমুদ্র উপকূলে সাড়ে তিন লাখ টাকার রেয়ন সুতা উদ্ধার এবং সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। । কলম্বোয় ‘মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মিসেস শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের সাথে সাক্ষাত করেন। : দিনাজপুরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর বিপুল পরিমাণ ধান আত্মসাতের অভিযোগে ঠাকুরগাঁ মহকুমার রানিশাংখাইল থানার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার জিল্লুর রহমানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সাবেক পিডিপি, নেজামে ইসলাম, খেলাফতে রব্বানী পার্টি এবং জামাতে ইসলামীকে নিয়ে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল গঠনকল্পে গঠিত আহবায়ক কমিটির এক বৈঠক মওলানা সিদ্দিক আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম পাকিস্তানের ২৯তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে দেশের প্রেসিডেন্ট ফজল এলাহ চৌধুরীর কাছে এক আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। : সীমান্তের ওপারে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও ওপার থেকে পাঠানোর জন্ দুষ্কৃতকারী ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল সড়কে মহেশতারা গ্রামের নিকট ব্রীজ উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে, কিন্তু স্থানীয় গ্রামরক্ষী দলের তৎপরতায় এলাকার আর্মি ইউনিট দুষ্কৃতকারীদের অপচেষ্টা ব্যর্থ করে, এতে এক সংঘর্ষে পাঁচজন দুষ্কৃতকারী নিহত ও একজন মারাত্মক আহত হয় । এক নম্বর বিশেষ সামরিক আদালত ছায়ারাণী নমাদাসি নামে ১৭ বছরের একজন অবিবাহিত যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে দু’জন পুলিশ কনস্টেবলকে দোষী সাব্যস্ত করে দশ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো আড়াই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। : ছোটোখাটো অপরাধের জন্যে বিচারাধীন ৬৬১ জন আসামীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ২. চাঁপাই নওয়াবগঞ্জ মহকুমার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৫০ হাজার টাকার চোরাই দ্রব্যসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৫ প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম ভারত প্রজাতন্ত্রের ২৯তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রেসিডেন্ট ফখরুদ্দিন আলী আহমদের নিকট আন্তরিক অভিনন্দন বাণী পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সমন্বয় কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছে। কলম্বােয় সেনাবাহিনী স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান আজ প্রেসিডেন্ট টিটোর ব্যক্তিগত তরীতে প্রেসিডেন্ট টিটোর সাথে সাক্ষাত করেন। জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের রাজনৈতিক কমিটির বৈঠকে ভাষণ দানকালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি জনাব এম, আর, সিদ্দিকী বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশীর কার্য ক্রমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতির প্রতি যে হুমকির সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতি সকলের বিশেষ , দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। । প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৬ সনের দ্বিতীয় ঘোষণা (অষ্টম সংশোধনী) আদেশ জারি করেছেন। এই আদেশে বলা হয়েছে, দেশ থেকে অনুপস্থিতির কারণে প্রেসিডেন্ট তাঁর, দায়িত্ব পালনে সক্ষম না হলে দেশে উপস্থিত উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের মধ্যে যিনি সিনিয়র, তিনি একাধারে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন। টেকনাফে পাঁচজন চোরাচালানী গ্রেফতার। গণ-মানুষের কবি কিশোর সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। কুমিল্লায় গুদাম মেরামত না হওয়ায় ১২ শ’ বস্তা সিমেন্ট জমে পাথর হয়ে গেছে। সরকার চলতি অর্থ বছরে সকল জেলা বোর্ডের জন্যে তিন কোটি ত্রিশ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন। দশ লক্ষাধিক টাকার পাট কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত থাকার দায়ে পাট মূল্য স্থিতিশীলকরণ সংস্থার পাঁচজন কর্মচারীর বিচার ১নং বিশেষ সামরিক আইন আদালতে শুরু হয়েছে। নৌবাহিনী স্টাফ , সহকারী প্রধান ক্যাপ্টেন মাহবুব আলী খানকে কমোডর পদে উন্নীত করা হয়েছে। ১৬ জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমূহের পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্যে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম প্রেসিডেন্টের বিশেষ বিমান বলাকায় কলম্বাের পথে ঢাকা ত্যাগ করেন। কলম্বােয় রওনা হবার আগে বিমানবন্দরে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃ- তিতে প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেন, বিগত দিনগুলোতে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো বৃহত্তর কিছু রাষ্ট্রের চাপের শিকারে পরিণত হয়েছে। একে এক ধরনের নয়া উপনিবেশবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রেসিডেন্ট . বলেন, বাংলাদেশ এর বিরোধী। তিনি বলেন, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের নীতিসমূহের প্রতি বাংলাদেশ অবিচল রয়েছে। কলম্বোয় জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্যে প্রেসিডেন্টের দেশে অনুপস্থিতিকালে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও নৌবাহিনী স্টাফ প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন। প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন। সেনাবাহিনী স্টাফ প্রধান এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান আজ কলম্বােতে নেপালের রাজা। বীরেন্দ্র, ভুটানের রাজা জিগমে। সিংগি ওয়াংচুব এবং বর্মার প্রধানমন্ত্রী উ সং উইনের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন এবং জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনের সাথে সম্পর্কিত অভিন্ন স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে জেনারেল জিয়া সন্ধ্যায় এখানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করেন। ১৭ এক নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর উঃ আবদুল মতিন চৌধুরীকে দু’টো পৃথক মামলায় পদমর্যাদার অপব্যবহার ও অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, জাতীয় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণের জন্যে একটি কমিটি গঠন করেছেন। পল্লী এলাকার নির্দিষ্ট ধরনের কিছু, মামলা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বিচারের জন্যে পল্লী আদালত গঠনের ব্যবস্থা করে প্রেসিডেন্ট ‘পল্লী আদালত অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ নামে অভিহিত একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছেন। কতিপয় রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তি সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশে চকে ময়মনসিংহ জেলার দুর্গাপুর ও বারহাট্টা থানার উপর গুলীবর্ষণ শুরু করলে, পুলিশ ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের প্রতিরোধে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ১৮ প্রেসিডেন্ট আজ কলম্বোয় চীনের নির্মিত সুদৃশ্য বন্দরনায়ক মেমোরিয়াল হল-এ পঞ্চম জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে ভাষণ দেন। শীর্ষ সম্মেলনে খাকাষ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট সায়েম,১সম্মেলনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রদত্ত যে কোন বৈদেশিক চাপকে আমরা সম্মিলিত কণ্ঠে নিন্দা এবং তীব্রভাবে প্রত্যাখান করতে চাই।” প্রেসিডেন্ট ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদেশের সমস্যার কথাও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। পঞ্চম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা প্রেসিডেন্ট সায়েম ও সেনাবাহিনী স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কলম্বোতে বিশ্ব নেতৃবর্গের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। এদের মধ্যে আছেন— প্রেসিডেন্ট টিটো, প্রেসিডেন্ট সাদত, প্রসিডেন্ট দাউদ, প্রেসিডেন্ট বুমেদিন প্রমুখ। : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পুননির্মাণের ডিজাইন তৈরীর দায়িত্ব কারিগরি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদের উপর ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঢাকায় এ কথা সরকারীভাবে আজ পুনরুল্লেখ করা হয় যে, গত ১৪ই আগস্ট ময়মনসিংহ জেলায় _ একটি সেতু উড়িয়ে দিতে গিয়ে সেনাবাহিনীর এক টহলদার দলের হাতে ধরা পড়া একজন দুষ্কৃতকারী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকার করেছে যে, নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত তার দলকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডুমনি শিবিরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১৯ কলম্বােয় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার অব্যবহিত পরে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা। প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বলেন, জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ সমর্থিত হয়েছে। কলম্বাে থেকে ফিরে এসে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছেন, এক দেশের উপর অন্য দেশের আধিপত্য বিস্তার, আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং ‘ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ মূল বক্তব্য তুলে ধরেছে সব নেতা ও প্রতিনিধিদল তা সমর্থন করেছে। তিনি বলেন, ফারাক্কা আর সীমান্ত সমস্যা সম্মেলনের সবাই অনুধাবন করতে পেরেছেন। নওয়াবপুরে একটি পুরোনো দালান ধসে পড়লে চারজন আহত হয় ।মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। । লণ্ডনে অস্রোপচারের পর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সন্তোষজনক উন্নতি হচ্ছে । জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণায় আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করাসহ বাংলাদেশের তিনটি সংশোধনী গৃহীত। ময়মনসিংহ জেলার দুর্গাপুরে পুলিসের সাথে এক সংঘর্ষে একজন দুষ্কৃতকারী নিহত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ টাঙ্গাইলে এক দুষ্কৃতকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার শেরপুর থানার কামারের চরে দুষ্কৃতকারীদের সাথে বীরত্বপূর্ণ মোকাবেলার জন্যে সরকার তিনজন পুলিশ কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছেন। আজ থেকে সারা দেশে ‘আলআকসা’ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। ২১ আজ থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দু’দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়েছে।মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাউন্সিল অধিবেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করার সংগ্রামে জনগণের অগ্রবাহিনী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ করতে হবে। সরকার দেশের সমস্ত পৌরসভার জন্যে ১৯৭৬-৭৭ বছরে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন। ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠীভূত দেশগুলো (ইইসি) বাংলাদেশ থেকে অধিক হারে পাটজাত দ্রব্য কিনবে, দেশগুলো বাংলাদেশী পাটজাত দ্রব্য বাজারজাতকরণের উপর আরোপিত শুঙ্কের পরিমাণ আরও হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমতি ব্যতিত বাড়ীভাড়া ও অন্যান্য সম্পত্তি এবং এই ধরনের সম্পত্তির বিক্রিলব্ধ অর্থ অস্থানীয় অথবা তাদের বাংলাদেশ এজেন্টদের কাছে পরিশোধ করা যাবে না। । দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আদালত রিলিফ কমিটির একজন চেয়ারম্যানকে রিলিফ আত্মসাতের জন্যে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। কুমিল্লায় ভোগ্যপণ্যের গুদামে চার লাখ টাকার কাপড় নষ্ট। ২২ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দু’দিনব্যাপী জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের সমাপ্তি অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণদান প্রসঙ্গে বিমানবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, কে, বাশার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের গৌরব উজ্জ্বল ঐতিহ্যের মতোই একইভাবে দেশ গঠনের কাজে আন্ত নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প (ইণ্ডাস্ট্রি) হিসেবে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঠাকুরগাঁয়ে আবার বন্যা দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির ‘৭৫ সনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জনাব এ, কে, এম, হাফিজদ্দিন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন যথাক্রমে–রাজ্জাক এবং কবরী। “পবিত্র রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল অফিসে নতুন সময়সূচী ঘোষণা করা হয়েছে। এ । দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আদালতে দুর্নীতি ও বেআইনী কার্যকলাপের অভিযোগে সংস্থাপন বিভাগের অতিরিক্ত সাবেক সচিব জনাব সৈয়দ হোসেনের বিচার শুরু হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারী আগ্রহে উপজাতীয় নেতারা তাদের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কর্মরত সাংবাদিক ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পেশাগত প্রশিক্ষণের জন্যে। সরকার ঢাকায় একটি প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার সাবেক সম্পাদক জনাব আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন। নোয়াখালী, দিনাজপুর, রাজশাহী নতুন করে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। একমাত্র রাজশাহী জেলায় দেড় লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাবনার সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত পাবনা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যানকে ১৫ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। ২৪ বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদাররেসীনের এক বিশেষ সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার জন্যে আলেম সমাজের কাছে দেশবাসীকে উবূন্ধ করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্ব সংস্থায় ফারাক্কা প্রশ্নটি তোলার জন্যে বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ভারতের সাথে ফারাক্কা বিরোধের প্রশ্নটি সাধারণ পরিষদের আগামী অধিবেশনে বিবেচনার জন্যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। নোট জাল করার অভিযোগে পুলিশ দু’ব্যক্তিকে যশোর থেকে গ্রেফতার করেছে। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৬ সনের সামরিক আইন বিধিসমূহের ২১তম সংশোধনী সাধন করে ১৯৭৬ সনের ২৬ নম্বর বিধি করেছেন। পুজি বিনিয়োগ বোর্ড মোট। ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা বিনিয়োগে দেশের উত্তরাঞ্চলে ৬৪টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সাবেক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী) পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলবিধি অনুযায়ী ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সরকারের নিকট অনুমোদনের জন্যে পেশ করা হয়েছে। ২৫ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে বাংলাদেশ কর্তৃক ফারাক্কা প্রশ্ন উত্থাপনের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে নৌবাহিনী প্রধান ও উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আগামী গ্রীষ্মে পানির অভাব দেখা দেবার আগেই বাংলাদেশ ফারাক্কা সমস্যার একটা সমাধান চায়। তিনি বলেন, ফারাক্কা প্রশ্ন এখন একটি মানবিক সমস্যা—যার সঙ্গে এ দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ও বাঁচা-মরায় প্রশ্ন জড়িত। তাই আমরা এর আশূ সমাধান চাই। প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনযন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলা সম্পর্কিত বিষয়ে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার কতিপয় বিষয় অনুমোদন করা হয়। : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ৬৩ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোট ২১৪ কোটি টাকা ব্যয়ের চারটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। জনাব মোহাম্মদ তোয়াহার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলকে এম এল প্রকাশ্য রাজ নৈতিক দল হিসেবে পুনঃসংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২৬ আলজিরিয়া সরকার তাদের নির্মিতব্য বৃহত্তম জুট মিলটি প্রাথমিকভাবে তিন বছর চালানোর এবং তার পরিচালনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ‘বিজেএমসি’র কাছে হস্তান্তর করেছে।বর্তমানে ঢাকায় আগত বাংলা দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনার গণ বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েমের সাথে দেখা করেন। সরকার বাংলাদেশ শিল্প ও বলিক ফেডারেশন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ আর্মি এ্যাক্ট সেকশন ১৬ অনুযায়ী সরকার অস্থায়ী লেঃ কর্ণেল খোন্দকার আবদুর রশীদ – ও অস্থায়ী লেঃ কর্ণেল সৈয়দ ফারুক রহমানকে সেনাবাহিনীর চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেছেন। ময়মনসিংহ সীমান্তে বিডিআর ও সীমান্তের ওপার 2দলের মধ্যকার দুষ্কৃতকারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে এক জন দুষ্কৃতকারী নিহত হয়েছে ওও একজন দুষ্কৃতকারী কে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামালপুরে বিপুল পরিমাণ জ্যান্ত গবাদি পশুর চামড়া চুরি।
২৭ চাঁদপুর মহকুমার মতলব থানার তিনটি গ্রামে পদ্মা ভাঙনে দুইশো পরিবার গৃহহারা হয়েছে।
(অস্পষ্ট)
গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলশ্রুতিতে পরিবেশের পরিবর্তনে মেঘনা-পদ্মায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। জনাব মোস্তফা কামাল বার এট ল’কে বাংলাদেশ সরকারের এডভোকেট জেনারেল নিয়োগ করা হয়েছে। : পবিত্র মাহে রমজানের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম দেশবাসীর প্রতি এক অভিনন্দন বাণীতে পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা রক্ষার জন্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রোগমুক্তি কামনা করে জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে মোনাজাত করা হয়েছে। (২৮) সরকার সামাজিক স্বাস্থ্য রক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রবর্তনের কর্মসুচী গ্রহণ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে পল্লী এলাকার ৩৫৬ টি থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ১৫০টি কেন্দ্রকে এই কর্মসূচীর অধীনে আনা হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোর নাম হবে সমন্বিত পল্লী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রেসিডেন্ট সায়েম মোজাম্বিক, তাঞ্জানিয়া ও জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারী জেনারেলের কাছে পাঠানো এক বার্তায় প্রিটোরিয়ার অবৈধ বর্ণবাদী সরকার কর্তৃক আফ্রিকানদের হত্যার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং আফ্রিকান জনগণের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদবিরোদী সংগ্রামে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনের পুনরল্লেখ করেছেন। । সরকার ১৯৭৬-৭৭ সনের জন্যে দেশের সকল থানা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের জন্যে দু’কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। খোন্দকার মুশতাক আহমদের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত নয়া রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক লীগের গঠনতন্ত্র, মেনিফ্যাস্টো এবং এতদসংক্রান্ত যাবতীয় দলিলপত্র সরকারের অনুমোদনের জন্যে সরকারের কাছে দাখিল করা হয়েছে। (২৯) দীর্ঘ অসুস্থতার পর আপামর মানুষের প্রিয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আজ সকালে ঢাকায় পিজি-হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আছরের নামাজের পর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের প্রশস্ত চত্বরে। তাঁকে দাফন করা হয়েছে। (৩১) ‘বাংলাদেশ জাতিসংঘের মহাসচিবের নিকট পাঠানো এক স্মারকলিপিতে আন্তর্জাতিক সব আইনকানন ও প্রচলিত রীতিনীতি এবং পানি ব্যবহারের ব্যাপারে প্রদত্ত প্রতিশ্রতি লংঘন করে আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার পানি একতরফা প্রত্যাহারের প্রশ্ন সাধারণ পরিষদের আলোচ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্তির অনরোধ জানিয়েছে। সেনাবাহিনী স্টাফ প্রধান এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর একটি নবগঠিত ডিভিশনের সদর দফতরে পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী তার মহান ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিষ্ঠা এবং অদম্য সাহস নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে। ও অনুমোদন লাভের জন্য বিশটি প্রস্তাবিত নতুন দল নিজ নিজ গঠনতন্ত্র ও মেনিফ্যাস্টো দাখিল করেছে। এদের মধ্যে আছে মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জনাব এ, সবুর খানের বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খন্দকার মোস্তাকের ডেমোক্র্যাটিক লীগ, ইউনাইটেড, পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, পিপলস লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ, গণ-আজাদী দল, লেবার পার্টি, সোস্যালিস্ট পার্টি প্রভৃতি। লিবিয়ায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম লিবিয়ায় বিপ্লবী কম্যান্ড পরিষদের চেয়ারম্যান কর্ণেল আল গাদ্দাফীর নিকট আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা এ জানিয়ে এক বার্তা পাঠিয়েছেন।

সেপ্টেম্বর
১ ঢাকা বিমানবন্দরে এক আকস্মিক বিমান দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর চীফ অব স্টাফ ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার নিহত হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে স্কোয়াড্রন লীডার মফিদুল হক ও নিহত হয়েছেন। মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের পর সকল সরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। : যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে গাইবান্ধা মহকুমায় ফলছড়ি ও সাঘাট থানার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। : ফারাক্কা সমস্যাটিকে জাতিসংঘে উথাপন করার সরকারী সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন মহল স্বাগত জানিয়েছে । প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ১৯৭৬ সালের ২৭নং সামরিক আইন বিধি জারি করেছেন। এই বিধি মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে বিচারাধীন মামলার সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। লেঃ কর্ণেল এম, এ, সালামকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকার সাত নম্বর বিশেষ সামরিক আদালত গঠন করেছেন। আরো ৬৩১ জন রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের বন্যাদুর্গতদের প্রতি সহানুভূতির নিদর্শনস্বরপ বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানে ৫০ হাজার পাউণ্ড চা প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। । আসছে রমজান মাসে সরকার মাথাপিছু খাদ্যদ্রব্যের কোটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। : প্রেসিডেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৯৪৮ সালের আনসার আইন প্রয়োগের জন্য একটি অর্ডিন্যান্স জারি করছেন। : জনাব আতাউর রহমান খান নেতৃত্বাধীন অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ জাতীয় লীগের গঠনতন্ত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সরকারের অনুমোদনের জন্যে পেশ করা হয়েছে। পুজি প্রত্যাহার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে সরকার শিল্প ইউনিটসমূহ থেকে পুজি প্রত্যাহারের শর্তাবলী শিথিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। : সেনাবাহিনী স্টাফ প্রধান এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সাভারস্থ আনসার প্রশিক্ষণ শিবিরে ‘জারিয়ান ঝঞ্জাইল’ নামের নবগঠিত নবম আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণ কাজ অবলোকন করেন। নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আটজন সশস্ত্র ডাকাত বরিশাল থেকে লালমোহনগামী একটি লঞ্চ থেকে লুণ্ঠন করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থার শ’দুয়েক নৌযান থেকে পুজি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অধুনালুপ্ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, মেনিফ্যাস্টো ও কর্মসচী সরকারের অনুমোদনের জন্যে পেশ করা হয়েছে। : সরকার মালিকানাধীন তিনটি সংবাদপত্রের প্রশাসন কাঠামো পুনগঠিত করে প্রত্যেকটি পত্রিকার শীর্ষস্তরে একজন সম্পাদক ছাড়াও একজন ব্যবস্থাপক সম্পাদক এবং একজন নির্বাহী সম্পাদক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন। (৪) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, কে, বাশারের মৃত্যুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব জেড, এ, ভুট্টো গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে গণচীনের রাষ্ট্রদূত মিঃ চুয়াং ইয়েন বাংলাদেশের প্রতি চীনের অব্যাহত সমর্থনের কথা পূর্নবার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বংলাদেশের জনগণের তাঁদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে চীন সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে থাকবে। (৫) এয়ার কমোডর এ. জি. মাহমুদ টিবিটি’, ‘পিএসএ’ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চীফ অব স্টাফ নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি দূর্ঘটনায় নিহত মরহুম এয়ার ভাইস-মার্শাল মোহাম্মদ খাদেল,ম বাশারের স্থলাভিষিক্ত হলেন। : ফারাক্কায় পানি প্রত্যাহারে সৃষ্ট গঙ্গার পানি বিরোধ নিয়ে ভারত সরকারের আমন্ত্রণকুমে শীঘ্র আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের সিধান্ত নিয়েছেন। এই প্রতিনিধিদল এ মাসের সাত তারিখে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন। : ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার সিঙ্গার বিল ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ীকাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। (৬) প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক অাইন প্রশাসক, বিমানবাহিনীর স্টাফ প্রধান এয়ার কমোডর জনাব এ, জি, মাহমুদকে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেছেন এবং প্রেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বিমান চলাচল ও পর্যটন বিভাগের দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পণ করেছেন। : লন্ডস্থ সেন্ট পিটার্স হাস পাতালে মওলানা ভাসানীর স্বাস্থ্য পুনরায় পরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরবেন। : সরকারী অনুমোদনের জন্য অধুনালুন্ত বাংলাদেশের কমনিস্ট পার্টি এবং এম, এ, আউয়ালের নেতৃত্বে সাবেক ‘জাসদ তাদের ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্র আইন সচিবের নিকট পেশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, ১৯৭৬ সালের সমবায় সমিতি (বিশেষ বিধান) বিধি জারি করেন। আজ থেকে শিল্পকলা একাডেমীতে এস, এম, সুলতানের চিত্রপ্রদর্শনী শুরু হয়েছে। প্রেসিডেণ্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জনাব কাজী আনোয়ারুল হক এই একক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। (৭) ফারাক্কা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্যে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে নৌবাহিনী প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম. এইচ, খান দিল্লীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। : এ পর্যন্ত ত্রিশটিরও বেশী রাজনৈতিক দল সরকারের অনুমোদনের জন্যে তাঁদের কাগজপত্র পেশ করেছেন। : প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদ ঢাকায় একটি শিশু একাডেমী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আলজিরীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডঃ আকসার মোহাম্মদের নেতৃত্বে একটি আলজিরীয় সরকারী সরকারী প্রতিনিধিদল ঢাকার এসে পৌছেছেন। : ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা হয়ে বিডিআর ও পুলিশবাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ১৬ জন দুষ্কৃতকারীকে গ্রেফতার করেছে। : সরকারী অনুমোদনের জন্য শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদীদল তাদের গঠনতন্ত্র ও মেনোফ্যাস্ট দাখিল করেছেন। : সরকার ঈদ উপলক্ষে নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের মাসিক বেতনের অর্ধেক আগাম প্রদান করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে (৮) ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন হানে ধৃত ও আত্নসমর্পণকারী দুষ্কতকারীগণ এই মর্মে স্বীকারোক্তি করেছেন যে, ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চান্দুবুইসহ বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ চালানোর জন্য অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মিঃ ডেভিস, ই, বোস্টার এক বিদায়ী সাক্ষাতকারে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মিলিত হন। বেসরকারী খাতে পুজি বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থার সদস্য মিঃ পি, বি, কুয়ান, ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। : গঙ্গার পানি বণ্টন সম্পকে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। । সরকারী অনুমোদনের জন্য অধ্যাপক মুজাফফর আহমদের নেতৃত্বে অবল, ন্যাপ, তাদের গঠনতন্ত্র ও মেনিফ্যাস্টো আইন সচিবের নিকট পেশ করেছেন। রংপুর জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানায় গুলীবিনিময়ের পর ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ১৩ জন দুষ্কৃতকারী নিহত হয় এবং ৩ জন দুষ্কৃতকারীকে গ্রেফতার করা হয়। । সরকার দেশের কয়েকটি জেলা থেকে পরিবহণ বোনাসসহ প্রতি মন আউশ ধান ৭০ টাকা ও চাল ১১২ টাকা মন দরে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ( ৯) বিশ্বের সবহারা এবং নিপীড়িত জাতিসমূহ ও জনগণের মহান শিক্ষক, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মহান নেতা কমরেড মাও সে তুং-এর জীবনাবসনে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনেয় স্টেট কাউন্সিলের প্রধানমন্ত্রী হয়া কুয়া ফেং-এর নিকট এক শোকবার্তা প্রেরণ করেছেন। অধুনালুপ্ত নেজামে ইসলাম পার্টি সরকারী অনুমোদনের জন্য পার্টির গঠনতন্ত্র ও মেনিফ্যাস্টো আইন সচিবের নিকট পেশ করেছেন। : লালমনিরহাট বিমানবন্দরে এক ভাষণে বিমানবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার কমোডর জনাব এ, জি, মাহমুদ বৈমানিক ও অফিসারদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বলেন যে, আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সীমিত সম্পদ দিয়ে কার্যকরী বিমানবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। সরকার ১৮টি মহকুমায় সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত গঠন এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটদের এসব আদালতের সদস্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন।

১০ বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের নেতা মহান কমরেড় মাও সে তুং-এর মৃত্যুতে সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সকল সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকে। এ উপলক্ষে সরকারী সকল অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। : ভারত থেকে ফিরে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেন, ফারাক্কা সমস্যায় বাংলাদেশ স্থায়ী সমাধান চাইলেও ভারতের অযৌক্তিক বক্তব্যের প্রতি একগুয়েমি মনোভাবের জন্য ফারাক্কা বৈঠক ব্যর্থ হয়ে গেছে। সাংবাদিক প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে মওলানা ভাসানী ক্ষুদ্র মতপার্থক্য ভুলে স্বাধীনতা স্বাধীনতা সংহত করতে সচেষ্ট হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। : যশোর বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনকালে বিমানবাহিনী স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার কমোডর এ, জি, মাহমদ, – বিমানবাহিনীর প্রধান অফিসার ও বৈমানিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতি সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান জানান। ‘ বঙ্গোপসাগরে সষ্টি নিম্নচাপ ধীরে ধীরে উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে আসছে। এ জন্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা এবং নোয়াখালীসহ উপক,লীয় জেলায় সাত নম্বর বিপদসঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ‘ ভারত থেকে ফিরে এসেই রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান চেয়ারম্যান মাও-এর মত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবাণী দিয়ে (১১) সাভারে আনসারবাহিনীর ৮ম ও ৯ম ব্যাটেলিয়নের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এ প্রসঙ্গে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি আনসারবাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন সীমান্তের ওপার হতে হানাদারী ষড়যন্ত্র ও বিদেশী সাহায্যপষ্ট অন্তর্ঘাতকদের হীন কার্যকলাপ নস্যাৎ করে দেশের সীমান্ত ও আভ্যন্তরীণ শান্তিশঙখলা রক্ষার্থে অন্যান্য বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অকুতোভয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্যে। ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ডাক, তার ও টেলিফোন বিভাগের এক ও প্রেসনোটে টঙ্গীর টেলিফোন : শিল্প সংস্থার ধর্মঘটরত শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঃ নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, আমন্ত্রণ অনুযায়ী ভারত খোলা মন নিয়ে কোন পূর্বশর্ত ছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনি। তারা তাদের পুরোনো কথাই বলেছে এবং কিছু নতুন কথা বলে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ভারত নীতিগতভাবে এ ব্যাপারে একটি চুক্তিতে রাজী হবে। কিন্তু ভারত এর পরিবর্তে ব্রহ্মপুত্র সংযোগ খাল কাটার প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশের পক্ষে এই প্রস্তাব কিছুতেই গ্রহণ করা সম্ভব নয়। গঙ্গার পানির উপর বাংলাদেশের দাবী ন্যায়সঙ্গত। এই এই আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে কোন চাপের মুখে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা যাবে না। বিশ্ববিবেকের বিবেচনার জন্যে ফারাক্কা সমস্যা বাংলাদেশ জাতিসংঘে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। । সরকার ১৯৭৬-৭৭ সনের গম নীতি অনুমোদন করেছেন। প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত এই নীতি অনুযায়ী তিন লাখ ত্রিশ হাজার একর জমিতে গম উৎপাদনের কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত জাতীয় জনতা পাটির ঘোষণাপত্র গঠনতন্ত্র ও আনুষঙ্গিক দলিলপত্রাদি সরকারের অনুমোদনের জন্যে পেশ করা হয়েছে। আগামী মৌসুমে ৭৪ টাকা মন দরে ৫০ হাজার টন গম সংগ্রহের প্রস্তাবও অনুমোদন করা ও প্রেসিডেন্ট সায়েম বঙ্গভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ও কলেজসমূহের অধ্যক্ষসহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমাবেশে বক্তৃতা করেন। ১২ বাংলাদেশ ওয়াপদার সাবেক সিকিউরিটি ডিরেক্টর জনাব মাহফুজ আলম বেগ ভারতের একটি প্রশিক্ষণ শিবির ধেকে পালিয়ে এসে এখানে সাংবাদিকদের বলেন, “ভারতের সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কেবিনেট ডিভিশনের সক্রিয় বাহিনীর সহযোগিতায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ও চিকিৎসার জন্যে ২৯ দিন লন্ডনে অবস্থান করে প্রবীণ জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সকালে স্বদেশে ফিরে এসেছেন। বিমানবন্দরে মওলানা ভাসানী বলেন—“দেশের জনগণ এ মুহতে নির্বাচন চায় না। জনগণের ইচ্ছার বিরদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত তাঁদের উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। তিনি জাতীয় ঐক্যের উপর গুরত্ব আরোপ করেন।” ঢাকার নাগরিকদের পক্ষ থেকে এক নাগরিক, শোকসভার মাধ্যমে। বিদ্রোহী কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সভার এক প্রস্তাবৈ কবির সম্পর্ণে রচনাবলী সংকলন ও তার সলভ মূল্যে প্রকাশ করার জন্যে সরকারের প্রতি অনরোধ জানানো হয়। । প্রস্তাবিত উতীয় জনতা পাটি ফারাক্কা সংক্রান্ত দিল্লী বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পার্টির পক্ষ থেকে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এবং ভারতীয় জনগণের বিবেককে ভারত সরকারের এই একগু’য়েমি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর ও সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান হয় এবং , ফারাক্কা সমস্যার ব্যাপারে দুবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংকল্প ঘোষণা করা হয়। বরিশাল শহরে নিজের ২৪ জন স্ত্রীকে দিয়ে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে পুলিশ মোফাজ্জল হোসেন নামে একজন যুবককে গ্রেফতার করেছে। : প্রেসিডেন্ট সায়েম বঙ্গভবনে জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে ভাষণদান করেন। (১৩) গঙ্গার পানি বিরোধের উপর বাংলাদেশ সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছেন। : দিলী আলোচনার ফলাফল সম্পকৈ ভারতের সরকারী বিবৃতির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে টাকায় একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন, ভারতের অনমনীয় ও একগয়ে মনোভাব এবং এই নদীর পানির সহ-অংশীদার বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার এবং প্রয়োজনের প্রতি তোয়াক্কা না করে ভারতের তরফে নিত্যনতুন এবং স্বার্থপর দাবী উত্থাপনের দরুনই সম্প্রতি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ফারাক্কা আলোচনা ব্যথ হয়েছে। : অধুনালুপ্ত জাগমই, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদেশের ন্যায্য দাবী সমর্থনের জন্যে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানান। বাংলাদেশ ও আলজিরিয়ার মধ্যে বিনিময়ের জন্যে একটি খসড়া বাণিজ্য চুক্তি ঢাকায় চড়ান্ত করা হয়েছে। • সকালে যশোর সেনানিবাসে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নবগঠিত ডিভিশনের সদর দফতরে পতাকা উত্তোলন করেন। প্রেসিডেন্টের মহিলা বিষয়ক সহকারী মিসেস ফিরোজা বারীকে প্রতিমন্ত্রীর সুযোগ-সুবিধা এবং বেতনাদি মঞ্জুর করা হয়েছে। : ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও আহমেদ মোহাম্মদ আলী এয়ার ভাইস-মার্শাল এম, কে, বাশারের আকস্মিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। (১৪) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ বিভিন্ন নির্মাণাধীন প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুততর করার এবং অধিক হারে বৈদেশিক সাহায্য আকর্ষণের সযোগ সৃষ্টির কতকগুলো নির্দেশ দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিষদের বৈঠকে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের দিকটিও বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। : সরকার তদন্ত অনুষ্ঠানের পর জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দরুন খুলনা পৌরসভাকে বর্তমান মেয়া দের অবিশষ্ট সময়কালের জন্যে বাতিল ঘোষণা করেছেন। টঙ্গী টেলিফোন শিল্প সংস্থার পাঁচজন শ্রমিককে তাদের ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জনাব শাহ আলমসহ বিশেষ ক্ষমতা ও জরুরী আইনে এবং সামরিক আইন বিধিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। : ত্রুটিপর্ণ ব্যবস্থাপনা এবং অর্থের অভাবে দেশের ২৭টি চাবাগান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। ও এক সার্কুলারে সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচনকালে সরকারী কর্মচারীদের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকতে এবং ব্যক্তি-বিশেষ বা বিভিন্ন গোষ্ঠীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের কাজে তাদের ব্যবহার করা হতে সতর্ক থাকতে বলেছেন। অধুনালুপ্ত শ্রমিক-কৃষকসমাজবাদী দল গঙ্গার পানি বণ্টন সমস্যা জাতিসংঘে উত্থাপনের , সরকারী সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করেছেন। বাংলাদেশে পশ্চিম জার্মানীর নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদত ডক্টর উলফডিয়েট্রিশ শীলিং ঢাকা পৌঁছেছেন। : পাবনায় পানির ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে, নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে যাবার ফলে। : সরকার ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ২৭টি সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালত গঠন করেছেন। (১৫) সরকার বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, পুজি বিস্তার, সঞ্চয় বদ্ধিতে উৎসাহ দানের জন্যে পজি বিনিয়োগ কর্পোরেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। : সারা দেশে স্কুল এবং কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গণ-শরীর চর্চা শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ৮৬ কোটী টাকার ৮টি উন্নয়ন স্কীম অনুমোদন করেছেন। : বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র কর্মকর্তা জনাব আবদুল গণি হাজারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না…….. রাজেউন): মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জনাব আবদুল গণি হাজারীর মত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন : লন্ডন থেকে ফেরবার পর মওলানা ভাসানী নির্বাচন এবং জাতীয় অন্যান্য বিষয় নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তার সমালোচনা করেছেন প্রস্তাবিত বাংলাদেশ মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুস সবর, প্রস্তাবিত ডেমোক্র্যাটিক লীগের নেতা পীর মোহসেনউদ্দিন (দুদু মিয়া.) এবং প্রস্তাবিত জাতীয় জনতা পার্টি প্রধান জেনারেল ওসমানী। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিমানবাহিনীর প্রধান এবং প্রতিরক্ষা দফতরের উপমন্ত্রী বাংলাদেশ বাহিনীর সাবেক স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ‘ প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জাতীয় দল ফারাক্কা সমস্যা জাতিসংঘে উত্থাপনের সরকারী সিদ্ধান্ত অভিনন্দিত করেছেন। (১৬) আদমজী জুট মিল উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের জন্যে সরকার ৪৬ কোটী টাকা ব্যয়ের এক ব্যাপক – পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। অনুমোদনের জন্যে প্রস্তাবিত যে সব রাজনৈতিক দল সরকারে কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে, আইন ও সংসদীয় মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলোর জবাব প্রদান শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলবিধির শর্তাবলী পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রাস্তাবিত দল ইসলামী গণতন্ত্রী দল এবং বাংলাদেশ আদর্শ পার্টিকে ‘না-সূচক জবাব দেয়া হয়েছে। অধুনালুপ্ত জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও সাধারণ সম্পাদক জনাব সিরাজুল হোসেন খান এবং সাবেক জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জনাব আবুল বাশার ও সাধারণ সম্পাদক জনাব এম, এ, মোত্তালিব এক যুক্ত বিবৃতিতে মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে জনাব এ, সবুর খান ও পীর মোহসেনউদ্দিন (দুদ মিয়ার) অসৌজন্যমূলক, উক্তি ও বক্তব্য পেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন। : প্রস্তাবিত ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগের প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান মওলানা সিদ্দিক আহমেদ নির্বাচন সম্পর্কিত মওলানা ভাসানীর সাম্প্রতিক উক্তির সমালোচনা করেন। একটি সাদা জীপে করে সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীদল রাজধানীর বুকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় দৃু’ব্যক্তিকে অপহরণ করে তাঁদের কাছ থেকে নগদ কুড়ি হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। : সরকার চলতি অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছ’টি ইউনিয়ন কমিউনিটি কেন্দ্র নির্মাণ এবং অসম্পূর্ণ থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করার জন্যে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছেন। (১৭) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্যে নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে বিমান- বন্দরে তিনি বলেন, ফারাক্কায় সই – দিয়ে ভারত কর্তৃক একতরফাভাবে গাঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, যেভাবেই হোক সে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, বিশ্ব সংস্থা এমন কোন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করবে যাতে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক সমস্যাবলীর নিষ্পত্তি হয়ে যায়। । নবতিপর জননেতা মওলানা ভাসানী সংবাদপত্রে প্রকাশিত কতিপয় রাজনীতিকের অপপ্রচারের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তি বা বা গ্রুপকে আক্রমণ করিনি। আমি জাতীয় স্বার্থে নির্বাচনের সময় বেছে নেয়ার প্রশ্নে জনমত যাচাইয়ের কথা বলেছি। জাতীয় সঙ্কট মুহূর্তে এ জাতীয় রাজনীতিকদের বিবৃতি দেশকে পেছন দিক থেকে ছুরিকাঘাতের শামিল। : অধুনালুপ্ত ন্যাপের (ভাসানী) সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মশিউর রহমান বলেছেন, মওলানা ভাসানী নির্বাচন কিংবা গতন্ত্রের বিরোধী নন। তিনি বলেন, যারা এখন নিজেদের গণতন্ত্রের নির্ভেজাল প্রবক্তা হিসেবে উপস্থিত করছেন, তাদের অতীত কার্যকলাপই (অস্পষ্ট——) গেলাফ-ই-কা’বা হস্তান্তর করেন। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্যে ৩৭ কোটী ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের সাত বছরের ব্যাপক প্রকল্প এখন বাংলাদেশ তেল ও গ্যাস সংস্থার (পেট্রো-বাংলা) কার্য পরিচালন শাখা প্রতিষ্ঠান তেল সধানী কোম্পানীর বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ও গঙ্গা নদীর পানি প্রত্যাহারের প্রশ্নে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তুরস্ক তার প্রতি পর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন কয়েছে। (১৮) চেয়ারম্যান মাও সে তুং-এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে আজ বাংলাদেশে জাতীয় শোক পালিত হয়েছে। সকল সরকারী ও বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। : প্রেসিডেন্ট জনাব আকবর কবিরকে তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিয়োগ করেছেন। তাঁকে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। (পর্ণাঙ্গ জীবনী দ্রষ্টব্য) ; শ্রম সমস্যার উপর সরকার। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছেন। : ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ১১.৪ ভাগ এবং এর ফলে উক্ত অর্থবছরে সামগ্রিক জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় শতকরা বিশ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। । সরকার আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্যে – জাতীয় কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব – এ, এম, সায়েম এবং সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। (১৯) ময়মনসিংহ জেলার বারহাট্টা থানায় ন’জন সশস্র রাষ্ট্রবিরোধী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অস্ত্র গোলাবারুদ এবং আপত্তিকর প্রচারপত্রসহ আত্নসমর্পণ করেছে।’ প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জাতীয় লীগের আহৰায়ক জনাব আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে বলেন, ১৯৭৭ সনে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় ঐক্য সদঢ় ও সুসংহত করবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ও প্রস্তাবিত বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের নেতা জনাব মোহাম্মদ তোয়াহা এক বিবতিতে বলেন— সম্প্রতি মওলানা ভাসানী নির্বাচন সম্পকে ঢাকা বিমানবন্দরে যে কথা বলেছেন তা এ দেশের জনমতেরই প্রতিধনি।’ (২০) নারায়ণগঞ্জে ভেজা পাট বেচা কেনা, এবং ওজনে কারচুরির দায়ে চলতি পাট মৌসমের গত আড়াই মাসে সারা দেশের তিনশ’ জন পাট ব্যবসায়ীকে অভিযুক্ত করে তাদের কাছ থেকে আড়াই লক্ষাধিক টাকা , জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ১৯৭৬ সনের রাজনৈতিক দলবিধি অনুযায়ী এ পর্যন্ত চারটি – রাজনৈতিক দল অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত দলগুলো হলো— মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, জনাব এ, সবর খানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং ডঃ আলীম আল-রাজীর নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ পিপলস লীগ। : খেলাধুলা ও ক্রীড়াসহ শারীরিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্যে . দই কোটী টাকার একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। : অধুনালত ইউপিপি’ সকল গণতান্ত্রিক দলের মিলিত কনভেনশনের মাধ্যমে নির্বাচনের যুক্তিসঙ্গত। তারিখ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। পার্টি কার্যালয়ে পাটির সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফর আহমদ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ প্রস্তাবের কথা জানান। তেজগাঁ শিল্প এলাকার ‘জি, এম, জি’ কর্পোরেশনে এক মর্মাত্তিক দুর্ঘটনায় তিনজন শ্রমিক নিহত ও ন’জন শ্রমিক আহত হয়েছে। প্রস্তাবিত ডেমোক্র্যাটিক লীগ গণচীনের চেয়ারম্যান মাও সে তুং, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং এয়ার ভাইস-মাশাল এম, কে, বাশারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ডেমোক্র্যাটিক লীগ ভারত কর্তৃক একতরফাভাবে ফারাক্কা বাঁধে পানি প্রত্যাহার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং এর ন্যায়সঙ্গত সমাধানে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলার প্রস্তাব করে। (২১) দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালত ওলন্দাজ নাগরিক পিটার কাস্টার ও অপর ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনীত ষড়যন্ত্র মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন। পিটায় কাস্টার ও অপর ছ’জন অভিযুক্তকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। বাদবাকী সাতজন অভিযুক্তকে আদালত তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে “ অব্যাহতি দিয়েছেন। . (বিবরণ দ্রষ্টব্য) : প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েমের সভাপতিত্বে জাতীয় . অর্থনৈতিক পরিষদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গভবনে। বৈঠকে কাজের পুনরাবৃত্তি এড়াতে সচিবালয়ের সকল বিষয়ের যথাসম্ভব দ্রুত নিষ্পত্তি করবার জন্যে কতকগলো নির্দেশ দেয়া হয়। চলতি মৌসমে ৭১ লাখ ৪৪ হাজার টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে । (২২) নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেছেন, আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার পানি সংক্রান্ত বিরোধের একটি আশ সমাধান খুজে পেতে বিশ্ব সমাজের সমঝোতা ও সহযোগিতা বাংলাদেশের প্রয়োজন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একত্রিশতম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধানরুপে যোগ দিতে গিয়ে নিউইয়কে রিয়ার এডমিরাল খান বলেন—বাংলাদেশ, তার সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থেই গঙ্গার পানি বিরোধের একটি সমাধান বের করার জন্যে চেষ্টা করছে। । বিশ্ব ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বদ্ধি পাওয়ার ফলে দেশের খাদ্যশস্য আমদানীর পরিমাণ ৭ লাখ ৬০ হাজার টন কমে গেছে। এই সাফল্য খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ১৭ শতাংশ এবং শিল্প উৎপাদন আনুমানিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ারই ফলশ্রতি। রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে সঠিক লক্ষ্যে পদক্ষেপ গহীত হচ্ছে। । ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন জেল থেকে ১৮শ’ বিচারাধীন আসামী এবং ১১৪ জন রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। । ১৯৭৬ সনের রাজনৈতিক দলবিধি অনুযায়ী খোন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে গঠিত ডেমোক্র্যাটিক লীগ রাজনৈতিকদল হিসেবে অনুমোদন লাভ করেছে। । আজ রাতে সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র শবেকদর উদযাপিত হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদলের নেতা নেত্রকোণা কলেজের ডিগ্রী পরীক্ষার ছাত্র সুলতান আহমদ সম্প্রতি কতুপক্ষের কাছে আতসমর্পণ করে বলেছে যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (অস্পষ্ট) তৎপরতা চালানোর জন্যে এবং তাদের ভাষায় সামাজিক বিপ্লবের পক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সীমান্তের ওপারে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । সাবেক জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচী এবং সহযোগী সংগঠন সমহের তালিকা রাজনৈতিক বিধি ১৯৭৬ অনুযায়ী সরকারের অনমোদনের জন্যে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বৃটেনের কাছ থেকে বিশ লাখ পাউণ্ড স্টার্লিং (৫ কোটী ৩৫ হাখ টাকা) এর সাহায্য পাবে। ঐ মর্মে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। । প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সাসেম সৌদী আরবের জাতীয় দিবস উপলক্ষে পাঠানো এক বাণীতে বাদশাহ, খালেদকে অন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাজশাহী শহরসহ জেলার সদর মহকুমায় ১১টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। মহকুমার ত্রিশ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিনাজপুর ভোগ্যপণ্য গুদামে দেড় লাখ টাকার জুতা নষ্ট ও নদীর ভাঙনে মুন্সীগঞ্জে চার হাজার লোক গৃহহারা। (২৩) ফ্রান্সে নিযুক্ত, বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত লেঃ জেঃ খাজা -ওয়াসিউদ্দিনকে স্বাগত জানাতে গিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরী জিমকার্ড দেস্তা বলেছেন, ফ্রান্স বাংলাদেশকে তার স্বাধীনতা সুদৃঢ় করে তোলা, বৈদেশিক সম্পর্ককে বহুমখী করে তোলা ও বিশ্বে ন্যায়সঙ্গত আসন লাভের সফল প্রচেষ্টায় অভিনন্দন জানাচ্ছে। ফ্রান্স ও বাংলাদেশ শান্তি এবং সমানাধিকারের সমাআদর্শ থেকেই তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমঝোতা ও সহযোগিতায় আগ্রহী। রাজশাহী, ও কুষ্টিয়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, দুটি জেলায় ৪০ হাজার লোক গৃহহারা হয়ে পড়েছে। : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফোর্ড, মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব ইসমাইল ফাহমী প্রেসিডেন্ট সায়েমের কাছে শুভেচ্ছা- বাণী পাঠিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার গরীব নর-নারীর মধ্যে বই বিতরণ, করা হচ্ছে। ; মিঃ পিটার কাস্টারকে প্রেসিডেন্ট- ক্ষমা মঞ্জুর করেছেন এবং তার বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছেন। “” বাংলাদেশের দু’সদস্যের একটি পতিনিধি দল ‘উন্নয়নশীল দেশসমহের আন্তনির্ভরশীলতা’র উপর। আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে মালাগাছির পথে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন—বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টর প্রধান আইনজীবী মীর্জা গোলাম হাফিজ এবং দৈনিক বাংলা, ‘বিচিত্রা’ এবং কিশোর বাংলা’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব আলী আশরাফ। : প্রস্তাবিত জাতীয় জনতা পাটি জাতিসংঘে ফারাক্কা প্রশ্ন উত্থাপনের – সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। (২৪) বন্যায় রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলায় এ পর্যন্ত দশজনের প্রাণহানি ঘটেছে, নিখোঁজ হয়েছে একজন, প্রায় দেড় লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে আছে। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জনাব এ, এম, সায়েম পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে ঈদের শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছেন। . তেহরানে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ এশীয় শ্রমমন্ত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম, এম, হক ভারত কর্তৃক ফারাক্কায় গঙ্গায় পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশে অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সষ্টি হয়েছে। তার প্রতি সম্মেলনের দৃষ্টি আকর্ষণ , করেছেন। ও বাংলাদেশ পিপলস লীগের আহবায়ক ডঃ আলীম আল-রাজী বৃটিশ সরকারের কাছে কোহিনুর বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেবার দাবী অবিলম্বে পেশ করার জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ও তিনি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রমাণ দেখিয়ে বলেন, কোহিনুর প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের। (২৮) জাতীয় মর্যাদায় এবারকার ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সরকারী ছুটি ছিল তিন দিন। সংবাদপত্রেও তিন দিন ছুটি ছিল। সরকারী এবং বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সায়েম জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও এয়ার কমোডর এ, জি, মাহমুদ ঈদবাণী দেন। ঈদ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সায়েম বঙ্গভবনে ‘ সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করেন। বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জনশক্তি বিনিময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ইরান এবং বাংলাদেশ এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। : যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পঞ্চম বিমানবাহিনী দিবস পালিত হয়। : অধুনালুপ্ত ইউনাইটেড পিপলস, পার্টির নেতৃবন্দ পার্টির সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফর আহমদের মুক্তি দাবী করেছেন। : প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের নেতৃত্বে একটি কর তদন্ত কমিশন গঠনের সিধান্ত নিয়েছেন। (৩০) ‘ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ ও সৈয়দপরে অনুষ্ঠিত সর্বস্তরের জনসভায় জেনারেল জিয়ার ভাষণ—বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তনির্ভরশীলতা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। জনসাধারণ ও বিডিআর-এর মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতায় চোরাচালান প্রায়ই বন্ধ হয়ে গেছে। চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ হলে দেশে আয় খাদ্য ঘাটতি থাকবে না।” । রমজান মাসের বর্ধিত হারেই রেশনে চাল ও ভোজ্য তেল সরবরাহ করা হবে বলে সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। শুধুমাত্র চিনির কোটা এক ছটাক কমে যাবে বলে ঘোষণা। : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দু’কোটি নব্বই লাখ টাকা ব্যয়ের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পাঁচ বছর মেয়াদী বিশেষ স্কীম সেল অনুমোদন। এতে করে বিদেশী উপদেষ্টাদের উপর নির্ভরতা হ্রাস হবে বলে বলা হয়েছে। পুজি বিনিয়োগ বোর্ড কতৃক ১৮টি ইউনিট সম্প্রসারণসহ ২২টি শিল্প ইউনিট অনুমোদন। : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান ও জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল স্যার বরাট জ্যাকসনের ফলপ্রসু অন্তরঙ্গ আলোচনা : পাবনার সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতের বিচারে পাবনা বুলবুল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এম, এ, গণিকে দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে কলেজ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। : ১৯৭৬ সালের রাজনৈতিকদল বিধি অনুযায়ী আরো দু’টি রাজনৈতিক দলের অনমোদন লাভ দল দু’টি হচ্ছে-অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী পার্টি; জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আতাউল গণি ওসমানীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জনতা পার্টি, মিসেস আমেনা বেগমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় দল, শ্রীরসরাজ মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তপশিল্পী সম্প্রদায় ফেডারেশন, অধ্যক্ষ আবদুল হামিদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণমন্ডি পার্টি ও মওলানা আবদুল মতিনের নেতৃত্বা ধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় দিবসের ২৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া কু ফেং-এর কাছে পাঠানো প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন বাণী—’বাংলাদেশের সরকার, জনগণ। ও আমার নিজের পক্ষ থেকে আপনাকে ও “আপনার মাধ্যমে ‘ চীনা সরকার ও জনগণকে চীনের জাতীয় দিবসের এই আনন্দময় ২৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে অভিন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি । আগামী বছরগুলোতে দু’দেশের সম্পর্কের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও গভীর সমঝোতার বন্ধন আগামী বছরগুলোতে উত্তরোত্তর সুদৃঢ় হয়ে উঠবে বলে দৃঢ় আস্থা রাখি ।
অক্টোবর
১ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি এ, এম, সায়েম সমগ্র বাংলাদেশকে সাতটি সামরিক আইন অঞ্চলে ভাগ করে আদেশ জারি করেছেন। তিনি ৭টি অঞ্চলের জন্য সাতজন সামরিক আইন প্রশাসকও নিযুক্ত করেছেন। নীচে অঞ্চল ও আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসকদের নাম দেয়া হলঃ-
মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী, বিইউ-ক অঞ্চল—সমগ্র ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলা।
ব্রিগেডিয়ার আমজাদ আহমদ চৌধুরী—খ অঞ্চল—সমগ্র সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলা।
ব্রিগেডিয়ার আবদুল মন্নাফ গ অঞ্চল—সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা ও এর সাথে সংলগ্ন আঞ্চলিক সমদ্র বাদে চট্টগ্রাম জেলা।
ক্যাপ্টেন সুলতান আহমদ বিএন—ঘ অঞ্চল—চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা ও এর সাথে সংলগ্ন আঞ্চলিক সমুদ্র।
কম্যান্ডার এম. রহমান বিএন —ঙ অঞ্চল—সমগ্র খুলনা জেলা ও সাথে সংলগ্ন আঞ্চলিক সমুদ্র।
ব্রিগেডিয়ার শামসুজ্জামান—চ অঞ্চল—সমগ্র যশোর, পটুয়াখালী, বরিশাল, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া জেলা।
ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ আবদুল লতিফ-“ছ অঞ্চল—সমগ্র রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর জেলা।
ডেমোক্র্যাটিক লীগের আহ্বায়ক খন্দকার মোশতাক আহমদের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে খন্দকার মোশতাক বলেন—“আমরা ফ্রি ইকনমিতে বিশ্বাস করি। তার দল গণতন্ত্রকে একটি জীবনধারা বলে বিশ্বাস করে এবং স্বাধীনতাকে ভালবাসে।”(ঘরোয়া রাজনীতি দ্রষ্টব্য)
হংকং-এ অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা ডঃ এম, এন, হুদার তিন-দফা প্রস্তাব পেশ । তিনটি দফা হচ্ছে–(ক) ১৯৮০ সালের মধ্যে উন্নত দেশগুলোর মোট জাতীয় উৎপাদনের শতকরা ০.৭ ভাগ সাহায্য প্রদানের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌছা,
(খ) মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করা এবং সম্পদ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য আইডি-এর ৯শ’ কোটী ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি আদায় এবং
(গ) ঋণ পুনর্নির্ধারণ আলোচনায় সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী ঘোষণার অনুকূলে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আইএমএফ ও আইবিআরডি’র বার্ষিক সভা আহবান।
বিদেশে কর্মরত অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক এবং কারিগরী ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে ফিরে এসে মাতৃভূমির উন্নয়নে অবদান রাখতে সরকারের আহ্বান।
রংপুর, মিঠাপুকুর, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ, মাটিবাড়ি, পলাশবাড়ি, পীরগঞ্জ ও বগুড়ায় বিভিন্ন জন সমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ– “কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আপনারা সর্বশক্তি নিয়োগ করুন।
২ সন্তোষে ‘খোদাই খিদমতগার’ নামে নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা। এর আহ্বায়ক মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা, এ জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, ভারতের সুষ্ট ফারাক্কা সঙ্কট ও বাংলাদেশীদের ফারাক্কা আন্দোলনের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
দিনাজপুর সদর মহকুমা, প্রশাসকের রিলিফ বিভাগের কেরানী খন্দকার রহল কুদ্দুস রিলিফ সামগ্রী চুরির দায়ে সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রেফতার। রিলিফদ্রব্য চুরি করে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা জমিয়েছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। ব্যাংক একুশটি একাউন্টে এ টাকা পাওয়া গেছে।
শেরপুর, নন্দীগ্রাম ও নাটোরের সর্বস্তরের জনগণ ও স্থানীয় সরকারী কর্মচারীদের পৃথক পৃথক সমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ জাতিগঠনে শিক্ষিত শ্রেণীর সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।”
সরকার কর্তৃক জাতীয় টেলিভিশন শিশু শিল্পী পুরস্কার প্রবর্তন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রহত্যা মামলার অন্যতম আসামী নুরুল ইসলাম মণ্ডল ওরফে মণ্ডল শিবালয় থানার পুলিশ কর্তৃক আটক।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মওলানা আবদুল মতিনের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে নির্বাচন দু’বছর পিছিয়ে দেয়ার সুপারিশ রাখেন। (ঘরোয়া রাজনীতি দ্রষ্টব্য)
মহাধুমধামের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা পূজা সমাপন।
জাতীয় জনসংখ্যা পরিষদের ষষ্ঠ সভায় প্রেসিডেন্টের ভাষণ “শিশুরা হচ্ছে জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা, শিক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদেরকে অবশ্য সংকল্প নিতে হবে।”
আফ্রিকায় কয়েকটি দেশ সফরের পর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা কাজী আনোয়ারুল হক বলেন—“ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদেশের নীতি আফ্রিকান দেশগুলো অনুধাবন করেছে। (ফারাক্কা দ্রষ্টব্য)
বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আকবর কবীর বলেন “দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে শিশুদের বাঁচাতে সম্মিলিত চেষ্টা দরকার।”
সচিবালয়ে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে জেনারেল জিয়ার ভাষণ ‘আমদানীকৃত পেট্রোল জাতীয় জালানী শক্তির উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে হবে।”
ডাকাতদলের সঙ্গে সংঘর্ষকালে নিহত ওসি ইফাজউদ্দিনের পরিবারের জন্য দশ হাজার টাকা মঞ্জুর। সংঘর্ষকালে পুলিশ দুজন ৪ ডাকাতকে গ্রেফতার করে।
৫ ‘জাতীয় টেলিভিশন শিশু শিল্পী পুরস্কার ১৯৭৬’, বিতরণী অনুষ্ঠানে জেনারেল জিয়া—শিশুদের ই যেভাবে গড়ে তোলা হবে তার উপরই নির্ভর করবে এ দেশের ভবিষ্যৎ অনুষ্ঠানের বিজয়ীদের মধ্যে তিনি জাতীয় ফুল শাপলার প্রতীক পুরস্কার বিতরণ করেন। ক’ শাখায় শ্রেষ্ঠ পুরুস্কার পায় সামিমা ইয়াসমিন দীবা এবং “খ” শাখায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পায় তারানা হালিম ।
পাকিস্তানের যোগাযোগ সচিব শাহনেওয়াজের নেতৃত্বে পাকিস্তানী তিন সদস্যের যোগাযোগ প্রতিনিধিদলের ঢাকা আগমন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদশের প্রতি চীনের দৃঢ় সমর্থনদান।
আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপের ৬০টি দেশের প্রতিনিধিদলের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত মালাগাছিতে আত্মনির্ভরশীলতা সম্মেলনে ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন মীর্জা গোলাম হাফিজ এবং দৈনিক বাংলা’র ম্যানেজিং এডিটর আলী আশরাফ। মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত আন্তজার্তিক আইন সমিতির ৫৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিচারপতি রুহল ইসলাম বলেন— ‘ফারাক্কায় একতরফা পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। আসলে ছোট-বড় যে কোন দেশের অধিকার যাতে নিরাপদ ও সংরক্ষিত হয় তার জন্য পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৬ শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কিত কমিটির প্রথম বৈঠকে প্রেসিডেন্টের ভাষণ—“সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা ও নির্মলতা রক্ষা ও সুনিশ্চিত করা আমাদের জাতীয় লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা হওয়া উচিত। কবি শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনানে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবুল ফজলের ভাষণ—“অভাব-অনটন এবং ঘাত-প্রতিঘাতের এই সময়ে শামসুর রাহমানের একটানা ২৫ বছর কাব্য সাধনা একটি বিরাট ঘটনা।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যস্তরের অনিয়ম ও নৈরাজ্য সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ জন শিক্ষকের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবী।
শত্রু মোকাবেলার ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ দেশপ্রেম ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বিডিআর-এর নায়েক ওবায়েদুল্লাহ, বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) এ ভূষিত। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বড় হরিণায় দক্ষতকারীদের সঙ্গে গুলী বিনিময়ের সময় আত্মোৎসর্গ করেন।
ঢাকা-দিল্লী বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ আরো তিন বছর বৃদ্ধি। দু’দেশের মধ্যেকার এ বাণিজ্য চুক্তি এ মাসের ২৮ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সুতা বা কাপড়ের দাম বাড়ানো হচ্ছে না বলে সরকারী প্রেসনোট প্রদান।
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে গ্যাসের দু’টি বিরাট স্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে সরকারী সূত্রে তথ্য প্রকাশ।
অসুস্থ কবি ও সাংবাদিক মহাদেব সাহার শয্যাপাশে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আবুল ফজল।।
৭ ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তিন দিনব্যাপী প্রথম আন্তর্জাতিক পাট সম্মেলনে শুরু। ‘ইসকাপ’ ও ‘আঙ্কটাডে’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যাণ্ড, নেপাল, বার্মা, চীন ও ইন্দোনেশিয়া। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে জেনারেল জিয়া বলেন—“পাট উৎপাদনকারী ও রফতানীকারী দেশসমূহের উচিত, যাতে উন্নত দেশগুলো তাদের সিনথেটিক উৎপাদন উৎসাহিত করার নীতিকে পরিত্যাগ করে তার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া। এর বিশ্ব সমাজের কাছে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।”
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান কর্তৃক হেবরনের ঘটনার জন্য ইসরাইলী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা প্রকাশ।
বাংলাদেশ ৭৭-জাতি গ্রপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত। বাংলাদেশের হয়ে এ দায়িত্ব পালন করবেন জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত এস, এ, এম,এস, কিবরিয়া।
সাতক্ষীরার জনসভায় জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“পানি সমস্যার মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগে – নদী, খাল ও নালা খননের এবং বাঁধ নির্মাণের কাজে হাত দিতে হবে। জাতি হিসেবে আমাদেরকে পরিশ্রমী প্রমাণ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের ১১৫টি ইউনিয়ন পরিষদে সরকার কর্তৃক বেতার সেট বিতরণ।
৮ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের ভাষণ—“জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন বলেই ফারাক্কা সমস্যার সমাধান চাই। ক্ষুদ্র দেশকে শক্তিশালী প্রতিবেশীর হাত থেকে রক্ষা করার নীতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারই নয়া বিশ্ব-ব্যবস্থা গড়ার পথ।” (ফারাক্কা দ্রষ্টব্য) :
যশোর ও খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থানে জনগণ ও সরকারী কর্মচারীদের সমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“নিজ নিজ এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শান্তির জন্যে কাজ করুন।”
সৌদী আরবে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জনাব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জেদ্দার পথে ঢাকা ত্যাগ।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে টেলিযোগাযোগ উন্নয়নে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের ডাক ও তারের অতিরিক্ত সচিব এ, এম, আহসানউল্লাহ এবং সফররত পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা ও যোগাযোগ সচিব শাহনেওয়াজ খান।
৯ ফারাক্কা প্রশ্নটি জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত। রাজনৈতিক কমিটি বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কে, এম, কায়সারের ভাষণ—-“জাতিসংঘের রাজনৈতিক কমিটিতে বিষয়টির অন্তর্ভুক্তিই (অস্পষ্ট) করছে সমস্যাটির সমাধানের আশু প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। অতএব বিষয়টির উপর আলোচনা স্থগিত বা বিলম্বিত করা হলে বাংলাদেশে তার বিরোধিতা করবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম এইচ খানের দেয়া ভোজসভায় জাতিসংঘের মহাসচিব ডঃ কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইম এর ভাষণ -”জাতিসংঘের ইতিহাস লেখা হলে তাতে বাংলাদেশের নাম সুস্পষ্ট অক্ষরে লেখা থাকবে।”
প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমী’ প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ‘অধ্যাদেশ-১৯৭৬’ জারি। একাডেমী এর উদ্দেশ্য হবে শিশুদের সাংস্কৃতিক বৈজ্ঞানিক ও বিনোদনমূলক কর্মতৎপরতার উৎকর্ষ সাধন। অধ্যাদেশ ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠিত হইবে।
চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল ও মীরপুরের সর্বস্তরের জনগণ এবং সরকারী কর্মচারীদের সমাবেশে “জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
বুলগেরিয়ার ৩২তম প্লভদিভ আন্তর্জাতিক মেলায় উন্নত মানের চা প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের, স্বর্ণপদক লাভ।
: ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর যৌথ সম্মেলনে সাহায্য দানের প্রশ্নে বিশ্ব ব্যাংককে নমনীয় হতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ডঃ এম, এন, হুদার আহ্বান।
বাংলাদেশ পিপলস লীগ প্রধান ডঃ আলীম আল-রাজীর সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে রাজী বলেন-“তাঁর দল সমাজতান্ত্রিক জীবন ধারায় বিশ্বাসী।
১০ ‘এসকাপ ও আঙ্কটাডে’র যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পাট সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ। পাটের বাজার পুনরুদ্ধারকল্পে ‘ ৬-দফা সমন্বিত কর্মসূচী গৃহীত। কর্ম সূচীগুলো হচ্ছে—মূল্য ও রফতানীলব্ধ আয় প্রকৃত অর্থে স্থিতিশীল করা এবং পাট ও পাটজাত দ্রব্যের সুষ্ঠু সরবরাহ সুনিশ্চিত করা ;
দ্বিতীয়ত, উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা ;
তৃতীয়ত, আরও ব্যাপক গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে পাটের নবতর এবং বহুমুখী ব্যবহার উদ্ভাবন করা ;
চতুর্থত, শিপিং ব্যয় হ্রাস;
পঞ্চমত, পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বাণিজ্য উদারভিত্তিক করা ;
এবং শেষোক্ত দফা হচ্ছে— সিনথেটিক বিকল্পের ভবিষ্যৎ গবেষণা সীমিত করা এবং একদিকে পাট ও পাটজাত দ্রব্য অন্যদিকে সিনথেটিক বিকল্পের উপাদানের ক্ষেত্রে সমন্বয় বিধান করা।
সৌদী সংবাদ সংস্থার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর অভিমত-“বাংলাদেশ ও তার দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক খুব ভালো।”
খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত। ২৫শে অক্টোবরের মধ্যে সংশোধনীর আবেদন করা যাবে। খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে ৩ কোটী ৮২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫৮ জন।
ফারাক্কা সমস্যার সমাধানকলে ভারতের উপর কুটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার জন্যে বিশ্বের সফল রাষ্ট্রের প্রতি ভারতীয় পণ্য বর্জনের জন্য মওলানা ভাসানীর আহ্বান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভব। যারা দ্বিপাক্ষিক সমস্য হিসেবে অভিহিত করে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক অর্থবহ আলোচনার ধুয়া তুলছেন তারা ভারতেরই লেজু বৃত্তি করছেন।
১১ বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। এখানে উন্নয়ন কর্মসূচীর বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা হয় এবং উন্নয়ন কর্মসূচীর ব্যাপক প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জেলা কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থ কর্মকতাদের বৈঠকে এয়ার কমোডর এ, জি, মাহমুদ বলেন-“খাদ্য সরবরাহে দুর্নীতি অপচয় বন্ধ করুন। বৈষ্ঠকটিতে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়।
জাতীয় জনতা পার্টির আহায়ক জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম, এ, জি, ওসমানীর সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনি বলেন— “জাতীয় জনতা পাটি সামাজিক ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। । ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত ব্রিগেড সদর দফতরের পতাকা উত্তোলনে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“সেনাবাহিনীষ জোয়ান ও অফিসার নিজেদের সেবা ও আচরণের গণে জনগণের ভালবাসা অর্জন করতে হবে।
১২ রাজনৈতিক দল বিধি অনুযায়ী আরো দু’টি রাজনৈতিক দলের মনোনয়নিত দল দু’টি হচ্ছে শ্রী মনি সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও মওলানা সিদ্দিক আহমদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামিক ডেমোস্ক্র্যাটিক লীগ। (ঘরোয়া রাজনীতি দুষ্টব্য)
ঢাকায় বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের মধ্যে পাট আন্তর্জাতিকের খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরীর মধ্য দিয়ে আন্তঃসরকারী সম্মেলন সমাপ্ত। গঠনতন্ত্র গ্রহণের জন্য তিন দেশের পরবর্তী সম্মেলন অদূর ভবিষ্যতে কাঠমুণ্ডতে হবে বলে আশা প্রকাশ।
খুলনায় মানুষের দেহে মহিষ বসন্তের প্রকোপ। এ ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য তিনজন স্থানীয় ও দু’জন বিশ্ব সংস্থার ডাক্তারসহ ৬০ জনের বিশেষজ্ঞ দল গঠন।
প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠকে পদস্থ কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন দফতরের ফিল্ড এজেন্সীগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় সুনিশ্চিত করতে থানা, জেলা ও বিভাগীয় সময়গুলোকে তৎপর করে তোলার নির্দেশ দান।
রেশনে সপ্তাহে মাথাপিছু খাদ্যশস্যের কোটা তিন সের থেকে চার সের করার জন্য সরকারী সিন্ধান্ত।
জাতিসংঘের আইন কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিচারপতি এফ, কে, এম, এ, মমিনের মন্তব্য—“আন্তর্জাতিক আইনসমূহের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা এখন অনস্বীকার্য এবং এ ব্যাপারে কালক্ষেপণের সময় নেই।”
১৩ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩১তম বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের ঢাকা আগমন। বিমানবন্দরে তিনি বলেন– ফারাক্কা ও অন্যান্য প্রশ্নে বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত ভূমিকার প্রতি বিশ্ব সংস্থায় বিশেষ সমর্থন রয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার এম, এ, আওয়ালের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠকে আনুমানিক ২ কোটী টাকার ৪৫টি নয়া পরিকল্পনা গ্রহণ ও বিডিআর বাহিনীকে সীমান্ত রক্ষায় আরো তৎপর হওয়ার জন্য মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীরের আহ্বান। অসুস্থ কবি-সাংবাদিক মহাদেব সাহার চিকিৎসার জন্য পি-জি হাসপাতালের ডিরেক্টর নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন।
১৪ জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক ১৩১ কোটী ৫০ লাখ টাকার ৫টি প্রকল্প অনুমোদিত। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে সেচ ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়, শিক্ষা এবং পোস্ট অফিস ভবনসমূহের উন্নয়নের প্রকল্প।
: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এবং শিক্ষার পরিবেশের অবনতি সম্পর্কে তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
: অধুনালুপ্ত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম চৌধুরী ওরফে ওবায়দুল আলম চৌধুরী পলিশের হাতে নিউ মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেফতার। তার বিরুদ্ধে ভারতে গিয়ে অন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ ধ্বংসাতক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ছিল। এমনকি, কোলকাতায় ‘চিত্তরঞ্জন সুতারের সঙ্গে দেশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।
: জাতিসংঘের স্বস্তি পরিষদে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কে, এম, কায়সায়ের ভাষণ—“নামিবিয়ায় বিরাজ মান পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে বর্ণবৈষম্য ও আধিপত্যবাদকে অবশ্যই স্বাধীনতা ও বর্ণগত ন্যায়বিচারের কাছে নতি স্বীকার করে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।”
: প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আকবর কবীর কর্তৃক উত্তরাঞ্চলের প্রথম জাতীয় দৈনিক ‘দৈনিক বার্তা’র উদ্বােধন। রাজশাহী থেকে প্রকাশিত এ দৈনিকটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও বেতার সচিব এ, বি, এম, গোলাম মোস্তফা। এ উপলক্ষে প্রেরিত এক বাণীতে জেনারেল জিয়া বলেন-“উত্তরাঞ্চল থেকে জাতীয় দৈনিকের আত্যপ্রকাশ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
পূর্ত কর্মসূচী ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশে ৭০ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সরকারী সিদ্ধান্ত।
নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে না পারলে সময় চেয়ে দরখাস্ত করা যাবে বলে সরকারী তথ্য বিবরণী প্রকাশ।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক ডিরেক্টর ডাঃ ভি, টি, এইচ, গনিরত্নের বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্ভাব্য সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা হয়।
১৫ মুন্সীগঞ্জে সর্বস্তরের জনগণ ও সরকারী কর্মচারীদের সমাবেশে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ভাষণ—“অচিরেই ঢাকা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হচ্ছে। ‘৭৭ সালের মধ্যেই সারাদেশ টেলিভিশনের আওতায় আসছে।
জয়পুরহাটের এক জনসমাবেশে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আকবর কবীর—“দেশের উন্নয়নে দেশীয় সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম থানা পর্যায়ে প্রসারিত করবেন।
: বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কার্যক্রমের উন্নতিতে এবং উদ্যোগে এক সাংবাদিক সম্মেলন। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এশিয়ার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আঞ্চলিক পরিচালক গুনরত্নের সন্তােষ প্রকাশ।
বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার কমোডর এ, জি, মাহমুদের বাংলাদেশ বিমানের সদর দফতর পয়িদর্শন।
বি, এন, এস, মহসীনে এক বিশেষ পরিদর্শন কুচকাওয়াজে, অফিসার ও নাবিকদের উদ্দেশ্যে। ভাইস-এডমিরাল এম, এইচ, খানের ভাষণ—“আন্তরিকতা, দেশপ্রেম ও শৃংঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নৌবাহিনীর সর্ব স্তরের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সমঝোতার জন্য সকলকে একই পরিবারের মত জীবন-যাপন ও চিন্তা করতে হবে।”
জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম, এম, হকের ঘোষণা—-“সরকার দেশের দেড় শ’টি পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেড় শ’টি চক্ষু, শিবিরের আয়োজন করবে।”
১৬ মানিকগঞ্জ, নওয়াবগঞ্জ এবং দোহারে পৃথক পৃথক জনসমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার,মুক্তিযোদ্ধা মিলিতভাৰে সড়ক নির্মাণ, খাল ও পুকুর খনন এবং এ ধরনের নানা কাজে অংশ নেবেন। মোট কথা আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদের সাহায্যে দেশ তুলতে চাই।
নয়া বিটদের(অস্পষ্ট) শপথ গ্রহণ কুচকাওয়াজে ভাষণ দিতে গিয়ে বিডিআর প্রধাণ মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগির বলেন নয়ে চলাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লক্ষমার মাস্তুত থাকার জন্য বিড়িআয় ছদর সদাজাগ্রত থাকতে হবে পায়ে বীর সন্ত্রবাহিনী সবাইরের যে কোন হামলা প্রতিই কর, অ?”(অস্পষ্ট)
: পাকিস্তানের বন্যাদ(অস্পষ্ট) তদের জন্য বাংলাদেশের পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড চা প্রদান।
বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত।
১৭ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসকাপ)। আগামী মাসে ঢাকায় পল্লী উন্নয়নের ওপর একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করবে। এসকাপ-এর নির্বাহী সম্পাদক মিঃ জে, বি, পি, মারামিস পাঁচদিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে এ তথ্য প্রকাশ করেন।
ফার্মগেটের কাছে ট্রাকের ধাক্কায় আলী আহমদ নামে এক ব্যক্তি নিহত।
ইসলামী ডেমোক্র্যাটিক লীগের প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান মওলানা সিদ্দিক আহমদের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনি বলেন, তাঁর দল ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অনুসারী। (ঘরোয়া রাজনীতি দ্রষ্টব্য) ।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“জাতীয় উন্নয়ন তৎপরতায়, অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের জন্য নিজ নিজ গ্রামে গিয়ে পল্লীর জনগণকে সংগঠিত করন।”
১৮ পল্লী উন্নয়ন কমিটির বৈঠকে প্রেসিডেন্টের ভাষণ—“বড় রকমের উন্নয়ন প্রচেষ্টাগুলো হবে পল্লী উন্নয়নমুখী এবং পল্লী উন্নয়নে জরুরী প্রয়োজন মেটাতে গোটা প্রশাসনকে পল্লীমুখী করতে হবে। বৈঠকে জেনারেল জিয়াও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর আয় বৃদ্ধির উপায় ও উৎস আমাদেরকে অবশ্যই খুজে বের করতে হবে।”
: দেশবাসীর প্রতি জেনারেল ( জিয়ার আহ্বান—“জনসংখ্যার ক্রম-বর্ধমান চাপ প্রতিরোধ করে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ও সাংস্কতিক বিকাশকে অব্যাহত রাখুন।”
বরিশালে সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণ ও সরকারী কর্মচারীদের সমাবেশে বিমানবাহিনী স্টাফ প্রধান এয়ার কমোডর এ, জি, মাহমুদের ভাষণ—“দেশে জনগণের চাহিদা পূরণের মত পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য রয়েছে। তবে কৃষকদের অবশ্যই তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে হবে। উন্নত ধরনের সংগ্রহ পদ্ধতিবের করার জন্য বর্তমান সংগ্রহ নীতি সরকারের পর্যালোচনাধীন রয়েছে।
: দেশের জালানী সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার, উন্নয়ন, পরিমাণ নিরুপণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চালানোর জন্য ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় জালানী গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ সরকারীভাবে অনুমোদিত।
: চিকিৎসা শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে মওলানা ভাসানীর আবেদন।
: ওয়াপদা ভবনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র কর্মচারীদের সমাবেশে রিয়ার এডমিরাল এম এইচ, খান বলেন—“বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, বিদ্যুতায়নের মূল লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার পল্লী বিদ্যুতায়ন কর্মসূচীকে অধিক হারে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।”
এক চুক্তির অধীনে পশ্চিম জার্মানী বাংলাদেশের টেলিযোগযোগ উন্নয়নের জন্য কারিগরী সহযোগিতার আকারে এক কোটী ২৫ লক্ষ টাকা প্রদান করবে।
১৯ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিনিধি কায়সার রশীদের ব্যর্থহীন আহ্বান—“উন্নত ও উন্নয়নকামী দেশগুলোর মধ্যকার ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিরসনের জন্য যুক্তভাবে ও একযোগে দায়িত্ব আর বঞ্চনার অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টা নিতে হবে।
: দিনাজপুরের সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতের বিচারে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল হক সবুজের এক বছরে কারাদণ্ড। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ঢাকা বিভাগের জন্য একটি উন্নয়ন বোর্ড গঠনের ব্যবস্থা সম্বলিত একটি অর্ডিন্যান্সের অনুমোদন। একই বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকার জন্য পৃথক ম্যাজিস্ট্রেসী গঠনকল্পে আর একটি অর্ডিন্যান্স অনুমোদন করা হয়।
২০ বঙ্গভবনে আয়োজিত জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা পরিষদের উদ্বােধনী ভাষণে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি এ, এম, সায়েম বলেন-“দেশের সাধারণ মানুষদের দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করতে বিজ্ঞানীদের অবদান রাখতে হবে।”
: আগস্টে জারিকৃত পল্লী আদালত অর্ডিন্যান্স ১লা অক্টোবর থেকে বলবৎ হচ্ছে। পল্লী আদালতে গঠন, ক্ষমতা ও কার্যবলী সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। পল্লী আদালত একই ইউনিয়নের বাদী ও বিবাদীর বিচার করবে। এতে তিনজন বিচারক থাকবেন। একজন আদালতের চেয়ারম্যান। অপর দু’জনকে দু’পক্ষ নির্বাচন করবেন।
: পূর্ব ঘোষিত ২৫শে অক্টোবরই খসড়া ভোটার তালিকা সম্পর্কে দাবী, আপত্তি বা সংশোধনীর দরখাস্ত পেশের শেষ দিন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
: পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদিত ঢাকা শহর রক্ষার ও উন্নয়ন প্রকল্পের খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের কাছে পেশ ! প্রকল্পে রয়েছে শহরের চার পাশে পচিশ মাইল বৃত্তাকার বাঁধ নির্মাণ ও চারটি পাম্পিং স্টেশন স্থাপন। এর জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ৪০ কোটী ৮৬ লাখ টাকা।
সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার সম্পাদকদের সাথে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আকবর কবীরের আলোচনা বৈঠক। বৈঠকে জাতীয় প্রশ্ন বিশেষ করে সংবাদপত্র সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়।
: রাজনৈতিক দলবিধি অনুযায়ী অনুমোদন লাভের পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আহবায়ক এম, এ, আওয়ালের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনি বলেন, তাঁর দলের মূলমন্ত্র বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।
২১ ময়মনসিংহে আয়োজিত বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভায় ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার খানে আলম খান বলেন-ঢাকা বিভাগ উন্নয়নের জন্য চলতি অর্থবছরে এক কোটী টাকা ব্যয় হবে।”
১৫ই নভেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটিতে ফারাক্কায় ভারত কর্তৃক একতরফা পাঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে উভয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক কমিটিতে বক্তৃতা দানের সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধি কে, এম, কায়সার বলেন—“সাধারণ পরিষদে প্রশ্নটি তোলার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে। আমাদের জনগণের চরম দুর্ভোগের কারণ এ সমস্যার একটি আশু সমাধান।”
এক মাস চারদিন পর নোয়াখালী থেকে মীরপুরের চার বছরের শিশু রেহানা পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার। রেহানাকে তার সৎ মা অপহরণ করেছিল।
: সামরিক আইন ‘ক’ অঞ্চলকে ৪টি উপ-অঞ্চলে ভাগ। উপ-অঞ্চলগুলো হচ্ছে— (১) উপ-অঞ্চল-১ (ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা)। প্রশাসক কর্ণেল মুহাম্মদ ওয়াজিউল্লাহ।
(২) উপ-অঞ্চল-২ (ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা বাদে সমগ্র ঢাকা জেলা)। প্রশাসক-কর্ণেল আবু জাফর মোহাম্মদ, আমিনুল হক।
(৩) উপ-অঞ্চল-৩ (সমগ্র ঢাকা জেলায় অবস্থিত শিল্প কমপ্লেক্স)। প্রশাসক–কর্ণেল মোহাম্মদ আবদস সামাদ।
(৪) উপ-অঞ্চল-৪ (সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা)। প্রশাসক-কর্ণেল আর, এ, এম. গোলাম মুকতাদির।
১৯৭৪ সালের প্রিলিমিনারী পরীক্ষা (‘৭৬ সালে অনুষ্ঠিত) ও ১৯৭৬ সালের বি-এড (গ্রুপ–এ) পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মোট ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
সৌদী আরবে নিযুক্ত বাংলা দেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর পরিচয়পত্র গ্রহনকালে বাদশাহ খালেদ বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং তার জনগণের জীবনযাত্রা উন্নয়নে সৌদী আরব সম্ভভাব্য সব রকমের সাহায্য করে।
প্রত্যক হজযাএীকে ১৪০ সৌদি রিয়ালে সমপরিমান অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা প্রদানে সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহন।
২২ চলচ্চিত্র জগতের এককালীন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ফ্যাটি মহসিনের ইন্তেকাল (ইন্না……… রাজেউন)।
আলজিয়ার্স বাণিজ্য মেলা ও এয়োদশ আন্তর্জাতিক মেলায়। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের স্বর্ণপদক লাভ।
: বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের স্থানীয় শাখা উদ্বোধনকালে কুমিল্লায় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ এম, এ, রশীদের ভাষণ—“জাতীয় উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের প্রতিভা ও দক্ষতাঁর পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে।”
: মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের নকল ডিস্টিল ওয়াটারের কারখানার সন্ধান লাভ।
: বেতার অনুষ্ঠানে মান উন্নয়নের ব্যাপার প্রেগ্রাম, বার্তা ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও সরেজমিনে তদন্ত চালানোর জন্য প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আকবর কবীরের রেডিও ভবন পরিভ্রমণ।
২৩ সরকার কর্তৃক নয়-সদস্য বিশিষ্ট কর তদন্ত কমিশন গঠন। কমিশনের প্রধান হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর নুরুল ইসলাম।
: জেনারেল জিয়ার খুলনা সফর। এ সফরকালে তিনি বাগেরহাট, ফকিরহাট ও খুলনার বিভিন্ন স্তরের জনগণের সঙ্গে ও সরকারী সমস্যা আলোচনা করেন।
: ময়মনসিংহ জেলার সীমান্ত এলাকার উপজাতীয়দের জন্যে ১২ লাখ টাকার একটি বিশেষ কল্যাণ প্রকল্প গ্রহণ। ও সরকার কর্তৃক নতুন বিনিয়োগ সংস্থার জন্য নয়-সদস্যের একটি বোড় গঠন।
: জাতিসংঘ ষষ্ঠ কমিটিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিচারপতি এফ, কে, এম, এ, মমিনের ভাষণ – বাংলাদেশ মনে করে কোনো একটি রাষ্ট্র কোনো আন্তর্জাতিক নদীর পানির নতুন ব্যবহার করতে চাইলে এবং তাতে পর রাষ্ট্রের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে নদী অববাহিকায় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সঙ্গে অবশ্যই একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের পরেই তা করতে হবে। চুক্তি ব্যতিরেকে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।”
: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে ৭৩ জন নবীন-প্রবীণ শিল্পীর ১১ দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশের জীবনভিত্তিক চিত্র প্রদর্শনী শুরু। উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেণ্টের উপদেষ্টা আকবর কবীর বলেন—“যে শিল্পে জীবন বা জীবনের আদর্শ প্রতিফলিত না হয় তা শিল্প নয়।” (শিল্পকলা দ্রষ্টব্য)
: উন্নতমানের শিশু চলচ্চিত্র , নির্মাণের জন্য সরকারী অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
২৪ ১৯৭৬ সালের রাজনৈতিক দলবিধি (১৯৭৬ সালের সামরিক আইন বিধি নং ২২) সংশোধন করে নতুন সামরিক আইনবিধি জারি। এর নাম হবে ১৯৭৬ সালের রাজনৈতিক আইনবিধি (দ্বিতীয় সংশোধনী)। এ বিধি অনুসারে, রাজনৈতিক দলের শর্ত পূরণ প্রশ্নে সরকারী সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
শিশু-কিশোর সংগঠন খেলা ঘরের জাতীয় সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের মহিলা বিষয়ক সহকারী। বেগম ফিরোজা বারীর ভাষণ -‘সরকার দেশের শিশু কল্যাণে আগ্রহী। তবে শিশুদের স্বার্থক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিশু সংগঠনগুলোকে সমন্বিত কর্মসূচী নিতে হবে।
; চীনের স্টেট কাউন্সিলের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লী শিয়েনের প্রতি প্রেসিডেন্ট সায়েমের অভিনন্দন। তিনি বলেছেন—“দু’দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও শক্তিশালী ও সুদৃঢ় হবে। ঢাকার নাগরিকবৃন্দের সমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ “পুরাতন ঢাকা শহরের উন্নতির জন্যে মেজর জেনারেল মীর শওকত আলীর নেতৃত্বে শীগগীর পুরাতন ঢাকা উন্নয়ন কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হবে। বড় গঙ্গায় ব্রীজ প্রকল্প ইতিমধ্যেই হাতে নেয়া হয়েছে।”
সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল জাতীয় লীগ’-এর সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান বলেন—“গণতন্ত্রই বাংলাদেশ জাতীয় লীগের মূলমন্ত্র।”
: জাতিসংঘ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সরকারী। বিচারপতি আবদুস সাত্তারের ভাষণ—“বিশ্ববাসীর বিবেচনার জনাই ফারাক্কা সমস্যা জাতিসংঘে তুলেছি।”
: স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিম খানার পুরস্কার বিতরণী সভায় এয়ার কমোডর এ, জি, মাহমুদের ভাষণ—স্বাধীনতা মানেই জাতিকে সাবলম্বী করে তোলা। এ জন্যে প্রত্যেককে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।”
২৫ বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত। চুক্তি মোতাবেক উভয় দেশ শিক্ষাবিদ, প্রতিনিধি দল, শিল্পীদল, ক্রীড়াদল, পুস্তক এবং অনান্য তথ্যাদি বিনিময় করবে।
হাজী শিবির পরিদর্শনকালে হজযাত্রীদের প্রতি রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের ঘোষণা আগামী বছর থেকে নিজস্ব জাহাজে কবে হজযাত্রী পাঠানো হবে।
: পাঁচ কোটী টাকা ব্যয়ের খুলনা শহর রক্ষা কর্মসূচী উদ্বোধন।
মিঃ লী শিয়েন ইয়েনের চীনের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্তি উপলক্ষে পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় জেনারেল জিয়া বলেন—“চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরো জোরদার হবে।”
ইরানের শাহানশাহ মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর জন্মদিনে প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন বাণী প্রেরণ।
: স্থানীয় সমস্যা সরেজমিনে দেখার জন্য রিয়ার এডমিরাল খানের বান্দরবন সফর।
: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক ৬৪ কোটী ৭১ লাখ টাকার ৪টি প্রকল্প গ্রহণ। প্রকল্পগুলো হচ্ছে—ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার শ্রমিকদের জন্য বহুতলবিশিষ্ট গৃহনির্মাণ কমপ্লেক্স, মনু নদী প্রকল্প, চাঁদপুর শহর রক্ষা প্রকল্প এবং ড্রেজার বহর প্রকল্পের উন্নয়ন।
বিশ্ববাসীর প্রতি মওলানা ভাসানীর আবেদন—“একটা ভিন্নতর সরকার বর্তমানে বাংলাদেশ শাসন করছে এবং সর্বত্র একটা উৎপাদনমুখী তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জনসংখ্যা এবং সম্পদের একটা নৃশংস ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সে সময়ে এমন একটা সরকার ক্ষমতাসীন ছিল—যা পরিস্থিতিকে আরো শোচনীয় করে তোলে। কিন্তু বর্তমানে ভিন্নতর সরকার উন্নয়নে নতুন ধরনের আশাবাদের জন্ম দিয়েছেন। আমাদের আত্মনির্ভর শীলতা এবং জাতির অগ্নিপরীক্ষায় ও বন্ধুরা সাহায্যের হাত সম্প্রসারণে ব্যর্থ হবেন না বলে আশা প্রকাশ করি।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের আহ্বায়িকা মিসেস আমেনা বেগমের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনি বলেন—“তাঁর দল সংসদীয় পদ্ধতিতে বিশ্বাসী।
২৬ পেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠকে জীবনযাত্রার ব্যয় ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হয়। দ্রব্যমুল্য নাগালের মধ্যে রাখার জাতীয় মূল্যনীতি উদ্ভাবনের সিধান্ত গ্রহণ।
দেশের সবত্র যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে শেরেবাংলা এ, কে, ফজলুল হকের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত।
ঢাকায় স্বাক্ষরিত এক চুক্তির অধীনে নরওয়ে বাংলাদেশকে একশ’ কোটী টাকা সাহায্য দেবে।
সন্তোষ থেকে পাঠানো মওলানা ভাসানীর বিবৃতি—“আমি দু’বছর আগেই ন্যাপ সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। সংসদীয় রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। দেশের বর্তমান সন্ধিক্ষণে নির্বাচন ও নির্বাচনের রাজনীতি সম্পর্কে আমার ধারণা কি তা আপনারা জানেন।……আমার বিশ্বাস, নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করেও দেশ ও জাতির সেবা করা যায়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বাংলাদেশ ক্যাডেট কোর ও জুনিয়ার কোরের সমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রায় আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের মহত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে তরুণ ভাই-বোনদের এগিয়ে আসতে হবে।
২৭ সৌদী আরব সহজ শর্তে ঋণ ও মজরী হিসেবে বাংলাদেশকে ৩২৬ কোটী টাকা সাহায্য দেবে বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান।
লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন। জেনারেল জিয়ার বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর সফর। সফরকালীন সময়ে তিনি সমাজের জনসাধারণ ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় সমস্যা ও তার সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করেন
: জেনেভায় আঙ্কটাডের ৪৫টি দেশের সম্মেলনে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশের ৬-দফা কর্মসূচী পেশ।
২৮ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি, অনিয়ম তদন্তের জন্য সরকার কর্তৃক ৬সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন। কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান জহিরুল হক। কমিশন ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্তকালের অবস্থা সম্পর্কে তদন্ত করবেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত আদালতের বিচারে সাবেক রিলিফ চেয়ারম্যানসহ দু’জনের আড়াই বছর করে কারাদণ্ড। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা ভুয়া কারখানার নামে সুতা উঠিয়ে অর্থনৈতিক ফায়দা লুটেছিল।
ঢাকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এক চুক্তিবলে বাংলাদেশকে প্রায় ৬ কেটী ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৫০ হাজার টন গম দেবে অস্ট্রেলিয়া।
ত্রিপোলীতে দাবা অলিম্পিকে বাংলাদেশ লেবাননের বিরদ্ধে ৩টি বোর্ডে জয়ী।
: সচিবালয়ে পরিবহণ উপদেষ্টা কমিটির সভায় রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের ভাষণ—“হল ও নৌ-যোগাযোগ উন্নয়নে বেসরকারী খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
: তুরস্কর প্রজাতন্ত্র দিবসে – প্রেসিডেন্ট এ. এম, সায়েমের অভিনন্দন বাণী প্রেরণ।
২৯ বাংলাদেশে নিযুক্ত নয়। মার্কিন রাষ্ট্রদত লিঃ এডওয়ার্ড ই মাস্টার্সের ঢাকা আগমন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চীফ অফ প্রটোকল ব্রিগেডিয়ার মশহর-উল হক তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান।
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রামে ঝটিকা সফর। সফরকালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও কল্পে এক কোটী টাকা মঞ্জুর করেন।
: বগুড়ার ধনুটে এক জনসমাবেশে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের ভাষণ—“শুধু জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমেই সরকার দেশের ভরাট নদী ও খাল খননের মত বিরাট কর্মসূচী সফল করতে পারে। কাজেই, যেখানে সম্ভব আপনারা উৎসাহ ও উদ্যম নিয়ে এগিয়ে আসুন।”
: মেজর জেনারেল মীর শওকত আলীর সভাপতিত্বে পুরনো ঢাকা উন্নয়ন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত। পুরনো রেল লাইন থেকে বুড়ীগঙ্গা পর্যন্ত এলাকা পরনো ঢাকার অন্তর্ভুক্ত বলে সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
বাংলাদেশ-যুগোশ্লাভ যৌথ কমিশন বৈঠকের দ্বিতীয় অধিবেশনে বেলগ্রেডে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর।
৩০ দেশের চিনি নীতি নিয়ে প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠকে চলতি মওসুমের জন্য চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে এক লাখ পনের হাজার টন। আখের দাম মিল গেটে ১০.৫০ টাকা ও অন্যান্য স্থানে ১০ টাকা ধার্য।
: লণ্ডনে অনুষ্ঠিত আমদানীরফতানী, ১৯৭৬ মেলায় বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন শ্রেষ্ঠ বিবেচিত। মেলায় এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার ৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
ঢাকা ও রাওয়ালপিণ্ডির মধ্যে উপগ্রহের মাধ্যমে সরাসরি টেলিযোগাযোগ স্থাপন। উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ মন্ত্রী মোমতাজ আলীর অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে এয় উদ্বোধন ঘটে।
: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ডিভিশন ও বিভাগের অধীনে জাতীয় পঞ্চম গ্রেডের আওতাভুক্ত কয়েকটি সুপিরিয়র পদে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারী কর্ম (প্রথম) কমিশনের উদ্যোগে পরীক্ষা হবে।
: ভুয়া লেন-দেনের মাধ্যমে ৩টি ব্যাংক থেকে ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে ৪টি কেলেংকারীর তথ্য প্রকাশ। এ ব্যাপারে ৩ জন ম্যানেজারসহ ৬ ব্যক্তি গ্রেফতার।
: সফররত আবুধাবীর চারসদস্যের অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদলের নেতা নাসির আল নওযাইসহ ও রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের সাক্ষাত। সাক্ষাতের আলোচনায় আবুধাবী প্রতিনিধিদলের আশ্বাস “অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবুধাবী বাংলাদেশকে সাহায্য দেবে।”
: বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মাঃ লেঃ) -র নেতা মোহাম্মদ তোয়াহার সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে মোহাম্মদ তোয়াহা বলেন“এই মূহুর্তে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবর্তে আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদেয় বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। এ ব্যাপারে তিনি দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন এবং বর্তমান সংবিধান বাতিল করে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নে দাবী জানান।”
গঙ্গায় পানি হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় । অনেক নীচে নেমেছে এবং দ্রুত কমছে।
সরকার অনুমোদিত সিমেণ্ট ব্যবসায়ীরা চলতি বাণিজ্য মওসুমে নগদ ৫ লাইসেন্সে প্রত্যেকে বিশ হাজার টাকার সিমেন্ট আমদানী করতে পারবে বলে সরকার। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
: ন্যাপ (ভাঃ) নেতা আবু নাসের খান ভাসানী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন-“মওলানা ভাসানী ন্যাপের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেননি।”
৩০ সরকার কর্তৃক ৭ই নভেম্বরকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত। দিনটিকে আগেই সাধারণ ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এ দিনটি পালনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচীর ব্যবস্থা।
; জেনারেল জিয়ার কক্সবাজার, পটিয়া ও চিরিয়ায় ঝটিকা সফর।
আলজিয়ার্স,ব্রুসেলস ও বেলগ্রেডে তিন সপ্তাহের সফর শেষে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ এম, এন, হুদার ঢাকা আগমন। সফর শেষে সাংবাদিকদের ডঃ হদার মন্তব্য—“এ সফর সর্বাত্মকভাবে সফল হয়েছে।”
নভেম্বর
১ যশোরে উলশী গ্রামে সাড়ে তিন মাইল উলশী যদুনাথপর খাল খননের উদ্বোধন। উদ্বোধনী ভাষণে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—স্থানীয়ভাবে উন্নয়নের কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণই জাতীয় ঐক্য অর্জনের একমাত্র পথ। উল্লেখযোেগ্য, এই স্বলন কার্যে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিলে কাজ করতে এসেছেন স্থল, নৌ, বিমানবাহিনী, বিডিআর, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর ও জওয়ান ও সদস্যরা।
প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬ সালেহ্ ৮২নং অর্ডিন্যান্স জারি। তাটির(অস্পষ্ট) নাম দেওয়ানী আজ। – (সুংশোধনী) মল্পি , ১৭। (অস্পষ্ট)অডিন্যান্টিতে ১৮৮৭ আর একাৰী মাদলও বিধিওল (অস্পষ্ট)যার সংশোধন করা হয়েছে। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে মুন্সেফদের আর্থিক এখতিয়ার ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা এবং জেলা জর্জদের আপীল আর্থিক এখতিয়ার বিশ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
: প্রেসিডেন্টের নিকট আইন কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেনের রিপোর্ট পেশ। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি বিধানসাপেক্ষে আইন সংস্কারের জন্যই এই কমিটি গত এপ্রিলে গঠন করা হয়েছিল।
এয়ার কমোডর এ, জি, মাহমুদের খুলনা ও মহেশ্বরপাশার কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম – পরিদর্শন। পরিদর্শনকালে তিনি মন্তব্য করেন। ‘যারা খাদ্য নিয়ে দুর্নীতি করেন তারা দেশের শত্রু। এদের বিভাগীয় পর্যায়েই শুধু শাস্তি হওয়া উচিত নয়, উপরন্তু অপরাধী হিসেবেও এদের বিচার হওয়া উচিত।
: ময়মনসিংহ জেলার কৈলামারা সীমান্তে সীমান্তের অপর পার থেকে দুঙ্কৃতকারীরা ধান কাটতে এলে বিডিআর বাহিনীর সাথে গুলীবিনিময়।
এক নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতের বিচারে এক ব্যক্তিকে অপহরণের দায়ে সেনাবাহিনীর নায়েক শাহজাহান সিরাজের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের হাজী ক্যাম্প পরিদর্শন।
; ঢাকায় দু’টি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলায় জন্য ২৪-সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার হ্যান ইয়ং (মিউল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলের ঢাকা আগমন।
২ টাকা ও পাউন্ডের বিনিময় মুল্যের হার পুনর্নির্ধারণ। এখন প্রতি পাউণ্ডের বিনিময় মূল্য ২৬ টাকা ৭০ পয়সার হলে ২৫ টাকা ৪৫ পয়সা হবে।
: চলতি অর্থবছরের জন্য পশ্চিম জার্মানী ও বাংলাদেশের মধ্যে এক সাহায্য চুক্তি স্বাক্ষরিত। চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিম জার্মানী ৮০ কোটি টাকার সাহায্য দেবে।
৩ ঢাকা-আরিচা রোডে বাস দূর্ঘটনায় ৪ জন নিহত এবং আহত ৪০ জন।
ইউপিপির সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমদের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে কাজী জাফর আহমদ বলেন—নির্বাচন কয়েক মাস পিছালে আপত্তি নেই।”
বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার হিসেবে শ্রী কে, পি, এস, মেননের নিযুক্তি। শ্রী মেনন এখন হাঙ্গেরীতে কার্যরত রয়েছেন।
: রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ এবং সড়ক পরিবহণ খাতের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক ৮৯ কোটি টাকার একটি ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ।
বিশ্ব ব্যাংকের সভাপতি রবার্ট ম্যাকনামারার ঢাকা আগমন। ঢাকা বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন—“বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য অব্যাহত থাকবে। ১৯৭২ সালের পর এটি আমার দ্বিতীয় সফর। কিন্তু বাংলাদেশে এখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য, অর্জিত হয়েছে।”
; হজযাত্রীদের মক্কায় পাঠানোর জন্য এবং বিমান পরিবহণের প্রয়োজন মিটাতে পাকিস্তান একটি বোয়িং ৭০৭ বিমান দিচ্ছে।
; তরণী অপহরণের অভিযোগে ধানমণ্ডী পুলিশের হাতে ৪ জন যুবক গ্রেফতার।
৪ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিসেস বিনীতা রায়ের ভাষণ—“অসন্ন খরা মৌসুমের জন্য সারাদেশে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর অধীনে ২ হাজার ৩৫৮টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ লোকের তিন মাসের কর্মসংস্থান হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ আইনের ছাত্র রেদওয়ান আহমদকে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তেতলা থেকে নিক্ষেপের দয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের।
শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টের চিকিৎসার জন্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
: রাজনৈতিক দলবিধি মোতাবেক আওয়ামী লীগের সরকারী মনোনয়ন লাভ। দলবিধি অনুসারে অনুমোদিত দলের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭-এ।
প্রেস ইনস্টিটিউট গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব সংশোধন। প্রেস ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর’-এর পদটিকে ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে পূর্ন মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
৫ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিশ্ব – ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনা মারার সাক্ষাত। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট মিঃ ম্যাকনামারাকে বাংলাদেশের উন্নয়ন চাহিদার ব্যাপারে অবহিত করান। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রগতিতে মিঃ ম্যাকনামারার সন্তোষ প্রকাশ।
: প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মিঃ ই, ইউ, মাস্টারসের সাক্ষাত। সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত মাস্টার্স বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত মার্কিন সমর্থনের আশ্বাস দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিনিধির ভাষণ বর্ণবৈষম্যের অস্তিত্ব বিশ্ব শান্তির প্রতি গুরুতর হুমকি। আমাদের সরকার দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের ঐক্যকে কৃত্রিমভাবে বিচ্ছিন্ন করার যে কোন প্রচেষ্টার তথাকথিত বৈধতা এবং আপন অখণ্ড ভূখণ্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের পূর্ণ নাগরিক অধিকার অস্বীকার করাকে ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।
বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আবদুল হামিদের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনি বলেন তাঁর দল শ্রমবাদে বিশ্বাসী। (ঘরোয়া রাজনীতি দ্রষ্টব্য)
সমবায় দিবসে প্রেসিডেন্টের বাণী সমবায়ের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
৬ প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সংক্ষিপ্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্য), অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এবং পুলিস অফিসার্স (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৬, নামে দুটি অধ্যাদেশ জারি। এ দু’টি অধ্যাদেশের বলে বাংলাদেশ রাইফেলস এবং বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের অসদাচরণ, দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলা, অযোগ্যতা, কাপুরোষিত কার্যকলাপ ও নৈতিক অপরাধের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
: প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের মত চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত।
: পঞ্চম জাতীয় সমবায় দিবসের উদ্বােধনী সভার জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নকামী দেশের জন্যে সমবায়ের কোন বিকল্প নেই। দারিদ্র্যের কবল থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এটাই আমাদের জনগণের আন্তরিক কামনা।
: ঢাকা বিমানবন্দরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেয়া পাকিস্তানী বিমান ৭০৭ বোয়িং-এর হস্তান্তর। : জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের প্রথম বার্ষিকীতে আড়াই হাজার রাজবন্দীর মুক্তিলাভ। : অক্টোবর বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিঃ নিকোলাই ভি, পদগর্নির নিকট প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন ও সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের হাতে তিনজন তররণ অপহস্ত। ঘটনাটি ঘটে জামালপুরে সীমান্তে। ৭ যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত। এ দিনটি ছিল সরকারী ছুটির দিন।
: জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে অসুস্থ অবস্থায় মওলানা ভাসানীর সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে নির্বাচন স্থগিত রাখতে এবং শাসনতন্ত্র বাতিল করতে মওলানা ভাসানীর আহ্বান। তিনি বলেন-আমি আবার স্পষ্ট ভাষায় বলছি, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ এ হতে নির্বাচন চায় না। অনুকূলল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন অবশ্যই স্থগিত রাখা উচিত। ময়মনসিংহ জেলার সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিডিআর। কর্তৃক দুষ্কৃতকারী বিতারিত। সংঘর্ষে একজন দুষ্কৃতকারী নিহত হয় অন্যেরা পালিয়ে যায়। ৮ কর তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর এম, নুরুল ইসলাম।
: সরকার কর্তৃক নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানকে চেয়ারম্যান করে একটি বন্যা নিয়ন্ত্ৰণ উপদেষ্টা কমিটি গঠন। সরকার ও জনগণের মধ্যে মতামত বিনিময় করার ফোরাম গড়ে তোলাই এর উদ্দেশ্য। সরকার কর্তৃক নৌবাহিনী স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাকে চেয়ারম্যান করে একটি জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন। মীরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানায় কাটাবাড়ি ও শিমূলকুচিতে দুষ্কৃতকারীরা মাঠের ধান নেবার চেষ্টা করলে বিডিআর ও দুষ্কৃতকরীদের মধ্যে গুলীবিনিময়।
১ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন কল্পে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বিমানবাহিনীর স্টাফ প্রধান কমোডর এ, জি, মাহমুদ এয়ার ভাইস-মার্শাল পদে উন্নীত।
ঃ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সি, আর, দত্ত, বীরোত্তমকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য আট-সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন।
: ঢাকা নগর ডেমোক্র্যাটিক লীগের সংগঠক সিরাজুল ইসলাম ছুরিকাহত।
: ১৩ই নভেম্বরের সন্তোষে আহত ‘খোদাই খেদমতগার সম্মেলনে ভারতীয় দ্রব্য বর্জন, ফারাক্কার। ন্যায়সঙ্গত সমাধান ও সীমান্ত হামলাসহ পাঁচ-দফা ভিত্তিক আন্দোলন শুরু করা হবে বলে মওলানা ভাসানীর বিবৃতি। একই সঙ্গে তিনি দেশের ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ও কৃষকদের প্রতিও সম্মেলনে যোগ’দানের আহবান জানান।
: ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী)-র সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত। সম্মেলনে মশিউর রহমান (যাদু, মিয়া) বলেন—“নির্বাচন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রয়োজন।
: খুলনা জেলায় উন্নয়নে সরকার কতৃক প্রায় এক কোটি টাকা মঞ্জুর। টাঙ্গাইলের গ্রাম এলাকায় পলিসের হাতে পাঁচজন দক্ষতকারী গ্রেফতার। ১০ সরকারের বিশেষ ঘোষণা প্রকাশ—“রাগবিরোধী তৎপরতার শাস্তি হবে মত্যুদণ্ড। অন্যদিকে অনুতপ্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করলে ক্ষমা ও পুনর্বাসন দেয়া হবে।” প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক ১৯৭৬ সালের সামরিক আইন বিধি (বাইশতম সংশোধনী) জারি। এটা হল ১৯৭৬ সালের ৩১নং বিধি।
: আরিচাঘাটের কাছে বাস দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ৫৫ জন আহত। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও জেলা বোর্ডের কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারের ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মঞ্জুর। বর্তমানে বাংলাদেশের সামদ্রিক জাহাজের সংখ্যা ১৬। । বিডিআর-এর তাড়া খেয়ে ময়মনসিংহ সীমান্তে দুষ্কৃতকারীর পলান।
: হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কাছে গঙ্গার পানির সীমা আশঙ্কাজনক হ্রাস। সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার ভাইস মার্শাল এ, জি, মাহমদের ভাষণ –“বরিশালের হিজলা-মূলা দীতে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। জালানী সম্পদ আহরণে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের আহ্বায়িক আমেনা বেগমের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে আমেনা বেগম বলেন—“নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গন কলুষমুক্ত করতে হবে।
১১ বাংলাদেশে প্রকৌশল ও কারিগরী শিক্ষার শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডঃ এম, এ, রশীদের ভাষণ ‘দেশ ও জনগণের বহুবিধ সমস্যা। সম্পর্কে প্রকৌশলীদের সচেতন থেকে এসব সমস্যার সমাধানে যথার্থ অবদান রাখতে হবে।’’
২ ফেনীতে স্থানীয় নেতৃবর্গ ও সরকারী কর্মচারীদের সমাবেশে এয়ার ভাইস-মার্শাল এ, জি, মাহমুদের ভাষণ—সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকার পল্লীর যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ সার্ভিসের উন্নয়নের জন্য কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
: নাটক সেন্সরের নিয়মাবলী নাটক সেন্সর কমিটি কর্তৃক ঘোষণা। । সাড়ে ৪৪ কোটি টাকার বৃটিশ সাহায্যের ব্যাপারে ঢালাহ বৃটিশ হাই কমিশনার মিঃ , জি, স্মলমন এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা দফতরের সচিব কফিলউদ্দিন মাহমদের দু’টি চুক্তিতে স্বাক্ষর। ও সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণক্ৰমে মধ্য এশিয়া ও পাকিস্তানের মুসলিম বিভাগের ৩০তম বার্ষিক উৎসবে যোগদানের জন্য তিন-সদস্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের মস্কো যাত্রা। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হচ্ছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের এ্যামারিটাস ডঃ সিরাজুল হক, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সভাপতি – মওলানা আলাউদ্দিন আল-আজহারী এবং ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ডঃ এ, কে, এম, আইয়ুব আলী।
: মেজর জেনারেল (অবসরপ্রান্ত) আবদুল জব্বারকে তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সরকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা। ১২ মীরপুর এলাকার পরিত্যক্ত বাড়ীগুলির বেআইনী দখলদারদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত। পাকিস্তান থেকে রেলওয়ের বগি হস্তান্তর সম্পর্কিত চুক্তিপত্র স্বাক্ষর। চুক্তি অনুযায়ী ‘৭১ সালে করাচীতে খালাস করা রেলের বগি শীঘ্রই আসছে।
ঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেয়া প্রেসিডেন্টের ভাষণ—“জনগণ অফুরন্ত সম্পদের মালিক হয়েও এর সফল থেকে বঞ্চিত। প্রকৌশলী সমাজকে সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্দ্দে থেকে দেশের বহুমখী অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের কাজে আত্ননিয়োগ করতে হবে। গঙ্গার বিঘিাত প্রবাহে অর্থনীতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। প্রকৌশলীদের এদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।” বিডিআর বাহিনী কর্তৃক ময় মনসিংহ সীমান্তে দুষ্কৃতকারীদের ধান কেটে নিয়ে যাবার চেষ্টা ব্যর্থ। টাঙ্গাইল কালিহাতি থানার গ্রামে তথাকথিত গণবাহিনীর নামে চাঁদা আদায়ের সময় গ্রামরক্ষী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে দু’জন নিহত।
: আগামী ১৫ই নভেম্বর বিশেষ রাজনৈতিক কমিটিতে ফারাক্কা প্রশ্নে আলোচনা শুরু হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে এ র নিউইয়র্ক যাত্রার প্রাক্কালে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেন “বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটিতে ফারাক্কা থেকে উদ্ভৃত সমস্যার ন্যায্য সমাধানের দাবী তুলে ধরবে। ভারত কতৃক একতরফাভাবে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশের উপর মারাতমক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। দুঃখের ব্যাপার ভারত এ ব্যাপারে কোন যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ এখনও নেয়নি। আর তাই সমস্যারও সমাধান হয়নি।” একই উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যাত্রার প্রাক্কালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বি, এম, আব্বাস বলেন “আমরা ফারাক্কা প্রশ্নে বিশ্ব সংস্থার সহযোগিতা চাইব।” । ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রশংসনীয় তৎপরতার জন্য চট্টগ্রামের মিবশ্বরাই থানার ন’জন গ্রামরক্ষী পুরষ্কৃত। এরা হলেন-শাহ, আলম, আলী আহমদ, নর আহমদ কেরানী নরুল ইসলাম, নূর হোসেন, মোহাম্মদ ইসমাইল, তাহের মিয়া, আবদুল আজিজ ও গণি আহমদ। ১৩ সন্তোষে খোদাই খিদমতগার সম্মেলন শুরু। সম্মেলনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন—“বংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রিয় ও স্বাধীনতা প্রিয়। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে স্বাধীনতা ছাড়া বেচে থাকা অর্থহীন। কিন্তু নির্বাচনের নামে গত চার বছরে তাঁদের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। নির্বাচন করেও চার বছরে এদেশ থেকে গণতন্ত্রকে খতম করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে নির্বাসন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এদেশের শতকরা ১০ জন লোক, এদের বিরুদ্ধে মত দিবেন বলে আমার বিশ্বাস। মওলানা ভাসানী তাঁর নবগঠিত খোদাই খিদমতগার সমিতির আদর্শ-উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন –“এই সমিতি ভোট ভিক্ষা করবে। , নির্বাচনে যাবে না, মন্ত্রী, মেম্বার হবার খায়েশ এই সমিতির নেই। খোদাই খিদমতগার ফার্সী শব্দ। খেদমতগার অর্থ সেবক। আল্লাহর সৃষ্টি সমস্ত জীবের
: জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের মাজারে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, রচনাবলী সংগ্রহ, সংকলন এবং গবেষণা ব্যবস্থা করার জন্য বিশ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সরকারী সিদ্ধান্ত।
ঃ রমনা উদ্যানের উন্নয়নের জন্য ৩ ১৩-সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন। কমিটির প্রধান হবেন সাবেক মন্ত্রী হাফিজুর রহমান।
: নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান হিসেবে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের, চাকুরীর মেয়াদ আরো তিন বছর বৃদ্ধি। দুই নম্বর বিশেষ সামরিক আইন আদালতে পরাকীতি পাচারের অভিযোগে মিঃ র্যাডেকিসহ চারজন অষ্ট্ৰীয় নাগরিকের বিচার
: দুই নম্বর সামরিক আইন আদালতের বিচারে সাবেক ক্যাবিনেট সচিব এইচ, টি, ইমাম খালাস ১লা ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে আমন ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করার সরকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা। ঘোষণানুযায়ী ধানের মন ধার্য করা হয়েছে ৭৪ টাকা এবং চাল মনপ্রতি ১২০ টাকা ও ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত মওলানা ভাসানীকে ডাক্তারদের পূর্ণ বিশ্রাম নিতে পরামর্শদান। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ন’নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
: বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের। জীবন ও সংস্কৃতির উপর আলোচনা সভায় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আকবর কবীর বলেন “বর্তমান সরকার উপজাতীয়দের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য একটি উপজাতীয় ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। উপজাতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণে সরকার দৃঢ় সংকল্প। ১৫ পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সপ্তম থেকে দশম গ্রেড পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেলের মুসলমান, কর্মচারীদের মাসের অর্ধেক বেতন আগাম দেয়ার সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
: জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটিতে ফারাক্কা সংক্রান্ত বিতর্কে যোগদানের জন্য, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের নিউইয়র্ক উপস্থিতি। ও ফারাক্কায় ভারত কর্তৃক একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ – কর্মসচী ব্যর্থ হচ্ছে। ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের দাবীতে ‘ফারাক্কা দিবস উদযাপিত। ও ইরানের সংবাদপত্র কায়হানের মন্তব্য-“গঙ্গার পানি ও মাটির উপর বাংলাদেশের জনগণের প্রতিষ্ঠিত অধিকার থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা যাবে না।” ও পুরাকীর্তি পাচার মামলার রায় ঘোষণা। অন্যতম অভিযুক্ত ব্যক্তি আর হুবমানের এক বছরের কারাদণ্ড। র্যাডেস্কীসহ অন্য ৩ জন খালাস। হুবমানের অনুপস্থিতিতেই বিচার হয়।
:আলজিরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্র দত এ, ডব্লিউ, শামস-উল আলমের আলজিয়ার্সে প্রেসিডেন্ট হুয়ারী বুমেদীনের নিকট পরিচয়পত্র পেশা। ১৬ জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটিতে ফারাক্কা সমস্যা নিয়ে বিতর্কের শুরু। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের সমস্যা নিষ্পত্তির ব্যাপারে পাঁচ-দফা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাব পেশ।
: প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ৭৭ সালের জানুয়ারীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
: ময়মনসিংহের সীমান্তে সীমান্তের ওপার থেকে আসা দুষ্কৃক্তকারীদের সঙ্গে বিডিআর-এর সংঘর্ষে ৬ জন দুষ্কৃতকারী নিহত।
ঃ বাংলাদেশ কনভেনশন মুসলিম লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারী মনোনয়ন লাভ। এ দল। নিয়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭-এ। ১৭ শতাব্দী প্রবীণ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মৃত্যু। দেশব্যাপী শোকের ছায়া। মওলানা ভাসানীর মৃত্যুতে সাত দিনব্যাপী জাতীয় শোক ঘোষণা। পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দন প্রেসিডেন্ট, তিন বাহিনীর প্রধানসহ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাবৃন্দ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শোকবাণী।
: ‘ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ভারত তার একগয়েমিতে অটল। জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষে আটটি প্রকল্পের অনুমোদন।
: নির্বাচন তিন বছর পিছিয়ে দেয়ার জন্য ২৯ জন আইনজীবীর যুক্ত বিবৃতি প্রদান।
: প্রতি দু’হাজার দশ’ ভোটারের জন্য একটি করে ভোট কেন্দ্র হবে বলে নির্বাচন কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। ঢাকা-বোম্বাই-দুবাই ফ্লাইটে বাংলাদেশ বিমানের প্রথম উড্ডয়ন। ১৮ হাজার হাজার মানুষের বুক ফাটা কান্না আর লাস্টপোস্টের করুণ সুরের মাঝে মওলানা ভাসানী অন্তিম শয্যায় শায়িত। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় – মওলানা ভাসানীর দাফন। টাঙ্গাইলের সন্তোষ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে দাফনের পরে ঢাকায় এবং টাগাইলে তিনটি জানাজা অনুষ্ঠিত।
ঃ মওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতির উপর বইপত্র, ফিল্ম, নিবন্ধ এবং অন্যান্য তথ্য দলিল ঢাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে তাতে রাখা হবে বলে জেনারেল জিয়ার ঘোষণা। ১৯ মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুতে সকল সংবাদপত্র অফিসের সকল বিভাগ একদিন বন্ধ। ২০ আরো তিনটি রাজনৈতিক দলের সরকারী অনুমোদন লাভ। এগুলো হচ্ছে—মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগিশের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণ-আজাদী লীগ, প্রবীণ জননেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন এবং এ, এস, এম, সোলায়মানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক, শ্রমিক পার্টি। এ পর্যন্ত অনুমোদিত দলের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১-এ।
: লন্ডনসহ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক প্রেস কাউন্সিলর এম, আর, আখতার (মুকুল) রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য চাকুরী থেকে অপসারিত।
: মওলানা ভাসানীর কবরে হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের ভিড়।
: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম কমিটিতে নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে বিতর্কে ভাষণ দানকালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি পররাষ্ট্র, সচিব তবারক হাসেন বলেন “নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে বাংলাদেশের নীতি সস্পষ্ট এবং ব্যর্থহীন’’। চোরাচালান-বিরোধী সংস্থা সমূহের কার্যকলাপ পরিদর্শনের জন্য সরকার কর্তৃক ভিজিলেন্স টীম গঠন। মওলানা ভাসানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র আবু নাসের খান ভাসানীর সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনি তাঁর পিতা মওলানা ভাসানীর শেষ ইচ্ছা অনুসারে নির্বাচন সম্পর্কে গণভোট নেয়ার আহবান জানান।
: বাংলাদেশ গণ-আজাদী লীগের সভাপতি এবং জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের দু’টি পথক বিবৃতিতে জাতীয় ঐক্য অক্ষর রাখতে নির্জন স্থগিত রাখার দাবী জানিয়েছেন। : ন্যাপ(ভাঃ), ইউপিপি, জাগ মুই, সাম্যবাদী দল, জাতীয় লীগ, জাতীয় দল, লেবার পার্টি ও পিপলস লীগকে নিয়ে মওলানার মত্যুতে জাতীয় শোক কমিটি গঠন। ২১ জাতীয় ঐক্য-সংহতি ও দেশ গঠনে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জনমতের প্রেক্ষিতে ৮ দেশের সার্বিক স্বার্থে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে প্রেসিডেন্টের বিশেষ বেতার ও টেলিভিশন ভাষণ।
ঃ জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ভাসানী স্মরণে শোকসভায় বিশিষ্ট সাংবাদিকমণ্ডলীর অভিমত—“মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে নিঃস্বার্থভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।” প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী আভা আলমের মৃত্যু (ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন)।
: মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে জেনারেল জিয়ার কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর শোকবাণী। ও দেশের সর্বত্র মওলানা ভাসানীর মত্যুতে শোকসভা।
ঃ চট্টগ্রামে বিডিআর-এর তৎপরতায় ২৮ জন চোরাচালানী ও প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল আটক।।
: কৃষক-শ্রমিক পার্টির নেতা এ, এস, এম, সোলায়মানের সাংবাদিক সম্মেলন। ‘ ৫. মওলানা ভাসানীর মত্যুতে শোকসভা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে গঠিত জাতীয় কমিটিতে কৃষকশ্রমিক পার্টি ও প্রস্তাবিত শ্রমিককৃষক সমাজবাদী দলের অন্তর্ভক্তি।
২২. বিভিন্ন মহল থেকে সাধারণ নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত অভিনন্দিত। নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করেছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী), জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কনভেনশন মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, বাংলাদেশ কাগজ বোর্ড শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ হোসিয়ারী শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা দর্জী কর্মচারী ইউনিয়ন, ঢাক: জেলা সোনালী ব্যাংক কর্মচারী ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়ন, জাতীয় ছাত্র আন্দোলন এবং আরো অন্যান্য সংগঠন। এছাড়াও রয়েছেন আবু নাসের খান ভাসানী (ভাঃ ন্যাপ)।
: মওলানা ভাসানীর মৃত্যুতে শোকসভা অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় কমিটি মাহবুব আলী ইনস্টিটিউটের এক সভায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শোকসভা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়ার জন্য কতৃপক্ষের নিকট আহবান জানায়।
: প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ১৯৭৬ সালের স্থানীয় সরকার অর্ডিন্যান্স (১৯৭৬ সালের ৯০ নম্বর। (রোমান) অর্ডিন্যান্স জারি। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পরিষদ ও জেলা পরিষদ নামে নতুন স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গঠিত হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।
: এয়ার ভাইস-মার্শাল এ, জি মাহমুদের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম বিমান উড্ডয়ন নিরাপত্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত। সম্মেলনে এয়ার ভাইস মার্শাল এ, জি, মাহমুদ বিমান উড্ডয়নে নিরাপত্তা বিধানের উপরের জোর দেন। : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পূর্ণোঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়ার এড়– মিরাল এম, এইচ, খানের মন্তব্য– প্যালেস্টাইনীদের অধিকার কায়েমই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর্বশর্ত।” ২৩ চীন—বৈদেশিক রাষ্ট্র মৈত্রী সমিতি কর্তৃক মওলানা ভাসানীর মত্যুতে শোক প্রকাশ। সমিতির শোকবাণীতে বলা হয়, মওলানা ভাসানী ছিলেন উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামের একজন মহান যোদ্ধা।
:মওলানা ভাসানীর মৃত্যুতে আফ্রো-এশীয় গণ-সংহতি সংস্থার শোকসভা অনুষ্ঠিত। তেজগাঁ পুলিস কর্তৃক সোয়া লাখ টাকার মালামালসহ তিনজন ডাকাত গ্রেফতার। বাংলাদেশ কনভেনশন মুসলিম লীগের সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠান সম্মেলনে দলের আহবায়ক এম, এ, মতিন নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করায় সরকারকে অভিনন্দিত করেন এবং বলেন-“তাঁর দল কেবলমাত্র গণতন্ত্র এবং জাতীয়তা বাদকেই স্বীকার করে।
: চট্টগ্রাম বন্দরের ৯৮০ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে নিম্নচাপ ঘনীভূত। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম, চালনা ও চালনা ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী হশিয়ারীসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
: বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে _ কর্তব্য পালনের জন্য ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার কনস্টে বল সমরেশ চক্রবর্তীর প্রেসিডেন্টের পুলিস পদক লাভ। বৃত্তি শিক্ষা উন্নয়নে সুইডেন ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিবলে সুইডেন বাংলাদেশকে ১৩ কোটি টাকা দেবে।
: ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে জেনাল জিয়ার পল্লী এলাকায় ব্যাংকের তৎপরতা প্রসারের নির্দেশ। ২৪ মওলানা ভাসানীর মৃত্যুতে জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শোকসভায় সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করার জন্য মওলানা – ভাসানীর আর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, ও কৃষক-শ্রমিক মেহনত মানুষের সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ ঘোষণা। শোকসভা অনুষ্ঠানের কমিটিতে রয়েছে ১২টি – রাজনৈতিক দল ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতিসহ ৪০টি সংগঠন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আহবায়ক আতাউর রহমান খান।
: সিঙ্গাপুরের বহুল প্রচারিত ইংরেজী দৈনিক “স্টেটস টাইমসের’’ প্রতিবেদন—“ভারত গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করার ফলে বাংলাদেশের ওপর তার প্রত্যক্ষ বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিপর্যয়কর।”
: ফরাসী মনিষী আঁদ্রে মালরোর মৃত্যুতে ফরাসী প্রেসিডেন্টের কাছে প্রেসিডেন্টের শোকবাণী প্রেরণ।
: শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক, বিজ্ঞান ও কারিগরী গবেষণা এবং শিক্ষা ও কারিগরী পরিদফতরের পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যুক্ত সমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে শিক্ষার গুণগত ও পরিমাণগত মানকে বাড়াতে আরো তৎপরতা চালাতে হবে।” ২৫ সোহরাওয়াদ উদ্যানে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি কোম্পানীর প্রথম শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে জেনারেল জিয়ার সালাম গ্রহণ। এ উপলক্ষে এক ভাষণে জেনারেল জিয়া দেশরক্ষা ও দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে আসার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহবান জানান। চারটি – কোম্পানীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযযাদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে ৪৪০ জন। এরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের তত্তাবধানে থাকবেন।
:ভারতের একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারে উদ্ভত ফারাক্কা সমস্যার প্রতি জাতিসংঘে বাংলাদেশের নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন। আগামী খরা মৌসুমের পূর্বেই সমস্যাটির নিষ্পত্তির জন্য ঢাকায় এ ব্যাপারে শীগগীরই মন্ত্রী পর্যায়ে জরুরী বৈঠক বসবে।
: তুরস্কে ভূমিকম্পে প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল জিয়ার শোকবাণী প্রেরণ।
: জাতীয় দৈনিকসমূহের সম্পাদক, অন্যান্য প্রবীণ সাংবাদিক এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারদের উদ্দেশ্যে জেনারেল জিয়ার ভাষণ—“বিভাগীয়। উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হবে এবং এর অর্থ বরাদ্দের। পরিমাণও বাড়ানো হবে।
ঃ বাংলাদেশ তফশীল জাতি ফেডারেশনের আহবায়ক শ্রী রসরাজ মণ্ডলের সাংবাদিক সম্মেলন। সম্মেলনে তিনি সংবিধানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের উপর কনভেনশন অনুষ্ঠানের আহবান জানান।
: চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টর মিঃ সি;ইয়েন-শেন-এর নেতৃত্বে তিন-সদস্যের চীনা বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের ঢাকাআগমন। বিমানবন্দরে প্রতিনিধিদলের নেতা বলেন, একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়েই তার দল এদেশের সরকারী কর্ম কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট সাফল্য লাভ করেছে।”
: কৃষিনীতি পরিষদের বৈঠক প্রেসিডেন্টের ভাষণ—“খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক বাস্তবধর্মী কৃষিনীতি উদ্ভাবনের প্রয়োজন। একই সাথে পল্লী এলাকার বেকার সমস্যা লাঘবেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
: প্রখ্যাত ফরাসী মনীষী আদ্রে মালরোর মৃত্যুতে ফরাসী প্রধানমন্ত্রী মসিয়ে রেমণ্ডের কাছে পাঠানো জেনারেল জিয়ার শোকবাণী, মাল রোর স্মৃতিকে আমরা সযত্নে লালন করি। কারণ বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মওলানা ভাসানীর মত্যুতে – চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান কুয়ো মো-জো’র শোকবাণী প্রেরণ।
ঃ ময়মনসিংহের সীমান্তে কয়েক স্থানে দুষ্কৃতকারীদের হামলা প্রতিহত।
২৬ চলতি অর্থবছরে বেসরকারী শিল্পখাতে আশাব্যঞ্জক সাড়া। প্রথম তিন মাসে মোট আট কোটি টাকার বিনিয়োগ। । রাজধানীর সিদ্দিকবাজার কমিউনিটি সেন্টারে সর্বস্তরের জনগণের সমাবেশে জেনারেল জিয়ার ভাষণ “নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে সবাই সামর্থ্য অনুসারে এগিয়ে আসুন। সবচেয়ে কঠিন জিনিস স্বাধীনতা যখন আমরা অর্জন করতে পেরেছি তখন অন্যান্য সব সমস্যাও সমাধান করতে পারব। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের জিওসি এবং পুরাতন ঢাকা উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী । বিভিন্ন মহকুমা ও জেলা পর্যায়ে শিল্পকলা পরিষদ স্থাপন করা হবে বলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ডঃ মুহস্মদ সিরাজুল ইসলামের তথ্য, প্রকাশ। ৫ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ২৪৪ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে পাঁচটি প্রকল্পের অনুমোদন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ হচ্ছে ১১৫ কোটি টাকা। অনুমোদিত এই প্রকল্পগুলো হচ্ছে ঃ বৃহত্তর ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প, এগারো হাজার অগভীর নলকূপ বসানো প্রকল্প, রাজশাহী শহর রক্ষা প্রকল্প, ৬০ মেগাওয়াট উত্তরবঙ্গ গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এবং সংশোধিত ১২৩ কিলো ভোল্ট আশুগঞ্জ ময়মনসিংহ, জামালপুরে ট্রান্সমিশন। লাইন।
: ঢাকায় ব্যাংক অফ ক্রেডিট এন্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শাখা উদ্বোধনকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডঃ এম, এন, হুদার ভাষণ “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী পু’জিকে সর্বাত্মক সাহায্য দেয়া হবে। খুলনা শিপ ও বণিক সমিতির সভায় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা এ, কে, এম, হাফিজ উদ্দীনের ভাষণ—“দেশে শিপের সুষম উন্নয়নে পল্লীর জনসাধারণকে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত ও সাহায্য করার উদ্দেশ্যে সরকার শিল্প ইউনিট বিকেন্দ্রীকরণ ও পন্দনী অঞ্চলে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ করেছেন।”
মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী দৈনিক ‘বিজনেস টাইমসে’র মন্তব্য—“গত জুনে সমাপ্ত বছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।” । ঢাকা ও পিকিং বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের মধ্যেকার প্রথম দফায় বৈঠক সমাপ্ত। প্রাথমিকভাবে দু’বছরের জন্য বলবৎ একটি বাণিজ্য ও মূল্য পরিশোধ চুক্তি এবং এর জন্য একটি বার্ষিক প্রােটোকল চূড়ান্ত করার ব্যাপারে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা ও পণ্যসামগ্রী নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ২৭ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য সংগ্রহ কর্মসূচীতে ব্যবসায়ীদেরকেও ধানচাল সংগ্রহে ব্যাংক ঋণ দেয়া হবে । বলে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আত্নগোপনকারী জাসদের তথাকথিত গণবাহিনীর সংগঠক সিরাজুল আলম খান পুলিসের হাতে গ্রেফতার। এর আগে ষড়যন্ত্র, মামলার বিচারে আরও কয়েকজনের সঙ্গে তার অনুপস্থিতিতেই সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়নের সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত। সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হোসেন খান তার দলের পঞ্চশীলা নীতিভিত্তিক কর্মসূচী ও আদর্শ-উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। পঞ্চশীল নীতিতে রয়েছে :
(১), জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠন, (২) সকল বিদেশী শোষক আধিপত্যের অবসান করে জাতীষ। মুক্তি অর্জন ও স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতকরণ। সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম চালানো, (৩) আন্ত- ৩ জাতিক পুজির সেবাদাস দেশীয় পুজি ও জোতদারী মহাজনী ইত্যাদির শোষণ অবসান করে গণ- ৮ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা কি ও জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের সামাজিক উন্নয়ন ও বিকাশসাধন করা, (৪), সকল প্রকার সাম্প্রদায়ি কতা, আঞ্চলিকতা ও বিভেদমূলক রাজনীতি এবং ফ্যাসিবাদী তৎপরতাকে প্রতিহত করা এবং (৫) সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সকল নিপীড়িতের আন্তর্জাতিকবাদকে জোরদার করা।
: সফররত চীনা বাণিজ্য প্রতি নিধিদল ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় আমদানী তালিকা চূড়ান্তকরণ। ২ ঢাকা-টোকিও কো-অক্সিয়াল কেবল প্রকল্প এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবহার উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর। । প্রাক্তন বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দ মতুজা আলী বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলেন।
: ঈদুল আযহা উপলক্ষে গরীব এবং দুঃস্থদের মধ্যে সরকার কর্তৃক ষাট হাজার শাড়ী ও পচিশ হাজার লুঙ্গী বিতরণ। ২৮ জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটির ফারাক্কা বিতকে অংশগ্রহণের শেষে রিয়ার এডমিরাল এম, এইচ, খানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। ফিরে এসে ঢাকায় তিনি বলেন—“গঙ্গার পানির উপর বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অধিকার জাতিসংঘে পূর্ণ এবং যথার্থভাবেই সমর্থিত হয়েছে।”
: নারায়ণগঞ্জ মহকুমা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্মেলনে মোর জেনারেল এরশাদের ভাষণ-“স্বধীনতার শত্রুদের বিরদ্ধে রথে দাঁড়ান এবং জনগণের প্রগতি ও সমদ্ধি নিশ্চিত করার কাজে তাঁদের সঙ্গে শামিল হোন।”
: এক মোটর দুর্ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত লিবিয়ান চার্জ দ্য এফেয়ার্স আবদুল ওহাব-জি-আল-আরাবীর ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)
: আইআরডিপি ও ইসকাপ-এর ৬ যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচ দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক ওয়ার্কশপের সুপারিশ ধনী ও মাঝারি কৃষকদের কাছে জমি, হস্তান্তর ও জমির খণ্ডতা রোধে অবিলম্বে কমিশন গঠন করা উচিত। যুগোশ্লাভ প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রেসিডেন্ট এ, এম, সায়েমের বাণী “বাংলাদেশ ও যুগোলাভিয়া শান্তি। ও নিরপেক্ষতার আদর্শ বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উন্নয়ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।” ২৯ ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক । উপমহাদেশের প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী আভা আলমের স্মৃতিতে শোকসভা অনুষ্ঠিত। শোকসভায় আভা আলম স্মৃতি পরিষদ গঠিত। ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রােভাইস চ্যান্সেলর পদে ডঃ মফিজুল্লাহ কবীরের নিযুক্তি। উঃ কবীর ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এবং এস, এম, হলের প্রভোস্ট ও কলা অণুষদের ডীনও। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির সম্বর্ধনা সভায় চীনা বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতা মিঃ শি, ইয়েন শেন বলেন—“চীনা জনগণ বাংলাদেশ জনগণের সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ-বিরোধী সংগ্রামে সবসময়ই পাশে থাকবে।”
: সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী প্রকাশের ক্ষেত্রে যে কোন বেসরকারী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হবে বলে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আকবর কবীরের তথ্য প্রকাশ।
: তুরস্কের সাম্প্রতিক ভূমিকল্পের দুর্গতদের জন্য সহানুভূতি নিদর্শনস্বরপ বিশ্ব হাজার পাউণ্ড চা পাঠাবার সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
: মওলানা ভাসানী জাতীয় শোক কমিটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে জাতীয় প্রতিরোধ ও সংহতি কমিটি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত একটি কর্মসূচী তৈরী করার জন্য একটি সাব-কমিটিও গঠন। সাব-কমিটির সদস্যরা হলেন মওলানা ভাসানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র জনাব আবু নাসের খান ভাসানী ও গাজী শহীদুল্লাহ, (ভাঃ, ন্যাপ), ইউনাইটেড পিপলস পাটির কাজী জাফর আহমদ, জাগমইয়ের জাব সিরাজুল হোসেন খান, সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) শ্রী শান্তিসেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের জনাব ফয়জুর রহমান, কৃষক-শ্রমিক পার্টির জনাব এ, এস, এম, সোলায়মান, কনভেনশন মুসলিম লীগের। জনাব এম, এ, মতিন, জাতীয় লীগের জনাব আবুল কালাম এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টির জনাব শামসুল আলম খান। আগামী ৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় শুরু হচ্ছে বলে ঢাকা ও নয়াদিল্লীতে একযোগে ঘোষণা। এর আগেই মন্ত্রী পর্যায়ে জরুরী দ্বিপাক্ষিক আলোর বিষয়টি জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটি ও সাধারণ পরিষদ যথাক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ব্যবস্থা হলেও ফারাক্কা আইটেমটি জাতিসংঘ থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি বলে সরকারী সুত্রে প্রকাশ। ও পরিত্যক্ত যানবাহন বরাদ্দের উপর শ্বেতপত্র প্রকাশ। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর পরিত্যক্ত যানবাহন বরাদ্দ ও নিলামে বিয়ের নামে এক চূড়ান্ত অব্যবস্থার চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছেন পরিত্যক্ত যানবাহন সম্পর্কে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি। বেতপত্রে আরো বলা হয়েছে, যারা পরিত্যক্ত গাড়ী জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে সামরিক আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইইসিভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর। চুক্তিবলে বাংলাদেশ সেসব দেশে শুকনা মাছ, শাকসব্জি, গরুর চামড়া, আল ও নউজপ্রিন্ট রফতানী করবে। । গ্রামাঞ্চলে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানকে সহায়তা করার জন্য । সরকারের বারো কোটি টাকা মঞ্জুর।
৩০ জাতীয় স্বার্থে প্রেসিডেন্ট জনাব এ, এম, সায়েমের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম), পিএসসি’র নিকট হস্তান্তর। এখন থেকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নিম্নলিখিত দায়িত্ব পালন করবেন
: (ক) নয়া উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক এবং উপ-আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ এবং (খ) ১৯৭৫ সালের ২০শে আগস্ট এবং ৮ই নভেম্বরের ঘোষণাসমূহ এবং এই ঘোষণার সংশোধন এবং (গ) সামরিক আইন বিধি এবং আদেশসমূহ প্রণয়নের এবং (ঘ) যে কোন আইন অথবা কাজ করার অথবা প্রয়োজনবোধে জাতীয় স্বার্থে অথবা সামরিক আইন চালু রাখার স্বার্থে যে কোন কর্মপন্থা গ্রহণের ক্ষমতাসহ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
ঃ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও ডিভিশনগুলোর প্রধানদের সমাবেশে জেনারেল জিয়ার নির্দেশ —“প্রতিটি ক্ষেত্রে ঐক্য, সহযোগিতা ও কাজের সুস্থ পরিবেশ অাটুট রেখে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” : নবম পদাতিক ডিভিশনের প্রথম বার্ষিকীর ঐতিহাসিক কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে জেনারেল জিয়ার ভাষণ-অক্লান্ত অপরিসীম উৎসাহ-উদ্দীপনা, দুর্জয় চেষ্টা, শৃঙ্খলাবোধের প্রতি সম্মান, সাহসিকতা ও সর্বোপরি পেশাগত দক্ষতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উন্নতির শিখরে পৌছে দেবে। ঢাকা-পিকিং বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত। চুক্তির মেয়াদ দু’বছর। চুক্তি দু’দেশ প্রত্যেকে বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বাণিজ্য করবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ চীনে যে সব পণ্য রফতানী করবে তার মধ্যে রয়েছে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, রেয়ন, কালজ ও কাগজের সামগ্রী ও নিউজপ্রিন্ট।
চীন বাংলাদেশে যে সব পণ্য রফতানী করবে তার মধ্যে রয়েছে কয়লা, সিমেন্ট, এমএস বিলেট, পিগ আয়রণ, রং, কেমিক্যাল, যন্ত্রপাতি, মেশিনারী, খুচরা যন্ত্রাংশ, এবং শিল্পজাত হাল্কা পণ্য। । ১৯৭৫ সালের ৭ই এপ্রিল তারিখে ঘোষিত অচল শতক নোটের অনুকূলে সরকারী বঁড় ইস করা হবে বলে সরকারী ঘোষণা।
ফারাক্কা: লাখো মানুষের কান্না
ওপারে গঙ্গা, এপারে পদ্মা। একই নদী, একই জলস্রোত। মহাদেবের জটা ধরে নেমেছিল যে নদী সীমানা পেরুলেই বদলে যায় তার নাম। এই গঙ্গার উপর বাংলাদেশের সীমানা থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরে তৈরী হয়েছে বাঁধ ফারাক্কা। দুশ কোটি ব্যয়ে দৈর্ঘ্যে ৭,৫০০ ফুট উচ্চতায় ৭৫ ফুট। নদীমাতৃক দেশ বলেই বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে নদীর জলপ্রবাহের প্রশ্নটি জড়িত। বাংলাদেশের নদীপথগুলো—তিনটি নদী ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা এবং মেঘনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এসব নদীর উৎসমুখ রয়েছে ভারতে, নেপালে এবং চীনে। গঙ্গার জল বিধৌত ভূখণ্ড হচ্ছে—তিব্বত, নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশ। তিব্বত-ভারত সীমান্ত থেকে বরফগলা পানি বয়ে গঙ্গা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। তারপর মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে। নেপালে ও তিব্বতে উৎস মুখ-সম্বলিত বহু নদী-নালা গোগরা গন্ধক, কোশী-গঙ্গার জলপ্রবাহ শক্তি যোগায়। যখন গঙ্গার জলপ্রবাহ কমে যায় সে সময় এসব নদীগুলো ৩০,০০০ কিউসেক পানি যোগায় গঙ্গাকে। বাংলাদেশে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত, নদী একটাই—তা হল মহানন্দা। এই মহানন্দারও উৎসমুখ ভারতে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গঙ্গার গতিপথ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। এই একক পথচলায় বিরতি আসে যখন গোয়ালন্দের কাছে এসে গঙ্গ মিলিত হয় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার সঙ্গে। এই তিনটি মিলিতধারা চাঁদপুরের কাছে এসে মিলে যায় মেঘনার সঙ্গে। তারপর মোহনার টানে প্রবাহিত হয় যগোপসাগরে। গঙ্গার উপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা ব্যাপক। উনিশটি জেলার মধ্যে আটটি জেলা এই নদীর উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। দেশের আবাদী জমির এক-চতুর্থাংশ এ জেলাগুলোতে অবস্থিত। গাঙ্গেয় অববাহিকায় বাস করেন দেশের এক-তৃতীয়াংশ লোক বা ২ কোটি ৪০ লক্ষ জনগণ। গঙ্গা এবং এর নালাগুলোর তীরে অবস্থিত রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা। গঙ্গা নদীর উপর শধ বাংলাদেশের নয়, ভারতের নির্ভরশীলতাও রয়েছে। কিন্তু তুলনামুলক হিসেবে আমাদের নির্ভরশীলতা অনেক বেশী। নীচের পরিসংখ্যান থেকে সে তথ্যই পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ভারত ভৌগোলিক এলাকা।

বাংলাদেশ ভারত
ভৌগলিক এলাকা ৩৭% ২৪%
মোট আবাদি জমি ৩৮% ২৯%
গঙ্গার উপর নির্ভরশীল ফসলি জমি ৩৭% ৩৪%
শস্য ফলানোর তীব্রতা ১৩৬% ১১৭%
রাজমহলের কাছে বঙ্গ-বিহার সীমান্তে ফারাক্কা—কোলকাতা থেকে ১৬০ মাইল প্রায় সোজা উত্তরে। গঙ্গার উপর এখানেই তৈরী হয়েছে বাঁধ। তার উপর দিয়ে রাস্তা ও রেললাইন দক্ষিণ বাংলাকে উত্তর বাংলা ও আসামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে দেবে। ফারাক্কা ব্যারেজের উত্তর দিয়ে একটি সাড়ে ছাব্বিশ মাইল দীর্ঘ খাল গঙ্গার দক্ষিণ পার থেকে শর হয়ে ভাগীরথিতে এসে মিলেছে জঙ্গীপুরে। এই সঙ্গমস্থলটির ঠিক উত্তরে জঙ্গীপুরেই তৈরী হয়েছে অপর একটি ব্যারেজ। বর্তমানে একমাত্র বর্ষাকাল ভিন্ন ভাগীরথির সঙ্গে গঙ্গার জলের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু একসময় অবস্থা ছিল ভিন্ন। তখন ভাগীরথি হুগলীর কোন অস্তিত্ব ছিল না। পশ্চিমের মালভূমি থেকেই মূলতঃ পলি এসে বিস্তৃত বাংলার সমভূমিকে ভরাট করেছে। রাজমহলের সঙ্গে গাড়ােপাহাড় তখন যুক্ত ছিল। এই দেয়ালের উত্তর দিয়ে পর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হত ব্রহ্মপুত্র নদী। ভূ-বিজ্ঞানে এ নদীর নাম দেয়া হয়েছে ইন্দ্ৰবাম। প্রাকতিক কারণে প্রায় লক্ষ বছর পূর্বে গাড়ােরাজমহল পাহাড়ের দেয়াল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই উন্মুক্ত স্থান দিয়ে সর্বপ্রথম হিমালয়ের জল প্রবলবেগে বাংলা সাগরে এসে পড়তে থাকে। ভাগীরথি প্রতি বছরে তখন কোটি কোটি টন পলি ফেলে বর্তমান দক্ষিণ বাংলা সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। এই পলির গভীরতা পাওয়া গেছে ১২০ ফট থেকে ২৭,০০০ ফুট। কিন্তু ঘটনাচক্রে আবার পরিবর্তন ঘটেছে। ধীরে ধীরে গঙ্গার বক্ষ থেকে উচু হতে থাকে ভাগীরথির বক্ষ। এখন ভাগীরথি-গঙ্গার সঙ্গমহলে ভাগীরথির বক্ষ গঙ্গা থেকে প্রায় ৫০ ফুট উচ। কাজেই গঙ্গার জল ভাগীরথি দিয়ে প্রবাহিত হবে কিভাবে? বর্ষাকালে ১ লক্ষ কিউসেক-এর কিছ, কম জল ভাগীরথি দিয়ে প্রবাহিত হলেও, গ্রীষ্মকালে এই প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। কোলকাতা-হুগলীর উপর নদীবন্দর। ভাগীরথি-হুগলী নদী বাঁচলে কোলকাতা বাঁচবে। এই ভরসায় ফারাক্কা প্রকল্পের জন্ম। এই প্রকল্পের ফলে ৪০ হাজার কিউসেক জল সারা বছর ভাগীরথি হুগলী দিয়ে প্রবাহিত হবে। ফলে এ নদীতে নাব্যতার সষ্টি হবে—উত্তর ভারতের সঙ্গে কোলকাতার যোগাযোগ স্থাপিত হবে জলপথে। গ্রীষ্মকালে হুগলী দিয়ে ৪০ হাজার কিউসেক জল প্রবাহিত হবে। সেই স্রোতের তোড়ে জোয়ার ও বানে ঠেলে আনা সামদ্রিক পলিকে হটিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে যেখানে ৩৬৫ দিনের মধ্যে শুধুমাত্র ভরা বর্ষায় ৫০ দিন কোলকাতা বন্দরে জাহাজ চলাচলের জন্য ২৬ ফুট গভীরতা পাওয়া যায়, তার বদলে ফারাক্কার কারণে ২০০ দিনেরও অধিক ২৮ ফুট গভীরতা হুগলীর নাব্য অংশটিতে থাকবে। অর্থাৎ কোলকাতা বন্দর রাহুমুক্ত হবে! কিন্তু বাংলাদেশের কি হবে ? ফারাক্কা চালু করে গঙ্গার জলপ্রবাহকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ফলে পানির প্রবাহ কমে গেছে গোড়াই, ইছামতি, কুমার, নবগঙ্গা, মধুমতি, ভৈরব, অধািরবকিা প্রভৃতি নদীতে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে-র মাঝামাঝি পর্যন্ত সাড়ে তেইশ মাইল খালের মধ্য দিয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৪০,০০০ কিউসেক পানি। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে এসময় গঙ্গার জলপ্রবাহ গড়পড়তা ৫৫ হাজার কিউসেক। এময়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন ‘৪২,০০০ কিউসেক পানি। অর্থাৎ ৪,০০০ কিউসেক সরিয়ে নেয়ায় থাকছে মাত্র ১৫ হাজার কিউসেক। এই জলপ্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক খরা। বিপন্ন হচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো প্রতিদিন দু’বার বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাঁটার উপর নির্ভরশীল। জোয়ারের সঙ্গে আসে লোনাজল। আবার গঙ্গর জলপ্রবাহ ফিরিয়ে দেয় সেই লোনাজলকে! কিন্তু ফারাক্কা প্রকল্প চালু হবার ফলে গঙ্গা, গোড়াই, আড়িয়ালখাঁ এবং নিম্ন মেঘনার জলপ্রবাহ এই লোনাজল সরিয়ে দিতে পারছে না। ফলে, তা গ্রাস করেছে উত্তর ও দক্ষিণ বাংলাকে। সেই সঙ্গে সমগ্র অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে এক মারাত্যক প্রতিকুল প্রতিক্রিয়া। আন্তর্জাতিক আইনের বিধান আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী যদি কোন নদী দুই বা ততোধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তবে তা আন্তর্জাতিক নদী। আন্তজাতিক নদী হিসেবে স্বীকৃত কোন নদীর যে কোন অংশই অববাহিকার কোন একটি দেশের একার আওতায় নয়। গঙ্গা নদী চীন, নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত। অতএব, গঙ্গা নদী একটি আন্তর্জাতিক নদী। যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক নদী, সতরাং এ নদীর জল। ব্যবহারেও আন্তর্জাতিক আইন-কানুন মেনেই চলতে হবে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে সেটা হবে আন্তর্জাতিক আইনের সংঘন। আন্তজাতিক আইনানুসারে আরো বলা হয়েছে, যে কোন আন্তর্জাতিক নদীর জল ব্যবহারের এখতিয়ারে ঐ নদীর অববাহিকায় বসবাসরত সকল জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ নিহিত রয়েছে। আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানির ব্যাপারে তিনটি মতবাদের উল্লেখ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে—তথাকথিত ‘হ্যারমন ডকট্রিন’। এ ডকট্রিন অনুসারে কোন আন্তর্জাতিক নদীর উপর যে কোন রাষ্ট্র তার আঞ্চলিক সীমানার উপর প্রবাহিত অংশে সম্পুর্ণ কর্তৃত্বের অধিকারী। আসলে তিনি এ ধুয়ো তুলেছেন আঞ্চলিক সাবভৌমত্বের দায় দিয়ে। কিন্তু হার্ভার্ড আইন স্কুলের অধ্যাপক বক্সটার গঙ্গা এবং সিন্ধু নদী সম্পকে এক বক্তৃতায় হ্যারমনকে ‘মূর্খ এটর্নী জেনারেল’ বলে সমালোচনা করে। বলেছেন, লোকটি তাঁর নিবন্ধিতার জন্যই ইতিহাসে বিকৃত ব্যক্তি। এর পরে সর্বজন কর্তৃক এই মতবাদকে নিন্দা করা হয়েছে। দ্বিতীয় মতবাদটি হচ্ছে—নদীর অববাহিকার উজানের রাষ্ট্রটি কোন বিশেষ কাজের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি নিতে পারে, তবে পরিমাণকে অবিশ্যি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত করে নিতে হবে। তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, একটি আন্তর্জাতিক নদীর পানি উজান ও ভাটির রাষ্ট্র দুটির মধ্যে ভাগাভাগি হওয়া উচিত। কিন্তু ভাগাভাগির প্রশ্নে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সীমানার ঊধে পানি ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে।” ১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক অনাব্য পানি ব্যবহার (নাব্যতার বাইরে) নামক একটি সিদ্ধান্তে ইনস্টিটিউট দ্য ড্রয়েট ইন্টারন্যাশনাল বলে, আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানি আন্তর্জাতিক আইন মেনে প্রতিটি রাষ্ট্রেরই ব্যবহারের এখতিয়ার রয়েছে এবং সহযোগী অববাহিকা রাষ্ট্রগুলোর ব্যবহারেরও গুরত্ব মানতে হবে। এই ইনস্টিটিউট ১৯১১ সালেও “আন্তর্জাতিক জলধারার ব্যবহারে আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কাজেই ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। ১৯৬৩ সালে আন্তর্জাতিক নদীসমূহের অববাহিকায় অবস্থিত দেশগুলোর সমন্বয়ে জাতিসংঘে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সর্বসম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, “আবহাওয়াবিদ্যা, পানিবিদ্যা ও প্রকৌশল শিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক নদী অববাহিকার গুরত্ব অপরিসীম এবং অপরিহার্য। ভূ এবং পানি ব্যবহারের উন্নতিসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক, উন্নয়নকল্পে এর প্রয়োজনীয়তাও অসম্ভব রকমের। অতএব, সেমিনারে। প্রত্যেক রাষ্ট্রকেই তার কতকর্মের জন্য সমস্ত অববাহিকায় হাইড্রো লজিক্যাল ফলাফলের বিষয়টি নজর দিতে বলা হয়েছে।” ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানি ব্যবহারের উপর। আন্তর্জাতিক আইন এসোসিয়েশন হেলসিংকি সম্মেলনের আয়োজন করে। হেলসিংকি সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নদী আইন বিশেষজ্ঞরা। ‘যথার্থ ভাগাভাগির আইনটিকেই ব্যাপকভাবে অনুমোদন করে। আন্তজাতিক নদী অববাহিকার দেশগুলোসহ পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মতিতে এ আইনগুলো বেশ কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় সর্বত্রই গ্রহণ করা হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ ও ভারত-বাংলাদেশ বিরোধের ব্যাপারে সহযোগী অববাহিকা ভূমির দেশগলোর এ কমিটিতে তিনজন ভারতীয় আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। হেলসিংকি সম্মেলনে গৃহীত মূল বক্তব্য হচ্ছে—-“যে কোন আন্তজাতিক নদী অববাহিকার দেশের এখতিয়ারে উন্নয়ন কার্যক্রমে তার আঞ্চলিক ভূখণ্ডের মধ্যেকার প্রবাহিত পানির সমবণ্টনে’ ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। এই সমবণ্টনই হচ্ছে দুটি দেশের সমঝোতার ব্যাপার। আন্তর্জাতিক আইন মতে, “নিজ জাতীয় সীমানার বাইরে কোন আন্তজাতিক নদীর কর্তৃত্ব একটি মাত্র অববাহিকা দেশেরই থাকে না। কোন দেশই প্রতিবেশী দেশের প্রাকৃতিক পরিবর্তন সাধন করতে পারে না। এ কারণেই কোন রাষ্ট্র শুধুমাত্র কোন নদীর স্বাভাবিক স্রোতকে পরিবর্তন বা থামাতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের ক্ষতি হতে পারে এমন ব্যবহার অথবা প্রতিবেশী দেশকে পানি থেকে বঞ্চিতও করতে পারে না।’ (আন্তর্জাতিক আইন, এ ওপেন হার, পৃষ্ঠা ৪৭৪-৭৫) বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ মুলতঃ ঘনবসতিপূর্ণ একটি বদ্বীপ এলাকা। এর সমান, অর্থনীতি—এমনকি, ব্যাপকতর অর্থে অস্তিত্ব পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে গঙ্গার জলের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের জন্য যে সব ব্যাপারে গঙ্গার জল অপরিহার্য তা হচ্ছে-পানীয় জল ও গৃহকাজের জন্য পানি, নৌচালনা, সেচ, শিল্প ও শক্তি, মৎস্য এবং লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। ফারাক্কা বাঁধ চালর পর ফারাক্কার মাটিতে গগা ও সংশ্লিষ্ট নদীর পানি দ্রুত হ্রাস পায়। গঙ্গা অন্যান্য নদীর সংযোগস্থলে গঙ্গার পানি অনেক নীচে থাকায় সেই সব নদীর পানি অধিক হারে নেমে এসেছে। এর জন্য অন্যান্য নদী যেমন, যমুনা ও মেঘনায়ও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাই, গঙ্গার অববাহিকায় প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও পরোক্ষ প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায় সমগ্র বাংলাদেশে। সবগুলো নদীই প্রায় প্রচণ্ড খরা মৌসুমের মত শুকিয়ে যায়। এতে নৌ-পরিবহণের ক্ষেত্রে নেমে আসে দারুণ বিপর্যয়। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পরিবহণ ক্ষেত্রে নৌ-পরিবহণ একটি উল্লেখযোেগ্য মাধ্যম। ভারত কর্তৃক ফারাক্কায় পানি প্রত্যাহারের ফলে যেসব নদীপথ মারাতমকভাবে ব্যাহত হয় তা হচ্ছে, গোদাগারী থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত গঙ্গা নদী এবং মহানন্দা, বড়াল, ইছামতি, গোরাই, মধুমতি, আত্রাই, ভৈরব, চিত্রা, নবগঙ্গা প্রভৃতি নদীর সর্বমোট ৬৯০ মাইল নৌ-পথ। গোদাগারী থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত একশ’ পনেরো মাইল দীর্ঘ নৌ-পথটি যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের দাবীদার। শুষ্ক ঋতুতে গঙ্গার এ অংশের প্রাকৃতিক নৌ-পথটি প্রায় সাড়ে চার ফুট গভীর নৌ-যানগুলোর জন্য সীমাবদ্ধ থাকে। হিসেব করে দেখা গেছে, স্বাভাবিক অবস্থায় ফারাক্কায় ৪০,০০০ কিউসেক পানি উঠিয়ে নিলে পাকশীতে পানির উচ্চতা ছ’ফুট কমে যায়। এমতাবস্থায় এ অঞ্চলে নৌ-পরিবহণ একান্তভাবেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনিতর অবস্থার জন্ম হয় রোহনপুর থেকে গোদাগারী পর্যন্ত ৪০ মাইল এবং সারদা থেকে বেড়া পর্যন্ত ৯৫ মাইল দীর্ঘ নৌ-পথেরও। বিপর্যয়ের শেষ এখানেই নয়। দক্ষিণের নদীসমূহে নির্মুল পানির অপর্যাপ্ততার ফলে শাখা নদীসমূহে দেখা দিয়েছে লবণাক্ততা। গতিশক্তি আর হৈতিশক্তির নিয়মেই লোনাপানির আগমন আর নির্মল পানির নির্গমন নির্ভর করে। ফলে নির্মল পানির অপর্যাপ্ততায় দেখা দেয় ভারসাম্যহীনতা। লোনাপানি ঢুকে পড়ে অনেক গভীরে। বরিশাল লোনা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশী। এপ্রিল মাসে যশোর জেলার ৪০% এবং ফরিদপুর জেলার ১২% লবণাক্ততার দ্বারা প্রভাবিত হয়। সোজা কথায় সমগ্র উত্তর বাংলার কষি ব্যবস্থায় অচলাবস্থার সষ্টি হয়। মধ্য এপ্রিলে প্রায় ৮,৪২০ বর্গমাইল ৫০০ মাইক্রোমস, ৫,৭৬০ বর্গমাইল ২,০০০ মাইক্রোমস, এবং ৪,৮৫০ বর্গমাইল এলাকা ৫,০০০ মাইক্রোমস, লবণাক্ততার শিকারে পরিণত হয়। লবণাক্ততায় আক্রান্ত সমগ্র অঞ্চলটি ঘনবসতি এলাকা এবং আবাদযোগ্য ভূমির আওতায়। এর মধ্যে সন্দরবনের আয়তন রয়েছে মাত্র ১,৪০০ বর্গমাইল। হিসেবে দেখা যায়, দেশের সমগ্র আয়তনের প্রায় এক-সপ্তমাংশ ৫০০ মাইক্রোমস লবণাক্ততার আওতায় এবং ২,৬৬০ বর্গমাইল এলাকা অতীতের রেকর্ডের উপরের লবণাক্ততার শিকারে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ভূমি যথেষ্ট উর্বর হওয়া সত্ত্বেও শীত মৌসুমে পানির অভাবে এখানে কোন কিছুই জন্মানো সম্ভব নয়। তাই, পানি সেচের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নেয়া হয়েছিল গগা-কোবাডক প্রজেক্ট, ১৯৫৪ সালে। প্রজেক্ট অনুসারে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের ভাটিতে ভেড়ামারায় একটি পাম্প হাউস বসানো হয়। এই পাম্প হাউস থেকে বিভিন্ন সেচখালে পানি দেয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য। এ কমিটির বিস্তৃতি ব্যাপক এবং এর প্রাথমিক কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। এর আওতায় রয়েছে মোট ৫০০,০০০ একর জমি। তার মধ্যে কুষ্টিয়া ও যশোরের প্রায় ৩৫০,০০০ একর জমিতে সেচ করে প্রবৃদ্ধি হারে ৩৬০,০০০ টন শস্য উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। ‘৬৬ সালে গঙ্গার পানি হুগলী দিয়ে প্রবাহিত করার ফলে গঙ্গা-কোবাডক প্রজেক্ট পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে। ফলশ্রতিতে গঙ্গ-কোবাডক প্রজেক্টের মত গুরত্বপূর্ণ একটি প্রজেক্ট ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বসেছে। সুন্দরবনের জঙ্গল একটি বিশেষ লোনাপানির উপর নির্ভরশীল। লবণাক্ততার আধিক্যের জন্য সুন্দরবনের অনেক প্রজাতিই উধাও হয়েছে। এমনকি, বিখ্যাত সুন্দরী গাছের প্রজাতিও নষ্ট হয়েছে। খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের জন্য প্রয়োজনীয় গাছের প্রজাতির উপর নেমে এসেছে ভয়াবহ ধংসযজ্ঞ।
লোনাপানি ধাতব যন্ত্রাংশে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সোডিয়াম ক্লোরাইডের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় খুলনার অনেক কারখানাই বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থা একসময় এমন পর্যায়ে যায় যে, বাজে করে নির্মল পানি এনে কারখানা চাল রাখতে হয়। কিন্তু এভাবে ত’ চলতে পারে না। লবণাক্ততার ফলে গোয়ালপাড়ার পাওয়ার স্টেশনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কথায় আছে ভাতে-মাছে বাঙালী। এমন যে, মৎস্য সম্পদ তার উপরও ফারাক্কার বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। নির্মল পানির মাছেরা লোনাপানিতে টিকতে পারে না। লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব মাছেরা ধ্বংস পেতে থাকে। মৎস্য সম্পদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইলিশ বিখ্যাত। ইলিশ মাছ স্রোতের উজানে এসে নির্মল পানিতে ডিম ছাড়ে। কিন্তু পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং তা উজানে অনেক দূর পর্যন্ত আসতে ইলিশ মাছেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য, ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জন্য একটি অর্থকরী পণ্য। হুগলী নদী দিয়ে গঙ্গার পানিতে প্রবাহিত করার ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্যে ব্যাপক রদবদলের আভাষ লক্ষ্য করা গেছে। লোনাপানির প্রভাবে স্বাভাবিক গাছপালার প্রজাতি উধাও হয়ে যাওয়ার লক্ষণ পরিস্ফুট হয়। এভাবে বেশীদিন চললে এখানে লোনাপানির গল্মে জন্মানোই স্বাভাবিক। এতে করে এখানে একটি মরাভূমির আবির্ভাব হওয়াই স্বাভাবিক। ফারাক্কা এবং দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ‘ ১৯৬০ সালে ফারাক্কা প্রকল্পের শরর সময় থেকেই তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এ ব্যাপারে আপত্তি জানায়। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ একদিকে যেমন আলোচনায় বসতে রাজী হয়, অন্যদিকে তেমনি তাদের বাঁধ তৈরীর কাজও এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। সেই থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় অর্থাৎ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তানী কর্তৃৃপক্ষ এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে মোট দশটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ কোন সুরাহাই আসে না। বরঞ্চ ফারাক্কা বাঁধসহ সমগ্র প্রকল্পটিই এ সময়ে সমাপ্তির পর্যায়ে এসে পড়ে। এর মধ্যে শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ফলে ফারাক্কার ব্যাপারটি বেশ কিছুদিনের জন্য চাপা পড়ে যায়। পূর্বেকার প্রতিটি বৈঠকেই কে, কতটা পানি নেবে এ নিয়ে টালবাহানাই চলে। কিন্তু। সুনিদিষ্ট ঐক্যমতে আসতে অক্ষম হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ফারাক্কার ব্যাপারটি কয়েকদিন চাপা পড়ে থাকলেও ১৯৭৩ সালে পুনরায় প্রশ্নটি নিয়ে কথা ওঠে। এর মধ্যে ফারাক্কা প্রকল্পের প্রায় শেষ। চালু করার দিন সমাগত। পুনরায় শুরু হল পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা। এভারে প্রথম আলোচনটিই হয় মন্ত্রী পর্যায়ের। ১৯৭৩ সালের ১৬ ও ১৭ই জুলাই এই দু’দিন নয়াদিল্লীতে মোশতাক-শরণ সিং আলোচনা হয়। এর পরে রায়ে আরো দু’টি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি বিদেশ মন্ত্রীদের মধ্যে এবং দ্বিতীয় বৈঠকটি হয় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। এছাড়াও এর আগেই দু’দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন গঠিত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে যৌথ নদী কমিশন মোট ১৩ বার বৈঠকে বসে! ১৯৭৩-এর ১৬ ও ১৭ই জুলাইতে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, পানির সুষ্ঠু বণ্টন সম্পর্কে বাংলাদেশ আর ভারত একটি পারম্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানে না পৌছা পর্ষন্ত ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হবে না। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী গঙ্গার পানি সম্পর্কে একটি যুক্ত ইশতেহার প্রকাশ করেন। যুক্ত ইশতেহারে যৌথ নদী কমিশনের উপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়। তা সম্পাদন করার জন্য যৌথ নদী কমিশন ১৯৭৪ সালের জুন থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত মোট পাঁচবার বৈঠকে বসে। কিন্তু কমিশন দু’টি প্রস্তাব রাখলেও কোন ঐক্যমতে পৌছতে পারেনি। এ সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে দু’টো প্রস্তাব ছিল তা হল—এক, গঙ্গায় যথেষ্ট পরিমাণ পানি রয়েছে এবং দু’দেশের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব—ভরা মৌসুমে পানি জমিয়ে (স্টোরেজ) রাখার মাধ্যমে। দুই গঙ্গায় পানি বণ্টনের ব্যাপারে নেপালকে অন্তর্ভুক্ত করা। কেননা খরা মৌসুমে নেপালই হচ্ছে গঙ্গার পানির উৎসস্থল। তাই, এই আন্তর্জাতিক নদীটির পানি সদ্ব্যবহারের জন্য নেপালে প্রকল্প নেয়াই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু, ভারত দু’টো প্রস্তাবের কোনটিই মানতে রাজী হয়নি। এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রস্তাব ছিল—“ফারাক্কার উপরে সংযোগ খালের মাধ্যমে, ব্রহ্মপুত্রের পানি গঙ্গায় নিয়ে আসার। কিন্তু প্রস্তাব ছিল বাংলাদেশের জন্য আরো মারাতক। কারণ প্রথমতঃ, এই সংযোগ খাল ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানিপ্রবাহ কমিয়ে বহুবিধ জটিলতা ও সমস্যার সৃষ্টি করতে এবং দ্বিতীয়তঃ, ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি গঙ্গায় নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। খরা মৌসুমে গঙ্গার শাখা-প্রশাখা নদীসমূহ থেকেই গঙ্গার পানি ঘাটতি পূরণ সম্ভব। তাই সংযোগ খালের প্রস্তাব ছিল মূলতঃ অপ্রাসঙ্গিক। এর পর ১৯৭৫ সালের ২৪ ও ২৫শে ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে যৌথ নদী কমিশনকে পানি বণ্টনের জন্য ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। ১৯৭৫-এর ১৬ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। এ বৈঠকে একটি স্বল্পমেয়াদী চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের ১৮ই এপ্রিল থেকে ৩১শে মে পর্যন্ত মোট ৪৪ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বাঁধ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হগলী নদীতে এবং বাংলাদেশের অংশের গঙ্গা নদীতে কি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই ছিল বাঁধ খোলার মল উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে ফিডার ক্যানেল দিয়ে কি পরিমাণ পানি নেয়া হচ্ছে এবং কি পরিমাণ পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য এ ব্যাপারে একটি যৌথ পর্যবেক্ষক দল রাখারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৩১শে মে পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশ তাদের পর্যবেক্ষক রাখার প্রস্তাব দিলে ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে। অপরদিকে এর পরও তারা পূর্ণ পরিমাণে (৪০ হাজার কিউসেক পানি সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। অথচ তাতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছিল ৩১শে মে’র পর দু’পক্ষের আলোচনা বাড়া ফিডার ক্যানেল দিয়ে পানি প্রবাহিত করা যাবে না। ১৯৭৫ সালে বর্ষা মৌসুম এসে যাওয়ার একতরফা পানি সরিয়ে নেয়ার প্রতিকিয়া আচ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ‘৭৫-এর অক্টোবর থেকেই প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারীতেই হার্ডিঞ্জ ব্রীজের পানির উচ্চতা নেমে যায় মাত্র ২১ ফুটে। বাংলাদেশ এ প্রতিবাদ জানালে ভারত মোটামুটি নির্বিকার ভূমিকা নেয়। পরে ১৯৭৬ সালের ২৭শে এপ্রিল থেকে ২রা মে পর্যন্ত ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দল আসেন সরেজমিনে দেখার জন্য। কিন্তু পানি প্রত্যাহার তখনও অব্যাহত রয়েছে। এর পরে মে মাসের ৬ তারিখে বাংলাদেশ থেকে আলাপ-আলোচনা চালানোর জন্য একটি প্রতিনিধিদল কোলকাতায় গমন করেন। কিন্তু ৫ দিন আলাপ-আলোচনার পরও ভারত প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে কোন কথাই মানতে রাজী না হওয়াতে আলোচনা ব্যর্থ হয়। ১৯৭৬ সালের ১৮ই জুনে ভারতীয় বৈদেশিক নীতি নির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান মিঃ জি, পার্থ সারথীর নেতৃত্বে একটি শুভেচ্ছা প্রতিনিধিদল আসেন ঢাকায়। কিন্তু শুভেচ্ছা প্রতিনিধিদলটিও শুভেচছার নিদর্শন রাখতে ব্যর্থ হন। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ বাধ্য হয়েই ফারাক্কা প্রশ্নটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করে। এতদিনের দ্বিপাক্ষিক ব্যাপারটি এবারে আন্তর্জাতিক সমস্যায় রুপান্তরিত হয়। এ ব্যাপারেও ভারত, সোভিয়েত রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহের সমন্বয়ে বাগড়া দেয়। তবে সমস্যাটি জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক কমিটিতে স্থান পায় এবং সেখানেই নির্ধারিত হয়—দু’পক্ষই সমস্যা সমাধানে ত্বরিত পদক্ষেপ নেবে। সমাধানে অপারগ হলে জাতিসংঘ পুনরায় ব্যাপারটিকে পর্যালোচনা করবে। এ সিদ্ধান্ত অনুসারেই ১৯৭৬ সালের ৫ই ডিসেম্বরে ভারতের সেচমন্ত্রী মিঃ জগজ্জীবন রাম ঢাকায় আসেন মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনার জন্য। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় পুনরায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। নিম্নে এ নিয়ে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকের হিসেব দেয়া হল)। গঙ্গায় পানি ৰণ্টনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের বৈঠকের পর্যায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ১ম বৈঠক নয়াদিল্লী বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ২য় বৈঠক ঢাকা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ৩য় বৈঠক কোলকাতা। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ৪র্থ বৈঠক ঢাকা। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ৫ম বৈঠক নয়াদিল্লী। সময়কাল ২৮শে জুন—৩রা জুলাই, ১৯৬০ ১-৩রা অক্টোবর, ১৯৬০ ২৮–৩০শে এপ্রিল, ১৯৬১ ২৭শে ডিসে, ১৯৬১-জান.; ১৯৬২ , ১৩–২৬শে মে, ১৯৬৮ সচিব পর্যায়ের ১ম বৈঠক নয়াদিল্লী সচিব পর্যায়ের ২য় বৈঠক ইসলামাবাদ সচিব পর্যায়ের ৩য় বৈঠক নয়াদিল্লী সচিব পর্যায়ের ৪থ বৈঠক ইসলামাবাদ সচিব পর্যায়ের ৫ম বৈঠক নয়াদিল্লী ৯-১৯শে ডিসেম্বর, ১৯৬৮ ২১-২৫শে মার্চ, ১৯৬৯ ১৫-২৬শে জুলাই, ১৯৬৯ ২৪শে ফেব্রুয়ারী-২রা মার্চ, ১৯৭০ ১৬-২১শে জুলাই, ১৯৭০ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক (মোশতাক-শরণ সিং) নয়াদিল্লী বিদেশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ঢাকা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক (মুজিব-ইন্দিরা) নয়াদিল্লী যৌথ নদী কমিশনের ৮ম বৈঠক ঢাকা, যৌথ নদী কমিশনের ১ম বৈঠক কোলকাতা, যৌথ নদী কমিশনের ১০ম বৈঠক ঢাকা, ১৬-১৭ই জুলাই, ১৯৭৩, ১৩–১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৪, ১২-১৬ই মে, ১৯৭৪, ৬–১২ই জুন, ১৯৭৪ ১৭ই জুলাই, ১৯৭৪ ২৯শে আগস্ট—২রা সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ নদী কমিশনের একাদশ বৈঠক নয়াদিল্লী-ঢাকা, নদী কমিশনের দ্বাদশ বৈঠক নয়াদিল্লী, মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক (সেরনিয়াবত-জগজ্জীবন) নয়াদিল্লী ঢাকা, ২৮শে সেপ্টেম্বর—৪ঠা অক্টোবর, ১৯৭৪, ১৬-২০শে নভেম্বর, ১৯৭৪ ৩১শে ডিসে, ১৯৭৪-৭ই জানু, ১৯৭৫ ২৪-২৫শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৫ ১৬-১৮ই এপ্রিল, ১৯৭৫, যৌথ নদী কমিশনের প্রয়োদশ বৈঠক ঢাকা, উচ্চ পর্যায়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল ঢাকা, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কোলকাতা, ভারতীয় শুভেচ্ছা প্রতিনিধিদল (এম, এইচ, খান—পার্থ) ঢাকা। ১৯-২১শে জুন, ১৯৭৫ এপ্রিল, ২৭ মে, ২, ১৯৭৬ ৬-১১ই মে, ১৯৭৬ ১৮-২২শে জুন, ১৯৭৬
ভারত ফারাক্কার পানি প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশে নদীর স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তন ঘটে ব্যাপক। একতরফা পানি প্রত্যাহারে ডিসেম্বরের অবশ্য সৃষ্টি হয় নভেম্বরে। জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারীর পরিস্থিতি দেখা দেয় ডিসেম্বরেই। অন্যদিকে জানুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত খরা মৌসুমে বাংলাদেশকে দারুণ জলকষ্ট সহ মারাত্নক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিভিন্ন সময়ের স্বাভাবিক পানির ও ভারতের একতরফা প্রত্যাহারের পরের পানির পরিমাণ নীচে দেয়া হল। (সারণী দ্রষ্টব্য),
মাস ও সময় -ফারাক্কায় অবশ্য প্রাপ্য পানি(কিউসেক)-ফারাক্কায় ৪০ হাজার কিউসেক প্রত্যাহারের পর পানির পরিমাণ (কিউসেক)

নভেম্বর/৭৫
(১-১০) ২৩২,০০০ ১১২,০০০
(১১-২০) ১৯৫,০০০ ১৫৫,০০০
(২১-শেষ) ১৬৫,০০০ ১২৫,০০০
ডিসেম্বর/৭৫
(১-১০) ১৪৫,০০০ ১০৫,০০০
(১১-২০) ১২৭,০০০ ৮৭,০০০
(২১শেষ) ১১১,৫০০ ৭১,০০০
জানুয়ারী/৭৬
(১-১০) ১৮,৫০০ ৫৮,৫০০
(১১-২০) ৮৯,৭৫০ ৪৯,৭৫০
(২১-শেষ) ৮২,৫০০ ৪২,৫০০
ফেব্রুয়ারী/৭৬
(১-১০) ৭১,২৫০ ৩৯,২৫০
(১১-২০) ৭৪,০০০ ৩৪,০০০
(২১শেষ) ৭০,০০০ ৩০,০০০
মার্চ/৭৬
(১-১০) ৬৫,২৫০ ৩১,২৫০
(১১-২০) ৬৩,৫০০ ২৩,৫০০
(২১শেষ) ৬১,০০০ ২১,০০০
এপ্রিল/৭৬
(১-১০) ৫৯,০০০ ১৯,০০০
(১১-২০) ৫৫,৫০০ ১৫,৫০০
(২১শেষ) ৫৫,০০০ ১৫,০০০
মে/৭৬
(১-১০) ৫৬,৫০০ ১৬,৫০০
(১১-২০) ৫৯,২৫০ ১৯,২৫০
(২১-শেষ-) ৬৫,৫০০ ২৫,৫০০
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কাছে রেকর্ডকৃত পানির উচ্চতা
সময় অন্যান্য বছর (ফুটে) ১৯৭৫/৭৬
৫ ডিসেম্বর ৩০.২

২৬.৮
১৫ ডিসেম্বর ২৯.১ ২৫.৮
২৫ ডিসেম্বর ২৮.২ ২৪.৬
৫ জানুয়ারী ২৭.৯ ২৩.১
১৫ জানুয়ারী ২৭.৬
২১.৮
২৫ জানুয়ারী ২৬.৮ ২০.৯
একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ফারাক্কা সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানে বিশ্বাসী। ফারাক্কার প্রয়োজনীয় জল থেকে আমরা কাউকে বঞ্চিত করতে চাই না। কিন্তু এটাও চাই না যে, কেউ আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করুক। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী গত বছরের (৭৬) ডিসেম্বর মাসের শেষ দশ দিনে হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে গঙ্গার গড়পড়তা পানিপ্রবাহের পরিমাণ দড়ািয় ৭৪,০০০ কিউসেক। ১৯৭৫ সালে অনুরপ সময়ে এই পানি- প্রবাহ ছিল ৯৭,২০০ কিউসেক। ফলশ্রুতিতে এবারের শুকনো মৌসুমে ১৯৭৬ সালের শুকনো মৌসুমের চেয়ে অনেক মারাত্নক রুপ নিয়ে দেখা দেবে। একটা মারাত্নক প্রতিকুল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আর ফারাক্কা সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। ভারত যদি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে মেনে নিয়ে ফারাক্কা সমস্যার সমাধানে পুনর্বার আলোচনা বৈঠকে না বসে, তাহলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দেশকে ভিন্ন ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিতে হবে।
অর্থনীতি
মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে প্রায় বছরাধিক সময়ের যুদ্ধে শেষাবধি বিজয় বিঘোষিত হল। কেবলমাত্র দ্রব্যমূল্য হ্রাস নয়, বরং হ্রাসকে স্থায়ী করতে পারাই ছিল এ বিজয়ের প্রকাশ। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সার্থক। দুব্যমূল্যে যতটুকু পতন ঘটেছে, অর্থনৈতিক বিচারে তা যথেষ্ট, যদিও শতকরা আশিজন জনগণের জন্যে তা কোনদিক থেকে তেমন সুবিধা দিতে পারেনি, পেরেছে কেবল একটু আশা জাগাতে যে, আর মুল্যবৃদ্ধি না-ও ঘটতে পারে। ১৯৭৬-এর জন্ম সেই আশাবাদ নিয়ে। যদিও বছরের প্রতিটি দিন গেছে সন্দেহসংকুল। কোন কোন, দ্রব্যের দাম বেড়ে যেতে চেয়েছে। যেমন শুকনো মরিচ এবং মশুর ডাল। বেড়ে গেছে মাছ ও মাংসের দাম। ১৯৭৫-৭৬-এ মোট জাতীয় উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সর্বপ্রথম সত্যিকারের উন্নতি ঘটেছে। পববর্তী বছরের তুলনায় প্রকৃত বৃদ্ধি ঘটেছে ১১.৪ শতাংশ। তার আগের বছর বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল মাত্র দুই শতাংশ। ১৯৭৬-৭৭ সালে প্রকৃত বৃদ্ধি ঘটবে পাঁচ শতাংশ বলে আশা করা যায়। গড় হিসাবে ১৯৭৬ সালে মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে আট শতাংশ। এদের মধ্যে কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ সর্বাধিক। অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি জিডিপি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রয়োজনাতিরিক্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থ সরবরাহ বেড়েছে মাত্র দুই শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা জিডিপি বৃদ্ধির উপরও দুই শতাংশ অর্থ বৃদ্ধি অনুমোদন করে থাকেন। সে অনুসারে অর্থ বৃদ্ধি দশ শতাংশ হতে পারতো। কিন্তু যেহেতু মূল্যস্তর এখনো অধিক সেহেতু অর্থকে ততটা বাড়তে দেয়া হয়নি। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যেতে পারে। এদিকে অর্থ পরিক্রমণ বা ভেলোসিটি হ্রাস পেয়েছে, কেননা অর্থের প্রতি জনগণের কিছুটা আস্থা বেড়েছে। অর্থ কর্মের সাথে পরিক্রমণ কমাতে দেশে ১৯৭৫-এর মন্দা অবস্থা। ১৯৭৬-এর দীর্ঘ সময় ধরে বলবত থাকে। পাইকারী বাজারে ব্যবসা পড়ে রয়েছে অনেকটা নীচে। আমদানীরফতানীতে মুনাফা হার হ্রাস ঘটেছে। ফলে হ্রাস পেয়েছে উৎসাহ। মন্দা অবস্থাকে কাটিয়ে উঠতে কিছুটা মুল্য বৃদ্ধি যুক্তিসংগত। জীবনযাত্রার ব্যয়ে সর্বসময় হ্রাস ঘটেছে একথা বলা ঠিক হবে না। ঢাকার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এ সচী লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ডিসেম্বর ১৯৭৫ এর তুলনায় সূচির ক্রমিক হ্রাস মার্চ, ১৯৭৬ পর্যন্ত চলে। তারপর একটু বুদ্ধির মধ্যে দিয়ে থাকে স্থায়িত্ব। অবশ্য শেষদিকে আরও কিছুটা বেড়ে যাওয়ার ঝুকি নেয় অর্থনীতি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অনেকটা একই পরিস্থিতি থাকে। নীচের তালিকা থেকে তা পরিষ্কার হবে।

সময় ঢাকার মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রা ব্যয়সূচি
১৯৭৬ জীবনযাত্রার দেশীয় গড় সূচি
১৯৭৬ জীবনযাত্রার দেশীয় গড় সূচি
১৯৭৫
জানুয়ারি ৩৭৫ ৩৫৯ ৪৯৪
ফেব্রুয়ারি ৩৭১ ৩৫৭ ৪৬৪
মার্চ ৩৫৮ ৩৩৯ ৪৬৫
এপ্রিল ৩৬০ ৩৩৯ ৪৪৩
মে ৩৬৭ ৩৪৫ ৪৩১
জুন ৩৬৬ ৩৪৫ ৪২৯
জুলাই ৩৭২ ৩৪৯ ৪৩০
আগস্ট ৩৭৮ ৩৫৮ ৪১৪
সেপ্টেম্বর ৩৮১ ৩৬০ ৩৮৯
অক্টোবর ৩৮০ ৩৮০ ৩৯১

বছরের শেষদিকে সূচী বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা বিপদের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সরকারী উপস্থিত কর্মপ্রণালী তাকে কিছুটা সংযত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। দেশীয় স্বার্থে এবং মন্দা অবস্থা কমাতে অর্থ সরবরাহ বাড়তে থাকে। এ বৃদ্ধি ব্যাংক আমানতে প্রসারণের ফলে সম্ভব হয়। ব্যাংক আমানত বৃদ্ধি প্রধানতঃ মূল্য হ্রাসের এবং সুদের হারে এক শতাংশ বৃদ্ধির কারণে সম্ভব হয়। ঋণ বৃদ্ধির পিছনে কারণ ছিল নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির নির্বাচিত শিথিলীকরণ।
(কোটী টাকায়)

অর্থ সরবরাহ ব্যাংক আমানত ব্যাংক ঋণ
জানুয়ারী ১৯৭৬ ৯৩৫ ১০৪৯ ১০৯১
মার্চ ৯৩০ ১০৭৮ ১১৩৫
জুন ৯০১ ১১০০ ১০৬৫
সেপ্টেম্বর ৯৪৬ ১১৩০ ১০৯২
অক্টোবর ৯৫৩ ১১৯৪ ১১৩৬

মূল্য হ্রাসের ফলে সব থেকে লাভবান হয়েছে নির্ধারিত আয়ের জনগণ। এরা সাধারণতঃই চাকুরীজীবী। এ কারণে তরুণ শ্রেণীর যে বিরাট অংশ তথাকথিত ব্যবসায় ঝুকে পড়েছিলেন তারা আবার চাকুরীতে উৎসাহী হয়েছেন। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়েনি। উচ্চবিত্ত এবং ব্যবসায়ীরা হয়েছে সাময়িকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, তারাও প্রকৃত অর্থে হয়েছে লাভবান। কৃষক শ্রেণীর অনেকেই মুল্য হ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে যারা কৃষিজাত দ্রব্যাদি বিক্রি করে তাদের পণ্যের বদলে এখন অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম দাম পাচ্ছে। ফলে তাদের প্রকৃত আয়ে পতন ঘটেছে। এ বছরের বাজেটে, তদুপরি সারের উপর ভর্তুকি তুলে দেয়ায় উৎপাদনের খরচাও গেছে কিছুটা বেড়ে। অবশ্য কৃষি ঋণ বাড়াবার জন্যে সরকারী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ধরনের চেষ্টা চলছে। কৃষক শ্রেণীর এই লোকসান কিন্তু জাতীয় আয়কে কমিয়ে দিয়েছে। শহর অঞ্চলের শ্রমজীবীর অনেকেই হয়েছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে লাভবান। যেমন রিক্সার ভাড়া কমেনি, ফলে প্রকৃত আয় রিক্সা শ্রমিকদের সামান্য বেড়েছে। আর লাভবান হয়েছেন যারা পুজির উপর মুনাফা করে, তারা। যেমন দ্রব্যাদির দাম কমায় সগদের প্রকৃত হার বেড়ে গেছে। বাড়ীভাড়া না কমায় বাড়ীওয়ালারাও হয়েছে লাভবান। কৃষিজাত দ্রব্যাদির দাম কমেছে আবার অন্যদিকে উৎপাদন বেড়েছে। ১৯৭৬-এর আমন ধান যথেষ্ট ভাল হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১৯৭৫-৭৬ সালে ষোল শতাংশ ও ১৯৭৬-৭৭ সালে ২.৬ শতাংশ। সরকারী খাতে আর ঢালাও ঋণ দেয়ার নীতি বলবৎ না থাকায় এবং অধিকতর যোগ্য রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রেক্ষিতে শিল্প প্রশাসনের রদবদল ও উন্নয়নের ফলে শিল্প উৎপাদন বেড়েছে। অধিক মূল্য কাঁচামাল এবং স্বল্পমূল্যে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের ১৯৭৫ সালের সমস্যা কমে গেছে। শিল্প-অসন্তোষ কিছু কমেছে। হয়েছে কর্মক্ষমতার অধিকতর সদ্ব্যবহার। আমদানী নীতির সুষ্ঠুতা এবং ওয়েজ আর্নার স্কীমের সুযোেগ থাকায় কাঁচামালের এবং যন্ত্রাংশের সরবরাহ বেড়েছে। রফতানীর পরিমাণ ও পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেশী হয়েছে। ডলারের হিসাবে দেখলে আমদানী-রফতানীতে বৃদ্ধির পরিমাণ নীচের তালিকা থেকে পরিষ্কার হবে।
(কোটি ডলার)
১৯৭৪-৭৫ ১৯৭৫-৭৬
রফতানী ৩৩.৭ ৩৭.৪
আমদানী ১১৯.০ ১২৭.০

রফতানীকৃত প্রধান দ্রব্য রছে গেছে কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য, এছাড়া চা, চামড়া, মাছ, কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট রফতানী হয়েছে। শেষ দ্রব্য দু’টি রফতানী অবশ্য ১৯৭৫-৭৬ সালে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। কাঁচা পাট থেকে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবরের শেষ তারিখ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে ১২৫.০৫ কোটি টাকা। ঐ একই সময় পর্যন্ত পাটাজাত দ্রব্য থেকে অর্জনের পরিমাণ হয়েছে ২৭১.৬৩ কোটি টাকা। চায়ের রফতানী থেকে অর্জনের পরিমাণ হয়েছে ২৩.৬৩ কোটি ১ টাকা। লেন-দেনের ভারসাম্যে হয়েছে পরিবর্তন।
(লক্ষ টাকায়)
জানুয়ারী হতে মার্চ, ১৯৭৬ মার্চ হতে জুন ১৯৭৬
পণ্যাদি এবং সেবা (নীট) -২৮৯৮৬ -২২০২৯
ট্রান্সফার পেমেন্ট (নীট) +১১১১৮ +৭৬১৫
মূলধন লেন-দেন (নীট) +১৪৯৯২ +১৮০৭৪
মোট -২৮৭৬ +৩৬৬০
মুদ্রা গতিধারা +৩৫৮৭ -৫০১৮
ক) বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ -২২৮৮ +৯০৮১
(অনুমোদিত ডিলার বাদে) খ) অন্যান্য +৫৮৭৫ +৪০৬৩
অবশিষ্ট -৭১১ +১৩১৬
এই ঘাটতি পূরণের জন্যে নির্ভর করতে হয়েছে বৈদেশিক সাহায্যের উপর। বিশেষ করে আই, এম, এফ-এর উপর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সহজ শর্তে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানীর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ অপেক্ষাকৃত কম পড়েছে। বৈদেশিক ঋণের সুদ ইত্যাদি দিতে মোট বৈদেশিক আয়ের ১৫% থেকে ২০% ব্যয় হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ অবশ্য বেড়েছে, প্রধানতঃ আই, এম, এফ, ড্রইং এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে। ডলারের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের বিবরণ দেয়া যায়।
(কোটি ডলার)
১৯৭৫-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯৭৬-এর আগস্ট পর্যন্ত
বৈদেশিক মুদ্রা ১৪.৮৩ ২৬.৫৪
এস, ডি, আর, ১.৮১ ২.৫৭
অন্যান্য মুদ্রা ১৩.০২ ২৩.৯৭
আই, এম, এফ, থেকে গ্রহণ ২২.২২ ২৯.২৭
কমপেনজেটরী ৭.৩২ ৯.৮৯
তেল সুবিধা ৯.০৫ ১০.৫৮
তেল উৎপাদনকারী মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ থেকে পাকিস্তান যে পরিমাণ অর্থ সাহায্য পেয়েছে সে তুলনায় বাংলাদেশের প্রাপ্তির পরিমাণ কম হলেও ১৯৭৬ সালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নয়ন ঘটেছে। আরব অর্থের সঙ্গে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় পাঁচশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে একটি ইউরিয়া তৈরী কারখানা হবে। এটি অবশ্য বাংলাদেশভারত যৌথ সহযোগিতায় হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারতীয় অনীহার জন্যে অবশেষে এভাবেই হওয়ার কথা। এ কারখানা তৈরী হলে ১৯৮০ সাল নাগাদ দেশীয় আট লক্ষ টনের তখনকার চাহিদা মিটিয়েও বাংলাদেশ রফতানী করতে পারবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এদিকে টাকার দাম বেড়েছে। স্বাধীনতার পুর থেকে এক পাউণ্ড সমান ১৮.৬ টাকা ছিল। দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি এবং আন্তর্জাতিক লেন-দেনে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ায় প্রকৃতপক্ষে টাকার মান অনেক কমে যায়। এ অবস্থার স্বীকতি দিয়ে মে, ১৯৭৫-এ টাকার মালকে কমিয়ে এক পাউণ্ড সমান ত্রিশ টাকা করা হয়েছিল। ১৯৭৬-এ একদিকে আমদানী-রফতানীর আনুপাতিক সুস্থতা এবং অন্যদিকে মুল্য পরিস্থিতির উন্নতির ফলে টাকার উন্নয়ন ঘটে। আবার পাউণ্ডের মুল্যে হ্রাস ঘটতে থাকে। এ অবস্থায় এপ্রিল, ১৯৭৬-এ এক পাউণ্ড সমান ২৮.৯০ টাকা এবং পরে জুনে ২৬.৭০ টাকা করা হয়। একই সঙ্গে পাউন্ডের চেয়ে উলারে পাট ইত্যাদি রফতানী পণ্যের মূল্য ঘোষণা করার নীতি নেয়া হয়। কেননা টাকাকে একবারে, পাউন্ডের থেকে ডলারের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা সম্ভব ছিল না, যদিও ডলারের সঙ্গে সম্পর্কিত করা অধিকতর সুবিধাজনক। পরিস্থিতির আরও পরিবর্তন ঘটেছে। পাউন্ডের মূল্যে হ্রাস ঘটেছে। বাংলাদেশী মুদ্রা ডলারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার সময় এসেছে। ইতিমধ্যে আবারও টাকার দামকে বাড়িয়ে দেয়া হয়। নভেম্বরের ‘দুই তারিখ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এক পাউন্ড সমান বাংলাদেশী ২৫.৪৫ টাকা করা হয়েছে। এভাবে বার বার পুননির্ধারণ দেশীয় আমদানী-রফতানীর জন্যে অসুবিধাজনক। এ জন্যে অর্থনীতিবিদরা টাকাকে নিজের স্বার্থে অন্য কোন মুদ্রামানের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার প্রয়োজন কি না ভেবে দেখছেন। এ বছর আউশ ধানের উৎপাদন যদিও ৭.১২% কম হয়েছে, তবুও আমন ধানের উৎপাদন বেড়েছে, ২.৮২%। বোরো ও গম উৎপাদন বাড়ায় মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে গত বছরের তুলনায় শতকরা ৩ ভাগ বেশী। উৎপাদন বেশী হওয়ায় এবং আগামী মৌসুমে অনিশ্চিত থাকায় খাদ্য সংগ্রহ অভিযান চালু করা হচ্ছে। সংগ্রহ: মূল্য বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশী রাখা হয়েছে যাতে কৃষকরা ভর্তুকি পেতে পারেন। আমন ধানের মনপ্রতি দাম ধরা হয়েছে ৭০ টাকা, নিম্নমানের চালের মূল্য ১১৮ টাকা এবং মধ্যম ধরনের চালের মূল্য ১২০ টাকায় নির্ধারিত হয়েছে। সরকারী অভিযান ছাড়াও ব্যক্তিগত খাত যাতে খাদ্য সাময়িককালের জন্যে মজুদ করতে পারে তার জন্যে নির্ধারিত সময় ফেরত দিতে হবে এ রকম ব্যাংক ঋণ দেয়া হচ্ছে। এ নীতির ঝুকি অনেক। তবু তার উপর কড়া নজর রাখলে হয়তো কল্যাণ আনবে। সরকারী খাতে শিল্প পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নয়ন ঘটেছে। ব্যক্তিগত খাতে শিল্পােন্নয়নের জন্যে বিনিয়োগ সীমাকে দশ কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। বৈদেশিক সাহায্য ও যুক্ত প্রচেষ্টাকে করা হয়েছে উৎসাহিত। স্টক এক্সচেঞ্জ প্রকৃত অর্থে কখনো এদেশে ছিল না । পাকিস্তানের সময় ঢাকায় যে স্টক-অফিস ছিল তাতে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান তফশীলভুক্ত ছিল না বললেই চলে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানী শিল্পগুলো করাচী স্টক-এক্সচেঞ্জের অধীনে থাকায় ঢাকার অফিস এক কথায় কর্মহীন থাকে। স্বাধীনতার পর সমাজতান্ত্রিক নীতি আদর্শ সোচ্চার থাকায় স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমান সরকারী নীতি ব্যক্তিগত খাতে শিল্প তৈরীর জন্যে পুনরায় এক্সচেঞ্জ খুলেছে, যদিও এখন পর্যন্ত তার কোন কর্ম তৎপরতা দেখা যায়নি। বিনিয়োেগ কর্পোরেশন পুনস্থাপন ও একই উদ্দেশ্যের আর একটি প্রচেষ্টা। তবু ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে আশানরুপ সাড়া জাগেনি। কর ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্যে নতুন ট্যাক্স কমিশন স্থাপিত হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা কমিশন খুব শীগগীরই দেবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে যেটকু সংশয় রয়ে গেছে তা এখনই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক স্থিতিই হচ্ছে বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রথম শর্ত। অর্থনীতি সমাজতান্ত্রিক না পুজিবাদী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে মতাদর্শের কুয়াশাচ্ছন্ন ঘুটিয়ে শোষণ চালাবার উদ্দেশ্যে সমাজতন্ত্রের নামে যে অর্থনীতি পরিচালিত হয়েছিল তা সম্ভবতঃ পুজিবাদের চেয়েও ঘৃণ্য। বর্তমান বছরই আগামী অর্থনীতিকে নির্ধারণ করবে। সুতরাং ১৯৭৬ হচ্ছে আগামী অর্থনীতির সুদঢ় ভিত্তির গোড়াপত্তন। ১৯৭৬-ই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোনালী স্বপ্নের সুত্রপাত।
কৃষি
বাংলাদেশের মূল ও প্রধান অর্থনৈতিক খাত কৃৃষি। কৃষির উপরেই দেশের অর্থনীতি এমনকি রাজনীতি নির্ভর করে। দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশ এসে থাকে এ খাত থেকে, এবং মোট জনসাধারণের ৮০ শতাংশ লোকই এর উপর নির্ভর করে জীবনধারণ করে। সুতরাং সামগ্রিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে কৃষি উন্নয়নের উপর, এ জন্যেই এ খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়। বাজেটে কৃষি উৎপাদনের যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তা নীচে দেয়া হল :

কৃষি উৎপাদন ‘৭৩-৭৪ ‘৭৪-৭৫ ‘৭৫-৭৬ ‘৭৬-৭৭
খাদ্যশস্য (লক্ষ টন) ১১৮ ১১৫ ১২৯ ১৩১
কাঁচা পাট (লক্ষ বেল) ৬০ ৪০ ৪৪ ৫১
চা (লক্ষ পাউণ্ড) ৬৬০ ৭২০ ৬৭০ ৭১০
শতকরা পরিবর্তন
কৃষি উৎপাদন ১১ -২ ১৬ ২৬
জিডিপি ১২ ২ ১০ ৫
গত অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে ভবিষ্যদ্বাণীর তুলনায় উৎপাদন মাত্রা বেশ বেশী হয়। এবং আগামী অর্থবছরের উৎপাদনের পরিমাণও বেশী হতে পারে বলে ধারণা করা যায়, যদিও বন্যা এবং ফারাক্কা সমস্যা পরিস্থিতিকে অনেকটা নাজুক করেছে। জিডিপি ১৯৭৫-৭৬-এ যে রকম পরিকল্পিত মাত্রাকে ছাড়িয়ে ১১.২ শতাংশ বেড়েছে তেমনি ধান উৎপাদনও বেশী হয়েছে এবং হতে পারে। ১৯৭৬-৭৭ সালে ধানের জমি চাষের পরিমাণ প্রায় ১৩৬ লক্ষ একর বেড়ে ২৫৬০ একরে দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়। গম চাষের জমির পরিমাণও এক লক্ষ একর বেড়ে চার লক্ষ তেরো হাজারে দাঁড়াবে। উৎপাদনের পরিমাণও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দুই লক্ষ আঠারো হাজার হতে পারে। ১৯৭৫-৭৬-এ কাঁচা পাটের উৎপাদন বেড়েছে তেরো শতাংশ, আখ কমেছে ১১.৩ শতাংশ এবং চা। কমেছে প্রায় সাত শতাংশ। চায়ের উৎপাদন অবশ্য আগামী বছর আবার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়। চায়ের উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্যে ১৯৭৬-৭৭ সালে প্রায় ত্রিশ কোটী টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে ত্রিশ লক্ষ টন। গত বছরের তুলনায় দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টন বা ৭.১২% কম উৎপাদন হয়েছে। গত বর্ষায় অত্যাধিক পানি আগমনের ফলে এবং সময়মত যথেষ্ট পরিমাণ পানি না পাওয়ায় উৎপাদন কম হয়। আসছে শীতে আমন ধানের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা যায়। গত বছরের তুলনায় প্রায় দুই লক্ষ টন বা ২.৮২% উৎপাদন বেড়ে প্রায় ৭২.৪৪ লক্ষ টন হবে বলে আশা করা যায়। বোরো উৎপাদনের পরিমাণও বাড়বে। গত বছর ছিল ২৩ লক্ষ টন, এ বছর ২৬.৪০ লক্ষ টন।
(লক্ষ টনে)
১৯৭৬ ১৯৭৫
আউশ ৩০.০০ ৩২.৩০
আমন ৭২.৪৪ ৭০.৪৫
বোরো ২৬.৪০ ২২.৮৭
গম ২.৭৩ ২.১৫
মোট ১৩১.৫৭ ১২৭.৭৭
উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধি অনেকটা প্রাকৃতিক ঘটনার উপর নির্ভর করে। অর্থনৈতিক কারণগুলি যে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে তা নয়। যেমন ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে পাটের চেয়ে ধানের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ১৯৭৫-৭৬-এ ধান চাষের এবং উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু এর ফল হয় উৎপাদক চাষীদের জন্যে কিছুটা বিরপ। অন্যান্য দ্রব্যাদির তুলনায় , কেবলমাত্র তাদের উৎপাদিত পণ্য ধানের দাম কমে যাওয়ায় তাদের প্রকৃত আয় হ্রাস পায় ফলে তারা অধিকতর অর্থনৈতিক কষ্টে ভোগে। এ সমস্যা সমাধানের জন্যে সরকার অবশ্য কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় (এ সম্পর্কে আলোচনা হবে)। কিন্তু তা সত্তেও সমস্যা অনেকটাই রয়ে যায়। উৎপাদন বৃদ্ধির পথ হিসাবে বাংলাদেশের মোট পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তন থেকে চাষযোগ্য নতুন জমি খুব বেশী বের করা সম্ভব নয়। তদুপরি জনসংখ্যার ঘনত্ব ও দৈনন্দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্যে জমির উৎপাদন বাড়ানো দরকার, যা নির্ভর করে আধুনিক পদ্ধতির চাষ, ভাল সার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিবিদ্যার উপর ; পানি সেচ ও নিষ্কাশনে উপর, ভাল ধরনের বীজের উপর। ১৯৭৫-৭৬ সালে অবশ্য ধান চাষের জমির পরিমাণ এবং একর প্রতি উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে আরও কয়েকটি কৃষিজাত পণ্যের। এ সম্পর্কে আমরা তথ্য পেতে পারি।

চাষ জমির পরিমাণ (কোটি একর) উৎপাদন একরপ্রতি উৎপাদন(মণ)
ধান কোটি টন
১৯৭৫-৭৬ ২.৫৫ ১.৩১ ১৪,০৬
১৯৭৪-৭৫ ২.৪২ ১.১১ ১২,৫০
গম কোটি টন
১৯৭৪-৭৫ ০.০৩ ০.০১ ১০.০৪
১৯৭৫-৭৬ ০.০৪ ০.০২ ১৪,৫১
পাট কোটি বেল
১৯৭৪-৭৫ ০.১৪ ০.৩৯ ১৩,৩৫
১৯৭৫-৭৬ ০.১৫ ০.৪৩ ১৫,১০
চা কোটি পাউন্ড
১৯৭৪-৭৫ ০.০১ ৭.০৯ ৮,০৪
১৯৭৫-৭৬ ০.০১ ৬.৬২ ৬,৩৩
আখ কোটি টন
১৯৭৪-৭৫ ০.০৩ ০.৬৬ ৪৭৫,৮৫
১৯৭৫-৭৬ ০.০৩ ০.৫৮ ৪৭৫,৪০

ভাল বীজ ব্যবহারের জন্যে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ইতিমধ্যে কিছুটা উন্নত ধান বীজ আবিষ্কৃত হয়েছে। জনপ্রিয়তা পাওয়া সত্তেও এখনো এ ধরনের উন্নত বীজের ব্যবহার মোট ধানী জমির এগারো শতাংশের বেশী হয়নি। তুবও মোট ধান উৎপাদনে এদের অবদান পচিশ শতাংশের বেশী। তবু তা এখনো যথেষ্ট নয়। গভীর পানিতে ধান চাষ একটা সমস্যা। ষাট লক্ষ একর জমিতে গভীর পানির মধ্যে ধান হয়। অবশ্য উৎপাদন হয় কম, একরপ্রতি এক টনের কম। দুই টন করতে পারলে সমস্যা অনেকটা লাঘব হয়। অধিক উৎপাদনে সার ব্যবহারের গুরুত্ব অত্যাধিক হওয়া সত্তেও ঘোড়াশাল সার কারখানায় বিস্ফোরণ এবং আমদানীর অসুবিধার জন্যে ১৯৭৪-৭৫ সালে মাত্র ২.৮২ লক্ষ টন সার সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৭৫-৭৬ সালে মোট সার বণ্টনের কথা চার লক্ষ টন, সম্ভবতঃ ১৯৭৬ সালে পরিকল্পিত বন্টনের চেয়ে বেশী বণ্টন হবে। ১৯৭৬ সালে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের জন্যে পাম্পের পরিমাণও বেড়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষিতে মোট ঋণ সরবরাহের জন্যে পরিকল্পনা তৈরী করে। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের তুলনায় ঋণদান পরিকল্পনা ১৯৭৬-৭৭ সালের জন্যে বেশী। অবশ্য প্রকৃত ঋণ বণ্টন ঋণ পরিকল্পনা থেকে অনেকটা পিছিয়ে আছে।
কৃষিতে ঋণদান পরিকল্পনা (কোটী টাকায়)

১৯৭৫-৭৬ ১৯৭৬-৭৭
বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ব্যাংক ১৫.৫০ ২০.০০
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ২২.০০ ২৫.০০
জাতীয়কৃত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ১২.০৬ ২৮.৩৫
মোট ৪৯.৫৭ ৭৩.৩৫
পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ১৯৭৬-৭৭ সালে ঋণদান পরিকল্পনা অনেকটা বেশী, যেমন বেশী ছিল ১৯৭৫-৭৬-এর পরিকল্পনা তার পূর্ববর্তী বছরের থেকে অধিক। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রকৃত ঋণদান হয় ১৬.২০ কোটী টাকা। যার মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক দেয় ৭.৮৫ কোটী টাকা। এই সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট কৃষিক্ষেত্রে এই ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় কোটী টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কৃষিক্ষেত্রে আগে ঋণ দিত না। সমবায় ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংক এক্ষেত্রে যথেষ্ট না হওয়ায় ইদানিং এই জরুরী খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিও এগিয়ে এসেছে। ধান চাষে ১৯৭৫ সালের সমস্যা ১৯৭৬ সালেও রয়ে গেছে। চালের দাম ১৯৭৫-এর জানুয়ারীর তুলনায় ১৯৭৬ সালে যেখানে কমেছে ৭০%, সেখানে জীবনযাত্রার খরচ ওই সময় কমেছে ৮ থেকে ২০%। সুতরাং চাল উৎপাদনকারীরা হয়েছে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ জন্যে গত অর্থবছরে সরকার খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। বাংলাদেশে ইতিহাসে প্রথমবারের মত বাজারমূল্যের চেয়ে সংগ্রহ কেন্দ্রে দেয় মুল্যের পরিমাণ বেশী রাখা হয় যাতে প্রথমত কৃষকরা সরকারী কেন্দ্রে ধানচাল বিক্রি করে এবং দ্বিতীয়তঃ কিছু বেশী দাম বোনাস হিসাবে পেতে পারে। কৃষকরা একটু উপকৃত হলে উৎপাদনে হতাশ হবে না। কিছুটা ধান-চাল সরকারী গুদামে উঠে এলে বাজারে সরবরাহ কমে যাবে। ফলে ধান-চালের দাম শুধু একটু বাড়িয়ে রাখা যাবে। এই সকল উদ্দেশ্য নিয়ে সংগ্রহ অভিযান আরম্ভ হয়। কিন্তু কালোবাজার এখানেও ছায়া বিস্তার করে আছে। সংগ্রহ কেন্দ্রগুলি অনেক স্থানেই ধান চাল কেনা বন্ধ করে দেয়। ফলে দূর থেকে আগত কৃষকরা কম দামে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে দালালরা সরকারী গুদামে এনে সরকার হিসাবমতে বেশী দাম সংগ্রহ করে। এ ধরনের ঘটনার ফলে বাজারদামের চেয়ে বেশী দাম দিয়ে সংগ্রহ অভিযানের আসল উদ্দেশ্য অনেক অসার হয়ে আসে। ইতিমধ্যে পহেলা এপ্রিল ১৯৭৬ সাল থেকে সরকার প্রথমবারের মত গম সংগ্রহ অভিযানও চালু করে। মনপ্রতি ৭২ টাকা নির্ধারিত করা হয়। এবং দূরাগতদের জন্যে অতিরিক্ত বোনাসেরও ব্যবস্থা হয়। ১৯৭৫ সালের নবেম্বর থেকে ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বেসামরিক খাদ্য সংগ্রহ অফিস অনুসারে, ধান-চাল সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় চালের হিসাবে ৩.৪৭ লক্ষ টন, যেখানে পরবর্তী বছরে সংগৃহিত হয়েছিল ১.৫০ লক্ষ টন। ১৯৭৬ সালে আমন ধান ওঠার পর আবার খাদ্য সংগ্রহ অভিযান চালান হবে। এবারও সংগ্রহমূল্য বাজারমূল্যের বেশী রাখা হয়েছে। আমন ধানের মূল্য হবে মনপ্রতি ৭৪ টাকা, সাধারণ চালের মূল্য ১১৮ টাকা এবং মধ্যম ধরনের চালের মূল্য ১২০ টাকা। এবারের অভিযানের উদ্দেশ্য থাকবে, (১) কৃষকদের অর্থ সাহায্য, (২) চালের মূল্যে স্থিতি আনয়ন এবং (৩) খাদ্য ঘাটতি ঘটলে তার প্রতিকারের প্রস্তুতি। গত বছরের দোষত্রুটি অনুধাবন করে সরকার সংগ্রহ অভিযানের চরিত্র নির্ণয় করেছেন, (১) কোন ধরনের বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, (২), কর্ডোন ব্যবস্থা রহিত হবে। একটি নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, ধান বিক্রির পয়সা নিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। যাতে কালোবাজারী প্রকোপ কমতে পারে এবং কৃষকদের ব্যাংকসমূহ সম্পর্কে অজ্ঞতাকে দূরীভূত করা যেতে পারে। এতে হয়তো সঞ্চয় বাড়বে। ব্যাংকিং সুবিধা কৃষকরাও পেতে পারবে। অবশ্য অসুবিধাও হবে। যেহেতু ব্যাংক সম্পর্কে কৃষকরা যথেষ্ট জ্ঞাত নয়, অতএব সংকোচ বা অন্জান তার দুর্বলতা সংগ্রহ অভিযানে যথেষ্ট সাড়া নাও দিতে পারে।
শিল্প
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে যা কিছু শিল্প ছিল তার প্রায় সবটি ছিল পূর্ববর্তী দেশের পশ্চিম অঞ্চলীয়। এ দেশী পুজি এবং শিল্প বলতে গেলে তেমন কিছুই ছিল না। যুদ্ধোত্তর স্বাধীনতা শিল্প ক্ষেত্রে বিরাট এক শূন্যতা সৃষ্টি করে। একদিকে কল-কারখানার অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে মালিক বর্জিত হয়ে যায়। তাছাড়াও রাষ্ট্রীয় নীতি তৈরী হয় শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার—সমাজবাদের। শিল্পোন্নয়নও একই সঙ্গে শোষণ মুক্তির কারণে মার্চ, ১৯৭২-এর এক আদেশবলে শিলপসমূহকে জাতীয়করণ করা হয়। এবং কয়েকটি কর্পোরেশন তৈরী হয় শিল্পসমূহকে নিয়ন্ত্রণ, পরিদর্শন এবং সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু শিল্পসমূহ এবং তাদের কর্পোরেশনগুলি জন্ম থেকেই সমস্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। অনেক কারখানা যুদ্ধ ও যুদ্ধােত্তর বিবিধ কারণে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাদের পুনরুজ্জীবনের জন্যে প্রচুর অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। এই বিশাল মুদ্রা সাহায্য অর্থনীতিকে অনেকখানি দুর্বল করে তোলে। খুচরা যন্ত্রাংশের নিদারুণ অভাব ছাড়াও কারিগরী জ্ঞানের অভাব দেখা যায়। দেখা দেয় উপযুক্ত পরিচালন ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মতৎপরতা কর্মীর। অবস্থাকে আরো ঘোলাটে করে রাজনৈতিক কারণে আগত অভিজ্ঞতাহীন পরিচালকরা। ব্যক্তিগত স্বার্থ জাতীয়করণের মহান আদর্শকে ধূলি-লণ্ঠিত করে। কিছু কিছু, পরিচালকের আন্তরিকতা থাকা সত্তেও ব্যবসায়িক ও পরিচালনগত অভিজ্ঞত্সর অভাবও এই একই অবস্থার জন্যে দায়ী। ইতিমধ্যে অর্থনীতির অন্যান্য ফলাফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটায় এবং কৃষি উৎপাদন ও আমদানীযর স্বল্পতার কারণে কাঁচামালের দাম অসম্ভব বৃদ্ধি পায়। শ্রম-অসন্তোষ এবং উৎপাদন বন্ধ নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। উৎপাদন হ্রাস, মূল্য বৃদ্ধি, চাহিদা সংকোচ ইত্যাদি থেকে লোকসানের অংক ভয়ংকর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে বাণিজিক ব্যাংকের ঋণের উপর কর্পোরেশনগুলি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এতে কর্পোরেশনগুলি দু’দিক থেকে মুদ্রাস্ফীতিতে অগ্নি-আহুতি দেয়। ১৯৭৫-এ ব্যাংকসমূহ ঋণদানে কঠোর নীতি আরোপ করায় এ অবস্থা আরও জটিল হয়। ১৯৭৬ সাল আসে কিছুটা উদারতা নিয়ে। ১৯৭৬-এর হিসাব অনুসারে প্রায় চারশ’ শিল্প-প্রতিষ্ঠান কর্পোরেশনগুলির অধীনে আছে, এবং এদের উৎপাদন মোট বৃহৎ শিল্প উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ। মোট জিডিপি’র প্রায় ৮ শতাংশ সেক্টর, কর্পোরেশনগুলি থেকে এসে থাকে। এর পরিমাণকে আরও বাড়ানো সম্ভব হতো যদি সমস্যা এবং পদ্ধতিকে কম করানো যেতো। সেক্টর কর্পোরেশনগুলিকে প্রতিটি সিদ্ধান্তের জন্যে চারটি ধাপ পার হতে হয়। কারখানা আসে কর্পোরেশনের কাছে, কর্পোরেশন সমস্যাকে পাঠায় মন্ত্রণালয়কে, মন্ত্রণালয় পাঠায় উচ্চতর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে। এছাড়া আছে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল। আছে পরিকল্পনা কমিশন। একটা সিদ্ধান্তে আসতে অনেকগুলি প্রতিষ্ঠানের চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। এভাবে সমস্যার যাত্রা আরম্ভ হলে সিদ্ধান্তে আসতে অনন্ত যাত্রার প্রয়োজন। কর্পোরেশনগুলির নিজেদের মধ্যে প্রশাসনিক জটিলতাও থাকে। কর্পোরেশনের প্রধান প্রশাসক চেয়ারম্যান। তার অধীনে থাকে বোর্ড। বোর্ডের সদস্য বিভিন্ন সংস্থায় বিভিন্ন রকম, তাদের ক্ষমতাও বিভিন্ন। এসব কারণে জটিলতাও বেড়ে যায়। প্রশাসনিক, শ্রম-সংক্রান্ত, পুজি, লাভ-লোকসান, বৈদেশিক মুদ্রা ইতাদি সমস্যার সঙ্গে সঠিক প্রচেষ্টা এবং খরচ সচেতনতার অভাব ইত্যাদি মিলিত হয়ে অবস্থাকে জটিল করায় ১৯৭৬ সালে সরকার কর্পোরেশনগুলোকে নতুন করে ঢালাই করে সাজিয়েছে। কর্পোরেশনকে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে খাদ্য ও তৎজাতীয় কর্পোরেশনের সঙ্গে। স্টীল মিল কর্পোরেশনকে ইঞ্জিনিয়রিং এবং জাহাজ নির্মাণের সাথে সমন্বয় করা হয়। ট্যানারিজকে কাগজ, বোর্ড এবং সার রসায়ন ও ঔষধ কর্পোরেশনের সাথে একত্রিত করা হয়। এ ধরনের সমন্বয় সাধন একদিকে যেমন প্রশাসনিক সুবিধা দেবে অন্যদিকে দেউলিয়া কর্পোরেশনকে পুনরুজ্জীবিত করবে। কর্পোরেশনগুলির ১৯৭৬ এর নতুন তালিকা দেয়া যায়
১) বাংলাদেশ স্টীল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন;
২) বাংলাদেশ চিনি এবং খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন।
৩) বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প কর্পোরেশন ; ৪) বাংলাদেশ পাট মিল কর্পোরেশন ;
৫) বাংলাদেশ তন্তু শিল্প কর্পোরেশন এবং ৬) বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন ১৯৭৬ সালে বিভিন্ন কর্পোরেশনের অধীনে বিভিন্ন শিল্প উৎপাদনের তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, কোন শিল্প উৎপাদনে ১৯৭৬ সালে তেমন কোন বড় পরিবর্তন হয়নি। কাগজ শিল্পে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ ছিল ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়ায় পানির অভাব। এপ্রিল জুনের গ্রীষ্মকালিন সময়ে মিষ্টি পানির দারুণ সঙ্কট দেখা দেয়। পরবর্তী তিন মাসে এ অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও ফারাক্কা সমস্যা কাগজ শিল্পের উপর দারুণ বিরুপ প্রতিক্রিয়া করছে। এ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বাড়ান প্রকৃতপক্ষে কষ্টসাপেক্ষ। অপরপক্ষে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিমেন্ট উৎপাদনে ক্রমিক উন্নয়ন সম্ভাবনাম। গত বছরের চেয়ে শিল্প উৎপাদন বেড়েছে একথা বলা সবটা ঠিক না হলেও বেশ কয়েকটি শিল্প উৎপাদন যথেষ্ট বেড়েছে বলা চলে। এ বৃদ্ধির পিছনে প্রধান কারণই হল রাষ্ট্রের সামগ্রিক সুস্থ প্রশাসন। তাছাড়াও শ্রম-অসন্তোষ কিছুটা কমেছে এবং রাজনৈতিক কারণে যেসব অক্ষম প্রশাসকরা সেক্টর কর্পোরেশনকে কলুষিত করেছিল তাদের প্রকোপ

জানুঃ থেকে মার্চ(‘৭৬) এপ্রিল থেকে জুন(‘৭৬) জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (‘৭৬) জানুঃ থেকে সেপ্টেম্বর
(‘৭৬) জানুঃ থেকে সেপ্টেম্বর
(‘৭৫)
পাটজাত হাজার টন ১১৮ ১২৩ ১১৭ ৩৫৮ ৩২৬
তুলার সুতা লক্ষ পাউণ্ড ২১০ ২২০ ২৩০ ৬৬০ ৭২৬
সুতিবস্ত্র লক্ষ গজ ১৮২ ১৯৬ ১৮৬ ৫৬৪ ৬৪২
কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট হাজার টন ১১ ৫ ৮ ২৪ ৪৬
সিগারেট কোটীটি ৩৬০ ৩১১ ২৭৬ ৯৪৬ ৮৩৬
ম্যাচ লক্ষ বাক্স ১৭ ১৬ ১৮ ৫১ ৪৭
সিমেন্ট হাজার টন ৩৩ ৫১ ৬৪ ১৪৮ ৫৯
স্টীল হাজার টন ৪৩ ৩০ ৩৭ ১১০ ১৩০
রাসয়নীক সার হাজার টন ১০১ ৬০ ৯৫ ২৫৬ ১২৫
চা লক্ষ পাউন্ড ২৮ ১৭৩ ৩০৭ ৫০৮ ৪৫১
কমেছে। তাছাড়াও ওয়েজ আর্নার স্কীমসহ অপেক্ষাকৃত সুষ্ঠু আমদানী নীতি ও আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের অভাবও কমেছে। এ অবস্থায় কিছু, বৈদেশিক মুদ্রা সাহায্য পেলে আরও উন্নতি হতে পারে বলে আশা করলেও ব্যাংক কর্তৃক ঢালাও পুজি সাহায্য না করাই শ্রেয়। প্রত্যেকটা ঋণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই হতে হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বর্তমান পর্যায়ও, সঠিক বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যাদি থেকে দেখা যায় গত বছরের ঐ সময়ের উৎপাদনের তুলনায় ম্যাচ, সিমেন্ট সার, চা এবং পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতি ও তেলজাত উৎপাদন হ্রাসের প্রধান কারণ ছিল কাঁচা তলা আমদানী কমে যায় এবং আভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমে যায়। আখ চাষ কম হওয়ায় চিনি উৎপাদনও কম হয়। প্রত্যেকটি কল-কারখানার উৎপাদনের যে ক্ষমতা আছে তার পণ্য ব্যবহার সম্ভবপর না হলেও কিছুটা উন্নতি আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেশ কয়েকটি শিল্পে ক্ষমতা ব্যবহার কমেছে। এদের একটা তালিকা দেয়া যায়।
উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার শতকরা হিসাবে

১৯৭৫-এর।সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
১৯৭৬-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

তুলার সুতা ৫৩ ৪৮
সুতি কাপড় ৪৭ ৪১
স্টিল ৫২ ৪৪
ম্যাচ ৩৪ ৩৭
নিউজপ্রিন্ট ৬০ পাওয়া যায়নি
কাগজ ৪৬

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সেক্টর কর্পোরেশনগুলির অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্যে গভীর মনযোগ দেয়। যেহেতু সেক্টর কর্পোরেশনগুলিই মোট ব্যাংক ঋণের একটা বিরাট অংশের জন্যে দায়ী সেহেতু তাদের এটি-বিচ্যুতিকে সম্যক উপলব্ধিতে সাহায্য করার জন্যে ব্যাংক চেষ্টা করে। তিনটি বিষয় সরকার মনযোগ দিচ্ছে—(১) তাদের জন্মগত দেনা, (২) জন্মের পর ক্রমাগত লোকসান থেকে উদ্ভূত সমস্যা, (৩) ইকুইটি সাহায্য। বাজেট কর্তৃক বরাদ্দের সীমা থাকায় ইকুইটি ধাৱ হারের বিপজ্জনক হ্রাসে খুব একটা সাহায্য করা না গেলেও ঋণকে কিভাবে ইকুইটিতে পরিবর্তিত করা যায় সে সম্পর্কে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নের সম্ভাবনা করা হয়েহিল শতকরা ৯ ভাগ। কিন্তু ১৯৭৬ সালে শিল্পক্ষেত্রে এই বিভিন্নমুখী গতি বিশ্লেষণ করলে নশতাংশ উন্নয়ন সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ বাস্তব বলে মনে হয় না। তদুপরি সেক্টর কর্পোরেশনৰগুলি লোকসান করেই যাচ্ছে। যেমন করছে অন্যান্য জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান। একমাত্র ব্যাংক ও মুদ্রাস্ফীতি : প্রতিষ্ঠান ছাড়া জাতীয়করণ এদেশে মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। বিভিন্ন জাতীয়কৃত খাতে লাভ-লোকসানের একটা খতিয়ান পাওয়া যায় ঃ
১৯৭৫-৭৬ ১৯৭৬-১৯৭৭
খাত আয় ব্যয় লাভ (+)
লোকসান (-) আয় ব্যয় লাভ (+)
লোকসান (-)
১। জাতীয়কৃত শিল্প ও বাণিজ্য ১১৬১ ১২৪১ (-)৮৮ ১৫৭০ ১৫১৭ (-)২৭
২। উন্নয়ন ৮৬ ১০২ (-)১৬ ৯৩ ১১৬ (-)২৩
৩। ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্সে ৩৭০ ২৮৪ (-)৮৬ ৪২৯ ৩২৬ (-)২০৩
মোট ১৬১৭ ১৬৩৫ (-)১৮ ২০৯২ ২০৩৯ (-)৫০

শিল্পঃ ব্যক্তিগত খাত
বর্তমান অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত খাতে শিল্পােন্নয়নের মূল্য সমধিক। কেবলমাত্র সরকারী খাতের শিল্পের উপর নির্ভর করে কোন অবস্থায় দেশের সামগ্রিক প্রগতি সম্ভবপর নয়। এ কারণে বর্তমান সরকার ব্যক্তিগত খাতে শিল্প উন্নয়নের জন্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করেছে। এর আগে বিনিয়োগের সীমা নির্ধারিত ছিল তিন কোটী টাকা। যেহেতু এ পরিমাণ অর্থ কোন শিল্পের জন্যে যথেষ্ট নয়, সেজন্যে বিনিয়োগ সীমাকে উন্নত করে দশ কোটী টাকা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগকে এমনভাবে পরিকল্পিত করা হয়েছে। যাতে জররী এবং গণ-উন্নয়নের বিষয়গুলি সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। বিনিয়োগ কোন অবস্থায় সরকারী খাতের প্রয়োজনীয় উৎপাদনের সাথে প্রতিযোগিতাশীল না হয়ে সহযোগী হয়। এবং বিনিয়োগের পবে অনুমোদনের প্রয়োজন থাকায় সরকার যাতে পরিকল্পিতভাবে শিল্পােন্নয়ন ঘটাতে পারে তার ব্যবস্থাও করা হয়। এই ধরনের সরকারী পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রণের সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই আছে। এর ফলে স্বল্প সম্পদকে অধিকতর সঠিক পথে ব্যবহার করাও যেমন সম্ভব তেমনি নিয়ন্ত্রণের ফলে শিল্পােন্নয়নের প্রকৃতিক চরিত্রও ব্যহত হয়। অনেক পুজিপতি সরকারী অনুমোদন দান পদ্ধতিকে দীর্ঘমেয়াদী চরিত্র বলে অভিহিত করে। এতে বিনিয়োগের উৎসাহ কমে যায়। তাছাড়া নিয়ন্ত্রণের ফলে এবং অধিকতর আইন কানুনের অনুপ্রবেশের ফলে অন্যায় এবং বিশৃখলাও জন্ম নেয়। তবুও একথা ঠিকই যে, কেবলমাত্র মুনাফাই যদি বিনিয়োগের একমাত্র লক্ষ্য হয় তবে বিনিয়োগ কেবল পুজিপতির কল্যাণই করতে পারে অর্থনীতির সাগ্রিক সুব্যবস্থা আসে না। এ জন্যেই সরকারী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যে ক’টি শিল্পে ব্যক্তিগত খাত অনুপ্রবেশ করতে পারবে না তাদের তালিকা প্রণীত হয়েছে। যেমন—(১) পাটজাত, (২) বয়নশিল্প (তাঁত ও কিছু, বিশেষ ধরন ছাড়া), (৩) চিনি, (৪) অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা শিল্প, (৫) আণবিক শক্তি, (৬) বিমান, (৭) টেলিফোন-টেলিগ্রাফ, ওয়ারলেস এবং তৎসংক্রান্ত (রেডিও শব্দগ্রহণ। যন্ত্র ছাড়া), (৮) বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বণ্টন এবং (৯), বিশেষ যুক্ত প্রচেষ্টা। বিনিয়োগ সীমাকে উন্নীত করাই যথেষ্ট নয়। কেননা এতটা অর্থ বিনিয়োগ করলে শিল্পপতিরা তাদের পুজির নিশ্চয়তা চাইবে। সুতরাং সরকার নিশ্চয়তা দেয় যে, যদি কখনো কোন শিল্প জাতীয়কৃত হয় তবে তার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়া নতুন বিনিয়োগ নীতিতে অনেকগুলি শক্ত সুবিধা দেয়া হয়। এবং কিছু কিছ; অনুন্নত স্থান এবং প্রয়োজনীয় শিল্পের জন্যে কম মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করারও। ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ হিসাব অনুসারে শিল্প ও বাণিজ্য খাতের জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান যদিও বর্তমান বছরে লোকসান করবে বলে ধারণা করা হচেছ তবু তা পূর্ববর্তী য়ে বছরের অপেক্ষাকৃত কম হবে। এক বছরেই কোন মৌলিক সমস্যার সমাধান করা যায় না। সমাধান নয় সমাধানের প্রতি। অগ্রগতিই অর্থনৈতিক প্রগতি।
কৃষিভিত্তিক এবং রফতানী দ্রব্যাদির উৎপাদনে ইকুইটির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক। ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্যে এবং ব্যক্তিগত সঞ্চয়কে উৎপাদনে সহায়তায় অনুপ্রাণিত করার জন্যে স্টক এক্সচেঞ্জকে পুনরায় কার্যকরী করা হয়েছে। অঘোষিত অর্থ এবং কালো মুদ্রাকে বিনিয়োগ করা হলে ক্ষমা করার অঙ্গিকার করা হয়েছে। এ সমস্ত সরকারী প্রচেষ্টা ছাড়াও ব্যাংকিং সেক্টর ব্যক্তিগত খাতে । শিল্পায়নের জন্যে দু’মুখো নীতি গ্রহণ করে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি যেন পুনরায় সচল হতে না পারে এবং অন্যদিকে মন্দা অবস্থা কাটিয়ে শিল্পােন্নয়ন অধিকতর সম্ভবপর হয়। এ সমস্ত উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ছোট ব্যবসায়ীদের এবং উৎপাদকদের উৎসাহি করতে প্রচলিত ঋণ নিয়ন্ত্রণকে অপেক্ষাকৃত শিথিল করে। স্থানীয় ব্যাংক ম্যানেজারদের হাতে ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়া হয়। ছোট ঋণ পরিকল্পনা তৈরী করে গ্রামীণ ছোট উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ক্ষুদ্র শিল্পের জন্যে আগে যেখানে সর্বোচ্চ পচিশ হাজার টাকা করা হয়। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের শিল্প ও বাণিজ্য সাহায্য করার জন্যে সুনেদর হার সেই অঞ্চলে বারো শতাংশ করা হয়েছে। তপশীলভুক্ত ব্যাংকসমূহের ১৯৭৬ সালের প্রথম ছ’মাসে ব্যক্তিগত খাতে ঋণ বাড়ে ৮৫৫ কোটী টাকা, পরবর্তী তিন মাসে বাড়ে ৪৮ কোটী টাকা এবং শেষ তিন মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর, ১৯৭৬-এ বাড়ে ৩৬ কোটী টাকা। সর্বশেষ প্রান্ত তথ্য অনুসারে ১৯৭৬-এর প্রথম থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ব্যক্তিগত খাতে ঋণ বেড়েছে ৯৩ কোটী টাকা। পরবর্তী ১৯৭৫ সালে এই সময় পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ অনেক কম ছিল। তপশীলভক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক বিসিক’কে সরকার ২৫৪.৯৫ কোটী টাকা, ৩০টি শিল্প প্রতিষ্ঠা জন্যে পুজি সাহায্য এবং একটি শিল্পকে তৈরী সাহায্য হিসাবে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে অনুমোদন দান করে। কিন্তু ওই সময় বিসিক সরকার কোন বৈদেশিক মুদ্রা দিতে পারেনি ফলে ব্যক্তিগত খাত বৈদেশিক মুদ্রা কষ্টে-ভোগে। যদিও বিসিক ব্যক্তিগত খাতের শিল্পকে পরম সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য সাধারণ সাহায্য করে। অবশ্য বৈদেশিক মুদ্রা সাহায্য ছাড়া শিল্প উন্নয়ন আমাদের দেশের জন্যে খুবই কষ্টসাপেক্ষ। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যক্তিগত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সাহায্যের জন্যে অধিকতর উদার মুদ্রানীতির প্রয়োজন। যেহেতু মজা ভেলোসিটি কমে গেছে এবং অর্থ সরবরাহও অনেক কমেছে, উৎপাদন বাড়ান সম্ভব না হলে মন্দার অবস্থা আরও ঘনীভূত হতে পারে। বেড়ে যেতে পারে জীবনযাত্রার খরচাসুচী। সরকারী নিয়ন্ত্রণ এতটা বেশী হওয়ার প্রয়োজন আছে কি না বিষয়টি বিবেচ্য। একটা শিল্প তৈরী করতে গেলে সরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের মুখোপেক্ষী হতে হয়। যেমন পাওয়ার লাইন স্থাপনের জন্যে এক হানে ধর্ণা দিতে হয়, ব্যবসা লাইসেন্সের জন্যে অপর স্থানে, শিল্প স্থাপনের জন্যে কতৃপক্ষের কাছে, ঋণ প্রাপ্তির জন্যে বিসিক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে, কাঁচামাল আমদানীর জন্যে আমদানী-রফতানী কর্তৃপক্ষের কাছে ইত্যাদি। অনুমতি সংগ্রহের জন্যে প্রায় বছর দুয়েক নষ্ট হয় যদি আমলাদের সঙ্গে যথেষ্ট সম্পর্ক না থাকে। এই দুবছর। পুজিকে বেকার বসিয়ে রাখতে কোন ব্যবসায়ী চায় না। যা হোক সরকারী বিভিন্ন প্রচেষ্টা ব্যক্তিগত খাতে শিপোন্নয়নে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।
ব্যবসাবাণিজ্য
১৯৭৪-৭৫-এর মন্বন্তর এবং পববর্তী মুদ্রাস্ফীতির পরবর্তী প্রতি ছিল অর্থনীতিতে কিছুটা মন্দী, অবস্থা। একদিকে ১৯৭৫-এর মুদ্রানীতি সুকঠোর হওয়ায় এং অন্যদিকে কৃষিখাতে তুলনামূলকভাবে অধিকতর উৎপাদন হওয়ায় দ্রব্যাদির, বিশেষ্য করে খাদ্যশস্যের দাম কমে যায়। কৃষক শ্রেণীর প্রকৃত আয় ফলে দারুণভাব কমে যায়, অন্যান্য। খাতের অায়ের তুলনায়। ফলে শিল্পজাত এবং আমদানীকৃত পণ্যাদির চাহিদায় ঘটে পতন। কালোবাজারী ও চোরাচালানী অপেক্ষাকৃত ভাল প্রশাসনের ফলে সর্মিত হয়। মোট প্রভাব পড়ে ব্যবসার উপর। পাইকারী বাজারে কেনা-বেচা থাকে না প্রায়, ফলে খুচরা বাজারে তার। প্রতিক্রিয়া পড়ে। ১৯৭৬-এ নীতিসমূহ পরিবর্তিত হয়, ফলে মন্দা অবস্থা কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সক্ষম হয় অর্থনীতি। তবু, ১৯৭৬-এ প্রকৃত উন্নয়ন আরম্ভ হয়নি, হয়েছে উন্নয়নে ভিত্তি স্থাপন। ব্যবসা কেবল বাড়তে যাচ্ছে, এখনো যথেষ্ট উন্নতি ঘটেনি। বাণিজ্য পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্যে সরকার বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।
আমদানী নীতি
১৯৭৬ সালে দু’টি আমদানী নীতি ঘোষণা করা হয়। একটি জানুয়ারী থেকে জুন, অর্ধ বছরের জন্যে। অপরটি জুলাই থেকে ডিসেম্বরের জন্যে। ১৯৭৬-এর আমদানী নীতিগুলি কিছুটা উদারভাবে তৈরী হয়।। প্রথম অর্ধবছরের জন্যে ৪৬৪ কোটী টাকার আমদানী লক্ষ্য নির্ণীত হয়। এর মধ্যে ২১২ কোটী টাকা আসবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে। বাকীটা বৈদেশিক সাহায্য, বার্টার এবং ওয়েজ আর্নার স্কীম থেকে আসবে। দ্বিতীয় অর্ধ বছরের জন্যেও ৪৬৪ কোটী টাকার আমদানী নীতি ঘোষিত হয়। যার মধ্যে ২০.২ কোটী টাকা নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আসবে। এবং বাকি ২১৬ কোটী টাকা (৪৬.৫% মোট আমদানীর) আসবে বৈদেশিক সাহায্য থেকে এবং ৪৬ কোটী টাকা আসবে বাটার ও ওয়েজ আর্নার কীম থেকে। উভয় আমদানী নীতির মূল লক্ষ্য ছিল শিল্পসমূহে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুর্ণ ক্ষমতা ব্যবহারে সাহায্য করা এবং আমদানীকৃত পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা আনা। এ বছরের উভয় আমদানী নীতিতে সবথেকে গুরুত্ব পেয়েছে। কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ। • ওষুধ শিল্পে দেড়শ’ শতাংশ কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। গণ ও বক্তিগত খাতের শিল্পগুলিকে গুরুত্ব হিসেবে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক নম্লর গুরুত্বপ্রাপ্ত শিল্পসমূহকে শতকরা কমপক্ষে একশ’ ভাগ আমদানী, লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে শিশুখাদ্য, বৈদ্যুতিক বাতি, ব্যাটারী, সাইকেল, সাবান সিগারেট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারীকে আরও বেশী অনুমতি দেয়ার সুযোেগ রাখা হয়েছে। রং, রসায়ন, সুতা এবং মাছধরার যন্ত্রপাতি, পিভিসি, আমদানীতে যথোপযুক্ত সুযোগ-সুবিধে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত খাতে পাট বেলিং মেশিন তৈরীর জন্যে প্রয়োজনীয় যন্ন্ত্রপাতি আমদানীর বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনুন্নত এলাকা থেকে আগত আমদানীকারকদের সুবিধে ছাড়াও দুধ, এলোপ্যাথিক ওষুধ, রং ও রসায়ন, বই-পুস্তিকা এবং রুগ্রাসেপটিভ আমদানীর জন্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় আমদানী নীতির সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, টিসিবি’র আমদানী ক্ষমতাকে প্রায় অর্ধেক করে দেয়া হয়েছে, এবং ব্যক্তিগত খাতে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ওয়েজ আর্নার স্কীমকে জানুয়ারী-জুনে আরও বর্ধিত করা হয়। বারোশ’ সিসি মোটরযান, শীতাতপ যন্ত্রাদি, বাণিজ্যিক তালিকা বহির্ভূত বিশেষ ওষুধপত্র, রেডিও টেলিভিশন এবং খেলনা সারাবার যন্ত্রপাতি ইত্যাদিকে ওই সময় আমদানী অনুমতি দেয়া হয়। জুলাই-ডিসেম্বর, ১৯৭৬-এর জন্যে যে আমদানী নীতি ঘোষিত হয় তাতে ওয়েজ আর্নার স্কীমের অধীনে আমদানীযোগ্য পণ্যের সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৮টি করা হয়। এবং ব্যবস্থা এমনভাবে নেয়া হয় যাতে স্থানীয় শিল্প উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ জন্যেই পাচ এম্পেয়ারের সব ধরনের বৈদ্যুতিক সুইচ, হোল্ডার, পেল্ডান্ট, ব্যাটারী প্লাগ, ব্যাটারী ইত্যাদি আমদানী বন্ধ করা হয়েছে। কর কমিয়ে দিয়ে তদুপরি, স্কীমের অধীনে অধিক আমদানীর সুযোগ তৈরী করা হয়েছে। এবারের স্কীমের অধীনে যে ন’টি দ্রব্যকে আনা হল সেগুলো হল—-১৭ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন, কারিগরী ও পেশাগত পত্রিকা, নতুন সাময়িকী, হেলমেট, টেপ ও ক্যাসেট, ইস্ত্রী, সঙ্গীতের যন্ত্রাদি, কৃত্ৰিম অলঙ্কার, কাঁচের ব্যাংলেস এবং টিন প্লেট। আমদানী নীতির মত রফতানী নীতি ক্যালেণ্ডার হিসেবে পওিয়া যায় না, সমগ্র অর্থ বছর হিসেবে তা প্রস্তুত হয় বলে। ১৯৭৬ সালের রফতানী নীতি আলোচনা করতে গেলে, ১৯৭৫-৭৬ এবং ১৯৭৬-৭৭-এর রফতানী নীতিম্বয়কে বিশ্লেষণ করতে হয়। আমদানী চাহিদার ব্যাপকতার কারণে প্রচলিত পণ্যের রফতানী বৃদ্ধি এবং অপ্রচলিত ও নতুন পণ্যের রফতানীবাজার সৃষ্টিই ছিল এই , উভয় রফতানী নীতির মূল লক্ষ্য। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের জন্যে পরিবর্তিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছিল ৫৫৪ কোটী টাকা, সেখানে ১৯৭৬-৭৭ সালে রফতানী থেকে উপার্জন লক্ষ্যমাত্রা নির্ণীত হয়েছে ৫৬৪ কোটী টাকা। উভয় বাণিজ্য নীতির নগদ, বার্টার ও বিশেষ বাণিজ্য ব্যবস্থায় রফতানী করা যাবে। পাট ও পাটজাত দ্রব্য বাদে অন্য সমস্ত পণ্য সরকারী ও বেসরকারী উভয় মহলেই আগের মত রফতানী করতে পারবে। রফতানী ক্ষেত্রে পরিবহণের যাতে কোন সমস্যা দেখা না দেয় তার জন্যে সমস্ত পরিবহণ যেমন—রেলওয়ে, জাহাজ, বার্জ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অর্থ সরবরাহ ঋণ সংকোচনের প্রয়োজনীয়তা সত্তেও ১৯৭৫-৭৬-এর রফতানী নীতিতে রফতানী ক্ষেত্রে ঋণদান নিশ্চিত করার জন্যে সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগ, প্রতিষ্ঠান এবং ফেডারেশন অফ চেম্বার অফ কমার্স ও ইণ্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি-সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। অথচ ১৯৭৬-৭৭-এ আরও সুবিধাদি দেয়া হতে থাকে। যেমন গত বছর রফতানী ঋণের উপর সুদের হার ছিল তেরো শতাংশ। সেখানে এবারে করা হয় সাড়ে এগারো শতাংশ। তাছাড়াও ব্যাংকসমূহে বিশেষ সেল তৈরীর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই সেল আমদানী-রফতানী ব্যাংকের দায়িত্বই প্রকৃতপক্ষে পালন করবে। অন্যথায় রফতানী ক্ষেত্রে ঋণকে নিশ্চিত করার সকল সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেয়া হয়। • ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে রফতানী পারফরমেসন লাইসেন্স স্কীমের অধীনে আরও সতেরোটি নতুন পণ্য আনা হয়। . প্রচলিত পদ্ধতি অনযায়ী রফতানী বাণিজ্যে বিক্রয় কর, আবগারী শুল্ক এবং আমদানী শুল্কের রেয়াতদান অব্যাহত থাকবে। অপ্রচলিত দ্রব্যাদি রফতানী থেকে আয়ের উপর করের ২৫% রেয়াত দেয়া হবে। দ্রব্যাদি রফতানী থেকে আয়ের। রফতানীকারকদের’ বাণিজ্যিক কাজে ও প্রচারে বিদেশ গমনের উপর সুযোগ-সুবিধে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর বড় শহরগুলিতে আরও নতুন দশটি বিক্রয়কেন্দ্র তৈরী হবে। এবং আন্তর্জাতিক মেলাগুলিতে যোগদান করা হবে। এবং বাণিজ্য প্রতিনিধির সংখ্যাও বাড়ান হবে। রফতানী বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার জন্যে সার্থক রফতানীকারকদের মধ্যে মেডেল, সার্টিফিকেট ইত্যাদি দানের একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাঁচা চামড়া রফতানীকে করা হয়েছে অনুৎসাহিত। কেননা ট্যানও সম্পূর্ণ প্রস্তুত চামড়া রফতানী করে অধিক আয় করা সম্ভবপর। মাছ আহরণ এবং রফতানীর ক্ষেত্রে বৈদেশিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত প্রচেষ্টা সরকার কর্তৃক সাহায্য পাবে। এবং এক্সপোর্ট হাউসেস’ তৈরীর ব্যাপারে প্রচেষ্টাও চলবে। এই ছিল আমদানী ও রফতানী নীতিসমূহ। এবারে আমরা আমদানী-রফতানীর গতি-প্রকৃতি দেখতে পারি। অনন্নত দেশসমূহের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমদানীর তুলনায় রফতানী কম। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশেও এ পার্থক্যের পরিমাণ ক্রমিক হারে বেড়ে চলেছে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে আমদানী ছিল রফতানী মূল্যের চেয়ে প্রায় ১০২ কোটী টাকা বেশী। পরবর্তী অর্থবছরে পার্থক্যের পরিমাণ আরও বেড়ে যেয়ে দাঁড়ায় ২২৪ কোটী টাকা। ১৯৭৪-৭৫ সালে রফতানী মূল্য দাঁড়ায় ২৮৮ কোটী টাকা, যেখানে আমদানী হয় ৮০৩ কোটী টাকার। অর্থাৎ মোট ঘাটতি থাকে ৫১২ কোটী টাকা। ১৯৭৫-৭৬ সালে রফতানী ও আমদানী উভয়ই বাড়ে। কিন্তু আমদানী বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশী। ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় একটু কম। পাঁচশ’-ছ’কোটী টাকা। আমদানী প্রয়োজনকে হেয় করা কোনদিক থেকেই সম্ভব নয়। খাদ্য আমদানী আমাদের জন্যে প্রধান। এছাড়াও শিল্পোপান্নয়নের জন্যে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুতরাং আমদানীকে আমাদের। স্বার্থেই বাড়ান প্রয়োজন। কিন্তু দিনে দিনে ঘাটতিকে বাড়তে দেয়া যায় । রফতানী না বাড়াতে পারলে আমদানী কাড়ানোও অসম্ভব। আমাদের প্রধান রফতানীদ্রব্য হচ্ছে কাঁচা পাট, মেশতা এবং পাটজাত দ্রব্য। কাগজ, নিউজপ্রিন্ট এবং চা। পববর্তী বছরসমূহের তুলনায় ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে প্রায় সবক’টি পণ্যের রফতানী আয় বেড়েছে। তাদের মধ্যে পাট অন্যতম। কিন্তু পাটের অসুবিধেও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা কম-বেশী হয়ে পড়েছে। তৈরী হচ্ছে কৃত্ৰিম পাট। পাকিস্তান, ভারত, বার্মাও পাট রফতানী করছে। চায়ের বাজারেও প্রতিযোগিতা অনেক। এ অবস্থায় কেবলমাত্র এ ক’টি হাতে গোণা রফতানীদ্রব্যের উপরে নির্ভর করলেই চলবে না। আমাদের খুজে নিতে হবে নতুন রফতানী পণ্য।
(লক্ষ টাকায়)।
সময় কাঁচা পাট ও মেশতা পাটজাত দ্রুবা কাগজ নিউজ প্রিন্ট ও হার্ড বোর্ড চা অন্যান্য মোট
১৯৭২-৭৩ ৯৭২৯ ১৪৪৭৯ ২১০ ৯৭০ ২২৯৭ ২৭৬৮৫
১৯৭৩-৭৪ ৯১৪৪ ১৫৩০ ৩১০ ৯৯২ ১৯৩৫ ২৭৬৯১
১৯৭৪-৭৫ ৬১০৮ ১৭৩৭৫ ২১৫ ১৬৯৪ ২৫৬৫ ২৮৮২৭
১৯৭৫-৭৬ ১৬০৮১ ২৭৫৫৮ ২৪৬ ২৭০৪ ৯০৪৭ ৫৫৬৪১

রফতানী আয় বাড়ার পিছনে রফতানীকৃত পণ্যের পরিমাণ এবং মুল্য উভয়ের অবদান রয়েছে। ১৯৬৯-৭০ সালে বিশেষ সাদা পাটের দাম যেখানে ছিল ৩৯৫ ডলার সেখানে ১৯৭৫-এর জুনে হয় ৪২৫ এবং ১৯৭৬-এর জনে হয় ৩৬৯ ডলার। পাটজাত দ্রব্য বি, উইলসের দাম যেখানে ১৯৬৯-৭০ সালে ছিল ২১৪ ডলার সেখানে ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬-এর জনে হয়েছে যথাক্রমে৪১১ এবং ৩০৫ ডলার। রফতানী মুল্য বৃদ্ধি সবসময় মঙ্গল আনতে। পারে না, কেননা তাতে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। ‘১৯৭৬-এয় দাম হ্রাস এবং চাহিদা বৃদ্ধির জন্যেই এই অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন। সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে কুটির শিল্পজাত দ্রব্য ও মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের আয় গত বছরের তুলনায় তিনগুণেরও বেশী বেড়েছে। এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়ান সম্ভব। ১৯৭৫-এর মে মাসের পবে বিনিময় হার ছিল এক পাউণ্ড সমান ১৯ টাকা ৯৫ পয়সা। উল্লেখিত তারিখে অপেক্ষাকৃত সঠিক বিনিময় হার ঘোষণা করা হয়, এক পাউণ্ড সমান ত্রিশ টাকা। এর ফলে যদিও রফতানী বৃদ্ধিতে তেমন উপকার হয়নি; তব, চোরাচালানী ও ফলাবাজারী বন্ধ করতে ই বিশেষ সহায়ক হয়। বিনিময় মূল্য যখন কম ছিল তখন এই সব অপ্রধান রফতানীতে সরকার ভর্তুকি দিত। এর পরিমাণ ত্রিশ থেকে পচাত্তর শতাংশ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু বিনিময় হার পরিবর্তনের ফলে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে অনেক পণ্য রফতানী প্রকৃতপক্ষ কমে যায়। শিল্পজাত পণ্য রফতানী করে আয় বাড়ানো কঠিন। কেননা শিল্প উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। এবং আভ্যন্তরীণ চাহিদা এত বেশী যে উৎপাদন বাড়লেও রফতানী করা দুস্কর। তাছাড়াও আমাদের পণ্য উৎপাদনের খরচ আন্তর্জাতিক বাজারের বিক্রয় মূল্যের প্রায় সমান অথবা বেশী। এ জন্যে অনেকে মূল্য স্থিতিকরণ, তহবিল তৈরীর পরামর্শ দেন। যেখান থেকে পুজি ও ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যকে রফতানীযোগ্য করে তোলা যায়। কিন্তু রফতানী বাড়াবার উদ্দেশ্যে এই ভর্তুকি যদি সরকারকে দিতে হয় তবে তা একটি অনুচিত ও কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্যে এ সমস্যাসংকুল রফতানীকারকদের রফতানী অনুযায়ী কিছুটা আমদানী লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে। রফতানী থেকে যেটুকু। কম মুনাফা হবে, অজিত ওই বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে আমদানী করে তা পুষিয়ে নেবে। এ ধরনের ব্যবস্থায় কালোবাজারী জন্ম নিতে পারে। আর তাহলে আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। কোন কোন অর্থনীতিবিদ পরামর্শ দিয়েছেন এক্সপোর্ট হাউস তৈরীর। প্রতিটি রফতানীকারকে বিদেশে তাদের অফিস করতে দেয়া হয়তো ঠিক হবে না। কেননা এতে মেধা রফতানী হয়ে যেতে পারে।
(লক্ষ টাকায় )
সময় আমদানী
১৯৭৬ খাদ্য ও জীবন্ত পশু খাদ্যেযোগ্য এরকম অশোধিত দ্রব্য পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত অন্যান্য মোট
জানুয়ারী ৩৭৭২ ১০৫৩ ১৪১২ ৬৭৭৪ ১৩০১১
ফেব্রুয়ারী ৩৬৬৭ ১৪৯৩ ৩৯৫৮ ৪৮০৫ ১৩৯২০
মার্চ ৭৮৫ ১৯৭ ৪১৯ ৫৪১৯ ৬৮২০
এপ্রিল ৩৯০ ১৭৬৪ ৬৬৫ ৫১১৫ ৭৯৩৬
মে ২০৬০ ১০৪৭ ১৯৭১ ৭৭৮০ ১২৮৫৮
জুন ২২৩২ ৩৮১৮ ১৬০৪ ৪৮৭৮ ১২৫৩২
জুলাই ৬৩৪ ২৬৪৭ ১২০৬ ৬৮৮৭ ১০৯৩৪

হতে পারে অণ্ডার-এনভয়েসিং। হাউস হতে পারে সরকারের। ব্যাংক অফিসার, রফতানী উন্নয়ন ব্যুরো ও সরকারী কর্মচারীরা থাকবে। রফতানী বৃদ্ধির জন্যে অপ্রধান পণ্যের ক্ষেত্রে রফতানী, প্রকল্প’ তৈরী করা যায়। পুবর্বতী পূর্ব পাকিস্তানে এ ধরনের প্রকল্প রফতানি বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত ? এসব ক্ষেত্রে ঋণ দিতে। ঋণদান ও ব্যাংকিং সহযোগিতার জন্যে এতদিন আমদানী ও রফতানী ব্যাংক স্থাপনের দাবী চলে এসেছে। কিন্তু নতুন ব্যাংক স্থাপনের অসুবিধা অনেক। এ জন্যে এ বছরে সরকার প্রতিটি বাণিজ্যিক আমদানী-রফতান। সেল তৈরী এবং রফতানীর জন্যে ঋণদানের বিয়ে ব্যবস্থাও তৈরী করে। রফতানীর উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণসহ নানাবি সুবিধের সুযোগ তৈরী হয়। এতে আশা করা যায় এ বছরের রফতানী লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হবে। ১৯৭৬ সালে মাস হিসেবে আমদানী-রফতানীর একটি তালিকা তৈরী করা যায়। পর্ববর্তী বছরের তুলনায় এ বছর আমদানীর পরিমাণ যথেষ্ট বেড়েছে এবং আমদানীর ধরনেও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। অবশ্য এলাকা। ভিত্তিক আমদানী চরিত্র একই রয়েছে। যেমন পববর্তী বছরে বাংলাদেশ সবথেকে বেশী আমদানী করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, এ বছরও তাই হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা আমাদের মোট আমদানীর ৪০% এনেছি। ২৯% এসেছে ইউরোপীয় দেশসমূহ থেকে। সুদুরপ্রাচ্য থেকে আমদানী হয়েছে ১০%, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৮%, ওসেনিয়া এলাকা থেকে ৩০% অন্যান্য এশীয় দেশ থেকে ৩%, এবং বাংলাদেশের মোট আমদানীর অবশিষ্ট ১৭% এসেছে মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চল থেকে। আমাদের প্রধান আমদানী পণ্য হচ্ছে খাদ্য ও জীবন্ত পশু। এ জন্যে বাংলাদেশ প্রায় ১০১ কোটী টাকা ব্যয় করেছে ১৯৭২-৭৩ সালে, ১৯৭৩-৭৪ সালে করেছে ১৫০ কোটী, ১৯৭৪-৭৫-এর মন্তরকালীন সময় করেছে ২৩০ কোটী, ৩৩০ কোটী টাকা করেছে ১৯৭৫ . সালে ১৯৭৬-এর জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত করেছে ১৪৫ কোটী টাকা। জালানী ছাড়া অশোধিত (খাদ্য নয় ) দ্রব্যাদি আমদানীর পরিমাণ যেখানে ১৯৭২-৭৩ সালে হয়েছে ৪১ কোটী টাকা, ১৯৭৩-৭৪-এ . ৪৪ কোটী ১৯৭৫ সালে ৬২ কোটী, টাকার সেখানে ১৯৭৬ সালের জুলাই পর্যন্ত আমদানীর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটী টাকা। . পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যাদি আমদানীর পরিমাণও ক্রমিক হারে বেড়ে গেছে। ১৯৭২-৭৩ সালে ১১ কোটী টাকার এ দ্রব্যাদি আনা হয, ১৯৭৩-৭৪ সালে হয় ২০ কোটী, ১৯৭৫ সালে ৫০ কোটী এবং ১৯৭৬-এর জুলাই পর্যন্ত আনা হয় ১০২ কোটা টাকার পণ্য। অন্যান্য পণ্যাদির মধ্যে রসায়ন, ওষধ, নানা ধরনের কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি আমদানীকৃত হয়েছে। ওয়েজ আর্নার স্কীমের অধীনে এসেছে প্রচুর দ্রব্যাদি, তাদের মধ্যে ডিম ও দুধজাত দ্রব্য, খাদ্যাদি, ফল ও সবজি, চিনি ও মধু, তেলবীজ, কর্ক, কাপড় এবং বস্ত্র, লোহস্টিল, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি, যানবাহন, সেনেটারী ও দ্রব্য। ফটোগ্রাফি ও সৌখিন জিনিস, সিনেমা ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা যায়।
বাজেট ও পরিকল্পনা
বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যথেষ্ট সার্থক না হওয়ায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসামাত্র এ সম্পর্কে নীতি পরিবর্তনে সিন্ধান্ত নেয়। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অবশিষ্ট তিন বছরকে ডিফোর প্রােগ্রামের অধীনে আনা হয়। এবং এই তিন বছরে যেন ১৭ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে সার্থক করা যায় তার সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়। বাৎসরিক পরিকল্পনাগলি সেই অনুসারে সবিন্যস্ত করা হয়। বাজেট ও পরিকল্পনা যেহেতু অর্থবছর হিসাবে তৈরী হয় সেহেতু কেবল ক্যালেন্ডার বছরের এ সম্পর্কিত আলোচনা সম্ভব নয়। এ জন্য এখানে ১৯৭৫-৭৬ এবং ‘১৯৭৬-৭৭ উভয় অর্থবছরে তথাদি আলোচনা করা যেতে পারে। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭৫৬।৬০ কোটি টাকা এবং ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৫৯ ৯, ১১ কোটী টাকা। ফলে রাজস্ব খাতে মোট উদত্তের পরিমাণ নির্ধারিত ছিল ১৫৭৪১ কোটী টাকা। এই উবত্ত রাজ আয় বার্ষিক পরিকার অর্থ সংস্থানের জন্যে বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অধিকতর আয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় এবং খাদ্য সংগ্রহ দেশরক্ষা ও অন্যান্য প্রশাসনিক কারণে অধিক ব্যয়ের প্রয়োজন হওয়ায় পরবতী পর্যায়ে তা পরিবর্তিত করা হয়। সংশোধিত রাজস্ব আয় এবং ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮ ৮২.৬৪ কোটী এবং ৬৮৩ ৭৩ ফোটী টাকা। সুতরাং উধভুত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৮৯৪ কোটী টাকা হয়। অধিকতর রাজস্ব আয় সম্ভব হয়েছিল বাণিজ্য শুল্কে ২৩ কোতি আবগারী কে ২৩ কোটী, বিক্রয় করে সাড়ে পাঁচ কোটী, আয় কর্পেরেশনও কযি অায় করে ১৫ কোট ও অন্যান্য করে বৃদ্ধির কারণে। বাণিজ্য আবগারী ও বিক্রয় কর বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল অধিক. শিল্পউৎপাদন বৃন্ধি এবং প্রশাসনিক উন্নতি। ১৯৭৫-৭৬ সালে বাৎসরিক উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯৫০ কোটি টাকা। পরে পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয় ৯৬৫ কোটী টাকা। কিন্তু প্রকল্পসমূহ দেরী কবে অনুমোদিত হওয়ায় এই অর্থ বণ্টনে যথেষ্ট ধীর নীতি বলবৎ থাকায় প্রকৃত পরিকপনা দাড়ায় প্রায় ৮৫০ কোটী টাকা। উন্নয়ন বাজেটের অৰ্থ সংস্থান অতএব, দাঁড়ার নিম্নরুপঃ
খাত বাজেট প্রকৃত
রাজস্ব উদ্বৃত্ত ১৫৬.১৯ ১২১.০৮
রাজস্ব খাত বহির্ভূত নীটপ্রাপ্তি ৯৩.৮১
ঘাটতি অর্থ সস্থান ৯১.১২
বৈদেশিক ঋণ ও মঞ্জুরী ৭০০.০০ ৬২৯.০০
মোট ৯৫০.০০ ৮৫০.০০

১৯৭৬ সালের প্রথম অংশের বিভিন্ন ধরনের কর আয়ের একটি তালিকা পাওয়া যায় ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৯৬৬.৩৮ কোটী টাকা নতুন কোন কর ধার্য করা হয়নি। ব্যয়ের পরিমাণ নির্ণীত হয়েছে ও ৭৭ কোটি টাকা। উত্তের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৯৮ ৫১ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের মধ্যে বাণিজ্য শক থেকে আসবে ৩১৩ কোটী, অবস্থার এক থেকে ২০০ কোটী, অায় কর্পরেশন ও কৃষি আয় কর থেকে ২, ৩৬৫ ৭ট, বিক্রয় কর থেকে ১১৩ ৫০ কোটী টাকা। রাজস্ব আয়ের সাধারণ চরিত্র হিসাবে দেশরক্ষা সর্বপ্রথম আসছে। এ খাতে খরচ হবে ১৫৫.১৫ কোটি শিক্ষা খাতে ১৩২ ০১ কোটী টাকা। সাধারণ প্রশাসনে ৩।৩৬ কোটি, পুলিস বিভাগ ৪।২৯ কোটী, রেলওয়েতে ৫৮১ তে কোটি স্বাস্থ্য ২৭, ২৯ কোটী এবং অন্যান্য বিভিন্ন খাতে খরচ ধর, হয়ছে ১৯.৬ কোটী। অপ্রত্যাশিত খরচ হিসাবে ৪০ কোটী টাকা রাখা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচীতে ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ করা হয় ১২ ২২ কোট টাকা এবং নীট বরাদ্দ হয়েছে ১১০০ কোটী টাকা শিল্পের জন্য সরবা।ধিক গুরুত্ব রাখা হয়েছে, বরাদ হয়েছে ২৪৬ কোটি টাকা কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের জন্যে ২১২ কোটী, যানবাহন, বিদ্যুৎ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি সম্পদের জন্যে যথাক্রমে ১৬৫, ১৫৫ এবং ১৫০ কোটী টাকা রাখা হয়েছে। গৃহ নির্মাণ, প্রাকৃতিক পরিকল্পনা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং যোগাযোগের জন্যে নির্ধারিত বরাদ্দের পরিমাণ যথাক্রমে, ৭৩, ৫৬ এবং ১২ কোটী টাকা। এই বিরাট ব্যয় বরাদ্দের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৯১৬৫৯ কোটী টাকা অাসবে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ থেকে। বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের উপর পববর্তী বছরে নির্ভরশীলতার পরিমাণ ছিল ৭৩ শতাংশ। বৈদেশিক সুত্রের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা একদিকে যেমন বিপজ্জনক, অন্যদিকে অনিশ্চিত। অবশ্য এ পরিমাণ ঋণ সত্যি পাওয়া গেলে এবং তাকে সঠিক ব্যবহার করতে পারলে উন্নয়ন সার্থক হবে। ১৯৭৬-৭৭ সালে অপেক্ষাকৃত সুষ্ঠ, বাজেট তৈরী হওয়া ছাড়াও কিছু, রাজস্ব কার্যক্রমের পরিবর্তন করা হয়। শহর অঞ্চলে আবাসিক জমিসহ চাষ হয় না এ ধরনের জমির জন্যে বিভিন্ন কর ব্যবস্থাকে একত্রিত করে একটি ভূমি উন্নয়ন কর করা হয়েছে। একই চাষাবাদি জমির উপরেও একক কর প্রথা চালু হয়েছে। এ নীতি অনুসারে ২৫ বিঘা জমির উপর প্রতিবিঘা জমির জন্যে কর পুনর্নির্ধারিত হয় পাঁচ টাকা। কয়েকটি প্রকল্পের পানি সরবরাহের উপর তিন শতাংশ জলকর ধরা হয়েছে। বাণিজ্য শুঙ্কেও কিছু রদবদল করা হয়েছে। ওয়েজ আর্নার স্কীমের অধীনে কাঁচামাল আমদানীর উপর কর অব্যাহতিকে আংশিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। ট্রাক ও বাসের উপর শুল্ক ৭৫% থেকে কমিয়ে ৪৫% করা হয়েছে। জীপ, ওয়াগন কার মাইক্রোবাস ইত্যাদির ওপর শুল্ক ১০০% থেকে কমিয়ে ৬০% শতাংশ করা হয়েছে। একইভাবে মেরিন ডিজেল ইঞ্জিনের মল্যানসারী শুল্ক ৩৫% থেকে হ্রাস ঘটিয়ে ২৫% করা হয়েছে। কসটিক সোডর উপর মুল্যায়নসারী শুল্ক কমানো হয়েছে ৭৫% থেকে ৫০%। রেজিন, পিভিসি দ্রব্যাদি, কয়েক ব্যাণ্ড রেডিও, ব্লেড ইত্যাদির উপর মুল্যায়নসারী শুঙ্কও হ্রাস করা হয়। পাকা চামড়ার উপর আবগরী মুল্যায়নসারী শুল্ক দশ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য ছোট চামড়া কারখানা আগে যে শুল্ক অব্যাহতি পেত তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সব ধরনের ‘পাদুকাসহ চামড়ার দ্রব্যাদির খুচরা মূল্যের উপর আবগারী শুল্ক ১৫% থেকে ১০% করা হয়। স্টোরেজ ব্যাটারীর খুচরা মূল্যের উপরও আবগারী শুল্ক হ্রাস করা হয়। দেশী জিআই তার, পেরেক, পেরেকের তার, স্ক্রু, নাট-বল্ট, ওয়াসার ইত্যাদির উপর বিক্রয় কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশ শতাংশ করা হয়েছে। গ্যাস চুলা এবং তার খুচরাদির উপর কর রেয়াদ দেয়া হয়েছে। আমদানীকৃত অথবা দেশীয় ব্লেডের উপর বিক্রয় করের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ৮.৪০০ টাকার উধে আয়ের উপর আগে আয়কর আরোপ্য ছিল। এই সীমা বাড়িয়ে এ বছর আয়কর আরোপনযোগ্য নিম্নতম সীমা করা। হয়েছে ৯০০০ টাকা। অবস্থা সম্পন্ন কৃষকদের কৃষি আয়ের উপর কর আরোপনকে আয়কর ধারার আওতায় আনা হয়েছে। আয়কর নির্ধারণের সময় সন্তানদের শিক্ষাভাতা ১৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪০০ টাকা করা হয়। অন-ঐতিহ্যবাহী রফতানী আয়ের উপর কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ত্রিশ শতাংশ। এক লাখ টাকা মূল্যের স্থাবর কৃষি সম্পত্তির উপর আগে কর অব্যাহতি ছিল। এ বছর দুই লাখ টাকা মুল্য পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বর্তমান করনীতি জনগণকে কিছুটা সন্তুষ্ট করতে পেরেছে। প্রথমতঃ মুল্য বৃদ্ধির এ বাজারে কর বৃদ্ধি এবং কর বোঝই ‘অনন্নত দেশসমুহের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। অথচ সেখানে একদিকে ঘটেছে মুল্য হ্রাস এবং অন্যদিকে আয়করে নিম্ন সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তদুপরি শিক্ষার জন্যে রয়েছে কর-সুযোগ। রফতানী বৃদ্ধিতেও রয়েছে যথেষ্ট উৎসাহদান পদ্ধতি। অনেক ধরনের আমদানীর উপরেও কিছু, সুবিধা দেয়া হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর নামক একীভূত কর ব্যবস্থা কর প্রশাসনের কিছুটা উন্নয়ন। তবু, অসুবিধার দিকও কিছু কিছু রয়েছে। অনেকেই মনে করেন এ রাজস্ব ব্যবস্থা কৃষি থেকে শিল্পকে অধিকতর মুল্যায়ন করেছে। সারের উপর ভর্তুকিদানের সুযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি কৃষি উৎপাদন এবং কৃষকদের জন্যে বাধাস্বরপ। সরকার অবশ্য কৃষিঋণ বুদ্ধির মাধ্যমে এর প্রতিকার করতে চেয়েছে, কিন্তু প্রকৃত প্রয়োজন যাদের তারা নিশ্চয়তা বা বন্ধকী দিতে পারে না বলেই ঋণ পায় না। পাকা চামড়া এবং ‘পাদুকা’ ক্ষুদ্র শিল্পের রাজস্ব সুবিধা তুলে নেয়ায় এ ধরনের ক্ষুদ্র শিল্পে নতুন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। ওয়েজ আর্নার স্কীমেও আগের উৎসাহ এখন আর নেই। তবুও বর্তমান রাজস্ব নীতি একদিকে জনগণকে কিছুটা আশ্বস্ত করেছে এবং সরকারকে প্রায় ষোল কোটী টাকা আয় বাড়াবার ব্যবস্থা করেছে। কর ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সমস্যা যাচাইয়ের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করার জন্যে ১৯৭৬ সালে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরকে প্রধান। করে একটি কমিশন নিয়োগ করেছেন। এতে অর্থ মন্ত্রণালয় কর বিষয়ক বিভিন্ন বিভাগ ইত্যাদি থেকে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা রয়েছেন। আশা করা যায়। আগামী বাজেটে এবং কর ব্যবস্থায় এরা যদি আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে তবে সত্যি কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
খাতসমুহ ১৯৭৫-৭৬ পরিবর্তিত বাজেট ১৯৭৬-৭৭ বাজেট
রাজস্ব বাজেট আয়
বাণিজ্য শুল্ক
২৬০.২৫
৩১৩.০০
আবগারী শুল্ক
১৭৮.`০০ ২০০.০০
আয়কর কর্পরেশন ও কৃষি আয়কর
৮০.১৫ ৮৭.৬৫
বিক্রয় কর
১১০.৫০ ১১৩.৫০
অন্যান্যঃ
২৫৩.৭৪ ২৫২.২৩
মোট
৮৮২.৬৪ ৯৬৬.৩৮

ব্যয়
প্রতিরক্ষা ১৪৪.৭২ ১৫৫.১৫
শিক্ষা ৯২.৯৯ ১০২.০১
সুশীল প্রশাসন ১৫০.৯১ ৮৭.৬৫
রেলপথ ৫০.৭৫ ৫৮.১০
স্বাস্থ্য ২৪.৩০ ২৭.২৯
অন্যান্য উন্নয়ন ১৩১.৮৭ ১৯৮.৪৬
অন্যান্য ৮৮.১৬ ১৪৩.১১

মোট ৬৮৩.৭০ ৭৬৭.৮৭
উদ্বৃত্ত ১৯৮.৯৪ ১৯৪.৫১

ব্যাংকিং
স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ সালে এক বিশেষ আদেশ-বলে ব্যাংকসমুহকে জাতীয়করণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে দেয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। এর পর দেশীয় প্রয়োজনে ব্যাংকসমূহের শাখা বিস্তার নীতিকে সমর্থন করা হয়। এর ফলে সমগ্র দেশে প্রায় প্রত্যেকটা ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য শাখা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু খুব শীগগীর একথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, শাখার সংখ্যা বাড়লেই গ্রামীণ সঞ্চয়কে সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় খাতে সঠিক ঋণ বণ্টন সম্ভবপর হয় না। এর প্রধান কারণই ছিল গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে খুব কমসংখ্যক জনগণ সচেতন। এ জন্যে ১৯৭৫ সালে ব্যাংক শাখা বিস্তার নীতিকে পরিবর্তিত করা হয়। নতুন শাখা তৈরী করে অনেক পুজিকে অব্যবহার না করে প্রতিষ্ঠিত শাখাসমূহের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়িয়ে ওই পু’জিকে সঠিক প্রয়োজনে খরচ করার নীতি নেয়া হয়। এবং এ নীতি ১৯৭৬ সালে বলবৎ থাকে। এর ফলে ব্যাংকসমূহের শাখা যথেষ্ট না বাড়লেও বেশ কিছু নতুন শাখা তৈরী হয়। ১৯৭৬-এর ১লা জানুয়ারী থেকে নভেম্বর সমাপনীতে মোট তপসিলভুক্ত দেশীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখার সংযোগ বেড়েছে ১৭২টি। কৃষি ব্যাংক বেড়েছে একটি। শিল্প ব্যাংকে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেনি। আমদানী-রফতানী ব্যাংক তৈরীর জন্যে প্রস্তাব এবং বিশ্লেষণ হয়েছিল। কিন্তু যুক্তিসঙ্গত মনে না হওয়ায় তৈরী হয়নি। কেননা নতুন ব্যাংক তৈরী করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন না ব্যয় না করে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোন ‘সেল’-ই এ কাজ চালিয়ে নিতে পারে। এ উদ্দেশে ১৯৭৬ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্বাধীন হল প্রস্তাবিত ‘আমদানীরফতানী ব্যাংকের দায়িত্বাবলী। স্থাপিত হয়েছে পাকিস্তানী একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক হাবিব ব্যাংক লিমিটেড। ১৯৭৬ এর শেষাংশে স্থাপিত হয়েছে আর একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংক, ব্যাংক অফ ক্রেডিট এন্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল, (ওভার সিজ) লিমিটেড। যার রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে, মোট দু’টি শাখা। যে দেশে ৮০ শতাংশের ঊধে জনগণ বাস করে গ্রামে সে দেশে মোেট ব্যাংক শাখার মাত্র ৯৭০টি বা ৫২% ভাগ আছে গ্রামীণ এলাকায়। এবং ২০ শতাংশ শহরবাসীর জন্যে আছে ৪৮% ভাগ ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রামের সঞ্চয়কে সংগ্রহ করে শহরকে উন্নত করার ভুল ধারণার উপর ব্যাংকসমূহ এখনো কাজ করে যাচ্ছে।

শহর শতাংশ গ্রাম শতাংশ
জনসংখ্যা ১৬ ৮৪
ব্যাংক ৪৮ ৫২
সঞ্চয় (আমানত) ৯০ ১০
ঋণ ৯৭ ৩

উপরের তালিকা থেকে সপষ্ট হয় যে, গ্রাম থেকে সঞ্চিত ১০% ” থেকে মাত্র ৩% ঋণ গ্রামে যায়। বাকী ৭%ই শহর উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হয়। তবু, সম্ভবতঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করা তাদের নীতির ফলশ্রতি হিসেবে প্রায় সবক’টি থানায় এখন অন্ততঃ ৮ ব্যাংক আছে। শুধু ব্যাংকের সংখ্যার উপর সঞ্চয় নির্ভর করে না বরং সং ব্যবহার ও সঠিক পরিচালনার ওপর সঞ্চয়ের পরিমাণ
বাঙ্কের নাম জানুয়ারী ১৯৭৬ জুন ১৯৭৬ নভেম্বর ১৯৭৬
সোনালী ব্যাংক
জনতা ব্যাংক ৩৬৩
৩২১ ৪০৯
৩৪৪ ৪৩২
৩৪৯
আগ্রনী ব্যাংক ৩০৫ ৩১৩ ৩২৩
রুপালী ব্যাংক ২২৭ ২৪৫ ২৫৭
পুবালী ব্যাংক ১৭৮ ১৯২ ২০০
উত্তরা ব্যাংক ৮৬ ৯০ ৯১
কৃষি ব্যাংক ১৫২ ১৫২ ১৫৩
শিল্প ব্যাংক ৭ ৭ ৭

গীডলেজ ব্যাংক ১১ ১০ ১০
আমেরিকান এক্সপ্রেস ইস্ট করপ্রেশন ২ ২ ২
চার্টার্ড ব্যাংক ২ ২ ২
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ১ ১ ১
হাবীব ব্যাংক লিমিটেড ০ ০ ১
ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইস্ট ০ ০ ২
ভারতীয় অপ্রচলিত ব্যাংক ১২ ১২ ১২

নির্ভর করে। এ জন্যে এ বছর ব্যাংকসমুহকে ক্রেতাদের সঙ্গে অধিকতর ভদ্র ও সুষ্ঠ, ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ ব্যবহার উন্নতির মাধ্যমে কর্মক্ষম ব্যাংক কর্মচারী তৈরীর জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিউটের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। তরুণে অফিসার এবং স্টাফ গ্রহণ করা হয়েছে, উৎসাহের সঙ্গে কাজ করার জন্যে। সঞ্চয় বাড়াতে পারলে, পূর্বেকার প্রচলিত পদ্ধতিতে, পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিদেশী ব্যাংকের সংখ্যা বাড়াতে এবং তাদের কর্মচারী বেতন হার অধিকতর হওয়াতে, তাঁদের হাতে সঞ্চয় ও ব্যবসার অনেকটা চলে যাওয়ার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাতে দেশীয় প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। সঠিক প্রতিযোগিতা হলেই হয়তো ব্যাংকের কর্মদক্ষতা বাড়বে।
অর্থ সরবরাহ
১৯৭৫-এর শেষ দিক থেকে দ্রব্যাদির সরবরাহ বৃদ্ধি এবং মূল্য হ্রসের প্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালে মুদ্রা এবং ঋণ নীতিকে কিছুটা উদারনৈতিক করা হয়। ইতিমধ্যেই দাবী ওঠে যে, ১৯৭৫-এর মার্চ মাস থেকে পর পর গৃহীত কঠোর মুদ্রানীতি অর্থ সরবরাহে যে হ্রাস ঘটিয়েছিল তা ১৯৭৬ সালে কিছুটা শিথিল করা প্রয়োজন। মুদ্রার দিক দিয়ে বাজার । হয়ে উঠেছিল শতক। মুদ্রাস্ফীতিকে সংহত করতে গেলে সাধারণতঃ এ অবস্থা জন্ম নেয় এবং এর পর পরই দেখা দেয় মন্দা। ১৯৭৬-এর প্রথম দিকে এ মন্দা বেশ কিছুটা প্রকট হয়ে যায়। এসব কারণে অর্থ সরবরাহ পরিমাণ ছিল ৯৩২৫২ কোটী টাকা সেখানে এক মাসে অর্থাৎ জানুয়ারী শেষে বেড়ে হয় ৯৩৫.৩৫ কোটী টাকা। পরবর্তী মাসে আরও ১০,৮৪ কোটী টাকা বৃদ্ধি পায়। এই তিন মাসের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশীয় অর্থনীতিতে অবশ্য একটা অবশ্য শ্বাভাবিক চরিত্র মাত্র। সাধারণতঃ এই সময় ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। যে জন্যে অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে এ সময়কে বলা হয় ব্যস্ততম কতু। এই সময়ের পরে অর্থ সরবরাহে কিছুটা সংকোচন লক্ষ্য করা যায়। মার্চ মাসে প্রায় ষোল কোটী এবং এপ্রিল মাসে প্রায় পয়ত্রিশ কোটী টাকা কমে গিয়ে অর্থ সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯৪ ৭৫ কোটী টাকায় মে ও জুন মাসে পুনরায় অর্থ সরবরাহ বেড়ে ওঠে এবং তার পরিমাণ জুন মাসে পুনরায় অর্থ সরবরাহ বৈড়ে ওঠে এবং তার পরিমাণ জুন, ১৯৭৬-এ দাঁড়ায় ৯০১.১৫ কোটী, জুলাইতে হয় ৯১১.১৪ কোটী। এভাবে হ্রাস বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে অক্টোবর, ১৯৭৬ সালে অর্থ সরবরাহের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৫৩, ১৯ কোটী টাকা। এর পর ১৯৭৬ সালের আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অতএব, ১৯৭৬ সালের প্রথম দশ মাসে অর্থ সরবরাহের নীট বৃদ্ধির পরিমাণ দাড়াল ২১ কোটী টাকা। যেখানে পূর্ববর্তী বছরে ওই একই সময়ে এর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছিল প্রায় ৪৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ। অর্থ সরবরাহ বুদ্ধির প্রধান কারণ ছিল চাহিদা আমানতে সঞ্চয়ের প্রায় ২৫ কোটী টাকা বৃদ্ধি । অন্যদিকে ব্যাংক বহির্ভূত মুদ্রা প্রায় চার কোটী টাকা হ্রাস পেয়েছিল। অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধির বিশদ বিশ্লেষণ দেখলে দেখা যাবে যে, ব্যক্তিগত ও সরকারী উভয় খাতেই ঋণ বাড়ে। সময় আমানতে একশ’ চল্লিশ কোটী বৃদ্ধির অর্থ সরবরাহকে সমপরিমাণ হ্রাস ঘটালেও সরকারী রাজ কার্যক্রম ও বিবিধ কারণের অর্থ সরবরাহ বাড়ে।
সঞ্চয়
ব্যাংকে রক্ষিত মোট আমানতের পরিমাণ জানুয়ারী থেকে (সবগম প্রাপ্ত) অক্টোবর পর্যন্ত ১৬৪ ৩৪ কোটী টাকা বেড়ে ১১৯৩ ৭৭ কোটি টাকা হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরে বৃদ্ধি তো পায়ইনি বরং হ্রাস ঘটেছিল ২.৪৮ কোটী টাকার। পূর্ববর্তী বছরে মুল্য বৃদ্ধি বলবৎ থাকায় সঞ্চয় বাড়ানো সম্ভব হয়নি
ব্যাংক ঋণ
মোট ব্যাংক ঋণ ১৯৭৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ে ৮৮.৭২ কোটী টাকা। মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৩৬.০৫ কোটা টাকা। ব্যাংক আমানত বৃদ্ধির ফলেই ব্যাংকসহ এই অধিকতর ঋণদান। করতে পারে। গত বছরে এই সময় ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল অর্ধেকের চেয়েও কম, প্রায় একত্রিশ কোটী টাকা। বছরের প্রথম কর্মময় ঋতু অর্থাৎ জানুয়ারী-মার্চ সময় ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল সাতাশি কোটী টাকা। এপ্রিল-জুলাইয়ের মন্দা ঋতুতে ঋণ কমে যায় প্রায় উনাশি কোটী টাকায়। পরবর্তী সময় আবার প্রায় একাশি কোটী টাকার ঋণ বেড়ে গেছে। ঋণের এই ক্রমিক বুদ্ধি মুলতঃ ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতির শিথিলীকরণ, থেকে উদ্ভুত্ত
।বৈদেশিক মুদ্রা মজুদে
১৯৭২ সালে যেখানে কোন বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না সেখানে ১৯৭৫ সালের শেষে ১৯৯.৬২ কোটী টাকা মজুদ হয়। বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে যেতে থাকে। ১৯৭৬-এর মার্চ মাসে হস্তু ৪১৪,৮৯ কোটী, জুন মাসে ৩১৫.৩৪ কোটী, জুলাইতে আরও বেড়ে হয় ৩৪২,৫৮ কোটী এবং সর্বশেষ প্রান্ত তথ্য অনুযায়ী আগস্ট, ১৯৭৬এ হয় ৯৯.৪২ কোটী টাকা।
অন্যান্য
ঋণ বৃদ্ধির চেয়ে আমানত বৃদ্ধি আনুপাতিকভাবে বেশী হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট থেকে তপশীলভুক্ত, ব্যাংকসমূহে ঋণের পরিমাণ প্রায় ১১৩ কোটি টাকা কমে গেছে বছরের প্রথম দশ মাস অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের রক্ষিত সঞ্চয়ের পরিমাণও প্রায় পরিমাণ প্রায় চৌদ্দ কোটী টাকা বেড়েছে। ব্যাংক হার, আংশিক নগদ অর্থ মজুদ এবং লিকুইডিটি হ্যর ২ সালে ১৯৭৫ সালের তুলনায় অপরিবর্তিত থাকে। সঞ্চয় বাড়াতে উদ্দেশ্যে এবং দেশীয় স্বার্থের দামে ব্যাংকসমূহের মুনাফা বৃদ্ধি ঘটায় পহেলা এপ্রিল ১৯৭৬ সাল থেকে আমানতের উপর সুদ হারকে ১২ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যেখানে সব ধরনের আমানতে চার থেকে সোয়া ন’শতাংশ সুদ ছিল এখন সেখানে পাঁচ থেকে সোয়া দশ শতাংশ সুদ হবে। অবশ্য কৃষি ব্যাংক ও শিল্প ব্যাংকে আরও এক শতাংশ সম্পদ বেশী দেয়ার প্রচলিত বিধি অপরিবর্তিত রাখা হয়। ঋণ ও ধারের ওপর ব্যাংকের সুদ হারে ১৯৭৫-এর তুলনায় কোন পরিবর্তন ঘটেনি।।
ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি
১৯৭৬ সালের ঋণ নীতি ক্রমিক হারে উদারনৈতিক হয়ে ওঠে। অবশ্য এ ধরনের নীতি আরম্ভ হয় ১৯৭৫-এর সেপ্টেম্বর থেকে। এ নীতি, ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষায়, “ব্যাংক ব্যবহার সীমিত সম্পদকে উৎপাদনমুলক খাতের প্রকৃত ঋণ প্রয়োজনকে মেটানো এবং ফটকা ও অনুৎপাদনমুলক খাতে ঋণ প্রসারণকে বাধাদানের উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়। এ বছরের পহেলা জানুয়ারীতে নেয়া হয় প্রথম পদক্ষেপ। প্রথম। নীতিটি ব্যক্তিগত বা সরকারী উভয় খাতের বেলায় প্রযোজ্য হবে। যারা ব্যর্থ হয়েছে এ ধরনের কোন আমদানীকারকদের আর লেটার অফ ক্রেডিট দেয়া হবে না যতক্ষণ না তারা পুবের ওভারড্রাফট সম্পূর্ণ পরিশোধ অবাসের জন্যে গৃহ নির্মাণ সুবিধা হিসাবে পূর্বের যে গৃহ নির্মাণ ঋণ নিয়ন্ত্রণ প্রচলিত ছিলো তা প্রত্যাহার করা হয়। স্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে এক লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ দেয়া যাবে, যদি গৃহ নির্মাণ অর্থ সংস্থান কর্পোরেশন । আগেই ওই পাটিকে ঋণ দিয়ে থাকে। আমদানী-রফতানীতে সুবিধা দেয়। যোগাযোগ ও যানবাহন খাতে ঋণদান, গৃহ নির্মাণ সুবিধাদি, ছোট ঋণের বিস্তৃতি ইত্যাদি ছাড়া আরও কিছু, ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। এদের মধ্যে সব থেকে আলোচ্য ঋণ সুবিধা হচ্ছে ধান-চাল সংগ্রহের জন্যে প্রকত ব্যবসায়ীদের ঋণদান পদক্ষেপ। এ বছর যেহেতু যথেষ্ট ফসল হয়েছে এবং যেহেতু আগামী ফসল অনিশ্চিত অতএব ধান-চাল মজুদ করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারী পদক্ষেপ সবটুকু মজুদ সম্ভব নয় এবং অনেক ধরনের কালোবাজারী জন্ম হয়, এ কারণে সরকার এবার ব্যক্তিগত খাতে এ দায়িত্ব আংশিকভাবে দিতে • চেয়েছে। গুদামজাতকরণের অসুবিধা থাকা সত্তেও সম্ভবতঃ ব্যক্তিগত খাত এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে। কিন্তু সবটুকু সুষ্ঠু, হবে কি না সন্দেহাতিতভাবে তা বলা যায় না। মজুদদাররা এতে একদিকে সুবিধা পাবে। মজুদ দারদের হাতে একবার ক্ষমতা এলে ১৯৭২-৭৫-এর দাপটে ফিরে আসতে খুব একটা কষ্ট হবে না। তাছাড়া ধান-চাল ব্যবসায়রা অনেক সময় ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে অধিক সুদ হারে অন্যত্র লোন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য দাবী করছে এসব অন্যায়ের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সজাগ দৃষ্টি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যন্ত্র এবং ঋণ নীতিতে যথেষ্ট ঔদার্য ফিরে এলেও বাজারে এখনো এক স্বচ্ছলতা ফিরে আসেনি। জিডিপি বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অর্থ সরবরাহ বাড়তে পারে। তার থেকে যথেষ্ট বেশী বেড়ে গেলে । মুদ্রাস্ফীতি ঘটার বিপদও আছে। সুতরাং বাজারে সাচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গিয়ে আমরা মুদ্রাস্ফীতিকে প্রশ্রয় দিতে পারি না। সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুদ্রানীতি যথেষ্ট সুষ্ঠু অ সঠিক রয়েছে বলে মন্তব্য করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বাজারের মন্দা শুধুমাএ মুদ্রানীতি দিয়ে তুলে নেয়া যায় না। বাবসায়ী মহলকে বুঝতে হবে যে কয়েকশ ভাগ মুনাফাটি সঠিক ব্যবসা নয় এটিও এক ধরনের কালবাজারী। আর মুদ্রানীতি তো বাজারকে সচল করার উদ্দেশ্য তৈরী করা হয় না বরং কৃষি উৎপাদন ও শিল্পোন্নয় হচ্ছে এর প্রধান লক্ষ্য।
বাজারদর
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ইতিহাসে মুল্য হ্রাসের ঘটনা সম্ভব হল ১৯৭৬ সালে। এর আগে ছিল কেবল মুল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা। মুল্য হ্রাস প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫-এর শেষ দিক থেকেই আরম্ভ হয়, যদিও ১৯৭৫-এর এপ্রিল এবং মে মাসে একশ’ টাকার নোট অচলিকরণ এবং মুদ্রা মূল্য পুনঃ নির্ধারণ ‘সাময়িকভাবে কিছুটা মুল্য হ্রাস ঘটিয়েছিল। ১৯৭৫-এর শেষ দিকের প্রভাব, পরবর্তী সফল ফলন, বাজেট ও মুদ্রানীতির সার্থকতা, প্রশাসনে দৃঢ়তা ইত্যাদির সম্মিলিত কারণে ১৯৭৬-এ বজায় থাকে মূল্য নিনস্তর, যদিও অধিকতর নিম্নগতি বজায় থাকেনি। ১৯৭৪-এর শেষ এবং ১৯৭৫-এর প্রথমে নিম্নমানের যে চালের দাম সাত টাকা থেকে দশ টাকায় ওঠে ১৯৭৬-এর জানুয়ারীতে তা নেমে আসে তিন টাকা পচিশ পয়সায়। আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক নীতির ফলে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি সংযত হওয়ায় চালের দামের এ হ্রাস ঘটেছিল। মার্চ মাস পর্যন্ত সের প্রতি এ ধরনের চালের দাম কমতে থাকে। এবং তিন টাকা বারো পয়সায়। এসে থেমে যায়। তারপর আসে অর্থনৈতিক মন্দা ঋতু। বছরের এ সময় চালের দামে বৃদ্ধি ঘটে। এবং তাই এপ্রিল মাসে দৈনন্দিন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ টাকা ৩৭ পয়সা হয়। মে মাসের শেষ থেকে জুলাই পর্যন্ত আউশ ধানের প্রভাবে চালের দাম ধারাবাহিকভাবে কমে তিন টাকা হয়। এর পর আবার আসে বৃদ্ধির পালা। অক্টোবরে তিন টাকা পচিশ পয়সা হয়, এবং ডিসেম্বরে আমন ধান বাজারজাত হওয়ায় এবং উৎপাদনে উল্লেখ যোগ্য সার্থকতা আসায় চালের দাম তিন টাকা হয়ে যায়।’ একদিকে মুদ্রাস্ফীতি পরবর্তী মন্দার প্রভাব এবং অন্যদিকে ফারাক্কাজনিত পানি সঙ্কটের ফলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং তার মুল্য হ্রাস যথেষ্ট বিপদসঙ্কুল ছিল। এ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেছেন, যে, ১৯৭৬-এর ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয়-দফা মুল্য হ্রাস না ঘটাক্তে পারলে অথবা অন্ততঃ পুনরায় মুল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উৎপাটন করতে না পারলে আবার মুদ্রাস্ফীতি জাতীয় সমস্যা থেকে মন্বন্তর জন্ম নিতে পারে। আশ্বস্ত হওয়ার কারণ এই যে, সামগ্রিক মূল্যন্তরেপ না ঘটলেও একেবারে প্রধান পণ্যাদির দাম কিছুটা কমছে। যেমন কমছে মশুর ডালের দাম। মশুর ডালের সের প্রতি দাম ছিল ‘৭৪-এর ডিসেম্বয়ে যেখানে ছ’টাকা, ডিসেম্বর ১৯৭৫-এ তা হয়ে যায় সাড়ে আট টাকা। এবং দ্রুত বেড়ে জানুয়ারী ১৯৭৬-এ হয় দশ টাকা। উৎপাদন কম হলেও মূল্য বৃদ্ধি এতটা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। সরকার তৎক্ষণাৎ ডাল আমদানীর পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং সহানীয় কালোবাজারী বক্সে চেষ্টা করে। ফলে ফেব্রয়ারী, ১৯৭৬ থেকে মূল্য হ্রাস ঘটতে আরম্ভ করে। ফেব্রুয়ারীতে দাঁড়ায় সের প্রতি দু’টাকা, মার্চে চার টাকা, এপ্রিলে সাড়ে চার টাকা। এর পর ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ থেকে সাড়ে চায় টাকায় ওঠা-নামা করে। – তরিতরকারীর বাজারের তেমন হ্রাস বৃদ্ধি ঘটেনি। ডিসেম্বর ‘৭৪ এবং ‘৭৫-এ আলুর দাম আড়াই থেকে পৌনে তিন টাকায় ওঠা-নামা করেছে। সেখানে সমগ্র ১৯৭৬ সালে সের প্রতি আলুর দাম সোয়া এক থেকে তিন টাকায় ওঠা-নামা করে। করলা বেগুন ইত্যাদিও স্বাভাবিক হ্রাস-বধি দেখা যায়। পিয়াজের দামে পববর্তী বছরগুলোর চাইতে গড়ে হ্রাস লক্ষ্য করা যায়। ১৯৭৪ ও ‘৭৫-এ দুই টাকার কিছু, উপরে ছিল পিয়াজের গড় মুল্য এ বছর দেড় টাকার মত রয়েছে। শুকনো মরিচের দামে বেশ কিছু নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৭৪-এর ডিসেম্বরে যেখানে সের প্রতি দাম ছিল ১২০ টাকা সেখানে জানুয়ারী ‘৭৬-এ হয়েছে মাত্র ১২ টাকা। মার্চ, এপ্রিল, মে এবং জনে প্রায় দশ টাকা হয়ে যায় এর দাম। পরবর্তী সময়ে ব্যাশেষী বন্যার ফলে মরিচ উৎপাদন ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে দামে প্রায় ৬০% বৃদ্ধি দেখা যায়। নভেম্বরের মৌসুমে অবশ্য মরিচ উৎপাদন বেড়েছে। সবটা বাজারে এসে না পৌছলেও দাম ইতিমধ্যে কমতে আরম্ভ করেছে। প্রায় ১২ টাকা করে এখন বাজারে পাওয়া যায়। মাছ এবং মাংসের বাজারে রয়েছে সব থেকে দুরাবস্থা। এদেশে মাছের উৎপাদন এবং সরবরাহ এমনিতেই কমে আসছিল। তার উপর ফারাক্কা বাঁধ তৈরীর পর পরই পানি সরবরাহ দারণভাবে বাধা পায়। ফলে মাছ একেবারে প্রাপ্য হয়ে গেছে। যে পদ্মার ইলিশের গর্বে ছিল বাঙালীর বুক ফলে আজ আর তার কোন মর্যাদা নেই। শহর অঞ্চলে ছোট মাছ বা বিভিন্ন ধরনের মাছ বলতে গেলে পাওয়া যায় না। রুই মাছের দাম ১৯৭৪-এর ডিসেম্বরে সের প্রতি যেখানে ছিল দশ টাকা দাম, ১৯৭৫-এ হয়েছে চৌদ্দ টাকা, ১৯৭৬-এ হয়েছে বিশ টাকা। অর্থাৎ, ‘দুবছরে ১০০% বৃদ্ধি ইলিশ মাছের মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ ৫০%। মাছের সরবরাহ কমায় এবং দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে মাংসের দাম। খাসির মাংসের দাম আলোচ্য বছরে ষোল টাকা থেকে বিশ টাকায় ওঠা-নামা করেছে। গরুর মাংসে অবশ্য অতটা হ্রাস-বৃদ্ধি দেখা যায় না। বনস্পতি এবং শর্ষের তেলের দামে বেশ কিছু হ্রাস দেখা যায়। ডিসেম্বর ১৯৭৫ শেষে যথাক্রমে এদের দাম ছিল বিশ টাকা এবং ছাব্বিশ টাকা। ১৯৭৬ শেষে দাঁড়িয়েছে আঠারো এবং বিশ টাকায়। ১৯৭৪ শেষে চিনির দাম ছিল সের প্রতি আঠারো টাকা। ১৯৭৬এর জানুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত যেখানে দাম ছিল এগারো টাকা। এর পর আখ চাষ কম হওয়ার প্রভাবে, এবং রেশন চিনির দাম বাড়ায় বাজারে চিনির দামে কিছুটা বৃদ্ধি ঘটলেও সর্বোচ্চ ষোল টাকা হয়। ডিসেম্বর ১৯৭৬-এ অবশ্য আবার দাম কমে বারো টাকা হয়েছে। লবণের দামে ১৯৭৪-এর তুলনায় কিছুটা নাটকীয়তা রয়ে গেছে। ১৯৭৪-এর ওই সময় লবণের দাম যেখানে সেয় প্রতি বারো টাকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছিল, সেখানে ১৯৭৬-এ গড়ে স্বাভাবিক দাম দেড় টাকার কিছু কম থাকে। চায়ের সর্বশেষ উৎপাদনে হ্রাস ঘটায় কিছুটা মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। ‘৭৬ শুরু, হয়েছিল ইস্পাহানী গ্রীণ পটের পাউণ্ড প্রতি এগারো টাকা। দাম নিয়ে। মাঝে দু’পয়সা বৃদ্ধি ঘটেছিল। এবং আগস্টের পর থেকে এর দাম দাঁড়িয়েছে সাড়ে বারো টাকা। শিশুখাদ্য ছিল ১৯৭৪-এ অপ্রাপ্য। ১৯৭৬-এর ফেব্রুয়ারীতে ওয়েজ আর্নার স্কীমের ও অন্যান্য সঠিক আমদানী নীতির প্রতিফলে ডানো ফলীম পাঁচ পাউণ্ডের দুধ বাজারে পাওয়া যেতে থাকে। ৯৩ টাকা ছিল টিন প্রতি মুল্য। মার্চ মাসে দাম বেড়ে ১৭ টাকা হয়। এপ্রিল, মে, জুনে প্রায় নব্বই টাকা থাকে। জুলাই, আগস্টে দাম কমে গিয়ে ৬৮ থেকে ৬৬-র মধ্যে হয়, পরবর্তী আমদানী মৌসুমে ৭০ টাকা থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে রয়ে যায়। আন্তর্জাতিক কারণে কেরোসিন তেলের দামে মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও খুব একটা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেনি। ১৯৭৪-এর ডিসেম্বরে যেখানে গ্যালন প্রতি মূল্য ছিল আট টাকা, ১৯৭৬-এর জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারীতে হয় ১ানা দশ টাকাই রয়ে বাড়তে পারে। ওপেকের তেলের সোয়া ন’টাকা, মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একটানা দশ ২ মেছে। অবশ্য আগামী বছর আবার কিছুটা বাড়তে পারে। ওপেকের ৫% থেকে ১৫% মুল্য বৃদ্ধি প্রেক্ষিতে। লংক্লথের দাম যেখানে পূর্ববর্তী বছরসমূহে ২০ টাকা। এগারো টাকা ছিল, সেখানে ১৯৭৬ সালের আরম্ভ থেকে পর্যন্ত কমে গিয়ে সাত টাকা গজ দরে স্থায়ী থাকে। পরে অবশ্য বড় শেষ ক’মাসে গজ প্রতি মূল্য কিছুটা বেড়ে গিয়ে সাড়ে সাত হয়েছে। এছাড়া ১৯৭৫-এর তুলনায় ও ওষধপত্র, বৈদ্যুতিক বাতি। কাপড়, অস্টার মিল্ক, ল্যাক্টোজিন, এলবালানী কাঠ, ঘি, মাখন, হলুদ, আদা, সাবান ইত্যাদি বেশীর ভাগ দ্রব্যাদির মুল্য হ্রাস ঘটে। এর সস্পষ্ট প্রমাণ মিলবে ঢাকার জীবনযাত্রার ব্যবসায়ী দেখলে, কেননা সকল মুল্য আলোচনা হয়েছে ঢাকার বাজার দর দিয়ে। অন্যান্য জেলার বাজার দরে অনেকটা একই চরিত্রে, অবশ্য কিছু আগে-পরে হ্রাস-বন্ধি ঘটেছে বলে বিশদ আলোচনা করার প্রয়োজন পড়ে না। অর্থনীতি সংক্রান্ত বেশীর ভাগ তথ্যাদি সংগ্রহিত হয়েছে ।
১) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, জরীপ ১৯৭৫-৭৬. (অর্থ মন্ত্রণালয়); –
২) ইকোনমিস্ট ইনটিলিজেন্টস ইউনিটের বিভিন্ন প্রকাশন
৩) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন ইনডিকেটর
৪) বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বার্ষিক রিপোর্ট
৫) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকোনমিক ট্রেণ্ড
৬) বাংলাদেশ ব্যাংক বুলেটিনের বিভিন্ন সংখ্যা
৭) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনডিকেটর
৮) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট রিসিপ্ট এবং ইম্পাের্ট পেমেন্ট
৯) বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক রিপোর্ট:
১০) জার্নাল অফ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ
১১) বিচিত্রা’র ঈদ সংখ্যাসমূহ সহ বিভিন্ন সংখ্যা এবং
১২) বাংলাদেশ ব্যাংক এফেয়ার্স থেকে।
বন
বাংলাদেশের মোট আয়তনের শতকরা প্রায় ১৫.৭ অংশ জুড়ে বনভূমি রয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করবার জন্যে উপকুলবর্তী এলাকায় কৃত্ৰিম বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হচ্ছে। এছাড়া সমদ্র উপকলবর্তী নতুন জেগে উঠা অঞ্চলে বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ৫,০৪৪ বর্গমাইল এলাকায় সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমি রয়েছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৫০৭ বর্গমাইল এলাকায় অশ্রেণীভুক্ত বনভূমি রয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলের পাহাড় এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্র উপকুলে সুন্দরবনে ঘন কেন্দ্রীভুত বনাঞ্চল রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সমুদ্র উপকলবর্তী নতুন জেগে উঠা প্রায় ২,০০০ বর্গমাইল খাস জমি বন বিভাঙ্গের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। বনজ সম্পদের সঙ্গে আমাদের বেশ কয়টি শিল্পের উৎপাদন ধারা এবং আভ্যন্তরীণ জালানী নির্ভরশীল। কর্তৃপক্ষীয় সুত্রে বলা হয়েছে বর্তমানে বনজ সম্পদের অবস্থা সন্তোষজনক এবং এর উৎপাদন পুর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে, দেশে বনজ সম্পদের মধ্যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঠের চাহিদা , প্রায় ৩ কোটি ২৫ লক্ষ ঘন ফুট, জালানী কাঠের চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬ লক্ষ, বাঁশের চাহিদা ১৫ কোটি ২০ লক্ষ, গোলপাতার চাহিদা প্রায় ২০ লক্ষ মণ।। উপকুলীয় এলাকায় এ পর্যন্ত ২৬.৮০০ একর এলাকায় বন সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৭৬-৭৭ সনে ১৩,৫০০ একর জমিতে নতুন বন সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে। ভাওয়াল শাল বনে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত লক্ষ টাকা ব্যয়ে উক্ত উদ্যানে একটি বড় রেস্ট হাউজ, দু’টি পিকাল কর্ণার, জমি অধিকর, লেক খনন, ২.৫ মাইল কাঁচা-পাকা রাস্তা, ১টি স্টাফ কোয়াটার ইত্যাদি কাজ রসম্পূর্ণ হয়েছে। বর্তমান আর্থিক বই উদ্যানের কাজের জন্যে ৫,০০,০০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ সুত্তে জানানো হয়েছে আরও ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি উন্নয়ন কর্মসুচী অনুযায়ী আগামী ১৯৭৮ সনের জুন মাসে উদ্যানের কার্য গ্রহন হবে। বন্য পশু, সম্পদের ব্যাপারে কতৃপক্ষীয় সুত্রে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সনে বন্য পশু, সংরক্ষণ আদেশ জারি হবার পর সে পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান করা হয়নি।

বনজ সম্পদের ব্যবহার
সম্পদের নাম প্রাপ্তিস্থান-বনাঞ্চল ব্যবহার
১। গর্জন, জারুল, সেগুন চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম রেল লাইনের স্লিপার, আবাসিক সরঞ্জাম
২। চাপালিশ ঐ নৌকা ও আসবাবপত্র
৩। গ্রামাই ঐ দরজা, জানালা, নৌকা বা সাম্পান
৪। বাঁশ চট্টগ্রাম চন্দ্রঘোনার কাগজের কলের কাঁচামাল
৫। রাবার চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম অব্যন্তরীন ব্যবহার, কাঁচামাল
৬। বাঁশ,ছন সিলেট ছাওনি, ঘর, কাঁচামাল
৭। সুন্দরী সুন্দরবন ঘরবাড়ির খুঁটি, টেলিগ্রাফ, বিদ্যুৎ
৮। গেওরা ঐ নানা ধরনের বাক্স,দেশলাইয়ের কাঠি
৯। ধুন্দল ঐ নিউজপ্রিন্ট কারখানার কাঁচামাল
১০। গরান গাছের ছাল ঐ পেন্সিল
১১। গোলপাতা ঐ রং
১২। শাল বা গজারী মধুপুর ঘরের ছাউনি, ঘরের খুঁটি ও জ্বালানি

এ ছাড়া কাঠ ছাড়াও বাংলাদেশের বন অঞ্চল থেকে নানা ধরনের রং প্রস্তুত করবার রস এবং বাদাম, মোম, মধু, ইত্যাদি আহরণ করা হয়।
জেলা ভিত্তিতে বাংলাদেশে বনাঞ্চলের আয়তন নীচে দেয়া হচেছ
(হাজার একরে) ঢাকা : ৬৫, ময়মনসিংহ : ১১৩, টাঙ্গাইল : ৬, চট্টগ্রাম : ৫০১, পার্বত্য চট্টগ্রাম : ৩০৪৯, নোয়াখালী : ১ দশমিক ৪, কুমিল্লা : ২ দশমিক ৩, সিলেট : ২১১, রাজশাহী :৭, দিনাজপুর ২৩, রংপুর : ৪, বগুড়া : দশমিক ০১, পাবনা : দশমিক ০০৫, খুলনা : ১৪৮১, পটুয়াখালী :১৬, যশোর : ১০, কুষ্টিয়া : ১০, ফরিদপুর : দশমিক ০০৫। বাংলাদেশের বনাঞ্চলের মোট আয়তন হচেছ ৫৫৪৪ হাজার একর, বাংলাদেশের মোট আয়ুতনের ১৫.৭০%।
মৎস্য
নদী-নালা, খাল-বিল আর জলাভূমির এ দেশ মৎস্য সম্পদের দিক থেকে সমৃদ্ধ এবং এ সম্পদের কাথিত প্রবৃদ্ধির জন্যে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তবে মৎস্য সম্পদের উন্নয়নের জন্যে সুপরিকল্পিত এবং সুব্যবস্থিত প্ৰকল্প এখনো খুব সীমিত বেসরকারী পর্যায়ে যে চাষাবাদ হয় তা প্রচলিত প্রথাগত এবং প্রাচীন। বিভিন্ন গভীর ডোবায় (মান্দা) ডালপালা দিয়ে গ্রামের মানুষ মাছের চাষ করে থাকেন। বছরের একটি বিশেষ মৌসুমে সে মাছ ধরা হয়। মাছ চাষের এ প্রথাই এখনো দেশে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বস্তুতঃ এ প্রথায় মাছ চাষ করা হয় পারিবারিক তথা আভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাবার জন্যে। স্বাধীনতার পর থেকে ব্যাপক ভিত্তিতে সরকারী পর্যায়ে সামুদ্রিক মাছ এবং আভ্যন্তরীণ স্বাদৃশ পানির মাছ বিদেশে রফতানী করা শুরু হয়। বছর বছর এর পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে ১৯৭৫ সনের জুলাই মাস থেকে ১৯৭৬ সনের মার্চ পর্যন্ত সময়ে মাছ রফতানীর মোট পরিমাপ ছিল ৩.৫৩৫ মেট্রিক টন। এ সময় এ সূত্রে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। যেসব মাছ এ সময়ে রফতানী করা হয়েছে সেগুলো হলো টাটকা মাছ, হিমায়িত চিংড়ি, শুকুনো মাছ, শার্ক ফিনস, ফিমসজ, ব্যাঙের পা ও টিনজাত মৎস্য ইত্যাদি।এ বছরে মৎস্য উৎপাদনের মোট পরিমাণ ছিল : (ক)স্বাদৃ পানির মাছ–৭২২ হাজার মেট্রিক টন (খ) সামুদ্রিক মাছ-৮৯ হাজার মেট্রিক টন, মোট ৮২২ হাজার মেট্রিক টন। সরকারী তত্ত্বাবধানে যেসব প্রকল্পে এখন মৎস্য চাষ চলছে সেগুলো হচ্ছে –
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত নাম
(ক) পরিত্যক্ত পানি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প
(খ) উত্তরবঙ্গ মৎস্য চাষ প্রকল্প
(গ) ডি,এন,ডি প্রকল্প
(ঘ) কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসুচী
(ঙ) চাঁদপুর সেচ ও মৎস্য প্রকল্প মোট আয়তন (বিঘায়)
৫৩,০০০

৩,০১৪
৫৮৫
৬৫,১০৫

৫৩,২৫৬ ভবিষ্যত পরিকল্পনা (বিঘায়)
৯০,০০০

৫,০০০
১,০৭৫
জানা যায় নি
জানা যায় নি
সরকারী তত্তাবধানে মোট ২৬,৮৬,৮৩৬ বিঘায় মৎস্য চাষ প্রকল্পের কাজ চলছে। এ ছাড়া দেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র আছে সর্বমোট ৮৬টি।
ফারাক্কার মাধ্যমে ভারত কতৃক গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের বিরুপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের উপর বিপুলভাবে পড়েছে, উত্তরাঞ্চলে প্রত্যক্ষভাবে এবং বাকী অঞ্চলে পরোক্ষভাবে। মৎস্যের প্রজনন, বসবাস, স্থানান্তরণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এই ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এর উপর এখনও, পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি। অসমর্থিত তথ্যে জানা গেছে, গঙ্গায় পানি প্রত্যাহারের ফলে এই এক বছরে দেশের প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপরে মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পশুপালন
বাংলাদেশের সর্বত্র বিশেষতঃ গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবার প্রচলিত প্রথায় হাঁস-মুরগী পালন করে থাকেন এবং এটাই দেশের হাঁস-মুরগী সম্পদের প্রধান উৎস। বেসরকারী উদ্যোগে দেশে এখনো উল্লেখযোগ্য খামার গড়ে উঠেনি। সরকারী তত্তাবধানে এ বছর পর্যন্ত হাঁস-মুরগীর বড় খামার ছিল ১১টি ; মোট হাঁস-মুরগীর সংখ্যা হচ্ছে ৩০,৩৪৯ টি। ছোট খামার ছিল ৯৯টি ; মোট হাঁস-মুরগীর সংখ্যা ছিল ১,৬৯০টি। সমগ্র দেশে হাঁস-মুরগীর সংখ্যা ছিল ৪০,০০০,০০০। সরকারী তত্ত্বাবধানে বড় খামারগুলো থেকে প্রাপ্ত হাঁস-মুরগী ডিমের সংখ্যা ছিল ৪,৩৫,৯৫০টি ; ছোট খামারগুলো থেকে প্রাপ্ত হাঁস-মুরগীর ডিমের সংখ্যা ছিল—২১,০০৪। সমগ্র দেশে হাঁস-মুরগীর ডিম উৎপাদনের সংখ্যা ছিল ৩৮০,২৮৬,০০০টি।
গবাদি পশু
গবাদি পশু সম্পর্কে ১৯৭০-৭১ সন পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে জানা গেছে : এ সময়ে বাংলাদেশে মোট গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮০ লক্ষ। অন্যদিকে ১৯৭০ সনে এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৮ লক্ষ ৮৬ হাজার। ১৯৭১ সনের পর গবাদি পশু সম্পর্কে আর কোন সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ১৯৬৯-৭০ সনে বন্যা এক মড়কে গবাদি পশুর মত্যুর সংখ্যা ছিল; গবাদি পশু : ৯ লক্ষ ৬ হাজার। এর পরের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
পর্যটন
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে, এদেশে পর্যটন ব্যবস্থায় যথাযথ গুরুত্ব লাভ করে। ইতিপূর্বে দু’চারটি পুরনো যানবাহন আর কক্সবাজার এবং কাপ্তাই এলাকায় কয়েকটি অবহেলিত হোটেল, রেস্টহাউস ছাড়া পর্যটকদের সুবিধা দানের কোন ব্যবস্থাই সুষ্ঠভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। বিশ্ব পর্যটনের বাজারে আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য হিসেবে গুরুত্ব পাবার যথাযথ দৃষ্টি দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিচিত্র জীবনযাত্রা, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এ উদ্দেশ্য নিয়েই স্থাপিত হয়েছিল।
তবে স্থাপনের পর তিন বছর পার হতে চললেও পর্যটন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে কতটা পৌছুতে পেরেছে তা ভাববার বিষয়। আশা করা হয়েছিল পর্যটন এদেশের একটি অন্যতম, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্পে পরিণত হবে। কিন্তু পর্যটকদের মাসওয়ারী তালিকা দেখলে আমরা ততটা উৎসাহ বোধ করতে পারি না। তবুও আমরা আশা করবো পর্যটন আগামীতে আরো বেশী ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করবেন। আমলাতান্ত্রিক, অব্যবসায়িক মনোভাব ত্যাগ করে।
১৯৭৩-এর জানুয়ারী মাস থেকে বাংলাদেশে পর্যটনের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কাজ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত কর্পোরেশন হোটেল-মোটেল, বিভিন্ন ধরনের কটেজ ও গৈরিক ন’টি ইউনিট কক্সবাজারে, একটি ইউনিট কাপ্তাইয়ে, চারটি ইউনিট সিলেটে এবং একটি ইউনিট খুলনায় খুলেছে। সবকটি ইউনিট এর মিলিত শয্যা সংখ্যা হচ্ছে ৩০০টি। এই সবকটি স্পটেই সাতটি ক্যাটারিং ইউনিট খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি এয়ারকন্ডিশন্ড এবং ঢাকার ইউনিটে স্ট্যান্ডার্ড মানের। ঢাকা, কাপ্তাই এবং কক্সবাজারে আছে বারের সুবিধা। সমুদ্র স্নান, ঝিল-বিহার, নৌ-বিহার, জল-ক্রীড়াসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক সুবিধা আছে কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, খুলনা এবং ঢাকায়। কর্পোরেশন ৪৫টি যানের একটি বহর গড়েছে। এর মধ্যে অছে এয়ারকন্ডিশন কোচ, কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদি। কপোরেশন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় রেন্টএ-কার সার্ভিস এর প্রচলন করেছে। কর্পোরেশনের ২৫টি নৌযান এরও একটি বহর আছে।
ঢাকা, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই এবং খুলনাতে আছে রেন্ট-এবোট সার্ভিস। ঢাকা এয়ারপোর্টে খোলা হয়েছে ডিউটি ফ্রি যান। সারাদেশে আটটি টুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশন একটি পাঁচসালা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। জাতীয় পাঁচসালা পরিকল্পনার আওতায় এতে ব্যয় করা হবে ৮৮০ মিলিয়ন টাকা। এতে একটি পাঁচতারকা হোটেলের, তিনটি তিন-তারকা হোটেল, মোটেল, কটেজ, হলিডে-হোমস এর উন্নয়নের প্রস্তাব আছে।
সরকার ঢাকায় ৩৫০ কক্ষের একটি পাঁচতারকা হোটেল স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৪১০ মিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে ৩১০ মিলিয়ন টাকা হবে বিদেশী মুদ্রায়। ১৯৭০ সালে আনমানিক ৮২০০ জন পর্যটক এদেশে আসেন। ১৯৭২ সালে ৮৬৩৬ জন, ১৯৭৩-এ ১৩, ৮৭৫ জন, ১৯৭৪-এ সমপরিমাণ, বিদেশী পর্যটক এদেশে আসেন। ১৯৭৫ সালের পর্যটকদের এ আগমন আগের বছরের তুলনায় শতকরা এক ভাগ কমে যায়। ১৯৭৬ সালে জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১,৯৪৭ জন বিদেশী পর্যটক এদেশ সফর করেছেন। আগের বছরের এ সময়সীমার মধ্যে আসা ট্যুরিস্টের সংখ্যার তুলনায় এটা শতকরা ৩৩ ভাগ বেশী। ১৯৭৩-এর জানুয়ারী মাস থেকে ১৯৭৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত পর্যটকদের কাছ থেকে সর্বমোট বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৯৬ দশমিক ১২ মিলিয়ন টাকা, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ বছরে কর্পোরেশন বহির্মুখী ট্যুরিস্টদের উপরে এক নমুনা জরিপ চালিয়েছিল। এতে দেখা গেছে মোট পর্যটকের শতকরা ৪৩ দশমিক ০৫ ভাগ ছিলেন ব্যবসায়িক ট্যুরিস্ট, ২৩ দশমিক ৫৫ ভাগ বিনোদনকারী ট্যুরিস্ট, ২১ দশমিক ৮০ ভাগ আর্টিসিয়ান ট্যুরিস্ট এবং ১১ দশমিক ৬২ ভাগ ছিলেন অন্যান্য ট্যুরিস্ট।
বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ মাস হচ্ছে বাংলাদেশের টুরিস্ট পর্যটকরা বিমান, নৌ এবং সড়কপথে বাংলাদেশে আসতে পারেন।(চ…অস্পষ্ট) এবং চালনায় আছে আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। ঢাকায় আছে তেজগাও এর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। চট্টগ্রাম-এর আঞ্চলিক বন্দরে ভারত, নেপাল ও সিঙ্গাপুর থেকে আসা যায় বিমানে। যশোর, ঈশ্বরদী, সিলেট, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ঠাকুরগাঁ ও শমসেরনগরে আছে আভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর।
গরমের সময় ট্রপিক্যাল এবং শীতে হাল্কা পশমী বস্ত্রাদি পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন স্থলগুলি হচ্ছে ঢাকা-গণপ্রজাতন্ত্রের রাজধানী। ১৬০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত।একদা মসলিনের জন্য খ্যাত এ নগরীর প্রধান দ্রষ্টব্য—লালবাগ কেল্লা (১৬৭৮- এ তৈরী), পরিবিবির মাজার (১৬৭৮-এ তৈরী), বড়কাটরা, হাসেনীদালান, তারা মসজিদ, সাতগম্বুজ মসজিদ,(১৬৮০-এ প্রতিষ্ঠিত ) ঢাকেশ্বরী মন্দির, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাহাদুরশাহ পার্ক, কার্জন হল, হাইকোর্ট, গণভবন, বঙ্গভবন, জাতীয় পরিষদ ভবন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, বলদা গার্ডেন, সদরঘাট ইত্যাদি। ঢাকার কাছাকাছি আছে ৭ম শতকের নগরী বিক্রমপুর ও ১০ম শতকের নগরী সোনারগাঁও। জয়দেবপুর, চালনা ও চন্দ্রায় আছে ফরেস্ট রেস্টহাউস।
কুমিল্লা-ঢাকা থেকে ষাট মাইল দূরবর্তী। রাজধানী থেকে নৌ, সড়ক ও আকাশপথে যাওয়া যায়। অকর্ষণ—মৃৎশিল্প, তাঁতের কাপড়, দিঘী। দ্রষ্টব্য—পল্লী উন্নয়ন একাডেমী। ময়নামতি-কুমিল্লা থেকে পাঁচ মাইল দূরে। শালবন বৌদ্ধবিহার একদার বৌদ্ধ সংস্কৃতির পাদপীঠ। দ্রষ্টব্য—ময়নামতি লালমাইয়ের ৭ম থেকে ১২ শতকের বৌদ্ধ সংস্কৃতির নিদর্শন। যাদুঘর।
চট্টগ্রাম—দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। প্রাকৃতির সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। রেল, সড়ক, বিমান ও নৌপথে রাজধানী থেকে যাওয়া যায়। বিমানে কক্সবাজার, যশোর এবং কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। দ্রষ্টব্য-কোর্ট বিল্ডিং, জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘর, শাহী জামে মসজিদ, চন্দনপুরা মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শহর, পাহাড়তলী লেক, বাটালী পাহাড়, পতেঙ্গ ও ফৌজদারহাট সৈকত, মেরিন একাডেমী, সিতাকুণ্ড হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির, বায়জিদ বোস্তামির মাজার। কক্সবাজার-পৃথিবী বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম থেকে সড়ক ও আকাশপথে কক্সবাজারে আসা যায়। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ ৭৫ মাইলের সৈকত। কক্সবাজার থেকে ৬০ মাইল দূরের হিমছড়ি মনোরম পিকনিক স্পট। দ্রষ্টব্য—টেকনাফ, কক্সবাজার ও রামুর প্যাগোডা। আকর্ষণ উপজাতি এবং তাদের তৈরী চুরুট ও তাঁতের কাপড়।
কাপ্তাই-চট্টগ্রাম থেকে ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত। জল-বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তৈরী ২৬৫ বর্গমাইলের কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাইয়ের প্রধান আকর্ষণ। দ্রষ্টব্য—চট্টগ্রাম সড়কের পাশে কাপ্তাই থেকে দু’মাইল দূরবর্তী চিট মরাং বৌদ্ধ প্যাগোডা। চন্দ্রঘোনা কাগজকল।
রাঙ্গামাটি— পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা সদর। চট্টগ্রাম থেকে ৪৮ মাইল দূরবর্তী। প্রাকতিক সৌন্দর্য ও উপজাতীয় সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত।
সিলেট—দু’টি পাতা একটি কু’ড়ির দেশ। হযরত শাহ জালালের মাজারের জন্য খ্যাতি। দ্রষ্টব্যমণিপুরী নৃত্য, মৌলভীবাজার, ছাতক। আকর্ষণ—মণিপুরী পোশাক, বাঁশের সৌখিন দ্রব্যাদি, চা-বাগান, আনারস, কমলা। ঢাকা থেকে রেল, সড়ক ও বিমানে সিলেট যাওয়া যায়। এছাড়া ভারতের সিলংয়ের সাথে সড়কপথে যোগাযোগ আছে।
ময়মনসিংহ—দেশের বৃহত্তম জেলা। আকর্ষণ—গারো, হাজং ও কোচি সংস্কৃতির রিজার্ভ ফরেস্ট। দ্রষ্টব্য-কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনি হাসপাতাল। মধুপরের জাতীয় পার্ক। ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে যাওয়া যায়।
বগুড়া—দেশের ক্ষুদ্রতম জেলা, উত্তরাঞ্চলের প্রাণবিন্দু। ঢাকার সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে সংযুক্ত। উত্তরাঞ্চলের অন্য সমস্ত জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ আছে। আকর্ষণ—-চাল, মিষ্টি, রেশমবস্ত্র, জয়পুরহাট চিনিকল ও কয়লাখনি।
মহাস্থান গড়—প্রাচীনবঙ্গের রাজধানী। বগুড়া শহর থেকে সাত মাইল দূরবর্তী। সড়কপথে বগুড়ার সাথে সংযুক্ত। দ্রষ্টব্য-বৌদ্ধ হিন্দু, ও মুসলিম আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন, শাহ সুলতানের মাজার ও যাদুঘর।
রাজশাহী—আকর্ষণ–রাজশাহী সিল্ক, আম, লিচু। ঢাকার সঙ্গে রেল, সড়ক, বিমান ও নদীপথে সংযুক্ত। দ্রষ্টব্য—মতিহার ও বিশ্ববিদ্যালয়,নাটোরে জমিদার বাড়ী।
পাহাড়পুর—সড়ক এবং রেলপথে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ আসে দ্রষ্টব্য—হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলের সবচাইতে বৃহৎ বৌদ্ধবিহারের ধংসায় শেষ। আকর্ষণ—যাদুঘর।
দিনাজপুর-—ঢাকা থেকে ট্রেনে, সড়কপথে ও বিমানে দিনাজপুর যাওয়া যায়। দ্রষ্টব্য—রামসাগর দিঘী, কান্তানগর হিন্দু মন্দির, মহারাজার প্রাসাদ, যাদুঘর। আকর্ষণ—আখ ও তামাক।
খুলনা—-ঢাকা থেকে ২০০ মাইল দূরবতী বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল নৌবন্দর (চালনা)। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল, নদী, বিমানপথে যাওয়া যায় খুলনায়। আকর্ষণ—নৌবিহার, চুলনা নৌবন্দর, খানজাহান আলী ষাট গম্বুজ মসজিদ ও বাগেরহাটে ভার মাজার।
চালনা—দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর। খুলনা থেকে নৌ এবং সড়ক পথে যাওয়া যায়।
সুন্দরবন—রয়েলবেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত। ২,৩১৬ বর্গ, মাইলের আকর্ষণীয় বনাঞ্চল। নৌপথে খুলনা এবং চালনা থেকে যাওয়া যায়। আকর্ষণ—কাঠুরিয়াদের কাঠকাটা, প্রাকৃতিক ও বন্য জীবন, পাখী, বাঘ, হরিণ ও কুমির।
পর্যটকদের জন্য নিয়ম-কানুন
প্রতিটি বিদেশী যিনি বাংলাদেশে আসবেন, তাঁর থাকতে হবে বৈধ পাসপোর্ট এবং আগে থেকে নেয়া বাংলাদেশের ভিসা। বাংলাদেশে আসবার পর তাকে নাম রেজিস্ট্রি করতে হবে এবং ফরেন অফিস থেকে রেসিডেন্সিয়াল পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশ আসতে কিংবা বাংলাদেশ থেকে যেতে প্রত্যেককে নিতে হবে রোগপ্রতিষেধকের বৈধ আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট। জলবসন্তের সার্টিফিকেট তিন বৎসর পর্যন্ত বৈধ থাকে। কোন পর্যটক যদি “পীত জরের” অঞ্চল থেকে আসেন কিংবা সেই অঞ্চল অতিক্রম করে আসেন, তবে অবশ্যই তাকে প্রতিষেধকের সার্টীফিকেট দেখাতে হবে। না হলে তাকে এ দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না কিংবা হেলথ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাকে। পীত জরমুক্ত ঘোষণা না করা পর্যন্ত পৃথকভাবে বন্ধ করে রাখা হবে। আফ্রিকার যেসব দেশ পীতজর এলাকাভুক্ত। এ্যাঙ্গোলা, বেলুয়ানাল্যাণ্ড, বুরুণ্ডী, ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কঙ্গো, দাথোমাই, ইথিওপিয়া, গাবন, গাম্বিয়া, ঘানা, গিনি, আইভরী কোস্ট, কেনিয়া, সাইবেরিয়া, মালইয়া, মালি, মউরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, পর্তুগীজ, রয়াণ্ডা, সাওতমে ও প্রিনসিপ, সেনেগাল, সিয়ারালিও, সোমালিয়া, স্পেনীও, ইকুয়াটরিয়াল, রিজিওন, সদান, তাঞ্জানিয়া, টোগো, উগাণ্ডা, আপরিভোল্টা ও জাম্বিয়া।
দক্ষিণ আমেরিকার যেসব দেশ পীতজ্বর এলাকাভুক্ত
বলিভিয়া, ব্রাজিল, ব্রিটিশ, গিনি, হণ্ডরাস, কলাম্বিয়া, কস্টারিকা, ইকুরাডোর, ফ্রেঞ্চগিনি, গুয়াতেমালা, পিকারাগুয়া, পানামা, ক্যানালদো। পের, সুরিনাম, টোবাগো এবং ভেনেজোলা।
ডিউটি ফ্রি।
একজন ট্যুরিস্ট করমুক্তভাবে যা আনতে পারবেন তা হচ্ছে
(১) পোশাকাদি;
(২) হাতব্যাগ এবং ভ্রমণের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি;
(৩) মেডাল, ট্রফির মতো তাতে পুরস্কার অথবা সম্মানিত করবার জন্য বিদেশী রাষ্ট্র কিংবা নাগরিক কর্তৃক কিছু দেয়া থাকলে তা;
(৪) ব্যক্তিগত অলঙ্কার কিংবা ইমিটেশনের অলঙ্কার, যার মূল্য এক হাজার টাকার বেশী হবে না;
(৫) একটি হাতঘড়ি ও একটি ট্রাভেলিং ক্লক;
(৬) ইলেকট্রিক শেভারের মতো টয়লেটে ব্যবহার্য ব্যক্তিগত দ্রব্যাদি।
(৭) চশমা ও এ ধরনের শারীরিক প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ;
(৮) এক!ি সিগারেট লাইটার, দু’টি ঝর্ণা কলম, একটি কলমছুড়ি এবং সাধারণতঃ পকেটে কিংবা হাতব্যাগে বহন করা যায় এ ধরনের ব্যক্তিগত জিনিস;
(৯) একটি ইলেকট্রিক ইস্ত্রী, একটি পোটেবল ইলেকট্রিক ইউ প্লেট, শুধুমাত্র মহিলা পর্যটকদের জন্য একটি চুল শুকাবার যন্ত্র;
(১০) একটি ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা এবং দশটি প্লেট অথবা পাঁচ রোল ফিল্ম;
(১১) একটি সাব-স্টান্ডার্ড সিনেমাটোগ্রাফ ক্যামেরা প্রজেক্টর এবং দুই রোল ফিল্মসহ;
(১২) একজোড়া বায়নাকুলার;
(১৩) একটি পোর্টেবল বাদ্যযন্ত্র;
(১৪) একটি পোর্টেবল সাউণ্ড রেকডিংযন্ত্র;
(১৫) একটি পোর্টেবল টাইপরাইটার;
(১৬) পদের জন্য একটি ইনভ্যালিট চেয়ার;
(১৭) একটি প্যারাস্কুলেটর অথবা গো-কাট এবং সঙ্গে আনা বাচ্চার জন্য সম্ভাব্য পরিমাণ খেলনা;
(১৮) খেলাধুলা এবং শিকারে ব্যবহৃত জিনিসপত্র;
(১৯) ২০০ সিগারেট অথবা ৫০ সিগার অথবা আধা পাউণ্ড ম্যানুফ্যাকচার্ড তামাক কিংবা সিগারেট, সিগার ও তামাক সব মিলিয়ে আধা পাউণ্ডের বেশী ওজন না হয়;
(২০) ১/৩ গ্যালনের বেশী ওজন নয় এ পরিমাণে দুই বোতল মদ;
(২১) পারফিউমড স্পিরিট এবং টয়লেট ওয়াটার আধা পিন্ট পরিমাণ;
(২২) একশ’ টাকার কম মূল্যের খাবার, কনফেকশনারী এ্যালকোহলিক নয় এমন পানীয়।
পর্যটকরা যেসব স্থানে বৈদেশিক মুদ্রা পাল্টাতে পারেন
১) সোনালী ব্যাংক, ঢাকা বিমানবন্দর;
২) উত্তরা ব্যাংক, হোটেল ইন্টারকন’, ঢাকা;
৩) জনতা ব্যাংক, ঢাকা বিমানবন্দর ;
৪) সোনালী ব্যাংক, সিলেট বিমানবন্দর
৫) চম্পক, হোটেল ইন্টারকন’, ঢাকা;
৬) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাউন্টার, ঢাকা;
৭) হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনাল কাউন্টার, ঢাকা;
৮) হোটেল আগ্রাবাদ কাউন্টার, চট্টগ্রাম;
৯) হোটেল আল প্রিন্স, মঙ্গলা, খলনা;
১০) জনতা ব্যাংক, বন্দর শাখা, চট্টগ্রাম;
১১) পূবালী ব্যাংক, বদর শাখা, চট্টগ্রাম; অনুমোদিত ডিলার ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা পাল্টানো বাংলাদেশে অবৈধ বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ট্যুরিস্ট অফিসসমূহ সদর দফতর—ইসলাম চেম্বায়
১২৫/‘এ’, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-২। পোঃ বক্স-৩৯১, জিপিও, ঢাকা ফোন—২৫৭৮০৭, ২৫৭৮২৮, ২৫০১৬৩, ২৫৯৫৬০, ২৫২৭৬৫,২৫২৭ ৬৬, ২৫২৮৪৩, ২৫৪০৭২, ২৫৫৭৬;
তথ্য সরবরাহ কেন্দ্র
ঢাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল—ফোন২৫২৯১২/৫৬৬;
ঢাকা বিমানবন্দর—৩১৪২০৯;
হোটেল পবাণী-২৫৪০৮১/৫৫;
চট্টগ্রাম—ইয়াসমীন প্যালেস, জুবিলী রোড়–৮৯৫১৪;
১১, রেবতীমোহন রোড, দামপাড়া-৮৫৫৩৪;
কক্সবাজার-মোটেল রোড-৪৬; ২০৭
কাপ্তাই-ট্যুরিস্ট মোটেল-৪০;
রাগামাটি—ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল বিল্ডিং-৮৬
মৌলভীবাজার সিলেট—টুরিস্ট রেস্টহাউস-১৬৭;
খুলনা—হোটেল সেলিম ভবন—৪৭১১, ৩৮৯১;
বগুড়া—মাসুদ মিলনায়তন, সুত্রাপুর-৫৬৫২; হোটেল
বাংলাদেশে থাকবার জন্য প্রধান হোটেলগুলো হচ্ছে—
ঢাকা–ইন্টারকন্টিনেন্টাল—ফোন ২৫২৯১১, পূবাণী ইন্টারন্যাশনাল—২৫৪০৮১, হোটেল দ্য প্যালেস—২৮৩৮৭৭, এরাম-২৪৩৪২৩, গ্রীণ-২৫২১৮৬, কণিকা-২৪৬৩১৪, আল-হেলাল—২৮১৫৩৩, পূর্বরাগ-২৫৪০২২। আগ্রাবাদ—৮৭০০১, শাহজাহান—৪৮৪১০৫, মিস্কা—৮৩৬২৮, সফিনা—৮১৪৪২, হাওয়াই–৮৩৪৫৭। কক্সবাজার
ট্যুরিষ্ট কটেজ—যপতি, তরঙ্গ, তন্ময়, তটিনি ও তনিমা। ট্যুরিস্ট মোটেল লাবণী ২০৩, প্রবালু-২০১,’ উপল-৫৮, সাগরিকা-২০২। ট্যুরিস্ট মোটেল—পাহুপ্রিয়া—৪০।
সিলেট
হোটেল গুলশান ট্যুরিস্ট লজ—আকবরপর, আজিমগন, লয়ানী, মৌলভীবাজার-১৬৭।
কুমিল্লা
হোটেল আবেদিন।
খুলনা
হোটেল সেলিম-৪২২৪।
রেস্টুরেন্ট ঢাকা
১) রুবিতা ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট—বঙ্গবন্ধু এভেন্যু;
২) পূর্বাশা—গুলিস্তান বিল্ডিং, বঙ্গবন্ধু এভিন্যু;
৩) সুইট হ্যাভেন-গুলিস্তান বিল্ডিং,বঙ্গবন্ধু এভিন্যু;
৪) চো চিন চৌ-গুলিস্তান বিল্ডিং বঙ্গবন্ধু এভিন্যু,
৫) এয়ারপোর্ট রেস্টুরেন্ট—এয়ারপোর্ট ভবন:
৬) কাফে ক্যান্টন—তোপখানা রোড;
৭) নানকিং—মীরপুর রোড, ধানমণ্ডী, ২ ও ৩নং সড়কের মাঝে;
৮) সাংহাই—মীরপুর রোড, ধানমণ্ডী, ৮নং রোডের পাশে;
৯), চ্যাংওয়া-নর্থ সার্কুলার রোড, পুরানা পল্টন;
১০) ম্যান্ডারিন—পুরানা পল্টন;
১১) চং কিংনিউ ইস্কাটন;
১২) টাইটং-মতিঝিল;
১৩) মাইকং—শাহীন স্কুলের পাশে;
(৪ থেকে ১৩ পর্যন্তই চাইনিজ রেস্তোঁয়া)
১৪) মিডওয়ে ইস্ট—এয়ারপোর্ট রোড;
১৫) রেড বাউন—এয়ারপোর্ট রোড:
১৬) শ্যালে—গ্রীণ রোড;
১৭) শরিফস ইন-মতিঝিল;
১৮) প্লাজা—আমিন কোর্ট, মতিঝিল।
চট্টগ্রাম
আনজুম-বেরতীমোহন রোড; টং ফোং—কে, বি, ফজলুল কাদের রোড;
টো কা লিনকে, বি, ফজলুল কাদের রোড;
তাই ওয়া-জুবলী রোড;
গেট অফ লণ্ডন—সাইফুদ্দিন খালেদ রোড;
চিক—জুবিলী রোড;
জ্যাকস-আগ্রাবাদ;
কিচ যান—চট্টেশ্বরী রোড;
এয়ারপোর্ট রেস্টুরেন্ট–পতেঙ্গা বিমানবন্দর।
কক্সবাজার
সাগরিকা—ফোন ২০২
সায়মেন—
কাপ্তাই
অন্তরঙ্গ—পাহুপ্রিয়া ট্যুরিস্ট মোটেল।
খুলনা
হোটেল সেলিম।
স্যভেনীর
বাংলাদেশে এলে একজন পর্যটক যা কিনে নিয়ে যেতে পারেনগোলাপী মুক্তা, মসলিন কাপড়, পশুর চামড়া দিয়ে তৈরী জিনিসপত্র, কাঁচের চুড়ি, হাতের কাজকরা কাপড়-চোপড়, বেত এবং শাঁখের জিনিস, তাঁতের কাপড়, সোনা, রুপা ও হাতির দাঁতের অলঙ্কার, লোকজ-পতুল, নারকেলের মুখোেশ, কাঠ, এবং বাঁশের জিনিস, শিং-এর তৈরী জিনিস, শীতলপাটি, টেরাপেটার পুতুল, সিল্ক এবং সুতীর বর্ণালী শাড়ী, পাটের বিভিন্ন জিনিস, মৎশিল্প ও চামড়ার জিনিসপত্র ইত্যাদি।
বুটিকস
পর্যটকরা যেসব দোকান এবং বুটিকস থেকে আকর্ষণীয় হস্তশিল্প স্যুভেনার ইত্যাদি কিনতে পারেন
ঢাকা।
ডিসপ্লে সেন্টার-রফতানী উন্নয়ন ব্যুরো, ডিসপ্লে সেন্টার-কুটিরশিল্প কর্পোরেশন, ডিউটি ফ্রি শপ—তেজগাঁ বিমানবন্দর, রত্নদ্বীপ নিউ এলিফ্যান্ট রোড়–ফোন ৩১৭০২০, শেড-মগবাজার, শ্রাবন্তী-আউটার সার্কুলার রোড, চারত—ধানমণ্ডী, ৫নং সড়ক, সামার বীজধানমণ্ডী, ২নং সড়ক।
বাংলাদেশে আসা পর্যটকদের মাসওয়ারী হিসাৰ (১৯৭২-৭৬)
মাস পর্যটকের সংখ্যা
— ১৯৭২ ১৯৭৩ ১৯৭৪ ১৯৭৫ ১৯৭৬
জানুয়ারি ২৯৬৮ ৩১১৩ ৬৪৪৭ ৬২৪৫ ৬৪৪৫
ফেব্রুয়ারী ২৮৫৫ ৩০৮৪ ৬১৫১ ৬২৫৫ ৪৪৯৯
মার্চ ২৫৩৩ ৩৩৪৭ ৬১৬২ ৫৪৬৮ ৩৬০৮
এপ্রিল ৩২৩২ ৩০৪৬ ৫১৭৮ ৫৯২৭ ৩২৯৬
মে ২৭৯৩ ৩১৯৯ ৫৭৪৯ ৭৭৪৬ ২৯৯১
জুন ২৬১২ ২৯০৩ ৫২০৫ ৭৩০৪ ২৫২১
জুলাই ২৭৫৪ ২৬৫৫ ৪৮৫৩ ৪৭৫৩ ১৮৪৪
আগস্ট ৩৩৩৭ ৩৪৮১ ৩৪৯২ ৩২৪৪ ২৩৪২
সেপ্টেম্বর ২৯১২ ৩৫৮ ৩৩৫০ ৩১৮৩ ১৫৯৭
অক্টোবর ২৯৩১ ৩৭৬০ ৬৬৫৪ ৫৯৮৮ –
নভেম্বর ৩০৮৬ ৩৭৮৩ ৬৪৫৮ ৩৩০৭ –
ডিসেম্বর ২৫৬৭ ৩৫২৩ ৬৪৫৮ ৪৪২৭ –
মোট ৩৪৮০ ৪০৪৮২ ৬৪৯৪২ ৬৩৮৪৭

বাহনের বর্তমান ভাড়ার হার হচ্ছে নিম্নরুপ :
কক্সবাজার
মোটেল
মোটেল নম্বর ১ দুই শয্যা বিশিষ্ট
আটটি কক্ষ সম্বলিত ডবোল রুমে একজন থাকলে ০ প্রতিদিন প্রতিকক্ষ
টাকা ৬০/০০
টাকা ৫৫/০০
মোটেল নম্বর ২ দুই শয্যা বিশিষ্ট
১৬ টি কক্ষসম্বলিত ডবোল রুমে একজন থাকলে
এক শয্যা বিশিষ্ট ৮ টি কক্ষসম্বলিত টকা ৭৫/০০
টাকা ৬৫/০০
টাকা ৫৫/০০
৬ টি স্যুট টাকা ১৫০/০০
মোটেল নম্বর ৩ দুই শয্যার ১৬ টি কক্ষ টাকা ৭৫/০০
ডবোল রুমে একজন থাকলে টাকা ৬৫/০০
৮ টি এক শয্যার কক্ষ টাকা ৫৫/০০
৫ টি স্যুট টাকা ১৫০/০০
১ টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্যুট টাকা ২৩০/০০
প্রতিটি সট দু’টো ডবল বেডসহ দু’টো কক্ষসম্বলিত।
কটেজ
তনিমা, তন্ময়, তটিনি, তপোতি, তরঙ্গ প্রতিদিন প্রতি কটেজ। টাকা ১০০/০০ এই ৫টি কটেজে ৪টি শয্যাসম্বলিত ২টি করে কক্ষ রয়েছে। নিজেদের রান্না করবার ব্যবস্থাও আছে।
কাপ্তাই মোটেল পাহপ্রিয়া–২টি শয্যা বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১৬টি কক্ষ প্রতিকক্ষ প্রতিদিন টাকা ৭৫/০০
খুলনা হোটেল সেলিম—১২টি কক্ষ : ২ শয্যার ৭টি কক্ষ প্রতিদিন প্রতিকক্ষ টাকা, ৭০/০০ ১ শয্যার ৫টি কক্ষ টাকা ৪০/০০
সিলেট আকবরপুর রেস্টহাউস-২ শয্যা বিশিষ্ট ২টি কক্ষ প্রতিকক্ষ প্রতিদিন টাকা ৩০/০০। লুয়ানী রেস্টহাউস-২ শয্যার ২টি কক্ষ টাকা ৩০/০০ আজিমগঞ্জ রেস্টহাউস—দুই শয্যার ২টি কক্ষ। টাকা ৩০/০০ মৌলভীবাজার রেস্টহাউস-২ শযার ৫টি কক্ষ টাকা ৪০/০০
সব রেস্টহাউসেই নিজেদের রান্না করে নেবার ব্যবস্থা আছে।
পর্যটক পরিচালিত যানবাহনের ভাড়ার হার
ঢাকা
রেন্ট-এ-কার
প্রতি ঘণ্টা
টাকা ৩৫/০০
প্রতি মাইল টাকা ১/৫০
এমটি হলেজ(প্রতিমাইল) টাকা ১/৫০
রাত্রিকালীন বিরতি (রাত্রি ১০টা থেকে ভোর ৫টা) টাকা ৫০/০০
শতকরা বিশ ভাগ অতিরিক্ত দিতে হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কারের ক্ষেত্রে।
মাইকোবাস”এ জীপ
প্রতিঘণ্টা
টাকা ৭৫/০০
প্রতিমাইল টাকা ২/৫০
এমটি হলেজ (প্রতিমাইল) টাকা ২/৫০
রাত্রিকালীন বিরতিরাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ৭৫ টাকা।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস
প্রতিঘণ্টা টাকা ১৫০/০০
প্রতিকিলোমিটার টাকা ৩২৫
এমটি হলেজ (প্রতিকিলোমিটার) টাকা ৩/২৫
রাত্রিকালীন বিরতিরাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৫০ টাকা।
এয়ারকণ্ডিশন বাসে ট্রান্সফার
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল; হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে ঢাকা বিমানবন্দর; হোটেল পূর্বাণী থেকে ঢাকা বিমানবন্দর; ঢাকা বিমানবন্দর থেকে হোটেল পূর্বাণী; প্রতিজনে দশ টাকা।
মোটর কারে ট্রান্সফার
ঢাকা নগর সাইট সিইংটর ঢাকা নগর সাইট সিইংট্যুর গাইড ফিসহ প্রতিজন ত্রিশ টাকা।
সময়সীমা : তিন ঘণ্টা। কমপক্ষে ৬ জন। যদি একজনও প্রয়োজনীয় সর্বনিম্নসংখ্যক পর্যটকের ভাড়া দেন তবে ট্যুর অপারেট করা সম্ভব।
ঢাকা নগর সাইট সিইং এবং নৌবিহার (সকাল সাড়ে ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা)
ভাড়া ও গাইড ফি, প্যাকেট লাঞ্চ এবং সফট ড্রিংকসহ প্রতিজন একশ’ ত্রিশ টাকা। কমপক্ষে দু’জন প্রয়োজন। যদি একজনও প্রয়োজনীয় সর্বনিম্নসংখ্যক পর্যটকের ভাড়া দেন তবে ট্যুর অপারেট করা সম্ভব। ড্রাইভিং এবং নৌবিহার—দেড় ঘণ্টা—ড্রাইভিং এবং দেড় ঘণ্টা নৌবিহার। সফট ড্রিংকসহ ভাড়া-প্রতিজন,নব্বই টাকা। কমপক্ষে ছ’জন প্রয়োজন। যদি একজনও প্রয়োজনীয় সর্বনিন্মসংখ্যক পর্যটকদের ভাড়া দেন তবে ট্যুর অপারেট করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম।
রেস্ট-এ-কার, মাইক্রোবাস জীপ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস-এর প্রতিঘণ্টা প্রতিমাইলের ভাড়া এবং চট্টগ্রাম সাইট সিইং ট্যুর ঢাকার ভাড়ার অনুরুপ।
মোটর কারে ট্রান্সফার—চট্টগ্রাম শহর থেকে বিমানবন্দর এবং ফিরতি এক থেকে তিনজন পঞ্চাশ টাকা।
এক্সকারসন ট্যুর
চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই ফিরতি ভাড়া, গাইড ফি, প্যাকেট লাঞ্চ এবং সফট ড্রিংকসহ প্রতিজন আশি টাকা। কমপক্ষে দু’জন। যদি একজনও প্রয়োজনীয় সর্বনিম্নসংখ্যক পর্যটকের ভাড়া দেন তবে ট্যুর অপারেট করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি, ফিরতি ভাড়া, গাইড ফি, প্যাকেট লাঞ্চ, সফট ড্রিংকসহ প্রতিজন নব্বই টাকা। কমপক্ষে ছ’জন। যদি একজনও প্রয়োজনীয় সর্বনিম্নসংখ্যক পর্যটকের ভাড়া দেন তবে ট্যুর অপারেট করা সম্ভব।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এবং ফিরতি–পূর্ণবয়স্ক প্রতিজন ত্রিশ টাকা। দুই থেকে বারো বছরের শিশু প্রতিজন পনেরো টাকা।
দুই বছরের কম বয়স্ক শিশু, প্রতিজন তিন টাকা।
কক্সবাজার
মাইক্রোবাসে ট্রান্সফার
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার শহর অথবা পর্যটন কমপ্লেক্স এবং ফিরতি–প্রতিজন পাঁচ টাকা।
কক্সবাজার শহর এবং রাম (অস্পষ্ট) থেকে সাইট সিইং ট্যুর প্রতিজন ত্রিশ টাকা। কমপক্ষে ছ’জন প্রয়োজন।
মাইক্রোবাস/জীপে টেকনাফে এসকারসন ট্যুর গাইড ফি, প্যাকেট লাঞ্চ এবং সফট ড্রিংকসহ প্রতিজন নব্বই টাকা। কমপক্ষে দু’জন প্রয়োজন? খুলনা
রেন্ট-এ-কারের ভাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনুরূপ।
জলযান
স্পীড বোট
ঢাকা খুলনা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার।
প্রতি চলন্ত ঘণ্টা একশ’ দশ টাকা
প্রতি আধ ঘণ্টা বা তার অংশবিশেষ পঞ্চান্ন টাকা
প্রতি ঘণ্টা বা তার অংশবিশেষে বিরতি দশ টাকা
রাত্রিকালীন বিরতি চল্লিশ টাকা
এমটি হলটেজ প্রতিঘণ্টা একশ’ দশ টাকা
এমটি হলেজ প্রতি আধ ঘণ্টা বা তার অংশবিশেষ পঞ্চান্ন টাকা।

কাপ্তাই
পটন বোট
প্রতিঘণ্টা চলন্ত একশ’ দশ টাকা
প্রতি আধ ঘণ্টা বা তার অংশবিশেষ পঞ্চান্ন টাকা
প্রতি ঘণ্টা বা তার অংশবিশেষের বিরতি বারো টাকা
কক্সবাজার
জলী বোট
প্রতিঘণ্টা দশ টাকা
প্রতি আধ ঘণ্টা বা তার অংশবিশেষ পাঁচ টাকা

ছাত্রদের গ্রুপ ট্যুর (সারাদিন)
ঢাকা—রাজেন্দ্রপুর ট্যুর। কমপক্ষে ত্রিশজন ছাত্র

প্রতিজন বারো টাকা
ঢাকা-সোনারগাঁও ট্যুর। কমপক্ষে ত্রিশজন ছাত্র

প্রতিজন বারো টাকা
ঢাকা-ময়নামতি ট্যুর। কমপক্ষে ত্রিশজন

প্রতিজন পচিশ টাকা
ঢাকা—মধুপুর ট্যুর। কমপক্ষে ত্রিশজন।

প্রতিজন পচিশ টাকা
অতিরিক্ত পনেরো টাকায় প্যাকেট লাঞ্চ এবং একটি ঠাণ্ডা পানীয় দেয়া হবে।

বক্স ফাইল
শিল্প সম্পর্ক অডিন্যান্স ’৭৫
শিম্পাঞ্চলে বিশৃংখলা এবং অনিয়ম দূর করার জন্য প্রেসিডেন্ট জারি করেছেন শিল্প সম্পর্ক অর্ডিন্যান্স। এ অর্ডিন্যান্সের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যপদ নিরুপণ করা। মুজিব সরকারের আমলে, গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য শিল্পাঞ্চলে এমন জনশক্তি আমদানী করা হয়েছিল, যারা শ্রমিক হিসেবে মজুরী নিয়ে রাজনৈতিক শক্তির ভূমিকা পালন করবে। এর ফলশ্রতি হচ্ছে শিম্পাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি, উৎপাদন হ্রাস এবং সুষ্ঠু শ্রমিক আন্দোলনের অনুপস্থিতি। শ্রমিক হিসেবে পরিচিত এই জনশক্তি অবাধ লণ্ঠন, অনিয়ম ও দুর্নীতির হাতকে করেছিল শক্তিশালী। জারিকত শিল্প অর্ডিন্যান্স হয়ত সে সমস্যার পুরো সমাধান দিতে পারবে না, কিন্তু শ্রমিক আন্দোলনের স্বার্থে প্রাথমিক ইউনিটগুলোতে অশ্রিমকদের ঘোষণা করা হয়েছে অবাঞ্চিত। এ বাধ্যবাধকতা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু বিগত আমলে রাজনৈতিক কারণে চাকুরীচ্যুত হয়ে যারা অশ্ৰমিকে পরিণত হয়েছে তাদের মর্যাদা সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে এ বিধিতে কোন বিধান নেই। এ। বিধান মোতাবেক, শ্রমিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য মালিকদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। যে শ্রমিকরা শ্রমিক আন্দোলনের মুল নেতা, মালিকপক্ষ তাদের চাকুরী এমনভাবে ন্যস্ত করেন, যাতে তারা ইউনিয়নের সদস্যপদ হারাতে বাধ্য হন। এখানে সে ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে হয়ত শ্রমিক অঞ্চলে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে, কিন্তু এর ফলে সুবিধা ভোগ করবে অতিতে জোর করে শ্রমিক ইউনিয়নে ক্ষমতা দখলকারী বাকশালী পান্ডারা। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, বিগত সরকারের আমলে বিদেশী শত্রুর স্বার্থ রক্ষকরা জোর করে, অস্ত্রের প্রয়োগ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরকষাকৃষির এজেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। বর্তমান অর্ডিন্যান্স বলে এদের মর্যাদা অক্ষম থাকবে। সুতরাং শিল্প সম্পর্কে অডিন্যান্সের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে বাধ্য।
১৯৭৫-এর জাতীয় দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট সায়েমের ভাষণ
আমার প্রিয় দেশবাসী, আস্সালামুআলাইকুম, এবারের ১৬ই ডিসেম্বর মহান জাতীয় দিবসের শুভলগ্নে আমি আপনাদের সামনে উপহিত হয়েছি। আপনারা জানেন যে, সারাদেশে এবার জাতীয় দিবস এমন এক সময় উদযাপিত হচ্ছে যখন জাতি এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অতিক্রম করে চলেছে। আজ প্রথমেই আমরা স্মরণ করছি সেই বীর শহীদানের কথা, যাঁরা আমাদের নিজের ভাগ্য নিজের হাতে গড়ার অধিকার অর্জনের জনা আত্মাদান করেছেন। কামনা করছি তাঁদের রুহের মাগফেরাত। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও শোকসন্তপ্ত সকল পরিবারের প্রতি জানাই আমার গভীর সমবেদনা। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করছি যে, মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণবাসনের উদ্দেশ্যে সরকার সম্ভাব্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করেছেন। জাতীয় জীবনের এই সন্ধিক্ষণে আমাদের আত্মবিশ্লেষন ও মূল্যায়ন করতে হবে। গত চার বছরে জাতির আশা-আকাঙক্ষা কতটুকু বাস্তবে প্রতিফলিত হয়েছে তারও মুল্যায়ন করতে হবে। এবং সেই প্রেক্ষিতে আমাদের নীতি নির্ধারণ করতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে আমাদের সামরিক বাহিনী, বিডিআর, পুলিস, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী তথা সর্বস্তরের জনসাধারণ যে অপূর্ব দেশপ্রেম এবং একতার নিদর্শন দেখিয়েছেন তা আমাদের জাতীয় সত্তাকে নতুন করে উপলদ্ধি করিয়েছে। এবারের জাতীয় দিবসে একদিকে সরকারের প্রকৃতি ও লক্ষ্য এবং অপরদিকে দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে সরকার এবং জনগণের বিশেষ দায়িত্বের কথা অনুধাবন করতে হবে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর অবাধ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের নীতি আমি একাধিকবার ঘোষণা করেছি। আমি পুনরায় এবং পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, বর্তমান সরকার অন্তবর্তীকালীন এবং সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ । আমার সরকারের প্রধান লক্ষ্য, দেশে আইন-শৃখলার উন্নতি সাধন করে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এই সরকারের আর একটি অন্যতম উদ্দেশ্য, দেশের সার্বিক উন্নয়ন তৎপরতাকে আরও সচল ও গতিশীল করে তোলা। এই উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক সপ্তাহে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কয়েকটি বাস্তবমুখী সিধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আইন শৃংখলা নিশ্চিত করার কথা বলতে গেলে প্রথমেই বেআইনী : অস্তের কথা উল্লেখ করতে হয়। বেআইনী অস্ত্র উধারের জন্য সামরিক আইনের আওতায় ব্যাপক অভিযান চালানো হচেছ। আইন-শৃংখলার দ্রুত উন্নতির স্বার্থে দেশকে সাতটি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে এবং সাতজন আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। বেআইনী অস্ত্র উধার আইন-শৃংখলা রক্ষা ও যে কোন বিভেদ সৃষ্টি। প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণের সক্রিয় সহায়তা, অব্যাহত থাকবে বলে আমি দৃঢ় আস্থা রাখি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সমাজের বিভিন্ন দায়ের মধ্যে বিদ্যমান সম্প্রীতি অটুট রাখাও প্রতিটি নাগৱিকের পবিএ দায়িত্ব। আমাদের বীর সামরিক বাহিনী, বিডিআর এবং পুলিস বিভিন্ন অসুবিধা সত্তেও জাতীয় প্রতিরক্ষা, আইন-শৃংখলা রক্ষা ও দুর্নীতি দমনের কাজে ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে প্রশংসনীয়ভাবে যে নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন তাতে সারা জাতি গর্বিত। আমাদের সীমিত সাধ্য সত্তেও তাঁদের প্রতি বহুদিনের অবহেলা দুর করতে আমার সরকার সর্বতোভাবে সচেষ্ট থাকবেন। ব্যাপক অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত ক্ষেত্রে পারদর্শিতার ভিত্তিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে, তাঁদের মধ্যে দফতর বণ্টন করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার জন্যে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সততার সঙ্গে সপর্ণ নির্ভয়ে কাজ করে যাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। তাঁদের কাজে যে কোন মহলের অন্যায় হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক সিধান্তকে ত্বরান্বিত করা, উন্নয়ন কর্মসুচীর অগ্রগতি সাধন এবং স্থানীয়ভাবে জনসাধারণের অভাব-অভিযোগের প্রতিকার ও বিভিন্ন কর্ম উদ্যমের সহায়তার উদ্দেশ্যে যথাসম্ভব ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্যেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, তৎপরতা আরও গতিশীল করাও আমার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। আমাদের দেশে কৃষির উন্নয়নেই জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি নিহিত। এই কারণে আমার সরকার উন্নয়ন কর্মসূচীতে কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কৃষি উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার জন্যে সারা দেশে ‘স্বনির্ভর কর্মসচী’ বিস্তার লাভ করছে। এই কর্মসূচীকে সফল করার জন্যে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার প্রচেষ্টার এটাই বহিঃপ্রকাশ। জনগণের এই মহৎসদিচ্ছার বাস্তবায়নে সর্বাতক সহায়তা দানের জনে প্রশাসনকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে এই স্বনির্ভর আন্দোলনের পটভুমিকায়, আমাদের বিপুল জনশক্তিকে সংগঠন করে, আমাদের উর্বর ভুমিতে পানি ও আধুনিক উপকরণের যথাযথ ব্যবহার করে খাদ্য ও কৃষিদ্রব্য উৎপাদনে এবং তার সুষম বণ্টনে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে সহায়তা এবং গ্রামে ভুমিহীন কৃষক, ক্ষুদ্র চাষী ও বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসুচীতে গত বছরের ১৪ লক্ষ মনের তুলনায় এ বছর ৬৩ লক্ষ মন খাদ্যের সংস্থান করা হয়েছে। গ্রামীণ পূর্ত কর্মসূচীতে গত বছরের ১৪ কোটী টাকা ব্যয়ের তুলনায় এ বছর ২৭ কোটী টাকার কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে। পরম করুণাময়ের রহমতে গত যে কোন বছরের তুলনায় এ বছর। চাষীদের ঘরে সবচেয়ে বেশী ফসল উঠেছে। আমাদের বিশেষ লক্ষ্য হবে, এই উৎপাদনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করা। চাষী ভাইদের উৎসাহ, দেয়ার উদ্দেশ্যে আমরা কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সময়মতো বাঁজ, সার, সেচের পাম্প, কীটনাশক ওষুধ, কৃষি ঋণ ইত্যাদি সরবরাহ নিশ্চিত করা, ন্যায্যমূল্যে ধান ও চালু ক্রয় ইত্যাদি এর অন্যতম। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে দক্ষতা বৃদ্ধি, বেসরকারী খাতে পুজি বিনিয়োগ, জাতীয় ও শ্রমিক স্বার্থে শিল্প এলাকায় শান্তি ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিকরণের উদ্দেশ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অন্তবর্তীকালীন শ্রমনীতি, শিল্প বিনিয়োগ নীতি, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ভুতপূর্ব মালিকদের ক্ষতিপূরণ দান, সংরক্ষিত ১৮টি শিপক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য শিল্পে স্থানীয় মালিকদের তাঁদের প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে দেয়া, আমদানী রফতানীসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে উদারনীতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ শিথিলকরণ। রাষ্ট্রীয় মুলনীতি জনগণের জীবনে ফলপ্রসু করে তোলার জন্যেই সংবিধান-ভিত্তিক এই সব বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার আশা করছেন যে, এই পদক্ষেপ এবং আইন শৃংখলা উন্নতির প্রেক্ষিতে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে, দুব্যসামগ্রীর সরবরাহ বাড়বে ও মুল্যমান আরও স্থিতিশীল হবে। গত বছরের তুলনায় চলতি আর্থিক বছরে ফসলের উৎপাদন প্রায় শতকরা ২০ ভাগ বেশী হবে বলে আশা করছি। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের মান শতকরা গড়ে ২০ ভাগ কমেছে। মুদ্রাস্ফীতি রোধ, রফতানী বৃদ্ধি এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনমতো আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ত্যাগ, পরিশ্রম এবং দেশের সম্পদের সদ্ব্যবহার ও বৃদ্ধির সাথে জীবনের মান উন্নত করতে হলে দেশের জনসংখ্যা সীমিত রাখা অপরিহার্য সুতরাং, পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রমগুলিকে আরও জোরদার করতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের বহু, দেশ উদারভাবে সাহায্য করছে। তাঁদের এই সহায়তা আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে আমুল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ছাত্রসমাজের মধ্যে শৃংখলা, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়া এবং সার্বিক মান উন্নয়নই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এই উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য যে কর্মপন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন তার ইঙ্গিত রয়েছে। শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে, যা ইতিমধ্যে জনমহলে প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে বিনাদ্বিধায় মৃত প্রকাশ করার জন্যে দেশের শিক্ষিতসমাজকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি। তাঁদের মতের ‘প্রেক্ষিতে শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ অবিচল ও অব্যাহতভাবে জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী এবং আমাদের এই পররাস্ট নীতি, সাম্য, পারস্পরিক সাৰভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কারও আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে আমাদের পূর্ণ একাত্যতা রয়েছে এবং এই অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ, ইসলামী সম্মেলনে, জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন, কমনওয়েলথ এবং অন্যান্য প্রধান আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহে, বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আরব ভাইদের সাথে আমাদের একাত্যতা এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে আমাদের সর্বাতক সহযোগিতার কথা পুনর্বার বলা নিষ্প্রয়োজন। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সৌদী আরব, পাকিস্তান এবং চীনের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এবং এ সম্পর্ক ইতিমধ্যেই সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহের সাথে সৌহার্দ্যপণ সম্পর্ক আরও সুসংহত করার জন্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে উপমহাদেশের রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রচেষ্টা আমরা আরও দৃঢ়ভাবে চালিয়ে যাব। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছি। প্রিয় দেশবাসী, জাতীয় দিবসে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, দেশের এই বিশেষ অধ্যায়টিতে আমাদের সবার ওপর গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। শান্তি, শৃংখলা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সেই সঙ্গে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির ভিত্তি দৃঢ় করে বিশ্ব দরবারে আরও মাথা উচ, করে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কর্তব্য সচেতন নাগরিক হিসাবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাধ্যমৃত আমরা প্রত্যকেই আমাদের কর্তব্য। পালন করবো এই আমাদের আজকের প্রতিজ্ঞা।
সরকারী ভাতাপ্রাপ্ত কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, ক্রীড়াবিদদের পুণাঙ্গ তালিকা।
১। জনাব মোঃ সুলতান, ৪৮, ভজহরি সাহা স্ট্রীট, ঢাকা-১। ২। মিসেস আয়েশা হোসেন, মরহুম কাজী আবুল হোসেনের পত্নী, ২৮৬/১, খিলগাঁও সিপাইবাগ, ঢাকা-১৪। ৩। এম, আবুল কাসেম, গ্রাম ও পোঃ দৌলতপুর, খুলনা। ৪। বেগম মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, বি-২/ডি-৫, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট লট, ইস্কাটন, ঢাকা। ৫। মিসেস মোতাহার হোসেন, মরহুম সফি মোতাহার হোসেনের পত্নী, গ্রাম ভবানন্দপুর, পোঃ কাফবা , ফরিদপুর। ৬। জনাব সৈয়দ ইবনুল কাদের, ৩০৫, ফ্রী স্ট্রীট, হাতিরপুল, ঢাকা। ৭। মিসেস মহিউদ্দিন, মরহুম কবি মহিউদ্দিনের পত্নী, গ্রাম ও পোঃ ফতুল্লা, নতুন বাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের নিকট, নারায়ণগ, ঢাকা। ৮ জনাব মমতাজ, আলী খান, প্রযত্নে বাংলাদেশ বিমান, ঢাকা। ৯। জনাব গুল মোহাম্মদ খান, ৪৭, ভজহরি সাহা স্ট্রীট, ঢাকা-১। ১০। মিসেস আবদুল করিম, মরহুম আবদুল করিমের পত্নী, ৬০, পাতলা খান লেন, ঢাকা। ১১। জনাব নুরুল আমিন, কবিতা মহল, পাহাড়পুর, দিনাজপুর। ১২। জনাব সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী গ্রাম কাসেমপর, পোঃ তেতুলিয়া মিরপাড়া ভায়া নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ। ১৩। মিসেস মোশাররফ হোসেন, মরহুম সৈয়দ মোশাররফ হোসেনের পত্নী, মিশন রোড, দিনাজপুর। ১৪। জনাব শমশের আলী, শিববাটী, বগুড়া। ১৫। ডাঃ আবদুল কাদের, গ্রাম টিওরী, পোঃ নাগমোদ; জেলা নোয়াখালী। ১৬। জনাব মনসুর উদ্দিন, ৩৭, শান্তিনগর, ঢাকা। ১৭। মিসেস আদার খান, মরহুম এনায়েত খানের পত্নী, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা। ১৮। বেগম সুফিয়া কামাল, ৬৫৮-এ, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, রোড নং ৩২, ঢাকা। ১৯। মিসেস জোবেদা আখতার, মরহুম কবি রওশন ইয়াজদানীর পত্নী, গ্রাম ও পোঃ বিদ্যাবল্লভ, জেলা ময়মনসিংহ। ২০। মিসেস হাসন্নাহার চৌধুরী, মরহুম মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর পত্নী, ১৮, শওকত আলী মোনসেফ লেন, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম। ২১! মিসেস এ, মতিন, প্রযত্নে : কলেজ অব আর্ট এ্যাণ্ড ক্লাটফস, শাহবাগ, ঢাকা। ২২। জনাব খান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন, ৫০, রোপচান লেন, বাংলাবাজার, ঢাকা। ২৩। জনাব রোস্তম আলী কর্ণপুরী, গ্রাম কর্ণপুর, পোঃ গোকুল, বগুড়া। ২৪। জনাব হানিফ কাজী, গ্রাম ও পোঃ মোহজন, জেলা যশোর। ২৫। জনাব হাতেম আলী মোল্লা, গ্রাম কামান্না, পোঃ শৈলকুপা, জেলা যশোর। ২৬। জনাব বন্দে আলী মিয়া, প্রযত্নে: বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহী, জেলা রাজশাহী। ২৭। জনাব চান প্রবাস প্রযত্নে : বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা। ২৮। জনাব ইজাবউদ্দিন, প্রযত্নে: জনাব আসাফুদ্দৌলা, দি দৈনিক ইত্তেফাক ঢাকা। ২৯। জনাব এ, কে, এম, জয়নুল আবেদীন, নবগ্রাম রোড, মনসুর ভিলা, বরিশাল। ৩০। জনাব কবি গজেন্দ্রনাথ কর্মকার, করসপোনডেন্ট, বাংলাদেশ ‘অবজার্ভার; নাটোর, রাজশাহী। ৩১। মিসেস সালাউদ্দিন, ৫৯, সতিশ সরকার রোড, ঢাকা। ৩২। কবি আবদুল কাদের, রোড নং ১৩, এস-ডব্লিউ/সি/৬-এ, গুলশান মডেল টাউন, ঢাকা-১২। ৩৩। জনাব নুরুল হক, প্রযত্নে: সেন্টাল মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট টাউন হল, সিলেট। ৩৪। জনাব আবদুল হালিম চৌধুরী, প্রযত্নে : বাংলাদেশ বেতার, ট্রান্সক্রিপশন শাখা, ঢাকা। ৩৫। মিসেস রহিমা খাতুন, ১৪, খিলগাঁও, ব্লক-এ, ৯৮৬, বাসাবো, ঢাকা। ৩৬। জনাব এস, এম, সুলতান, প্রযত্নে : এম, হোসেন অধ্যক্ষ, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, যশোর। ৩৭। জনাব কাল মিয়া, গ্রাম রায়পুর, সিরামপুর, পোঃ রায়পুর, ঢাকা। ৩৮। মিসেস ফিরোজা বেগ, সিইএস (সি) ১৩, রোড নং ১২২, গুলশান, ঢাকা-১২। ৩৯। মিসেস গুলশান আরা চৌধুরী, মরহুম আমির হোসেনের পত্নী, মহাখালী, গুলশান ঢাকা। ৪০। মিসেস হাজেরা জহির, মরহুম জহির-বিন-কর্মস পত্নী, বাটোল আরফ, কাগমারী রোড, টাঙ্গাইল। ৪১। মিসেস আঙ্গুর বালা বড়ুয়া, মৃত গিরিশচন্দ্র বড়ুয়ার পত্নী, গ্রাম পাইরাল, পোঃ ইয়াকফ ডাণ্ডা, চট্টগ্রাম। ৪২। মিসেস আনিছ হাই, মরহুম প্রফেসর আবদক হাই-এর পত্নী, ৬৭, ধানমণ্ডি, (উত্তর) আবদুল হাই ভবন, কলাবাগান ঢাকা। ৪৩। মিসেস আশরাফ হোসেন, মরহুম আশরাফ হোসেনের পত্নী, গ্রাম রহিমপুর, পোঃ মুন্সীবাজার, জেলা সিলেট। ৪৪। মিসেস রহমান, মরহুম গোলাম রহমানের পত্নী, ৮৬, কাঠেরপুর লেন, বানিনগর, ঢাকা। ৪৫। মিসেস পুষ্প রানী দেবী, মৃত আনন্দমোহন চক্রবর্তীর পত্নী, গ্রাম সাগীইল, পোঃ কান্দোঘর, কুমিল্লা। ৪৬। মিসেস লুৎফর নাহার রাসিদী, মরহুম এ, এফ, এম, আবদুল মজিদ রাসিদীর পত্নী ২৬. শাহ সাহেব লেন, নারিন্দা, ঢাকা। ৪৭। মিসেস উম্মে হাবিবা মরহুম হেদায়েত আলীর পত্নী, প্রযত্নে দি নওরোজ, দিনাজপুর। ৪৮। মিসেস রাজ, আহাম্মদ, মরহুম রাজ আহাম্মদের পত্নী, ১৫০-ই, রেড নং ১৩/২, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। ৪৯। মিসেস কাজী খালেক, মরহুম কাজী খালেকের পত্নী, ১১৪, মনেশ্বর রোড, ঝিকাতলা ঢাকা-৯। ৫০। মিসেস সারা আরা মাহমুদ, মরহুম আলতাফ মাহমুদের পত্নী, ১, মালিবাগ, ঢাকা। ৫১। মিসেস মেহেরুননেসা, মরহুম আনোয়ার মেহেদীর পত্নী, ৯২, হাজারীবাগ, ঢাকা। ৫২। মিসেস রাহেলা খাতুন, মরহুম এস, আকবর আলীর পত্নী, ১৪/১, ভাগলপুর লেন, ঢাকা। ৫৩। মিসেস গীতাদত্ত, মৃত সুরেশ দত্তের কন্যা, প্ৰষত্নে : বিশ, মুখার্জী, ২৮, জয়পুরী লেন, ঢাকা। ৫৪। মিসেস রইসউদ্দিন অরহম ওস্তাদ মুন্সী, রইসউদ্দিনের পত্নী, ২১, বনগ্রাম রোড, শ্যামপুর, ঢাকা। ৫৫। মিসেস সানিয়া হক, মরহুম মোজাম্মেল হকের পত্নী, ১৭/সি, মধুবাগ, মগবাজার, ঢাকা। ৫৬। মিসেস সিরাজউদ্দিন হোসেন, মরহুম। সিরাজউদ্দিন হোসেনের পত্নী, ১৯, নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। ৫৭। মিসেস রেহেনা মোস্তফা, মরহুম জনাব এ, এন, এম, গোলাম মোস্তফাক পত্নী প্রযত্নে : এ, এন, এম, গোলাম রাব্বানী, টিপু সুলতান কলেজ, ঢাকা। ৫৮। মিসেস মতিজান নেসা বেগম, মরহুম সরদার আলাউদ্দিনের মাতা, ৪/৮, জয়েন্ট কোয়ার্টার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-৭। ৫৯। মরহুম আহমদুর রহমানের শিশু, প্রযত্নে: জনাব এস, সালেহ আহম্মদ, টিএ রোড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা। ৬০। মিসেস রওশন আরা বেগম, মরহুম মুহম্মদ কাশেমের পত্নী, গ্রাম বড়পাড়া, পোঃ বিজয়পাড়া, কুমিল্লা। ৬১। জনাব মোশাররফ হোসেন, গ্রাম মুন্সীপাড়া, পোঃ গাইবান্ধা, রংপুর। ৬২। মিসেস জাহানারা আফসার, মরহুম আফসার পাশার পত্নী, গ্রাম, ও পোঃ মহম্মদপুর, যশোর। ৬৩। জনাব হারুন-অর রশীদ, গ্রাম হাবিবপুর, পোঃ মান্দাগাছি, রাজশাহী। ৬৪। সৈয়দ আবদুল মান্নান, হক ভিলা, ৫৫, লেক সা্কেস, ঢাকা-৫। ৬৫। জনাব নুরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ, গ্রাম নতুন শালবন, পোঃ রংপুর, জেলা রংপুর। ৬৬। জনাব কাজী হাবিবুর রহমান কবি শেখর, ৪৭, পুরানা পল্টন, ঢাকা। ৬৭। জনাব মোঃ ওয়ালিউল্লাহ, ৯১৮, খিলগাঁও, ব্লক-এ, ঢাকা-১৪। ৬৮। মিসেস মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ৩২-এফ, সেভেজ রোড, ঢাকা। ৬৯। জনাব মেসবাহউদ্দিন আহমদ, (চলচ্চিত্র শিল্পী), ১০, ফ্রী স্কুল স্ট্রীট, ঢাকা। ৭০। জনাব কাজী আবুল কাশেম, ৪৯, কলাবাগান, ঢাকা। ৭১। মিসেস মাজেদা খাতুন, প্রযত্নে: জনাব আবদুর রহমান, ২৬/১, ৩ পলাশী স্টাফ কোয়ার্টার, ঢাকা। ৭২। জনাব কামাল-বিন সালাউদ্দিন, প্রযত্নে শাহানারা সালাউদ্দিন, সি-২৮০, খিলগাঁও, ঢাকা। ৭৩। জনাব। আবদুল মতিন, ২০/এবি, নারিন্দা রোড, ঢাকা। ৭৪। জনাব ওসমান। খান, প্রযত্নে: বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা। ৭৫। মিসেস হাসান জান, মরহুম হাসান জানের পত্নী, ২৮, মুগদাপাড়া, লতিফনগর, কমলাপুর, ঢাকা। ৭৬। জনাব ফকির, জনাব আলী, ৬/এ, রাজেশ্বরীনাথ রায় স্ট্রীট ঢাকা-১। ৭৭। মিসেস আবু তালেব, শহীদ আবু তালেবের পত্নী, প্রযত্নে : খন্দকার আবুল হাসান, বাংলাদেশ অবজার্ভার, ঢাকা। ৭৮। জনাব খেরাজ আলী, মাদ্রাসা রোড, মুন্সীপাড়া, রংপুর। ৭৯। জনাব মজিবর রহমান তালুকদার, গ্রাম, চানপর, পোঃ মানিকখালী, জেলা ময়মনসিংহ। ৮০। জনাব সৈয়দ নরুল ইসলাম, গ্রাম ও পোঃ পাচারিয়া, যশোর। ৮১। জনাব হাফেজ মোঃ হাসান, মরহুম মোঃ আখতারের পিতা, গ্রাম ও পোঃ ধনবাড়ী, জেলা টাগাইল। ৮২। জনাব কে, এম, মিসির, পুণ্ড্রবর্ধন স্বতি, কাজী কুটির, পোঃ শিবগঞ্জ, বগুড়া। ৮৩। জনাব ওস্তাদ মোজাম্মেল হোসেন, কেদার ভিলা, সাং চক খানসামা, ভিক্টোরিয়া রোড, পোঃ ঘোড়ামারা, থানা বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ৮৪। জনাব দেলওয়ার (কবি) বর্তাখোলা, সিলেট। ৮৫। মিসেস এ, মান্নান, মরহুম , মান্নানের পত্নী, ঢ-১৫/১, আরামবাগ, ঢাকা। ৮৬। জনাব ফটিক দত্ত, ১২০/বি, মনিপুরীপাড়া, তেজগাঁ, ঢাকা। ৮৭। জনাব কুতুবুল আলম, (গম্ভীরা আর্টিস্ট) চাঁপাই নওয়াবগঞ্জ, রাজশাহী। ৮৮। মিসেস খায়রুন্নেসা মরহুম শেখ শামসুল হকের পত্নী, প্রযত্নে: আসাদুজ্জামান, প্রচার নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ড, ঢাকা। ৮৯। জনাব শরিফ আমজাদ হোসেন দৌলতপুর, খুলনা। ৯০। মিসেস মনির চৌধুরী, মরহুম মুনীর চৌধুরীর পত্নী, ৩১/সি, সেভেজ রোড, ঢাকা। ৯১। মিসেস সাবেরা খাতুন, জনাব মোঃ ইদ্রিসের পত্নী, গ্রাম কমলাপুর, পোঃ ফরিদপুর, জেলা ফরিদপুর। ৯২। জনাব সৈয়দ ইমরল শাহীন, ৮৫, গোয়াল নগর রোড, ঢাকা। ৯৩। মিসেস হাজিরা বিবি, মরহুম মনির, উদ্দিন ফকিরের পত্নী, গ্রাম চরজোর, পোঃ কাফুরা, ফরিদপুর। ৯৪। জনাব আজিজুল হক, প্রযত্নে : রাজশাহী ইউনিভার্সিটি প্রেস, রাজশাহী। ৯৫। জনাব ওস্তাদ কাছিরউদ্দিন, প্রযত্নে: নবরুপী, দিনাজপুর। ৯৬। মিসেস এ গফুর মরহুম এ গফুরের পত্নী, গ্রাম গফুর নগর, পোঃ লক্ষীপুর, পাবনা। ৯৭। মিসেস সিরঞ্জ বেগম, মরহুম মোঃ আলী আহম্মেদের পত্নী, প্রযত্নে: সুলতান আহম্মেদ, এফডিসি তেজগাঁ, ঢাকা । ৯৮। মরহুম জহির রায়হানের শিশু, (মাস্টার বিপল রায়হান ও মাস্টার অনিল রায়হান) প্রযত্নে : সুমিতা দেবী, ১/১৯, হোয়ন রোড, রক ডি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ৯৯। মিসেস সলেখা রানী সরকার, মৃত সতীশচন্দ্র সরকারের পত্নী, বালি,বাড়ী, দিনাজপুর। ১০০। জনাব মোঃ নিজামুল হুদা, গ্রাম সাগরপাড়া, পোঃ ঘোড়ামারা, রাজশাহী। ১০১। জনাব মোঃ মজিবর রহমান, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, (ওয়াপদা অফিস)। ১০২। মিসেস রাবিয়া খাতুন, মরহুম হেমায়েত হোসেনের পত্নী, বি-৫৬/এফ. ১২ মতিঝিল কলোনী, ঢাকা। ১০৩। জনাব আজিজুর রহমান, (রেডিও আর্টিস্ট) ১১৫৮, ডিআইটি রোড, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, ঢাকা। ১০৪। মিসেস আবদুল আলীম, মরহুম আবদুল আলীমের পত্নী, লট নং ৪৯৪/সি, চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ, ঢাকা। ১০৫। জনাৰ আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, হিলি, ১০৬। জনাব মালেক দাদা চৌধুরী, মোস্তারপাড়া, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ। ১০৭। জনাব আফসার উদ্দিন, গ্রাম ও পোঃ আলমসার, যশোর। ১০৮। জনাব কাদের নেওয়াজ, অবসরপ্রান্ত হেড মাস্টার, নেওয়াজ সরকারী হাই স্কুল, রাম-মাজদিয়া, পোঃ শ্রীপুর, যশোর। ১০৯। জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান, হোসেন কুটির, কলেজ রোড, বরিশাল। ১১০। মিসেস জিনাত হামিদ, মরহুম শওকত হামিদের পত্নী, প্রযত্নে ; মতিউর রহমান, ১০৯-বি, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া ঢাকা। ১১১। মিসেস ফরিদা আখতার, মরহুম হাবিবুল বাশারের পত্নী, ১১০, গোপীবাগ, ঢাকা। ১১২। মি কানাই শীল, প্রযত্নে : বাংলদেশ বেতার, ঢাকা। ১১৩। জনাব রকিব উদ্দিন, প্রযত্নে: এসভিও পাহ নওয়াবগঞ্জ, রাজশাহী। ১১৪। কবি আহমেদ হোসেন, জজ কোর্ট, দিনাজপুর। ১১৫। বেগম ফররুখ আহমদ, মরহুম কবি ফররুখ আহ মদের পত্নী, বি-৭/ডি, সরকারী স্টাফ কোয়ার্টার, ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা। ১১৬ জনাব আবদুল ওয়াহাব সিদ্দিকী, গ্রাম ও থানা দরগাহপুর, খুলনা। ১১৭। শ্রী হরিপদ দাস, সঙ্গীত শিক্ষা ভবন, রানীবাজার, ঘোড়ামারা, রাজশাহী। ১১৮। জনাব মোসলেহ উদ্দিন, ৩৩, পাঁচভাই ঘাট লেন, ঢাকা-১। ১১৯। জনাব জুলহাস উদ্দিন আহমদ, ৪৮, দক্ষিণ খিলগাঁও, ঢাকা। ১২০। জনাব জাহাঙ্গীর খান ইউসুফ হাই, সাং রেহাই, পাথুরিয়া, পোঃ মিরকুটিয়া, ভায়া—নাগরপুর, টাঙ্গাইল। ১২১। জনাব সাইদুল ইসলাম, ৩৯, ভজহরি সাহা স্ট্রীট, (ভুতের গলি), নারিন্দা, ঢাকা। ১২২। মিসেস মাসকুরা খানম, মরহুম এন, এ, খান সাহেবের পত্নী, ৪২, বাংলাবাজার, নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা। ১২৩। “শ্ৰী বংগজিত দত্ত, ২৭, শশীমোহন বসাক লেন, বনগ্রাম ঢাকা। ১২৪। খন্দকার নরুল ইসলাম, ১১৪-বি, ঝিকাতলা, ঢাকা-৯। ১২৫। জনাব ডাঃ আবদুস সোবহান মিয়া, ডাক্তার রোড, ডিবি রোড, গাইবান্ধা, রংপুর। ১২৬। জনাব মোঃ আকরম হোসেন, ৪নং ওয়েস্ট এন্ড স্ট্রীট, ভতের গলি, ধানমন্ডি, ঢাকা-৫। ১২৭। শ্রী কল্যাণ মিত্র, আমলাপাড়া, কুষ্টিয়া। ১২৮। মিসেস হোসনেয়ারা বেমম, মরহুম রফিক ইসলামের পত্নী, প্রত্নে গিয়াস উদ্দিন আহমদ, উত্তর বগড়া রোড, বরিশাল। ১২৯। জনাব মোঃ নুরুল ইসলাম, গ্রাম লংকার চর, পোঃ গোহাইল বাড়ী, ফরিদপুর। ১৩৫। জনাব মোঃ মোজাফফর হোসেইন, গ্রাম দাডিহাইরমারা, পোঃ হাইরমার ঢাকা। ১৩১। ওস্তাদ সাইমদ আলী খান, প্রযত্নে: নবপী, দিনাজপুর। ১৩২। শ্ৰী আশীষ কুমার রায়, লিবাটি, ১১৬, এন, এ, মার্কেট, দিনাজপর। ১৩৩। জনাব মাজহারুল ইসলাম, সাহিত্য নীড়, ২/এ, গোলাপজান রোড, ময়মনসিংহ। ১৩৪। জনাব দেলওয়ার হোসেন, নৃত্য শিক্ষক, জেলা বোর্ড পোঃ রাঙ্গামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৩৫। জনাব আব্বাস আলী, উত্তর বাংলার চারণ কবি ও গায়ক, প্রযত্নে: জেলা গণসংযোগ অফিস, দিনাজপুর, জেলা দিনাজপুর। ১৩৬। মিসেস মজিবুল হক, গ্রাম ও পোঃ জয়নারায়ণপুর, নোয়াখালী। ১৩৭। বেগম খায়েরশ্নেছ, মরহুম মোঃ হাবিবুর রহমানের পত্নী, সেকশন নং-১০, ব্লক-এ, লাইন নং-৮, বাড়ী নং-১৩, মীরপুর, ঢাকা। ১৩৮। মোসাম্মৎ রাজিয়া আজিম, মরহুম এ, এম, এ, আজিমের পত্নী, ৪/৫, মোহাম্মদপুর নিউ কলোনী, ঢাকা-৭। ১৩৯। বেগম মসতারী শফি, মুসতারী লজ, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম। ১৪০। বেগম জেবুন্নেছা আহমদ, মরহুম কাজী আফছার উক্ষিনেয় পত্নী, ৯, নয়া পল্টন, ঢাকা। ১৪১। মিঃ ঝর পাল, প্রযত্নে: এসডিও, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী। ১৪২। মওলানা নরউদ্দিন আহমেদ, ৫৬/এ, প্যারিদাস মোড, ঢাকা-১।
ক্রীয়াবিদ
১৪৩। জনাব রাসিদুজ্জামান, (গঙ্গা), পূর্ব কুমারনই গাইবান্ধা রংপুর। ১৪৪। জনাব শামসুদ্দিন, ১৮, গোঘাট লেন, ঢাকা। ১৪৫ জনাৰ আবদুস সামাদ বাকওয়াজ, ১৫/২, মিরের টেক, তেজগাঁও, ঢাকা। ১৪৬। শ্রী ধীরেন্দ্রচন্দ্র ভাওয়াল, প্রযত্নে: ঢাকেশ্বরী কটন মিল, হাউস নং-৩০, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা। ১৪৭। শ্ৰী উপেন্দ্রচন্দ্র রায়, কোয়ার্টার নং-১৬/ডি, রোড নং-৩, নর্থ কলোনী, পোঃ মহেশখালী, চট্টগ্রাম। ১৪৮। জনাব আবদুল খালেক, ৭৯/১, ডি, ডিস্ট্রিলারী রোড, ইস্ট এন্ড ক্লাব, ঢাকা। ১৪৯। মিসেস জাহানারা বেগম, মরহুম মজিবর রহমানের পত্নী, প্রযত্নে ঃ চান মিয়া, গ্রাম আগানগর, পোঃ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। ১৫০ মিসেস আনোয়ারা বেগম, মরহুম সোহরাওয়ার্দীর পত্নী, সুপার মঞ্জীল, পোঃ মোহনী মিলস, কুষ্টিয়া। ১৫১। মিসেস জোবায়দা খাতুন, মরহুম এস, এ, ওয়াজেদ মানিকের পত্নী, ঝলেশ্বরীতলা, বগুড়া।’ ১৫২। জনাব আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী, মরহুম জুয়েলের পিতা, ৬/১, কে, এম, দাস লেন, টিকাটুলি, ঢাকা। ১৫৩ ,শেখ আবদুল আলা, মরহুম লালুর পিতা, ১১৫, ডিস্টিলারী রোড, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। ১৫৪। জনাব নুরুজ্জামান (নুরু মিয়া), ২৮২, জগন্নাথ সাহা রোড, লালবাগ, ঢাকা। ১৫৫। জনাব আলিমুজ্জামান খান চৌধুরী (মিন্টু) মরহুম আবদুল লতিফ খানের পুত্র, ঢাকা রোড, জেলা টাঙ্গাইল। ১৫৬। জনাব আলফাজউদ্দিন আহমেদ, সুত্রাপুর, বগুড়া। ১৫৭। জনাব মনসুর আলী ২৪৭, হাউজিং এস্টেট, কুষ্টিয়া। ১৫৮। জনাব আবদুর রব, প্রযত্নে জেলা কীড়া সমিতি, সিলেট। ১৫৯। জনাব বাদশা, গ্রাম কান্দাকুল, পোঃ ভোবঘাট, ফরিদপুর। ১৬০ শশী কুলাদাহার রায় চৌধুরী, মৃত যতীন্দ্র রায় চৌধুরীর পুত্র, গ্রাম নতুন বাজার, পটুয়াখালী। ১৬১ জনাব লুৎফর রহমান, মুন্সীপাড়া, প্রযন্তে রংপুর জেলা ক্রীড়া সমিতি, রংপুর। ১৬২ জনাব আবু জোহা, মরহুম আঃ আজিজের পুত্র, মাগদ টাউন, পোঃ মাগুড়া, জেলা যশোর। ১৬৩। জনাব নুরুল ইসলাম, ১০৬, বতালী রোড, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম। ১৬৪। জনাব মহিউদ্দিন, প্রযত্নে পপুলার টেইলারিং, কান্দিপাড়, কুমিল্লা। ১৬৫। জনাব মনসুর রহমান, মোমেনশাহী রোড়, গাইবান্ধা, রংপুর। ১৬৬। মিঃ নাড় প্রযত্নে: মোঃ এনামুল হক, এডভোকেট, সুত্রাপুর, বগুড়া। ১৬৭ কাজী মোহাম্মদ হাফিজ, ৪/৩, ঝিকাল স্টাফ কোয়ার্টার, ঢাকা। ১৬৮। মিঃ বীরেন্দ্র মালকার, বিজি প্রেস স্পাের্টস এন্ড ক্লিকেশন ক্লাব, চাকা। ১৬৯। মিঃ খায়রুল আনাম মন্ট, শশীভূষণ পরামানিক রেড, থানাপাড়া, কুষ্টিয়া। ১৭০। মিঃ আজিজুর রহমান, মীরের ময়দান, সিলেট। ১৭১। মিঃ একরাম মিয়া, ৮, বদরপট্টি রোড, চট্টগ্রাম। ১৭২। জনাব খতিবখনি, প্রযত্নে: মিউনিসিপ্যাল হেড কোয়ার্টার, দিনাজপুর। ১৭৩। মিসেস শাহাবুদ্দিন ইস্কান্দের পত্নী, নোয়াখালী। ১৭৪। জনা শামসুজ্জোহা মানিক, মুন্সীপাড়া, দিনাজপুর। ১৭৫। জনাব মোঃ ইউসুফ আলী, প্রযত্নে জেলা ক্রীড়া সমিতি, দিনাজপুর। ১৭৬। জনাব মকবুল হোসেন (লালা।) বগুড়া জেলা ক্রীড়া সমিতি বগুড়া।
দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) ৰাতিল
১৯৭২ সালের আট নম্বর প্রেসিডেন্ট, আদেশ বাতিল করেছেন প্রেসিডেন্ট। এ আদেশ মোতাবেক বিধান ছিল দালালদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের। ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে সবক্ষেত্রে পরিবর্তন বাঞ্চনীয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লড়েছে তাদের ক্ষমার প্রশ্নটি বিবেচনার উধে। কিন্তু ভারতীয় কুটনীতির সাথে বাংলাদেশ যখন ১৯৫ জন যুদ্ধপরাধীর বিচারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, তখন সহযোগী কিংবা দালালদের প্রশ্ন গৌণ হয়ে দেখা দেয়। কয়েকবার প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতির, পরও যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়নি সেখানে দালালদের ক্ষমালাভের অধিকার রয়েছে। তাছাড়া বিগত সরকারের আমলে, অপরাধের ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে বহ; নিরপরাধ ব্যক্তি নির্যাতিত হয়েছেন দালাল আইনে। অথচ যারা রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে গড়ে তুলতে চেয়েছিল দালালবাহিনী তারাই ক্ষমালাভ করছে অনেক আগে। এদেশের সন্তান হয়ে যারা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে কিংবা করেছে, তাদের শান্তি বিধানের জন্য জনগণই যথেষ্ট। এর জন্য প্রয়োজন নেই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কিংবা অডিন্যান্স। ১৯৭৫-এর পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেমও নতুনভাবে নির্ণীত হবে। কিন্তু ভিত্তি একটাই তা হলো জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ
৭ই নভেম্বর : জাতীয় বিপ্লব দিবস সরকার সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের অসম সাহসী জনগণ এখন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের সংগ্রামে নিয়োজিত। কারো নিষেধ সে মানবে না, কারো রক্তচক্ষুকে সে ভয় করবে না, কোন পরাশক্তি, সম্প্রসারণবাদী কিংবা আধিপত্যকামী শক্তির কাছে সে মাথা নোয়াবে না। নগরে, বন্দরে জনপদে আজ লক্ষ-কোটী কণ্ঠে সে শপথ উচচারিত। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আজ সাড়ে সাত কোটী মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে মিলিত সংগ্রামের বহিঃপ্রকাশ ৭ই নভেম্বরে সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান। পরিবর্তনের গতিকে যাৱা ফেরাতে চেয়েছিল, প্রতিক্রিয়ার শক্তিকে ধারা সহায়তা করেছিল, যারা চেয়েছিল নতুনভাবে বৈদেশিক আধিপত্যকে সৃদৃঢ় করতে এই দিনে তাদের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়েছে শপথের বাণী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে সমগ্র দেশ ইতিহাসের নির্মম রায় মেনে নিতে হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের। পরিবর্তনের যে সুচনা হয়েছে ১৫ই আগস্ট, ৭ই নভেম্বর সে পরিবর্তনের স্বপক্ষে উচ্চারিত হয়েছে শপথ। যুগ যুগ ধরে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যে লড়াই করেছে, সাতই নভেম্বর তাতে এক উজ্জল সংযোজন। ভবিষ্যতের বংশধরদের জন্য এ দিনটি পথ নির্দেশ হিসেবে কাজ করবে জাতীয় নীতিকে পরিচালিত করবে সঠিক খাতে। হয়তো বাধা-বিপত্তি আসবে, হয়তো নতুন ষড়যন্ত্র হবে । কিন্তু সবকিছুর বিরুদ্ধে এ দিনটি কাজ করবে ইতিহাসের অমোঘ শিক্ষা হিসেবে। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে, সরকারীভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, এখন থেকে সাতই নভেম্বর পালিত হবে জাতীয় বিপ্লব দিবস হিসেবে। এই সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরীদের উৎসাহিত করবে আমাদের সংগ্রামকে জোগাবে প্রেরণা, চিন্তাকে পরিণত করবে শক্তিতে। এই দিনে যারা ষড়যন্ত্রের যুপকাষ্ঠে আত্মহতি দিয়েছে এ দেশের ইতিহাসে তাদের ক্ষমা নেই। এ দিনটি উদযাপনের জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে এর আদর্শ সমঞ্জল থাকে, যেন লকায়িত শত্রুরা মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস না পায়, যাতে বাংলাদেশের সব’ গড়ে ওঠে প্রতিরোধের দুর্গ বৈদেশিক আগ্রাসন ও আভ্যন্তরীণ বিস্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে। গতিশীল প্রশাসন প্রশাসন ব্যবস্থার মান ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের উচচপদস্থ কর্মচারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সায়েম। সততা, নিরপেক্ষতা, প্রগতিশীলতা ও দক্ষতা সরকারী প্রশাসনের সাফল্যের পুর্বশর্ত। দেশবাসীর ভাগ্য ফেরাতে হলে, দরিদ্র জনগণের জীবনে নুন্যতম শান্তি বিধান করতে হলে, সরকারী প্রশাসনকে হতে হবে কর্মক্ষম ও জনগণের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু আমাদের দেশে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও এ কথা সত্যি যে, সরকারী কর্মচারীরা জনগণের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন নন। সেই জন্যেই আমলাতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা। সম্পর্ক এত অভিযোগ, এত বিক্ষোভ পচাত্তরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে এদেশে প্রশাসনে যোগ্যতার মর্যাদা দেয়া হয়নি, সরকারী কর্মচারীদের বিশ্বাস করা হয়নি, সর্বোপরি চেষ্টা চলেছে এদের রাজনৈতিক উদেশ্যে ব্যবহারের জন্য। তারই ফলশ্রতি রাজনৈতিক মনোনয়নের ভিত্তিতে সরকারী কর্মচারী নিয়োগ। বর্তমান সরকার দেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে হতাশাব্যঞ্জক অবস্থা থেকে টেনে তুলে স্বাধীন দেশের উপযোগী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। গত দুই মাসে এ ব্যাপারে সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিধান্ত গ্রহণ করেছেন। প্রশাসনের উপর বাইরের অবাঞ্চিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যাতে সরকারী কর্মচারীরা সুষ্ঠভাবে কর্মসম্পাদনের সুযোগ পান। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ এবং সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রশাসনই জনগণের কাম্য। জনগণ এমন একটি প্রশাসন ব্যবস্থা চান যেখানে সততা, দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা এবং দেশ ও মানুষের প্রতি অঙ্গীকারই হবে যোগ্যতার মাপকাঠি। অতিতে আমরা দেখেছি, হস্তক্ষেপ করা না হলে অযাচিতভাৰে জনগণকে হয়রানির শিকার হতে হয়। পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে জনগণের প্রত্যাশা, সে অবস্থার অবসান হবে। আমরা আশা করবো, বাংলাদেশের মর্যাদা ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রয়োজনে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মীর দেশব্যাপী এক কর্মযজ্ঞের এক উদ্বােধন ঘটাবেন যে কর্মযজ্ঞের লক্ষ্য হবে দারিদ্র্য দূর কর, অশিক্ষা দুর করা, কুসংস্কার দূর করা এবং জনগণের দুঃখবেদনার অবসান ঘটানো।
চৌ, এন, লাই (১৮৯৮-৭৬)
নতুন চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের মৃত্যুতে বিশ্ব এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং কুটনীতিবিদকে হারালো যিনি মানবেতিহাসের পরিবর্তনে অপরিমেয় অবদান রেখেছেন। তিনি একদিকে যেমনি লড়েছেন সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশবাদের নিগড় থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য, অন্যদিকে তেমনি লড়েছেন আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমঝোতার জন্য। যে ক’জন অসামান্য পুরুষ চীনের চার হাজার বৎসরের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছেন চৌ এন লাই তাঁদের অন্যতম। আদর্শের প্রশেন অনমনীয়, কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী বাবহারে অমায়িক, কুটনীতির ক্ষেত্রে সুকৌশলী এই রাষ্ট্রনায়ক তিন দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতিতে এবং পাঁচ দশক ধরে চীনের আভ্যন্তরীণ নীতিতে বিরাট অবদান রেখে গেছেন। একদা দরিদ্র, হতমান ও পদানত চীনকে ইতিহাসের গান: অধ্যায় থেকে তুলে এনে যারা আজকের গৌরবময় আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই তাঁদের অন্যতম। নানা সংকট আর পরীক্ষানিরীক্ষার ভেতর দিয়ে তিনি চীনা জাতিকে প্রদর্শন করেছেন সাফল্য ও সার্থকতার পথ। প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আধুনিক চীনের হুপতিরুপে। প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের জীবন ছিল চীনের নিপীড়িত মানুষের মুক্তি ও বিপ্লবের স্বার্থে উৎসর্গীকত। ছাত্রাবস্থা থেকে শুরু করে জীবনের অন্তিম দিনগুলো পর্যন্ত চৌ এন লাই ছিলেন পৃথিবীকে পরিবর্তনের একজন সৈনিক তিনি ইতিহাসের ব্যাখ্যাতাই শুধু, নন, ইতিহাসের স্রষ্টাও। রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য একসময় তাঁর প্রাণ দণ্ডজ্ঞা হয়েছিল, ফাঁসির রজ্জু, এড়িয়ে তিনি বেচে রয়েছেন। চীনের অভিজাত পরিবারের সন্তান চৌ এন লাই সুখের সাধারণ হিসাব পরিহার করে বেছে নিয়েছিলেন সংগ্রামের পথ। প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের মৃত্যুতে বাংলাদেশ শোকাহত। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী তেং লিয়াও পিং-এর কাছে পাঠানো শোকবাণীতে প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেছেন বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে চৌ এন লাই সর্বদাই চরম শ্রদ্ধা আসনে প্রতিষ্ঠিত। জেনারেল জিয়া বলেছেন, এই মৃত্যুতে বিশ্ব এক মহান নেতা ও রাষ্ট্রনায়ককে হারাল। বাংলাদেশের জনগণ, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যবৃন্দ, আধা-সামরিক সংস্থাসমুহ এবং সকন্তু প্রশাসনিক এজেন্সী গণচীনের সরকার ও জনগণকে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখেন এবং সাম্প্রতিককালে আমাদের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীতে তাঁদের সমর্থনকে মূল্যবান মনে করেন। মওলানা ভাসানী বলেছেন চৌ এন লাই ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত জনগণের মহান বন্ধু ও মুক্তিদাতা। যুগ যুগ ধরে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। চৌ এন সাই-এর মৃত্যু বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শোকবাণী দেয়, শোকসভা করে।’
প্রশাসনিক পুনর্গঠন
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও করপোরেশনগুলোকে তাদের গত চার বছরের কাজের অভিজ্ঞতার অলোক এবং নিয়ন্ত্রণ ও সমবয় যাতে আরো কার্যকর হয়ে ওঠে সেজন্য প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও পূর্ণবিন্যাসের কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। নতুন ব্যবস্থাধীনে ৯ জন সচিব, ৯ জন অতিরিক্ত সচিব এবং ১৩ জন স্বায়ত্তশাসিত সংহা প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। উপরোক্ত এই ব্যবস্থাধীনে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৯টির পরিবর্তে ২৪টি এবং বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৭টির পরিবর্তে ৩৯টিতে। এ সম্পর্কিত সরকারী ঘোষণায় বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর হতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত সিনিয়র অফিসারদের দাবীকে অগ্রাহ্য করে অবাঞ্ছিত প্রভাব ও নিয়মবহির্ভূত পন্থায় বিপুলসংখ্যক নিয়োগ ও বদলীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে কোন প্রকার বাছবিচার ছাড়াই অনেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কপোঃরেশন সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ, সচিন্তিতভাবে সিধান্ত গ্রহণ করলে প্রশাসনিক ব্যয়ভার হ্রাস হত এবং নিয়ন্ত্রণ ও সময় আরো সহজে এবং দক্ষতার সাথে করা যেত। এই সিদ্ধান্তে হয়ত ব্যক্তিগত অসন্তুষ্টির অবকাশ রয়েছে। কিন্তু সরকার আশা প্রকাশ করেছেন, এই পুনর্গঠনের ফলে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা যেন জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় একে প্রসন্নচিত্তে গ্রহণ করেন এবং জাতির কল্যাণসাধনে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যান। বর্তমান সরকার ত্বরিৎগতিতে প্রশাসনিক পুর্নগঠনের কাজে হাত দিয়েছেন। অথচ এ কাজটি সম্পাদিত হওয়া উচিত ছিল অনেক আগে। বিগত সরকারের আমলে প্রশাসনিক কাঠামোর পূর্ণগঠন না করেই অব্যঞ্ছিত পরিণতির সৃষ্টি করা হয়েছে, ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশীমত বিভাগ, মন্ত্রণালয় চালু করা হয়েছে। এর ফল হল, একটি মাথাভারি প্রশাসনিক কাঠামো। নিয়োগ, বদলী, অপসারণ কোন কিছুতেই কোন নিয়ম ছিল না ব্যক্তির ইচ্ছা, রাজনৈতিক অভিলাস নিয়ন্ত্রণ করেছে প্রশাসনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো অনেক জটিল। সেখানে ব্যক্তি বড় নয়, সমষ্টি বড়। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে পরিবর্তন আনতে গেলে ব্যক্তিগত ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা আশা করব প্রশাসনের দায়িত্বপর্ণ ব্যক্তিরা এ ক্ষতি মেনে নেবেন এবং পুনর্বিন্যাসকে ফলপ্রসু করতে এগিয়ে আসবেন। প্রশাসন হবে গতিশীল, ক্ষিপ্র এবং সকল প্রকার অবাঞ্ছিত প্রভাবের উধে আপন স্বকীয়তায় দীপ্যমান এই প্রত্যাশা আমরা রাখতে চাই। মেট্রোপলিটান পুলিস
নগরী এবার লাভ করবে আপন মর্যাদা সাজবে আপন সাজে। সেই সজ্জার উপকরণ মেট্রোপলিটন পুলিস। সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকে রাজধানী ঢাকা তার নিজস্ব পুলিস বাহিনী পাবে। এই শান্তি রক্ষীবাহিনীর নাম, হবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিস। ঢাকার মুল শহর এবং উপকন্ঠের আটটি থানা সমন্বয়ে গঠিত হবে। মেট্রোপলিটন এলাকা এই থানাগুলো হল-—কোতোয়ালী, সুত্রাপুর, রমনা, লালবাগ এবং শহরের উত্তর পূর্বাঞ্চল তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মীরপুর ও গুলশান থানা। আলাদা নিয়ম-কানুন হবে মেট্রোপলিটন পুলিসের জন্য একজন পুলিস কমিশনারের নেতৃত্বে বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার সমন্বয়ে গঠিত হবে মহানগরীর এই পুলিস বাহিনী। পুলিস কমিশনারকে তাঁর কাজে সাহায্য করবেন ডেপুটি ও সহকারী পুলিস কমিশনারগণ এবং অন্যান্য ক্যাডারের অফিসাররা। মেট্রোপলিটন পুলিস ও বর্তমান পুলিস বাহিনীর চাকুরীর পারসপরিক ক্ষেত্রে বদলীযোগ্য হবে। পুলিসের ইন্সপেক্টর জেনারেল নিয়ন্ত্রণ করবেন এই বাহিনীকে। রাজধানী ঢাকাকে মেট্রোপলিটন মর্যাদাদান এবং একটি পৃথক পুলিস বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভুত হচিছল অনেকদিন থেকে। ষাটের দশকেই রাজনৈতিক গুরত্ব, ভৌগোলিক আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে মেট্রোপলিটন নগরীর আদর লাভ করেছে ঢাকা। ফলে সমস্যা বেড়েছে, কিন্তু সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঢাকা পৌরসভা আগেকার মতই ঢিমে তেতালা চালে দায়িত্ব পালন করেছে। রাস্তাঘাটের সংস্কার, পানি সরবরাহ আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছু, উন্নয়ন ঘটলেও, মহানগরীর প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অপ্রতুল। বাড়তি জনসংখ্যা এবং শহরের বিশাল বিস্তৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অক্ষম হয়েছে পুরাতন কাঠামোর পৌর প্রশাসন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আইন-শৃঙখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। স্বাধীনতার পর শহরমুখী জনস্রোত শহররের সমস্ত ব্যবস্থাকে ব্যগ করেছে নিদারুণভাবে। অথচ একই সময়ে বৈদেশিক দূতাবাসের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলো শহরকে দিয়েছে নতুন বৈশিষ্ট্য। বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে প্রথম সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন মেট্রোপলিটন পুলিস বাহিনী গঠনের সিধান্ত ঘোষণা করে। আমরা আশা করব এর ফলে নগরীর মর্যাদা পাবে আমাদের রাজধানী ঢাকা। প্রাচ্যের রহস্য নগরী ঢাকা আরো রহস্যময় হয়ে উঠুক বিদেশীদের চোখে। সেই জন্যেই প্রয়োজন সমন্বিত কর্মসূচীর মাধ্যমে বর্তমান অচলায়তন ভেঙ্গে ঢাকাকে মহানগরীর বৈশিষ্ট্য দান।
অফিসের নয়া সময়সূচী
সরকারী কর্মচারীদের ইচ্ছানুযায়ী নতুন সময়সূচী চালু করেছেন। সরকার সচিবালয়, বিভিন্ন বিভাগ, পরিদপ্তর ও এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট অফিস এবং স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অফিসসমূহে এই নয়া সময়সূচী কার্যকর হবে। এই সময়সচী হচেছ শুক্রবার ব্যতিত সপ্তাহের সকল দিনে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত। মাঝে কোন বিরতি থাকবে না। শুক্রবারে বিরতি ছাড়া সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা সাড়ে বারটা পর্যন্ত অফিস চলবে। তবে বিভাগীয়, জেলা, মহকুমা ও অন্যান্য অধঃস্তন মফস্বল অফিস ও আদালতে বর্তমান অফিস সময় বহাল থাকবে। দশটা-পাঁচটা অফিসের সময়সূচী বদলানোর দাবী সরকারী কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতার পর হঠাৎ করেই চালু করা হয়েছিল এই সময়সূচী কিন্তু, এই সময়সুচীর কার্যকারিতার জন্য যা প্রয়োজন ছিল তা পুরণের চেষ্টা করা হয়নি। এই ব্যবস্থাধীনে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নিম্ন আয়ের লোকদের। বিশেষ করে, অফিস পাড়ায় দ্রব্যমূল্যের উধগতির দিনে দুপুরের খাবার নিয়ে কম-বেশী ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সকলকে উপরন্তু বিকেলের দিকে অফিসে কোন কাজ হত না বললেই চলে। সরকার কর্মচারীদের দাবীর মর্যাদা হিসেবে নয়া সময়সুচী চালু, করেছেন। এখন সরকারী কর্মচারীদের দায়িত্ব হবে একে মর্যাদা দান। কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা প্রদর্শন এবং স্বল্পসময়ে কাজ সমাধানের মাধ্যমেই এর প্রতি সমান প্রদর্শন সম্ভব। আমরা আশা করব, সরকারী কর্মচারীরা সে দায়িত্ব মেনে নিয়ে এ সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করবেন এবং এ নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে কোন বিতর্ক উত্থাপিত হবে না।
একুশে পদক
বাংলা ভাষা সাহিত্য, শিক্ষা ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ২১শে পদকে ভুষিত করেছেন প্রেসিডেন্ট সায়েম। যারা পদক পেয়েছেন তারা হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, উঃ মহম্মদ কুদরত-ই-খোদা, কবি জসীম উদ্দিন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, কবি আবদুল কাদির, অধ্যাপক মুহাম্মদ মনসুরউদিন, মরহুম তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া (মরণোত্তর), জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও জনাব আবদুস সালাম। পদকের সঙ্গে দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। জাতীয় জীবনে অবদানের স্বীকৃতি প্রদানে এই সরকারী সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে অভিনন্দন যোগ্য ও প্রেরণাদায়ক। এ বছর যারা ২১শে পদকে ভূষিত হয়েছেন তাদের নতুন কোন পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। স্ব স্ব ক্ষেত্রে এদের সবাই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। আপন প্রতিভা ও কর্মউদ্যোগের মাধ্যমে এরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের পথনির্দেশ করেছেন। এ ধরনের একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দীর্ঘ প্রত্যাশিত। অথচ বিগত সরকারে আমলে এই স্বীকৃতি প্রদানে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পৃথিবীর সমস্ত দেশে প্রতিভার স্বীকৃতিসরূপ ও রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রেসিডেন্ট পুরস্কারের প্রথা চালু, আছে। দীর্ঘদিন পরে আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা চালু, হলো এটা নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। এই অনুষ্ঠানে এমন দুজন একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন যাঁরা এই অনুষ্ঠানের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এদের একজন বিদ্রোহ ও যৌবনের কবি, বাংলার গণ-মানুষের প্রথম সার্থক কবি কাজী নজরুল ইসলাম অপরজন সাহসী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিভা তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া)। এই রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি ভবিষ্যতে প্রতিভার উৎকর্য সাধনে আমাদের চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক তথা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের উৎসাহিত করবে। প্রতিভার জাতীয় স্বীকৃতি একটি জাতির জীবনে গতি সঞ্চার করে। নতুন শ্রদ্যোমের প্রেরণা যোগায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধনা ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে রাস্ট্রীয় আনুকুলে। প্রয়োজন এর ফলে তার স্বীকৃতি মিলেছে। পদকের সঙ্গে যে অর্থ দেয়া হয়েছে আমরা আশা করবো সরকার তার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবেন। সেই সঙ্গে আমরা আশা করবো এ জন্যে এমন একটি কাঠামো তৈরী করতে যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙালী জাতিকে যে নতুন পদের দিশা দিয়েছে তার সঙ্গে এই পদকের নাম যুক্ত হয়ে সরকারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সেই শহীদদের নির্দেশিত পথ ধরে ঐ আমরা এগিয়ে যাব। উত্তরোত্তর প্রগতির পথে ও অগ্রগতির লক্ষ্যে।
“সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথে দূত এবারের একুশে।
বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে চব্বিশ বছর আগে ঢাকার রাজপথে যাঁরা আত্যাহতি দিয়েছেন তাঁরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন একটি মহৎ স্বনে-বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মাথা উচু করে থাকবে, আমাদের মাতৃভাষা বিকশিত হবে, এ অনুভতিই ছিল তাঁদের আত্মদানের অনুপ্রেরণা। সেই প্রেরণার উজ্জল উতীক হিসেবে প্রতি বছর আমাদের মাঝে ফিরে আসে একুশে ফেব্রুয়ারী। ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে এই হৃদয়াবেগ কমে পরিণত হয়েছে এবং আজ আমরা একটি স্বাধীন জাতির মর্যাদা নিয়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছি। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপিত হয়েছে নতুন এক আংগিকে। আলোচনা সভা, সেমিনার, মিছিল ও স্লোগানে এবারের একুশে ফেবুয়ারী প্রদীপ্ত হয়েছে জাতীয় চেতনায়। জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ধনিত হয়েছে প্রতিরোধের আহৰনি। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একুশের বীর শহীদানদের জন্য নেয়া হয়েছে দৃঢ় শপথ। একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে একুশের প্রাণবন্যাকে নিরলস কর্মদ্যোগে রপান্তরিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহৰান। জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁর বাণীতে বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের মহান শহীদানের কাছে জাতীয় ঋণ অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে বিপুল ত্যাগ, তিতিক্ষা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে বিশ্বের বুকে তার ন্যায্য আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপনের জন্য বেসরকারীভাবে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তার মুল উদ্যোক্তা ছিলেন জাতীয় একুশে ফেব্রয়ারী উদযাপন কমিটি। মীর্জা গোলাম হাফিজকে সভাপতি ও এনায়েতুল্লা খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯শে জানুয়ারী গঠিত হয়েছিল জাতীয় একুশে ফেব্রুয়ারী উদ্যাপন কমিটি। সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক নেতা ও জনগণকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে আহবান জানিয়ে বলা হয় “বাংলাদেশের নিরবিশেষ মানুষের প্রাণের দাবী যেদিন রক্তের মুল্যে উচচারিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথে, সেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আবার ফিরে আসছে জাতীয় জীবনের তাৎপর্যময় এক সময় সাধক্ষণে। গত প্রায় সিকি শতাব্দী ধরে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য ও বাণী এদেশের মানুষকে উদ্বদ্ধ করেছে তার সার্বিক অধিকার অর্জনের সংগ্রামে। এবারেও একুশে ফেব্রুয়ারীর উজ্জল অনির্বাণ শিখা থেকে জাগিয়ে নিতে হবে আমাদের পথ চলার দীপ, গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সেই অমৃত ভাণ্ডার থেকে সংগ্রহ করতে হবে পাথেয়। একুশে ফেব্রুয়ারী এমন এক সময়ে আসছে আমাদের জীবনে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিনষ্ট করার জন্য আগ্রাসী শক্তির লোলুপ হাত প্রসারিত, যখন আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী শক্তিগুলোর সমর্থক ও অনুসারীরা জনগণের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত। এই সুকঠিন লড়াইয়ে প্রাণপাত করার প্রেরণা যোগাবে মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য ও বাণী। ভাষা আন্দোলনের স্বচছু দর্পণে যে উন্নত ও স্বাধীন সত্তাকে রক্ষা করার সংগ্রামে সর্বশক্তি নিয়োগের আহবান নিয়ে আসছে এবারের একুশে ফেব্রুয়ায়ী ভাষা আন্দোলন একদিকে যেমন জাতিগত স্বাধিকারের আকাঙ্খা মৃত করে তুলেছিল অন্যদিকে তেমনি এই আন্দোলনের ভেতর ছিল ধনিত হয়ে উঠেছিল এদেশের লাঞ্ছিত, নিপীড়িত দরিদ্র জনগণের সার্বিক ও অধিকারের দাবী। আজ যখন আমরা মহান একুশে ফেরায় উদযাপন করতে যাচ্ছি তখন ভাষা আন্দোলনের মর্মবাণী আমাদের মৃত, ভাবে স্মরণ করতে হবে। এই মুহূর্তের কর্তব্য হচ্ছে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐকাবদ্ধ করা। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের লড়াইয়ে আপামর মানুষকে সমবের করা। সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত ও সম্প্রসারণবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আপামর মানুষকে একতাবদ্ধ করার কাজে প্রেরণা দেবে একুশে ফেব্রুয়াররি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঐতিহ্য। বাংলাদেশের আপামর মানুষের এই লড়াইকে যারা জোরদার করতে সক্ষম, যাঁরা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মানুষের সকল সংগ্রামের অংশীদার সেই সব দেশপ্রেমিক শক্তির একটি বিরাট অংশ স্বৈরতন্ত্রের আমলে বন্দী হয়ে আজও কারাগারে আছে। আমরা তাদের মুক্তি চাই। তাঁদের মুক্তি আমাদের এই জাতীয় প্রতিরোধের সংগ্রামকে জোরদার করবে। তাদের বাদ দিয়ে প্রতিরোধের লড়াই অর্থহীন। প্রতিরোধের লড়াইয়ের যারা দুর্জয় সৈনিক, যাঁরা দেশের আপামর মানুষের এই লড়াইকে জোরদার করতে সক্ষম সেই শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত-মেহনতী মানুষকে সমবেত ও ঐক্যবদ্ধ করবার জন্য তাদের সামনের বাধাসমূহকে দুর করতে হবে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি, রাজনৈতিকভাবে সমবেত ও সংগঠিত হওয়ার অধিকারই কেবল সেই বাধাসমুহকে দুর করতে পারে, দুর্বার ও দুর্জয় করে তুলতে পারে প্রতিরোধকে। দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন ধিক্কার উচ্চারিত হয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারী। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাবিক অধিকার অর্জনের উদ্দেশ্যে সেই লড়াইকে আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে। যেতে হবে। আমাদের লড়াই আজ সকল অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরদ্ধে, সকল প্রকার প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে। দেশের সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর পবে সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা দেখেছি স্বৈরাচারী ফ্যাসিষ্ট শক্তির দাপট, দেখেছি জনগণের ভাগ্য নিয়ে নিষ্ঠুর ছিনিমিনি খেলা। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য পায়ে দলে এদেশের , জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের নামে মানুষকে ঠেলে দেয়া হয়েছে দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের মুখে। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে অপমানিত করে আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী শক্তির সাথে আতাতের ভিত্তিতে তারা পরাধিপত্য কায়েম রাখতে চেয়েছে। এদেশের বুকে। সেই সব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডাক নিয়ে আসছে একশে ফেব্রুয়ারী। ভাষা আন্দোলনের সেই ঐতিহ্যের কথা আবার স্মরণ করে আজ সকল দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবৰ্থ হতে হলে স্বাধীনতা রক্ষা ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে, সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদ সম্প্রসারণবাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। তাহলেই কেবল একুশে ফেব্রুয়ারীর উদযাপন সার্থক হয়ে উঠবে, তাহলেই কেবল যথার্থ শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হবে ? শহীদদের আত্ম প্রতি। একুশে ফেব্রুয়ারী প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের দিন। এই প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ আগ্রাসনের বিরদ্ধে, আগ্রাসী শক্তির দেশীয় সেবাদাসদের ও বিরুদ্ধে। একুশের এই শিক্ষা সামনে তুলে ধরেই আমরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নিরাপদ করতে পারব, পারব জনগণের সার্বিক মুক্তি নিশ্চিত করতে। একুশে ফেব্রুয়ারীর শিক্ষা অমর হোক, অমর হোক কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা লক্ষ্য করেছি দেশপ্রেমিক জনগণের প্রচেষ্টাকে বানচাল করার জন্য আওয়ামী বাকশালী পাড়ার সচেষ্ট হয়ে উঠেছিল। তারা গঠন করেছিল ৩০১-সদস্য বিশিষ্ট একুশে উদযাপন কমিটি। এই কমিটির মুল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব-বিরোধী ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়িত করা। কিন্তু জনগণ তাদের সে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে। কাতারবন্দী হয়েছে জাতীয় একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন কমিটির পতাকাতলে।। জাতীয় একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন কমিটির নেতৃত্বে একুশের ভোরে পরিচালিত হয় ঐতিহাসিক মহামিছিল। এই কমিটির অন্যান্য কর্মসুচীর মধ্যে ছিল কারিগরি মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এখানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন কাজী জাফর আহমদ, নুরুর রহামন, সিরাজুল হোসেন খান, মিসেস আব্দুল মতিন, কাজী গোলাম মাহবুব, আলী আশরাফ, আবদুল আউয়াল, আহমেদ কামাল, মিসেস কামরুন্নাহার লাইলী, মিসেস হাজেরা সুলতানা, নুর মোহাম্মদ খান, মোশাররফ আহমদ, এ, কে, এম, আবদুল বাসেত ও আখতার হোসেন। এই আলোচনা সভায় আহবান জানানো হয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সংহত করার জন্য সর্বস্তরে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার। একুশের দিনে শহীদ মিনারের বেদীমূলে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন প্রেসিডেন্ট সায়েম, সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, নৌবাহিনী প্রধান কমোডর এম, এইচ, খান, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি আবদুস সাত্তার, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর আবুল ফজলসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কর্মকর্তাবিন্দু। শহীদ মিনারের চারিদিকে এবার অভুতপুর্ব শৃংখলা বিরাজ করেছে। এখানে শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন—ইউওটিসি, রোভার ও সী স্কাউট এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্যরা। তদারক করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরা কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন উল মিনারের’, বেদীমন্তে এবং সামনের রাস্তায়। আজিমপুরের দিক থেকে মিছিল এসেছে। শহীদ মিনারের বেদীতে পুস্পার্ঘ্য রেখে চলে গেছে কার্জন হলেন দিকে। এবারেও শহীদ মিনারে এসেছিলেন একুশের অন্যতম বীর শহীদ রিকশাচালক জব্বারের অশীতিপর জননী মোসাম্মৎ আয়েজজান বিবি। শহীদ মিনারে তিনি এসেছিলেন মিছিলের সাথে পায়ে হেটে। মিনারের। বেদীতে দু’টো গাঁধাফুল রেখেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই বীর মাতা। একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষ্যে যে সচেতন স্ফুরণ ঘটেছে, যে প্রাণ-বন্যার সৃষ্টি হয়েছে তাকে সংহত করে, সংগঠিত করে দেশের উন্নয়ন কর্মে নিয়োজিত করলে আমাদের সাফল্য নিশ্চিত হয়ে উঠবে। এটাই শহীদানের প্রতি ঋণ প্ররিশোধের পথ। এটাই ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে অঙ্গীকার পালনের পথ। একুশের প্রাণবন্যাকে জাতীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণ এক জাতীয় বিকাশের কাজে লাগাতে হবে। এই প্রাণহন্যার উর্বর পলিমাটি না হয়ে উঠুক আমাদের জাতীয় জীবনে।
জনগণই ইতিহাসের উপকরণ
রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণদানকালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল ফজল দেশ ও সমাজের সঠিক চিত্রের প্রতিফলন ঘটিয়ে ইতিহাসকে তার সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে ও সামগ্রিকভাবে বিচার করার জন্য ইতিহাসবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। উদ্বােধনকালে তিনি বলেন যে, কোন দেশের মানুষই সে দেশের ইতিহাসের প্রধান উপকরণ। তার সমাজজীবন, অর্থনৈতিক জীবন, তার সাংস্কৃতিক জীবন, সেই ইতিহাসের একেকটি প্রধান অধ্যায় মানুষকে জানাই হচ্ছে ইতিহাসকে জানা।। ইতিহাসবিদদের প্রতি এই আহ্বান জাতীয় ইতিহাস রচনায় সহায়ক হবে বলে আমরা আশা করি। রাজনৈতিক কারণে এদেশে বহুবার ইতিহাসের ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য জনগণের আন্দোলনকে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এদেশে ইতিহাস যে কতবার বিকৃত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। রাজনৈতিক কতৃত্ব খাটিয়ে ইতিহাসের বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়ার লানিময় অধ্যায়কে আমরা পিছনে ফেলে এসেছি। নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্যোদয় সে সম্পর্কে বিগত দিনে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দস্যবত্তিকে অনুমোদন করার চেষ্টা চলেছে ইতিহাসের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে। জনগণ যে ইতিহাসের স্রষ্টা সেই জনগণই উপেক্ষিত হয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। উৎপাদন ও সৃজনশীল কর্মে নিয়োজিত মানুষকে বাদ দিয়ে সত্যিকারের ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। জাতীয় জীবনে যখন একটি বাস্তব ইতিহাস রচনার প্রয়োজন ব্যাপক ভাবে অনুভুত হয় সে সময় ইতিহাসবিদরা বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ ও বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি নামে দুটি সমিতিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। নিশ্চয়ই ইতিহাস সম্পর্কিত ব্যাখ্যার ভিন্নত। এই মৃতভেদের কারণ নয়। যদি ইতিহাসের ব্যাখ্যা নিয়ে কোন মৃতভেদ থেকে থাকে তাহলে আমরা আশা করবো তারা তা প্রকাশ করবেন। অন্যথায় আমাদের বিশ্বাস ইতিহাসবিদরা ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবেন। একদিন ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের সচেতনতার অভাব ছিল এবং এ জন্যে আমাদের বিরাট ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। তাই এবার আমাদের প্রত্যশা সবাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। ইতিহাসকে দেশ ও সমাজের কল্যাণে লাগাতে হলে খন্ডিত বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা থেকে নয়, সত্যিকারের অখণ্ড ইতিহাস রচনা করে তাকে যথার্থভাবে উপলদ্ধি করতে হবে।
বাংলাদেশের নাগিরকরা বাংলাদেশী।
সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে বাংলাদেশের নাগরিকরা। ‘বাংলাদেশী বলে পরিচিত হবেন। এ সম্পর্কিত সরকারী সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, শাসনতন্ত্রের ৬নং ধারায় বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাঙালী’ বলে পরিচিত হবেন বলে যে উল্লেখ রয়েছে তা বাদ যাবে এবং এখন থেকে পাসপোর্ট ও এই ধরনের অন্যান্য দলিল বাংলাদেশের নাগরিকদের ‘বাংলাদেশী’ বলে উল্লেখ করা হবে। এই সরকারী সিদ্ধান্তের ফলে একটি বিতর্কের অবসান ঘটল। ১৯৭২ সালে তৎকালীন গণ-পরিষদে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সময় যখন এ প্রশ্নে বিতর্কের সুত্রপাত হয় তখন জোর করেই এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী অন্যান্য অবাঙালী ও সংখ্যালঘু, জাতি সত্ত্বাসমুহের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এর ফলে তাদের জাতিগত মর্যাদা ক্ষম হবে, কিন্তু সে দাবীর প্রতি কোন মর্যাদা প্রদর্শন করা হয়নি। বাংলাদেশের নাগরিকদের বাঙালী বলে চালানোর মধ্যে যে অসংগতি রয়েছে সে দিনের শাসনতন্ত্র প্রণেতারা তা উপলব্ধি করেননি। আমাদের জাতীয়তা নির্ধারণের যে বিরোধ তা দীর্ঘদিনের এই আত্মপরিচিতির সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারিনি বলেই বহুবার বিপথগামী হয়েছে আমাদের সংগ্রাম। আমরা কি ভারতীয়, না পাকিস্তানী, বা বাঙালী, না বাঙালী মুসলমান, না বাংলাদেশী সে বিতর্কের অবসান দীর্ঘদিন হয়নি। বাঙালী বলে আমাদের পরিচয়দান করলে তাতে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে। সীমান্তের অপর পাড়ে যে বাঙালীরা রয়েছেন তারা নিশ্চই বাংলাদেশের অধিবাসী বাঙালী নন। জাতিগত পরিচয় তারা ভারতীয়। বাঙালী বলে পরিচিত হতে আমাদের কোন দ্বিধা নেই, কিন্তু এই পরিচয় অন্যদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের জাতিগত মর্যাদা ক্ষমা করতেও আমরা রাজী নই। জাতীয়তার প্রশ্নে শুধু ভাষাই একমাত্র নীতিনির্ধারণী মাপকাঠি নয়। এর বাইরেও রয়েছে ভৌগোলিক সীমানা, রাজনৈতিক পরিচিতি, সাংস্কৃতিক একাত্যতা প্রভৃতি মৌলিক বিষয়াদি। ভাষা মুল বিবেচ্য হলেও পৃথিবীতে বহু, জাতির জাতীয়তা ভিন্ন হতো উপরন্তু আমরা একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতির আত্মমর্যাদা নিয়ে বেচে থাকতে চাই। বাংলাদেশী পরিচয় আমাদের জাতীয়তার যে পরিচয় সঙ্কট ছিল, যে দ্বিধা ছিল তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী
৬ই মার্চ রংপুর টাউন হলে এক জনসমাবেশে ভাষণদানকালে জেনারেল জিয়া বলেছেন উত্তরাঞ্চলের শিক্ষা, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবহার দ্রুত উন্নয়নের জন্য খুব শীঘ্রই একটি ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নেয়া হবে।” দেশের উত্তরাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত যমুনার ওপাড়ে যে জনপদ সেই জনপদের উন্নয়নে কোন ব্যাপক কর্মসুচী এতদিন গ্রহণ করা হয়নি। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের মনে সবসময় একটা বিচ্ছিন্নতার ভাব কাজ করেছে। ক্রমানুসারে একই ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত হলেও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। স্বাধীনতার পর স্বাভাবিকভাবেই আশা করা গিয়েছিল উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারী কর্মসুচী গৃহীত হবে, কিন্তু তা হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসুচী হাতে নিয়েছেন। সমগ্র দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে না পারলে উন্নয়নের গতি ব্যাহত হতে বাধ্য। এমতাবস্হাকে উপলব্ধি করতে পেরেই সরকারীভাবে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের কর্মসুচী হাতে নেয়া হয়েছে। উন্নয়নের গতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই একই ভাষণে জেনারেল জিয়া সরকার যাতে আরো কার্যকরভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেন, সেজন্য জনসাধারণকে যথাসময়ে তাঁদের সমস্ত বকেয়া দেয় ও কর পরিশোধ করার আহবানও জানান। সরকারী কর পরিশোধের ব্যাপারে আর একটা নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এটা সর্বত্র লক্ষ্যণীয় এর ফল সরকারের অর্থনৈতিক সংকট বাড়ে। সরকারের কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা তা পূরণ করতে হলে নিজস্ব দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন হতে হবে। সেই সচেতনতার প্রতিও জেনারেল জিয়া আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে গৃহীত সরকারী পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই, কিন্তু সেই সাথে আমরা আশা করবো যাতে প্রতিটি নাগরিক উন্নয়নের প্রতিফল লাভ করেন। অন্যথায় উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য।
পরলোকে কবি জসীমউদ্দিন
১৯০৪ সনের ১লা জানুয়ারী ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি জসীমউদ্দিন। গোবিন্দপুর হচ্ছে তাঁর নিজ গ্রাম। ফরিদপুর শহর ও কোলকাতায় তিনি পড়াশুনা করেন এবং ১৯৩১ সালে এম-এ পাস করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৩৭ সনের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন জসীমউদ্দিন। ১৯৪৪ সনে গ্রহণ করেন ভারত সরকারের প্রচার বিভাগের চাকুরী। দেশবিভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং পূর্ববর্তী পদে বহাল থাকেন। ১৯৬২ সনে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। তারপর থেকে সাহিত্য চর্চাই ছিল তাঁর একমাত্র কাজ। জসীমউদ্দিনের কবি খ্যাতি প্রবাদতুল্য। তাঁব ‘কবর’ কবিতা পড়েননি এমন বাঙালী পাঠক খুজে পাওয়া যাবে না। কবি যখন বি-এ ক্লাসের ছাএ তখন তাঁর কবর কবিতা ম্যাট্রিক সিলেকশনের অন্তর্ভুক্ত তবু, তিনি নকশী কাঁথার মাঠের কবি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য কাব্য-কাহিনী সুজনবাদিয়ার ঘাট’, ‘সকিনা’, ‘মা মে জননী কান্দে’। গীতিকাব্য—“রাখালী’, ‘বালুচর, ধানক্ষেত’, ‘রূপবতী মাটির কান্না’, সুচয়নী’। উপন্যাস—“বোবা কাহিনী’, ‘গানের বই’, ‘রঙ্গিলা নায়ের মাঝি’, ‘গাঙ্গের পাড়ি’। নাটক—’বেদের মেয়ে, পল্লীবধু, মধুমালা’, ‘গ্রামের মায়া’। গদ্য রচনাবলী চলে মুসাফির’, ঠাকুর বাড়ীর আঙ্গিনায়, যাদের দেখেছি’‘জীবনকথা’,‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা—ভ্রমণ কাহিনী’, যে দেশে মানব বড়’, হলদে পরীর দেশে’, ‘জার্মানীর শহরে বন্দরে। শিশু-সাহিত্য-হাসু,, এক পয়সার বাঁশী’, ‘ডালিম কুমার’, বাঙালীর হাসির গল্প ইত্যাদি। তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা সর্বমোট ৩৫টি। নকশীকাঁথার মাঠসহ তাঁর বেশ ক’টি বই বিদেশী একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কবি জসীমউদ্দিনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেছেন কবির ইন্তেকালে বাংলা সাহিত্যের অপরণীয় ক্ষতি হল। কবি জসীমউদ্দিন যে অনুভূতি নিয়ে তাঁর কবিতায় গ্রাম-বাংলার সহজ সরল জীবন বিচিত্র করেন তা অতুলনীয়। গ্রামীণ জীবনের এমন ভাবমুতি বাংলা কবিতায় বিরল ।” জেনারেল জিয়া তাঁর শোকবাণীতে বলেন কবির ইন্তেকালে বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের অপরণীয় ক্ষতি হয়েছে। জেনারেল জিয়া বলেন, কবি জসীমউদ্দিন বাংলাদেশী গ্রামীণ জনগণের প্রিয় ছিলেন। কারণ তাঁর লেখায় তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা প্রাধান্য লাভ করত।” মৃত্যুর কিছুদিন আগে বাকশালী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কবি তিনি একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপনের জন্য বাকশালী দুর্বৃত্তের দ্বারা গঠিত ৩০১-সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি ‘৭৬ সালের একুশে পদকে ভূষিত হন। কবি জসমিউদ্দিনের মতে যে ক্ষতি হলো তা অপূরণীয়।। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের অতীত এবং বর্তমানের বিশাল সেতু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম আমরা। এ ক্ষতির কথা কল্পনা করা যায় না। এ শোক অনিবার্য। কবি আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকবেন তাঁর কবিতায়, তার কবিতার চিরশ্যামল উদ্যানে। কবি যে গ্রাম-বাংলার তিনি সবসময় থাকবেন। থাকবেন চিরকাল তাঁর আত্মা অনন্ত, তাঁর শান্তি লাভ করুক। তাঁর মৃত্যহীন স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমরা আনত হৃদয় সালাম জানাই।
চোরাচালানের খতিয়ান
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সাড়ে তিন বছরে সীমান্তের ওপারে পাচার হয়ে গেছে সাড়ে ছ’হাজার কোটী টাকার পণ্য। এর ফলে ঐ সময়ে বাংলাদেশের প্রতি বছর গড়পড়তা হিসেবে দেড় হাজার কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। আমাদের বাৎসরিক গড়পড়তা রফতানী অায় পাঁচশ’ কোটী টাকা। ফলে এই তিন বছরে রফতানী আয়ের তিনগুণ চলে গেছে সীমান্তের ওপারে। যারা চোরাচালানীর কাজে লিপ্ত ছিল তারা এর সাহায্যে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। ফলশ্রুতিতে দুঃখদুর্দশা নেমে এসেছে অগণিত মানুষের জীবনে। বস্তহীন অবস্থায় দিন কাটাতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ নর-নারীকে। ‘৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের শিকারে পরিণত হয়ে প্রাণ দিয়েছেন দু’লক্ষ বাংলাদেশী। স্বাধীনতার পর কি পাচার হয়নি বাংলাদেশ থেকে পাট, ধান, খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, মাছ, মুরগী, কচ্ছপ, কাসা, পিতল, ঘি, মাখন কোন কিছুই বাদ যায়নি চোরাচালানকারীদের তালিকা থেকে। দেশে উৎপাদিত পণ্য থেকে শুরু করে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে আনীত আমদানী সামগ্রি পর্যন্ত সবকিছুই দেদার চালান হয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এর ফলে পঙ্গু, হয়ে গেছে। মানুষকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে ব্যাহত হয়েছে আমদানীর লক্ষ্যমাত্রা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কি করে সম্ভব হলো এই চোরাচালানী। এই প্রশ্নের জবাব মোটেই জটিল নয়। খোলাবাজারে বাংলাদেশী টাক্সার মান চেপে রেখে, সোনা ও রুপা পাচার, হুণ্ডির মাধ্যমে মুদ্রা পাচার, সবকিছুর ফলে টাকার মান হ্রাস পাওয়ায় ফায়দা লুটেছে চোরাচালানকারীরা। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে, সুবিধা তারা লাভ করেছে তা হলো রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিগত দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পাদিত অলিখিত চুক্তির মাধ্যমেই অনুমতি দেয়া হয়েছে এই চোরাচালানের। বংলাদেশে চোরাচালানকারীরা রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করেছে সবচেয়ে বেশী। স্বাধীনতার পর যে সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে চরিত্রগতভাবে এরা জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশী আধিপত্য মেনে নিয়েছে। এই পরভৃত্য রাজনীতিবিদেরা কখনই জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়নি। যে কারণে নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছিলাম আমরা। ১৯৭৫-এর ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পর নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে গোটা দেশে। সেই সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে বিগত দিনের দুকর্মের খতিয়ান। জেনারেল জিয়া সাম্প্রতিক এক ভাষণে বলেছেন“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা নিজস্ব উদ্যোগে খাদ্যশস্য ও আমদানীদ্রব্যের চোরাচালান সংগঠিত করেছে। এই স্পষ্ট ভাষণের ফলে চোলাচালানের কারণ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১৯৭২-৭৩ সালে কোলকাতার এক পত্রিকায় হিসেব দেয়া হয়েছিল যে, এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চোরাচালানকত পাটের পরিমাণ ছিল দশ লক্ষ বেল। এই পরিমাণ পাট নিশ্চয়ই কোমরে গজে। কিংবা বস্তায় করে পাচার করা হয়নি। এ জন্য ব্যবহৃত হয়েছে , বাস, ট্রাক ইত্যাকার সব যানবাহন। এই সব যানবাহন কে যুগিয়েছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। এছাড়া বিগত সরকারের অন্যান্য নীতিও চোরাচালানকে উৎসাহিত করেছে অর্থনীতিকে বিকশিত হতে দেয়া হয়নি। রফতানীকারকদের প্রতিযোগিতা চালাতে দেয়া হয়নি। সর্বোপরি আমদানী ও রফতানী।ক্ষেত্রে এমন কতকগুলো নীতিমালা চালু করা হয়েছিল যা আমাদের অর্থনৈতিক ভারতীয় অর্থনীতির সহায়ক অর্থনীতিতে পরিনত করেছিল। আজ সে অবস্থার অবসান ঘটেছে। চোরাচালান আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছিল দেশের প্রতিটি সৎ নাগরিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ কথা ঠিক যে, বাংলাদেশে ১৭শ’ মাইলব্যাপী সীমানায় চোরাচালান সম্পণে দমন সম্ভব নয়। কিন্তু যে ব্যাপক হারে চোরাচালান হয়েছে তা দমন করা সম্ভব। কিছুদিনের ঘটনাবলীই তার প্রমাণ সরকারী নিয়ন্ত্রণই নয়, জনগণের সহযোগিতায়ও বিশ্বাস করি। জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।
উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন
বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে রাজশাহী বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বিভাগীয় পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে এই বোর্ডের কাজ। এই বোড় দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় সম্বলিত পরিকল্পনা ও প্রকল্পগুলো অনুমোদন, সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সীগুলির মাধ্যমে বাস্তবায়ন এবং এই বাস্তবায়নের কাজ তদারক করা, বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট এজেন্সীকে বোর্ডের নিয়মিত তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করার দায়িত্ব পালন করবে। ১১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে এই বোর্ড। বোর্ডের একটি উপদেষ্টা পরিষদও থাকবে। বোর্ডের সদর দফতর থাকবে রাজশাহী শহরে। বোর্ডের পাঁচ কোটী টাকার একটি অ-তামাদি যোগ্য ও নিয়মিত তহবিল থাকবে। ইতিপূর্বে রাজশাহী শহরের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে রাজশাহী ডেভলেপমেন্ট অথারিটি এই উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই গঠিত হয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন বোের্ড। এই বোর্ডের কাজের ক্ষেত্রেও নিঃসন্দেহে ব্যাপক। শুধু একটি শহরের উন্নয়নই নয়, গোটা একটি বিভাগের উন্নয়নে নিয়োজিত থাকবে এই বোর্ড। দেশের প্রতিটি অঞ্চল সমানভাবে গড়ে উঠুক এটাই সরকারের কাম্য এবং এ জন্যই বর্তমান সরকার দেশের উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই বোর্ডের কর্মতৎপরতার উপর উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল সন্দেহ নেই। তাই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে বোর্ডকে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, ত্বরান্বিত করতে হবে উন্নয়নের কাজ। জনগণের ভাগ্যেন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর বলে সমস্যা যত কঠিনই হোক সরকার তার সুরাহা করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এই কাজে তখনই সাফল্য আসবে যখন সরকারী কর্মচারী ও জনগণ উন্নয়নের কাজে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসবেন। রাজশাহী উন্নয়ন বোের্ড গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হলে শুধু, উত্তরাঞ্চলেরই উন্নতি হবে না, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সাড়া জাগবে। এই জন্যই জনসাধারণ রাজশাহী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মতৎপরতা উদগ্রীব হয়ে লক্ষ্য করবেন বলে আমরা আশা করি। যেহেতু সরকার দেশের প্রতিটি অঞ্চলের সমমাত্রিক উন্নয়নে নিষ্ঠাবান, তাই অঞ্চলও ক্রমে উন্নয়ন চঞ্চল হয়ে উঠবে।
বেসরকারী কলেজ একত্রীভূতকরণ
২৩শে এপ্রিল রংপুরে ভাষণ দিতে গিয়ে দেশের বেসরকারী কলেজসমূহের একত্রিতকরণের বিষয়ে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট সায়েম। প্রেসিডেন্ট বলেছেন সরকার বেসরকারী কলেজ অবস্থা উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। প্রসঙ্গত তিনি উল্লেখ করেছেন যে, একই অঞ্চলে একাধিক বেসরকারী কলেজকে একত্রীভূত করা হবে। আমাদের দেশে সরকারী কলেজ থেকে বেসরকারী কলেজের সংখ্যা ১০ গুণের বেশী। দেশের শতকরা ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী বেসরকারী কলেজে পড়াশুনা করে থাকে। সরকারী কলেজের সংখ্যা যেমন সীমিত, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও তেমনি সীমিত। কিন্তু এই সরকারী কলেজগুলি চালু, রাখার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এই জন্য বেসরকারী কলেজের শিক্ষকরা দাবী করেছিলেন সরকারী কলেজের কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা হোক। কেননা সরকারী কলেজগুলোর ব্যয় মিটাতে গিয়ে বেসরকারী কলেজের ভাগ্যে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এই কারণে বেসরকারী কলেজগুলি প্রতিনিয়ত আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন। বিগত আমলে একই অঞ্চলে রাজনীতিক কারণসহ বিভিন্ন কারণে গড়ে উঠেছিল বহু, বেসরকারী কলেজ বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একের পর এক কলেজগুলিকে অনুমোদন দিয়েছেন। শিক্ষা বিভাগের এক দফতরের সঙ্গে অন্য দফতরের কোন সময় ছিল না। এর ফলে দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ১৯৭৩ সালে বেসরকারী কলেজের শিক্ষকরা ধর্মঘট করলে এ সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট মহলের চোখে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানের সুপারিশের জন্য সরকার একটি ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বলা হয়েছিল এই কমিটি ১৯৭৪ সালের মধ্যে সুপারিশ পেশ করবে। কিন্তু সুপারিশ পেশ করতে করতে ১৯৭৫ এসে যায়। এরপর এ নিয়ে আর কেউ উচ্চবাচ্য করেননি। যতদূর জানা গেছে সেই কমিটি একই এলাকায় একাধিক কলেজকে একত্রীভূতকরণ ও অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য কলেজ শিক্ষকদের বর্তমান অর্থনৈতিক সাহায্য ১০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা ও অশিক্ষকদের ৫০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। এ সুপারিশ সম্পর্কে বেসরকারী কলেজ শিক্ষক সমিতি বেশ কয়েকবার দেন-দরবার করেছেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। প্রেসিডেন্টের ভাষণ থেকে একথা স্পষ্ট যে, বর্তমান সরকার বেসরকারী কলেজের সমস্যা সম্পর্কে বিবেচনা করছেন। কিন্তু এ সমস্যাকে দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে সমগ্র সমস্যাটিকে অখণ্ড সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আমরা মনে করি, বেসরকারী কলেজের একত্রীকরণের প্রশ্নে কতিপয় সমস্যা দেখা দেবে। এই সমস্যা দেখা দেবে উদ্ধৃত্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদৈর নিয়ে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই উদ্বৃত্ত কর্মচারীরা দেশের শিক্ষিত জনশক্তির প্রধান অংশ শিক্ষিত জনশক্তিকে দিনের পর দিন বেকার রাখা ঠিক হবে না। বেসরকারী কলেজ একত্রীকরণের সময় এ সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় সমস্যা জটিলতর হবে এবং নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে। অপরদিকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কেননা একত্রীকরণের উদ্যোগ নেয়া হলেও স্বল্প সময়ে সে কাজ সমাধান সম্ভব। নয়। অথচ বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের সমস্যা গতকালও ছিল, আজো আছে, আগামীকালও থাকবে। বেচে থাকার জন্যই তাদের অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রয়োজন। আমৱা আশা করবো এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সক্রিয় পদক্ষেপ নেবেন।
মে দিবসে জেনারেল জিয়ার ভাষণ
এদেশে আমরা সবাই শ্রমিক। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্যে সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। মে দিবসের তাৎপর্য আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মে দিবসের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্যে সরকার এই আবাস দিচেছ যে, শ্রমিকদের স্বার্থ সর্বদাই অক্ষম রাখা হবে। শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যে সরকার অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসবের মধ্যে তাঁদের স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা, ট্রেড ইউনিয়ন ট্রেনিং পেশাগত ও কারিগরী, মেধা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি, চাকুরীর নিশ্চয়তা বিধান, পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা প্রভৃতি রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে যে অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে এর আগে দেশে কোন শ্রমনীতি ছিল না। সরকার শ্রমিকদের স্বার্থকে যথাযথ দ্বীতি দিয়েছেন এবং কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি, শৃঙ্গখলা প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিকর তৎপরতা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকার অবশ্য নিজেদের ভুল-ত্রুটির ঊড়ধে মনে করেন না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ও অভিজ্ঞতার আলোকে শ্রমনীতির পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমরা এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করি না। সরকার এই বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন রয়েছেন এবং শ্রমিকদের কল্যাণ অধিকার সপকে চিন্তা-ভাবনা করছেন। আমরা সবাই শ্রমিক। দেশ ও জাতির স্বার্থে আপনাদের কাছে আমার একটি অনুরোধ রয়েছে। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে গিয়ে কলেকারখানায়, ক্ষেতে-খামারে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। সরকার শ্রমিকদের চাকুরীর অবস্থার উন্নয়নের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচেছন এবং এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সরকার মুনাফায় শ্রমিকদের অংশীদারত্বের অধিকার স্বীকার করে নিয়েছেন এবং তাঁদের চাকুরীগত। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে বদ্ধপরিকর। অলসতা দূর করে আমাদের অধিক পরিশ্রম করতে হবে। তিনি বলেন বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলে আমরা সাত ঘণ্টা করে কাজ করতে পারলে এখন নিজেদের দেশ গড়ার জন্যে প্রয়োজনে ২০ ঘণ্টা করে কাজ করতেও আমরা প্রস্তুত। এদেশের কিছূ, বিভ্রান্ত যুবক অতিতের গণবিরোধী কার্যকলাপ ও অপরাধের ভয়ে সীমান্তের বাইরে পালিয়ে গিয়েছে। এরা বিদেশী সাহায্যে সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচেছ। কোথাও কোথাও সীমান্তের ভেতরে ঢুকে হত্যা, লুটতরাজ এবং মা-বোনের ইজ্জতহানি করছে। এরা নাকি আবার দেশ স্বাধীন করবে, প্রবাসী সরকার বানাবে। তাদের এই স্বাধীনতা কাদের জন্যে এর দেশের জনগণের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবে না। এদের দমন করার জন্যে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ প্রস্তুত রয়েছে। দুষ্কৃতীকারীরা বিপ্লবের নামে দেশে লুটতরাজ এবং হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, তারা মা-বোনের ইজ্জতের ওপরও হাত দিয়েছে। দেশপ্রেম, দেশবাসীর জন্যে ভালবাসা এবং শৃঙখলা ও সংহতি ছাড়া বিপ্লব হয় না। এদের নির্মল ও ধংস করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রত্যেক ধর্মের লোক তাদের বিশ্বাস মৃত স্ব-স্ব ধর্ম পালন করবেন। সরকার প্রত্যেকের ধর্মীয় অধিকারে বিশ্বাস করেন। বাংলাদেশের জনগণ বোঝে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। আমরা সবাই বাংলাদেশে স্ব-স্ব ধর্মের ছাতার নীচে থাকবো। জনগণের সমস্ত ন্যায্য অধিকার সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। সাবেক সরকারের আমলে কিছুসংখ্যক লোক সমস্ত জাতীয় সম্পদ লণ্ঠন করেছে। কেড়ে নিয়েছে জনগণের সমস্ত অধিকার সরকার লণ্ঠিত গাড়ী-বাড়ী উদ্ধার করে পুনরায় জাতীয় সম্পদ হিসেবে জনগণের সামনে হাজির করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ শান্তিতে কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চায়, তারা শান্তিতে নিদ্রা যেতে চায়। সে অধিকার তাদের দিতে হবে। ন্যায়বিচার লাভের সুযোগ দিতেই হবে। কারণ ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার, আল্লাহ তাঁদের দিয়েছেন। বর্তমান সরকার মুদ্রাস্ফীতি রোধ করে দেশের অর্থনীতি, পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন। জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পেয়েছে এবং আরো পাবে। খাদ্য আমদানীর জন্যে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে তা দিয়ে মেশিনারিজ আমদানী করা সম্ভব হবে। “আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। আমাদের দেশ স্বাধীন ও সাবভৌম। আমরা সবাই বাংলাদেশী।”
শিশু অপহরণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
১৯৭৬ সালের সামরিক আইন বিধির পঞ্চদশ সংশোধনী জারি করে। শিশু অপহরণের চূড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছেন প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৫ সালের ১নং সামরিক আইন বিধির আওতায় নতুন একটি বিধির সংযোজন করে শিশু অপহরণ রোধের জন্য এই কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই বিধি অনুযায়ী “১৫ বছরের কম বয়সের কাউকে তার বৈধ অভিভাবকের অজান্তে অথবা অনুমতি না নিয়ে অথবা বলপ্রয়োগে বাধ্য করে অথবা অন্য যে কোনভাবে কোথাও নিয়ে গেলে অথবা নিয়ে যেতে প্রলযুদ্ধ করলে (ক) সেই ব্যক্তি খুন অথবা মারাত্মকভাবে আহত হতে, পারে, অথবা দাসত্বের শিকারে পরিণত হতে পারে অথবা কারো পরে পড়তে পারে অথবা তাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানো হতে পারে কিংবা খুন হয়ে যাওয়ার বা মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার অথবা দাসে পরিণত হওয়ার কারো খপ্পরে পড়ার অথবা ভিক্ষাবত্তি করার মৃত বিপদে তাকে ফেলতে পারে (খ) উক্ত উদ্দেশ্যে সেই ব্যক্তিকে গোপনে অন্যায়ভাবে আটকে রাখলে এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার কথা বললে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদণ্ড। সরকারের এই গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশের সর্বস্তরের জনগণের বহুদিনের সোচ্চার একটি দাবীর প্রতিফলনই ঘটেছে। সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য এবং ধিকৃত এই সব অপরাধীরা যাতে বিনাবিচারে মুক্তি না পায়। আদর্শ শাস্তির বিধান করে এই নরপশুদের যাতে সমাজ থেকে নির্মল করে দেয়া হয়, তীব্রতর স্বরে এই অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে প্রতিটি নরনারীর কণ্ঠে বহুকাল থেকেই শিশু অপহরণকারীদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র আমাদের সমাজে সক্রিয়। এদের চকান্তের শিকার হয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে অসংখ্য শিশু ও কিশোর। যে মর্মান্তিক পরিণতি ঘটেছে। এই সব শিশু; এবং কিশোরদের জীবনে তা ভাবতেও মন শিহরে উঠে।
ফারাক্কা মার্চ
অযুত কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে শ্লোগন—“চলো চলো ফারাক্কা চলো, মরণ বাঁধ ফারাক্কা বাঁধ উড়িয়ে দাও। গঙ্গার পানির উপর নিজেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিযুত মানুষের মিছিল এগুচ্ছে। এ মিছিল ফারাক্কা মহামিছিল এর নের্তৃত্বে রয়েছেন শতাব্দী প্রবীণ মওলানা ভাসানী মিছিলের শুরু হয়েছে রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দান থেকে শেষ সীমান্তের কাছাকাছি কানসাটে। প্রমত্তা পদ্মার দীর্ঘশ্বাস আর লাখো মানুষের বিক্ষোভ। যুগযুগান্ত ধরে বারি সিঞ্চিত করেছে পদ্মা এই জনপদে। প্রকৃতির তাড়নায় এই রাক্ষসী গঙ্গা বহুবার গতি পরিবর্তন করেছে। ভেঙ্গেছে দুই পারের অনেক জনপদ। তাইত নাম তার কীর্তিনাশা’। আর এই কীর্তিনাশা পদ্মই আবার তার দুই তীরের বিশাল জনপদ তথা সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের জীবনদায়িনী। ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় আর গঙ্গার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহের সঙ্গে মানুষের সংগ্রাম বিরামহীন। এ সংগ্রামের অপর নামই জীবন।। সেই গঙ্গা-পদ্মা তরঙ্গিনী মৃতপ্রায়। পদ্মার বুকে নৌকা ভাসাতে মাঝির আর অকুতোভয় সাহসের প্রয়োজন হয় না। কোন জেলে আর মাছের জন্য কাকভোরে উত্তলতরঙ্গের সঙ্গে খেলা করে না। ফারাক্কার কাছে বাংলার বুকে আজ শশ্মানের পদধ্বনি। পদ্মার বুক চিরে আজ ধু ধু বালিয়াড়ি। আর এর জন্য বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ আজ পিপাসার্ত, ক্ষুধার্ত। তাদের জীবন যেন শুকিয়ে গেছে পদ্মার সাথে। এ জন্যে পদ্মকে স্রোতস্বিনী করে তুলবার তাগিদ বড় বেশী। তাই এ মিছিল ন্যায্য অধিকার আদায়ের মিছিল। এ মিছিল জীবনমৃত্যুর মাঝে ভয়, শঙ্কা, দ্বিধাহীন ও দপ্ত দৈনিক বাংলা’র জহিরুল হক বলেছেন, মিছিলের গতি দুর্বার।মিছিল তার লক্ষ্যপথে দুর্বারবেগে এগিয়ে চলেছে। মিছিলের গতি যেন প্রমত্ত গঙ্গা-পদ্মার সেই হারিয়ে যাওয়া খরস্রোত। মিছিলের এই গতিবেগ এসেছে প্রিয় মাতৃভূমির সমস্যা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা থেকে। মিছিলের যাত্রা শুরু হয়েছে রাজশাহী ময়দান থেকে ১৬ই মে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ আগেই এসে জড় হয়েছিলেন রাজশাহীতে। মিছিলের মানুষ এসেছে দুর-দুরান্ত থেকে। এসেছে সর্বস্তরের এবং সর্ব বয়সের মানুষ। যুবা, বদ্ধ, কষক-শ্রমিক, কামারকুমার, জেলে, তাঁতী—এসেছেন সবাই। ১৬ই মে, রোবাবর সকাল দশটায় শুরু, হল মহামিছিলের অভিযাত্রা। সকাল দশটার আগেই মাদ্রাসা ময়দান ছিল লোকে-লোকারণ্য। কণ্ঠে শ্লোগান এবং হাতে ব্যানার। সকাল ১০-১৫ মিনিটে মিছিলের মহানায়ক মওলানা ভাসানী এলেন ময়দানে। মঞ্চে উঠলেন তিনি। প্রাচ্যের শতাব্দী প্রবীণ মানুষটি অস্বাভাবিক ঋজদেহে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করলেন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এখনো আমরা আলোচনা করছি, কিন্তু কোন ফল পাওয়া যায়নি। আমি মনে করি, ভারতের জন্য এখনো সময় আছে।” আমরা আপোষে ফারাক্কা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। ভারত যদি আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রস্তাবে সাড়া না দেয়, বিশ্বের শান্তিকামী জনগণও ভারতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করবে। মওলানা ভাসানী আরো বলেন“আমরা শান্তি চাই। কিন্তু তারা যুদ্ধ চায়। বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের ভয়ে ওরা সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করেছে। আমি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাদের জানিয়ে দিচ্ছি, আমরা আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করব। সঙ্গে সঙ্গে লাখো মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হল গগণবিদারী শ্লোগান “নারায়ে তকবীর, আল্লাহ, আকবর।” মঞ্চে রইলেন মওলানা ভাসানী মাত্র দশ মিনিট কথা, খুবই কয়। কিন্তু বক্তব্য বড় গভীর। এতো কথা নয়, যেনো সাড়ে সাত কোটী মানুষের বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। মন্ত্রমুগ্ধের মৃত গভীর আগ্রহ নিয়ে সমবেত জনতা তার কথা শুনেছে, আর গগণবিদারী শ্লোগাণ ফেটে পড়েছে তাঁরা। এই সব মানুষ যুগ যুগ ধরে মওলাকা ভাসানীকে দিয়েছে। সংগ্রামের প্রেরণা। আসামের বাস্তুত্যাগী বাঙালীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম দিয়ে যাঁর হাতে খড়ি আজ জীবনসায়াহ্নে তিনি জাতির অস্তিত্বের কাণ্ডারী। মাঝে অনেক সংগ্রামের তিনি ছিলেন পথিকৎ জীবন পুর্বাহ্নে লাইন প্রথার আন্দোলন থেকে আজ অন্যতর সংগ্রাম। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আজো জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি সংগ্রামী। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরীতে এ সংগ্রামের এটি তাঁর প্রথম পদক্ষেপ। বক্তৃতা শেষ। মিছিলের পুরোভাগে এসে দাঁড়ালেন শ্বেতশশু মানুষটি। এবার যাত্রা হবে শুরু গ্রীষ্মের সূর্য তখন প্রখর হয়ে উঠেছে। সময় তখন দশটা বেজে ত্রিশ মিনিট। যাত্রা হলো শুরু মিছিলের শুরুতেই মিছিলের পুরোভাগে এসে দাঁড়ালেন নেতৃবৃন্দ। মওলানা ভাসানীও রয়েছেন। মিছিলের লোক কত? এ হিসেব দেয়া সম্ভব নয়। তবে এর যেন শেষ নেই। যেদিকে তাকানো যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। মিছিল যতই এগুচ্ছে যোগ দিচ্ছে আরো মানুষ। উচ্চারিত হচ্ছে গগণবিদারী শ্লোগান মাদ্রাসা ময়দান থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে রাজশাহী কোর্ট। মিছিল এখানে পৌঁছতে না পৌঁছতেই শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির আগেই চারদিক ঝাপসা করে এলো ধুলিঝড়। সকলের আশঙ্কা বুঝিবা মিছিল টিকল না। কিন্তু প্রকৃতি হার মানল জনতার ইচ্ছার কাছে। প্রকৃতির ভূকুটি অগ্রাহ্য মিছিল চলল এগিয়ে। সঙ্গে রয়েছেন মওলানা ভাসানী। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই আবহাওয়ার কারণে খোলা জীপ ছেড়ে উঠলেন গাড়ীতে। বার্ধক্য আর অসুস্থতার জন্য তিনি আগের মৃত পরিশ্রম করতে পারেন না। তবূও। মিছিলের দিন সকাল থেকে তাঁকে দেখাচ্ছিল উজ্জ্বল আর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মিছিল শুড়ূ করার আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন মিছিল যাবেই, শেষ লক্ষ্য পর্যন্ত। একটি কথা, কিন্তু তাতে ছিল বড় আতমপ্রত্যয়। রাজশাহী থেকে প্রেমতলী। ১১ মাইল পার হয়ে এসে মিছিলের মধ্যাহ্নকালীন বিরতি। মিছিলকারীদের জন্য এখানে দেয়া হবে চিড়াগড়। মিছিল প্রেমতলীতে পেছিল বেলা দু’টোয়। মিছিলকারীরা। গর্বিত। পথ হাঁটার ক্লান্তি ওদের নেই। প্রেমতলীতে স্বল্পকালীন অবস্থানের পর এরা রওয়ানা দেবেন নবাবগঞ্জের পথে। এবারের যাত্রাপথ ১৯ মাইল দীর্ঘ। মহকুমা শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মহানন্দার তীরে এর অবস্থিতি। প্রেমতলী থেকে মিছিলের যাত্রা শুরু হল নবাবগঞ্জের দিকে। বেলা তখন দুপুর গড়িয়ে তিনটে। আকাশের মেঘ কেটে গেছে। রোদ উঠেছে। সেই সঙ্গে মিছিলও জঙ্গী আকার ধারণ করেছে। পুরোভাগে পরনেতা মাওলানা ভাসানী। সন্ধ্যে ছ’টা। মিছিলের একাংশ নিয়ে মওলানা ভাসানী পৌছালেন, মহানন্দার ধারের মফস্বল মহকুমা শহর নবাবগঞ্জে। এখানে তিনি ঘোষ” করলেন ভারত ফারাক্কা সমস্যার সমাধানে রাজী না হলে তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু, করবেন। তিনি বললেন, ফারাক্কা প্রতিক্রিয়ায় এ বছর বাংলাদেশের তিনশ’ কোটী টাকার ক্ষতি কয়েছে’ তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধীকে বাংলাদেশে এসে ফারাক্কার

শিল্পাচার্যের মৃত্যু
বাংলাদেশের কৃতি সন্তানদের অন্যতম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন যে আবেদীন বাংলার দুখীনি ও গরবিনী দুই রূপকেই ফুটিয়ে তুলেছেন তা স্কেচে, চিত্রে। ১৯১৪ সালের ৮ই নভেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন জয়নুল আবেদীন। বাবা তমিজউদ্দিন আহমদ ও মা জয়নাকুন্নের প্রথম পুত্রসন্তান, তিনি। পিতা সামান্য চাকুরে হলেও মনে-প্রাণে শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তাই বালক জয়নুলকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন স্কুলে। কিন্তু স্কুল পালানো ছেলে জয়নুলের মন ছিল না, পড়াশুনায়। স্কুলের ক্লাস রুম ছেড়ে তিনি আশ্রয় খূজতেন নিসর্গের রাজ্যে গানের ছন্দ, নদীর বাঁক, ফসলের ক্ষেত কৃষকের কাস্তে চালানো ইত্যাদি তাঁর মনের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে এক চিত্রর পময় জগৎ। ছেলেবেলা থেকেই জয়নুল আবেদীনের ছিল ছবি আঁকার শখ। ছবি না একে তিনি থাকতে পারতেন না এবং কৈশোরেই তিনি তাঁর ছবিতে রেখেছিলেন প্রতিভার স্বাক্ষর। একদিন তাই কোলকাতা আর্ট কলেজের কৃতি ছাত্র জয়নুল আবেদীন পরিণত হলেন শিল্পাচার্যে। ‘৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর আঁকা ছবি বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনটি শিল্পকলা যাদুঘর, ব্রোসেলসের জাতীয় যাদুঘরসহ পৃথিবীর বহু দেশে তাঁর অাঁকা ছবি সংগৃহীত হয়েছে। ‘৭৪ সালে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিত ডক্টরেট ও ‘৭৫ সালে ঢাকা বিশববিদ্যালয় তাঁকে ডি-লিট উপাধি প্রদান করেন। জীবদ্দশাতেই শিল্পাচার্যের খ্যাতি তাঁকে কিংবদন্তীর নায়করূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। পাকিস্তান হওয়ার পর ‘৪৭ সালে তিনি কোলকাতা থেকে ঢাকা আসেন। বহূ, বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ১৯৪৮-এর নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত করেন চার ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। চারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারূকলা ফ্যাকাল্টির ‘ডীন’ পদে নিয়োগ করা হয়। স্বাধীনতার পর সম্মানিত করা হয় জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে। যুক্তরাজ্য (১৯৫১), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৯৫৬), সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯৬১), মধ্যপ্রাচ্য (১৯৬৮) সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক, জাপান, ইরান, মেক্সিকোসহ পৃথিবীর বহু দেশে ইউনেস্কো এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগে তাঁর অাঁকা ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহে ১৯৭৫ সালে তাঁর নামে একটি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ‘৪৩ সালে আঁকা তাঁর চিত্রসহ বহূ সুবিখ্যাত ছবি রাখা হয়েছে। ১৯৭৩ সন থেকে তিনি তাঁর প্রস্তাবিত ও পরিকল্পিত সোনারগাঁ লোক যাদুঘর নিয়েই অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন তিনি। শেষ জীবনের এটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। জয়নুল আবেদীনের মৃত্যুতে সমগ্র বাংলাদেশ আজ শোকাহত। শিল্পাচার্যের মৃত্যুতে পাঠানো শোকবাণীতে প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের মৃত্যু জাতির জন্য একটি অপরণীয় ক্ষতি। স্বাধীনত্য সংগ্রামে তাঁর অবদান জাতি স্মরণ করবে শ্রদ্ধাভরে।” অপর এক শোকবাণীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন-তিনি দীর্ঘ দিনের সাধনা, একাগ্রতা আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এই উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে আকা বিশেষ করে ম্যাডোনা ৪৩ চিত্রটিই শিল্পাচার্যকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর অনবদ্য শিল্পকর্মে বাংলাদেশের জীবন ও সংস্কৃতি প্রতিভাত।” অপর এক শোকবাণীতে এডমিরাল এম, এইচ, খান বলেন শিল্পাচার্যের মৃত্যুতে বাংলাদেশ তার আতর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক যোগ্য সন্তানকে হারালো। তার শিল্পকর্ম ও অনুপ্রেরণা দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।” শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন আমাদের মধ্যে এক হাহাকারের জন্ম দিয়ে চলে গেছেন চিরকালের জন্য। যখনই আমরা তাঁর কথা ভাবব তখনই আমরা হব শোকাত। জয়নুল আবেদীনের সবচেয়ে বড় প্রতিভা তিনি দেশকে স্বপ্ন দেখাতে পারতেন। একটি স্বপ্নহীন জাতিকে কিভাবে স্বপ্ন দেখানো যায় জয়নুল আবেদীন তার প্রমাণ। জয়নুল আবেদীন যে স্বপ্ন দেখেছিলেন অন্য কোন শিল্পীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। জীবন সম্পর্কে বলতে গেলেই জয়নুল আবেদীন চলে যেতেন অতিতে। তাঁর অপরিচিত গ্রাম শেরপুরে। যে পরিবেশ তাঁকে বড় করেছে, যে নদীর জল তাঁর চোখে অদ্ভুত নীলিমা বলে মনে হয়েছে, কালফুলের বন তার বর্ণনায় মৃত হয়ে উঠেছে। ব্রহ্মপুত্রের উদাসী হাওয়ায় তাঁর মনে ভেসে চলেছে, খর-চৈত্রের রোদে শুকনো পাতা মাড়িয়ে এসেছেন এই নদীর পাড়ে, শীতের কুয়াশায় তাঁর কচি পায়ের পাতা ভিজে উঠেছে। শিল্পাচার্যের জীবনে এই পরিবেশ তাঁর পথ চলার নির্দেশিকা। তিনি সবসময় তাঁকে ‘হামিদ মিয়া’,পাইন্যার মা এদেরই একজন মনে করতেন। তাঁদের একজন হয়ে তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলেন সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, আজ আমাদের সকলের।

গ্রাম প্রতিরক্ষা দল।
সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোটাদেশে মোট ৫৭,২১৮টি গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠন করা হয়েছে। এই গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এ বছরের জানুয়ারী মাসে। সে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের জন্য জেলা পর্যায়ে ১৯টি, মহকুমা পর্যায়ে ৬২টি, থানা পর্যায়ে ৪০৯টি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪,৩১৯টি গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির প্রধান হচ্ছেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক, মহকুমা অফিসার, সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) ও এসব কমিটিতে নির্দলীয় ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যরা চৌকিদারদের সঙ্গে গ্রামে রাতে একত্রে টহল দেবে। গ্রাম পর্যায়ে শান্তি-শৃখলা রক্ষার প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। সনাতনী পন্থায় গ্রামে যে চৌকিদারি ব্যবস্থা চালু ছিল, প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অপ্রতুল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে অপরাধের বিভিন্ন ধরনের প্রবণতার ফলে একজন বা দু’জন চৌকিদারের পক্ষে সম্ভব ছিল না পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠনের ফলে গ্রাম পর্যায়ে শান্তি-শৃঙখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে বাধ্য। গ্রাম প্রতিরক্ষা দল যাঁদের নিয়ে গঠিত হয়েছে তাঁদের প্রত্যেকেই স্ব-স্ব গ্রামের অধিবাসী। ন্যস্ত দায়িত্ব অণূযায়ী এরা নিজ নিজ এলাকায় কোন বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ ও গতিবিধি সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে এবং জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁদের নিজ নিজ এলাকার প্রধান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রহরায় থাকবে। বাংলাদেশের ব্যাপক জনসমষ্টি গ্রামের অধিবাসী। গ্রামের উন্নয়ন বাদ দিয়ে শহরের উন্নয়ন অর্থহীণ গ্রাম পর্যায়ে শান্তি-শৃঙখলার বিধান করা না গেলে উন্নয়নের গতি ব্যাহত হবে। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, যা মানুষের মনে আহাবোধ ফিরিয়ে আনবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্তের ফলশ্রতি হচ্ছে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠন। আমরা আশা করবো গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যরা তাঁদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে পালন করবেন। এ দায়িত্ব পালনে তাঁদের উৎসাহ দানের জন্য সরকার গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যদের যথাযোগ্যভাবে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের যেসব সদস্য কর্তব্য পালনকালে অসামান্য কৃতিত্ব ও সাহসের পরিচয় দেবেন তাঁদের। নগদ অর্থে পুরস্কারসহ কৃতিত্বের সাটিফিকেটও দেয়া হবে। গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠনের নিরপেক্ষ ও দেশপ্রেমিক লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করবো এরা গ্রামে বিরাজমান কোন্দল ও ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে থেকে সত্যিকার দেশপ্রেমিক হিসেবে তাঁদের ভূমিকা পালন করবেন। গ্রাম পর্যায়ে সমস্যা ব্যাপক সেই জন্য সমাধানও হতে হবে বাস্তবমুখী ও ত্বরিত। গ্রাম প্রতিরক্ষা দলকে সে সম্পর্কেও সজাগ হতে হবে।
পল্লী এলাকায় সরকারী কর্মচারীর সফর
সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচচপদস্থ সরকারী কর্মচারীরা পল্লী এলাকা সফরে যাবেন এবং এই সফরকালে জনসাধারণ সহযোগিতা করবেন বলে সরকার আশা প্রকাশ করেছেন। এই সিদ্ধান্ত অভিনন্দনযোগ্য। বাংলাদেশ আসলে একটি গ্রাম শহরে বসে যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তা গ্রামের মানুষদের জন্যই। কিন্তু বিগত দিনে বিভিন্ন কারণে গ্রামের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে উত্তরাধিকারসূত্রে বৃটিশদের তৈরী করা যে প্রশাসন ব্যবস্থা আমরা পেয়েছি তাতে গ্রাম পর্যায়ে কোন রাজপ্রতিনিধি নেই । রাজপ্রতিনিধিরা যাঁরা পেশায় দারোগা কিংবা সার্কেল অফিসার। তাঁরা থাকেন থানা হেড কোয়াটারে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি হিসেবে জনগণ এদেরই চেনেন। একজন মন্ত্রণালয়ের সচিব কিংবা অন্য কোন উচচপদস্থ ব্যক্তির পরিচয় তাঁদের কাছে অজ্ঞাত অথচ এরাই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। এর ফলে সরকারের সঙ্গে জনগণের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে অতীতে কখনো সুষ্ঠ প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আশা করা গিয়েছিল এ ব্যস্থার অবসান ঘটবে কিন্তু একটি স্বাধীন জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রেরণা অনুভব করা বিগত সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তারা গতানুগতিক খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন জাতির জীবনধারাকে তার অবশ্যাম্ভাবী পরিণতি আমরা দেখেছি। জনগণের প্রত্যাশা ও প্রশাসন হবে গতিশীল ও দক্ষ প্রশাসনের কাঠামোয় থাকবে না কোন গাফিলতি ও অদক্ষতা সরকারের এই সিন্ধান্তের ফলে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা তাঁদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। উপরন্তু, এ ব্যবস্থায় ফলে প্রশাসন হবে আরো গণমূখী। জনগণের সঙ্গে বিরাজমান দুরত্ব ঘুচিয়ে আণাই আজকের লক্ষ্য এর জন্যে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত উদ্যোগ, উৎসাহ প্রয়োজন। এ সফর যেন ‘পিকনিক’ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল
দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের পরিপূরক হিসেবে গঠিত জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিলের উদ্বােধনকালে প্রেসিডেন্ট সায়েম আশা প্রকাশ করেছেন যে, দেশে-বিদেশে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশী নাগরিকই এ তহবিলে মুক্তহস্তে দান করবেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনের সিদ্ধান্তটি ইতিমধ্যেই অভিনন্দিত হয়েছে সর্বমহলে জনগণের ইচছার প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার জনগণের দেয় তাঁদের নগদ চাঁদা এবং তাঁদের সর্বপ্রকার সহযোগিতাই হবে প্রতিরক্ষা তহবিলের মূল উৎস প্রতিরক্ষা তহবিলে। সংগৃহীত আয় ব্যয়িত হবে জাতীয় প্রতিরক্ষা খাতে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জাতীয় প্রতিরক্ষাকে সৃদৃঢ় করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। এই সৃদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্যের আভ্যন্তরীণ বাপারে হস্তক্ষেপের জন্য নয়, সম্ভাব্য বৈদেশিক আগ্রাসনের বিরহ্মে জাতীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য। জাতির উপর এই অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্ক জনগণ সচেতন। অনেক আগে থেকেই জাতীয় প্রতিরক্ষা খাতে অর্থ সংস্থানে তাঁরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিগত দিনে সরকার জাতীয় প্রতিরক্ষার প্রশ্নটিকে মোটেই গুরুত্ব দেননি। প্রতিরক্ষার প্রশ্নটি ছিল সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাতীয় প্রতিরক্ষার প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। জনগণের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং সরকারী মনোভাবের মিলিত ফলশ্রতিই হচ্ছে জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্নের প্রশ্নে কতখানি সচেতন তা বোধকরি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করেছেন। প্রয়োজনের মুহূর্তে স্বাধীনতা রক্ষার শপথে দুত হয়ে উঠেছিল। জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল পুরোপুরিভাবে গঠিত হবে জনগণের চাঁদায়। চাঁদা দানের মধ্যেই তাঁদের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। চাঁদা দেয়ার জন্যই তারা চাঁদা দেবেন না। চাঁদা দেবেন নাগরিক কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে। এ প্রসঙ্গে বিদেশে বসবাসকারী বাঙালীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা তহবিলের উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেন্ট তার প্রতিও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বিদেশে বসবাসকারী বাঙালীরা অতীতে দেশের প্রতিটি দুৰ্যোগ এবং সঙ্কটে বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছেন। মুক্ত হতে সাহায্য করেছেন জাতিকে। জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিল গড়ে তোলার ব্যাপারে তাঁরাও যথাসাধ্য সাহায্য দিতে আগ্রহী। জনগণের সর্বস্তরের এই ঐকান্তিক আগ্রহ ও অনুপ্রেরণাকে জাতীয় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা একটি তাৎপর্যপূর্ণ উজ্জল সম্ভাবনার নিদর্শন বলে মনে করছি। আমাদের জনগণ, আমাদের জাতীয় ঐক্য এবং আমাদের প্রতিরক্ষা যে অভিন্ন এই বাস্তব সত্যটিই অভিব্যক্ত হয়েছে এর মধ্য দিয়ে।
কৰি হাৰীবুর রহমান
কৰি, শিশু; সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও অনুবাদক হাবীবুর রহমান করোনারী থম্বসিসে আক্রান্ত হয়ে ৫৫ বছর বয়সে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে….রাজেউন)। ১৯২০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় পূলিশ গ্রামে ১লা জুলাই কবি হাবীবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। কোলকাতা হেয়ার স্কুলে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক অনটনের দ্রন শিক্ষাজীবনে বেশীর অগ্রসর হতে পারেনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষের দিকে তিনি ‘জাগরণ’ পত্রিকার সঙ্গে সংযুক্ত হন। “শিশু সওগাত’, “আজাদ’ প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। দেশবিভাগের পর কবি ঢাকায় চলে আসেন। এসময় তিনি দৈনিক আজাদ’-এ চাকুরী গ্রহণ করেন। তারপর দৈনিক সংবাদ’-এ যোগদান করেন। সংবাদ থেকে তিনি ঢাকাস্থ ইউসিস-এ যোগদান করেন। এই সময় তার কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—“পুতুলের মিউজিয়াম’, ‘মন চলে মোর তেপান্তরে’, ‘বিজন বনের রাজকন্যা’, গল্পের ফুলঝুরি, বনে বাদাড়ে’, ‘বন মোরগের বাসা’, সপ্ত ডিঙ্গা’ প্রভৃতি। “উপাত্ত’ নামে তাঁর একটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সর্বমোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা হচ্ছে আঠার। কবি হাবীবুর রহমান তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে কিছুদিন ছোটদের আসরও পরিচালুনা করেন। তাছাড়া ফ্র্যাংকলিন বুক প্রােগ্রামস এবং “সিলভার বাডেড’ কোম্পানীর বাংলা বই অনুবাদ সম্পাদক হিসেবেও কয়েক বছর চাকুরী করেন। মত্যুর আগে পর্যন্ত জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালুক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। জন, এফ, কেনেডীর “প্রােফাইলস ইন কারেজ’সহ তিনি সাতটি বিদেশী গ্রন্থের অনুবাদ করেছেন। বাংলা একাডেমীর অনুরোধক্রমে তিনি ভল্টেয়ারের শ্রেষ্ঠ রচনাবলী “গ্রহের অনুবাদ করেন।
ষড়যন্ত্র মামলার রায়
বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল ১৭ই জুলাই ষড়যন্ত্র মামলার রায় , প্রদান করেন। এই মামলায় সরকার উৎখাত ও সশস্ত্রবাহিনীকে বিনাশ করার চেষ্টা চালানোর দায়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২১ (ক) ধারা ও ১৯৭৫ সালের ১নং রেগুলেশনের ১৩নং সামরিক আইন বিধিবলে। তথাকথিত গণবাহিনী ও অবলন্ত জাসদের কয়েকজন নেতার বিচার করা হয়। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত লেঃ কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবূ তাহেরকে মত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে এবং মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এম, এ, জলিলকে ও লেঃ কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহেরেরর ভাই। আবু ইউসুফ খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। পলাতক মেজর জিয়াউদ্দিন আহমদকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানায় অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। অবলন্ত জাসদের অন্যতম নেতা জনাব এ, এস, এম, আবদুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির লেকচারার অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন এবং অপর একজন জাসদ নেতা জনাব হাসানুল হক (ইনূ) এই তিনজনের প্রত্যেককে দশ বছর করে সশ্রম স্কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দু’বছর স্তরে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। অবলুপ্ত জাসদের অন্যতম নেতা জনাব সিরাজুল আলম খান কর্পোরাল আলতাফ হোসেন এবং কর্পোরাল শামসুল হক, এই তিনজনের প্রত্যেককে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা করে জরিমানার অনাদায়ে আরও দু’বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত কম হয়েছে। যড়যন্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যান্য ব্যক্তি হচ্ছেন : নায়েক সুবেদার। মোঃ জালালুদ্দীন (অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছে) হাবিলদার . এম, এ, বারেক (অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছে) আর রবিউল আলম, মিসেস সালেহা বেগম এবং নায়েক সিদ্দিকুর রহমান—এদের সবাইকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডে দু’হাজার টাকা করে জরিমানায় অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার এবং সিপিএলএ মজিদ, এই দু’জনের প্রত্যেককে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশ’ টাকা কমে জরিমানায়, অনাদায়ে আরো তিন মাস করে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা। হয়েছে মামলায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস করে দেয়া হচ্ছে । ডঃ আখলাকুর রহমান, জনাব আনোয়ার সিদ্দিক, জনাব মহিউদ্দিন, (অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছে) নায়েক সুবেদা বজলুর রহম”, জনাব মাহবুব রহমান (মান্না), জনাব ওয়ারাসাত হোসেন (র্গোল জনাব মোঃ শাহজাহান, জনাব কে, বি, এম, মাহমুদ, শরীফ নূরূল
শিক্ষা, শিক্ষক মুল্যৰােধ
বাংলাদেশে কলেজ শিক্ষক সমিতির বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বােধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে সেনাবাহিনী প্রধান ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মনে দেশপ্রেমের চিরন্তন শিখা প্রজ্জলিত করতে ভূমিকা পালনের জন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন—“নৈতিক অবক্ষয় রোধে শিক্ষকেরাই শক্তির উৎস।” পরিবর্তনের ধারায় সমাজের চেহারা যখন পাল্টেছে তখন শিক্ষকতায়। মানও পরিবর্তিত হয়েছে। অতীতে যে গ্রাম ছিল স্বনির্ভর এখন তা পরনির্ভর। শিক্ষকতা যেখানে ছিল কাম্য, শিক্ষকতা যেখানে ছিল একটি আদর্শ পেশা, শিক্ষকতা সেখানে হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থোপার্জনের হাতিয়ার। পৃথিবীর কোন উন্নতিশীল দেশেই এই অবস্থা থেকে রেহাই পায়নি। তবে, পরিস্থিতি সবচেয়ে দুখজনক রুপ নিয়ে আমাদের দেশে, স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের পর পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই কলুষিত হয়ে পড়ে। নৈতিকতা পরাভূত হয় শিক্ষাঙ্গনে। শিক্ষা উদ্দেশ্য নয়, আধিপত্য এবং আভিজাত্য প্রমাপের উদ্দেশ্য নয়, যত্রতত্র স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করার। এর ফলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল প্রানিময় এ অবস্থা কোনরুমেই স্বাভাবিক ছিল না। এ অবস্থা প্রচলিত মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। স্কুল-কলেজে গণ-টোটকি কিংবা স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার নামে ব্যবসা করা আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই মূলরোধের অবক্ষয় কি আকস্মিক ? নিশ্চই নয়। এ সহলবোধের। অবক্ষয় বিগত দিনে প্রতিফলিত হয়েছে সর্বত্র। তাই এই মূল্যবোধের অবক্ষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন জেনারেল জিয়া। সাথে সাথে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতি। তিনি আহবান জানিয়েছেন : যাতে বর্তমান শিক্ষানীতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে শিক্ষকরা জাতীয় মূল্যবোধের পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসেন সেজন্যে। আজ একথা একান্তই স্বীকার্য যে, দেশ বর্তমানে এক সময়সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে গত চার বছরের ক্লেদাত পরিবেশের ছাপ মুছে ফেলতে না পারলে নতুন করে যাত্রা শুরু করা যাবে না। এই নতুন যাত্রায় শিক্ষকের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আজো গ্রামীণ সভ্যতায় শিক্ষকই জ্ঞান-বুদ্ধির কেন্দ্রস্থল। আজো শিক্ষক গ্রামের মধ্যমণি। আজো গ্রামে। কোন পরিবর্তন আনতে হলে শিক্ষকদের বাদ দিয়ে তা সম্ভব হবে না। কালের পরিবর্তনে শিক্ষকদের সনাতনী রুপটির পরিবর্তন ঘটলেও বা অর্থনৈতিকভাবে উপেক্ষিত হলেও শিক্ষক সমাজে গ্রামীণ সমাজে উত্থান-পতনের অন্যতম নিয়ামক।তাই, আজ দেশকে বাঁচাতে হলে এই শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এই শিক্ষক সমাজের নুনতম চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নিতে হবে সমাজকে এবং আমরা মনে করি, বর্তমান সরকার সেই প্রেক্ষিতেই চিন্তা করছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
আগ্রাসনের চক্রান্ত প্রতিরোধ করুণ
মুক্তিযযাদ্ধা সংসদের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে আধিপত্য। ও সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন–“জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করার সংগ্রামে জনগণের অগ্রবাহিনী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ করতে হবে। এ কাজে মুক্তিযোদ্ধার প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সাথে একাত্ম হবেন বলে তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন। জেনারেল বলেন, সার্বভৌমত্বকে সংহত করতে হবে। স্বাধীনতা নস্যাৎ করার চক্রান্তকে প্রতিহত করতে হবে। এ সংগ্রামে আমাদের সাথে তৃতীয় বিশ্বকেও আমরা পাবো।” মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাউন্সিল অধিবেশনে জেনারেল জিয়া বলেন আমি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করতে চাই যে “বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশেরই মাটিতে দাঁড়িয়ে মুক্তির জন্যে লড়াই করেছেন জীবন দিয়েছেন অন্য কেউ আমাদের স্বাধীনতা এনে দেয়নি তবে অন্যরা আমাদের সংগ্রামে যে সহায়তা করেছে, তা আমরা স্মরণ করি। তিনি বলেন, আমাদের রক্তের বিনীময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের আগ্রাসী হামলাকে আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টা দিয়ে মোকাবেলা করব। তিনি বলেন, এমন একটা জনশক্তি আমাদের গড়ে তুলতে হবে, যে জনশক্তি হবে রাজনৈতিকভাবে জাতীয় চেতনায় বিশ্বাসী। বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে জেনারেল জিয়া বলেন-“আজকের পরিস্থিতি আয়। ‘৭১ সালের পরিস্থিতি ভিন্নতর। আজকের সংগ্রামের চরিত্রও ভিন্ন। আজকের দেশপ্রেম নতুন প্রেক্ষাপটে নির্ণীত হবে।” সীমান্তের ওপার থেকে পরিচালিত সশস্ত্র তৎপরতার উল্লেখ করে জেনারেল বলেন ৭৫-এর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্লান্ত শুরু, হয়েছে। সীমান্তের ওপারে ট্রেনিং ক্যাম্প খুলে এদেশের বিপথগামী তরুণদের সশস্ত্রভাবে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ধংসাত্বক তৎপরতা চালানোর জন্যে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু, আমাদের দেশই নয় তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগূলোর ওপর বিভিন্নভাবে আধিপত্য বিস্তারের জন্য বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো চোখ রাঙাচ্ছে। বৃহৎ রাষ্ট্রসূলভ এই চোখ রাঙানির বিরুদ্ধে আজ বিশ্ব জুড়ে শুরু, হয়েছে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। কাজেই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোও আমাদের মৃত সংগ্রাম করছে।” মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান একুশে আগস্ট সকালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাউন্সিল অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। দু’দিন ব্যাপী এই অধিবেশন শুরূ হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর সময়সূচী অনুযায়ী জেনারেল জিয়া কাঁটায় কাঁটায় দশটায় অধিবেশন প্যাণ্ডেলে আগমন করে জাতীয় পতাকার পাশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করেন। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি মেজর জেনারেল এইচ, এম, এরশাদ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এ অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৫০ জন কাউন্সিলর এবং ২৬০০ ’শ ডেলিগেট যোগদান করেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় এডহক কমিটির আহ্বায়ক জনাব মাহফূজূর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী অধিবেশন। প্রধান অতিথি ও আগত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানিয়ে প্রথম বক্তৃতা করেন মেজর জেনারেল এইচ, এম, এরশাদ। পরে চার বিভাগের পক্ষ থেকে চারজন। ঢাকা মহানগরীর পক্ষ থেকে একজন এবং সংসদের কেন্দ্রীয় এডহক কমিটির পক্ষ থেকে একজন মুক্তিযোেদ্ধ তাঁদের বক্তব্য রাখেন। অধিবেশন শুরুর আগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান মাইকে দাঁড়ানোর। কিছুক্ষণ আগেই শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টিপাত। সামিয়ানা চূইয়ে বৃষ্টির ধারা গড়িয়ে পড়ছিল প্যান্ডেলের ভেতর। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অভূতপর্ব শৃখলা নিয়ে বসেছিলেন স্বাধীনতার বীর যোদ্ধারা। একদিকে বৃষ্টি ধারা পতনের শব্দ অপরদিকে সে শব্দ ছাপিয়ে উচ্চারিত হুগ্ন জেনারেলকে স্বাগত জানিয়ে শ্লোগান ধ্বনি। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামী অভিনন্দন ও শহীদদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে জেনারেল জিয়া অর্জিত স্বাধীনতা জনজীবন অর্থবহ করে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন না হলে আমাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে আমাদের।” স্বাধীন জাতির গৌরব নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর আহবাণ জানিয়ে জেনারেল জিয়া বলেন প্রয়োজন হলে দেশের প্রতিটি মানুষ অন্য হাতে লড়াই করবে। কারণ আমাদের দেশ চায় স্বাধীনতা, জাতি চায় তিনি আশা প্রকাশ করেন, স্বাধীনতা সংহত করে জাতিকে সত্যিকার অর্থে মুক্ত করার জাতীয় সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধারাই অগ্রবাহিনীর ভূমিকা নেবেন।
পরলোক কবি নজরুল
জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের চির-উন্নত শির, অগ্নিবীণার কবি, সৈনিক কবিপুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পি, জি, হাসপাতালে। বিদ্রোহ ছিল যাঁর বাণী, যৌবন ছিলো যাঁর প্রতীক, জনগণ ছিলো শক্তির উৎস কবি, কথাশিল্পী, গায়ক, সংগীতকার, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ কিংবা সংগঠক এর কোন একটি মাত্র পরিচয়ে ঝাঁকড়া চল সেই কাজী নজরুলকে চিহ্নিত করা যায় না। এইসব অবস্থানের মধ্যে থেকেও সব কিছু ছাপিয়ে যেন অভ্রভেদী হয়ে ওঠেন ব্যক্তি নজরুল নিজে গণমানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার শরিক, নৈরাশ্যের বিবরে আলোর পাখি, উৎপীড়ক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বিদ্রোহচারণ। নজরল আমাদের মাঝে সর্বকালীন এক উজ্জল উপস্থিতি, অবিনাশী এক সত্তা মৃত্যুর পুর্বে কবি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। বেচে থেকেও ছিলেন জীবন্মত। মুলত এই সময়ে তার মৃত্যু হলেও তাঁর প্রতিভা তথা উদ্ভাবনী শক্তির বিনাশ হয়েছিল অনেক পবেই দীর্ঘদিন রোগাক্ৰান্ত জীবনের অবসান ঘটেছে এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় কবি হিসেবে যতটুকু মর্যাদা দেয়া যায় তার কোন কমতি রাখেননি। সব ছাপিয়ে একটি কথা স্পষ্ট তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তিনি পুনর্বার ধ্রুব সত্য তৈরি করে গেছেন যে তিনি জনগণের কবি ছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁর শুরু মিছিলই তার প্রমাণ। আমরা কবির বিদেহী আত্মা শান্তি লাভ করুক তাই গভীরভাবে কামনা করছি।
আমরা শোকাহত আমরা মর্মাহত
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার ঢাকা বিমান বন্দরে এক মর্মন্তুদ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন (ইন্না………… রাজেউন)। আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত এই মৃত্যু দেশের একজন কৃতি সন্তানকে আমাদের থেকে নিয়ে গেল। এই মৃত্যুতে দেশের যে ক্ষতি হল তা অপরণীয়। আপন কর্মক্ষেত্রে এয়ার ভাইস মার্শাল বাশার ছিলেন একজন অতুলনীয় নিষ্ঠাবান কর্মী। দেশপ্রেম ছিল তার প্রগাঢ়। মানুষের জন্য মমতা ছিল অপরিমেয়। সংগ্রামে আর সংকটে জনগণ তাকে পেয়েছে কাছে। ১৯৫৩ সালে একজন ক্যাডেট হিসেবে তিনি পাকিস্তান বিমান। বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৬৯-৭০ সালে পাকিস্তানে যে দুটি বদ্বার কোর্টন ছিল তার একটির অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তিনিই একমাত্র বাঙ্গালী অফিসার যিনি কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছিলেন। এছাড়াও বাঙ্গালী অফিসার হিসেবে তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি এ্যাফেসিয়েন্সী ব্যাজ পেয়েছিলেন। তিনি হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের বিমান চালুনাতেই অভ্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছয় নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক রূপে হুল যুদ্ধের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং বীরোত্তম উপাধিতে ভূষিত হন। একই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তরূণে অফিসার স্কোয়াড্রন লিডার মফিজুল হক। এই তরূণে অফিসারের আকস্মিক মৃত্যুতে আরো সম্ভাবনাময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। আমরা এজন্য শোকাহত মর্মাহত। তাঁর পরিবারবর্গকে জানাই গভীর সমবেদনা। এয়ার ভাইস মার্শাল এম কে বাশারের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত মর্মাহত। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারালো একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন নিষ্ঠাবান কর্মী, একজন দেশপ্রেমিক সন্তান। আমরা তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি, জ্ঞাপন করি গভীর আন্তরিক শোক। এই আকস্মিক মৃত্যুর বেদনাকে কোন সানাবাণীই উপশম করতে পারেতবুও তাঁর পরিবার পরিজনকে জানাই আমাদের সমবেদন। কামনা করি তাঁরা এই দুঃখ জয় করার শক্তি লাভ করুন। শ্ৰধাবনত চিত্তে আমরা এয়ার ভাইস মার্শাল এম, কে, বাশার ও স্কোয়াড্রন লীডার মফিজুল হকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। প্রার্থনা করি তাঁদের আত্ম লাভ করুক অনন্ত শান্তি।
চেয়ারম্যান মাও-সে-তুং-এর মৃত্যু
চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির চেয়ারম্যান, চীনের জনগণের মহান নেতা ও মহান শিক্ষক মাও সে-তুং ৯ই সেপ্টেম্বর চির বিদায় নেন। মহান নেতা মাও-সে-তুং তার ষাট বছরের রাজনৈতিক জীবনে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমাজ বিজ্ঞান ও দর্শনের ক্ষেত্রে মে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন মহাসমুদ্রের বিশালতার সাথেই এর তুলনা করা চলে! আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ক্ষেত্রে যে কয়জনের অন্যতম কর্তৃত্ব রয়েছে–তাঁদের একজন তিনি। মাও-সে-তুং বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী চীনা জাতিকে মই করেছেন হাজার হাজার বছরের সামন্তবাদী এবং শতাধিক বছরের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-নিপীড়ন থেকে। মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বিশ্বের শত কোটি শোষিত-নিপীড়িত মানুষকে। সাম্রাজ্যবাদ যখন চরম অবক্ষয়ের মুখে সেই সময় বিশ্বের নিপীড়িত জাতিসত্তাসমুহকে জাতীয় মুক্তি অর্জনের নতুন দিশা দিয়েছেন এই মহান নেতা কমরেড মাও-সে-তুং-এর চিন্তাধারায় বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলন নতুন প্রেক্ষিত অর্জন করেছে। তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের দৃশ্য দেখছে মাও-সে-তুং-এর চিন্তাধারার কল্যাণেই। বর্তমান বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ মাও সে-তুং চিন্তাধারার আলোকে সংগ্রাম করছেন, সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে, সংগ্রাম করেছেন পূজিবাদী ও সামন্তবাদি। শোষণ-নিপীড়ণের বিরধে শোনহীন মসমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। চীনের কমিউনিষ্ট পানি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাও সে তুং দী সাতাশ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতীয় মুক্তি অর্জন ও নয়া গণতান্ত্রিক এক বিপ্লব সম্পন্নে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর পরে আরো সাতাশ বহুরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চীনকে সবচেয়ে শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত করে বিপ্লব সাফল্যসমূহ রক্ষা করেছেন। এখানেই মাও সে তুং কৃতিত্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকাসহ বিশ্বের তাবৎ মেহনতি জনগণের স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মাও সে-তুংয়ের চিন্তাধারা চিরকাল তোক বর্তিকার মতো পথ দেখাবে। মাও-সে-তুং-এর মৃত্যু চীনা জনগণ এবং তৃতীয় বিশ্বের মুক্তিকামী জাতিসত্বসমূহের জন্য নিশ্চয়ই এক অপরণীয় ক্ষতি। এ ক্ষতি স্বীকার করেছেন প্রায় সব দেশই। বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি। মও-সে-তুং-এর নেতৃত্বাধীন চীনই আমাদের জাতীয় প্রতিরোধ সংগ্রামে সর্বাত্মকভাবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। সেই দুঃসহ দিন। গুলোতে এমনকি আজ পর্যন্তও চীনের বন্ধুত্বই আমাদেরকে প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছে। মাও-সে-তুংয়ের মৃত্যুর সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। সরকারের ছায়া নেমে আসে। সরকারি দিন ঘোষিত হয় এক পতাকা অর্ধনমিত রেখে এই মহান নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের স্টেট কাউন্সিলের প্রধামমাত্র হয় কুয়া ফেং-এর কাছে পাঠানো এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট সায়েম বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে চেয়ারম্যান মাও-সে-তুং-এর তিরোধানের শোকাবহ খবরটি পাই। বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে তিনি গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধর এক হয়। আসন জুড়ে রয়েছেন। ইতিহাসে মহান বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের মধে একজন অনন্য নেতা হিসেবে সর্বহারার সেরা সৈনিক হিসেবে এবং মানুষের একজন সৈনিক হিসেবে তাঁর সমকক্ষ বিরল। তাঁর আদর্শ ও সাফল্যের মাধ্যমে ইতিহাসে তিনি এক অসামান্য স্থান দখল করে আছেন এবং তাঁর দুষ্টান্ত সারা বিশ্বে প্রভুর ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জনগণকে প্রেরণা দিয়ে যাবে। তার স্বনির্ভরতার দর্শন ও জনগণের সেবার দর্শন বাংলাদেশের জনগণের কাছে এবং পৃথিবীর অন্যত্র মানুষের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। বৃহষ্পতিবার গণচীনের প্রধানমন্ত্রী মিঃ হয়া ক, ফেং-এর নিকট এক শোক বাণীতে জেনারেল জিয়া বলেন, চেয়ারম্যান মাও শুধু, মহান চীণেড় জগণেরই প্রিয় নেতা ছিলেন না, উপরন্তু তিনি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহান ব্যক্তি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের জনগণের মৃত্যু বিদেশের জনগণও ইতিহাসে তাঁর অনন্য অবদানের কথাসর্বদা স্মরন রাখবে। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যবর্গ এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজে চেয়ারম্যান মাও-সে-তুং-এর মৃত্যুতে গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন। একজন দর্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক ও সর্বোপরি একজন বিপ্লবী হিসেবে তাঁর সমকক্ষ খুব কম লোকই আছেন। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ নেতা এবং তার ঐতিহাসিক আং মার্চ-এর ঘটনা কখনই মানুষের স্মৃতিপট থেকে মুছে যাবে না। একজন সমরবিদ, গণমুক্তি বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এবং সমসাময়িক ইতিহাসে তিনি যেভাবে নিজ দেশকে অন্যতম গুরত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন, তাঁর জন্য মাও সব সময়ই বিশ্বব্যাপী মানষের শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন। বিমান বাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এয়ার কমোডর এ জি মাহমুদ চেয়ারম্যান মাও-সে-তুং-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং বলেন চীনের এই নেতা ছিলেন একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা এবং মহান আধুনিক চীনের নির্মাতা। চেয়ারমান মাও-সে-তুং বিশ্বে চীনের মর্যাদা বাড়িয়েছেন। তিনি কেবল একজন রাজনীতিকই ছিলেন না তিনি একজন মহান লেখকও ছিলেন। রিয়ার এডমিরাল খান তাঁর বাণীতে বলেন, মাও-এর মৃত্যুর সংবাদে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। তাঁর তিরোধানে বিশ্ব একজন মহান ব্যক্তি ও নেতাকে হারালো। তিনি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী নেতা এবং শোষিত মানুষের অকৃত্রিম বন্ধ। মাও ছিলেন বাংলাদেশের একজন মহান বন্ধ এবং সমগ্র বিশ্বের বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা’। মওলানা ভাসানী কমরেড মাও-সে-তুং-এর শোকবাণীতে বলেন, তার মৃত্যুতে বিশ্ব এই শতাব্দীর একজন অনন্যসাধারণ রাজনীতিককে হারালো। যে আলো অন্ধকার দূরীভূত করেছিলো এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রামরত এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার লাখো লাখো নির্যাতিত মানুষকে মুক্তির পথ দেখালো, তিনি চিরকালের জন্য চলে গেছেন। তৃতীয় বিশ্বের মুক্তিকামী জনতার একাংশ হিসেবে আমরা ও এই অকৃত্তিম দরদী বন্ধুটির জন্য শোকাহত। তবে আমরা উদ্বেলিত এজন্য যে বিপ্লবের যে প্রয়োজনে তাঁর জন্ম, জীবনব্যাপী সাধনায় তিনি সার্থকভাবে সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
পরলোকে আবদুল গণি হাজারী
কবি, সাংবাদিক ও সংবাদপত্র শিল্পের দক্ষ সংগঠক আবদুল গনি হাজারীর মৃত্যুতে (ইন্নালিল্লাহে …….. রাজেউন) এমন একজন মানুষকে আমরা হারিয়েছি যিনি তাঁর উপস্থিতি আমাদের জাতীয় জীবনের নানা ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় করে তুলেছিলেন। বহুমুখী নৈপুণ্য আর দক্ষতার আশ্চর্য সমন্বয় ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। একদিকে তিনি ছিলেন কবি, কোমল অনুভূতির সক্ষম রূপকার। অন্যদিকে তিনি সাংবাদিক চলমান জীবনের বঙ্কিম ভাষ্যকার। বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যে তিনি ষাটের দশকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরপ তাঁকে দেয়া হয়েছিল ইউনেসকো এবং আদমজী পুরস্কার। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘সামান্য ধন’, সুর্যের সিডি জাগ্রত প্রদীপ প্রভৃতি বাংলা কাব্য রসিকদের কাছে তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে। তাঁর ব্যঙ্গ রচনার সংকলন ‘কাল পপ’চার ডায়েরী শাশিত রচনার নিদর্শন হিসাবে উল্লিখিত হবে আমাদের সাহিত্যে। মরহুম আবদুল গনি হাজারী ছিলেন সংবাদপত্র শিল্পের এক বহূ, পরিচিত, বহু আলোচিত ব্যক্তিত্ব। সংবাদপত্রকে শিল্প হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি বিরাট অবদান রেখে গেছেন। সংবাদপত্র শিল্পকে তিনি আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণ করতেন এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি ছিলেন একজন অগ্রণী কর্মী। মাত্র আঠার বছর বয়সে তিনি সংবাদপত্র শিল্পের সঙ্কো নিজের জীবনকে জড়িত করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এই শিল্পের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। আবদুল গনি হাজারী ছিলেন সরকার পরিচালুনাধীন সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান। সংবাদপত্র কর্মচারীদের বেতন বোর্ডেরও তিনি একজন সদস্য ছিলেন। তাঁর জীবনের শেষদিনগূলি রাজশাহী থেকে দৈনিক বার্তা নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশনার উদ্যোগে ব্যয়িত হয়। সংবাদপত্র শিল্পে সম্পর্কে তাঁর মৃত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি আমাদের এখানে নেই বললেও অত্যুক্তি হয় না। মরহুম আবদুল গনি হাজারীর একটি বড় পরিচয়, তিনি ছিলেন নিরলস কর্মী তিনি কাজের মানুষ ছিলেন এবং কাজ তার নেশা। অসহতা সত্তেও তিনি সংবাদপত্র শিল্পের সার্বিক বিকাশের দায়িত্ব পালন করে গেছেন শেষ পর্যন্ত। কাজের মাঝখানেই তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। মরহুম আবদুল গনি হাজারীর মৃত্যুতে আমরা আমাদের আন্তরিক শোক জ্ঞাপন করছি এবং কামনা করছি তাঁর রুহের মাগফেরাত। মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে আমরা জানাই আমাদের গভীর সমবেদনা।
পিটার কাস্টার মামলায় পূর্ণ বিবরণ
১৯৭৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর পিটার কাস্টারকে গ্রেফতার করা হয় গ্রেফতারের পর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এক স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১২১ক ধারার অধীনে তার ও তার সাথে অপর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ মামলা শুরু করা হয়। মামলার বিবরণ নীচে দেয়া হল : ‘পিটার কাস্টার ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে আসেন তিনি নিজেছে একজন স্বেচ্ছাসেবী প্রাণকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার উৎখাত ও তার ভাষা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন শক্তির সমাবেশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে তিনি অধুনালত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কয়েকজন নেতা ও তথাকথিত গণবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেন এতদুদ্দেশ্যে তিনি অধুনালত জাসদের একজন নেতা মরহুম লেঃ কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহের ও তার অপর কয়েকজন সহযোগী ও অন্য লোকের সাথে ষড়যন্ত্র করেন। সর্বহারা ঐক্য আন্দোলন’ নামে তিনি একটি গোপন রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের উচচ ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রীয় কমিটিকে কেন্দ্রীয় বিকাশ গ্রুপ’ নামে অভিহিত করা হয়। তার পরিকল্পিত বিপ্লব সফল করে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি জাসদ-এর গণবাহিনীর সাথে মরহুম সিরাজ সিকদারের ‘সর্বহারা পাটি’কে ঐক্যবদ্ধ করারও চেষ্টা চালান। পিটার কাস্টার তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতিকর প্রচারপত্র, পন্তিকা প্রভৃতি প্রকাশ ও বিতরণের ব্যবস্থা, করেন। তিনি ঢাকা নগরীতে তার সংস্থার অফিস ও সদস্যদের জন্য তিনটি বাড়ি ভাড়া নেন। সেখানে বিভিন্ন তারিখে সদস্যদের সাথে তার গোপন বৈঠক হয় এবং সর্বহারা গ্রুপের সশস্ত্র ট্রেনিং দান এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের শিক্ষা ও চিন্তাধারার মাধ্যমে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। তিনি রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা সফর করেন এবং সামাজিক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যবহারিক শিক্ষা সংস্থা’র নামে বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান। সমগ্র দেশে একটি সশস্ত্র ক্যাডার সৃষ্টির জন্য লোক ভর্তি করে তাদের ট্রেনিং দানই ছিল। এসব স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। এই বিপ্লবী গ্রুপের সদস্যরা (কেন্দ্রীয় বিকাশ গ্রুপ) তাদের গোপন বিপ্লবী কাজকর্মের সুবিধার জন্য নিজেদের ও ভাড়া করা বাড়িগুলোর গোপন নামকরণ করে। উদারহণস্বরূপ, বাড়িগুলোর ছদ্মলাম ছিলো সবুজেদের বাড়ি শাপলা’ ও ‘পিয়ারাবাগ’। কাস্টারের নিজেরা ছদ্মনাম ছিলো আমিনুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম। বাংলাদেশে মানবিক তৎপরতা চালানোর নামে কাস্টার বিভিণ্ণ। বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। এই অর্থ সে কয়েকজন জাসদ নেতা ও তার সার্বিক পরিকল্পনা। বাস্তবায়নের পেছনে ব্যয় করতো। তিনি তার দলীয় লোককে দেশের।। ভেতর থেকে অন্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের পরামর্শ দেন এবং তাদেরকে বৈদেশিক সূত্র থেকে অল্প সংগ্রহের আশ্বাস দেন। তদন্তকালে এটা প্রকাশ পায় যে পিটার কাস্টার তার গোপন সংস্থার পক্ষে কাজ করার জন্য ১৯৭৩ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য অভিযুক্তকে রিজেক্ট করেছেন।
বিশ্ব শিশু দিবসের আহ্বান
যথারীতি বিভিন্ন সেমিনার ও অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হল বিশ্ব শিশু দিবস। শিশুদের অবিমিশ্র কল্যাণ কামনাই ছিল প্রতিটি অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার মূল বিষয়। কিন্তু আলোচনা সভায় যখন শিশুর কল্যাণ কামনার রোশনাই তখন দেশের হাজার হাজার অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু একে বেঙ্গই করে মাত্র। বিশ্ব শিশু দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শিশুরা হচ্ছে জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা, শিক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদেরকে অবশ্য ‘সংকল্প নিতে হবে। শিশুরা জাতির কোন সম্পদ তা প্রকাশ পায় “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে এই কথাটির মধ্যেই আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুদের সুষ্ঠ পরিচর্যা এবং . তাদেরকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলা সমাজ, দেশ এবং জাতির জন্য একটা অপরিহার্য কর্তব্য এটা. অতীব সত্যি। এই সত্য সামনে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে। তবে এটাও ঠিক আমাদের সম্পদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশের শিশুরা এতটা বঞ্চিত আর অবহেলিত কেন-তাও আমাদের অজানা নয়। এও অজানা নয় এইসব শিশুদের জন্য বা যাচ্ছে, খুবই কম। তবূও বিশ্ব শিশু দিবসের এই মহান দিনটিকে সামনে রেখে আমরা পুনর্বার সচেতন হই শিশু; সমাজের জন্য। এ দিনটির স্বার্থকতা এখানেই। যদিও আমাদের সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়ে একবারেই সব শিশুর জীবন থেকে বঞ্চনা আর দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারব না তবূও এদিনে আমরা সেই মহান ব্রতটিকে কাজে লাগানোর অঙ্গীকার ত’ নিতে পারি। প্রতিবছরই এ দিবসটি উদ্যাপিত হয় এবং হবে। নতুন করে এই শিশুদের সুখী করার সচেতনতা দিয়ে। কিন্তু আমরা বিশ্ব শিশু দিবস উদ্যাপন সেদিনই স্বার্থক মনে করব যেদিন পৃথিবীর অঙ্গন মুখের হয়ে উঠবে সুখী আর স্বাস্থ্যবান শিশুর কলতানে। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগুতে হবে পৌছতে হবে ৰঞ্চিত শিশুদের কাছে।
দৈনিক বার্তার আত্মপ্রকাশ ও উত্তরাঞ্চল অক্টোবর
রাজশাহী থেকে প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা “দৈনিক বার্তা’। উত্তরের জনপদের জন্য এটি একটি গুরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উত্তরাঞ্চলের জনগণের অনেক দিনের আশা পরিপুর্ণ হল৷ এই দৈনিকের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে। উত্তরাঞ্চলের জনগণের মনে কিছুটা ক্ষোভ ও বঞ্চনাবোধ রয়েছে এটা সত্যি। অতীতে এদের প্রতি বেশ কিছুটা অবিচারও করা হয়েছে। তাঁরা মনে করে, রাজধানীর সঙ্গে সম্পক্তি যোগাযোগের অভাবে জাতীয় উন্নয়ন তৎপরতার সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ক্ষীণ। শিম্পায়ন, ব্যবসাবাণিজ্যের বিকাশ, সাংস্কৃতিক বিকাশ, চাকুরী-বাকরী সব ব্যাপারেই তারা উপেক্ষিত ও অবহেলিত। এ এই প্রেক্ষিতেই সরকার উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের ব্যাপারে নতুন কৰে মনোনিবেশ করেছেন। হাতে নেয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। যে কোল উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ধারায় উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকার বা কর্তৃপক্ষে সঙ্গে জনগণের তথ্যগত সম্পর্ক স্থাপন। এ ব্যাপারে যোগাযোগই হচ্ছে মূল মাধ্যম। সেদিক দিয়ে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত “দৈনিক বার্তা বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। মোটকথা ‘দৈনিক বার্তা হবে উত্তরাঞ্চলের জনগণ ও সরকারের মধ্যেকার সেতুবন্ধ। আমরা আশা করব দৈনিক বার্তা গণসংযোগ মাধ্যম হিসেবে উত্তরাঞ্চলবাসীদের আশা-আকাঙ্খা প্রতিফলনে সক্ষম হবে। সেখানকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ও সাহিত্যের বিকাশেও রাখবে গুরত্বপূর্ণ অবদান । আমাদের বিশ্বাস, এই জাতীয় দৈনিককে কেন্দ্র করে সেখানকার সাহিত্য, সংস্কৃতি নতুন প্রেরণা পাবে। সংঘবদ্ধ হবে সাহিত্য ও সংস্কৃতিসেবীরা, তাঁরা পাবেন অব্যাহত চর্চা ও প্রতিভা বিকাশের সযোগ-সুবিধা। সর্বশেষ দৈনিক বার্তা দেশের উন্নয়ন মানচিত্রে উত্তরাঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে সমগ্র দেশের সাথে ঘটাবে নাড়ীর সংযোগ। অবসান ঘটাবে উত্তরাঞ্চলের জনগণের বঞ্চনাবোধের। দৈনিক বার্তার যাত্রা শুভ হোক এবং এর প্রকাশ সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠুক আমরা এই কামনাই করছি।
অক্টোবর প্রবাসী মেধার প্রত্যাবর্তন
বিদেশে কর্মরত যোগ্যতা সম্পন্ন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কারিগরী ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে ফিরে এসে মাতৃভূমির উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য আহবান জানিয়েছেন সরকার। সরকার এসব যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের দেশে ফিরে এসে শুধু, সেবার আদর্শ স্থাপনেরই আহবান জানাননি সেই সঙ্গে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়ারও অঙ্গীকার করেছেন। ব্রেইন ড্রেইন’ বা মেধার দেশান্তর উন্নতিশীল প্রতিটি দেশের জন্যই একটি সাধারণ চিত্র। উন্নত রাষ্ট্রসমূহের উন্নতমানের জীবনযাত্রার হাতছানিতে এ আবেশিত হয়ে দেশ ছাড়েন। অনেকেই আবার উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে গিয়ে সে জায়গার সুযোগ-সুবিধায় মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর দেশে ফেরার নাম করেন না। তুলনামূলকভাবে দেশের নিম্নমানের জীবনযাত্রা, স্বল্প বেতন, সীমিত সুযোগ-সুবিধা তাদেরকে দেশের প্রতি নিষ্পহ করে তোলে। দেশে যে তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার এ ব্যাপারেও তারা নিঃসন্দিহান হয়ে বিদেশেই থেকে যাওয়ার স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এটা সত্যি মেধার দেশান্তরের ব্যাপারে কোন এক পক্ষকেই দায়ী করা যায় না। যেমনি মেধাবীদের কর্তব্য রয়েছে দেশের সেবা করা। তেমনি দেশেরও দায় রয়েছে এদের উপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা। দোষ ঘাটলে কোনই লাভ নেই। বরঞ্চ ক্ষতি মূল কাজ হচ্ছে এমন পরিস্থিতির অবসান ঘটানো। এমতাবস্থায় সরকারের সম্প্রতিক ঘোষণা খুবই উল্লেখযোগ্য। সরকার সুনির্দিষ্ট ভাবেই বলেছেন, যারা বিদেশ থেকে ফিরে আসবেন তাঁরা যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী চুক্তির ভিত্তিতে সুবিধাজনক চাকুরী পাবেন ও যতদুরে সম্ভব কম সময় এ ব্যাপারে ব্যয় করা হবে। চাকুরী সুনির্দিষ্ট করা, সরকারী এ অঙ্গীকার বিদেশে অবস্থানরত বিশেষজ্ঞরা গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা রাখি। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ নিজপায়ে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর। জাতির এই ইচ্ছাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং নিজ নিজ কর্ম এলাকার নেতৃত্ব এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিশেষজ্ঞরা যোগ্য ভূমিকা পালন করবে জাতির আশাও তাই। এই প্রেক্ষিতে সরকারের আহবানে তাঁরা এগিয়ে আসবেন এটাই জাতির কাম্য। বিশেষজ্ঞদের সামনে আজ একটি পরীক্ষা তারা নিজস্ব সম্পদ বৈভব চান না দেশপ্রেমে উদ্বদ্ধ হতে চান। আমরা আশা করব দেশপ্রেমের দাবীই তাদের কাছে বড় হবে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী অধ্যাদেশ
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ শিশু একাডেমী অধ্যাদেশ-১৯৭৬” জারী করেছেন। এই একাডেমীর উদ্দেশ্য হবে শিশুদের সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও বিনোদনমূলক কর্মতৎপরতার উৎকর্ষ সাধন। শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে এ একাডেমী গুরুত্ব হবে সবচেয়ে বেশি। অধ্যাদেশ মোতাবেক একাডেমী পরিচালনার জন্য একটি ব্যবস্থাপনা বোর্ড থাকবে। বোর্ডের সদস্য হবে একাডেমীর চেয়ারম্যান, ব্যংলা একাডেমীর মহাপরিচালক, চারু, ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, ঢাকা যাদুঘরের পরিচালক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা, ক্রীড়া বিদ্যা, শিক্ষা বিভাগ ও শিশু কল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধি, শিশুদের উন্নয়ন তৎপরতায় আগ্রহী সরকার মনোনীত চারজন সদস্য (দু’জন মহিলা)। একাডেমীর মহাপরিচালক, পরিচালক ও দু’জন সরকারী পরিচালক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন। শিশুদের কল্যাণের জন্য শিশু একাডেমী গঠনের প্রয়োজনীয়ত অনুভব করা যাচ্ছিল অনেক দিন যাবত। শিশু একাডেমী অধ্যাদেশ সেই প্রয়োজনীয়তার পরিপূর্ণ ফল। তবুও কথা থাকে শিশু একাডেমী দেশের সামগ্রিক শিশুদের কল্যাণ কামনায় কোন পথে এগবে শিশু একাডেমী পরিচালুক মন্ডলীতে নিশ্চয়ই দেশের জ্ঞানী গুণীদের সমাবেশ ঘটবে। তারা নিশ্চয়ই দেশের সামগ্রিক শিশু, সমাজের কল্যাণে যা করণীয় তাই করবেন। আমরা শুধূ, আশা করব। অন্যান্য একাডেমীর মত এটিও না অন্তঃসার শুন্য হয়ে পড়ে।
শতাব্দী প্রবীণ জননেতা মওলানা ভাসানী আর নেই।
মওলানার জন্ম হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষের দিকে গ্রামবাংলায় এক মাঝারি কৃষক পরিবারে। সঠিক কোন তারিখে স্তিনি জন্মে ছিলেন এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকেই বলেন ১৮৮০ সালে। পাবনার এক মাঝারি কৃষক হাজী শরাফত খানের তিন পুত্র এক কন্যার অন্যতম তিনি। ৬ বছর বয়সে পিতৃহীন হন মওলানা। মক্তবের শিক্ষালাভ শেষে মওলানা ভাসানী কাগমারীর (টাঙ্গাইল) একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু এর আগেই তিনি আত্মিক উন্নতিলাভের সন্ধানে। বের হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে ঘরের বার হওয়াতে তাঁর দিব্যদৃষ্টিও খুলে গিয়েছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সাধারণ দরিদ্র মানুষের মুক্তির মধ্য দিয়েই আত্মিক উন্নতি- – লাভ সম্ভব। ফিরে এসেছিলেন বাস্তবে সময়টা হবে ১৯১৯ সালের দিকে তখন দেশে স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রবল জোয়ার। রাজনীতিতে গা ভাসালেন মওলানা এই অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। মওলানা সাহেব কথা বলতে গেলেই মওলানা অাজাদ সুবহানী, মওলানা আবুল কালাম আজাদ পণ্ডিত নেহেরুর সঙ্গে সি অরি দাশের নাম উচ্চারণ করতেন। খুব সম্ভবতঃ ঘরজি আন্দোলনের প্রভাবেই তিনি তাঁর প্রতি এতটা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কারণ তিনি আত্মিক উন্নতির আশায় ঘর থেকে বেড়িয়ে বুঝতে পেরেছিলেন বিদেশী শাসকরা আর যাই হোক এদেশের বন্ধু নয়। খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে মওলানার মনে যে জমিদার বিরোধী মনোভাব দানা বাধে তার কারণ তার শ্রেণী ভিত্তি। তিনি ছিলেন একজন মাঝারি কৃষক পরিবারের সদস্য। ফলশ্রুতিতে জমিদারী শোষণ উপলব্ধি করেছিলেন নিজের অভিজ্ঞতায়। এই অর্থনৈতিক অবস্থানের জন্যই কাগমারীর শিক্ষকতা জীবন থেকে তার উত্তরণ ঘটে জমিদারী প্রথা বিরোধী সংগ্রামের নেতা হিসাবে। এদিক দিয়েই মওলানা তার সম সাময়িক অন্য অনেকের চাইতে ছিলেন স্বতন্ত্র স্বত্ত্বার অধিকারী। জমিদার বিরোধী আন্দোলনের ফলে তৎকালীন টাঙ্গাইল সহ ময়মনসিংহ জিলার সকল জমিদারই (হিন্দু ও মুসলমান) ভীত হন। সরকারী আমলাদের সঙ্গে দেন দরবার শুরু করেন। এ সময়ে জমিদার ও সরকারী আমলাদের দহরম মহরম সুপরিচিত ইতিহাস। আর এ কারণেই তৎকালের মওলানা আবদুল হামিদ খানকে ছাড়তে হয় স্বদেশ। সরকারী আদেশে প্রথমে ময়মনসিংহ জেলা ও পরে বাঙ্গালী ছেড়ে তিনি আশ্রয় নেন আসামের জঙ্গলে। এ আর এক নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম। আসামের মাটিতে পা রেখেই তিনি অনুভব করেন জাতিসত্নার নিপীড়ন কাকে বলে। দেশে জমিদার, মহাজনদের এবং সরকারী আমলাদের শোষণ অার অত্যাচার লক্ষ্য করেছিলেন। আসাম দেখলেন সেই একই শ্রেণী ভিন্ন কৌশলে সাধারণ মানুষকে শোষণ নির্ধাতন করছে। দেখলেন আসামে বসবাসরত বাঙ্গালীদের দুঃখ দূর্দশা। আসামের জনসংখ্যা তখন প্রায় ১৬ লাখের মত। এর মধ্যে ৫ লক্ষই ছিল বাঙ্গালী। এরা সবাই ছিল জমিদার মহাজনদের নিষ্পেষণের শিকার। আসামে এসেছিলেন নতুন আশায় বিরান জঙ্গলে ঘর বাধবেন। কিন্তু জাতিগত, ভাষাগত আর কস্টিগত পার্থক্যের অজুহাতে অাসামের তাবৎ ধনী জমিদার ও মহাজনরা বাদ সাধলেন। ক্ষেপিয়ে তুললেন সাধারণ আসামীয়াদের দুই সম্প্রদায়ের এই দ্বন্দ ঘোচাতে তৈরী করা হল নতুন আইন-লাইন প্রথা। এই প্রথা অনুসারেই ভাগ করা হল দুই সম্প্রদায়ের বসবাসের স্থানকে। সম্প্রদায়গত সংঘর্ষের অবসান ঘটলেও সৃষ্টি হল নতুন সমস্যার বাঙ্গালীদের ভাগে যে জায়গা নিদিষ্ট হল তাতে স্থানাভাব দেখা দিল। পরিস্থিতির এমনি পরিবেশেই মওলানার আগমন ঘটে আসামে। সি আর দাশ এবং খেলাফত আন্দোঙ্কনের সংস্পর্শে এসে মওলানা আগেই রাজনৈতিক আইন ও বিষয়গত আইনে সিদ্ধ হয়েছিলেন। আসামে অবস্থানকালে তিনি লক্ষ্য করলেন শুধুমাত্র জাতিসংস্থার অবমাননাই নয়, আসামে চলছে ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ গোয়ালপাড়া এষ্টেটের হিন্দু জমিদার আইন করে তার এলাকায় গরু জবেহ বন্ধ করেছেন মওলানা তার লাইন প্রথা বিরোধী সংগ্রামের সংগে ধর্মীয় অধিকারের আন্দোলনকে করলেন মুক্ত রাজনৈতিক অধিকারের সংগে যুক্ত করলেন নাগরিক অধিকার। পরবর্তীতে ধর্মীয় তথা নাগরিক অধিকার আদায়ের ও লাইন প্রথা বিরোধী রাজনৈতিক অধিকারের সংগ্রাম চলে দীর্ঘদিন ধরে। ১৯৩৭ সালে ঐতিহাসিক ভাসান চরের সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনি ভাঙ্গলেন লাইন প্রথা। উদ্বাস্তু বাঙ্গালীদের অধিকারের সাময়িক প্রতিষ্ঠা লাভ হয়। কিন্তু পূর্ণ অধিকারের সংগ্রাম চলে দীর্ঘ দিন ধরে পাকিস্তান কায়েমের পূর্ব পর্যন্ত তাই তিনি রয়ে গিয়েছিলেন, আসামে। আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের তিনি ছিলেন সভাপতি। অন্যদিকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সাদুল্লা। আসাম ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত সক্সির সঙ্গে মওলানার বিরোধ ছিল চরম। উভয়ের অবস্থান ছিল দুই মেরুতে, এবং তাদের বিরোধ ছিল মূলত গরীব কৃষক জনতার অধিকারের প্রশ্ন নিয়ে। লাইন গ্রথার আন্দোলন তথা সাদুলা ও তৎকালীন আসাম সরকার বিরোধ আন্দোলনের উপর ভিত্তি করেই মওলানা সাহেব আহবান করেন ঐতিহাসিক বড়পেটা সম্মেলন। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল মওলানা ভাসানী ও সাদুল্লার মধ্যেকার বিরোধ নিষ্পত্তি করা। সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন চৌধুরী খালিকুজ্জামান। মঞ্চে উঠে সাদুলার বিরুদ্ধে একে একে অভিযোগ উত্থাপন করেন মওলানা ভাসানী। মওলানা সাহেব নেমে আসার পর সাদুল্লা অভিযোগ অণ্ডনের প্রয়াস করেও নিরাশ হলেন দেখতে পেলেন জনমত তার পক্ষে নেই। কিন্তু এখানেই শেষ নয় মওলানা সাহেব লাইন প্রথা বিরোধী আন্দোলনকে উপলক্ষ ফরে আরো সম্মেলনের আহ্বান করেছিলেন। সেই সময়ে মঙ্গলদই-এর সমেলনের মধ্যে দিয়ে মূলনীতি কমিটির রিপোর্ট মুসলীম লীগের স্বরূপ মওলানার নিকট আরো পরিভারত ঔদান্ত বাঙ্গালীদের উপর এক অমানুষিক অত্যচিারের সূচনা করে। আসাম বনাঞ্চল পরিষ্কার করে বাঙ্গালীরা যে বসতি গড়েছিল তাকে হাতি দিয়ে পিষে আগুনে ভস্মীভুত করা হয়’। তখনও প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন মওলানা ভাসানী মঙ্গল আহবান করলেন কৃষক সম্মেলন। জমিদার সামন্তদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রজাদের মওলানা এসে দাড়ালেন একা। আর তার সঙ্গে রয়েছে লক্ষ লক্ষ সর্বহারা কৃষক। মওলানা ভাসানী তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলনের ভিত্তিকে আসা দৃঢ় করছি এবং একই সঙ্গে পূর্ববাংলায় জমিদার সমস্ত শ্রেণীর বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগায় অংশ নেন। এক সময়ে যে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ থেকে তিনি বিতাড়িত হয়ে ছিলেন না, টাঙ্গাইলে এলেন ১৯৩৭-এ পূর্ণবার। এবার এলেন জনকর্তা হিসেবে। সেবারে ভাজা বন্যায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। তিনি আসাম থেকে নিয়ে এসেছেন রিলিফ সামগ্রী এসে ঘাঁটি গাড়লেন তাঁর পুরাতন কাগমারীতে। কাগমারীর শাহজামানের মাজারে তৈরী করতে চাইলেন মসজিদ। পুনরায় জমিদারের সঙ্গে এলেন সংঘর্ষ। এভাবেই গ্রামের কমলন সংগঠিত করে এগুতে শুরু করেন তিনি। এবারে অমলা আর সমস্ত শ্রেণী একজোট হয়ে আক্রমণ করে মওলানা ভাসানীকে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নবী চৌধুরীর সঙ্গে একতি হয়ে সন্তোষের জমিদায় মওলানাকে পূর্ণবার সন্তোষ থেকে বহিষ্কার করলেন। এবারে তার অস্তিান হয় সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জে এসে তিনি আয়োজন করেন বল অাসাম প্রজা সম্মেলনের। সম্মেলনের প্রস্তাব সমূহই নির্ধারণ করে তিনি কি চাইছিলেন। সম্মেলনের প্রস্তাবে বলা হয় জমিদারীর অবসান চাই, মহাজনদের নিয়ন্ত্রণ কর, চক্র বৃদ্ধির সুদের অবসান চাই ইত্যাদি। এর পরেই তার উপর পাবনা ত্যাগের পরোয়ানা জারী হয়। এর পরে পুর্ণবার রংপুরের গাইবান্ধায় এমনি একটি সম্মেলনের আয়োজন করলে তাকে রংপুরও ত্যাগ করতে হয়। তার পরে আবার আসাম। সে কথা আগেই বলা হয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পুনরায় স্বদেশে ফিরে আসেন মওলান আস্তানা নেন সন্তোষে। এসে মুসলীম লীগের তৎকালীন শোষক শাসক গোষ্ঠীর সহিত আপোঃষ করে কাজ করাকে তিনি অপছন্দ করেন। ১৯৪১ সালের পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকায় এলে ভুখা মিছিল পরিচালুনা করেন মওলানা । ঐ বছর ১১ই অক্টোবর ঢাকার আরমানিটোলায় জনসভা করে তিনি আওয়ামী (জনগণের) মুসলীম লীগের গঠনের কথা ঘোষণা করেন এবং মুসলীম লীগের বিপক্ষে অনাস্থা প্রকাশ করেন। এর পরে ১৬ই অক্টোবর ভুয়া মিছিলের ফলশ্রুতিতে তাকে গ্রেফতার করা হয় । যে আন্দোলন ছিল এদেশীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে এবারের সেই সংগ্রাম শুরু হয় দেশের শাসক সম্পদায়ের বিপক্ষে। ১৯৫০ সালে জেলে অনশন ধর্মঘটের ফলে তিনি বেড়িয়ে আসেন জেল থেকে। এরপরে ঘটনা এগিয়ে যেতে থাকে দ্রুতগতিতে। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে মওলানার সহানুভূতি ছিল প্রকাশ্যে। স্বাধীকার আন্দোলনের প্রথম ধাপে তাই এই আন্দোলনে অনেকের সহিত মওলানা আবার আটক হন। ১৯৫৩ সালে ফজলুল হক সোহরাওয়ার্দী তার নেতৃত্বে গঠন করেন যুক্তফন্ট। ১৫ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগের ভরাডুবি ঘটিয়ে জবাব দেন মওলানা। ১৯৫৫ সালে মওলানা সাহেব ধর্ম নিরতোর দাবীতে থেকে মুসলীম”শব্দটি বাদ দিয়ে দেন। এখানেই শুরু হয় অন্যান্য আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে তার বিরোধ। স্বায়ত্বশাসনের দাবী তোলেন তিনি ১৯৫৬তে। পররাষ্ট্রনীতি এবং অভ্যন্তরীণ নীতিতে যে বিরোধটি ছিল ভেতরে তাই প্রকাশ হয়ে পড়ে ১৯৫৬ সালের ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এর পরেই বিভক্ত হয়ে যায় আওয়ামী লীগ। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি দাবী করায় তাকে ‘ভারতের দালাল’ আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি তাঁর রীতিতে অটল। ১৯৫৬ সালেই যে কৃষকদের যে স্বার্থের জন্য লড়াই করেছেন মওলানা তাকে সাংগঠনিক ব্যাখাঁ দেন। তিনি গঠন করেন কৃষক সমিতি। ১৯৫৭ সালে আওয়ামা লীগের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্কচ্ছেদ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, গঠন করেন তিনি। এর আগে মওলানা ভাসানীর জীবনে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ঘটে। ১৯৫৪ সালে মওলানা সাহেব ষ্টকহমে বিশ্বশান্তি পরিষদের সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন। এমনি সময়ে এদেশের প্রাসাদ রাজনীতির পট পরিবর্তনে মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা গভর্ণর হয়ে আসেন পূর্ব পাকিস্তানে। তিনি ঢাকা বিমান বন্দরে নেমেই ঘোষণা করেন “মওলানা ভাসানী ঢাকা এলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে”। এতে করেই বোঝা, যায় শাসক সম্প্রদায় তার সম্পর্কে কতটা ভীত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে ন্যাপ গঠনের পর সবে রাজনীতিতে মওলানা সাহেব কৃষক শ্রমিক সং গঠনের ভিত্তি দুষ্ট করতে শুরু করেছেন এই সময়েই আর একটি বৃহৎ পরিবর্তন ঘটে পাকিস্তানের। সামরিক অভুথানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় বসেন জেনারেল আয়ুব খান। মওলানা পুনরায় অন্তরীণ হন। সামরিক শাসন প্রত্যাহার করার পর ১৯৬৪ সালের জানুয়ারী মাসে মওলানা সার্বজনীন ভোটাধিকার আন্দোলনের আহ্বান জানান। গণতাঞ্জিষ্ণ অধিকার কায়েমের দাবীতে। আয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবস পালিত হয় পুর্ব পাকিস্তানের সর্ব সে বছর ১৩ই মাটি সর্বদলীয় প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে মওলানা ছিলেন তার অন্যতম আহবায়ক ইতিমধ্যে তিনি ১৯৬৩ সালে চীন সফরে যান। পরবর্তীতে ‘৬৫-এর পাক-ভারত। যুদ্ধে পাকিস্তানের একতাও সংহতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন মওলান। এরপর ‘৬৫ এর নির্বাচন। নির্বাচনে সংযুক্ত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে মিস্ ফাতেমা জিন্নাহর নাম প্রস্তাব করে পুনরায় তিনি রাজনৈতিক মঞ্চে এদেশের সর্বস্তরের জনগণের কণ্ঠের প্রতিনিধি হিসেবে হাজির হন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপেক্স আত্মকলহের প্রকাশ ঘটে। মুজাফফর সাহেব রিকুইজিশন কাউন্সিল ডাকেন। মওলানা আহবান করেন কৃষক সমিতি ও ন্যাপ কাউন্সিল অধিবেশন। মওলানা সাহেব ঘোষনা করেন, “গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম সর্বহারা শ্রেণী, আর কোন শ্রেণী নয়।” ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে দাৰী দিবস পালনের আহ্বান জানান মওলানা ভাসানী। ৬৮ সালের ৬ই ভিসেম্বরে শুরু করেন এসব দাবীর ভিত্তিতে ঐতিহাসিক ঘেরাও আন্দোলনের ঢাকায় পল্টন থেকে লক্ষক জহুর্তা নিয়ে নাট ভবন ঘেরাও করে। এরই ফুলশ্রুতি ‘৬৯। এর মহান গন অভূথাণ। যারা এই সময় ১১ সঞ্চার ভিত্তিতে নেমে অাসে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে। এই আন্দোলন মওলানা ভাসানীর দৃঢ় সমর্থন ছিল। এই সময়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সফর করেন। একই সঙ্গে দুই অংশে গণ অাগোলনে চুড়ান্ত রূপ পায়। ১৯৬৯ সালে ২৫শে মার্চ আয়ুব প্রধান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এদেশে দ্বিতীয়বারের মত সামরিক আইন জারী হয়। এই সময় সকল নেতাই ছিলেন আপোষের পক্ষপাতি, একমাত্র যোদ্ধ মওলানা ভাসানী তথা ন্যাপ ছাড়া! ১৯৭০এর নভেম্বরের প্রায়ংকরী ঝড়ের পর মওলানা ভাসানী তৎকালীন পাকিস্তানী সরকার পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের অনীহায় অভিযুক্ত করলেন তাদের। ৪ঠা ডিসেম্বর পল্টনের বিশাল জনসভায় সমস্ত সম্পর্ক দিলেন চুকিয়ে। এই সময় থেকেই তিনি ভারতীয় মনোভাবের বিরোধীতা ও একই সঙ্গে এদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এর পরের অন্য স্বাধীন বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালে দেশান্তরী হয়েছিলেন মওলানা। ৭২ সালে এলেন দেশে ফিরে। এসেই তিনি প্রগতিশীল জাতীয় ঐক্যজোটের উপর জোর দেন তিনি। ২রা এপ্রিল পষ্টনের জনসভায় বললেন, যদি দেশে একবার আগুন জ্বলে ওঠে তবে তা নেভানো দায় হবে। তিনি বলেন, সরকারের বসে যারা চোরাচালানের কথা,স্বীকার করে না তারা ভ্রান্ত দেশের সম্পদ ওপারে চলে যাচ্ছে, আর তারা বলছে চোরাচালান হচ্ছে না।” এর পর থেকে শুরু হয় মওলানার আপোষহীন নতুন সংগ্রাম। ‘৭২ থেকে ‘৭৫ পর্যন্ত মওলানায় সংগ্রাম ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করণ ও দেশকে বিদেশী শোষণ-আধিপত্য মুক্ত করণের জন্য, আর ফিল লুটপাট, লুটেরাদের সুট দুর্ভিক্ষ, গত মুনাফাখোরী, চোরাচালান ইত্যাদির বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়েছেন। আধিপত্যবাদী রাশিয়ার সমর্থন পুঞ্জ তারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের বিরুদ্ধে। ৭২ এ সংবিধান ঘোষণার পর তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ৭৪ সালে সর্বদলীয় নেতৃহ্মের আহ্বানে অনশন ত্যাগ করে ডাক দিলেন নতুন আন্দোলনের। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলন সূচনা করতে গিয়ে সন্তোষে অন্তরীনবিদ্ধ হন। এরপরে ৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি স্বাগত জানালেন এই পরিবর্তনকে। ৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারত তার নগ্ন রূপ নিয়ে হাজির হল এদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। একদিকে তার সীমান্তে চোরাচালানী অন্যদিকে ফারাক্কার সাহায্যে গঙ্গায় পানি অন্যদিকে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য চক্রান্ত। শুধু তাই নয়, এই সময় স্বাধীনতা সংগ্রাম বিরোধীরা নতুন করে পাঁয়তারা কষতে শুরু করে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্ৰীতিতে ফাটল ধরাতে সচন্দ্র হয় তারা। এমনি পরিস্থিতিতে মওলানা ভাসানী দুই সন্ত্রর বিরুদ্ধেই জনগণকে হুশিয়ার করে দিয়ে সংগঠিত করতে এগিয়ে এলেন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারীতে সীমান্ত হামলার প্রেক্ষিতে মওলানা ছুটে যান সীমান্তে বীর জোয়ান ও জনগণের কাছে। অগ্নিসনবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে একন্ত্রিত এবং ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই তিনি প্রতিটি জেলায় সাক্ষর করেন। আহ্বান জানান ভারতীয় হামলাকে প্রতিহত করতে। ১৯৭৬ সালের ১৭ই মার্চ সাম্পদায়িক সাম্রাজ্যবাদী দালালদের পাঁয়তারার প্রতি হুশিয়ারী দিয়ে তিনি বলেন, “এক শ্রেণীর প্রতিকুিয়াশীল সাম্প্রদায়িক ও গণবিরোধী শক্তি, যারা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অনিবার্থ অ্যুদয়কে মেনে নিতে পারেনি বলে নিন্দিত হয়েছিল তারা আজ সাম্প্রদায়িকতার উষ্কানী দিচ্ছে এবং তাদের বিদেশী প্রভূদের শেখানো শ্লোগান তুলছে। দেশ আজ যখন তার ইতিহাসের চরম সংকটময় মুহুর্ত অতিক্রম করছে সেই সময় এই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সাম্প্রদায়িকতার উজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তৃতা দিয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। এসব শক্তিকে ধ্বংস করা বাংলাদেশের প্রতিটি দেশগ্রেমিক নাগরিকের কর্তব্য। এই সময় যখন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী তখন কেউ কেউ দেখে সাধারণ নির্বাচনের দাবী উঠালে মওলানা ভাসানী জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বক্তব্য রাখলেন। মওলানা সাহেব ৭ই নভেম্বর মেডিক্যাল ‘কলেজ হাসপাতালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শেষ হচ্ছে না। নির্বাচনের নামে নতুন চক্রান্ত চলছে। আরো কিছু দিন দেখব এবং ১লা জানুয়ারী ১০ই মহরম থেকে সর্বাত্মক সংগ্রাম শুরু করব জাতীয় ঐক্য ও প্রতিরোধের মাধ্যমে। মহা নায়ক মওলানা ভাসানী তার সন্তুর হয়ে রাজনৈতিক জীবনের শেষ এ জরুরী সংগ্রাম শুরু করার মুহুর্তে ১৭ই নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃআস ত্যাগ করেন।
প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণ : নির্বাচন স্থগিত
প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ২১শে নবেম্বর রাত ৮-৪৫ মিনিটে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে জাতির উদ্দেশ্যে রেডিও ও টিভিতে এক ভাষণ দেন। ভাষণের পণ বিবরণ – বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা, আসসালামু আলাইকুম। আজ সন্ধ্যায় জাতীয় জীবনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছূ, বলায় জন্য আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা জানেন, গত বছর জাতির এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে বর্তমান সরকার দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এক বছরের আপ্রাণ চেষ্টায়, আল্লাহর রহমতে এবং আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতায় ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশে জাতীয় স্বার্থের অনুকুল এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতির সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জনমনে নিরাপত্তার অনুভুতি অনেকাংশে ফিরে এসেছে এবং দ্রব্যমূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং ব্যাপক উন্নয়নমূলক : সূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মনে করেছিলেন যে সর্বঘোষিত সময়ে জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এই উদ্দেশ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন, এলাকা নির্ধারণ ইত্যাদি কাজ হাতে নেয়া হয়। এ বছরের মাঝামাঝি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এবং তাঁদের অভিমত নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলবিধি প্রণয়ন করে রাজনৈতিক দল গঠন ও কার্যকলাপের পথ খুলে দেয়া হয়। সরকার ও জাতি আঁশা করেছিল যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের নিয়মতান্ত্রিক কাজের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করার কাজে ব্রতী হবেন এবং অতীতের বিভেদমূলক কলহ-কোন্দল ভুলে গিয়ে জাতীয় সংহতির পথ প্রশস্ত করবেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, কার্যত দেখা গেল যে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ জাতীয় স্বার্থের উর্ধে স্থান পেল। ফলে অর্ধ শতাধিক রাজনৈতিক দল সরকারী অনুমোদনের জন্য এগিয়ে এল এবং তার মধ্যে একুশটি দল ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। পুর্বেকার কয়েকটি দল বিভক্ত হয়ে নতুন নতুন দলের উদ্ভব হয়েছে। এতে ঐক্যের পরিবর্তে বরং বিভেদ ও বিভ্রান্তির প্রসার হয়েছে। জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে এ ধরনের পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পরিপন্থী। অপরদিকে রাজনৈতিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে ছাত্র অঙ্গদলসমূহের সংঘর্ষ বেড়ে চলেছে। শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন বিঘ্নিত হচ্ছে। সম্প্রতি সাধারণভাবে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিতে অবনতির প্রবণতা দেখা দিয়েছে। একই সময়ে সীমান্তের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। সরকার ও জাতি তার মোকাবিলা করার জন্য বদ্ধপরিকর : ফারাক্কার প্রভাবে দেশের এক বৃহৎ অংশের জনজীবন ও অর্থনীতি যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার প্রচেষ্টা আজ জাতির সামনে সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে কিছুসংখ্যক বিভ্রান্ত যুবক দেশবিরোধী ও বিদেশী চক্রের প্ররোচনায় জাতীয় স্বার্থবিরোধী ধংসাত্তক কাজে লিপ্ত হয়েছে। দেশের সামনে সমস্যা বিস্তর। এ সময়ে এমন কিছু করা সমীচীন হবে না যাতে দেশে শান্তি ও শৃংখলা বিঘ্নিত হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ব্যাহত হয় অথবা জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরে। নিঃসন্দেহে বলা চলে যে সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক নেতৃবৃন্দ পূর্ব ঘোষিত সময়সূচী অনুযায়ী নির্বাচন গ্রহণের যৌক্তিকতা ও সুফল সম্পর্ক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তাকে নির্বাচনের চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। তারা আরো বলেছেন যে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখা একান্ত বাঞ্ছনীয় । নেতৃবৃন্দের ভাষণ, সংবাদপত্রে প্রকাশিত অন্যান্য বিবৃতি, ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনা বিভিন্ন এলাকার জনগণের অনুভুতি ও অভিব্যক্তি এবং প্রশাসনিক মূল্যায়ন’ সবকিছু থেকে নিঃসন্দেহে প্রতীয়মান হচ্ছে যে জনসাধারণ আশু নির্বাচনের পক্ষপাতী নন। তাঁরা আশংকা করেন যে আশু নির্বাচন শান্তি-শৃংখলা বিঘ্নিত করবে, অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিবে, শত্রুর হাত মজবুত করবে এবং সর্বোপরি দেশের সমূহ অকল্যাণ ডেকে আনবে। নির্বাচন সম্পর্কে উত্থাপিত বিতর্ক ও নির্বাচন স্থগিত রাখার পক্ষে জনমতের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে পৌচেছেন যে, জনগণের মতামত আজ সুস্পষ্ট। তাঁরা মনে করেন যে অশ, নিবন দেশের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন করবে। তাঁদের সাথে একমত হয়ে সকল প্রস্তুতি ও আয়োজন সত্তেও আমি ঘোষণা করছি যে, পূর্বঘোষিত সময়ে জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে সরকার ইতিপূর্বেই ঘোষণা করেছেন যে, জানুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারপর থানা পরিষদ গঠন করা হবে। এর কয়েক মাসের মধ্যে জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার মনে করেন যে, এই পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কাজে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনসাধারণের অংশ গ্রহণ সহজ ও দ্রুত হবে এবং পরবর্তীকালে উপযুক্ত সময়ে জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ নির্বাচনের পথ সুগম হবে। যদিও এই ব্যবস্থাপনায় আমাদের পূর্বঘোষিত জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে যাবে, তথাপি আমি আশা করি আপনারা উপলব্ধি করবেন যে দেশের সার্বিক স্বার্থে এই কার্যক্রম অপরিহার্য হয়ে পড়েছে এবং আমি ও আমার সহকর্মীবৃন্দ সরকার পরিচালুনার এই গরদায় বহন করে যেতে বাধ্য হচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা সকলে দেশগঠন ও জাতীয় ঐক্য, সংহতি ও উন্নতির জন্য পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যাবেন।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নতুল বোর্ড
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের জন্যে আট সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছেন সরকার। এই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে মেজর জেনারেল সি, আর, দও, বীরোত্তমকে। বোর্ডের অন্যান্য সদস্য হচ্ছেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উক্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদার নীচে নয় এমন একজন অফিসার, সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান কর্তৃক মনোনীত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেলের পদমর্যাদার নীচে নয় এমন একজন অফিসার (তাঁকে মুক্তিযোদ্ধ হতে হবে), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক মনোনীত সংসদের একজন প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কিউ, এম, জামান,, ৩/ই আনিরাবাদ কলোনী, ৫৬ সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা, অবসরপ্রাপ্ত উয়িং কমান্ডার এস, আর মীর্জা, ২৭ ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি (দোতলা); ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা এবং জনাব মহিউদ্দীন আহমদ, এম এস সি এম এড (মুক্তিযোদ্ধা), গ্রাম ও ডাকঘর দামুরিয়া, জেলা পাবনা। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এই ট্রাস্টি বোর্ডে সকল প্রকার পেশার মুক্তিযোদ্ধাকেই সমন্বিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। আমরা আশা করব অতীতে এই কল্যাণ বোর্ড নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে তার অবসান ঘটবে এই ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের কল্যাণ পাবে এখান থেকে।

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1977-timeline.pdf” title=”1977 timeline”]