You dont have javascript enabled! Please enable it!

1977.01.01 | জিয়ার সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির পরিচিতি | সাপ্তাহিক বিচিত্রা

সরকার পরিচিতি প্রেসিডেন্ট
আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ১৯১৬ সালে রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন। রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যয়ন করার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন কলেজ থেকে আইন ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৪৪ সালে কলকাতা হাই কোর্টে এডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগদান করেন এবং এ কে ফজলুল হকের জুনিয়র হিসেবে আইন ব্যবসায়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি আইনের প্রশ্নপত্র রচয়িতা ও পরীক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের স্থানীয় বোর্ডের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আইনজীবী সমিতির একজন সক্রিয় উদ্যোক্তা এবং এই সংগঠনের সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বেশ কয়েক দফয়াদের(অস্পষ্ট) জন্য হাইকোর্ট সমিতির সম্পাদক ও সহ সভাপতি ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান। ফেডারেল কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে বার কাউন্সিল হাইকোর্ট বেঞ্চে উন্নীত হবার আগ পর্যন্ত তিনি এই কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
১৯৬৭ সালে তিনি সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ ও উচ্ছেদের কারণ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি এতদসংক্রান্ত দ্বিতীয় তদন্ত কমিশনেরও সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালে তিনি সীমান্ত চিহ্নিতকরণ কমিশনের। সদস্য ছিলেন। ১৯৭০-৭১ সালে যে নির্বাচন কমিশন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা করেছিল তিনি ছিলেন সেই কমিশনের সদস্য।
জনাব সায়েম ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারী বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ১৯৭৫ সালের ৬ই নবেম্বর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট সায়েম প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজর কাছে রেখেছেন।
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশন প্রাপ্ত হন। ২ বছর পাঞ্জাব রেজিমেন্টে থাকার পর, তাঁকে ১৯৫৭ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলী করা হয়। তিনি বিশেষ নিরাপত্তা কোর্সে প্রশিক্ষণ লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে (আর্মি ইন্টেলিজেন্স) দায়িত্ব পালন করেন ১৯৫৯-১৯৬৪।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন খেমকারান সেক্টরে। এই ব্যাটালিয়নে তিনিই ছিলেন একমাত্র বাঙালী কোম্পানী কমান্ডার, ১৯৬৬ সালে তিনি কাবুলস্হ পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীর ইনস্টাক্টর নিযুক্ত হন এবং একই বছর কোয়েটার স্টাফ কলেজে যোগ দেন।
জেনারেল জিয়া ১৯৬৯ সালে। জয়দেবপুরে দ্বিতীয় বেংগল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিযুক্ত হন। একই বছরের শেষের দিকে তিনি পশ্চিমা জার্মানী যান প্রশিক্ষণের জন্য এবং পরে কিছুকাল বৃটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকেন।
১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে তাঁকে চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলী করা হয় । এইখানে থাকাকালীন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর জন্য ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ।
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে জেনারেল জিয়াউর রহমান লেঃ কর্নেল পদে উন্নীত হন। রৌমারীতে থাকার সময় তিনি প্রথম, দ্বিতীয় ও অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের জওয়ানদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্রিগেড গঠন করেন। পরে এটা “জেড ফোর্স” নামে পরিচিতি লাভ করে।
স্বাধীনতার পর তিনি কুমিল্লা ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ মাঝামাঝি তাঁকে সেনাবাহিনীর উপ-স্টাফ প্রধান নিযুক্ত করা হয়। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ১৯৭২ সালে কর্নেল পদে এবং ১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত করা হয়। তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন ১৯৭৩ সালের ১০ই অক্টোবর। ১৯৭৫ সালের ২৫শে আগষ্ট জেনারেল জিয়া সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান একজন ছত্রীসেনা (প্যারা ট্রুপার ). ১৯৭৫ সালের নবেম্বর মাসে তিনি উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন।
১৯৭৬ সালের নবেম্বরে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি স্বরাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক
রিয়ার এডমিরাল মোশাররফ হোসেন খান
রিয়ার এডমিরাল মোশাররফ হোসেন খান ১৯৩২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। একই বছরের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাজ্য যান ডাঢ-মাই উথের ব্রিটানিয়া রয়েল নেভ্যাল কলেজে রয়েল নেভীর (রাজকীয় নৌবাহিনী) সাথে প্রশিক্ষণের জন্য। ১৯৫৪ সালে তিনি রয়েল নেভীতে কমিশন প্রান্ত হন। গ্রীণউইচের রয়েল নেভ্যাঙ্ক কলেজে তিনি যুদ্ধ এবং স্টাফ কোর্সেও প্রশিক্ষণ নেন।
ডেস্ট্রয়ার এবং সামুদ্রিক যান পরিচালনার বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদেও তিনি নিযুক্ত ছিলেন।
১৯৫৮ সালে পোটস মাউথে তিনি এনএমএস ড্রিয়াডে নেভিগেশন ও ডিরেকশন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে তিনি স্যালিসবারিতে ক্রাবিসিডি স্কুলে এনবিসিডি সম্পর্কে (নিউক্লিয়ার বায়োলজিক্যাল এন্ড কেমিক্যাল ডিফেন্স)বিশেষজ্ঞ কোর্স সমাপ্ত করেন।
পাকিস্তান নৌবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।
তবে ডিরেক্টর অব পারসোনেল ছিলেন। ১৯৬৬ সালে করাচীতে তিনি ডেপুটেশনে কন্ট্রোলার অব শিপিং নিযুক্ত হন। তিনি রাওয়ালপিন্ডিস্হ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে আর্মি ওয়ার কোর্সেও অংশ গ্রহণ করেন।
বাঙ্গালী বলে ১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল তাকে পিএন খাইবারের অধিনায়কত্ব থেকে অপসারিত করা হয় এবং করাচীতে পিএনএস কারসাজে অন্তরীণ করে রাখা হয়।
পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্টাফ, প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর তিনি কমোডোর পদে উন্নীত হন, এবং ১৯৭৬ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী রিয়ার এডমিরাল পদে উন্নীত হন।
১৯৭৫ সালের নবেম্বরে তিনি উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি যোগাযোগ, পানি সম্পদ ও পানি উন্নায়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
এয়ার ভাইস মার্শাল
আবদুল গাফফার আহমদ
১৯৩৪ সালে নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি আই,এ পাশ করেন। ১৯৪৯ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্কোয়াড্রনে তাঁর বৈমানিক জীবনের সূচনা হয়। ১৯৫২ সালের জুন মাসে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৫৪ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী কমিশন প্রাপ্ত হন।
এয়ার ভাইস-মার্শাল মাহমুদ ১৯৫৪ সালের জুন মাসে জঙ্গী বোমার বিমানের পাইলট হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাঁচ নম্বর স্কোয়াড্রনে যোগ দেন। ২ বছর পর তিনি ১৫ নং স্কোয়াড্রনে (এফ-৮৬) যোগ দেন।
(অস্পষ্ট) সালে তিনি ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর নিযুক্ত হন। এই ১৯৬০ সাল পর্যন্ত রি/ বি(অস্পষ্ট)পুরের পিএএফ একাডেমীতে (অস্পষ্ট)পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
টি-৩৩ বিমন চালনা সম্পর্কে বেসিক ইনস্ট্রাক্টর কোর্সে অংশ গ্রহণের জন্য ১৯৬০ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যান।
সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি পিএএফ-এর দুই নম্বর ফাইটার কনভারসন স্কোয়াড্রনে ইনস্ট্রাক্টর, এডজুটেন্ট, ফাইট কমান্ডার এবং অপারেশন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রিসালপুরের পিএএফ একাডেমীতে চার নম্বর ফ্লাইং স্কোয়াড্রন টি–৬৬ ফ্লাইং ট্রেনিং ইউনিটেরও অধিনায়কত্ব করেন। পিএএফ একাডেমীতে তিনি সহকারী কমান্ড্যান্ট ছিলেন।
১৯৬৪ সালে তিনি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্লাইট সেফটি অফিসার্স কোর্সে অংশ গ্রহণের জন্য মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র যান, একই বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কোর্সে অংশ গ্রহণ করেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তিনি পেশোয়ারে পিএএফ সদর দফতরে দুর্ঘটনা তদন্ত বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত হন।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন এবং টিবিটি খেতাব পান। ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে অসামান্য নৈপুণ্যের জন্য তাকে এয়ার এফিশিয়েন্সি ব্যাজ প্রদান করা হয়।
১৯৭০ সালে তিনি করাচীর পিএএফ স্টাফ কলেজে যোগ দেন এবং পিএসএ প্রাপ্ত হন। কোর্স সমাপ্তির পর তাকে পিএএফ সদর দফতরে প্রশিক্ষণের ডেপুটি ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করা হয়।
এয়ার ভাইস-মার্শাল এ,জি, মাহমুদ তাঁর বৈমানিক জীবনে ১৪ রকমের বিমান চালিয়েছেন।
১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে স্বদেশ ফিরে তিনি বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা ও প্রকৌশল ডিরেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের নবেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামের বিএএফ ঘাটির অধিনায়ক নিযুক্ত হন।
১৯৭৪ সালের ১৫ই নবেম্বর তিন গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।
১৯৭৬ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী তিনি এয়ার কমোডোর পরে উন্নীত হন। একই বছর মে মাসে তাকে বিমান বাহিনীর পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের সহকারী স্টাফ প্রধান নিয়োগ করা হয়।
১৯৭৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্টাফ প্রধান নিযুক্ত হন। ৬ই সেপ্টেম্বর তাকে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত করা হয়। ৯ই নবেম্বর তিনি এয়ার ভাইস-মার্শল পদে উন্নীত হন।
তিনি পেট্রোলিয়াম ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বিমান চলাচল ও পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে হয়েছেন।
উপদেষ্টা
অধ্যাপক আবুল ফজল
অধ্যাপক আবুল ফজল এর জন্ম ১৯০৩ সালের ১লা জুলাই। তিনি ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এ, ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন খুলনা বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। ১৯৪০ সালে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজে (বর্তমানে ভারতে) বাংলার অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং পরে ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম কলেজে বদলী হন। সরকারী চাকুরী থেকে তিনি অবসর নেন ১৯৫৯ সালে।
১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন।
দেশের একজন খ্যাতনামা লেখক অধ্যাপক আবুল ফজল রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি।
১৯৭৫ সালের ২৬শে নবেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
এ, কে, এম, হাফিজুদ্দিন
এ, কে, এম, হাফিজুদ্দিন জন্ম গ্রহণ করেন ১৯০৯ সালে। ঢাকা বিশ্বদ্যালয় থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন লাভ করেন ১৯৩০ সালে।
জনাব হাফিজুদ্দিন তৎকালীন ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন ১৯৩৩ সালে এবং ডেপুটি ইনসপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ হন ১৯৪৯ সালে এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল পুলিশ হন ১৯৫৮ সালে। ১৯৬০ সালে তিনি ‘ইন্টারপোল’-এর নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং পরে এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬২ সালে তিনি তৎকালীন ইপিআইডিসির প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
জনাব হাফিজুদ্দিন ১৯৭৬ সালের ২৩শে জানুয়ারী উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি শিল্পের উপর(অস্পষ্ট) দায়িত্বে রয়েছেন।
ডঃ এম, এন, হূদা
ডঃ এম, এন, হুদা জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৯ সালে। ১১৪১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম,এ পাশ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করনেল বিশ্ববিদ্যালয় (ইথাকা) – থেকে কৃষি অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে রীডার হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি এই বিভাগের অধ্যাপক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রাক্টর, ডীন এবং প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি তংকালীন পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হন। তিনি তংকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী নিযুক্ত হন ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৯ সালে তিনি অল্প সময়ের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হন। ১১৬৯ সালের জুলাই মাসে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন শিক্ষক হিসেবে। তিনি পরে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান, ব্যুরো অব ইকনমিক রিসার্চ এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান অর্থ নীতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পুনরায় ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের ২৬শে নবেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। তিনি বাণিজ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
কর্নেল এম,এম,হক
কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মাসুদুল হক জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুরে ১৯১৪ সালে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে এমবিবিএস পাশ করে তিনি তৎকালীন প্রাদেশিক মেডিক্যাল সার্ভিস, (আপার) এ যোগ দেন প্রথমে। পরে তিনি সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল ‘কোর-এ যোগ দিয়ে বিভিন্ন মিলিটারী হাসপাতাল ও বিমান বাহিনী হাসপাতালে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রশাসক নিযুক্ত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফিরে যান। এবং মেডিক্যাল ব্যাটালিয়ান কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকে ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য সচিব নিযুক্ত করা হয়।
কর্নেল হক ১৯৭৬ সালের ১৮ই জুন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
ডঃ মুহাম্মদ আবদুর রশীদ
ডঃ মুহাম্মদ আবদুর রশীদ ১৯১৯ সালের ১লা জানুয়ারী সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি তৎকালীন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যন ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্রাজুয়েশন লাভ করার আগে শিবপুরস্হ বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ব্যাচেলর অব ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সমাপ্ত করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সরকারী বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং কার্নেগী ইনসিটিউট ও টেকনলজীতে পড়াশুনা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি মাস্টার অব সায়েন্স এবং ১৯৪৮ মোঃ ওবায়েদুল হক সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রী লাভ করেন।
দেশে ফিরে তিনি আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সহকারী অধ্যাপক হন। ১৯৫৪ সালে এই কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৬২ সালে এই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হলে তিনি এর ভাইসচ্যান্সেলর নিযুক্ত হন।
ডঃ রশীদ ১৯৭২ সালে জাতীয় বেতন কমিশন এবং ১৯৭৩ সালে শিল্প শ্রমিক কমিশনের সদস্য মনোনীত হন।
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সরকারী চাকুরী থেকে অবসের গ্রহণ করেন।
ডঃ রশীদ ব্যাঙ্কস্হ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনলজী’র বোর্ড অব ট্রাস্টির একজন সদস্য।
১৯৭৫ সালের ২৬শে নবেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন।
ডঃ মুহাম্মদ আবদুর রশীদ পূর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় দায়িত্বে রয়েছেন।
কাজী আনোয়ারুল হক
কাজী আনোয়ারুল হক জন্ম গ্রহণ করেন ১৯০৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী। ১৯৩১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে তিনি তৎকালীন ভারতীয় পুলিশ সাভিসে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ডেপুটি ইন্সপেক্টর অব পুলিশ নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি লন্ডনস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে পলিশ এডমিনিস্ট্রেশন এবং ১৯৫৫ সালে ওয়াশিংটনের এডমিনিস্ট্রেশন অব সিকিউরিটি সার্ভিসেস-এ প্রশিক্ষণ নেন।
জনাব হক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ নিযুক্ত হন ১৯৫৪ সালে। তিনি ১৯৫৯ সালে ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকন্সট্রাকশন-এর ডিরেক্টর, ১৯৬১-১৯৬৩ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মুখ্য সচিব এবং ১৯৬৩ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করার পর ঐ বছরই তৎকালীন পাকিস্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ২৬শে নবেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি পাট, ভূমি ও ভূমি সংস্কার প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
ডঃ মুহাম্মদ ইব্রাহীম
ডঃ মুহাম্মদ ইব্রাহীম এর জন্ম ১৯১১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি এমবি পাশ করেন ১৯৩৫ সালে। ১৯৪৯ সালে তিনি এম, আর, সি, পি (লন্ডন) এবং ১৯৬৭ সালে এফ, আর, সি পি (লন্ডন) লাভ করেন। ১৯৫০-১৯৬৪ সালের মধ্যে তিনি সিভিল সাজর্ন এবং চট্টগ্রামসহ জেনারেল হাসপাতালের সুপারিটেন্ডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকাস্হ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি একসময়। ১৯৬৪-১৯৭১ সালের মধ্যে তিনি করাচীহ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন সেন্টারের ডিরেক্টর এবং প্রফেসর অব মেডিসিনের দায়িত্ব পালন করেন ।
তিনি ১৯৫৬ সালে ডায়েবেটিক এসোসিয়েশন এবং পরবর্তী কালে ১৯৬৯ সালে এপ্লাইড নিউট্রিশন প্রজেক্ট গঠন করেন।
ডঃ ইব্রাহীম কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস এবং ডায়েবেটিক এসোসিয়েশনের সভাপতি।
১৯৭৫ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
মিসেস বিনীতা রায়
মিসেস বিনীতা রায় ১৯০৭ সালের ১৮ই আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্ম সমাজের প্রখ্যাত ধর্মীয় সংস্কারক কেশব চন্দ্র সেনের তিনি পৌত্রী। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা রাজার পরিবারে তাঁর বিয়ে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত প্রথম সাহিত্য মাসিক ‘গৈরীকা’ তিনি সম্পাদনা করেন। এর নামকরণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মিসেস রায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা ভ্রমণ করেন। মিসেস বিনীতা রায় ১৯৭৫ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
আকবর কবির
আকবর কবির ১৯৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুরের মরহুম খান বাহাদুর এ, কে, কবিরউদ্দিন আহমেদের পুত্র। জনাব কবির কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এ ডিগ্রী লাভ করেন এবং সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে চাকরী করেন। তদানিন্তন পাকিস্তাননে তিনি প্রায় এক দশক ধরে সমাজ উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন অধিকর্তা ছিলেন। অবসর গ্রহণের আগে তিনি তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে সাড়ে চার বছর চাকরী করেন। তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ও সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেন। জনাব কবির ১৯৭৬ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
আজিজুল হক
আজিজুল হক ১৯২৩ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এ পাশ করেন। দেশ বিভাগের পর তিনি তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা ও তথ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে চাকুরী করেন। জনাব হক ১৯৬০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার ডিগ্রী লাভ করেন। পরে তিনি ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থার চেয়ারম্যান, তদানীন্তন ইপিআইডিসির ডিরেক্টর এবং কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি ঢাকায় ইউনিসেফের বিশেষ পরামর্শদাতা হন।
জনাব হক ১৯৭৬ সালের ১৮ই জুন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1977.01.01-zia.pdf” title=”1977.01.01 zia”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!